আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ ২ পর্ব-৪+৫

0
614

#আমার_শহরে_তোমার_আমন্ত্রণ_২
#পর্ব৪( অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষিদ্ধ)
#Raiha_Zubair_Ripti

-“ কি ব্যাপার বিয়েতে রাজি হচ্ছো না কেনো?
চিত্রা ভার্সিটি থেকে ফিরতেই কথাটা বলে উঠে সাহেল আহমেদ। চিত্রা একবার বাবার দিকে তাকিয়ে কাঁধের ব্যাগ টা সোফায় রেখে বাবার থেকে কিছুটা দুরত্ব নিয়ে বসে বলে-
-“ আমি কেনো বিয়েতে রাজি নই তার কারন টা তো তোমার জানার কথা আব্বু।
সাহেল আহমেদের কপালে দু ভাজ পড়লো। চক্ষুশূল দৃষ্টি নিয়ে বলে-
-“ রাজনীতি?
-“ হ্যাঁ।

মেয়ের হ্যাঁ জবাব পেয়ে কপাল মসৃন হলো। নড়েচড়ে বসে মেয়ের দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ তুমি নিজের ভালো কেনো বুঝতে চাইছো না চিত্রা? তুষারের থেকে ভালো কেউ তোমায় রাখতে পারবে না। আল্লাহ না করুক আমার বিরোধী দলের লোকেরা যদি আমার কিছু করে বসে তখন তোমাদের কি হবে ভেবে দেখেছো? তুষার তোমায় তাদের থেকে প্রটেক্ট করতে পারবে। আমি মা-রা গেলেও এটা ভেবে শান্তি পাবো যে আমার মেয়ের মাথার উপর একজন আছে। যে আমার মেয়েকে সব রকমের বিপদ থেকে রক্ষা করতে পারবে।

চিত্রা ভ্রু কুঁচকালো।
-“ সে কি সুপারম্যান যে আমাকে সব রকমের বিপদ থেকে রক্ষা করবে? উল্টো তোমাদের নিয়ে চিন্তা করতে করতে আমি হার্ট অ্যাটাক করে মা-রা যাবো। তাই বলছি আমি তাকে বিয়ে করবো না মানে করবো না।

কথাটা বলে ব্যাগটা নিয়ে নিজের রুমে চলে যায় চিত্রা। সাহেল আহমেদ তপ্ত শ্বাস ফেলেন। মেয়েকে কি করে রাজি করাবে ভেবে পাচ্ছেন না।

চিত্রা রুমে এসে সোজা ওয়াশরুমে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে নেয়। ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে বিছানা থেকে ফোনটা নিয়ে তৃষ্ণা কে ফোন দেয়।

তৃষ্ণা সোফায় বসে স্টার জলসা চ্যানেলে নাটক দেখছে। পাশেই বসে আছে তৃষ্ণার মা তানিয়া বেগম। সোফার সামনে থাকা টি-টেবিলে রাখা ফোনটা বেজে উঠায় বিরক্তিবোধ করলো তৃষ্ণা। ফোনের স্কিনে জ্বলজ্বল করে ভেসে উঠলো বেটার হাফ লেখা। তানিয়া বেগম সন্দেহান দৃষ্টি নিয়ে আড়চোখে তাকালো। তৃষ্ণা ফোনটা কানে নিয়ে সাইডে চলে যায়।
-“ কিরে কোনো সমস্যা হয়েছে?
চিত্রা বেলকনিতে থাকা চেয়ারে বসে বলে-
-“ সমস্যা তো সেই একটাই। তোকে বললাম তোর ভাইকে আমায় দে তা না হলে সাহায্য করতে বল।
তৃষ্ণা ভ্রু কুঁচকে বলল-
-“ কি সাহায্য?
-“ তোর ভাইকে বল আমার বয়ফ্রেন্ড হতে। মানে আমার যার সাথে বিয়ে ঠিক করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে তাকে তোর ভাইকে দেখিয়ে বলবো এটা আমার বয়ফ্রেন্ড আমরা একে ওপরকে ভালোবাসি। দুজন দুজনকে না পেলে ম’রেই যাব।
-“ এতে লাভ কি?

-“ আশ্চর্য এতেই তো লাভ। একটা ছেলে তো আর জেনেশুনে এমন মেয়েকে বিয়ে করবে না। তো ছেলেটা বিয়ে ভেঙে দিবে আর আমি তোর ভাইকে থ্যাংকস বলে দিব। আর এরমধ্যে যদি তোর ভাইয়ের সাথে আমার ক্যামিস্ট্রি জমে যায় তাহলে তোর ভাইয়ের হানি হয়ে যাব। তোর ভাইকে বল না আমায় হেল্প করতে।
-“ পাগল নাকি! আমার ভাইয়ের কি ঠেকা পড়ছে তোমারে সাহায্য করার।
-“ এমন করিস কেনো। বলেই দেখ না,একটা মেয়েকে হেল্প করলে তেমন ক্ষতি তো হবে না তোর ভাইয়ের।
-“ ক্ষতি হবে না মানে তোর সাথে সাথে আমার ভাইয়ের ও বিয়ে ভাঙবে।
-“ আরে ভাঙবে না। তুই তোর ভাইয়ের নম্বর টা দে আমায় আমি হেল্প চাইবো।
-“ ভাইয়ের অনুমতি ছাড়া ভাই তার নম্বর কাউকে দিতে না করছে।
-“ তো আহাম্মকের মতো ফোন কানে নিয়ে আছিস কেনো যা অনুমতি নিয়ে আয়।
-“ ভাই বাসায় নেই ঐ পার্টি অফিসে..
তৃষ্ণা পুরো কথা শেষ করলো। এখনই তো সব বলে দিচ্ছিলো।
-“ বাসায় নেই পার্টি অফিস মানে কি?
-“ ঐ আসলে আজকে অফিসে ছোটখাটো পার্টি সেখানেই। আমি রাখি এখন ভাই ফিরলে অনুমতি নিয়ে নম্বর দিব নি।

কথাটা বলে ফোন কেটে লম্বা একটা শ্বাস ফেলে তৃষ্ণা। কথার তালে তালে বলেই ফেলছিলো। ফোন টা আবার আগের জায়গায় রেখে টিভিতে মনোযোগ দিতেই পাশ থেকে তানিয়া বেগম বলে উঠে –
-“ তা তোর বেটার হাফের বাসা কোথায়? পরিবারে কে কে আছে?
তৃষ্ণা দৃষ্টি টিভিতে রেখেই বলে-
-“ হেমায়েতপুর বাসা। বাবা মা আর ও।
-“ আর ভাই বা বোন নেই?
-“ না।
-“ মাশা-আল্লাহ। তা দেখতে শুনতে কেমন?
-“ সুন্দর।
-” কতদিন ধরে চিনিস?
-“ মাস চারেক হবে।
-“ পছন্দ করিস?
-“ হ্যাঁ।
তানিয়া বেগম মেয়ের মাথায় হাত রেখে আদুরে কন্ঠে বলে-
-“ ভেবে চিন্তে সামনে আগাস তোর মা সবসময় তোর পাশে আছে।৷ আর সব কথা আমার সাথে শেয়ার করবি। কিচ্ছু লুকাবি না। পালিয়ে যাওয়ার চিন্তা মাথায় আনিস না।

তৃষ্ণা মায়ের কথার আগামাথা কিছুই বুঝলো না। হা করে তাকিয়ে থাকলো কিছুক্ষণ। পালিয়ে যাবে কেনো সে? মায়ের হাত মাথা থেকে সরিয়ে বলে-
-“ কি বলো? চুপচাপ টিভি দেখতে দাও।

তানিয়া বেগম মেয়ের থুতনিতে হাত দিয়ে চুমু খেয়ে চলে যায়। মনে তার অনেক কল্পনা জল্পনারা ঘুরপাক খাচ্ছে।

রাত আটটার দিকে তুষার তার বাবার সাথে বাসায় ফিরে। সোজা নিজের রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়। ব্লাক টি-শার্ট পড়ে নিচে নেমে ডাইনিং টেবিলে চেয়ার টেনে বসে। প্রচুর ক্ষুধা লেগেছে। সারাদিন এদিক ওদিক ছোটাছুটি করার দরুন দুপুরে খাবার সময় হয়ে উঠে নি। তানিয়া বেগম ছেলে আর স্বামী কে খেতে দেন।তুষার খাবার টা খেয়ে নিজের রুমে যেতেই তৃষ্ণা পেছন থেকে ডেকে উঠে। তুষার দাঁড়িয়ে যায়। চোখের ইশারায় জিজ্ঞেস করে -কি?

তৃষ্ণা তুষারের সামনে দাঁড়িয়ে বলে-
-“ ভাই একটা অনুমতি চাই।
তুষার ফোন স্ক্রোল করতে করতে বলে-
-“ কিসের জন্য?
-“ আসলে আমার ফ্রেন্ড চিত্রা তোমার ফোন নম্বর চাচ্ছে তাকে কি দিব তোমার ফোন নম্বর?
তুষারের দৃষ্টি ফোন থেকে এবার তৃষ্ণার উপর পড়লো। ফোনটা হাতে রেখে দু হাত বুকে গুঁজে বলে-
-“ আমার ফোন নম্বর দিয়ে তোর ফ্রেন্ড কি করবে?
-“ সেটা তো জানি না। বললো ইমার্জেন্সি দরকার। দিব?
তুষার কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে-
-“ আচ্ছা দে।

কথাটা বলে নিজের রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয় তুষার। তৃষ্ণার অনেক টা অবাক হয়। ভেবেছিলো ভাই তার ডিরেক্ট মানা করে দিবে। কিন্তু অনুমতি দেওয়াতে মাথা চক্কর খেয়ে পড়ে যাওয়ার উপক্রম হয়।

তৃষ্ণা নিজের রুমে এসে চিত্রা কে মেসেজে তুষারের নম্বর সেন্ড করে পাঠিয়ে দেয়।

চিত্রা তৃষ্ণার পাঠানো নম্বর টার দিকে একবার চেয়ে নিজেকে ধাতস্থ করে নেয়। যে করেই হোক তৃষ্ণার ভাইকে সে পটিয়ে হলেও বিয়ে ভাঙার জন্য রাজি করাবে।

অধরা তৃষ্ণার দিকে তাকিয়ে ফের বই পড়ার দিকে মনযোগ দিয়ে বলে-
-“ কি চলছে?
তৃষ্ণা ফোনটা বিছানায় রেখে অধরার পাশে থাকা চেয়ার টা টেনে বসে বলে-
-“ কি চলবে?
-“ এই যে ফোনের দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছিস।
-“ ওহ্ আর বলো না। তোমায় সেদিন বললাম না আমার ভার্সিটিতে একটা মেয়ের সাথে ফ্রেন্ডশিপ হয়েছে।
-“ কার কথা বলছিস?
-“ আরে ঐ যে কিউট মেয়ে টা শ্যামলা চেহারার। নাম টা গেস করো তো?
-“ উমমম চিত্রা?
-“ হ্যাঁ। মেয়েটা বিয়ে ভাঙার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে।

অধরা ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো-
-“ কার?
-“ ওর নিজের।
-“ ওহ্ তা বিয়ে ভাঙতে চাচ্ছে কেনো?
-“ আর বলো না। ছেলে পছন্দ না ওর।
-“ পরিবার কে বুঝিয়ে বললেই হয়।
-“ সেটারই চেষ্টা চালাচ্ছি।
-“ আচ্ছা যা ঘুমিয়ে পড়।
-“ আচ্ছা গুড নাইট।

তুষার বারবার নিজের ফোনের দিকে তাকাচ্ছে একটা ফোন কল আসবে সে আশায়। কিন্তু এতো আশা রেখেও কোনো লাভ হলো না। চিত্রার নম্বর থেকে তার ফোনে কোনো কলই আসছে না। অধৈর্য হয়ে তার ইচ্ছে করলো চিত্রার ফোনে গিয়ে নিজের ফোন নম্বরে কল দিতে। কিন্তু সেটাও সম্ভব নয়। আজকের জন্য রূপকথার সেই আলাদীনের চেরাগের দৈত্যকে খুব মনে পড়ছে। চেরাগ টা তার কাছে থাকলে কি খুব ক্ষতি হতো? দৈত্যেকে বলতো চিত্রার ফোনে ঢুকে একটা ফোনকল না হোক মিসড কলই দিতে।

#চলবে?

#আমার_শহরে_তোমার_আমন্ত্রণ_২
#পর্ব৫( অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষিদ্ধ)
#Raiha_Zubair_Ripti

-“ আসসালামু আলাইকুম, আপনি তৃষ্ণার ভাই?

তুষার চিত্রার ফোন কলের অপেক্ষায় থাকতে থাকতে যখন ঘুমের ঘোরে চলে যাচ্ছিল প্রায় তখন হুট করে ফোনের রিংটোন বেজে উঠে। তুষার তড়িঘড়ি করে ফোনটা হাতে নেয়। মনে হচ্ছিল এক সেকেন্ড দেরি হলেই ফোন কল আর ওপাশ থেকে আসবে না। ফোনের স্কিনে জ্বলজ্বল করে উঠলো ব্লাক হার্ট সাথে লেখা গাধা। গাধা নাম টা একটু আগেই লিখেছে,তার কান্ডকারখানা এখন গাধার মতোই লাগছে তুষারের কাছে। চিত্রার ফোন নম্বর আগে থেকেই তুষারে কাছে ছিলো। চিত্রার নম্বর টা পেয়েছে তৃষ্ণার বদৌলতে তুষার মাস চারেক আগেই। তখন নম্বর টা সেভ করেছিলো প্রেয়সী দিয়ে। আর এখন সেটা বদলে গাধা। নিজেকে স্বাভাবিক করে মুখে গম্ভীর্যতা এনে বলল-
-“ ওয়ালাইকুমুস সালাম। জ্বি আমি তৃষ্ণার ভাই। আপনি কে বলছেন?
তৃষ্ণা মুখে হাসি ঝুলিয়ে জবাব দিলো-
-“ ভাইয়া আমি তৃষ্ণার ফ্রেন্ড।

চিত্রার মুখে ভাইয়া ডাক শুনে তুষারের কপালে দু ভাজ পড়লো। ডাকটা বড্ড বেমানান লাগছে চিত্রার মুখে শুনতে।
-“ কোনো দরকার?
-“ জ্বি ভাইয়া। আপনার সাথে কি একটু দেখা করা যাবে?
-“ সময় হবে না। কিছু বলার থাকলে বলুন না হলে ফোন কেটে দিলাম।
-“ আচ্ছা ভাইয়া তাহলে রেখে দেন ফোন।

তুষার ভেবেছিলো চিত্রা বলবে কথা। কিন্তু না মেয়েটা উল্টো বলছে রেখে দিতে। কিছুটা রাগ হলো। রাগান্বিত চেহারা নিয়েই টুকুস করে ফোন কেটে দিলো তুষার। চিত্রা ফোন টা মুখের সামনে এনে নম্বর টার দিকে চেয়ে রইলো। এ ছেলের কথার ধরন শুনে মনে হলো প্রচুর রাগী। একে দিয়ে নিজের স্বার্থ হাসিল করবে কি করে ভেবেই চিন্তামগ্ন হলো।

তুষার মিনিট কয়েক ফোনটার দিকে চেয়ে রাগ কমানোর চেষ্টা করলো। এক সময় রাগ টা শীতল হয়ে গেলো। মন মেজাজ স্বাভাবিক মাত্রায় এনে ঘুমের দেশে পাড়ি জমালো।

-“ কি ব্যাপার রাফি ভাই হুটহাট এভাবে সামনে এসে পড়েন কেনো?

তৃষ্ণা বাগানে দাঁড়িয়ে ব্রাশ করছিলো। মুখের থুথু ফেলতে গিয়ে সামনে তাকিয়ে দেখে রাফি এসে দাঁড়িয়েছে। আর একটু হলেই মুখের থুথু তার শরীরে ফেলতো। মুখের থুথু সাইডে ফালায়। রাফি ভ্রু কুঁচকে বলে-
-“ সাইডে কেনো ফেললে আমার শরীরে ফেলতে। বাগানে দাঁড়িয়ে কেউ ব্রাশ করে? ওয়াশরুম নেই তোমার রুমে?
তৃষ্ণা বাগানে থাকা দোলনায় বসে। দাঁড়িয়ে থেকে কোমড় ধরে এসেছে,না বসলেই নয়।
-“ ওয়াশরুম আছে রাফি ভাই কিন্তু..
-“ কিন্তু কি?
-“ বাগানে দাঁড়িয়ে ব্রাশ করলে যেই শান্তি পাওয়া যায় ওয়াশরুমে দাঁড়িয়ে ব্রাশ করলে সেই শান্তি পাওয়া যায় না।
রাফির ইচ্ছে করলো ঠাটিয়ে এক রাম ধমক দিতে। ইচ্ছে টাকে মনের মধ্যে রেখেই আস্তে করে বলে-
-“ বাসার ভেতরে যাও,বাহির থেকে লোকজন আসবে যখন তখন।
-“ তাতে আমার কি?
-“ ঠেটামি করছো কেনো? কথা বললে শুনো না কেনো?
-“ আপনি কি আমার কথা শুনেন? আমি কেনো আপনার কথা শুনবো?
-“ তুমি বড় না আমি বড়?
-“ আপনি বড়।
-“ তাহলে কথা কার শোনা উচিত?
-“ আপনার।
-“ একটা থাপ্পড় দিয়ে গাল লাল করে দিবো। আবার মুখে মুখে তর্ক করে।

তৃষ্ণা দোলনা থেকে লাফ দিয়ে বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। রাফির দিকে আগ্নেয়গিরি ভরা দৃষ্টি নিয়ে বলে-
-“ এই আপনি আমাকে ধমকাচ্ছেন কেনো? আমার যা ইচ্ছে আমি তাই করবো আপনি বলার কে?৷ নেক্সট টাইম এভাবে কথা বলবেন না আমার সাথে।

কথাটা বলে তৃষ্ণা চলে যায়। তানিয়া বেগম বাগানে আসছিলেন বেগুন গাছ থেকে বেগুন নিতে। মেয়েকে রেগেমেগে যেতে দেখে দুশ্চিন্তা হয়। আবার হাতে ফোন দেখে কিছুটা আন্দাজ করে রাফির পাশে দাঁড়িয়ে বলে-
-“ হ্যাঁ রে রাফি আমার মেয়েটা এমন রেগেমেগে গেলো কেনো? ফোনে কারো সাথে ঝগড়া করেছে?

রাফি ভ্রু কুঁচকালো চাচির কথা শুনে।
-“ না ফোনে কার সাথে ঝগড়া করবে?
-“ তাহলে রেগেমেগে গেলো কেনো?
-“ মাথার তাড় ছিঁড়ে গেছে তোমার মেয়ের তাই।
-“ দেখছো, আমার মেয়ের মাথার তাড় ছিঁড়ে ফেলার জন্য কি তাহলে বেটার হাফ দায়ী?
-“ কিসের বেটার হাফের কথা বলছো চাচি?
-“ ও তেমন কিছু না তুই থাক আর ঐ বেগুন গুলো নিয়ে আয় বাবা আমি চললাম।

তানিয়া বেগমের যাওয়ার পানে তাকালো রাফি। কি বললো কিছুই বুঝলো না।

চিত্রা রাস্তার পাশ ঘেঁষে আনমনে হাঁটছে। আর মনে মনে কিছু একটা ভেবে চলছে। হঠাৎ জলতেষ্টা পাওয়ায় রাস্তার ধারে থাকা একটা দোকান থেকে একটা পানির বোতল কিনে। দোকানদার কে পানির দাম দিয়ে পানির বোতলের মুখ খুলে ঢকঢক করে পানি খায়। পানি খাওয়ার মাঝে হঠাৎ পানি মুখের ভেতর না পড়ে মুখসহ নাকের মধ্যে ঢুকে যায়। গলায় পানি আটকে নাক মুখ থেকে পানি ছিটকে পড়ে যায়। শ্বাস ফেলতে কষ্ট হচ্ছিলো। সমান তালে কাশতে থাকে চিত্রা। হঠাৎ মাথায় কারো হাতের স্পর্শ পায়। আর মৃদু স্বরে বলছে -আস্তে। আওয়াজ টা কানে আসতেই চোখ মেলে তাকায় আর দেখতে পায় চোখের সামনে রুমাল নিয়ে বাড়ানো হাত। চিত্রা রুমাল টা হাতে নেয়। নাকের পানি সহ মুখে থাকা পানি মুছে নেয়। শেষে নাক টাকে জোরে টেনে নাক পরিষ্কার করে রুমাল টা বাড়িয়ে দেয়।

তুষার একবার রুমালের দিকে তো আর একবার চিত্রার দিকে তাকায়। চিত্রা এখনো তুষারের দিকে তাকায় নি। রুমাল টা এখনও না নিতে দেখে চিত্রা পাশ ঘুরে বলে-
-“ আরে রুমাল টা নিন।

কথাটা বলে মুখের দিকে তাকাতেই দেখে তুষার ভ্রু কুঁচকে তার দিকে তাকিয়ে আছে। তুষার কে নিজের সামনে দেখে ভ্যাবলার মতো কিছুক্ষণ চেয়ে রয় চিত্রা। পরক্ষণে রুমালের দিকে চেয়ে বলে-
-“ রুমাল টা নিন। আর আপনি এখানে কেনো?

তুষার রুমাল টার দিকে চেয়ে বলল-
-“ রুমালের কাজ শেষ রুমাল আর আমার লাগবে না।
চিত্রা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে রুমালের দিকে ভালো করে তাকাতেই দেখে রুমালে কিছুক্ষণ আগে নাক পরিষ্কার করার ইয়েটা লেগে আছে। লোকটা এর জন্য ই রুমাল টা নিতে চাইছে না। এই ছেলেকে তো বিয়ে না করার আরেকটা রিজন পেলো। যে ছেলে সামান্য সর্দি দিয়ে জড়ানো রুমাল নিতে চাইছে না সে ছেলে কে বিয়ে কোনো মতেই করা যাবে না।

তুষার যথেষ্ট পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। নোংরা জিনিস সে একদমই সহ্য করতে পারে না। ভালোবাসলেই তার সব কিছু সে টলারেট করবে এমন শুদ্ধ পুরুষ সে নয়। তুষার কে চুপ থাকতে দেখে চিত্রা ফের বলে উঠে –
-“ আহাম্মকের মতো চেয়ে থাকবেন না। সামান্য তো সর্দি ই লেগেছে রুমালে তাই বলে রুমাল টা নিবেন না। বাসায় গিয়ে না হয় হুইল পাউডার দিয়ে ধুয়ে নিতেন।
-“ হুইল পাউডার দিয়ে না হয় আপনিই ধুয়ে রুমাল টা ব্যাক করবেন মিস চিত্রা।
-“ সেটা বললেই তো হতো।
-“ সামান্য পানি খেতে গিয়েই এতো কান্ড করে বসলেন!
-“ আপনি এখানে কেনো?
-“ শ্বশুরের মেয়েটাকে দেখতে আসছি।
চিত্রা ভ্রু কুঁচকে বলে-
-“ আপনার রাজনীতি নাই নাকি?
-“ আশ্চর্য রাজনীতি করলে বলেন তারা সময় দিতে পারে না। আবার সময় দিলে বলেন রাজনীতি নেই নাকি।
-“ আমার তো মনে হচ্ছে আপনি আমাকে পাম টাম দিয়ে বিয়ে করার চেষ্টা করছেন।
-“ বাহ মাথায় বুদ্ধি বলে তাহলে কিছু আছে দেখছি।
-“ মানে?
-“ মানে টানে কিছু না। আপনার গাড়ি কোথায়?
-“ আনি নি আজ।
-“ কেনো?
-“ এমনি।
-“ আচ্ছা আমার গাড়িতে চলুন বাসা অব্দি ড্রপ করে দেই।
-“ না না আপনার গাড়িতে আমি যাবো না।
-“ হুয়াই?
-“ আমার ইচ্ছে তাই।
-“ কথা না বাড়ালেই কি চলছ না? এখান থেকে বাসায় যেতে তো অনেক্ক্ষণ লেগে যাবে চলুন।

চিত্রা মনে মনে ভাবলো আসলেই বাসায় যেতে কিছুটা দেরি হবে যেতে। আর লোকটা সাথে এখন গেলে বিয়ে ভাঙা নিয়ে কিছু একটা ফন্দি আটা যাবে। চিত্রা রাজি হয়ে গেলো। তুষার গাড়িতে গিয়ে বসতেই তুষার রাস্তার ওপাশে থাকা তার ছেলেপেলে দের ইশারায় কিছু বলে নিজে ড্রাইভিং সিটে বসে পড়ে। তুষার গাড়ি স্টার্ট দিতেই চিত্রা বলে উঠে –
-“ শুনুন না একটা কথা বলার আছে।
তুষার গাড়ি চালাতে চালাতে বলে-
-“ হুম বলুন শুনছি।
-“ বলছি কি জানেন আমি না একটা ছেলেকে ভীষণ ভালোবাসি। ছেলেটাও আমায় ভালোবাসে। আমরা কেউ কাউকে ছাড়া নিজেদের ভাবতেই পারি না। বুঝতে পারছেন বিষয় টা?

তুষার আড় চোখে গম্ভীর মুখে চিত্রার দিকে তাকালো।
-“ ছেলেটা কে?
চিত্রা ভাবলো হয়তো তুষার সব জানলে বিয়েটা ক্যান্সেল করে দিবে। কথাটা ভেবেই মনে মনে লুঙ্গি ড্যান্স করে ফেললো।
-“ আমার ফ্রেন্ডের ভাই।
-“ নাম কি ফ্রেন্ডের?
-“ তৃষ্ণা।

নাম টা শুনেই তুষারের ভ্রু কুঁচকানো কপাল মসৃণ হয়। ঠোঁট কামড়ে কিছু একটা ভাবে। ফের প্রশ্ন করে-
-“ কতদিনের রিলেশন আপনাদের?
-“ ফাইভ ইয়ার্স।
তুষার বিষম খেলো। মুখের সামনে হাত নিয়ে বলে-
-“ নাম কি ছেলেটার?
চিত্রা থেমে যায়। কি নাম বলবে এবার? সে তো তৃষ্ণার ভাইয়ের নাম টা জানে না। চিত্রা কে নাম বলতে না দেখে বলে-
-“ কি হলো বলুন নাম কি ছেলেটার?

তুষার ফের করা প্রশ্নে এবার চমকে উঠলো চিত্রা। তৃষ্ণার নামের সাথে নাম মিলিয়ে বলল-
-“ তাসকিন,তাসকিন আহমেদ তৃষ্ণার ভাইয়ের নাম।

তুষারের হো হো করে হাসতে ইচ্ছে করলো। কিন্তু ইচ্ছে টা বহুত কষ্টে আটকে রাখলো।
-“ ওহ্ আচ্ছা বুঝলাম। তা ছেলেটা কে আপনি বিয়ে করতে চান?
-“ হ্যাঁ আমরা দু’জন দুজন কে বিয়ে করতে চাই।
-“ আচ্ছা বেশ। তা আমাকে এসব শুনিয়ে কি করাতে চান?
-“ ঐ তো চাইছি বিয়েটা আপনি ভেঙে দিবেন।
-“ আপনাদের দুজনের ভালেবাসার জন্য আমি কেনো বিয়ে ভাঙবো?
-“ কারন আমি আপনাকে বিয়ে করতে চাই না। একজনের সম্মতিতে কখনও বিয়ে টিকে থাকে না।

কথাটা চিত্রা যতোটা সহজে বলেছে ততটাই ভারী লাগলো কথাটা তুষারের কাছে। মনে বিষন্নতারা এসে হানা দিলো।
-“ আচ্ছা আমি আপনার কথা রাখবো। বিয়ে ভাঙবো তবে শর্ত আছে।
-“ কি শর্ত?আপনি যা বলবেন আমি তাই মানবো।
-“ আপনার প্রেমিক কে আমার সামনে এনে দাঁড় করাবেন। তার মুখ থেকে সব শুনে আমি বিয়েটা ভেঙে দিবো।

চিত্রার মুখ বেলুনের মতো চুপসে গেলো।যখনই একটু আশার আলো দেখে তখনই কিছু না কিছু অন্ধকার এসে সেই আলো কে ডুবিয়ে দেয়।

চিত্রা কে চিন্তামগ্ন দেখ তুষার ডেভিল মার্কা হাসি দেয়। চিত্রা জীবনেও পারবে না তৃষ্ণার ভাই তাসকিন কে তার সামনে আনতে। আর না সে বিয়ে ভাঙবে।

#চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে