আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ ২ পর্ব-১৭+১৮

0
539

#আমার_শহরে_তোমার_আমন্ত্রণ_২
#পর্ব১৭( অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষিদ্ধ)
#Raiha_Zubair_Ripti

-“ মিস অধরা আপনি কাঁদছেন কেনো?

অধরা ছাঁদে দাঁড়িয়ে কান্না আটকানোর চেষ্টা করছিলো। তৃষ্ণা কিছুক্ষণ আগে ফোন করে জানিয়েছে আগামী মাসের ১০ তারিখে বিয়ে। আজ থেকে ঠিক ১২ দিন পর। কথাটা শোনামাত্র অধরার বুক ফেটে কান্নাগুলো বেরিয়ে আসছিলো। তৃষ্ণা কে তাড়া দিয়ে ফোন কেটে ছাঁদে চলে আসে। বাড়িতে কেউ নেই এখন মন খুলে চিৎকার করে কাঁদতে পারবে। কান্না আটকানোর চেষ্টা করতে গিয়ে হঠাৎ করে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো অধরা। আকাশের পানে তাকিয়ে বলে উঠল-
-“ বিধাতার তরে আপনাকে চাওয়া তো কোনো কমতি আমি রাখি নি তুষার ভাই তবুও কেনো বিধাতা এমন নিষ্ঠুরতম কাজ করলো আমার সাথে? একই শহরে,একই বাড়িতে থাকছি অথচ আপনার শহরে আমার প্রবেশ নিষিদ্ধকরণ করা হলো। কেনো বলতে পারেন? ভালবাসলে এতো কষ্ট পেতে হয় কেনো বলুন না? আমার খুব কষ্ট হচ্ছে হৃদপিণ্ডটা ক্রমাগত কেউ ধারালো ছু’রি দিয়ে ক্ষত-বিক্ষত করে তুলছে, আপনাকে অন্যের পাশে দেখলে নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। বেঁচে থাকার ইচ্ছে টাও ম-রে যাচ্ছে। আপনাকে পাবো না জানলে কখনই আপনাকে ভালোবাসার মতো দুঃসাহস আমি দেখাতাম না। চোখ দুটো অনেক অবাধ্য জানেন তো আপনার কথা মনে আসলেই কারনে অকারণে পানি গড়িয়ে পড়ে। জীবনের শেষ নিঃশ্বাস অব্দি বলবো এই আপনাকে আমি প্রচন্ড রকমের ভালোবেসেছিলাম আর এখনও বাসি।

অধরা তড়িঘড়ি করে পাগলের ন্যায় উঠে বসলো। অবস্থা তার বিধ্বস্ত। ওড়নার শেষ অংশ টুকু দিয়ে চোখের জল মুছে নিলো। পেছন ঘুরে দেখলো রাতুল ছাঁদের দরজার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। রাতুল কে এই সময় বাসায় দেখে ভীষণ অবাক হয় অধরা। অধরা কে কিছু বলতে না দেখে রাতুল আবার বলে উঠে –
-“ আপনি কাঁদছিলেন কেনো মিস অধরা?
অধরা কিছুটা ভয় পেলো। কান্না করার সময় কি রেখে কি বলে ফেলছে সেটা যদি রাতুল শুনে থাকে আর তুষার কে যদি বলে দেয় তখন তো আরেক বিপত্তি।
-“ আ আমি কান্না করি নি।
রাতুল স্পষ্টতার সাথে বলল-
-“ আমি কান্নার শব্দ শুনেছি। আর ছাঁদে এসে কান্না করতেও দেখলাম তবুও মিথ্যা কেনো বলছেন? আপনার আম্মাকে খুব মনে পড়ছে?
অধরা মাথা উপর নিচু করে জানালো হ্যাঁ। রাতুল স্মিত হেঁসে বলে-
-“ আম্মার কথা মনে পড়লে এভাবে কাঁদবেন না মিস। আপনার আম্মা উপর থেকে দেখে কষ্ট পাবে। নামাজ পড়ে দোয়া করবেন,মনে থাকবে?
অধরা মাথা নিচু করে জবাব দেয়-
-“ হুমম।
-“ আচ্ছা এই প্যাকেট টা নিন। তুষার আসলে দিয়ে দিবেন। এটা দিতেই এসেছিলাম আপনাকে।

অধরা অবাক হয়ে বলে-
-“ আমাকে?
-“ হুমম। তুষার বললো আপনি বাসায় আছেন। তাদের সাথে যান নি,আপনার কাছে যেনো দিয়ে যাই।
-“ আচ্ছা ভাইয়া আসলে দিয়ে দিব।
-“ আজ আসি তাহলে।
-“ জ্বি।

রাতুল উল্টো ঘুরে ফের কিছু একটা মনে পড়তেই আবার সামনে ঘুরে।
-“ মিস অধরা আপনাকে একটা কথা বলি?
-“ জ্বি বলুন।
-“ কখনও ঐ চোখ জোড়া থেকে খুব সহজে জল গড়িয়ে পড়তে দিবেন না। ওটা অনেক মূল্যবান।

রাতুল চলে গেলো। অধরা রাতুলের যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো। রাতুল দৃষ্টি সীমার বাহিরে যেতেই হাতে থাকা প্যাকেট টার দিকে তাকিয়ে রুমে চলে আসে।

তৃষ্ণা গাড়ির ভেতর বসে মা দাদির সাথে বকবক করে চলছে। তুষারের বিয়েতে কি করবে কিভাবে সাজবে সব। রাফি ড্রাইভ করছে আর লুকিং গ্লাসে তৃষ্ণা কে দেখে চলছে। অন্য গাড়িতে তুষার তার বাবা চাচা আর দাদা। তৃষ্ণা কথা বলার সময় লুকিং গ্লাসের দিকে তাকাতেই দেখে রাফি তাকিয়ে আছে।
-“ রাফি ভাই সামনে তাকিয়ে গাড়ি চালান লুকিং গ্লাসে না তাকিয়ে।

রাফি দৃষ্টি সরালো। গাড়ি চালানোতে মনোযোগ দিলো। তৃষ্ণা তাকে ভালোবাসে কথাটা জানার পর থেকেই রাফির ইচ্ছে করছে তৃষ্ণা কে সামনে বসিয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে। উষ্ণ আলিঙ্গনে আবদ্ধ করে জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করছে- কবে কবে কেঁদেছ আমার জন্য। কিন্তু পারছে না। তুষারের বিয়ে টা হলেই নিজের মনের কথা তৃষ্ণা কে জানাবে। তারপর? তারপর একদম নিজের করে নিবে।

চিত্রা নিজের রুমে বসে লজ্জায় লাল নিল হচ্ছে। কয়েকদিন পর তার বিয়ে কথাটা মনে পড়তেই লজ্জায় আড়ষ্ট হচ্ছে। চয়নিকা বেগম মেয়ের রুমে এসে মেয়েকে এমন লজ্জা পেতে দেখে বলে-
-“ কয়েক দিন আগেই না বলছিলি বিয়ে করবি না এ ছেলে কে তাহলে হঠাৎ কি এমন হলো?
চিত্রা মুখটাকে স্বাভাবিক করলো।
-“ আগে ছিলাম না রাজি তাতে কি এখন তো আমি রাজি।
-“ সেজন্য ই তো জানতে চাইছি হঠাৎ কি এমন হলো।
-“ ম্যাজিক হয়েছে মা ম্যাজিক।
-“ কিসের ম্যাজিক?
-“ ব্লাক ম্যাজিক। তুষার খাঁন আমায় ব্লাক ম্যাজিক করেছে।
-“ সেটা কি?
-“ উফ মা কালো যাদু।
-“ সত্যি?
-“ আমি কি মিথ্যা বলি বলো? তুষার খাঁন এমন যাদু টোনা করলো যে আমি নাই করতে পারলাম না।
-“ যাক যাই করে হোক রাজি তো হলি এটাই অনেক।
-“ হুমম আমি ভদ্র মেয়ে তোমাদের, তাই চুপচাপ মেনে নিয়েছি।
-“ হুম আমার লক্ষী মেয়ে, আমাদের জ্বালিয়েছো এবার ও বাড়ি গিয়ে জ্বালাবে। কাপড় পাল্টে খেতে আয়।

ড্রয়িং রুমে বসে আছে খাঁন বাড়ির সবাই। তানিয়া বেগম চা বানিয়ে সবার হাতে হাতে দিলো। তরিকুল খাঁন চায়ে চুমুক দিয়ে বলল-
-“ তুষারের বিয়ের পর অধরা দিদি ভাই এর বিয়ের সিরিয়াল তারপর….
-“ তারপর না দাদু তার আগেই আমার বিয়ের সিরিয়াল, ব্রো এর পর।

রাফির কথা শুনে সামির খাঁন কেশে উঠে। তরিকুল খাঁন হেঁসে বলে-
-“ আর একটু বড় হও। বছর দু এক যাক।
রাফি ভ্রু কুঁচকালো।
-“ আমি কি বড় হই নি? আজ বিয়ে দিলে কাল বাচ্চার বাপ হবো।
-“ পছন্দের কেউ আছে নাকি?
রাফি তৃষ্ণার দিকে তাকালো। তৃষ্ণা তার দিকেই তাকিয়ে আছে। চোখ সরিয়ে জবাব দিলো-
-“ হ্যাঁ আছে। ব্রো এর বিয়ের জন্য বলতে পারছি না।
-“ কোন বংশের মেয়ে?
-“ উচ্চ বংশের ই মেয়ে প্যারা নিয়ো না পছন্দ হবে তোমাদের।

তৃষ্ণার মনটা আবার ছোট হয়ে গেলো। লোকটা আবার কাকে পছন্দ করে?

-“ বয়স তো কম হচ্ছে না তোর, তুষারের বিয়ে হয়ে যাচ্ছে অথচ তুই বিয়ে নিয়ে কিছু বলছিস না,কিন্তু কেনো? বিয়ে কি করবি না? নাতিনাতনির মুখ দেখবো না আমি?

রাতুল বাসায় আসতে না আসতেই তার মা রোমিলা বেগম কথাটা বলে উঠে। রাতুল তপ্ত শ্বাস ফেলে বলে-
-“ আহ মা রোজ রোজ এই বিয়ে নিয়ে কথা শুনতে শুনতে কান টা পঁচে গেলো। মনমতো মেয়ে পাই নি পেলে জানাবো।
-“ কেমন মেয়ে পছন্দ বল আমি খুঁজছি।
-“ সাদাসিধে সাংসারিক মেয়ে। খুঁজে পেলে জানিয়ো। এবার খেতে দাও ক্ষিদে পেয়েছে।
রোমিলা বেগম খাবার বেড়ে দিলো। রাতুল চুপচাপ খাবার খেলো। রোমিলা রহমান ঘটককে ফোন দিয়ে বলে দিলো এমন মেয়ে খোঁজার জন্য।

-“ ভাইয়া আসবো?
তুষার ল্যাপটপে কাজ করছিলো। অধরার কথা শুনে দরজার পানে চেয়ে বলে-
-“ হুমম আয়।
-“ রাতুল ভাই প্যাকেট টা দিয়ে গেছে। আপনায় দিতে বলেছে।
-“ ওহ্ হ্যাঁ ভুলেই গিয়েছিলাম এটার কথা। ধন্যবাদ এনে মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য।
অধরা একপলক তুষারের দিকে তাকায়। সাথে সাথে তুষারের ফোন বেজে উঠে। ফোনের স্কিনে জ্বলজ্বল করে লেখা চিত্রা সাথে ব্লাক লাভ ইমোজি।
দুমড়ে মুচড়ে উঠলো অধরার বুক। মানুষটার দিকে তাকিয়ে থাকা যাবে না আর,অন্যের দখলদারি সে। তার সবটা জুড়ে বিস্তার থাকবে চিত্রা নামক রমণীর। তার সুখ দুঃখ ভালোবাসা সবটার অংশীদারি অন্য কেউ। তুষার ফোন টা নিয়ে বেলকনিতে চলে যায়। অধরা সেদিকটায় একবার চেয়ে বিরবির করে বলে-
-❝ অতঃপর শখের পুরুষ আপনি আমার হৃদয়ে থাকবেন আর অন্য কারো ভাগ্যে। ❞

#চলবে?

#আমার_শহরে_তোমার_আমন্ত্রণ_২
#পর্ব১৮( অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষিদ্ধ)
#Raiha_Zubair_Ripti

-“ ঘন্টাখানেক ও হয় নি আপনাদের বাসা থেকে এসেছি এর মধ্যেই মিস করা শুরু করলেন মিস চিত্রা?
কথাটা শুনে চিত্রা ফিক করে হেঁসে উঠলো। ফোনটা কানে নিয়ে জানালার কাছে এসে বলে-
-“ আপনার তৃষ্ণায় বড্ড তৃষ্ণার্ত যে আমি এমপি মশাই। চট করে ফোন টা কেটে ফট করে ভিডিও কল দিন তো।

তুষার ফোন কেটে দিলো। চিত্রা ফোন টা হাতে নিয়ে একবার জানালা দিয়ে বাহিরে তাকালো। মুঠোফোন টা বেজে উঠলো। চিত্রা রিসিভ করলো। ফোনটা মুখ বরাবর নিয়ে তুষারের পানে তাকালো।
-“ তৃষ্ণা কি কমলো ম্যাডামের?
-“ ছুঁয়ে দেখতে পারলে ভালো লাগতো।
-“ ছুঁয়ে দেখার জন্য আর কয়েক টা দিন অপেক্ষা করুন মিস।
-“ অপেক্ষারা এতো দীর্ঘ হয় কেনো বলতে পারেন?
-“ অপেক্ষা তো সবাই করতে পারে না,আর অপেক্ষার ফল যে মিষ্টি হয় সেজন্য।
-“ বুঝলাম।
-“ কি বুঝলেন?
-“ আপনি আমার অপেক্ষারত পুরুষ।
-“ শখের,ভালোবাসার, পছন্দের পুরুষ নই?
-“ উঁহু, আপনি আমার অপ্রিয়, অপছন্দের পুরুষ।

তুষার চুপ হয়ে গেলো। চিত্রা তুষারের নিস্তব্ধতা দেখে বলে-
-“ চুপ হয়ে গেলেন কেনো? জিজ্ঞেস করুন কেনো?
-“ কেনো?
-“ প্রথম অপ্রিয় যার মধ্যে প্রিয় শব্দ টি বিরাজমান। দ্বিতীয়ত অপছন্দের যার চার শব্দের মধ্যে তিনটিই শব্দ পছন্দ বিরাজ করছে। প্রথম দেখায় আপনি আমার পছন্দের প্রিয় কোনোটাই ছিলেন না। আস্তে ধীরে হয়েছেন। সেক্ষেত্রে দুটো নেগেটিভ শব্দ কে আমি পজিটিভ ভেবে জুড়ে নিয়েছি। আর শখের ভালোবাসার পুরুষ তো সবাই হয়ে থাকে,যেমন ধরুন না আমি কারো শখের নারী বা আপনি কারো শখের পুরুষ। শখের জিনিস গুলোর নাগাল পাওয়া যায় না। শখের জিনিস গুলো দূর থেকে সুন্দর। কিন্তু আপনি তো আমার নাগালের মধ্যে এক আমিতে সীমাবদ্ধ সেখানে আপনি শখের কি করে হন? আপনি আমার শুদ্ধতম পুরুষ। আর বিয়ের পর হবেন আদর্শ স্বামী।

তুষার চিত্রার কথা গুলো খুব মনোযোগ দিয়ে শুনলো। মেয়েটা জায়গা ভেদে নিজেকে খুব দ্রুত পরিবর্তন করতে পারে। তুষারকে ফের নিশ্চুপ থাকতে দেখে চিত্রা বলে উঠে –
-“ আমি আপনার কাছে কেমন নারী জনাব?
তুষার অকপটে বলে উঠে-
-“ শখের নারী।
-“ কেনো?
-“ আপনার ভাষ্যমতে তো শখের জিনিস গুলো ধরাছোঁয়ার বাহিরে থাকে,কিন্তু আমি সেই ধরাছোঁয়ার অনিশ্চয়তার মধ্যে আপনাকে পেয়েছি,সেক্ষেত্রে তো আপনি আমার শখের তরে পাওয়া প্রাপ্তি।
,-“ ভালোবাসেন আমায়?
কাঁপা কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করলো চিত্রা। তুষার স্মিত হাসলো।
-“ এটা না হয় বুঝে নেওয়ার দায়িত্ব আপনার।
-“ কড়ায় গণ্ডায় বুঝে নিব।
-“ ডিনার করে ঘুমান। একটা ফোনকল এসেছে আর্জেন্ট।

চিত্রা আচ্ছা বলে ফোন কেটে দেয়। তুষার ফোনের স্কিনে রাতুলের মায়ের নম্বর দেখে ফোন টা রিসিভ করে সালাম দেয়। রাতুলের মা রোমিলা বেগম সালামের জবাব দেয়।
-“ তুষার খালা কে তো ভুলেই গেছিস বাপ,অনেক দিন হলো আসিস না।
-“ রাগ করবেন না খালা ব্যাস্ততার জন্য যেতে পারি নি। ইনশাআল্লাহ দিন কয়েকের মধ্যে দেখা করে আসবো। আপনার শরীরের কি অবস্থা?
-“ শরীরের কথা আর জিজ্ঞেস করিস না বাপ।
-“ কেনো খালা শরীর কি আবার খারাপের দিকে গেছে? রাতুল কিছু বললো না তো।
,-“ মুখ পোড়া আর কি বলবে। মুখ পোড়ার জন্য ই তো শরীর আমার খারাপের দিকে যাচ্ছে। তুই তো ওর বন্ধু ওকে বিয়ে করানোর জন্য রাজি করাতে পারিস না কেনো?
-“ মেয়ে দেখুন খালা রাতুল কে রাজি করানোর দায়িত্ব আমার।
-“ তার পছন্দ মত তো মেয়ে পাচ্ছি না।
-“ কেমন মেয়ে পছন্দ?
-“ সাদাসিধে সাংসারিক শান্তশিষ্ট মেয়ে।

তুষার ভাবনায় ডুব দিলো। এমন মেয়ে পাওয়া দুষ্কর। তার দেখায় এমন মেয়ে তো নেই।
-“ আচ্ছা খালা রাতুলের বিয়ের দায়িত্ব আমার উপর ছেড়ে দিন।
-“ ঠিক আছে।

-“ আপনি বারবার এভাবে আড় চোখে তাকিয়ে থাকেন কেনো?
তৃষ্ণা কোমরে হাত গুঁজে কথাটা বলে। রাফি ফোন স্ক্রোল করছিল আর তৃষ্ণা টিভি দেখছিল। টিভি দেখা কালিন তৃষ্ণা খেয়াল করেছিল রাফি বারবার আড়চোখে তার দিকে তাকাচ্ছে। অস্বস্তি হচ্ছিল তৃষ্ণার। তাই আর না পেরে বসা থেকে উঠে কথাটা বলে। রাফি ফোন টা পকেটে ঢুকায়।
-“ তারমানে তুমিও আমার দিকে তাকিয়ে ছিলে?
তৃষ্ণা ভরকে যায়। মুখে দৃঢ়তা এনে বলে-
-“ আমি কেনো আপনার দিকে তাকাবো।
-“ তাহলে বুঝলে কি করে আমি তোমার দিকে তাকিয়ে ছিলাম?
-“ আপনি হয়তো ভুলে গেছেন। মেয়েদের ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় বলতে একটা ব্যাপার আছে।
-“ ওহ্ আচ্ছা।
-“ ওহ্ আচ্ছা কি? এভাবে তাকান কেনো?
-“ ভালো লাগে তাই।
-“ আমার অস্বস্তি হয়।
-“ অন্য মেয়ের দিকে তাকালে স্বস্তি পাবে?
-“ মানে?

রাফি নড়েচড়ে বসে। হাত দুটো একত্রে করে বলে-
-“ মানে টা ভীষণ সিম্পল। আমি অন্য মেয়ের দিকে তাকালে ভালো লাগবে তোমার?
তৃষ্ণা এদিক ওদিক চেয়ে বলে-
-“ খারাপ লাগার কি আছে।
-“ কষ্ট লাগবে না?
-“ কষ্ট কেনো লাগবে।
-“ ওমা কষ্ট লাগবে না? শুনলাম রিয়ার সাথে একটু হেঁসে কথা বলেছিলাম দেখে কেঁদেকেটে বিধ্বস্ত হয়েছিলে।

তৃষ্ণা তড়িৎ গতিতে রাফির পানে তাকালো। আমতা আমতা করে বলল-
-“ কি কিসব ব বকে যাচ্ছেন তখন থেকে। আমি কেনো কাঁদবো?
-“ ভালোবাসো না আমায়?

রাফির করা প্রশ্নে তৃষ্ণার নিশ্বাস থেমে যাবার উপক্রম। গলা শুকিয়ে আসলো ক্রমান্বয়ে। জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট জোড়া ভিজিয়ে নিলো।
-“ মাথা ঠিক নেই আপনার। কি রেখে কি বলছেন নিজেই জানেন না।
-“ স্বয়ংসম্পূর্ণ ভাবে আমি ঠিক আছি। প্রশ্ন করেছি কুইকলি অ্যান্সার দাও,ইউ লাভ মি?
-“ নো।

রাফি ভ্রু কুঁচকালো।
-“ রিজেক্ট করলে আমার মত সুদর্শন পুরুষ কে?
তৃষ্ণা মুচকি হাসলো –
❝নারী সুদর্শন কাউকে চায়না, চায় কেউ একজন তাকে কঠিন ভাবে ভালোবাসুক.!❞
-“ তারজন্য অনুমতি লাগে। দিবে আমায় সেই অনুমতি?
-“ আপনি কি গার্লফ্রেন্ড কে প্রপোজ করার জন্য প্র্যাকটিস করছেন?
-“ মোটেও না।
-“ তাহলে?
রাফি তপ্ত শ্বাস ফেলে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। প্যান্টের পকেটে হাত দিয়ে বলল-
-“ ওয়েল আমি শুদ্ধ ভাষায় বলছি। উইল ইউ ম্যারি মি তৃষ্ণা খাঁন?

তৃষ্ণা হা হয়ে তাকিয়ে রইলো। রিয়াক্ট করতে ভুলে গেছে। লোকে বলে না অতি শোকে পাথর হয়ে যায় মানুষ। তৃষ্ণা ও তেমন টা হয়ে গেলো। মনে হচ্ছে স্বপ্ন দেখছে সে। রাফি নিজ থেকে তাকে প্রস্তাব দিচ্ছে আর সেটা বিয়ের! মাথা ভনভন করে উঠলো। হাসবে নাকি কাঁদবে বুঝে উঠতে পারছে না। রাফির দিকে তাকাতেও পারছে না,ঠাই হয়ে দাড়াতেও পারলো না। দৌড়ে নিজের রুমে ছুটে আসলো।

রাফি তৃষ্ণার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে হেসে ফেললো।

-“ কিরে তোর মা বিয়ের জন্য পাত্রী দেখছে রাজি হচ্ছিস না কেনো?

পার্টি অফিসের মিটিং শেষ করে বাহিরে বের হয়ে কথাটা বলে তুষার। রাতুল দৃষ্টি সামনে রাস্তায় চলতে থাকা চলন্ত গাড়ির দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ আম্মা নিশ্চয়ই তোকে এসব নিয়ে আমায় বলতে বলেছে তাই না।
-“ খালা সেভাবে বলে নি আমিই নিজ থেকে বলছি তোকে। ভালোবাসিস কাউকে?
রাতুল চোখ দুটো বন্ধ করলো। মুহুর্তে ভেসে উঠলো অধরার বিধ্বংসী রূপ। ফট করে চোখ মেলে তাকালো। তুষার উত্তর না পেয়ে আবার বলে উঠল-
-“ কি হলে বলছিস না কেনো? ভালোবাসিস কাউকে?
-“ কাউকে ভালে লাগা কি ভালোবাসা হয়?
রাতুলের আনমনে বলা কথাটা শুনে তুষার পূর্ণ দৃষ্টি দেয় রাতুলের দিকে।
-“ কাউকে ভালো লাগে তোর?
-“ কিছুটা তেমনই।
-“ মেয়েটা জানে?
-“ না।
-“ জানাস নি কেনো?
-“ সাহস হচ্ছে না।
-“ কেনো?
-“ আমার মতো ছেলের সাথে কি তারা মেয়ে দিবে?
-“ তুই কম কোন দিক দিয়ে?
-“ সব দিক দিয়েই।
-“ তুই সব দিক দিয়েই সুদর্শন।
-“ আজকাল কেউ সুদর্শন খুঁজে না তুষার। সবাই দায়িত্ববান কাউকে চায়।
-“ তোর চেয়ে দায়িত্বশীল আর কেউ আছে নাকি? আমি নিজেও এতোটা দায়িত্বশীল নই যতটা তুই।
-“ বাসায় যা এবার,সকাল থেকে অনেক খাটাখাটুনি করেছিস। সামনে বিয়ে এনজয় কর। এদিক টা আমি সামলে নিব।
তুষার স্মিত হাসে। রাতুল কে জড়িয়ে ধরে বলে-
-“ আমার ডান হাত তুই। তুই ছাড়া আমি বড্ড অচল।

তুষার চলে গেলো। রাতুল পকেট থেকে ফোন বের করে সময় দেখে নিলো। আজ গরম পড়েছে যার দরুন গরম লাগছে। রাতুল একটু দূরে থাকা বট গাছের ছায়াতল দেখে সেখান টায় চলে যায়। কিছুক্ষণ বসে থাকায় হুট করে আকাশ টা পরিবর্তন হয়। ঝলমলে রোদ থেকে হালকা কালো হতে শুরু করে আকাশ টা। আকাশ টাও পারে বটে মুহুর্তে মুহুর্তে বদলে যেতে। আচ্ছা মানুষ ও তো হুট করে বদলে যায় তাই না?
আচ্ছা মেয়েটা কি ভালোবাসবে আমায়? নাকি প্রত্যাখ্যান করবে। নাকি ভুল বুঝবে কোনটা?

#চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে