#আমার_শহরে_তোমার_আমন্ত্রণ_২
#পর্ব৮( অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষিদ্ধ)
#Raiha_Zubair_Ripti
-“ শুনো চিত্রা আমি চাইছি তোমার সাথে তুষারের বিয়ে টা খুব শীগ্রই দিতে। আরহাম কে দিয়ে ভরসা নেই যখন খুশি তোমার ক্ষতি করতে পারে। তুষারের কাছে থাকলে অন্তত তোমার ক্ষতি হবে না। আর আমি দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকতে পারবো।
কথাটা বলে লম্বা একটা শ্বাস ফেললো সাহেল আহমেদ। তুষারের সাথে কথা বলেই তিনি বিয়ের ব্যাপারে এগিয়েছেন। তুষার জানিয়েছেন দিন কয়েকের মধ্যে সে চিত্রা কে বিয়ে করতে চান। এর জন্য চিত্রার সাথে আলাদা করে কথাও বলতে চান। সন্ধ্যার দিকে তুষার আসবে।
সাহেল আহমেদ মেয়ের দিকে তাকালেন। মেয়েকে যে একটা কথা বললো সেটা মনে হয় মেয়ের কানে ঢুকে নি আর ঢুকলেও কথাটা কে গ্রাহ্য করে নি। চিত্রার এমন খামখেয়ালি ভাবসাব দেখে কিছুটা রুষ্ট হলেন সাহেল আহমেদ।
-“ আমি কি বলেছি কথাটা কি কানে ঢুকেছে?
চিত্রা টিভির রিমোট দিয়ে টিভিটা বন্ধ করে বলে-
-“ আচ্ছা বেশ বিয়ে দিতে চাইছো আমি করবো। তবে আমার শর্ত আছে।
সাহেল আহমেদ ভ্রু কুঁচকালো মেয়ের কথা শুনে।
-“ কি শর্ত?
-“ তুষার কে রাজনীতি ছাড়তে হবে।
-“ তুমি ভালো করেই জানো তুষার রাজনীতি ছাড়বে না। সামনে ওর কাঁধে কতবড় দায়িত্ব একবার ভেবে দেখেছো? সমাজের দুরস্ত মানুষের জন্য এখনও কত কিছু করা বাকি।
-“ সমাজের মানুষের ভালো করতে গিয়ে যে তোমাদের সাথে খারাপ ঘটে তার দায়ভার কি সমাজের লোকেরা নেয়? তোমরা সমাজের ভালোর জন্য এতো কিছু করো জাস্ট একটা ভুল করে দেখো সেই সমাজই তোমাদের টেনেহিঁচড়ে নিচে নামিয়ে আনবে। ভুলে যাবে তারা তাদের জন্য কি কি করেছো তোমরা।
-“ আহা নেগেটিভ চিন্তা করছো কেনো? পজিটিভ ভাবো। বাংলাদেশে আরো কতো চেয়ারম্যান এমপি আছে তারাও তো সমাজের দেশের মানুষের জন্য কাজ করছে। রাজনীতি মানেই খারাপ না মা,বুঝার চেষ্টা করো।
-“ কিন্তু বাবা…
-“ আর কোনো কিন্তু করো না মা তোমার ভালোর জন্যই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বাবা হিসেবে তো আমি তোমার খারাপ হবে এমন কিছু করবো না। বিশ্বাস রাখো আমার উপর। রিকুয়েষ্ট করছে তোমার বাবা ফিরিও না।
-“ আচ্ছা ভেবে দেখবো।
কথাটা বলেই চিত্রা বসা থেকে উঠে নিজের রুমে চলে যায়। সাহেল আহমেদ হতাশ হন। চয়নিকা বেগম চায়ের কাপ এনে সাহেল আহমেদের সামনে রেখে বলে-
-“ বেশি চিন্তা করো না। ঠিক রাজি হয়ে যাবে চিত্রা।
সাহেল আহমেদ ভাবান্তর হয়ে চায়ের কাপে চুমুক বসায়। চয়নিকা বেগম স্বামীর দিকে চেয়ে থাকেন।
চিত্রা রুমে এসে পায়চারি করছে। তার বাবা অনেক টা হতাশা নিয়ে কথাগুলো বলেছে। এবার না করা মানে বাবা কে অপমানের সাথে সাথে কষ্ট ও দেওয়া। কিন্তু বিয়ে টাও তো করতে ইচ্ছে করছে না। কি করবে ভেবে পাচ্ছে না।
এরমধ্যে হঠাৎ দরজায় কড়া নাড়ার শব্দে পেছন ফিরে বলে-
-“ কে?
-“ আমি চিত্রা দরজা খুল।
চিত্রা তার মায়ের গলার আওয়াজ পেয়ে দরজা খুলে দেয়। চয়নিকা বেগম হুড়মুড়িয়ে চিত্রার রুমে ঢুকে চিত্রা কে তাড়া দিয়ে বলে-
-“ ওড়না টা নিয়ে চটজলদি ছাঁদে যা।
চিত্রা ভ্রু কুঁচকালো মায়ের কথা শুনে।
-“ ছাঁদে যাব মানে!
-“ হ্যাঁ তুষার এসেছে,তাড়াতাড়ি যা, ছেলেটা অপেক্ষা করছে।
চিত্রা ওড়না টা গায়ে জড়িয়ে ছাঁদের দিকে পা বাড়ালো। ছাঁদে পা রাখতেই ছাঁদে থাকা কৃত্রিম আলোয় দেখতে পেলো, ছাঁদের কার্নিশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে এক সুদর্শন পুরুষ, পকেটে হাত দিয়ে।
চিত্রা সেদিকটায় তাকিয়ে এগিয়ে গেলো। তুষারের পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। তুষার আড়চোখে একবার তাকালো চিত্রার দিকে।
আকাশে আজ থালার মতো ইয়া বড় রূপালী চাঁদ টা তার সকল আলো পৃথিবীর মাঝে বিলিয়ে দিয়েছে। কৃত্রিম আলো না থাকলেও এই ঘুটঘুটে আঁধারে তা আলোর ন্যায় কাজ করবে।
-“ আমি ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে কথা বলতে অভ্যস্ত নই। তাই যা বলার ডিরেক্টলি বলছি। বিয়ে তে রাজি হয়ে যান।
চিত্রা দৃষ্টি সামনে রেখেই জবাব দিলো-
-“ এটা বলার জন্য এখানে এসেছেন?
তুষার অকপটে বলে দিলো-
-“ না।
-“ তাহলে?
-“ যদি বলি আপনাকে একনজর দেখার জন্য এসেছি,বিশ্বাস করবেন মিস চিত্রা?
কথাটা চিত্রার সর্বাঙ্গ দেহের মাঝে যেনো বিচরণ করলো। কথাটার মধ্যে যেনো নেশা মেশানো ছিলো।
-“ আ আমাকে দেখার জন্য এসেছেন? কিন্তু কেনো?
-“ শুনলাম আজ কেউ আপনায় বিরক্ত করেছিলো।
-“ কে বললো আপনায়?
-“ বাতাসে চলে এসেছে। বাহিরে এতো ঘুরাঘুরি করেন কেনো একা একা?
-“ আমি একা ছিলাম না তো।
-“ সাথে কেউ ছিলো?
-“ হ্যাঁ।
তুষার ভ্রু কুঁচকালো।
-“ কে ছিলো সাথে?
-“ ফ্রেন্ড তৃষ্ণা। ও আজ ভীষণ কেঁদেছে।
তুষারের ভ্রু মসৃণ হয়। তার বোন কেঁদেছে বাট হোয়াই?
-“ কেঁদেছে কেনো আপনার ফ্রেন্ড?
-“ ঐ যে জেলাস হয়ে।
-“ কিসের জন্য জেলাস?
-“ ওর ভালোবাসার মানুষ টিকে অন্য রমণীর পাশে দেখে ওর কলিজা ফাডি যাচ্ছিলো। আপনিই বলুন কাউকে ভালোবাসলে কি সেটা চেপে রাখতে হয়? হয় না তো বলে দিতে হয়। তৃষ্ণা ওর কাজিন কে ভালোবাসে। কিন্তু ওর কাজিন জানে না।
তুষার বিষয় টা বুঝলো। তার বোন রাফিকে ভালোবাসে। কাজিন বলতে একমাত্র রাফিই।
-“ আপনি কাউকে ভালোবাসেন মিস চিত্রা?
চিত্রা তপ্ত শ্বাস ফেললো।
-“ না বাসি না…. আরে হ্যাঁ ভালোবাসি। তৃষ্ণার ভাই কে বললাম না সেদিন।
চিত্রা সত্যি বলতে গিয়ে পরক্ষণে মনে পড়লো সেদিন বলেছিলো তৃষ্ণার ভাই কে ভালোবাসে। তুষার চিত্রার কথা শুনে নৈঃশব্দ্যে হাসে।
-“ বিবাহিত ছেলেকে কেনো ভালোবাসতে গেলেন?
চিত্রা ভরকে যায়। নিজেকে ঠিক করে বলে-
-“ মানে?
-“ মানে এই যে তৃষ্ণার ভাইয়ের তো হবু বউ আছে। যাকে সে প্রচন্ড লেভেলের ভালোবাসে। সে তো আপনাকে পাত্তাই দিবে না।
চিত্রা সরু চোখে তাকিয়ে বলে-
-“ জানলেন কি করে?
-“ তুষার খাঁনের হবু বউ কাউকে ভালোবাসবে আর তার সম্পর্কে তুষার জানবে না এটা হয় নাকি।
-“ কিন্তু আপনাকে বিয়ে করতে ইচ্ছে করছে না।
-“ কেনো আমি কি দেখতে খারাপ?
-“ না না আপনি যথেষ্ট হ্যান্ডসাম। কিন্তু রাজনীতি করছেন যে।
-“ ট্রাস্ট মি আমার রাজনীতির জন্য আপনাকে কোনো সাফার করতে হবে না।
-“ আমি আমার জন্য চিন্তা করি না।
-“ তাহলে?
-“ আপনাদের জন্য।
-“ আমাদের জন্য চিন্তা করে আপনার প্রেশার লো করতে হবে না মিস চিত্রা। আমরা পাকাপোক্ত ভাবেই রাজনীতির মাঠে নেমেছি। চোখ কান সব সময় খোলা থাকে। আপনি বরং আমার রাতে বাড়ি ফেরার সঙ্গী হয়ে যান। যার কাছে বাহিরের যানজট পেড়িয়ে একটু মুক্ত ভাবে শ্বাস ফেলা যাবে।
-“ তাহলে আমাকে পটানোর চেষ্টা করুন। সময় এক সপ্তাহ আপনার আগামী হবু এমপি সাহেব। যদি পারেন তাহলে আমি রাজি।
তুষার মুচকি হাসলো। চুল গুলো হাত দিয়ে পেছনে ঠেলে দিয়ে বলল-
-“ তুষার কে পটানোর জন্য মেয়েরা লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে আর আপনি বলছেন আপনাকে পটাতে?
-“ কারন আমি স্পেশাল।
-“ জ্বি সাথে দামী ও।
চিত্রা হেঁসে ফেলে। চিত্রার হাসি দেখে তুষার চিত্রার দিকে চেয়ে থাকে। মেয়েটার হাসির প্রেমে পড়েছিল প্রথম দেখেই। হাসলে সুন্দর গালে টোল পড়ে। চিত্রা নিজের হাসি থামিয়ে তুষারের দিকে তাকায়। তুষার কে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে পুরো দৃষ্টি তুষারের দিকে দেয়। আজও পড়নে ব্লাক কালারের শার্ট। বড্ড কৌতূহল হলো জানার জন্য। এমপি সাহেব কি ফকির নাকি। শার্ট কেনার টাকা নেই নাকি।
-“ আচ্ছা এমপি সাহেব আপনার কি টাকা নেই?
চিত্রার মুখে হঠাৎ করে এমন কথা শুনে বিভ্রান্ত হলো।
-“ কেনো?
-“ না মানে আপনি সবসময় একই শার্ট কেনো পড়েন? আপনার সাথে যতবার দেখা হলো ততবারই এই কালো শার্টই পড়নে দেখেছি।
-“ আমার সব শার্ট টি-শার্ট ব্লাক কালারের সেজন্য এমনটা মনে হচ্ছে।
-“ তাই বলে সব?
-“ হুমম।
-“ আপনি ব্লাক লাভার?
-“ জ্বি হ্যাঁ। আপনার ব্লাক পছন্দ না?
-“ হাল্কা পছন্দ।
-“ তাতেই চলবে।
-“ বাসায় যাবেন না?
-“ হুমম। বিয়েতে রাজি আপনি?
-“ বললাম না আগে পটাতে,আমাকে সময় দিতে তারপর রাজি হবো। জীবন একটাই, জীবনসঙ্গী কে যাচাই বাছাই করে নিতে হবে।
#চলবে?
#আমার_শহরে_তোমার_আমন্ত্রণ_২
#পর্ব৯( অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষিদ্ধ)
#Raiha_Zubair_Ripti
-“ তুষার ভাই আপনি কি কেথাও যাবেন?
তুষার সোফায় বসে জুতা পড়ছিলো। অধরার কথা শুনে জুতার ফিতা লাগাতে লাগাতে বলে-
-“ হ্যাঁ যাব,তৃষ্ণাদের ভার্সিটিতে। কেনো?
অধরা জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট টা ভিজিয়ে বলে-
-“ না মানে আমাকে একটু ভার্সিটি তে ড্রপ করে দিতেন।
তুষার বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে সোফা থেকে ফোন টা হাতে নিয়ে প্যান্টের পকেটে ভরে বলে-
-“ রহিম কে বলে দিচ্ছি পৌঁছে দিয়ে আসবে।
অধরা মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ জানায়। তুষার নিজের গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ে।
ভার্সিটির ক্যাম্পাসে দাঁড়িয়ে আছে চিত্রা আর তৃষ্ণা। তৃষ্ণা মূলত দাঁড়িয়ে আছে চিত্রার হবু হাসবেন্ড কে দেখার জন্য। বেশ অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকেও যখন চিত্রার হবু হাসবেন্ড এর দেখা মিললো না তখন হাত ঘড়ি টায় সময় দেখে নিয়ে চিত্রা কে বলে-
-“ দোস্ত তুই আজ এনজয় কর জিজুর সাথে। আমি অন্য দিন দেখা করবো নি।
চিত্রা একবার সামনের গেটের দিকে তাকায়। লোকটা বলেছিল আসবে। তাহলে আসছে না কেনো?
-“ আচ্ছা সাবধানে যাস।
তৃষ্ণা চিত্রার থেকে বিদায় নিয়ে চলে যায়। চিত্রা ক্যাম্পাসে থাকা হিজল গাছের নিচে বসে পড়ে। না জানি তার এমপি মহাশয় কখন আসবে। আদতে আসবে নাকি?
প্রায় মিনিট দশেক পর নিজের সামনে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে সামনে তাকিয়ে দেখে ঘামার্তক শরীর নিয়ে মুখে মাক্স পড়ে দাঁড়িয়ে আছে তুষার। চিত্রা বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলে-
-“ আরে এমন ঘেমে গেছেন কেনো? কার দৌড়ানি খেয়েছেন?
তুষার আশেপাশে তাকিয়ে বলে-
-“ আগে গাড়িতে চলুন। এখানে দাঁড়িয়ে কথা বলতে পারছি না।
চিত্রা আশেপাশে তাকালো।
-“ ওমা কেনো এখানে দাঁড়িয়ে কথা বললে কি হবে?
-“ তেমন কিছুই হবে না আমার, যা হবার আপনারই হবে।
-“ কি হবে?
-“ জ্বলন।
-“ হোয়াই?
-“ দেখছেন না মাক্স পড়ে আছি। যদি মাস্ক খুলি আপনার সতিন হবার জন্য কিছু মেয়ে দৌড়ে চলে আসবে।
-“ ওহ্ আচ্ছা, আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম আপনি সেলিব্রেটি। আপনার ফ্যান ফলোয়ার গুলো চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে। তা ভাবি এমপি মহাশয়, এমপি হওয়ার আগেই এতো লেট করলেন কেনো আসতে? আমার ফ্রেন্ড যে আপনাকে দেখতে না পেয়ে চলেই গেলো।
-“ আজ দেখা হয় নি তো কি পরের বার হবে দেখা। আর আসার পথে পার্টি অফিসে একটু ঝামেলা হয়েছিল সেটাই মিটমাট করতে খানিকটা দেরি হলো।
-“ তাহলে এখন কোথায় যাব আমরা?
-“ চলুনই না। তারপর ভাবা যাবে কোথায় যাওয়া যায়।
চিত্রা কোমরে হাত দিয়ে বলে-
-“ মাঝ পথে আবার আমাকে ফেলে ইমার্জেন্সি তে চলে যাবেন না তো?
তুষার হেঁসে ফেলে। যা মাক্সের কারনে চিত্রার নজরে আসে না।
-“ ইমার্জেন্সি আসলেও মিস আপনাকে আপনার গন্তব্যে পৌঁছে তারপর যাব।
-“ গুড এবার চলুন।
রাস্তার পাশ ঘেঁষে হেঁটে চলছে আনমনে তৃষ্ণা। দ্বিধাদ্বন্দে ভুগছে,রাফিকে মনের কথা বলাটা ঠিক হবে কি না। যদি রিজেক্ট করে তখন কি হবে? কথাগুলো মনে মনে ভাবতেই মনটা বিষাদে ভরে গেলো। আকস্মিক ভাবে রাস্তার উল্টোপাশে চোখ যেতেই দেখে রাফি কে। মুহুর্তে চোখ মুখে আনন্দ রা এসে হানা দেয়। রাফি ফুলের দোকানে দাঁড়িয়ে ফুল কিনছে। তৃষ্ণার ইচ্ছে করলো রাফিকে ডাক দিতে। কিন্তু পরক্ষণে রাফির পাশে রিয়াকে দেখে দু চোখ নোনা পানিতে টইটম্বুর করলো। দাঁড়িয়ে থাকতে কষ্ট হলো। মাথা ভনভন করলো,পা দুটো অবশ হয়ে আসলো।
তড়িঘড়ি করে একটা রিকশা ডাক দিয়ে রিকশায় উঠে পড়লো। আর একটু ওখানে দাঁড়িয়ে থাকলে যে কোনো একটা কান্ড সে করে বসতো। রিকশায় উঠে বসতেই চোখের পানি গুলো বাঁধ ভাঙা নদীর মতো উপচে গড়িয়ে পড়তে লাগলো। বুকের বা পাশ টায় চিনচিনে ব্যথা করলো৷ ইচ্ছে করলো হৃদপিণ্ডটা টেনে বাহিরে বের এনে টুকরো টুকরো করে কে’টে জিজ্ঞেস করতে, কেনো লোকটাকে ভালোবাসিস এতো।
একহাতের তালু দিয়ে চোখ মুছছে আর অন্য হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে রেখেছে। চিৎকার করে কান্না করা সম্ভব নয়। রিকশাওয়ালা একটু পর পর তৃষ্ণার দিকে তাকাচ্ছে। তৃষ্ণা বিষয় টা বুঝতে পেরে নিজেকে ঠিক রাখার প্রয়াস চেষ্টা করলো।
রাফি ফুলের দোকান থেকে ফুল গুলো নিয়ে রিয়ার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে-
-“ আই থিংক ফুল গুলোতে হবে তোর?
রিয়া ফুল গুলোর দিকে তাকিয়ে ফুল গুলো নাড়িয়ে বলে,-
-“ হ্যাঁ হবে। ধন্যবাদ দোস্ত।
-“ শুধু ধন্যবাদে চিঁড়া ভিজবে না। বিয়ের দাওয়াত চাই।
রিয়া লাজুক হেঁসে বলে-
-“ হ্যাঁ দোয়া করিস রায়ানের চাকরি টা হয়ে গেলেই করে ফেলবো।
-“ দোয়া করি সুখী হ। সাবধানে বাড়ি ফিরিস,বাই।
খোলা মাঠ, যতদূর চোখ যায় ততদূর শুধু মাঠ আর মাঠ। এর সীমানা কোথায় গিয়ে শেষ হয়েছে তার জানা নেই। হয়তো সামনে কিছুটা এগিয়ে গেলে এর সীমানা দেখা যাবে। মাঠের একপাশে রয়েছে ছোট্ট একটা নদী। নদীতে ভেসে বেড়াচ্ছে সাদা রঙের রাজহাঁস। নদীর ঠিক পাশেই আছে একটা ছোট্ট কুঁড়েঘর। চিত্রার চোখ মুখ জুড়ে মুগ্ধতা। শহর থেকে খানিকটা দূরে এতো সুন্দর জায়গা থাকতে পারে এ যেন কল্পনাতেও ছিলো না।
তুষার দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তার প্রিয়তমার মুগ্ধতাকে দেখছে।
এই জায়গা টা ভীষণ পছন্দের তুষারের। মন খারাপ হলেই এখানে এসে একাকী বসে থাকে। মুহূর্তে প্রকৃতি যেনো নিজ দায়িত্বে মন ভালো করে দেয়। চিত্রা কে প্রথমবারের জন্য নিয়ে আসার জন্য মনে হলো এর থেকে সুন্দর জায়গা আর দুটো নেই।
চিত্রা তুষারকে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে ভ্রু উঁচু করে জানায়, কি দেখছেন ওভাবে?
তুষার এগিয়ে আসে চিত্রার দিকে। চিত্রার কাছে এসে চিত্রার মাথার বদ্ধ চুল গুলো উন্মুক্ত করে দেয়। মুহুর্তে এক দমকা হাওয়া এসে চিত্রার চুলগুলো এলোমেলো করে দেয়। চিত্রা বিরক্ত হয়ে কিছু বলবে এমন সময় তুষার বলে উঠলো-
-“ এবার বেশ লাগছে।
চিত্রা সামনে আসা চুল গুলোকে পেছনে ঠেলে দিয়ে বলে-
-“ চুল গুলো কেনো খুললেন? দেখুন বিরক্ত করছে তো।
-“ চুলগুলো কে বদ্ধ রেখেও তো আপনি মিস তাদের বিরক্ত করছিলেন। এদের মুক্ত বাতাসে মেলে দেওয়া উচিত। তাদের ও একটা স্বাধীনতা আছে।
চিত্রা আড়চোখে তুষারকে পরখ করে বলে-
-“ আপনার ভাবসাব সুবিধার ঠেকছে না এমপি মহাশয়।
-“ হয়তো।
-“ আচ্ছা এই জায়গাটা কাদের? ভীষণ সুন্দর।
-“ এই জায়গাটা আমার। একটা সময়ে এটা আমার আপনার মিলে আমাদের হবে।
লাস্টের কথা শুনে শরীরে কিছুটা অনুভূতি মিশ্রণ হলো। সেই সাথে কিছুটা লজ্জা। একজন পুরুষের মুখে থেকে কিছু বাক্য শুনলে আপনা-আপনি কিছু অনুভূতি ক্রিয়েট হয় শরীরে যেমনটা চিত্রার ক্ষেত্রে হলো। আমাদের মানে তুষার আর সে মিলেই তো আমাদের নামক স্বত্বা টাকে তৈরি করবে।
চিত্রা কে বেশ কিছুক্ষণ চুপ থাকতে দেখে তুষার বলে উঠে –
-“ কোথায় হারিয়ে গেলেন?
চিত্রা ভাবান্তর হয়ে জবাব দিলো-
-“ আমাদের নামক শব্দটায়।
পরক্ষণেই মনে পড়লো কি বলে ফেললো সে। তুষার হাসলো। মেয়েটার মাঝে অনেক রূপ। কখনও বোকাসোকা,কখনও আত্মসম্মান প্রখর, কখনও লাজুকলতা। যাকে বলে পরিস্থিতি মতো নিজেকে চেঞ্জ করা গিরগিটি। গিরগিটি টা নেগেটিভ কিছু বুঝানোর ক্ষেত্রে সচারাচর ব্যাবহার করা হয়। কিন্তু চিত্রার ক্ষেত্রে এটা নেগেটিভিটির কিছু বহন করছে না।
তুষার হাস্যোজ্জ্বল মুখ নিয়ে চিত্রার দিকে তাকাতেই মুখের সকল হাসি মুহুর্তের মধ্যে আকাশে ঢাকা অমাবস্যার রাতের কালো আঁধারের মতো হয়ে যায়। মনে হলো জীবনের দামী জিনিসটাকে সে হারানোর পথে। ধরালো ছুড়ি টা কাছে আসতেই হেঁচকা টানে চিত্রা কে পাশে ফেলে দেয় তুষার। সাথে সাথে ধারালো ছুড়ি টা এসে তুষারের বা হাতে এসে বিঁধে।
আকস্মিক ভাবে ধাক্কা খাওয়ায় চিত্রা হুমড়ি খেয়ে সবুজ ঘাসের মধ্যে পড়ে যায়। তুষারের মুখ থেকে মৃদু আহ জাতীয় শব্দ শুনে মাথা ঘুরিয়ে তাকিয়ে দেখে তুষার বা হাত চেপে ধরে রেখেছে। আর হাত বেয়ে টুপ টুপ করে র’ক্ত গড়িয়ে পড়ছে।
#চলবে?