আমার মুগ্ধতায় তুমি পর্ব-০৪

0
1909

#আমার_মুগ্ধতায়_তুমি
#পর্বঃ০৪
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ
*অর্শি একটা থ্রি পিস পরে আছে। বুকের নির্দিষ্ট জায়গায় ওড়না টা না থেকে গলার উপর ওড়নাটা পরে আছে। ভার্সিটির বেশির ভাগ লোক অর্শির দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। বেশ সুন্দর তো সে বটেই। একটা ছেলে অর্শির উদ্দেশ্যে এক গোছা রক্ত বর্ণ গোলাপ হাতে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। এই সব দৃশ্য দেখার পর আয়াদের মাথায় রক্ত উঠে যায়। “এই সব নোংরামি করতে আর ছেলেদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে ভার্সিটিতে আসা হয় বুঝি”! বিড়বিড় করতে করতে বলছে আয়াদ। ছেলেটি অর্শির সামনে হাঁটু গেড়ে বসতেই আয়াদ আচমকা অর্শির সামনে হাজির হয়ে পরে। অর্শি আয়াদের চোখ দেখে বেশ বুঝতে পারছে আয়াদ রেগে আছে। অর্শি নিজেও একটু অবাক। হঠাৎ করে এই ছেলে প্রপোজাল দিচ্ছে কেনো? আয়াদ অর্শির চোখের দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ছেলেটিকে উদ্দেশ্য করে বলছে

— হুম প্রপোজ কর। সুন্দর করে এই সুন্দরী নারীর রূপের বর্ণনা করে করে প্রপোজ কর।

আয়াদের রাগান্বিত কন্ঠের ক্ষতবিক্ষত কথা গুলো ছেলেটি শুনতে পেতেই বসা থেকে উঠে আয়াদের দিকে দৃষ্টিপাত করলো। আয়াদ ছেলেটির দিকে বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে বলল

— আমার দিকে তাকিয়ে আছিস কেনো? ভয় পাস না। প্রপোজ কর। আমায় করিস না ভাই‌। এই অপরূপ সুন্দরী রমনীকে কর।

— আয়াদ ভাইয়া আসলে…….!

কথাটা সম্পূর্ণ শেষ করার পূর্বেই আয়াদ ছেলেটির শার্টের কলার চেপে ধরে ছেলেটিকে হেঁচকা টান দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে আসে আয়াদ। ছেলেটি অর্শির ক্লাসমেট। আয়াদ তাদের সিনিয়র। আয়াজ ছেলেটিকে উদ্দেশ্য করে রাগে গজগজ করতে করতে ফিসফিসিয়ে বলল

— মেয়ে দেখলেই মাথা নষ্ট হয়ে যায়। কন্ট্রোল হয় না। তাই না! ইচ্ছে করছে তোকে উত্তম মাধ্যম দিয়ে বুঝিয়ে দেই যাকে তাকে প্রপোজাল দেয়া উচিৎ নয়। ব্লাডি স্টুপিট। এতঝটুকু কলিজা নিয়ে প্রপোজাল দিতে এসেছিস? আজ থেকে ভার্সিটিতে বোরখা পরে আসবি। স্টুপিড। গেইট লস্ট।

আয়াদ কথাটা শেষ করতেই ছেলেটিকে একটা ধাক্কা মেরে নিজের থেকে দূরে সরিয়ে দিলো। অর্শি কিছুই বুঝতে পারছে না। “আয়াদ হুট করে রেগে যাচ্ছে কেনো? অর্শি ভাবছে আয়াদের সাথে আসেনি বলে কি আয়াদ রেগে গেছে”? আয়াদ ছেলেটিকে ছেড়ে অর্শির দিকে এগিয়ে যায়। অর্শি আয়াদের সামনে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। আয়াদ অর্শির সামনে দাঁড়িয়ে কোনো কথা না বলে অর্শির বুকের উপর থেকে ওড়না টা সরিয়ে নিজের হাতের মধ্যে ওড়নাটা নিয়ে আসে। আয়াদ ওড়না নিয়ে নিতেই অর্শি দ্রুত নিজের অর্ধ উন্মুক্ত বুকটা ঢাকতে মরিয়া হয়ে ওঠে। আয়াদ অর্শির এই নাটক দেখে আরো রেগে যায়। অর্শি আয়াদের দিকে কৌতুহল পূর্ণ দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে। আয়াদ ফিসফিসিয়ে অর্শিকে উদ্দেশ্য করে বলছে

— তুই একটা নারী। লজ্জা তোর সম্মান। নিজেকে যদি সকলের সামনে উন্মুক্ত করে দিস। তবে তোর আর ঐ পতিতার মাঝে তফাত কোথায়? মানছি আমি ছেলে মেয়ে সমান। তবে একটা কথা এই লজ্জা নয় ছেলেদের ভূষণ। নারীদের ভূষণ লজ্জায়। অপরের সামনে বুক দেখিয়ে নিজেকে মর্ডান ভাবা সত্যি এসব বোকামির পরিচয়। আয়াদের বাঁকা কথার বিপরীতে অর্শি রেগে গিয়ে বলতে লাগলো

— এইসব কি ধরনের অসভ্যতা? আমার ওড়না আপনি কেড়ে নিয়ে নিজেই নীতিবাক্যর লেকচার শুনাচ্ছেন? এই সব কি? আমি কি ওড়না ছাড়া ভার্সিটিতে এসেছি নাকি? আর ঐ ছেলের সাথে মিস বিহ্যাব করলেন কেনো? ঐ ছেলে আপনার কি ক্ষতি করেছে? আপনার সমস্যা কোথায়?

অর্শির কথার বিপরীতে আয়াদ বাঁকা হেঁসে একটু তাচ্ছিল্য কর কন্ঠে বলতে লাগলো

— ওড়না টা তো সাথেই ছিলো তোর। কিন্তু এটার যোগ্য জায়গায় এটা ছিলো না। তাই তো আমায় বাধ্য হয়ে টেনে নিয়ে নিতে হলো। নিজের বুক দেখিয়ে ছেলেদের দূর্বল করার কৌশলটার মধ্যে কি লজিক আছে তা আমার জানা নাই। তোকে কোন ভাষায় বোঝালে বুঝতে পারবি যে আমার এই সব নোংরামি একদম পছন্দ না। আর সবার অধিকার আছে নিজেদের মতো করে থাকার কিন্তু তোর সেই অধিকার নেই।

— আমার নেই মানে? আমি আপনার আন্ডারে চাকরি করতে আসিনি যে আপনার সব পছন্দ অপছন্দের দাম আমায় দিতে হবে। আর আপনি তো এর থেকেও নোংরা। যা ঐ দিন রাতে আমাকে বুঝিয়ে দিয়েছেন।

অর্শির কথাটা শেষ করেই নিজের চোখ জোড়া ছলছল করে ফেলল। আয়াদ আর কোনো কথা বলার মতো সাহস করলো না। কি বা বলার আছে? অর্শির প্রতি তার দূর্বলতা, অর্শির পাশে অন্য কাউকে সহ্য করার মতো ক্ষমতা, অর্শির মুগ্ধতায় আয়াদ যে নিজের মধ্যে নেই। এটা হয়তো অর্শি কখনও বুঝতে পারবে না। আয়াদ অর্শির দিকে ওড়নাটা ছুঁড়ে দিতেই তার সামনে থেকে অর্শি হনহন করে চলে যায়।

— কিরে আয়াদ এতোটা মনোযোগ দিয়ে কি করছিস?

রাজের কন্ঠ শুনে আয়াদের একটু বিব্রত হয়ে দ্রুত ল্যাপটপটা অফ করে বলল

— উহু কিছু না তো।

— কিছু না হলে ল্যাপটপটা অফ করলি কেনো? ছিঃ! ছিঃ! ভার্সিটির ক্লাসে এসে ল্যাপটপে কি কি করছিস? তা আমার জানা নাই ভাবছিস! দেখি দেখি কি করছিস।

কথাটা শেষ করতে করতে রাজি আয়াদের ল্যাপটপের দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়। আয়াদ কোনো মতেই রাজকে নিজের ল্যাপটপ দিচ্ছে না। রাজ জোর করে আয়াদের থেকে তার ল্যাপটপ টা কেড়ে নিয়ে ল্যাপটপ অন করতেই অবাক হয়ে যায়। আয়াদ রাজকে আর কিছু বলল না। মুখটা মলিন করে রাজকে উদ্দেশ্য করে বৃত্তে লাগলো আয়াদ

— আমি বললাম না তুই যা ভাবছিস তা নয়।

— হ্যাঁ, কিন্তু এসব কি? আয়াদ এগুলো কিসের কোড?

— আরে ভাই তেমন কিছু না। ঐ একটু আইসিটির কিছু কাজ করছিলাম। আচ্ছা বল আজ কি করলাম হবে না?

— কি জানি মনে হচ্ছে হবে না। আচ্ছা মামা বল তো অর্শির সাথে তোর এতো ঝামেলা হয় কেনো? মানে ও তোকে সহ্য করতে পারে না আর তুইও সেম। ব্যাপার কি? আজ সকালেও তোদের মধ্যে ঝামেলা হয়েছে। কি জন্য এমন করিস? বেচারি মেয়েটা……!

— এই থাম থাম। ওরে বেচারি বলিস না। যখন কোনো মানুষ ইচ্ছে করে চায় কাউকে রাগাতে তখন তাকে বেচারি বলে না। ও জেনে শুনে এমন এমন কাজ করে যা আমার মাথায় আগুন ধরিয়ে দিতে বাধ্য করে।

— হুম।

* আয়াদ আর রাজ কিছু সময় কথা বলার পরে ক্লাস থেকে বেরিয়ে চলে আসে। অর্শি মন মরা হয়ে ক্লাসে বসে আছে। অর্শির। বেস্টফ্রেন্ড অনু অর্শির পাশে বসে আছে।

— এই অর্শি তোর কি হয়েছে? মন মরা হয়ে বসে আছিস যে?

— কিছু না।

— ওহহহ। আয়াদ ভাইয়া মনে হয় তোকে ভালো টালো বাসে। এই জন্য তোকে কেউ প্রপোজ করলে তার সহ্য হয় না, রেগে যায়।

— কিহহ! ভালোবাসে? ওর মতো একটা নোংরা ছেলে আমায় ভালোবাসবে আর আমিও দাঁত কেলিয়ে ওর মতো চলবো? অসম্ভব। ও ভালোবাসে না। যাস্ট আমার ভালো ওর সহ্য হয় না।

— হুম। কিন্তু আর যাই বলিস আ আয়াদ ভাইয়া কিন্তু দেখতে হেব্বি কিউট। ইশশশ যদি আমার সাথে এমন রাগা রাগি করতো না। আমি পাক্কা ওর সাথেই প্রেম করতাম। কি সুন্দর পরিপাটি একটা ছেলে। উফফফ!

অনুর কথা গুলো অর্শির শরীরে কাঁটা দিচ্ছে। “আয়াদকে নিয়ে যা খুশি তাই বল। না প্রশংসা করার কি আছে? দেখতে তো হনুমানের মতো। তাকে নিয়ে এতো ঢং করার কি হলো? অদ্ভুত”। কথা গুলো মনে মনে বলে অর্শি ক্লাস থেকে বেরিয়ে যায়। অসহ্যকর লাগছে সব কিছু। অর্শি ক্লাস থেকে বেরিয়ে ক্যাম্পাসে আসতেই দেখতে পেলো আয়াদ নিজের বাইক নিয়ে ভার্সিটির সামনে দাঁড়িয়ে আছে। অর্শি চুপচাপ আয়াদের সামনের থেকে বেরিয়ে যেতে লাগলো। আয়াদ অর্শিকে দেখে কিছু বললো না। অর্শি আয়াদের সামনে থেকে ক্রশ করতেই আয়াদ অর্শির হাত ধরে ফেললো। অর্শি ভিশন অবাক হয়ে যায় আয়াদের কাজে। আয়াদ অর্শিকে উদ্দেশ্য করে মৃদু কন্ঠে বলল

— সরি। আমার ভূল হয়েছে। একটা ভুলের সাজা আর কত ভাবে দিবি?

অর্শি আয়াদের কথা শেষ হতেই বলতে লাগলো

— বাবা ভুতের মুখে রাম রাম। এতো ভদ্র হলেন কবে থেকে? আর লিসেন আমি আপনার ভুলের কোনো সাজা দিচ্ছি না। অসহ্য কর একটা মানুষ। হাত ছাড়ুন।

অর্শি তেজ দেখিয়ে আয়াদের থেকে নিজের হাত সরিয়ে নিলো। আয়াদের বন্ধুরা আয়াদের দিকে নিস্তব্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কিছু বলছে না কেউ। আয়াদ সবাইকে অবাক করে দিয়ে বাইক থেকে নেমে অর্শির………………………

#চলবে…………………….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে