#আমার_শহরে_তোমার_আমন্ত্রণ_২
#পর্ব৩১( অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষিদ্ধ)
#Raiha_Zubair_Ripti
-“ ব্রো বিয়ে তো হলো এখন তো তোমার ভাবি কে নিয়ে হানিমুনে যাওয়া উচিত।
খাবার টেবিলে থাকা সবার দৃষ্টি রাফির দিকে। রাফির সেদিকে খেয়াল নেই। সে নিজের মত মাথা নিচু করে খাচ্ছে। সামির খাঁন কেশে উঠলো। তৃষ্ণা পানির গ্লাস এগিয়ে দিলো। রাফি সামির খাঁনের দিকে তাকালো।
-“ আহ বাবা তাড়াহুড়ো করে খেয়ো না। আস্তে ধীরে খাও।
সামির খাঁন কিছু বলল না। রাফি চারপাশে তাকালো। সবাইকে নিজের দিকে তাকাতে দেখে বলে-
-“ হোয়াট’স হ্যাপেন্ড’? এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো সবাই?
তুষার খেতে ব্যাস্ত। চিত্রা রান্না ঘরে বিধায় রাফির বলা কথা শুনে নি। তানিয়া বেগম রাফির প্লেটে মাংস তুলে দিয়ে বলে-
-“ কিছু হয় নি বাপ। প্লেট থেকে তরকারি ফুরিয়ে গেছে বলিস নি কেনো?
রাফি প্লেটের দিকে তাকালো। তরকারি তো ফুরায় নি। মাংস ছিঁড়ে মুখে নিতে নিতে আবার তুষারের দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ ব্রো কিছু তো বললে না। হানি উইথ মুন কবে যাবে?
তুষার ভ্রু কুঁচকে তাকালো রাফির দিকে।
-“ কিসের হানিমুন? হানিমুনের জন্য অন্য কোথাও যেতে হবে কেনো আমার? হানিমুনের জন্য কোনো কিছু আটকে নেই আমার।
তামিম খাঁন তাড়াতাড়ি খেয়ে উঠে পড়লো। টেবিল ছেড়ে উঠার আগে সামির খাঁন কে বললেন তাড়াতাড়ি খেয়ে তার রুমে আসতে। সামির খাঁন মাথা নাড়িয়ে তাড়াতাড়ি খেয়ে চলে গেলেন। তানিয়া বেগম রান্না ঘরে গেলেন। রাফি মাংস মুখে নিয়ে চিবোতে চিবোতে বলে-
-“ আহ ব্রো আমি ভেবেছি তোমার আর ভাবির এই মধুচন্দ্রিমার সব কিছু আমি এরেঞ্জ করবো। আই মিন আমার তরফ থেকে গিফট থাকতো বাট তুমি কি যাবে না তাহলে?
তুষার এঁটো হাত ধুতে ধুতে বলে-
-“ না।
রাফি আশাহত হয়। তুষার চলে যায়। রাফি খেয়ে নিয়ে নিজেও চলে যায় অফিসে।
আজ ভোট প্রচারের শেষ দিন। তৃষ্ণা আর চিত্রা ভার্সিটি গেছে। অবশ্য একা যায় নি সাথে দুজন গার্ড ছিল। এখনও আছে ভার্সিটির গেটের বাহিরে দাঁড়িয়ে। সামনেই ফাইনাল এক্সাম এখন আপাতত তারা ক্লাস মিস দিতে চাইছে না। তুষার ও বিমত করে নি। তুষার নিজেও বেরিয়েছে ভোট প্রচারের জন্য। রেডিও কলোনির কাছে আসতেই সাক্ষাৎ হয় হালিম সরকার ও তার ছেলে হৃদয়ের সাথে। তারাও ভোট প্রচারের জন্য বের হয়েছে। তুষার কে দেখা মাত্রই হালিম সরকার তার ছেলে কে নিয়ে তুষারের দিকে এগিয়ে আসে। তুষার তখন ফুটপাতে থাকা দোকানের মালিক গুলোর সাথে কথা বলছিলো।
-“ আরে তুষার তুমি ও এসেছো ভোট সংগ্রহ করতে!
তুষারের ব্যাঘাত ঘটে। ভ্রু কুঁচকে পাশে তাকিয়ে হালিম সরকার ও তার ছেলেকে এক নজর দেখে শক্ত গলায় বলে-
-“ আমি কোনো প্রাইম মিনিস্টার নই যে ভোট প্রচারের জন্য আমি বের হতে পারবো না। আপনি নিজেও এসেছেন ছেলে নিয়ে।
হালিম সরকার স্মিত হাসলো।
-“ সে যা বলেছো। তোমার বাবার জন্য তো এমপি হতে হতে গিয়েও হতে পারলাম না এযাবৎ দিন ধরে। এবার ছেলেকে দাঁড় করিয়ে দেখি কি হয়।
-“ সৎ পথে থেকে নিজের স্বার্থের কথা না ভেবে জনগণের কথা ভাবলে জনগণ ই আপনাকে সাফল্য অর্জন করতে সাহায্য করতো। এবার ছেলেকে দাঁড় করিয়েছেন আমার বিপরীতে। আমার মনে হয় না খুব একটা লাভ হবেন বা জিততে পারবেন। জনগণ জানে কাকে জিতালে তাদের সুবিধা হবে।
হালিম সরকার পৈশাচিক ভাবে হাসলো। হৃদয় তুষারের দিকে তাকিয়ে বলল-
-“ আপনি বেশ কনফিডেন্স নিজেকে নিয়ে দেখছি!
তুষার হৃদয়ের দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ অবশ্যই।
-“ ওভার কনফিডেন্স কিন্তু ভালো নয়।
-“ ভেঙে দেখাও আমার এই কনফিডেন্স কালকের মধ্যে। পারলে জিতে দেখাও। আমিও দেখতে চাই।
কথাটা বলে তুষার চলে আসে। রাফি অফিসে বসে আছে। একটু পরই একটা প্রজেক্টের মিটিং এটেন্ড করতে হবে। রাফির পিএ রুমকি এসে দরজায় কড়া নেড়ে জানান দিলো মিটিং রুমে সবাই এসেছে। তাকেও যেতে হবে। রাফি বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। আজ ফাস্ট টাইম সে কোনো প্রজেক্টের প্রেজেন্টেশনের জন্য মিটিং এটেন্ড করবে। তার এই প্রেজেন্টেশনের সম্পূর্ণ দায়ভার সামির খাঁন তাকে দিয়েছে। জোরে জোরে দুটো শ্বাস নিয়ে ল্যাপটপ টা নিয়ে মিটিং রুমের দিকে গেলো।
মিটিং রুমের দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে দেখে সাত থেকে আট জন লোক বসে আছে। তার মধ্যে তিনজন ইয়াং আর বাকি লোক তার বাবার বয়সী। রাফি ভেতরে ঢুকে ল্যাপটপ টা টেবিলের উপর রেখে বলে-
-“ সরি ফর লেট।
লোক গুলোর মধ্যে থাকা এক লোক বলে উঠলো –
-“ ইট’স ওকে। বাট হু আ’র ইউ? হয়ার ইজ মিস্টার সামির খাঁন?
-“ লেট মি ইন্ট্রোডিউস মাইসেলফ। মাই নেইম ইজ রাফি খাঁন। মিস্টার সামির খাঁন ইজ মাই ড্যাড। এ্যান্ড আই এ্যাম রেসপন্সিবল ফর দ্যিস প্রজেক্ট।
-“ ওহ্।
-“ ইয়াহ, আই থিঙ্ক উই শুড স্টার্ট দ্যা প্রেজেন্টেশন।
-“ প্লিজ স্টার্ট ইউ।
রাফি দীর্ঘ শ্বাস ফেললো। প্রজেক্টর টা অন করে বলল-
-“ দ্যিস প্রোডাক্ট, আই প্রেজেনট ইজ এক্সট্রাওরডিনারি। দ্যা পাই চার্ট ইজ ডিভাইডেড ইন্টু সেভরল পার্টস। হেয়ার আর সাম ফ্যাক্টস এ্যান্ড ফিগারস……….. প্রেজেন্টেশনের মধ্যে রাফি বলে উঠলো- প্লিজ ফীল ফ্রি টু ইন্টারপট মি ইফ ইউ হেভ এনি কুইসচেনস…………..।
সবাই মনোযোগ সহকারে রাফির প্রেজেন্টেশন দেখলো। লোক গুলো নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করলো। দ্যান তারা রাজি হলো এই প্রজেক্টে ইনভেস্ট করতে। রাফি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো।
মিটিং শেষে নিজের কেবিনে গিয়ে গা এলিয়ে দিলো। রুমকি দরজায় কড়া নেড়ে বলে-
-“ মে আই কমিং স্যার?
-“ ইয়েস।
রুমকি ঢুকলো। কফির মগ টা রাফির দিকে বারিয়ে দিয়ে বলল-
-“ আপনার কফি।
রাফি চোখ মেলে তাকালো। এই মুহুর্তে তার এই কফির ই দরকার ছিলো। দুই ঘন্টা বকবক করে তার চোয়াল ব্যাথা হয়ে গেছে। তার বাবা যে কি করে এতোদিন সামলিয়েছে সেটা ভাবতেই রাফি ক্লান্ত হয়ে পড়ে। কফির মগ টায় চুমুক বসিয়ে রুমকির উদ্দেশ্যে বলে-
-“ নাউ ইউ ক্যান গো।
রুমকি চলে যায়। রাফি কফির মগটা হাতে নিয়ে কেবিনের সাথে থাকা বড় বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ায়। মুহুর্তে ঠান্ডা শীতল বাতাস রাফির শরীর কে শীতল করে তোলে। ক্লান্ত শরীর আরাম পায়। বেলকনিতে থাকা দোলনা টায় বসে পড়ে। ওয়েদার টা দারুন। এখানে বসে পুরো শহর টা কে দেখা যাচ্ছে।
তৃষ্ণা চিত্রার ক্লাস শেষ। ব্যাগ কাঁধে নিয়ে ক্লাস রুম থেকে বের হতেই চিত্রার ফোন বেজে উঠে। চিত্রা ব্যাগ থেকে ফোন টা বের করে দেখে তুষারের ফোন। মুহুর্তে মুখের হাসি চওড়া হয়। ফোনটা রিসিভ করে কানে নিতেই ওপাশ থেকে ভেসে আসে-
-“ ক্লাস শেষ?
চিত্রা হুমম জানায়।
-“ বাহিরে গার্ড আছে তোমাকে আর তৃষ্ণা কে বাসায় পৌঁছে দিবে।
-“ আচ্ছা। বাসায় ফিরবেন কখন?
-“ সন্ধ্যা হবে। কোনো কিছু দরকার?
-“ হুমম।
-“ কি দরকার বলো ফেরার পথে আমি নিয়ে আসবো।
-“ ফেরার পথে আস্ত তুষার টাকে নিরাপদে নিয়ে ফিরবেন তার চিত্রার কাছে।
তুষার স্মিত হাসলো চিত্রার কথা শুনে।
-“ ভীষণ চিন্তা করো দেখছি তাকে নিয়ে?
-“ অবশ্যই। তাকে নিয়ে চিন্তা করার যথেষ্ট কারন আছে।
-“ একটা কারন আমাকেও বলো,শুনি।
-“ ঐ একটা কারন হচ্ছে,,আই লাভ স্নো।
-“ আচ্ছা! সন্ধ্যায় দেখা হচ্ছে।
-“ জ্বি আল্লাহ হাফেজ।
তুষার আজ সন্ধ্যার দিকেই ফিরেছে। কাল ভোট। ড্রয়িং রুমের বাড়ির প্রত্যেক সদস্য বসে আছে। রাতুল ও এসেছে আজ। বাড়ির সকলে কাল ভোট কেন্দ্রে যাবে ভোট দিতে। রাফি নিয়ে যাবে নিজ দায়িত্বে। তৃষ্ণা ভীষণ এক্সাইটেড ফাস্ট টাইম সে ভোট দিবে। চিত্রা এর আগে দিয়েছিল তার বাবা কে। এবার নিয়ে দু বার হবে। তামিম খাঁন ছেলের পানে তাকিয়ে বলল-
-“ আমার মনে হয় না ভোট কেন্দ্রে কোনো গোলমাল হবে। সব জায়গায়ই তো আমাদের লোক লগানো আছে। হালিম সরকার এমন ভুল ভুলেও করবে না। সে নিজেও জানে সে জিতবে না।
তুষার আড়চোখে তাকালো। তবে কিছু বললো না। আজ রাত টা দুশ্চিন্তায় কাটবে তার। জনগণ ই ঠিক করবে তাদের উপযুক্ত এমপি কে। রাতে তাড়াতাড়ি করে ডিনার সেরে নিজের রুমে চলে গেলো তুষার। চিত্রা তুষার কে পরখ করলো। হাতের কাজকর্ম তাড়াতাড়ি শেষ করে রুমে এসে দেখে তুষার বিছানায় শুয়ে আছেস সটান হয়ে। এক হাত কপালে। চিত্রা এগিয়ে গিয়ে কপালে হাত দিয়ে দেখলো জ্বর এসেছে কি না। কিন্তু নাহ জ্বর আসে নি।
-“ শুয়ে শুয়ে তোমার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। জ্বর আসে নি।
চিত্রা সোজা হয়ে দাঁড়ালো। তুষার চোখ মেলে তাকালো। ইশারায় চিত্রা কে লাইট নিভিয়ে দিয়ে পাশে শুতে বললো। চিত্রা লাইট নিভিয়ে তুষারের পাশে শুতেই তুষার চিত্রা কে জাপ্টে জড়িয়ে ধরে গলায় মুখ ডুবিয়ে দেয়। চিত্রা অভস্ত্য হয়ে গেছ এখন। হুটহাট ছোঁয়ায় কেঁপে উঠে না এখন। তবে আজ আর তুষার পাগলামি করলো না। আর না অধর ছুঁয়ে মাতলামি। শুধু মুখ ডুবিয়ে রেখেছ গলায়৷ নিশ্বাসের গরম বাতাস পড়ছে চিত্রার গলায়৷ চিত্রা তুষারের দিকে ঘুরলো। তুষারের গালে হাত রেখে বলল-
-“ কি হয়েছে? কালকের জন্য চিন্তিত আপনি?
তুষার চোখ মেলে তাকালো। মৃদু শব্দে বলল- না।
-“ তাহলে এমন চুপচাপ কেনো?
-“ ভাবছি।
-“ কি ভাবছেন?
-“ সামনে কোনো বড় ঝড় আসতে চলছে। কিন্তু কিভাবে সেই ঝড় টা আমাদের জীবনে আসবে সেটা নিয়েই ভাবছি।
-“ কিসের ঝড়ের কথা বলছেন?
-“ কালবৈশাখী ঝড়ের নাম শুনেছো তো? তেমনই এক ঝড়ের পূর্বাভাস পাচ্ছি। সব কিছু লণ্ডভণ্ড করে দিবে।
চিত্রা তুষারের শার্ট খামচে ধরলো।
-“ এসব অলক্ষুণে চিন্তা করছেন কেনো। পজিটিভ ভাবুন। আল্লাহ আছেন,সব ঝড় থেকে আমাদের রক্ষা করবে।
তুষার তপ্ত শ্বাস ফেললো। পুনরায় চিত্রা কে জড়িয়ে ধরে বলে-
-“ আচ্ছা সেই ঝড়ে যদি আমি বিলিন হয়ে যাই তখন….
তুষার আর শেষ করতে পারলো না কথাটা। চিত্রা শোয়া থেকে উঠে বসলো। তুষারের দিকে তাকিয়ে রইলো এক দৃষ্টি তে। তুষার নিজেও উঠে বসলো।
-“ কি হলো?
চিত্রা আগের ন্যায় তাকিয়ে জবাব দেয়।
-“ আপনার হয়েছে টা কি? এসব কেনো বলছেন আপনি? আমি বিয়ের আগে কি বলেছিলাম আপনায়? আমি সুস্থ স্বাভাবিক সম্পর্কে জড়াতে চেয়েছিলাম। আপনি কি বলছেন এখন এসব? আমি জানি রাজনীতি করলে প্রানের সংশয় থাকে। তাই বলে আপনি এসব কেনো বলবেন? বিয়ের পর আমার গোটা পৃথিবী আপনি হয়ে গেছেন। আপনি কি করে আমাকে একা ফেলে নির্দ্বিধায় বলে দিচ্ছেন বিলিন হয়ে যাওয়ার কথা।
তুষার চিত্রার বাহু ধরে তাকে শোয়ালো। চিত্রার মাথাটা তুষারের বুকের উপর। তুষার চিত্রার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে-
-“ সরি। আমাকে বাঁচতে হবে তোমার জন্য। বাচ্চার বাবা হওয়া বাকি এখনও,,বৃদ্ধ হতে হবে তোমার সাথে। অনেক কিছু বাকি। এতো আগেই ঝড়ে পড়তে চাই না।
অন্ধকার বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে এক অবয়ব। হাতে তার একটা ফটো। দৃষ্টি তার আকাশে থাকা চাঁদে। মুখ থেকে মৃদু আওয়াজে ভেসে আসলো –
-“ দ্যিস গেইম স্টার্ট’স ফ্রম নাউ। সেভ ইউর লাইফ ইফ ইউ ক্যান।
কথাটা বলেই লাইটারের আগুনের সাহায্যে হাসতে থাকা দুই যুগলবন্দী ছবি পু’ড়িয়ে ভস্ম করে দিলো। ছাই গুলো কে হাতে নিয়ে ফু দিয়ে আকাশে উড়িয়ে দিলো।
————————-
টিভির সামনে বসে আছে খাঁন পরিবারের সবাই। দুপুরে গিয়ে তারা ভোট দিয়ে এসেছে সবাই। চিত্রা আজ হোয়াইট কালারের শাড়ি পড়েছে তুষারের পাঞ্জাবির সাথে মেচিং করে। তুষার রাফি রাতুল ভোট কেন্দ্রে। পুরো সিকিউরিটি দ্বারা আবদ্ধ ভোট কেন্দ্রে। কোনো নকল ফেইক ভোট দেওয়ার কোনো চান্স নেই। তামিম খাঁন সব ঠিক করে রেখেছেন। তুষারের ভোট নিয়ে মোটেও চিন্তা নেই। তার চিন্তা অন্য কিছু নিয়ে। গতকাল রাতে বাহিরের দেশের একটা নম্বর একটা মেসেজ আসে তুষারের নম্বরে।
মেসেজ টা ছিলো- “ দ্যিস গেইম স্টার্ট’স ফ্রম নাউ। সেভ ইউর লাইফ ইফ ইউ ক্যান।”
নম্বর টা মালদ্বীপের। কিন্তু মালদ্বীপ থেকে কেই বা তাকে এমন মেসেজ পাঠাবে? মালদ্বীপে কেউ থাকতে পারে এমন জানা শোনা কেউ তো নেই। এসব ভাবনার মাঝেই হুট করে কারো সঙ্গে ধাক্কা খায় তুষার। তুষার সরি বলে চলে আসে।
রাতুল সেই কখন থেকে তুষার কে চিন্তিত দেখছে। ভোটের জন্য চিন্তিত মনে করে আর ঘাটে নি তুষার কে।
চিত্রা খাবার টেবিলে এক এক করে তুষারের সকল পছন্দের খাবার রাখছে। এর মধ্যে টিভির হেডলাইনে জ্বল জ্বল করে উঠলো ঢাকা ১৯ আসনে এমপি পদে জয়ী হয়েছে তুষার খাঁন। লেখাটা পড়ে তৃষ্ণা জোরে চিৎকার করে উঠে। চিত্রা তাকায় টিভির পানে। মুখে হাসি ফুটে উঠে। এগিয়ে আসে সোফার দিকে। অধরা চেয়ে আছে চিত্রার মুখে দিকে। চিত্রার মুখের হাসি দেখে তার মুখেও হাসি ফুটে উঠলো। এগিয়ে এসে চিত্রা কে জড়িয়ে ধরে বলল-
-“ ভাইয়া কে ফোন দিয়ে কথা বলো ভাইয়ার সাথে।
চিত্রা না জানালো। সে ফোন করবে না। লোকটা হয়তে ব্যাস্ত আছে এখন। তুষারপর এমপি হওয়ার খবর শুনে সাহেল আহমেদ ফোন দিয়েছিল চিত্রা কে। চিত্রা বাবার সাথে কথা বলে। এখন অপেক্ষা গুনছে স্বামীর বাড়ি ফেরার।
অপেক্ষারা দীর্ঘ হলো না। সন্ধ্যার আগেই ঘামার্তক শরীর নিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করে তুষার। চিত্রা রুমে ছিল। তুষার ক্লান্ত শরীর নিয়ে রুমে প্রবেশ করে দেখে চিত্রা বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে। তুষার এলোমেলো পায়ে এগিয়ে গেলো। পেছন থেকে চিত্রা কে ধরলো। চিত্রা বেলকনির রেলিং ধরে বলল-
-“ কংগ্রাচুলেশনস এমপি মশাই।
তুষার শাড়ি ভেদ করে চিত্রার উন্মুক্ত পেটে হাত রেখে বলল-
-“ শুধু কংগ্রাচুলেশনে চিঁড়া ভিজবে না মিসেস খাঁন।
চিত্রা ফিরলো। তুষারের চোখে চেয়ে বলল-
-“ উমম তাহলে কি করলে চিঁড়া ভিজবে?
-“ আই থিংক কিস।
চিত্রা ঠোঁট কামড়ে ভাবার মতো করে কিছু ভাবলো তার পর শুধালো।
-“ ওকে মিস্টার খাঁন আই উইল ডু ইট।
কথাটা বলে চিত্রা তুষারের অধরে নিজের অধর ডুবিয়ে দিলো। তুষার এক হাতে চিত্রা কে নিজের শরীরের সাথে মিশিয়ে নেয়। চিত্রার দু হাত তুষারের পাঞ্জাবির কলারে। মিনিট দুয়েক পর চিত্রা ছেড়ে দিয়ে চলে আসতে নিলে তুষার আঁকড়ে ধরে চিত্রার অধর। চিত্রা হাঁপিয়ে উঠলো। মিনিট কয়েক পর তুষার ছেড়ে দিলো। চিত্রার মাথা টা বুকে চেপে ধরে বলে-
-“ এখনও অভ্যস্ত হতে পারলে না। এই টুকুতেই হাঁপিয়ে যাও!
চিত্রার শ্বাস উঠানামা করছে দ্রুতবেগে।
-“ শান্ত হও চিত্রা।
চিত্রা চেষ্টা করলো শান্ত হওয়ার। চিত্রার চুলে চুমু খেয়ে চিত্রার হাত ধরে রুমে আসে। চিত্রা কে বিছানায় বসিয়ে ওয়ারড্রবের উপর থেকে টাওয়াল নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায় ফ্রেশ হতে।
মধ্য রাত্রি,, আকাশে জ্বলজ্বল করছে চাঁদ। ছাঁদে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে তৃষ্ণা আর রাফি। রাফি আজকাল ভীষণ ব্যাস্ত থাকে। এ নিয়ে তৃষ্ণার মনে বিষাদ জমেছে ভীষনভাবে। রাফি কোনো ভনিতা ছাড়াই তৃষ্ণার হাত ধরলো। তৃষ্ণা তাকালো। তৃষ্ণার চোখের দিকে তাকিয়ে রাফি বলে-
-“ যতোই আমি তোমার কাজিন হই না কেনো। এমপির বাড়ির মেয়েকে তারা কোনো বেকার ছেলের কাছে মেয়ে দিতে চাইবে না। আমি জানি চাচার কাছে তোমায় চাইলে তারাও না করবে না। কিন্তু আমার আলাদা কোনো পরিচয় আগে ছিলো না এখন হয়েছে। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছি। বাবার ব্যাবসার হাল ধরেছি পুরোদমে। সেজন্য আমাকে ব্যাস্ত সময় পার করতে হয়েছে নিজেকে পুরোদমে গুছিয়ে নিতে। নাউ আই’ম ফ্রী। তোমাকে চেয়ে নেওয়ার সময় এখন। কালই চাচার কাছে তোমাকে চাইবো। তার আগে তোমার অনুমতি নিতে চাই তুমি কি রাজি বা শিওর আমার সাথে বাকি জীবন এক সাথে থাকার জন্য?
তৃষ্ণা কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। শব্দ গুলে গলায় আঁটকে আছে। কোনো রকম টলমল চোখে মাথা ঝাঁকিয়ে হ্যাঁ জানালো। রাফি স্মিত হাসলো। এই প্রথম তৃষ্ণা কে সে বুকে জড়িয়ে ধরলো। তৃষ্ণার শরীর কাঁপছে। মনে হচ্ছে সে স্বপ্ন দেখছে। রাফি তৃষ্ণার মাথায় চুমু খেলো। তৃষ্ণা কে ছেড়ে তৃষ্ণার গালে আলতো করে দু হাত রেখে বলে-
-“ ঘুমিয়ে পড়ো রুমে গিয় রাত হয়েছে।
তৃষ্ণা বাধ্য মেয়ের মতো ছাঁদ থেকে নেমে যায়। রাফি তৃষ্ণার যাওয়ার পানে তাকিয়ে কিঞ্চিৎ হেসে উঠে।
#চলবে?
#আমার_শহরে_তোমার_আমন্ত্রণ_২
#পর্ব৩২( অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষিদ্ধ)
#Raiha_Zubair_Ripti
-“ নেক্সট উইকে তোমায় মালদ্বীপ যেতে হবে রাফি নতুন প্রজেক্ট টার জন্য। আই থিংক তোমার সমস্যা নেই। সো প্রিপেয়ার্ড হও যাওয়ার জন্য।
খাওয়ার টেবিলে খাবার খেতে খেতে কথাটা বলেন সামির খাঁন। চকিতে ঘাড় ঘুরায় রাফি। বিস্ময় হয়ে বলে-
-“ আগে তো বলো নি।
-“ কাল রাতেই মিস্টার জেইদ জানিয়েছেন। টাকা টা তারা ইনভেস্ট করছে তো তারা চাচ্ছে প্রজেক্ট টা তাদের ওখানেই কমপ্লিট করতে।
-“ কতদিন থাকতে হবে?
-“ সেটা তোমার প্রজেক্টের উপর নির্ভর করছে। মাস দুয়েক লাগতে পারে বা মাস তিনেক বা তার ও বেশি।
-“ অনেক দিনের ব্যাপার।
-“ হুম কোনো সমস্যা?
-“ হুমম সমস্যা ই তো। বিয়ের প্ল্যান করছি আর তুমি প্রজেক্টের কাজে পাঠাচ্ছো তাও আবার দু চার দিনের জন্য নয় মাস কয়েকের জন্য!
কথাটা বিরবির করে উচ্চারণ করে রাফি। সামির খাঁন প্লেটে হাত ধুতেধুতে বলে-
-“ কিছু বললে?
রাফি প্লেটে হাত দিয়ে আঁকিবুঁকি করতে করতে বলে-
-“ না না কিছু বলি নি।
-“ তাহলে যাচ্ছ নেক্সট উইক। আমি ভিসা রেডি করে রাখবো।
-“ আচ্ছা।
সামির খাঁন চলে যায়। তানিয়া বেগম রাফি কে ভাবান্তর হয়ে থাকতে দেখে বলে-
-“ খাচ্ছিস না কেনো?
তুষার ঠোঁট কামড়ে কিয়ৎ ক্ষন চুপ থেকে শুধালো-
-“ ভাবছি।
তানিয়া বেগম ভ্রু কুঁচকে বলল-
-“ কি ভাবছিস?
রাফি এঁটো প্লেটে হাত ধুতেধুতে বলে-
-“ অনেক কিছু ভাবছি। ধীরে ধীরে প্রকাশিতব্য হবে।
রাফি চলে যায়। তানিয়া বেগম রাফির যাওয়ার পানে তাকিয়ে রয়। কি বললো কিছুই বুঝলেন না তিনি।
চিত্রা আর তৃষ্ণা ভার্সিটির ক্লাস রুমে বসে আছে। গত কাল রাতে রাফির বলা সব কথা চিত্রা কে বলছে তৃষ্ণা। চিত্রা চুপচাপ শুনলো। তৃষ্ণার খুশির সীমানা নেই। তার আজ মুক্ত পাখির মতো আকাশে উড়ে বেড়াতে ইচ্ছে করছে। ক্লাসে স্যার আসতেই দু’জনে ক্লাসে মনোযোগী হয়। তুষার আজ সংসদ ভবনে গেছে। প্রাইম মিনিস্টার সব এমপি কে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। তুষারের সাথে রাতুল আর তামিম খান সহ কয়েকজন গার্ড গিয়েছেন। আপাতত তারা বসে প্রাইম মিনিস্টারের বক্তব্য শুনছেন।
চিত্রা কে যাওয়ার আগে বলে দিয়ে গেছে চিত্রার ক্লাস শেষ হতে হতে তুষার এসে পড়বে। অপেক্ষা করতে বলেছে।
ক্লাস শেষে মাঠে বসে অপেক্ষা করছে তৃষ্ণা চিত্রা তুষারের। এরমধ্যে হন্তদন্ত হয়ে রাফি এসে দাঁড়ায় তাদের সামনে। কাউকে সামনে এসে দাঁড়াতে দেখে তারা মাথা উঁচু করে তাকায়। রাফিকে দেখে চিত্রা ভাবে হয়তো তুষার এসেছে। বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়।
-“ ভাবি তৃষ্ণা কে নিয়ে যাচ্ছি।
চিত্রা ভ্রু কুঁচকালো।
-“ আমাকে নিবেন না? আপনার ভাই কোথায়? আসে নি?
রাফি মাথা চুলকে জবাব দিলো-
-“ ব্রো জানালো তার আসতে আর একটু লেট হবে। আমি তৃষ্ণা কে নিয়ে যেতে এসেছি। আপনি ব্রো এর সাথে ফিরবেন।
চিত্রা পুনরায় ঘাসের উপর বসে পড়লো। তৃষ্ণার হাত ধরে বলল-
-“ ভাবি আসছি। ব্রো এসে পড়লো বলে।
চিত্রা প্রতিত্তোরে স্মিত হেঁসে মাথা নাড়ালো। রাফি তৃষ্ণা চলে যাওয়া পর খুব একটা অপেক্ষা করতে হয় নি চিত্রা কে তার এমপি মশাই এর জন্য। ক্লান্ত শরীর নিয়ে এলোমেলো পায়ে হেঁটে এসেছিল তার সামনে। সাদা শার্ট ঘামে ভিজে শরীরে লেপ্টে ছিলো। লোকটা আজকাল কালো রঙের বাহিরে ভিন্ন রঙের শার্ট পড়ে। ভালোই লাগে চিত্রার।
তুষার কে দেখা মাত্রই উঠে দাঁড়ালো চিত্রা।
-“ ওখান থেকে সোজা এখানে চলে এসেছেন?
তুষার চুল গুলোকে পেছনের দিকে ঠেলে দিয়ে বলে-
-“ হ্যাঁ।
চিত্রা বিরক্ত হলো। নজর অন্য দিকে ঘুরিয়ে বলে-
-“ মাস্ক খুলুন। আমি দেখবো আপনাকে।
তুষার চিত্রার হাত চেপে ধরলো। চিত্রা কে নিয়ে হেঁটে গাড়ির সামনে আসলো। ইশারায় চিত্রা কে গাড়িতে উঠতে বলে নিজেও গাড়িতে উঠে বসে। তারপর মুখে মাস্ক টা খুলে চিত্রার দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ নাও মন ভরে দেখো।
চিত্রা তাকালে ঐ মুখ টার দিকে। ওড়নার এক প্রান্ত দিয়ে মুখে গলায় লেগে থাকা ঘাম যত্নসহকারে মুছে দেয়।
-“ আপনার কিন্তু না আসলেও চলতো। রাফি ভাইয়া এসেছিল আমি তার সাথেই বাসায় চলে যেতে পারতাম।
তুষার গাড়ি স্টার্ট দিতে দিতে বলে-
-“ আমার বউ অন্য কারো সাথে কেনো যাবে আমি থাকতে?
-“ আপনি এখানে না এসে বাসায় গিয়ে রেস্ট নিলে এই ক্লান্ত ভাব টা এখন থাকতো না।
-“ তোমাকে দেখলেই আমার সব ক্লান্তি এক নিমিষেই উধাও হয়ে যায়।
-“ হয়েছে হয়েছে। শুনুন একটা কথা বলবো।
-“ হুমম বলো শুনছি।
-“ আমাদের বিয়ের ক মাস হলো?
-“ উমম সেদিন না বিয়ে করলাম? মাস তো হয় নি।
চিত্রা সরু চোখে তাকালো।
-“ আড়াই মাস হয়েছে।
-“ সিরিয়াসলি আড়াই মাস!
-“ ফাজলামি বন্ধ করবেন? আমার কথাটা শুনুন।
-“ আচ্ছা বলো।
-“ দাদি কি বলছে জানেন?
-“ কি বলছে?
-“ আজ সকালে আপনি চলে যাওয়ার পর খাবার টেবিলে দাদি ফট করে বাচ্চার কথা তুলেছে।
তুষার গাড়ি চালানোর মাঝে আড়চোখে একবার তাকিয়ে বলে-
-“ কার বাচ্চার কথা বললো?
চিত্রা তুষারের দিকে তাকালো।
-“ বুঝেন নি কার বাচ্চা হতে পারে?
-“ না। আমাদের রিলেটিভ দের মধ্যে তো বাচ্চা নেই। সবাই যথেষ্ট বড়।
-“ থাক আর বুঝে কাজ নেই। তাড়াতাড়ি বাসায় চলেন ভীষণ টায়ার্ড ফিল হচ্ছে।
-“ সারাদিন ছোটাছুটি করি আমি আর টায়ার্ড ফিল হয় তোমার!
-“ হ্যাঁ হয়।
-“ চাচা তোমার সাথে আমার কিছু দরকারি কথা আছে।
তামিম খাঁন বিছানায় শুয়ে রেস্ট নিচ্ছিলেন। দরজার পানে তাকিয়ে দেখলেন রাফি তৃষ্ণার হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে। তামিম খাঁন উঠে বসলেন। তানিয়া বেগম গেছেন ওয়াশরুমে।
-“ ভেতরে আসো।
রাফি তৃষ্ণা কে নিয়ে ভেতরে ঢুকলো। ততক্ষণে তানিয়া বেগম ও ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে আসলেন। রাফি সোজা তামিম খাঁনের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে কোনো ভনিতা ছাড়াই বলল-
-“ চাচা আমি পাত্র হিসেবে কেমন?
আকস্মিক রাফির মুখ থেকে এমন কথা শুনে হকচকিয়ে যায় তামিম খাঁন। একবার স্ত্রীর পানে তাকায়। রাফি তামিম খাঁন কে চুপ থাকতে দেখে বলে-
-“ কি হলো চাচা বলো আমি পাত্র হিসেবে কেমন?
তামিম খাঁন রাফির দিকে তাকালো। মুচকি হেঁসে বলল-
-“ সুপার ডুপার।
রাফি ভ্রু কুঁচকে বলল-
-“ তারমানে বলছো পাত্র হিসেবে আমি ঠিকঠাক।
তামিম খাঁন হ্যাঁ জানালো।
-“ আমি কোনো মেয়ের বাবার কাছে গিয়ে তার মেয়েকে চাইলে সে না করতে পারবে না তাই তো?
-“ হঠাৎ এসব বলছিস কেনো?
তামিম খাঁনের সন্দেহান দৃষ্টি দেখে রাফি ফের বলল-
-“ আহা বলোই না। না করবে মেয়ের বাবা?
-“ না করার সম্ভাবনা কম।
-“ উমম তাহলে পজিটিভ টাই কাউন্ট করছি। তোমার মেয়ের তো বয়স হচ্ছে বিয়ের জন্য পাত্র লাগবে না?
-“ তা তো লাগবেই। কিন্তু এসব কেনো বলছিস?
তানিয়া বেগমের কথা শুনে রাফি তানিয়া বেগমের দিকে তাকায়।
-“ তোমার মেয়ের জন্য আমার চাইতে কি ভালো ছেলে পাবে?
তানিয়া বেগম তামিম খাঁন একে ওপরের দিকে তাকালো। তানিয়া বেগম একবার তৃষ্ণার দিকে তাকিয়ে ফের রাফির দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ মানে?
-“ কোনো মানে টানে নেই। চাচা নিজের মুখেই স্বীকার করেছে পাত্র হিসেবে আমি ভালো। তোমাদের কাছে প্রস্তাব রাখছি তোমরা কি তোমাদের মেয়েকে আমায় দিবে? ভীষণ ভালোবাসবো তাকে। একদম আগলে রাখবো। কোনো কষ্ট পেতে দিবো না। দিবে আমায় তোমাদের মেয়ে?
তৃষ্ণার হৃদপিণ্ড ধুরুধুরু করছে। ভয়ে মাথা তুলে তাকাতে পারছে না। রাফির হাত থেকে নিজের হাত ছাড়াতে চাইছে। সেজন্য রাফি শক্ত করে হাত ধরে রেখেছে।
তামিম খাঁন মেয়ের দিকে তাকালো। তারপর স্বাভাবিক ভাবেই বলল-
-” ভালোবাসো দু’জন দু’জনকে?
-“ ভালোবাসা না থাকলে কি বিয়ে করা যায় না চাচা? ধরে নাও এটা এরেঞ্জ ম্যারেজ।
-“ সামির জানে এসব?
-“ না বাবা ফিরলে জানাবো। বাবার মনে হয় না আপত্তি থাকবে।
-“ সামির আসুক তারপর এ বিষয় নিয়ে কথা হবে। এখন রুমে যাও।
রাফি তৃষ্ণা কে নিয়ে বেরিয়ে যেতে চাইলে তামিম খাঁন বলেন-
-“ তৃষ্ণা কে রেখে যাও। কথা আছে আমার ওর সাথে।
রাফি পেছন ফিরে একবার তাকায়।
-“ কি কথা চাচা? এখনই বলো আমার সামনে। আমি তৃষ্ণা কে একা রেখে যাচ্ছি না।
তামিম খাঁন বালিশের নিচ থেকে ফোন টা বের করে। সামির কে ফোন দিয়ে ইমার্জেন্সি বাসায় আসতে বলে।
তুষার আর চিত্রা বাসায় ফিরেছে। ড্রয়িং রুমে আসতেই দেখে সোফায় থমথমে মুখ নিয়ে বসে আছে পরিবারের সবাই। সাথে আছে রাতুল ও তার মা।
চিত্রা সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে গেলো। তামিম খাঁন ছেলেকে দেখে বললেন-
-“ ফ্রেশ হয়ে তাড়াতাড়ি নিচে আসো।
তুষার ভ্রু কুঁচকে বলল-
-“ কি হয়েছে?
তানিয়া বেগম তুষারের বাহু ধরে টেনে বলে-
-“ আগে ফ্রেশ হয়ে আয়।
তুষার চলে গেলো ফ্রেশ হতে।
তৃষ্ণা অধরা রুম জুড়ে পায়চারি করছে। আজকের দিনেই সব হতে হলো? এক রাফি বিয়ের প্রস্তাব রেখেছিল আর এখন রাতুল আর রাতুলের মা এসেছে অধরার জন্য বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে। একই দিনে পরিবারের দু মেয়ের জন্য বিয়ের প্রস্তাব। রাতুল তাকে জানায় নি যে আজ প্রস্তাব নিয়ে আসবে। সে নিয়ে ভীষণ রেগে আছে অধরা। চিত্রা ফ্রেশ হয়ে তৃষ্ণা দের রুমে আসে। দু’জন কে পায়চারি করতে দেখে বলে-
-“ কি হয়েছে গো বাসায়? নিচে ওমন থমথমে পরিবেশ আর এখানে তোমরা এমন পায়চারি করছো যে?
তৃষ্ণা চিত্রার দিকে একপলক তাকিয়ে বলে-
-“ নিচে গিয়ে দেখ তোর দেওর কি করেছে আজ।
-“ কি করেছে?
-“ আমাকে বিয়ে করার জন্য প্রস্তাব দিয়েছে বাবার কাছে।
চিত্রা স্মিত হেঁসে বলল-
-“ এটা তো ভালো কথা। তুই তো এটাই চাইতি। তো খুশি না হয়ে এমন ভয় পাচ্ছিস কেনো?
তৃষ্ণা তখনকার ঘটে যাওয়া সব ঘটনা খুলে বলল। চিত্রা সব শুনে জাস্ট হা হয়ে গেলো। তৃষ্ণার বাহু তে আলতো থাপ্পড় দিয়ে বলে-
-“ দেবর আমার সেই লেভেলের চিজ তো। সোজা কাপ নিয়ে নিবে না খেলেই।
-“ আর জানিস রাতুল ভাই কি করছে।
-“ কি করছে?
-“ তার মা কে নিয়ে এসেছে অধরা আপুকে বিয়ে করবে বলে।
চিত্রা অধরার পানে তাকালো। অধরা মাথা চেপে বসে আছে।
-“ বাই এনি চান্স আজ কি বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ার দিবস নাকি?
#চলবে?