#আমার_শহরে_তোমার_আমন্ত্রণ_২
#পর্ব২৭( অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষিদ্ধ)
#Raiha_Zubair_Ripti
সদ্য শাওয়ার নিয়ে ভেজা উদাম বলিষ্ঠ শরীরে টাওয়াল পড়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয় তুষার। ভেজা চুলগুলোর মাঝে হাত দিয়ে নাড়াচাড়া করে। দৃষ্টি তার বেঘোরে ঘুমানো চিত্রার দিকে। চাদর জড়িয়ে এলোমেলো হয়ে শুয়ে আছে। বিছানার পাশেই পড়ে আছে কাল রাতে পড়নে থাকা বস্ত্র। ঘুমন্ত চিত্রা কে কি নিষ্পাপ শুভ্র পরী লাগছে। শেষ রাতের দিকে ঘুমিয়েছে দু’জনে। আজান কানে আসতেই তুষার বিছানা থেকে উঠে পড়েছিল। চিত্রার কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলেছিল ঘুম থেকে উঠে গোসল করে নিতে আজান দিয়েছে৷ নামাজ পড়তে হবে।
চিত্রা তার ব্যাথাযুক্ত শরীর নিয়ে চোখ মুখ কুঁচকে বলেছিল-
-“ আজকের দিন টা বাদ যাক। পুরো শরীর ব্যাথা। নড়তে পারছি না। একটু ঘুমাতে দিন।
তুষার চিত্রার কথা শুনে ভ্রু কুঁচকায়। নিচ পড়ে থাকা শার্ট টা হাতে নিয়ে পড়তে পড়তে বলে-
-“ খুব কি ব্যাথা করছে শরীর?
চিত্রা ঘুমঘুম চোখে মাথা ঝাকায়। তুষার চিত্রার ঘুমন্ত মুখশ্রীর দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ আমি তো সতর্ক ছিলাম খুব বেশি ওয়াইল্ড হই নি। তবুও কেনো এমন টা হলো? উঠে বসো ফ্রেশ হও পেইন কিলার খেয়ে আবার না হয় ঘুমিয়ো। স্বস্তি পাবে কিছুটা।
চিত্রা চোখ মেলে তাকালো। তুষারের মুখের দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ অসভ্য পুরুষ ওসবের জন্য আমার শরীর ব্যাথা না।
তুষার ক্যাবলরামের চেহারা নিয়ে জিজ্ঞেস করে-
-“ তাহলে কিসের জন্য ব্যাথা?
চিত্রা চাদর দিয়ে মুখ ঢেকে পাশ ফিরে শুতে শুতে বলে-
-“ একে তো সারা রাত জ্বালিয়েছেন। তার উপর যখন শেষ রাতে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিলাম তখন আপনি শক্ত করে জাপ্টে জড়িয়ে ধরে ঘুমালেন। যার কারনে আমাকে এক পাশ হয়ে ঘুমাতে হয়েছে এখন শরীর ব্যাথা করছে। কত বার বললাম ছাড়তে শুনেছেন?
তুষার দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। মোমে গড়া শরীর,এটুকুতেই এই অবস্থা, সামনে কি করে সামলাবে। অতঃপর তুষার একাই চলে যায় ওয়াশরুমে।
তুষার ওয়ারড্রব থেকে টাওজার আর শার্ট বের করে। শার্ট পড়ার সময় ঘাড়ে হাতে অসংখ্য খামচির দাগ গুলো দেখে মুচকি হাসে। চিত্রার দেওয়া প্রথম ভালোবাসার চিহ্ন।
তুষার ফজরের নামাজ টা রুমেই পড়ে নেয়। চিত্রা ঘুমাচ্ছে দেখে তুষার আর রুমের বাহিরে না গিয়ে সোফায় বসে ল্যাপটপে কিছু কাজ করতে থাকে। কাজের মধ্যে হঠাৎ করে দরজায় টোকা নাড়ে কেউ। তুষার একবার চিত্রার দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ কে?
দরজার ওপাশ থেকে ভেসে আসে-
-“ ভাই আমি তৃষ্ণা। দাদি জিজ্ঞেস করছে নতুন বউ কি উঠেছে কি না। তুমি তাড়াতাড়ি চিত্রা কে দাদির কাছে পাঠাও।
-“ তুই যা আমি আর চিত্রা আসতেছি।
ওপাশ থেকে আর কোনো শব্দ আসলো না। তৃষ্ণা চলে গেছে। তুষার কোল থেকে ল্যাপটপ টা সরিয়ে চিত্রার কাছে এগিয়ে মাথায় হাত রেখে আলতো করে বলে-
-“ চিত্রা উঠো,এবার উঠে ফ্রেশ হও দাদি জান ডাকছে তোমায় পাখি।
চিত্রা নড়েচড়ে উঠতেই ব্যাথায় মৃদু শব্দ করে উঠে। তুষার অসহায় চোখে তাকায়।
-“ একটু কষ্ট করে গোসল টা সেরে নাও।
চিত্রা মাথা নেড়ে উঠে বসতেই নিজের অবস্থা বুঝে। চাদর দিয়ে শরীর টা পেঁচিয়ে বলে-
-“ আমার কাপড় ওয়াশরুমে দিয়ে আসুন। আর তারপর চোখে সামনে থেকে যান।
তুষার আলমারির কাছে গিয়ে আলমারি খুলে শাড়ি ব্লাউজ ওয়াশরুমে রেখে এসে বলে-
-“ চোখের সামনে থেকে যাব কেনো?
-“ আমি ওয়াশরুমে যাব।
-“ তো যাও। আচ্ছা ব্যাথার জন্য কি উঠে দাঁড়াতে পারবে না? কোলে করে নিয়ে দিয়ে আসবো?
চিত্রা রাগী চোখে তাকালো তুষারের দিকে। তুষার ইনোসেন্ট ফেস নিয়ে বলে-
-“ ওভাবে তাকাচ্ছো কেনো?
-“ আপনি বেলকনিতে যান। দেখছেন তো আমার কি অবস্থা। অস্বস্তি লাগছে।
তুষার চিত্রার দিকে ঝুকলো। কানের ললিতে অধর ছুঁয়ে বলল-
-“ রাতেই না সকল অস্বস্তি কাটিয়ে দিলাম। এখনও কেনো অস্বস্তি হচ্ছে আমার সামনে?
চিত্রা বিরবির করে উচ্চারণ করলো-অসভ্য।
তুষার উচ্চস্বরে হেঁসে উঠলো। বেলকনিতে যেতে যেতে বলে-
-“ তাড়াতাড়ি গোসল সেরে বের হও।
তুষার যেতেই চিত্রা চাদর জড়িয়ে বসা থেকে উঠে ওয়াশরুমে চলে যায়। গোসল করে শাড়ি পড়ে মাথায় টাওয়াল জড়িয়ে বের হয়। সামনে তাকাতেই দেখে তুষার খাবারের প্লেট বিছানার উপর রাখছে। চিত্রা কে দেখে তুষার মুচকি হাসে।
-“ খাবার টা খেয়ে পেইন কিলার টা খেয়ে নাও আরাম পাবে। বাহিরে বের হওয়ার পর আহ উহ করলে লজ্জায় পড়বে।
চিত্রা টাওয়াল টা দিয়ে ভেজা চুল গুলে মুছে সেটা বেলকনিতে শুকাতে দিয়ে তুষারের পাশে দাঁড়ায়। প্লেটে রাখা আছে স্যান্ডউইচ। তার পাশেই মেডিসিন আর গ্লাস ভর্তি পানি।
-“ আপনি খেয়েছেন?
তুষার ঘাড় কাত করে তাকায়।
-“ না খাই নি। তুমি খেয়ে নাও চটপট।
চিত্রা বিছানা থেকে বালিশ নিয়ে সেটা খাটের সাথে ঠেকিয়ে তার উপর ভর দিয়ে বসে। একটা স্যান্ডউইচ হাতে নিয়ে বলে-
-“ বসুন এখানে।
তুষার বসে। চিত্রা স্যান্ডউইচ টা তুষারের মুখের সামনে ধরে বলে-
-“ হা করুন।
তুষার স্বাভাবিক চোখে তাকায়। স্যান্ডউইচ টা কেঁড়ে নিয়ে বলে-
-“ আমি হা করলে কি তোমার পেটে চলে যাবে খাবার টা? আগে তুমি খাও।
কথাটা বলে তুষার চিত্রার মুখের সামনে ধরে। চিত্রা এক কামড় বসায় স্যান্ডউইচে। স্যান্ডউইচ টা খেতে খেতে বলে-
-“ এবার আপনি খান।
তুষার চিত্রার কামড় দেওয়া স্যান্ডউইচ টা খায়। খাওয়া শেষে তুষার পেইন কিলার টা চিত্রার হাতে দিয়ে পানির গ্লাস এগিয়ে দেয়।
চিত্রা মেডিসিন টা খেয়ে নেয়। তুষার এঁটো প্লেট টা টি-টেবিলের উপর রেখে বলে-
-“ শাড়িটা ঠিক করে মাথায় ঘোমটা দাও।
চিত্রা শাড়িরর কুঁচি গুলো ঠিক করে মাথায় ঘোমটা দিয়ে তুষারের পেছন পেছন বের হয় রুম থেকে। তাসলিমা খাঁনের রুমের সামনে এসে তুষার দরজায় কড়া নেড়ে বলে-
-“ দাদিজান আছেন?
তাসলিমা খাঁন হ্যাঁ বলে। তুষার চিত্রার হাত ধরে রুমের ভেতর ঢুকেন। তাসলিমা খাঁন ইশারায় চিত্রা কে তার পাশে বসতে বলে। চিত্রা গিয়ে তার পাশে বসে। তাসলিমা খাঁন তার পাশ থেকে একটা প্যাকেট নিয়ে চিত্রার হাতে দেয়।
চিত্রা জিজ্ঞাসুক দৃষ্টি নিয়ে বলে-
-“ কি এটা দাদিজান?
তাসলিমা খাঁন মুচকি হেঁসে বলে-
-“ খুলে দেখো নাতবউ।
চিত্রা প্যাকেট টা খুলেন। একটা জায়নামাজ, তসবিহ পাঠ করার জন্য একটা তসবিহ আর আতর।
-“ হজ্জ থেকে ফেরার সময় সবার জন্য এনেছিলাম। সবাইকে সাথে সাথেই দিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর এটা তুষারের বউয়ের জন্য এনেছিলাম। তুষারের বউ তো তুমি,তাই তোমার প্রাপ্য তোমায় দিলাম। আর একটা কোরআন শরিফ আছে। কোনো একসময় ওজু করে ওটা নিয়ে যেয়ো।
চিত্রা মাথা নাড়িয়ে আচ্ছা জানায়। টুকটাক কথা বার্তা বলে তাসলিমা খাঁনের রুম থেকে বের হয় তুষার চিত্রা। রুম থেকে বের হয়ে তুষারের সাথে কথা বলার সময় আকস্মিক মাথার ঘোমটা টা পড়ে যায়। খুলে ছেড়ে রাখা ভেজা কোমড় অব্দি চুল গুলো উন্মুক্ত হয়৷ অধরা চশমা টা ঠিক করতে করতে এগিয়ে আসছিলো। সামনে তাকাতেই তুষার আর চিত্রা কে দেখে দাঁড়িয়ে যায়। চোখ গিয়ে পড়ে চিত্রার ভেজা চুলের উপর। সাথে সাথে দৃষ্টি সরিয়ে নেয়।এই ভেজা চুলের মানে অধরা খুব ভালো করেই জানে।
চিত্রা অধরা কে দেখে হাতে থাকা প্যাকেট টা তুষারের হাতে ধরিয়ে দিয়ে অধরার কাছে এগিয়ে যায়। অধরা চিত্রার দিকে তাকিয়ে স্মিত হেঁসে বলে-
-“ চলো মামি ডাকছে।
চিত্রা ঘুরে তুষারের দিকে তাকায়। তুষার ইশারায় যেতে বলে। চিত্রা অধরার পেছন পেছন নিচে যায়।
ড্রয়িং রুমের সোফায় তানিয়া বেগম সহ পাড়ার চার পাঁচ জন মহিলা বসে আছেন। তারা এসেছে নতুন বউ দেখতে। অধরা ফিসফিস করে চিত্রা কে বলে মাথায় কাপড় দিতে। চিত্রার খেয়ালই ছিলো না মাথার কাপড় যে পড়ে গেছে।
আঁচল উঠিয়ে মাথায় ঘোমটা দিলে অধরা চিত্রা কে নিয়ে তানিয়া বেগমের পাশে বসায়। চিত্রা সবাই কে সালাম দেয়। তানিয়া বেগম চিত্রা কে দেখে মুচকি হাসেন। পড়ার মহিলা গুলোর দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ এই যে আমার তুষারের বউ।
মহিলা গুলো চিত্রার মুখশ্রীর দিকে তাকায়৷ তাদের মধ্যে একজন বলে উঠে –
-“ মাশা-আল্লাহ দেখতে শুনতে ভালোই। শুনছি আপা মাইয়ার বাপ চেয়ারম্যান?
তানিয়া বেগম হ্যাঁ বলে। টুকটাক অনেক কথাই চলতে লাগলো,চিত্রা কে এটা ওটা জিজ্ঞেস করতে লগো। এতে চিত্রার ভীষণ আনইজি লাগা শুরু করলো। অধরা চিত্রার দিকে তাকিয়ে চিত্রার মনের ভাষা হয়তো বুঝলো। তাই তানিয়া বেগম কে বললো-
-“ মামি চিত্রা কে নিয়ে যাই? একটু পর তো পার্লারের লোক আসবে সাজাতে।
তানিয়া বেগম অনুমতি দেয়। অধরা চিত্রার দিকে তাকিয়ে বলল-
-“ চলো চিত্রা উপরে।
চিত্রা যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচলো। বসা থেকে উঠে অধরার পায়ের সাথে পা মিলিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বলে-
-“ উফ অধরা আপু তুমি আমাকে ওখান থেকে নিয়ে এসে কি যে উপকার করলে। ভীষণ আনইজি লাগছিলো।
-“ প্রথম প্রথম তো তাই এমন লাগছে। কয়েকদিন গেলে অভ্যস্ত হয়ে যাবে।
দুপুরের দিকে,,,
ডার্ক ব্লু কালারের শাড়িতে স্টেজে বসে আছে চিত্রা। পাশেই ব্লু কালারে স্যুট পড়ে বসে আছে তুষার। চিত্রা দের বাসা থেকে সাহেল আহমেদ, রিয়াদ,সিমি,নুপুর আর চিত্রার মামা এসেছে।
সাহেল আহমেদ কে দেখে চিত্রা আপ্লূত হয়ে জড়িয়ে ধরেছিল। প্রায় কত গুলো দিন কতগুলো মাস কতগুলো বছর পর মেয়ে তার কাল আসার সময় আর আজ জড়িয়ে ধরেছে। সাহেল আহমেদ মেয়ের মাথায় হাত দিয়ে আদর করে। রিয়াদ জলন্ত উনুনের চোখে তুষার আর চিত্রা কে দেখে চলছে। কেমন যেনো খারাপ লাগছে। সিমি রিয়াদের জলন্ত চোখে আরো একটু ঘি ঢালার জন্য তার ফোন টা রিয়াদের হাতে দিয়ে বলে-
-“ চিত্রা আর ভাইয়ার সাথে আমার পিক তুলে দাও তো।
রিয়াদ অগ্নি দৃষ্টি নিয়ে তাকায়। সিমি বেক্কলের মতো হেসে রিয়াদ কে টেনে নিয়ে যায়। চিত্রার পাশে দাঁড়িয়ে পোস নেয় সাথে চিত্রা কেও নিতে বলে। চিত্রা তুষারের বা হাত জড়িয়ে ধরে। তুষার বিষয় টাকে আরো একটু রোমাঞ্চকর করার জন্য চিত্রার কোমরে হাত রাখে পেছন থেকে। রিয়াদ থমকে গেলো। চিত্রার দিকে তাকালো। চিত্রার মুখে লেপ্টে আছে বিশ্বজয়ী হাসি। পরপর তিনটে ছবি তুলে সিমির ফোন নিয়েই চলে যায়। সিমি হেঁসে ফেলে। চিত্রার দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ জামাই আমার রেগে গেলো গো আপু।
চিত্রা হাসতে হাসতে গিয়ে বলে-
-“ যা খোকার রাগ ভাঙা গিয়ে।
সিমি চলে যায়।
তৃষ্ণা পিংক কালারের গ্রাউন পড়েছে। পিঠ অব্দি থাকা ছোট চুল গুলো বা পাশে সিঁথি করে খুলে রেখেছে। রাফি ব্লাক স্যুট পড়েছে। তৃষ্ণা ভাই ভাবির সাথে ছবি তুলতে ব্যাস্ত। রাফি আড়চোখে বারবার তৃষ্ণা কে দেখলো। একদম বার্বি ডলের মতো লাগছে। ইচ্ছে করছে টুক করে ধরে নিয়ে সামনে বসিয়ে রাখতে। তৃষ্ণা আড়চোখে রাফির দিকে তাকালো। আজ সারাটাদিন লোকটার দেখা পায় নি আর এখন যখন পেলো তখন বাপ চাচার সাথে সাথে ঘুরছে।
তপ্ত শ্বাস ফেললো তৃষ্ণা। ওয়েটার কে ডেকে একটা অরেঞ্জ জুশ নেয়। জুশ টা নিয়ে স্টেজ থেকে কিছুটা দূরে গিয়ে একাকী দাঁড়ায়। হুট করে কোমরে কারে হাতের স্পর্শ পেলো। ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো। কাঙ্ক্ষিত চেনা মুখ দেখে চাহনি আগের তুলনায় নিষ্প্রভ হলো। মানুষটাকে জ্বালানোর জন্য বলল-
-“ আশেপাশে মেয়েগুলো কে দেখা শেষ?
রাফি ভ্রু কুঁচকালো।
-“ তোমাকে দেখেই কূল পাই না ওদের আর দেখবো কখন?
-“ ঐ যে দেখুন বেগুনি রঙের শাড়ি পড়া মেয়ে টা কি জোশ দেখতে।
রাফি তাকালো না। দৃষ্টি তৃষ্ণার দিকে রেখেই বলে-
-“ হ্যাঁ অনেক জুশ্শি দেখতে। ইচ্ছে করে টুপ করে খেয়ে ফেলি।
চকিতে তৃষ্ণা ঘাড় ঘুরায়। শান্ত চোখে তাকিয়ে চলে যায়।
রাফি হাই তুলতে তুলতে তুষার দের কাছে যায় পিক তুলতে।
অধরা গোল্ডেন কালারের সেলোয়ার-কামিজ পড়েছে। চুল গুলো মেলে দিয়েছে। চোখে চশমা,চোখে হালকা কাজল আর ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক। ব্যাস এতেই অধরা কে অসাধারণ লাগছে। রাতুল অধরার পাশেই দাঁড়ানো। অধরা একবার রাতুলের দিকে তাকায়। হুট করে বলে বসে-
-“ আজ কি যাবেন জাবির ময়দানে থাকা ছোট্ট সেই টঙের দোকান টায়? ধোঁয়া উঠানো গরম চায়ে নতুন আমিটাকে খুঁজে পেতে। যত্নসহকারে আঁকড়ে ধরবো নতুন আমি টার খোঁজ পেলে।
#চলবে?
#আমার_শহরে_তোমার_আমন্ত্রণ_২
#পর্ব২৮( অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষিদ্ধ)
#Raiha_Zubair_Ripti
জাহাঙ্গীরনগর নামটি শুনলেই মনের মধ্যে এক প্রকার অদ্ভূত আলোড়নের সৃষ্টি হয়। কবিতায় পড়েছি ঐ দেখা যায় তালগাছ ঐ আমাদের গাঁ, ঠিক এরকমই ওই দেখা যায় জাহাঙ্গীরনগর ওই আমাদের গাঁ। দেখে মনে হবে ইট পাথরের কর্কশ নগরীর মধ্যে এক টুকরো গ্রামীণ পরিবেশ। গ্রামীণ পরিবেশের সব উপাদান নিয়ে গড়ে উঠেছে স্বপ্নের জাহাঙ্গীরনগর। বাংলাদেশের সৌন্দর্যমন্ডিত জায়গা গুলোর মধ্যে একটি। ঘন গাছপালা আর পাখপাখালির মিশ্রণে একাকার এখানকার পরিবেশ। আধুনিক সভ্যতার আদলে তৈরি হয়েছে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়। উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো যেন প্রযুক্তির একই ধাঁচে নির্মিত। শহরের ভারি আবহাওয়ায় মলিন সব বিশ্ববিদ্যালয়ের মসৃণ দেয়াল। ক্যাম্পাসে নেই কোনো প্রাণের সঞ্চার। আধুনিকতার কৃত্রিম সৌন্দর্য শিক্ষার্থীদের প্রকৃত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত করেছে। শিক্ষার পরিবেশ প্রাকৃতিক হওয়াটাই বাঞ্ছনীয়। অথচ আধুনিক কৃত্রিম শিক্ষা আর কৃত্রিম ক্যাম্পাস জীবন শিক্ষার্থীদের নিয়ে যাচ্ছে জটিল ও কঠিন পৃথিবীতে।
আজকের এই জাহাঙ্গীরনগর অতীতের চেয়ে বেশ আলাদা। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যেন তার সমস্ত ঐশ্বর্য নিয়ে ঘাঁটি গেড়েছে। বিচিত্র ধরনের গাছপালা থেকে শুরু করে পাখপাখালি, সরীসৃপ, বাহারি সব উদ্ভিদের অবস্থান এই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে।
চারিদিকে হিমশীতল ঠান্ডা বাতাস। শরীরে কোনো শীতের জন্য পোষাক নেই। ব্লু পাঞ্জাবি পরিহিত এক পুরুষের পায়ের সাথে পা মিলিয়ে হাঁটছে গোল্ডেন কালারের সেলোয়ার-কামিজ পড়া এক রমণী। হাঁটার মাঝেমাঝে একে ওপরের হাতে ছোঁয়া লাগছে। দৃষ্টি তাদের সামনের দিকে থাকা রাস্তা সহ রাস্তার আশেপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কয়েক জোড়া যুগলবন্দী প্রেমিক প্রেমিকার দিকে। কেউ কেউ হাত ধরে হাঁটছে তো কেউ টঙের দোকানে বসে চা খাচ্ছে । আর কেউ প্রিয় পুরুষের কাঁধে মাথা রেখে বসে চন্দ্র বিলাস করছে।
ইট-কাঠের এই রঙিন দুনিয়া যেন মানুষের মনকে বিষিয়ে তুলেছে। প্রকৃতি বরাবরই মানুষকে মানবিকতার শিক্ষা দেয়। মানুষ প্রকৃতির কাছে না গেলে বুঝতে পারে না প্রকৃত জীবনের রোমাঞ্চকর মুহূর্ত। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেশ আলাদা। আর এর পেছনে রয়েছে এর রূপ বৈচিত্র্যর সমাহার। জাহাঙ্গীরনগর ক্যাম্পাসে রয়েছে অগাধ প্রাকৃতিক সম্পদ। যে সম্পদ বিশ্ববিদ্যালয়কে করেছে বেশ সমৃদ্ধ। বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে রয়েছে অগাধ প্রজাতির গাছপালা। যে গাছপালাগুলো ক্যাম্পাস জুড়ে অক্সিজেন সরবরাহ করছে।
হুট করে হাঁটার গতি থমকে গেলো। টঙের দোকান থেকে দু কাপ চা নিয়ে দোকান দার কে বিল পে করে দিয়ে একটা চায়ের কাপ অধরার হাতে ধরিয়ে আবার হাঁটা ধরলো।
আজ হেঁটে হেঁটে পুরো জাবির ক্যাম্পাস ঘুরবে তারা। মুহুর্ত টা এনজয় করবে। কোনো এক জায়গা থেকে সেই নতুনত্ব কে খুঁজে বাড়ি ফিরবে বলে মনস্থির করেছে।
গরম চায়ে ফু দিয়ে ঠোঁট ছোয়ালো। পিনপিনে নিরবতাকে বিদায় দিয়ে রাতুল বলে উঠলো-
-“ আমাদের বাসায় যেতে পারবেন আজ?
অধরা মুখের সামনে থেকে চায়ের কাপ সরালো। জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিয়ে বলে-
-“ হঠাৎ বাসায় কেনো?
রাতুলের সোজা কথা।
-“ আম্মার সাথে দেখা করাতে।
অধরা কিয়ৎ ক্ষন চুপ থাকে। আশেপাশে চোখ ঘুরিয়ে বলে-
-“ আচ্ছা যাব।
রাতুলের মুখে হাসি ফুটে উঠে। অধরা কে নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে একটি ছোট্ট ব্রিজে আসে। এখানকার ছাত্রছাত্রীরা আদর করে গোল্ডেন ব্রীজ বলে ডাকে, এরকম ব্রিজের সংখ্যা ও অগনিত, সুযোগ পেলেই যার উপরে অনেকে বসে পড়ে, আড্ডা জমায়। ব্রিজের পাশে পদ্ম ফোটা লেক, এখানে বসলে দুর থেকে প্রীতলতা হলের স্থাপত্যশৈলীর মাঝে নিজেকে কিছুক্ষন হারিয়ে ফেলতে ইচ্ছে করবে যে কারো। চোখ জুড়িয়ে আসবে, হাতছানি দিয়ে ডাকবে হলের চূড়াটি। যা ভাষায় প্রকাশের সীমাও ছাড়িয়ে যায়।
ব্রিজের উপর রাতুল আর অধরা বসে পড়ে। দৃষ্টি তাদের পদ্ম ফোটা লেকের দিকে। এখানটায় আসলেই অধরা ঐ পদ্ম ফুল গুলোকে ছুঁইয়ে দিতে ইচ্ছে করে। কিন্তু তা সম্ভব নয়। কথাটা মনে মনে ভেবেই তপ্ত শ্বাস ফেলে। হঠাৎ পকেটে থাকা ফোন টা বেজে উঠে। পকেট থেকে ফোনটা বের করতেই দেখে রোমিলা বেগমের ফোন। রাতুল ফোন রিসিভ করলো। ওপাশ থেকে কর্কশ গলায় ভেসে আসলো-
-“ কি রে বাসায় আসবি কখন? রাত জেগে তোর জন্য আর কতক্ষণ বসে থাকা লাগবে আমার?
রাতুল স্মিত হাসলো। অধররা দিকে একপলক তাকিয়ে বলল-
-“ আসছি আর একটু সময় জেগে থাকো।
-“ আচ্ছা আয় তাড়াতাড়ি।
রাতুল ফোন টা কে’টে পকেটে ভরে বসা থেকে উঠে অধরার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে-
-“ উঠুন অধরা বাসায় যেতে হবে,তারপর আবার আপনাকে বাসায় ও দিয়ে আসতে হবে।
অধরা রাতুলের হাত ধরে বসা থেকে উঠে। রাতুল একটা রিকশা ডেকে দু’জনে সেই রিকশায় চড়ে বসে।
চিত্রা দের বাসায় পৌঁছাতে পৌঁছাতে সন্ধ্যা লেগে যায়। চিত্রারা বাসায় যেতে না যেতেই চিত্রার মা চয়নিকা বেগম তোরজোড় শুরু করে দেয়। প্রথমবারের মতো মেয়ের জামাই এসেছে বলে কথা। খাতির মাতিরের কমতি হলে কি চলে! মেয়ের জামাইকে আনার পরে চা নাস্তা দিয়ে আবার রান্না ঘরে রান্না বান্না শুরু করে দিছে। এসব দেখে আলগোছে চিত্রাকে ঘরে ঢেকে বলেছিলো এতোসব আয়োজন করতে না। চিত্রা তখন মুচকি হেঁসে বলে,,
-“ আমার মা শুনলে তো এসব করতে মানা করবো। এসবের জন্য মানা করতে গিয়ে উল্টো আমিই বকা খেয়ে আসবো। তার চেয়ে যা হচ্ছে হতে দিন।
চিত্রার রুমে তুষার বিছানায় বসে আছে। চিত্রা ওয়াশরুমে গেছে ফ্রেশ হতে। টাওয়াল দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে তুষারের দিকে চেয়ে বলে-
-“ এবার আপনি যান ফ্রেশ হয়ে আসুন।
তুষার বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। চিত্রার হাত থেকে টাওয়াল টা নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে। চিত্রা ক্লান্ত শরীর নিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দেয়।
মিনিট বিশেক পর তুষার ওয়াশরুম থেকে বের হয়। ভেজা টাওয়াল টা চিত্রার পেটের উপর ছুঁড়ে দেয়। ঘুমন্ত চিত্রা ছিটকে উঠে।
চোখ লেগে আসছিলো। আকস্মিক নিজের উপর কিছু পড়ার শব্দে ছিটকে চোখ মেলে তাকায়। তুষার স্মিত হাসছে। চিত্রা ভ্রু কুঁচকালো। থমথমে গলায় বলল-
-” বেলকনিতে মেলে দিয়ে আসেন।
তুষার শুনলো না। ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে একবার দেখে চিত্রার গা ঘেঁষে শুয়ে পড়লো। আর তখনই দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ ভেসে আসলো। চিত্রা উচ্চস্বরে জিজ্ঞেস করলো-
-“ কে?
নুপুর দরজায় আরেক বার কড়া নেড়ে বলে-
-“ আপু আমি। ফুপি ডাকছে খেতে।
-“ তুই যা আসছি।
চিত্রা শোয়া থেকে উঠে বসে। তুষারের চোখ তখন বন্ধ। তুষারের বুকে হাত দিয়ে বলে-
-“ এই উঠুন মা ডাকছে খাওয়ার জন্য।
তুষার চোখ মেলে তাকায়।
-“ তুমি গিয়ে খেয়ো আসো। আমার এখনও ক্ষিদে পায় নি।
-“ পাগল নাকি। আপনাকে রেখে আমি খেয়ে আসবো! হালকা করে হলেও কিছু খান। মা কত কষ্ট করে আপনার জন্য সেই কখন থেকে রান্না করছে।
তুষার উঠে বসলো। বালিশের পাশ থেকে ফোন টা নিয়ে উঠে দাঁড়ালো। চিত্রা কে ইশারায় ঠিক হতে বললো। চিত্রা ওড়না টা মাথায় দিয়ে দরজার সিটকানি খুলল।
ডাইনিং টেবিলের কাছে আসতেই তুষারের চোখ আটকে যায় খাবার দেখে, পুরো ডাইনিং টেবিল নানান পদের খাবারে সজ্জিত।
টেবিলে পোলাও, গরুর মাংস, মরুগির রোস্ট, পায়েস, দই, মিষ্টি,তিন চার রকমের ভাজি,ডিম ভুনা,সাদা ভাত, মাছ। মেয়ের জামাইকে টেনে বসিয়ে দেয় চেয়ারে সাহেল আহমেদ। সাথে নিজেও বসে পড়ে। রিয়াদ আড়চোখে দেখে চলছে। চয়নিকা বেগম সবাই কে খাবার পরিবেশন করছে, মেয়ের জামাইয়ের পাতে পোলাও দিয়ে চয়নিকা বেগম বলে,,
-“ বাবা কিছু মনে করো না এই টুকু টাইমে এইটুকুই আয়োজন করতে পেরেছি।
শাশুড়ীর কথা শুনে তুষার বিষম খায় এতো আয়োজন কে বলছে কি না এই টুকু আয়োজন!
তুষার কে বিষম খেতে দেখে চিত্রা তারাতাড়ি করে পানির গ্লাস এগিয়ে দেয়। তুষার তারাতাড়ি পানি টা খেয়ে শেষ করে। চিত্রার মা একটার পর একটা খাবার শুধু তুষারের প্লেটে উঠিয়ে দিচ্ছে তুষারের মানা শুনছেন না। চয়নিকা বেগম ভেবে বসে আছেন তার মেয়ের জামাই লজ্জার কারনে কিছু নিতে চাচ্ছে না। এদিকে বেচারা তুষারের পেটে জায়গা নেই, সাহেল আহমেদ খানিক আগেই খাবার খাওয়া শেষ করে রুমে গেছে রেস্ট নেবার জন্য, তুষার অসহায় মুখ করে চিত্রার দিকে তাকায়,চিত্রা বিষয়ে টা বুঝতে পেরে তার মা’কে থামতে বলে,,
-“মা আর দিয়ো না তোমার মেয়ের জামাইয়ের পেট একটাই,এতো খাবার কিভাবে খাবে।
-“ সামান্যই তো দিলাম এখনো তো দই পায়েস মিষ্টি বাকি আছে।
-“তুমি রেখে দাও ওগুলো ফ্রিজে শুয়ার আগে আমি তাকে খেতে দিবো নি এখন আর জোর করো না।
চয়নিকা বেগম মেয়ের কথা শুনে আর কিছু বলে না, চিত্রা তুষারের উদ্দেশ্যে বলে,
-“আপনি বরং উঠে হাত ধুয়ে ঘরে গিয়ে বিশ্রাম নিন।
চিত্রার কথা মতো তুষার উঠে হাত ধুয়ে ঘরে চলে গেলো। চিত্রা, চয়নিকা বেগম,সিমি, খাবার খাওয়া শেষ করে প্লেট গুলো ধুয়ে যে যার রুমে যায়।
চিত্রা রুমে গিয়ে দেখে রাসেল শুয়ে আছে, তাই এগিয়ে তুষারের মাথার কাছে গিয়ে বসে পড়লো। তুষার চিত্রার উপস্থিতি টের পেয়ে এক হাত দিয়ে চিত্রার কোমড় পেঁচিয়ে পেটের কাছে মুখ গুজিয়ে দিলো।
-“ আপনার কি খুব খারাপ লাগছে। ঔষধ আনতে বলবো ডাক্তারের দোকান থেকে।
-“ না তার আর দরকার নেই আমার মেডিসিন আমি পেয়ে গেছি। এই মেডিসিনের সেবায় ঠিক হয়ে যাবো।
চিত্রা ভ্রু কুঁচকালো।
-“ কথায় কথায় ছোঁয়ার বাহানা খুঁজেন কেনো এতো।
তুষার স্মিত হাসলো। শাড়ির ভেতরে থাকা উন্মুক্ত পেটে ওষ্ঠ ছুঁয়ে বলে-
-“ তুমি আস্ত টাই তো আমার। সেখানে বাহানা কেনো খুঁজবো?
চিত্রা কেঁপে উঠলো তুষারের ওষ্ঠর ছোঁয়ায়। তুষার বিরক্ত হয়ে বলে-
-“ এখনও এতো কাঁপা-কাঁপি কিসের?
চিত্রা তুষারের মাথা কোল থেকে নামিয়ে বসা থেকে উঠে। কোমড়ে হাত গুঁজে বলে-
-“ শরীর খারাপ লাগছে তো ঘুমানোর চেষ্টা করুন না। তা না করে এখানে ওখানে ছুঁয়ে ছুঁয়ে দিচ্ছেন।
তুষার মাথা উঁচু করলো। ভ্রু কুঁচকে বলে-
-“ আহ উঠলে কেনো? এখান টায় আসো। চুপচাপ শুয়ে থাকো।
চিত্রা বেলকনিতে যেতে যেতে বলে-
-“ মোটেও না। এই সাঝ সন্ধ্যায় আমি সন্ধ্যা বিলাস করবো। আপনি শুয়ে থাকুন।
তুষার শোয়া থেকে উঠে বসলো। বেলকনিতে গিয়ে চিত্রা কে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে গলায় মুখ ডুবিয়ে বলে-
-“ আজ না হয় চন্দ্র বিলাস করবো মিসেস খাঁন। সন্ধ্যা বিলাস না অন্য কোনো একদিন হবে।
কলিংবেলের আওয়াজ শুনে দরজা খুলে ছেলের সাথে পরিচিত মুখ দেখতে পেয়ে মুখে হাসি ফুটে উঠে। দরজার পাশ থেকে তাড়াতাড়ি করে সরে দাঁড়িয়ে অধরার গালে হাত দিয়ে বলে-
-“ আরে অধরা যে।
অধরা স্মিত হাসলো। রোমিলা বেগম অধরার হাত ধরে ভেতরে নিয়ে সোফায় বসায়। রাতুল দরজা আটকিয়ে দেয়। রোমিলা বেগম রাতুলের দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ ওঁকে নিয়ে আসছিস বললি না কেনো?
-“ সারপ্রাইজ।
-“ আমি তো সেভাবে রান্না করি নি। আচ্ছা বস চটপট কিছু রান্না করে আসছি।
অধরা হাত টেনে ধরলো। আস্বস্ত করে বলল-
-“ আন্টি আমি খেয়ে এসেছি। এতো তোড়জোড় করার দরকার নেই।
-“ তাই বললে হয় নাকি?
-“ কেনো হবে না? আপনি বসুন। কিচ্ছু করতে হবে না।
রোমিলা বেগম বসে রইলো। রাতুল রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসলো। রোমিলা বেগম ছেলের ঘরের দিকে গেলো। ছেলের সামনে দাঁড়িয়ে বলল-
-“ হঠাৎ রাত করে অধরা কে নিয়ে আসলি যে?
-“ কেনো খুশি হও নি?
-“ হয়েছি। কিন্তু কখনও তো দেখি নি ওর সাথে মিশতে তোকে।
-“ এখন থেকে মেশার চেষ্টা করবো।
-“ তোদের মধ্যে কিছু চলছে?
রোমিলা বেগম সন্দেহান দৃষ্টি নিয়ে কথাটা বলল। রাতুল স্মিত হাসলো। রোমিলা রহমানের গলা জড়িয়ে ধরে বলল-
-“ বুঝলে কি করে?
-“ কে হই আমি তোর?
-“ মা।
-“ তো ছেলের ভাবসাব আমি বুঝবো না?
-“ একা রেখে চলে আসছো। কিছু ভেবে বসে যদি। চলো।
ড্রয়িং রুমের সোফায় বসে আছে তৃষ্ণা। অপেক্ষা করছে অধরার জন্য। অধরা জানিয়েছে সে ফিরছে,তৃষ্ণা যেনো ড্রয়িং রুমে থাকে দরজা খুলে দেওয়ার জন্য। রাফি পানি খাওয়ার জন্য নিচে নেমেছিল। তৃষ্ণা কে একাকী বসে থাকতে দেখে রাফি ভ্রু কুঁচকে বলে-
-“ একা একা এখানে বসে কি করছো?
-“ অপেক্ষা।
-“ কার?
-“ অবশ্যই আপনার জন্য না।
-“ তা তো জানি। তা কার জন্য অপেক্ষা করছো? তুর্যর জন্য?
তৃষ্ণা রাগান্বিত হয়ে তাকালো। আর তখনই কলিংবেল বেজে উঠলো। তৃষ্ণা গিয়ে দরজা খুললো। অধরা ভেতরে ঢুকলো। রাফি অধরা কে দেখে বলল-
-” কোথায় গিয়েছিলি তুই?
অধরা নুইয়ে গেলো। মৃদু স্বরে বলল-
-“ রাতুল ভাইয়ার সাথে।
-“ কেনো?
তৃষ্ণা বিরক্ত হলো। বিরক্তিকর চাহনি নিয়ে বলল-
-“ আহ অধরা আপু এতো প্রশ্নের জবাব দেওয়ার কোনো দরকার আছে? চলো তো ঘরে।
অধরা কে নিয়ে তৃষ্ণা চলে যায়।
#চলবে?