#আমার_সংসার
#লেখিকা DI YA
#পর্ব_০১
তোমার মাথা ঠিক আছে নীলিমা। তুমি কি করতে চাইছো সেটা কি তুমি বুঝতে পারছো? এইটুকু মেয়েটার সাথে তোমার ওই বোনের ছেলের বিয়ে দিবে। তুমি এটা জানো তোমার ওই বোনের ছেলেকে আমার কোনো কালেই পছন্দ ছিল না।আর আমার আয়েশাটার বয়স মাএ ১৪ বছর। আর এখনি তুমি ওর বিয়ে দিয়ে দিতো চাচ্ছো।আমার এত খারাপ দিন আসেনাই যে আমার মেয়েটাকে এত অল্প বয়সেই বিয়ে দিবো। একটা কথা কান খুলে শুনে রাখো আমার মেয়ের বিয়ে এখন আমি দিবনা। আর ওই ছেলের সাথে তো কখনো না। – নীলয় রহমান
আচ্ছা আসিফ বাবার সাথে তোমার কি শত্রুতা আমাকে বলবা প্লিজ। হাজারে একটা সোনার টুকরো ছেলে হচ্ছে আসিফ। আর দেখতে ও কোনো হিরোর থেকো কম না। তাহলে তোমার সমস্যা টা কোথায় ? -নীলিমা রহমান
সমস্যা টা কোথায় এটা তুমি খুব ভাল করেই জানো।মানুষের চেহারাটা সুন্দর হলে হয় না। চরিত্র জিনিসটা হলো আসল।আর তোমার ওই বোনের চরিত্রহীন ছেলের সাথে আমার মেয়ে বিয়ে আমি দিবনা। ওই ছেলের উপর ধর্ষণের আর ইভটিজিং এর মামলাও আছে।এছাড়া আয়েশা এখনো অনেক ছোট। তোমার নিজের মেয়ে না বলে তুমি ওর সাথে এমন করতে চাচ্ছো। আজ যদি ও তোমার নিজের মেয়ে হতো তাহলে কি পারতে ওর সাথে এমন করতে? নিজের বিবেককে একবার প্রশ্ন করে। নিজের সাথে যে কাজ করতে পারবেনা।অন্যের সাথে সে কাজ করার কথা ভাবো কিভাবে তুমি? -নিলয় রহমান
আসিফ বাবার নামে যে মামলা গুলো আছে ওগুলো সব মিথ্যা আমি জানি আসিফ কখনো এমন কাজ করতেই পারেনা।ওর মত ভালো ছেলে একটাও পাবে না তুমি।আর এত ভাবাভাবির কিছু না। আপন হতো তাহলে এক কথা কিন্তু ও আমার আপন মেয়ে না বুঝলে। আর এ বিয়ে হবেই – মুখ বেকিয়ে বললো নীলিমা রহমান
আমি থাকতে এ আমি কিছুতেই হতে দিবনা মনে রেখো -বলে নীলয় রহমান ঘরে থেকে বের হয়ে চলে গেলেন
তুমি থাকলে হতে দিবে না।কিন্তু তোমার অনুপস্থিতে এ বিয়ে কে আটকাবে। এ বিয়ে আমি দিয়েই ছাড়বো। এতবছর যে উদ্দেশ্য আমি এই অনাথ মেয়েকে আপন মেয়ের মত রেখেছি। আমার সেই উদ্দেশ্য আমি সফল করেই ছাড়বো। আর তার জন্য আসিফের সাথে এই মেয়ের বিয়েটা আমাকে দিতেই হবে। আর দুইদিন তারপরই তো তুমি অফিসের কাজে বাইরে যাবা। আর সেই সুযোগেই আমি এই বিয়েটা দিয়ে দিব।আমাকে তখন কেউ আটকাতে পারবেনা। নাতো বিয়ে দিতে আর নাতো নিজের উদ্দেশ্য সফল করার থেকে।বলে হাসতে লাগলেন নীলিমা রহমান
তারপর তিনিও ঘরে থেকে বেরিয়ে চলে গেলেন।তিনি চলে যেতেই বেলকনি থেকে বেরিয়ে ঘরে আসলো আয়েশা।ও এতক্ষণ বেলকনিতে ছিল সেটা মা বাবা কেউ জানেনা।মা বাবার কথা শুনে আয়েশার এখনো কিছুই বোধগম্য হচ্ছে না। তার বিয়ে কিন্তু সেতো এখনো ছোট আর তার ক্লাসের কারোর ও এখনো বিয়ে হয়নি। এটা নাহয় বাদই দিল কিন্তু সে নাকি মা বাবার আপন মেয়ে না। সে নাকি এতিম। কিন্তু এটা কিভাবে সম্ভব। সে তো ছোটবেলা থেকেই তাদের মা বাবা বলে চিনে তো। আচ্ছা সে কি তাদের সন্তান না বলেই মা তার সাথে সবসময় এমন বাজে আচরণ করে। ভাইয়াকে তো মা অনেক আদর করে অনেক ভালোবাসে। নিজ হাতে এখনো ভাইয়াকে খাইয়ে দেয়।ভাইয়া যা চায় তা সাথে সাথে পেয়ে যায়।আর তার সঙ্গে ঠিক বিপরীতটা হয়। ছোট আয়েশার মাথায় সবকিছু এলোমেলো হয়ে যাচ্ছিল।তাই সে আর কিছু না ভেবে নিজের রুমে চলে গেলো। রুমে গিয়ে সে তার পড়াশোনা করতে বসলো। কালকে তাদের ক্লাসে একটা মডেল টেস্ট হবে। স্যার বলেছে ওই টেস্টে যে খারাপ করবে তার অভিভাবককে যেতে হবে। আর আয়েশা যদি টেস্টে খারাপ করে আর মাকে টিচার ডাকে। তখন তো আয়েশাকে মা অনেক মারবে। তাই আয়েশা মনোযোগ দিয়ে পড়তে লাগলো।
আসুন আয়েশার পরিচয়টা দিয়ে নেই,,
আয়েশা রহমান তার নাম।বয়স ১৪ বছর চলছে। সে এ বছর অষ্টম শ্রেণিতে পড়াশোনা করছে। দেখতে আয়েশা কোনো হুরপরীর থেকে কম নয়।দুধে আলতা গায়ের রঙ।কোমড়ের নিচ পযন্ত লম্বা আর ঘন চুল। কিন্তু তার চুলের রঙ মোটেও কালো নয়। তার চুলের রঙ হচ্ছে হালকা বাদামি বর্ণের।
তারপর আয়েশা নিজের পড়াশোনা শেষ করে বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ালো। তখনই রুমে উপস্থিত হন নীলয় রহমান।আয়েশা বাবাকে দেখে বেলকনি থেকে রুমে আসে। আর জিজ্ঞেস করে,
বাবা তুমি এসময়।কিছু বলবা? -আয়েশা
হুম আম্মু একটু কথা ছিল -নীলয় রহমান
বলো বাবা -আয়েশা
আমার দুইদিন পর একটু দেশের বাহিরে যাবার কথা ছিল অফিসের কিছু কাজে।কিন্তু এখন আমাকে কালকেই যেতে হবে। কালকে ১ সাপ্তাহর জন্য দেশের বাহিরে চলে যাব তো তাই তোমাকে বলতে আসলাম -নীলয় রহমান
আচ্ছা বাবা। সাবধানে থেকো। আর হ্যা আসার সময় কিন্তু আমার জন্য অনেক চকলেট নিয়ে আসতে হবে।নইলে আমি রাগ করবো -আয়েশা
নীলয় রহমান আয়েশার বাচ্চামিতে হেসে দিয়ে বললো,
ঠিক আছে আম্মু তোমার জন্য আমি আসার সময় অনেক চকলেট নিয়ে আসবো। এখন নিচে আসো। অনেক রাত হয়ে গেছে খাবার তো খেতে হবে – নীলয় রহমান
হুম চলো – বলে আয়েশা আর নীলয় রহমান খাবার খেতে নিচে চলে গেলো।
দেখতে দেখতে দুইদিন চলে গেলো।বাবা যাবার পর আয়েশার একটু মন খারাপ হলেও আজকে আয়েশার মন অনেক ভালো। কারণ গতকাল আয়েশাদের যে ক্লাস টেস্ট হয়েছিল। আজ তার রেজাল্ট দিয়েছে। আর আয়েশা টপ করেছে। তাই খুশি মনে ফুরফুরে মেজাজে আয়েশা স্কুল থেকে বাসায় আসলো৷ গেটের কাছে এসে দেখলে গেট খোলা।আয়েশা একটু অবাকই হলো। কারণ এসময় তো বাসার গেট খোলা থাকার কথা নয়।এসব কিছুকে পাত্তা না দিয়ে আয়েশা বাসার ভিতরে আসলো।ড্রইংরুমে আসতেই দেখলো তার খালামনি খালাতো বোন রিয়া আর খালাতো ভাই আসিফ বসে আছে। আসিফকে আয়েশা খুব একটা পছন্দ করে না৷ তার অবশ্য কারণ ও আছে আসিফ আয়েশার দিকে কিভাবে যেনো তাকিয়ে থাকে আর বার বার শরীরে হাত দেওয়ার চেষ্টা করে। আয়েশা এত কিছু না বুঝলে এইটুকু বুঝে যে আসিফের মতলব খুব একটা ভাল না।তাই আয়েশা সবসময় আসিফকে এক প্রকার এড়িয়ে চলে। আয়েশা তার খালামনিকে দেখে বললো,
আসসালামু আলাইকুম খালামনি। কেমন আছেন? -আয়েশা
ওয়ালাইকুম আসসালাম।আমি ভালোই আছি। তুমি কেমন আছো? – খালামনি
আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালই আছি।তা রিয়া আপি কেমন আছো? -আয়েশা
হুম ভালোই ছিলাম। আর কয়দিন যে ভাল থাকবো এটা জানিনা -রিয়া আপু
কেন? -আয়েশা
কিছুনা এমনি -রিয়া আপু
আমি আর কিছু না বলে উপরে আমার রুমে চলে আসলাম।তারপর ফ্রেশ হতে সোজা ওয়াশরুমে ঢুকে গেলাম।ওয়াশরুম থেকে একেবারে গোসল করে বের হয়ে দেখি মা আমার ঘরে বিছানার উপর বসে আছে।হাতে একটা লাল রঙের জামদানী শাড়ী আর কিছু জুয়েলারি।মা সাধারণত আমার ঘরে আসেন না।আর এসব জিনিস নিয়েই বা কেন আসলো। তাই আয়েশা তার মাকে জিজ্ঞেস করলো,
মা তুমি আমার রুমে। কিছু কি বলবা ? আর হাতে এসব জিনিস নিয়ে বসে আছো কেন ? নিচে দেখলাম খালামনিরা এসেছে। কোনো অনুষ্ঠান আছে নাকি ? -আয়েশা
হুম আছে। এখন বেশি কিছু না বলে এদিকে আয় আমি তোকে শাড়ি জুয়েলারি পরিয়ে একটু সাজিয়ে দেই। কিছুক্ষণের মধ্যেই কাজি চলে এসে পরবো – নীলিমা রহমান
মানে আমি এসব কেন পরবো। আর কাজি কেন আসবে ? – আয়েশা
এত প্রশ্ন করবি না।শুধু এইটুকু শুনে রাখ আজকে তোর আর আসিফের বিয়ে।এখন আর বেশি কথা না বলে এদিকে আয় তোকে রেডি করানোর পর তো আমার আরো কাজ আছে তাই না – নীলিমা রহমান
আয়েশা দুইদিন আগের মা বাবার কথোপকথনের কথাগুলো ভুলেই গিয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ মার মুখে তার আর আসিফের বিয়ের কথা শুনে এটা আবারো তার মনে পরে গেলো কথাগুলো।তার সাথে ওই আসিফ ভাইয়ার বিয়ে। কিন্তু সে তো এখনো ছোট। আর বাবা সে কি জানে এই ব্যাপারে।
মা তুমি কি বলছো। আমার বিয়ে মানে। আর আসিফ ভাইয়ের সাথে।আর বাবা কি এসব জানে? – আয়েশা
তোর বাবাকে আমি পরে সব বলবো। এখন আয় তারাতাড়ি – নীলিমা রহমান
মা প্লিজ মা আমি বিয়ে করব না। মা প্লিজ তুমি কেন এমন করছো। আমি বিয়ে করবনা আর বাবা কই আমি বাবার সাথে কথা বলব – আয়েশা
নীলিমা রহমান ঠাসস করে একটা থাপ্পড় মেরে দিল আয়েশার গালে। আর বললো,,
তোর বাবা কিছু করতে পারবেনা বুঝলি। আর একটা কথা বললে এখন তো শুধু থাপ্পড় মেরেছি এরপর আর কি কি আমি করতে পারি এটা তুই খুব ভাল করেই জানিস – নীলিমা রহমান
একপ্রকার জোড় করেই আয়েশাকে সাজিয়ে নিচে নিয়ে আসলো তিনি।তার পর তাকে সোফায় আসিফের পাশে বসিয়ে দিলো।কাজি এসে পরেছে।আয়েশা আসার পর কাজি বিয়ে পড়ানো শুরু করলো।আয়েশা এখনো কান্না করছে। কি করবে সে আজ যদি তার বাবা থাকতো তাহলে তিনি এমন কিছু হতে দিতো না কখনোই। আসিফের দিকে লক্ষ্য করতেই আয়েশা দেখলো আসিফ
চলবে🥰🥰