#আমার_শহরে_তোমার_আমন্ত্রণ
#পর্ব২০
#Raiha_Zubair_Ripti
-“ এই রাফি সমস্যা কি তোর? আমার পেছনে লাগছিস কেনো? আমার বিয়েতে যদি তো জন্য কোনো প্রবলেম ক্রিয়েট হয় তাহলে তোর একদিন কি আমার একদিন।
রাফি বসার রুমে বসেছিল। তুষারের ফোন কল পেয়ে ফোন রিসিভ করতেই তুষার এই কথা বলে উঠে। রাফি তার ফুপি কে বলেছিল তুষার ব্রো এর বিয়ে দিলে তার ও দিতে হবে। আর যদি না দেয় তাহলে তৃষ্ণা দের বাসায় গিয়ে পড়ে থাকবে।
-“আরে ব্রো এতো রেগে যাচ্ছো কেনো?
তুষার নিজের রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে। একটু আগেই তানিয়া বেগম বাসায় ফিরে জানিয়েছেন তুষার কে যে- তুষারের বিয়ে হলে রাফি কে বিয়ে দিতে হবে। এদিকে তামিম খান ডিরেক্ট না করে দিয়েছে এতো তাড়াতাড়ি মেয়ে বিয়ে দিবে না। মেয়ের সামনে এক্সাম এক্সাম শেষে বিয়ে। তানিয়া বেগম তুষারের দিকো তাকিয়ে বলে-
-“ তুষার বিয়ে টা কয়েক মাস পড়ে হোক। দুই ভাইয়ের বিয়ো টা না হয় একই দিনে দিবো।
তুষার ভ্রু কুঁচকালো।
-“ আশ্চর্য আমার বিয়ে কেনো পিছাতে চাইছো?
-“ দেখছিস না রাফি কেমন করছে। তোর আব্বা তো তৃষ্ণা কে এখন দিবে না রাফির হাতে।
-“ রাফির ইচ্ছে মতো হবে নাকি? আমি সামনের মাসেই বিয়ে করবো।
-“ আজব তো তুই আবার রাফির মতো শুরু করলি। চিত্রা তো পালিয়ে যাচ্ছে না। কয়েক মাস অপেক্ষা করলে কি হয়?
-“ অপেক্ষা জিনিস টাই করা যায় না মা।
-“ বেহায়া ছেলেপেলে কোথাকার। আগের দিনে আমাদের বিয়ের কথা হলে লজ্জায় ঘর থেকে বের হতাম না আর এখন তরা আমাদের উপর দিয়ে নিজেদের বিয়ের কথা বলিস।
-“ এসব বলে লাভ নেই মা, শুনলাম সামনের মাসে ১৫ তারিখ বিয়ের ডেট ফিক্সড করছো।তাহলে ১৫ তারিখ ই হচ্ছে আমার বিয়ে।
-“ না হচ্ছে না,রাফি হতচ্ছাড়া হতে দিচ্ছে না।
-“ রাফি কে আমি সামলে নিবো টেনশন করো না। আমার বিয়ে ১৫ তারিখই হচ্ছে।
কথাটা বলে তুষার বসা থেকে উঠে নিজের রুমে চলে আসে। পকেট থেকে ফোন বের করে রাফিকে ফোন লাগায়।
-“ রাগবো না মানে। তুই আমার বিয়ে বানচাল করছিস কেনো?
-“ কোথায় বানচাল করলাম?
-“ এই যে আমি বিয়ে করলে তোর ও করতে হবে।
-“ হ্যাঁ ঠিকই তো বলেছি,তুমি আমার বোন কে বিয়ে করলে আমি ও তোমার বোন কে বিয়ে করবো।
-“ আমি কি না করছি গাধা তোকে যে আমার বোন কে বিয়ে করিস না। বাসা থেকে দিচ্ছে না তাহলে পালিয়ে বিয়ে কর গিয়ে তবুও আমার বিয়েতে ব্যাঘাত দিস না।
মুহূর্তে রাফির চোখ মুখ জুড়ে হাসি ফুটে উঠলো।
-“ দারুন আইডিয়া দিলে তো ব্রো।
তুষার হুঁশে ফিরে। কি বলতে গিয়ে কি বলে ফেলছে বুঝতে পারে নি।
-“ রাফি শোন ভুলেও এ কাজ করিস না। আমার মুখ ফস্কে এ কথাটা বের হয়ে গেছে।
-“না ব্রো মুখ ফস্কে সবসময় সত্যি কথাই বের হয়। আচ্ছা ব্রো তৃষ্ণা আর আমি লুকিয়ে বিয়ে করলে কি এক সাথে থাকতে পারবো?
-“ এক সাথে মানে?
-“ ঐ যে বিয়ের পর চিত্রা যেভাবে তোমার বাড়ি তোমার রুমে থাকবে সেভাবে কি তৃ…..
-“ এই চুপ কর ফাজিল। তোর বিয়ের এতো ইচ্ছে তোর শ্বশুর কে গিয়ে রাজি করা।
-“ ফুপা তো তোমার বাবা তুমি কি একটু পারো না তোমার হবু শালা+ভাই টার জন্য তোমার বাবাকে রাজি করাতে?
-“ আচ্ছা আমি দেখছি। তুই যে এমন বিয়ে পাগল আমি ভাবতেও পারি নি।
-“ এহ তুমি এমন ভাবে বলছো যে মনে হয় তুমি বিয়ে বিদ্বেষ পুরুষ! তুমিও বিয়ে পাগল।
-“ তোর বড় ভাই আমি, কিছুতো শরম রাখ।
-“ ভরা লোকের সামনে দাঁড়িয়ে চিতা কে যখন চাইলে তখন কি শরমের কথা মাথায় আনছিলা?
তুষার তপ্ত শ্বাস ফেললো। রাফি তার থেকেও এক ধাপ আগানো। কথা না বাড়িয়ে ফোন কেটে দেয়। কোথায় ভাবলো রিলাক্স মুডে বিয়ে করবে তা না এখন রাফির বিয়ের জন্য বাবা কে রাজি করাতে হবে।
চিত্রা কানে হেডফোন লাগিয়ে বসে আছে বেলকনিতে, পাশেই রিয়া বসে আছে। সামনে গরম কফির দুই মগ থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে। চিত্রা একটা কফির মগ নিয়ে সেটায় চুমুক দেয়। রিয়া চিত্রার পানে চেয়ে বলে-
-“ জানিস রাফি ভাইয়া কিভাবে সবার সামনে তৃষ্ণা কে বিয়ে করার জন্য বায়না ধরলো।
চিত্রা কফির মগ টা সামনে রেখে বলল-
-“ এ বংশের ছেলে গুলো এমনই,অবাক হওয়ার কিছু নেই।
-“ তাই বলে গুরুজন দের সামনে ওভাবে বলবে!
-“ তাড় ছেঁড়া যে সেজন্য।
-“ দেখ তোর আর তুষার ভাইয়ের বিয়ে সুস্থ ভাবে হয় কি না।
চিত্রা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে-
-“ বিয়ে হলে হবে না হলে নেই।
-“ তুষার ভাই বিয়ে মেনে নিবে না।
-“ জানি, সে জন্য প্যারা নাই।
-“ আচ্ছা থাক আসি বাবু কে মায়ের কাছে দিয়ে আসছি।
রিয়া চলে যায়। চিত্রা কফির মগ টা নিয়ে রুমে এসে পড়ে।
তৃষ্ণা চিত্রা কে ফোন দেয়। চিত্রা তৃষ্ণার ফোন কল রিসিভ করতেই তৃষ্ণা গড়গড় করে বলে-
-“ এই চিত্রা তোর ভাই আমার ফোন ধরছে না কেনো?
চিত্রা অবাক হয়।
-“ কোন ভাই ফোন ধরছে না?
-“ রাফি ভাইয়া।
-“ সেটা আমি কিভাবে জানবো কেনো সে তোর ফোন ধরছে না।
-“ তোর ফোন টা গিয়ে ওরে দে তো।
চিত্রা আচ্ছা বলে ফোন টা নিয়ে রাফির রুমের দিকে যায়। রাফির রুমের দরজায় কড়া নাড়তেই রাফি দরজার সামনে আসে। চিত্রা কে দেখে ভ্রু কুঁচকে বলে-
-“ কিছু বলবে?
চিত্রা ফোনটা রাফির দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে-
-“ তুমি তৃষ্ণার ফোন ধরছো না কেনো। তৃষ্ণা ফোন দিয়েছে কথা বলো।
রাফি ফোন টা চিত্রার হাত থেকে নেয়। চিত্রা নিজের রুমে চলে আসে। রাফি ফোন টা কানে নিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ে।
-“ এই আপনি এসব কি শুরু করেছেন।
তৃষ্ণা কথাটা রেগে বললো।
-“ কি শুরু করছি?
-“ এই যে বিয়ে বিয়ে করে।
-“ তাতে তোমার সমস্যা কি?
-“ আপনার জন্য যে ভাই আর বাবার মধ্যে এক প্রকার তর্কাতর্কি হয়ে গেলো।
-“ হতে দাও। তোমার আব্বা কে তো ভালো মনে করেছিলাম সে এতো ঠেটা কেনো? রাফি কি তার মেয়েকে দিয়ে কাজ করাতো নাকি বাসায় নাকি না খাইয়ে রাখতো? মেয়ে দিতে সমস্যা কি।
-“ আপনি তো এসে বাবার সাথে কথা বলতে পারতেন,ঠান্ডা মাথায় বুঝাতেন।
-“ আসবো বলছো তাহলে?
-“ এখন এসে কি করবেন? যা হওয়ার তা তো হয়েই গেছে।
-“ কি হইছে?
-“ কি আবার বাবা রাজি হয়ে গেছে,এটা বলার জন্য সেই কখন থেকে আপনায় ফোন দিচ্ছি ফোন রিসিভ করছেন না।
রাফি শোয়া থেকো এক লাফে উঠে বসে। উৎফুল্ল হয়ে বলে-
-“ সত্যি রাজি হয়েছে?
-“ হ্যাঁ।
-“ বিয়ে কবে আমার?
-“ আপাতত ভাইয়ের বিয়ের দিন আমাদের কাবিন হবে তারপর কয়েক দিন পর উঠিয়ে দিবে।
-“ তা কয় দিন পর উঠিয়ে দিবে?
-“ আশ্চর্য সেটা আমি কিভাবে জানবো?
রাফি বিরক্ত নিয়ে বলল-
-“ সবটাই জানতে পারলে আর এই টুকু জানতে পারলে না ইডিয়ট।
-“ আপনার দরকার আপনি জানেন।
-“ বিয়ে মনে হয় আমি একাই করছি,তোমার মনে হয় বিয়েতে মত নেই।
-“ মত আছে থাকবে না কেনো।
-“ বিয়ের জন্য আমি কত স্ট্রাগল করছি,আর তুমি।
-“ আর আমি কি?
-“ কিছু না ফোন রাখি। এবার নিশ্চিন্তে একটা ঘুম দিবো।
কথাটা বলে ফোন কেটে দেয় রাফি। চিত্রা কে তার ফোন টা তার রুমে গিয়ো দিয়ে এসে ঘুমিয়ে পড়ে।
ছাঁদে পায়চারি করছে অধরা। মন কে কিছুতেই বশে আনতে পারছে না। আশরাফুল রহমান মেয়েকে এতো রাতে ছাঁদে দেখে ভ্রু কুঁচকে ফেলে। তার নিজের ও ঘুম আসছিলো না দেখে ছাঁদে এসেছে। কিন্তু মেয়েকে দেখে মেয়ের দিকে এগিয়ে যায়। মেয়ের সামনে দাঁড়িয়ে বলে-
-“ কি হয়েছে অধরা এতো রাতে ছাঁদে কেনো তুমি?
অধরা ভরকে যায়। তার বাবাকে এইখানে এই মুহূর্তে একটু ও আশা করে নি। নিজেকে সামাল দিয়ে বলে-
-“ এমনি একটু হাঁটাহাটি করতে এসেছি।
-“ ওহ্ একটা কথা বলতে চাই।
-“ হু বলো।
-“ তোমাকে কয়েক দিন ধরে খুব অচেনা অচেনা লাগছে।
-“ যেমন?
-“ তোমার মাঝে কিছু পরিবর্তন এসেছে,সেটা কি জানো তুমি?
-“ জ্বি বাবা সত্যি বলতে গেলে পরিবর্তন গুলো আমিও লক্ষ্য করেছি।
-“ এমন পরিবর্তনের কারন কি?
-“ আমি নিজেও বুঝতে পারছি না।
-“ কথাটা বাজে ভাবে নিয়ো না মা,কাউকে কি ভালোবেসে ফেলছো?
অধরা থতমত খেয়ে গেলো।
-“ না না বাবা অধরা দ্বিতীয় বার কাউকে ভালোবাসতে পারে না। তার জীবনে এক মাত্র শাফিন এর ই দ্বিতীয় কোনো পুরুষ কে অধরা তার জীবনে আসতে দিবে না।
-“ এভাবে জীবন চলে না অধরা। আমাদের বয়স হচ্ছে তোমাকে একটা ভরসাযোগ্য হাতে তুলে দিতে পারলে শান্তি পাবো তোমার মা আর আমি।
-“ সরি বাবা আমি আর দ্বিতীয় বার এসবে জড়াতে চাই না।আমি ডিসাইড করেছি আমি আবার ইতালি ব্যাক করবো।
-“ কেনো?
-“ কারন এখানে থাকলে নিজের উপর কন্ট্রোল থাকবে না আমার। জমি টা বিক্রি করতে চেয়েছিলাম না কিন্তু দেখলাম সত্যি জমিটা জন্য আহমেদ দের সমস্যা হচ্ছে তাই বিক্রি করেছি চড়া দামে।
-“ কবে যাচ্ছো?
-“ এই তো পরশু ফ্লাইট। তোমরা কি যাবে?
-“ হ্যাঁ আমরা আর এখানে থেকে কি করবো,তোমার মা যেতে চাইছে বারবার।
-“ তাহলে আমি পরশু যাচ্ছি তোমার না হয় আমার পরে যেয়ো।
-“ আচ্ছা।
অধরা সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে নিজের রুমে চলে যায়। রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করতে করতে বলে-
-“ দ্বিতীয় বার কাউকে ভালো লেগেছে কিন্তু ভুল মানুষ সে। অধরা তুই আর মানুষ খুঁজে পেলি না ঐ ছেলে কেই ভালো লাগতে হলো তোর? ছেলেটার বিয়ে সামনে, তোর চয়েস দেখে আমার তোকেই থাপড়াতে ইচ্ছে করছে। এখনই লাগাম টেনে ধর, তুই ভিলেন নস যে থার্ড পার্সন হয়ে যাবি। যেটা মনে আছে সেটা মনের ভেতরই কবর দে। নিজেও ভালো থাকবি অন্যরাও ভালো থাকবে।
#চলবে?