আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ_২ পর্ব-৩৫+৩৬

0
564

#আমার_শহরে_তোমার_আমন্ত্রণ_২
#পর্ব৩৫( অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষিদ্ধ)
#Raiha_Zubair_Ripti

-“ কি রে তোরা এখানে যে?

আচমকা চিরচেনা পুরুষালি কন্ঠ শুনে পেছন ফিরে তাকায় অধরা আর চিত্রা। রাফিকে এখানে দেখে অধরা বলে উঠে –
-“ ভাইয়া তুমি এখানে!

রাফি অধরা চিত্রার দিকে আগাতে আগাতে বলে-
-“ হ্যাঁ একটা দরকারে এসেছিলাম।

-“ ওহ্ আমি আর চিত্রা একটু কেনাকাটা করতে এসেছিলাম।
-“ তৃষ্ণা আসে নি?

-“ না ও বাসায়। বাসায় ফিরবে না এখন?
-“ না একটু দেরি হবে। তোরা যা তাহলে।

অধরা মাথা নাড়িয়ে চিত্রার হাত ধরে গাড়িতে উঠে বসে। ড্রাইভার গাড়ি স্টার্ট দেয়। রাফি চলে যাওয়া গাড়ির পানে কিয়ৎ ক্ষন তাকিয়ে থেকে নিজের কাজে চলে যায়।

ড্রয়িং রুমের সোফায় বসে আছে তানিয়া বেগম আর তাসলিমা খাঁন। তার পাশেই জুবুথুবু হয়ে বসে আছে চিত্রা। তাসলিমা খাঁন তামিম খাঁন আর সামির খাঁনের ছোট বেলার দুষ্টুমির কথা বলছেন। নিজের রুমে বসে আছে তৃষ্ণা। অধরা রেডি হচ্ছে প্রোগ্রামে যাওয়ার জন্য। এর মধ্যে ঘামান্ত শরীর নিয়ে বাড়ির মধ্যে প্রবেশ করে রাফি। সোফায় বসে গা এলিয়ে দেয়। তানিয়া বেগম এক গ্লাস ঠান্ডা পানি এনে দেয়। রাফি ঢকঢক করে গিলে বলে-

-“ চাচি আজ রাতে আমার ফ্লাইট।
তানিয়া বেগম অবাক হয়ে বলে-
-“ তোর না কাল ছিল ফ্লাইট।

-“ না আজই। আমি আজকের ফ্লাইটের টিকিট বুক করেছি।
-“ ওহ্। ফিরবি কবে?

-“ এখনও তো যাই নি। যাওয়ার পর বুঝতে পারবো ফিরবো কবে।
-“ আচ্ছা রুমে যা ফ্রেশ হয়ে রেস্ট নে। আমি খাবার উপর পাঠিয়ে দিচ্ছি।

রাফি চলে যায়। তানিয়া বেগম খাবার প্লেটে সাজিয়ে তৃষ্ণা কে ডাক দেয়। তৃষ্ণা মায়ের ডাক শুনে হন্তদন্ত হয়ে নিচে নামে। তানিয়া বেগম তৃষ্ণার হাতে খাবারের প্লেট ধরিয়ে দিয়ে বলে –

-“ নিয়ে যাও।
তৃষ্ণা খাবারের প্লেট নিয়ে উপরে উঠে চলে যায়। রাফি ফ্রেশ হয়ে টি-শার্ট পড়ে বিছানায় বসে আছে। তৃষ্ণা দরজায় কড়া নাড়ে। রাফি এক নজর দরজার পানে তাকিয়ে বলে- কামিং।

তৃষ্ণা ভেতরে ঢুকে। খাবার টা বিছানায় রেখে বলে-
-“ আপনার খাবার এনেছি।
-“ হুম দেখেছি।
তৃষ্ণা দাঁড়িয়ে রইলো। রাফি খাবারের প্লেট টা হাতে তুলে নিতে নিতে বলে-

-“ আমার ল্যাগেজ টা একটু গুছিয়ে দাও তো। রাতে ফ্লাইট।
তৃষ্ণা অবাক চিত্তে তাকিয়ে থাকে।
-“ আপনার ফ্লাইট রাতে!
-“ হুমম।

-“ কই আপনি যে বললেন আগামী কাল ফ্লাইট।
-“ হ্যাঁ ছিলো তবে সেটা বাতিল হয়ে আজ হয়েছে।
তৃষ্ণা ওহ্ বলে ল্যাগেজ গুছিয়ে দেয়।

রাত সাতটার দিকে রাফি বাসার সবার থেকে বিদায় নেয়। তৃষ্ণা কিয়ৎ ক্ষন অভিমান করে ছিলো কিন্তু বেশি দীর্ঘ হয় নি। রাফি বলেছে তাড়াতাড়ি কাজের পার্ট চুকে ফেরার চেষ্টা করবে। তুষার বাসায় নেই। অধরা এখনও ফিরে নি। বাসায় রয়েছে তানিয়া বেগম, তাসলিমা খাঁন, তরিকুল খাঁন, তামিম খান,তৃষ্ণা, চিত্রা আর সামির খাঁন। কিছুক্ষণ আগেই সামির খাঁন ছেলেকে এয়ারপোর্টে পৌঁছে দিয়ে আসে।

অধরাকে এখনও বাসায় আসতে না দেখে অধরার নম্বরে ফোন করে তামিম খাঁন।
অধরার ফোন রিসিভ হয় না। হবে কি করে? এতো এতো সাউন্ডের মাঝে ফোনের রিংটোন যেনো বন্ধ ব্যাগের চারপাশেই আবদ্ধ রইলো।
অধরাকে না পেয়ে তামিম খাঁন এবার রাতুল কে ফোন করলো।

-“ হ্যালো রাতুল তুমি কোথায়?
রাতুল জবাব দিলো-
-“ আমি বিশ মাইল আছি।
-“ অধরা এখনও বাসায় ফিরে নি। একটু খোঁজ নাও তো৷ রাত হচ্ছে তো।

-“ আমি অধরার কাছেই যাচ্ছি। পৌঁছে দিয়ে আসবো বাসায় চিন্তা করবেন না।

তামিম খাঁন স্বস্তি পেলেন। রাতুল সোজা ভার্সিটিতে এসে অধরা কে খুঁজতে লাগলো। অধরা বলেছিল অমর একুশে চত্বরের ওখানে গেলে তাকে পাবে। রাতুল অধরার কথা মতে ওখানে গিয়ে দেখে অধরা বসে আছে। রাতুল দৌড়ে গিয়ে অধরার পাশে বসলো। অধরা চমকালো। চকিতে ঘাড় ঘুরিয়ে রাতুল কে দেখতে পেয়ে স্বাভাবিক হয়।

-“ অনেক্ক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছিলাম।
-“ বাসায় যাবেন না? আপনার মামা অনেকবার ফোন দিয়েছিল আপনাকে। ফোন রিসিভ করেন নি দেখে আমায় দিয়েছে ফোন।

-“ শুনতে পারি নি এতো সাউন্ডের মাঝে।
-“ বাসায় চলুন তাহলে।
অধরা হুমম বলে উঠে দাঁড়ালো। তারপর রাতুলের সাথে বাসায় ফিরলো।

তুষার এসেছে রাত ১২ টার দিকে। সবাই তখন ঘুমে বিভোর। আর তন্দ্রা হীন হয়ে ছিলে কেবল চিত্রা। তুষার রুমে আাতেই চিত্রা খাবার গরম করে রুমে নিয়ে আসে। তুষার ততক্ষণে ফ্রেশ হয়ে আসে। আজ আর তুষারের জন্য অপেক্ষা করে নি চিত্রা। তানিয়া বেগম জোর করে চিত্রা কে খাইয়েছেন। তুষার খাওয়া আগে চিত্রা কে জিজ্ঞেস করলো খেয়েছে কি না। চিত্রা হ্যাঁ জানালো।

তুষার নিরবে খাবার টা খেয়ে নিলো। খাওয়া শেষে এঁটো হাত ধুয়ে ল্যাপটপ নিয়ে বসে পড়লো। চিত্রা তপ্ত শ্বাস ফেললো। এঁটো প্লেট ঢেকে বিছানায় এসে শুয়ে পড়লো। রাত ১ টা অব্দি কাজ করলো তুষার। তারপর এলোমেলো পায়ে বিছানায় এসে চিত্রা কে জড়িয়ে শুয়ে পড়লো। চিত্রা যেনো এতক্ষণ এটার ই অপেক্ষায় ছিলো। তুষার কাছে আসতেই মনেমনে হাসলো। তারপর ঘুম দিলো।

নতুন সকাল নতুনত্বের আগমন নিয়ে হাজির হয়। রাফি কিছুক্ষণ আগে ফোন করে জানিয়েছে সে সুস্থ মতোই পৌঁছিয়েছে মালদ্বীপ। নামকরা একটা হোটেলে উঠছে। দুই একদিনের মধ্যে প্রজেক্টের কাজ শুরু করবে। সবাই স্বস্তি পেলো কথাটা শুনে।
তৃষ্ণা চিত্রা এক্সাম দিতে ভার্সিটি এসেছে। আজ তামিম খাঁন পৌঁছে দিয়ে গেছে। প্রায় তিনঘণ্টা এক্সাম দেওয়ার শেষে বাড়ি ফিরে তামিম খাঁনের সাথেই।

এভাবেই চলে কয়েকদিন। গরম পড়েছে,সোফায় ফ্যান ছেড়ে বসে আছে চিত্রা। এক্সাম শেষ হয়েছে দিন দুয়েক হলো। শরীর তার ভীষণ ক্লান্ত। ঠিকমতো খেতে পারে না। একটু কাজ করলেই হাঁপিয়ে যায়। এই তো শুধু সবজি কাটতে গিয়েই হাঁপিয়ে উঠেছে। তানিয়া বেগম একা একা রান্না করে টেবিলে খাবার সাজায়। চিত্রার পাশে এসে বসে বলে-
-“ এখনও খারাপ লাগছে?
চিত্রা উপর নিচ মাথা নাড়ায়।

-“ লেবুর শরবত করে দেই?
চিত্রা আচ্ছা বলে। তানিয়া বেগম ঠান্ডা পানি দিয়ে এক গ্লাস লেবুর শরবত তৈরি করে। চিত্রার হাতপ দেয় খাওয়ার জন্য। চিত্রা গ্লাস টা নিয়ে চুমুক দেয়। এক চুমুক খেয়েই দৌড়ে ছুটে যায় বেসিনে। মুখ খুলতেই পেট থেকে গড়গড় করে সব বেরিয়ে যায়। বুমি করতে করতে চিত্রার শরীর নেতিয়ে যায়। তানিয়া বেগম চিন্তিত হলো। চিত্রা কে ধরে নিয়ে রুমে শুইয়ে দিলো।

সন্ধ্যার দিকে তুষার ফিরতেই তানিয়া বেগম তুষার কে বলেন সব কথা। সব শুনে তুষার নিজেও চিন্তিত হয়। দুপুরের পর থেকে চিত্রার শরীর আরো খারাপ হয়েছে। তুষার রুমে গেলো। গিয়ে দেখলো চিত্রা শুয়ে আছে। তুষার গিয়ে চিত্রার পাশে বসলো। মাথায় হাত বুলালো। কয়েক ঘন্টার ব্যাবধানে চোখ মুখ শুকিয়ে ফ্যাকাসে হয়ে গেছে। আস্তে করে চিত্রা কে ডাকলো। চিত্রা চোখ মেলে তাকালো। তুষার আস্তে করে জিজ্ঞেস করলো-

-“ এখন কেমন লাগছে শরীর?
চিত্রা ক্লান্ত শরীর নিয়ে শুধালো-
-“ ভালো না।

-“ খাবার খাও নি কেনো?
-“ খেতে পারছি না তো। বুমি আসছে।
-“ লাস্ট পি’রিয়ড হয়েছে কবে?
চিত্রা স্বাভাবিক হয়েই জবাব দিলে-
-“ দু মাস আগে।

তুষার কিছু একটা ভেবে আবার বাহিরে চলে গেলো। আধ ঘন্টার মধ্যে ফিরলো। হাতে প্রেগন্যান্সি কিট। চিত্রার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল-
-“ পরীক্ষা করে আসো।
চিত্রা কিট টা হাতে নিয়ে উল্টেপাল্টে দেখে বলে-
-“ আপনার মনেও এটা এসেছে?
-“ হুমম।

চিত্রা অসুস্থ শরীর নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো। সম নিয়ে কিট টা হাতে নিয়ে বের হলো। তুষার তখন বিছানায় বসে চিত্রার জন্য অপেক্ষা করছে। চিত্রা বেরিয়ে আসতেই তুষার বলে-
-“ রেজাল্ট কি এসেছে?

চিত্রা কিট টা মেলে ধরলো তুষার সামনে। তাতে টকটকে দুটো লাল দাগ ভেসে আছে। দুজনের মুখে ফুটে উঠলো হাসি। তুষার এগিয়ে আসলো৷ আলতো করে জড়িয়ে ধরলে চিত্রা কে। চিত্রা তখনও তাকিয়ে আছে লাল টকটকে দাগ দুটের দিকে। মুখ চেপে ধরা গলায় বলে-
-“ উই আর প্রেগন্যান্ট!
তুষার চিত্রার এহেন কথা শুনে ফিক করে হেসে উঠে। চুলের ভাজে আলতো করে চুমু খেয়ে বলে-
-“ হ্যাঁ উই আর প্রেগন্যান্ট শোনা।

#চলবে?

#আমার_শহরে_তোমার_আমন্ত্রণ_২
#পর্ব৩৬( অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষিদ্ধ)
#Raiha_Zubair_Ripti

পুরো বাড়িতে আনন্দের আমেজ। খাঁন বাড়িতে নতুন সদস্যর আগমন। বার্তাটা পুরে বাড়ি জুড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তামিম খাঁন মিষ্টি নিয়ে এসেছেন। আশেপাশে মিষ্টি বিলিয়েছেন। চয়নিকা বেগম আর সাহেল আহমেদ এসেছেন সুখবর টা পেয়ে। রাফি খবর টা পেয়েই তুষারকে আর চিত্রা কে কংগ্রাচুলেশনস জানিয়েছে। অধরা আর তৃষ্ণা বসে আছে চিত্রার পাশে। তৃষ্ণার খুশির সীমা নেই। সে ফুপি হতে যাচ্ছে! বিষয় টা স্বপ্নের মতো লাগছে। অধরা চিত্রা কে জড়িয়ে শুভেচ্ছা জানালো। তৃষ্ণা এটা ওটা বলছে,বাচ্চা হবার পর বাচ্চার সম্পূর্ণ দায়িত্ব সে নিবে। তার ভাইয়ে ছেলে হোক আর মেয়ে সে পেলেপুষে বড় করবে।
চিত্রা চুপচাপ তৃষ্ণার কার্যকলাপ দেখলো। তৃষ্ণা দের কথার মাঝখানেই তুষার গলা খাকড়ি দিয়ে দরজার সামনে দাঁড়ায়। তৃষ্ণা আর অধরা উঠে দাঁড়ায়। তুষার রুমে ঢুকে। তৃষ্ণা অধরা বেরিয়ে যায়। তুষার দরজাটা চাপিয়ে চিত্রার পাশে বসে। চিত্রার হাত দুটো মুঠোবন্দী করে চুমু খেয়ে বলে-
-” চিন্তা টা এখন বেড়ে গেলো।

চিত্রা স্মিত হাসলো। তুষার আলতো করে চিত্রার পেটে হাত রেখে বলে-
-“ এই খানে কিন্তু একটা অংশ আছে। দেখেশুনে চলাফেরা করবে। খাবার ঠিক মতো খেতে হবে। তোমার সুনিশ্চিত স্বাস্থ্য আমার বাচ্চার সুস্থতা নিশ্চিত করবে। আমার জন্য না খেয়ে বসে থাকবে না।
চিত্রা বাধ্য মেয়ের মতো মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ জানালো। তুষার স্মিত হেঁসে কপালে চুমু খেয়ে বলল-
-“ মিনিট কয়েক পড়েই সব ভুলে যাবে মিসেস খাঁন। উঠো এবার গোসল করে আসো। অবেলা করে গোসল করা যাবে না এখন থেকে আর।

চিত্রা নিজে নিজে উঠতে নিলে তুষার ধরে উঠায়। চিত্রা ওয়ারড্রব থেকে কাপড় নিয়ে বলে-
-“ আমার এখন পেট বড় হয় নি। সবে আড়াই মাস। এমন হবে টেক কেয়ার করছেন মনে হচ্ছে কয়েক দিনের মধ্যেই আমার ডেলিভারি।
-“ শুরুর দিকেই বেশি কেয়ার করতে হয় মিসেস খাঁন। তাড়াতাড়ি গোসল সেরে আসো। ফ্লোরে কিন্তু দেখেশুনে পা ফেলবে।
-“ ওক্কে।
তুষার খাটের উপর পা তুলে বসে রয়। এরমধ্যে চয়নিকা বেগম এসে দরজায় কড়া নাড়ে। তুষার গিয়ে দরজা খুলে। শাশুড়ী কে দেখে দরজা ছেড়ে সরে দাঁড়ায়। চয়নিকা বেগম ভেতরে উঁকি দিয়ে বলে-
-” চিত্রা কোথায়?
-“ গোসল খানায়। ভেতরে আসুন।
চয়নিকা বেগম ভেতরে ঢুকে। বিছানায় বসে। কয়েক মিনিট পর চিত্রা ভেজা কাপড় হাতে করে বের হয়। তুষার এগিয়ে যায়। চিত্রা কে বিছানায় বসিয়ে চিত্রার হাত থেকে ভেজা কাপড় গুলো নিয়ে বেলকনিতে মেলে দেয়। চয়নিকা বেগম চিত্রা কে জড়িয়ে ধরে। ছোট্ট মেয়েটা নিজেও মা হতে চলছে ভাবা যায়! চয়নিকা বেগম হেসে বলেন-

-“ এবার বুঝবে মায়েদের কেনো সন্তানদের নিয়ে এতো অযথা চিন্তা হয়।
চিত্রা হেসে বলে-
-“ আমি বেস্ট মা হবো বাবুর।
-“ অবশ্যই। দেখেশুনে চলাফেরা করবে। সন্ধ্যা হলেই ঘরের জানালা বন্ধ করপ দিবে। বেলকনিতে রাতের বেলায় যাবে না। আর সাথে সবসময় লোহা, রসুন আর ম্যাচকাঠি সাথে রাখবে।

চিত্রা আচ্ছা বলল। ততক্ষণে তুষার চলে আসলো বেলকনি থেকে। চয়নিকা বেগম চলে গেলো।

রোমিলা বেগম বাড়ির উঠোনে দাঁড়িয়ে কাপড় মেলে দিচ্ছেন। আকস্মিক গেটের দিকে চোখ যেতেই সুপরিচিত মুখ দেখে কাপড় মেলতে গিয়ে থমকালেন। আকবর এগিয়ে আসলো রোমিলার দিকে।
-“ কেমন আছো রোমিলা?
রোমিলা মুখ ঘুরিয়ে নিলো। কাটকাট গলায় বলল-
-“ এখানে কেনো আপনি?
-“ বাহ রে ছেলে আর প্রাক্তন স্ত্রী কে দেখতে এসেছি।
রোমিলার মুখ জুড়ে বিস্তৃত হলো তাচ্ছিল্যের হাসি।
-“ এতো গুলো বছর পর!
-“ না প্রায়ই খবর নেই লোক লাগিয়ে।
-“ কেনো মরছি না সেজন্য?
-“ না, তোমাদের মৃ’ত্যু কামনা করি না। আমি মৃ’ত্যু কামনা করি আমার শত্রুদের।
-“ সেই শত্রুদের হয়েই তো কাজ করে রাতুল। নিশ্চয়ই তার মৃ’ত্যু কামনা করেন।
-“ যতোই হোক ছেলেতো তাই মনুষ্যত্বে বাঝে ওর মৃ’ত্যু চাইতে।
-“ যার মনুষ্যত্ব নেই তার মনুষ্যত্বে বাঝে কি করে?
-“ সেটাই তো। আচ্ছা বাদ দাও,ছেলের বিয়ে দিচ্ছো বাবা হিসেবে তো আমাকে জানাতে পারতে।
-“ প্রয়োজন বোধ করি নি জানানোর।
-“ আচ্ছা বেশ। কেমন আছো?
-“ আগের তুলনায় বেশ ভালোই আছি।
-“ হুম বোঝাই যায়।
-“ হুমম।
-“ রাতুলের মুখ থেকে অনেকদিন বাবা ডাক শুনি নি। ছেলেটাকে আমার বিরুদ্ধে উস্কে দিয়েছো তুমিই তাই না?
-“ হাসালেন। আপনার করা কুকীর্তি দেখেই লজ্জায় ঘৃণায় আপনায় বাবা ডাকে না। ভুলে গেছেন সেদিন রাতের কথা? যেদিন রাতে অমানবিক নির্যাতন করে আমাকে আর আমার ছেলেকে বাসা থেকে বের করে দিয়েছিলেন। বউ নিয়ে মেতে ছিলেন সেই রাত। আর আমি আমার ঐ ছোট্ট শিশুটিকে নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরেছিলাম। আর সেই শিশুর থেকে আপনি বাবা ডাক আশা করেন হাস্যকর!
-“ রাতুল কে আমি কখনই বাড়ি থেকে বের করি নি রোমিলা। তুমিই নিয়ে গিয়েছিলে সেদিন।
-“ কোন বাচ্চা থাকতে চাইবে এমন নরপশুর কাছে?
-“ পুরোনো কাসন্দি ঘাঁটতে চাই না। ভালো থেকো আসি।

কথাটা বলে আকবর চলে যায়। রোমিলা কাপড় মেলে রুমে চলে আসে।

রাতুল বসে আছে পুকুরের ধারে। পাশেই আছে অধরা। দুজনের মুখে কোনো কথা নেই। দৃষ্টি দুজনেরই ঐ পুকুরের জলে। নিরবতা ভেঙে রাতুল বলে উঠে –
-“ ঠিক তারিখ টা মনে নেই। সেদিন ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হচ্ছিল। মা সেদিন সেজেছিল খুব। কারন সেদিন বাবা আর মায়ের বিবাহ বার্ষিকী ছিলো। মা বাবার সব পছন্দের খাবার রেঁধেছিল। সোফায় বসে অপেক্ষা করছিল। মায়ের অপেক্ষার প্রহর ভেঙে বাবা এসেছিল তবে একা না। সাথে ছিল দ্বিতীয় স্ত্রী আর তার কোলে ছিলো বছর একের এক বাচ্চা ছেলে। বাবা তাকে নিয়ে ঢুকেই বলেছিল সে বাবার দ্বিতীয় বউ। বছর তিনেক আগে বিয়ে করেছে। অথচ মা জানতোও না। সেদিন বাবাকে ধরে প্রচুর কেঁদেছিল মা। কিন্তু বাবা তার দ্বিতীয় বউয়ের এক কথায় মা কে বাসা থেকে বের করে দেয়। আমার মা বাড়ি থাকলে তিনি থাকবেন না। মা কিছুতেই যেতে রাজি হচ্ছিলো না। আর বাবা অল্পতেই ভীষণ রেগে যেত। মাকে সেদিন প্রচুর মেরেছিল৷ ধাক্কা মে’রে বের করে দিয়েছিল বাড়ি থেকে। আমিও ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম বাবার ওমন ভয়াবহ রূপ দেখে। মায়ের কাছে ছুটে যাওয়ার জন্য দৌড় দিতেই বাবা আটকে দেয়। সে কিছুতেই যেতে দিবে না মায়ের কাছে। মা ও আকুতি মিনতি করছিল আমাকে নেওয়ার। আমার কান্নার আওয়াজ বাবার দ্বিতীয় বউ বিরক্ত বোধ করছিল। রেগেই বাবা কে বলেছিল সে সতীনের ছেলে কে দেখভাল করতে পারবে না। বাবা কিছু বলতে চেয়েছিল কিন্তু উনি বলতে দেন নি। বাবার হাত থেকে আমাকে ছাড়িয়ে বলেছিল যা তোর মায়ের কাছে। আর আসবি না এদিক পানে। আমার ছোট্ট মন ছাড়া পেতেই দৌড়ে ছুটে গিয়েছিলাম মায়ের কাছে। সে থেকে আজ অব্দি ও বাড়িতে পা রাখি নি। সেই ঝিরিঝিরি বৃষ্টি মাথায় নিয়ে মা পাগলের মতো আশ্রয় খুঁজেছিল থাকার। একেই তো বাবার হাতে মাইর খেয়ে মায়ের বেহাল দশা তার উপর রাতে থাকার জন্য আশ্রয় খুঁজতে খুঁজতে রাস্তায় অজ্ঞান হয়ে পড়ে গিয়েছিল। আমি হঠাৎ মা’কে পড়ে যেতে দেখে কেঁদে কেঁদে মা’কে ডাকছিলাম। আমার নানা বা মামা কেউ ছিল না দেশে। তারা সবাই বাহিরের দেশে থাকতো। ঐ রাতে ফেরেস্তা হিসেবে উদয় হন আপনার মামু। আমাকে কাঁদতে দেখে এগিয়ে আসেন জিজ্ঞেস করে কি হেয়েছে। আমি বলেছি মা উঠছে না কথা বলছে না আমার সাথে। আঙ্কেল পরখ করে দেখলো মা কে। তারপর ড্রাইভার কে ডেকে মাকে আর আমাকে গাড়িতে উঠিয়ে খাঁন ভিলাতে নিয়ে গেলো। মায়ের চিকিৎসা করালো। মায়ের থেকে সব কথা শুনলো। আইনি ব্যাবস্থা নিতে চাইলে মা না করে দেন। তিনি আর দ্বিতীয় বার ঐ লোকের মুখোমুখি হতে চান নি। মা’কে স্কুলে চাকরি দিয়ে দিলেন। সেই থেকে মা একাই আমাকে লালনপালন করে গেছে। দিনের বেলা তুষারের সাথে থাকতাম আর বিকেল হলেই মা স্কুল থেকে ফেরার পথে আমায় বাসায় নিয়ে আসতো।

কথাটা বলে থামে রাতুল। অধরা নির্বাক হয়। দু’জনে একই পথের পথিক। রাতুল কে স্বান্তনা দেওয়ার ভাষা তার জানা নেই। রাতুল বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। হাত বাড়িয়ে দিলো অধরার দিকে। অধরা নির্নিমেষ চোখ চেয়ে থেকে হাত ধরে উঠে দাঁড়ালো। পায়ে পা মিলিয়ে হাঁটতে লাগলো।

চিত্রা কে বাড়ির কোনো কাজ করতে দেয় না তানিয়া বেগম। সব কাজ নিজে একাই করে। এ নিয়ে চিত্রা কথা বলে না তানিয়া বেগমের সাথে। তার শরীরে তো এখনও তেমন পরিবর্তন ঘটে নি আর এখনই তাকে সব কিছু থেকে দূরে দূরে রাখছে। তানিয়া বেগম চিত্রার রাগ কে পাত্তা দেয় নি। বাড়ির প্রথম বাচ্চা সে আসবে রাজকীয় ভাবে। কোনো ক্ষতি হতে দেওয়া যাবে না। চিত্রা শুধু খাবে আর শুয়ে থাকবে। আর একটু আধটু হাটাহাটি করবে। বাড়ির কাজে হাত লাগানো মানা।

তুষার এখন তাড়াতাড়ি কাজকর্ম শেষ করে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফেরার চেষ্টা করে। বেশি দেরি হলে রাত আট টা বাজে। তার বেশি হবেই না। যতো রাজ্যের কাজ থাকুক না কেনো সে চলে আসবে বাসায়। হয় বাসায় এসে করবে ল্যাপটপে রাত জেগে। তবুও বাসায় আসবে। তুষার এসেছে সন্ধ্যা সাতটা বাজে। হাতে তার ফুচকার পলিথিন। চিত্রা ফেরার পথে ফোন করে বলেছিল তার ফুচকা খেতে ইচ্ছে করছে। সেজন্য তুষার নিয়ে এসেছে। ফুচকার পলিথিন টা তৃষ্ণার হাতে দিয়ে বলল প্লেটে সাজিয়ে দিতে। ফুচকার ব্যাগ দুটো। একটা অধরা তৃষ্ণার জন্য আরেক টা চিত্রার জন্য। একটা পলিথিনের ফুচকা সাজিয়ে দিলো প্লেটে তৃষ্ণা । তুষার প্লেট টা নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেলো। চিত্রা বিছানায় আধশোয়া হয়ে হুমায়ুন আহমেদের কোথাও কেউ নেই বই টা পড়ছে। তুষার ফুচকার প্লেট টা এগিয়ে দিয়ে বলল-
-“ নাও তোমার ফুচকা।
চিত্রা তাকায় প্লেটের দিকে। মুখে বিস্তৃত হলো হাসি। ফুচকার প্লেট টা নিয়ে ফুচকা খেতে আরম্ভ করলো। তুষার চলে গেলো ওয়াশরুমে ফ্রেশ হতে।

খাওয়া শেষে চিত্রা প্লেট রাখার জন্য উঠতে নিলে তুষার প্লেট টা নিয়ে নিজে গিয়ে রেখে আসে। এতো আহ্লাদী পনা এখন বিরক্ত লাগছে। মনে হচ্ছে কাজ বা একটু হাঁটলেই বড় কিছু হয়ে যাবে। চিত্রা ভেঙচি কাটলো। তুষার ড্রেসিং টেবিল থেকে তেলের বোতল এনে চিত্রার মাথা ম্যাসাজ করে দেয়। আজকাল রাতে তেল না দিয়ে ঘুমালে প্রচুর মাথা ব্যাথা করে চিত্রার। মধ্য রাতে হাত পা জ্বালাপোড়া করে। তুষার তখন টিপে দেয়।

-“ ঐ শুনুন না।
তুষার মাথা ম্যাসাজ করতে করতে বলে-
-“ হুমম।
-“ কাল ডক্টরের কাছে যেতে হবে মনে আছে?
-“ হুমম।
-“ কখন নিয়ে যাবেন?
-“ বিকেলে।
-“ তাহলে কাল বাহিরে খাবো।
-“ আচ্ছা।
-“ ঘুমাবো।
-“ এই তো হয়ে গেছে। এবার ঘুমাও।
চুল গুলো বেণি করে দেয় তুষার চিত্রার। চিত্রা বেণি টেনে দেখে শুয়ে পড়ে। তুষার লাইট নিভিয়ে চিত্রার পাশে শুয়ে পড়ে। চিত্রা তুষারের বুকে মাথা রাখে। তুষার মাথায় হাত বুলোয়। চিত্রা তুষারের শার্টের বোতামে হাত দিয়ে খুলতে থাকে।
-“ পাখি শরীর ভালো না তোমার।
চিত্রা বোতাম খুলতে খুলতে জবাব দেয় –
-“ তাতে কি?
-“ এই সময় ওসব করা উচিত না। ঘুমাও।
-“ আমার লাগবে আপনাকে।
-“ আমি পুরুষ হয়ে নিজেকে সামলাতে পারছি আর তুমি পারছো না!
চিত্রা তুষারের কানে ফিসফিস করে বলল-
-“ না।
তুষার কিছু বললো না। চুপচাপ শুয়ে রইলো। কিন্তু চিত্রা ছাড়লো না তুষারকে। শেষ মেষ না পেরে চিত্রার মাঝে ডুব দিলো। একটা পুরুষের পক্ষে নিজেকে কন্ট্রোলে রাখা ভীষণ কষ্টের। আর সেখানে নিজেই তুষার কে সিডিউস করে চলছে। কন্ট্রোলে থাকতেই পারলো না।

#চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে