আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ ২ পর্ব-০৩

0
612

#আমার_শহরে_তোমার_আমন্ত্রণ_২
#পর্ব৩( অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষিদ্ধ)
#Raiha_Zubair_Ripti

-“ তা মেয়ে কেমন লাগলো তুষার,পছন্দ হয়েছে?
তুষার বেলকনিতে দাঁড়িয়ে রাতের আকাশ দেখছিলো। হঠাৎ বাবার কথা কানে আসতেই পেছন ফিরে দেখে তার বাবা তামিম খাঁন আর চাচা সামির খাঁন। তুষার স্বাভাবিক ভাবে জবাব দিলো-
-“ হ্যাঁ হয়েছে।
তামিম খাঁন স্বস্তি পেলেন। ছেলের পাশে দাঁড়িয়ে বলেন-
-“ চিত্রা কে রাজি করাতে কিন্তু অনেকটা বেগ পোহাতে হবে তোমায় পারবে তো?
-“ সেটা না হয় আমার উপর ছেড়ে দাও।

সামির খাঁন ভাই আর ভাইস্তার কথা শুনে বলে-
-“ আমি বুঝতে পারছি না ভাইজান সাহেল ভাইয়ের মেয়েকেই কেনো তুষারের বউ করে আনতে হবে? শুনলাম মেয়েটা রাজনীতি বিদ্বেষ।
তামিম খাঁন ইশারায় চুপ থাকতে বললেন ভাইকে। যার অর্থ সে এটার উত্তর পরে দিবে। সামির খাঁন চুপ রইলো।
-“ তুমি অনুমতি দিলে আমরা বিয়ের দিকে এগোবো।
তুষার একপলক বাবা চাচার দিকে তাকিয়ে ফোন নিয়ে বাহিরে যেতে যেতে বলে-
-“ বিয়েটা এখন হচ্ছে না,মেয়ে পুরোপুরি রাজি নয়। আগে রাজি হোক তারপর।

তামিম খাঁন আর কিছু বলতে পারলো না তার আগেই তুষার সেখান থেকে প্রস্থান করলো। সামির খাঁন ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ ভাইজান বললে না তো সাহেল ভাইয়ের মেয়েকেই কেনো তুষারের বউ করতে চাইছো?
তামিম খাঁন সামিরের দিকে তাকায়। দু ভাই রুম থেকে বের হয়ে হাঁটতে হাঁটতে তামিম খাঁন বলেন-
-“ কারন আমার ছেলে চায় সেজন্য।
-“ তুষার চায় মানে?
-“ এসব নিয়ে মাথা ঘামাস না, ব্যাংক কলোনির সামনে রাস্তার কাজ টা কতদূর?
-“ প্রায় শেষের পথে।
-“ আচ্ছা যা এবার ঘুমিয়ে পড়,রাত অনেক টা হয়েছে।

সামির খাঁন সম্মতি জানিয়ে নিজ রুমে চলে যায়। তামিম খাঁন নিজের রুমে ঢুকতেই দেখে তার বোনের মেয়ে অধরা এদিক টায় আসছে। হাতে তার পানির জগ। তামিম খাঁন রুমে না ঢুকে ঠাই দাঁড়িয়ে রয় সেখান টায়। অধরা তার কাছাকাছি আসতেই তামিম খাঁন মৃদু হেসে বলে-
-“ এখনও ঘুমাও নি যে?
অধরা পানির জগটা দেখিয়ে বলে-
-“ পড়াশোনা করছিলাম। পিপাসা অনুভূত হওয়ায় পানি খেতে গিয়ে দেখি জগে পানি নেই। তাই পানি নিতে আসলাম,পানি নিয়েই ঘুমিয়ে পড়বো।
-“ তৃষ্ণা ঘুমিয়েছে?
-“ হ্যাঁ অনেক্ক্ষণ আগেই সে ঘুমের দেশে পাড়ি জমিয়েছে।
-“ ওহ্ আচ্ছা। পানি টা নিয়ে তুমিও ঘুমিয়ে পড়ো,শুভ রাত্রি।
-“ জ্বি শুভরাত্রি।

অধরা কিচেন রুমে এসে বেসিন থেকে জগে পানি ভরে রুমে আসার পথে দেখে বাড়ির সদর দরজায় আবছা মানুষের ছায়া। আসার সময় খেয়ালে আসে নি যে সদর দরজা টা খোলা। অধরা কৌতূহল হয় আবছা ছায়ার মানুষটিকে দেখার। জগ হাতে নিয়ে টিপটিপ পায়ে দরজার সামনে আসতেই দেখে তুষার ফোনে কারো সাথে কথা বলছে। তুষার কে দেখে ঠাই দাঁড়িয়ে রয় অধরা।

তুষার ফোনে কথা বলে পেছন ফিরতেই অধরা কে ঠাই দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুঁচকায়। ফোন টা প্যান্টের পকেটে ঢুকিয়ে বলে-
-“ এতো রাতে এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো?
তুষারের কথায় ভ্রম কাটে অধরার। মাথা নিচু করে বলে-
-“ আসলে পানি নিতে এসে দেখি সদর দরজা খুলা তাই।
-“ এবার রুমে যা। রাত অনেক হয়েছে।

অধরা মাথা নাড়িয়ে চলে যায়। অধরার যখন পনেরো বছর বয়স তখন থেকে অধরা তার মামার বাসায় থাকে। অধরার মা মারা যায় অধরার তখন বয়স তেরো। অধরার বাবা অধরার মা মারা যাওয়ার মাস কয়েক বাদেই আবার বিয়ে করেন। সৎ মা খুব একটা সুবিধার ছিলো না। কারনে অকারণে অধরার উপর অত্যাচার করতো। তামিম খাঁনের কানে কথাটা আসা মাত্রই ভাগ্নি কে নিজের কাছে নিয়ে আসে। সে থেকে অধরা এখানেই থাকে। দ্বিতীয় বার আর বাবার বাড়ির ত্রিসীমানায় যায় নি।

অধরা যেতেই তুষার সদর দরজা আটকিয়ে নিজের রুমে যায়। বিছানায় গিয়ে কম্বল গায়ে দিয়ে শুয়ে পকেট থেকে ফোন টা বের করে। ফোনের গ্যালারিতে ঢুকে মাস্ক পড়া চিত্রার একটা ছবি বের করে বলে-
❝ তোমার শহর শেষ বসন্তের ফুল ফোটার অপেক্ষায়-
তীব্র শীতের শেষে চেয়ে আছি আমি তোমার প্রতিক্ষায়!❞ আই হোপ প্রতীক্ষা টা খুব একটা দীর্ঘ হবে না প্রেয়সী।

-“ কিরে দোস্ত দুলাভাই কে কেমন লাগলো?
চিত্রা ভার্সিটি তে আসতে না আসতেই তৃষ্ণার এমন কথা শুনে ভ্রু কুঁচকে তাকালো। মন খারাপ করে তৃষ্ণার পাশে বসে বলে-
-“ ছেলেটা ভালোই দেখতে শুনতে বাট আমি বিয়ে করতে চাই না।
তৃষ্ণা চিত্রার কথা শুনে অবাক হয়ে বলে-
-“ ওমা এটা কেমন কথা? দেখতে শুনতে ভালো তাহলে বিয়ে কেনো করবি না?
-“ রাজনীতি করে। তুই তো জানিস আমি রাজনীতি পছন্দ করি না। তুই কিছু একটা করে প্লিজ আমাকে বিয়ে ভাঙার টিপস্ দে।

তৃষ্ণা ভাবান্তর হয়। তৃষ্ণার ফ্যামিলিও রাজনীতি করে। চিত্রার সাথে তৃষ্ণার পরিচয় মাস চারেক হবে। যেদিন থেকে শুনলো চিত্রা রাজনীতি বিদ্বেষ সেদিন থেকেই তৃষ্ণা তার ফ্যামিলির কথা লুকিয়েছে। চিত্রা জানে তৃষ্ণার বাবা একজন বিজনেসম্যান। দু’জন ভালো ফ্রেন্ড হলেও কেউ কখনও কারো বাসায় যায় নি। তৃষ্ণা চিত্রার কাঁধে হাত রেখে বলে-
-“ আচ্ছা চিন্তা করিস না কিছু একটা বুদ্ধি বের করবো। আর হ্যাঁ একটা কথা।
-“ হুমম কি?
-“ আমার ভাইয়ের ও বিয়ে ঠিক হচ্ছে।

চিত্রা অবাক হয়ে তাকায় তৃষ্ণার দিকে। তৃষ্ণার হাত ধরে বলে-
-“ দোস্ত একটা কথা বলি?
-“ হ্যাঁ বল।
-“ বলছি কি আমার যার সাথে বিয়ে ঠিক হচ্ছে তার সাথে তোর হবু ভাবি কে দে। আর আামকে তোর ভাইয়ের সাথে নে প্লিজ প্লিজ দোস্ত।

তৃষ্ণা চিত্রার হাত নিজের হাত থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলে-
-“ আমার ভাইকে কেনো বিয়ে করবি ইয়ার?
-“ বিয়েটা ভাঙার জন্য। তোর ভাই তো আর রাজনীতি করে না। আর আমিও তো দেখতে শুনতে মাশাল্লাহ তাই না বল? তোর ভাইয়ের নিশ্চয়ই আমাকে পছন্দ হবে।
-“ আমার ভাইয়ের হবু বউকে সে খুব পছন্দ করে বোইন। আমার ভাই তোমাকে পছন্দ করবে না। বাদ দাও আমার ভাইয়ের চিন্তা। তার থেকে তোমার হবু জামাইয়ের সাথে তোমার বিয়ে ভাঙার বন্দবস্ত করবো প্যারা নিয়ো না।
-“ তুই তো তোর ভাইয়ের ছবি দেখালি না আমায়?
তৃষ্ণা বিষম খায়। নিজেকে স্বাভাবিক করে বলে-
-“ না দেখাই ভালো বোইন। সামনে তো বিয়ে তখন একেবারে দেখে নিস।

চিত্রা ফুস করে নিঃশ্বাস ছাড়লো। পড়াশোনার পাশাপাশি বিয়ে ভাঙার জন্য ও লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।

ভার্সিটির শেষে চিত্রা আর তৃষ্ণা বাহিরে এসে ভেলপুরি খায়। এরমধ্যে দূর থেকেই বাড়ির গাড়ি দেখে তৃষ্ণা চিত্রা কে বলে-
-“ দোস্ত বাসায় সাবধানে যাস আমার গাড়ি চলে এসেছে।
চিত্রা সামনে তাকিয়ে দেখলো ব্লাক কালারে একটা প্রাইভেট কার। কিছুটা দূরে দাঁড় করানো। তৃষ্ণা চিত্রার থেকে বিদায় নিয়ে গাড়িতে উঠে বসে। তৃষ্ণা উঠে বসতেই তুষার একপলক চিত্রার দিকে তাকিয়ে গাড়ি স্টার্ট দেয়। তৃষ্ণা চিত্রার বলা তখনকার কথা স্মরণ করে। তুষারের দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ভাই জানো তোমাকে না আমার ফ্রেন্ড দেখতে চায়।
তুষার গাড়ি চালাতে চালাতে বলে-
-“ দেখিয়েছিস?
-“ না।
-“ গুড।
-“ জানো ওর বিয়ে ঠিক হচ্ছে বাট ও রাজি না। ও বলে কি জানো?

তুষার একবার তৃষ্ণার দিকে তাকিয়ে ফের সামনে তাকিয়ে আগ্রহী হয়ে বলে-
-“ কি বলে?
-“ বলে কি-না, তোমার সাথে ওর বিয়ে দিতে আর আমার ভাবির সাথে ওর হবু বরের বিয়ে দিতে।

তুষারের ভীষণ হাসি পেলো। কিন্তু বাহিরে সেটা প্রকাশ করলো না। গম্ভীর কন্ঠে বললো-
-“ তুই রাজি হয়েছিস?
-“ না ভাইয়া। আমি বলেছি আমার ভাই তার হবু বউকে ভীষণ ভালোবাসে। তার চেয়ে আমি ওকে ওর বিয়ে ভাঙার টিপস্ দিব।

কথাটা তুষারের কর্ণকুহর হতেই তুষার জোরে ব্রেক কোষে। অদ্ভুত দৃষ্টি নিয়ে তৃষ্ণার দিকে তাকায়। এটার তার বোন? একদিকে ভাইয়ের বিয়ের জন্য এক্সাইটেড অন্য দিকে অজান্তেই তার ভাবিকেই বিয়ে ভাঙার জন্য টিপস্ দিচ্ছে।

তৃষ্ণা হঠাৎ ভাইকে এভাবে গাড়ি থামাতে দেখে বলে-
-“ কি হলো ভাইয়া?
তুষার নিজেকে সামলিয়ে কাট কাট গলায় বলে-
-“ কিছু না। অন্যের বিয়ে ভাঙার জন্য তোকে এতো মাথা ঘামিয়ে টিপস্ দিতে হবে না। যতোই টিপস্ দিস না কেনো বিয়ে ভাঙতে পারবি না।

তৃষ্ণা হঠাৎ ভাইয়ের রেগে যাওয়ার মানে বুঝলো না।

#চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে