আমার ভীনদেশী এক তারা পর্ব-১৩

0
694

#আমার_ভীনদেশী_এক_তারা
#পর্ব১৩
#Raiha_Zubair_Ripte

এনা একটা ঘোরের মধ্যে চলে গেছে। তার বিশ্বাস হচ্ছে না পিটার মুসলিম হয়েছে। এটা কি আদৌও সম্ভব? না কেউ তো কারো ধর্ম ত্যাগ করতে পারে না। নিশ্চয়ই পিটার মজা করছে। কই হেফজিবা তো পারলো না নিজের ধর্ম থেকে সরে আসতে। এনা নিজেকে ধাতস্থ করে বলে,,

” আপনি আমার সাথে মজা করছেন পিটার?

” হঠাৎ এমন টা মনে হলো কেনো?

” মনে কেনোই বা হবে না। নিশ্চয়ই আপনি আমার সাথে মশকরা করছেন।

পিটার এবার এনার হাত ধরে বলে,,

” আমি না তোমার সাথে মশকরা করছি আর না ফান আমি সত্যি মুসলমান হয়েছি।

” কিন্তু কেনো?

” তোমাকে পাবার জন্য।

” আমাকে পাবার জন্য মানে? ছয় বছর আগেই তো আপনি সেটা নিজ হাতে বন্ধ করে দিয়েছিলেন।

” সে জন্য এখন নিজ হাতে সেটা শুধরে নিতে চাইছি।

” সব সময় সব কিছু শুধরে নেওয়া যায় না পিটার।

” জানি তো।

” জেনেও তাহলে এসব করছেন কেনো?

” ভালোবাসি তাই।

” পাগলামি করছেন এখন। আপনার মা জানলে কি হবে ভাবতে পারছেন?

” জানলেই বা কি হবে?

” মানে?

” মানে টানে কিছু না। শোনো মেয়ে বিয়ে করবে কবে সেটা বলো। ছয় বছর অনেক দহনে পু”ড়েছি। আর পু”ড়তে পারবো না। এবার তোমার সংস্পর্শে এসে একটু তোমার সান্নিধ্য পেতে চাই।

” দিবো না আমার সান্নিধ্য।

” তাহলে চ”ড়িয়ে গাল লাল করে দিবো। কোথায় আমি মুসলিম হয়েছি সেটা শুনে আবেগে জড়িয়ে ধরে কেঁদে কেটে হয়রান হবে তা না সে আমায় ইগনোর করছে বাহ!

” আমি বলেছি,আপনায় মুসলিম হতে? বলিনি তো তাহলে!

” শোনো মেয়ে এনা “তোমার প্রেমে হয়েছি পাগল
হয়েছি আমি অন্ধ দিশেহারা
ওগো ভিনদেশী,
তোমার প্রেমে হয়েছি কাবু
হলাম আমি সর্বহারা…. তবুও যদি তোমার মন না গলে তাহলে হে আল্লাহ আমায় উঠিয়ে নাও এ পৃথিবীতে থেকে কি লাভ।

এনা ভ্রু কুঁচকায়। সত্যি পিটার মুসলিম হয়েছে। আল্লাহ তাহলে এ ছেলে তো নির্ঘাত বাড়ি ছাড়া হবে। এর মা যে দ”জ্জাল বাপ্রে।

” এই আপনি সত্যি সত্যি মুসলিম হয়েছেন।

পিটারের এবার ভীষণ রাগ হলো দাঁত চেপে বলে উঠে,,

” তোমায় গালে ঠাটিয়ে একটা চ”ড় দিয়ে প্রমাণ করি?

” আরে ধূর সত্যি কথা বলেন।

” হ্যাঁ হয়েছি।

” মুসলমানি করিয়েছেন।

পিটার এবার পারছে না শুধু গর্ত খুঁড়ে গর্তে লুকাতে। আশ্চর্য মুসলিম যেহেতু হয়েছি তাহলে নিশ্চয়ই ওটাও করেছে। এনা পিটারকে কিছু বলতে না দেখে নিজেই বলে উঠে,,

” জানতাম আপনি করেন নি ওটা। এতোক্ষণ ধরে শুধু শুধু মিথ্যা বলছে। আপনি জানেন মুসলমানি না করলে মুসলিম হওয়া যায় না?

পিটার এনার দিকে এগিয়ে বলে,,

” খুলে দেখাই?

এনা পিটারের কথার মানে বুঝলো না আবাক হয়ে বললো,,

” মানে?

” মানে বলছি খুলে দেখাই হয়েছি কি হই নি?

” কি খুলে দেখবেন।

পিটার দাঁতে দাঁত চেপে বলে,,

” তোমার মাথা বেয়া”দব। বাসর রাতে দেইখো করেছি কি করি নি মুসলামানি।

” ওহ তার মানে হয়েছেন। কিন্তু কবে হলেন?

” বছর দুয়েক আগে।

এবার এনার অজ্ঞান হবার যো। এই ছেলে দু বছর আগে মুসলিম হয়েছে! এনা পড়ে যেতে নিয়েও নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,,

” আপনার মাথা ঠিক আছে? দু বছর আগে মুসলিম কিভাবে হলেন।

” চলো তাহলে সেখানে যাই যেখানে বছর দুয়েক আগে মুসলিম হয়েছিলাম।

কথাটা বলে এনা আর অঞ্জেলেকা কে নিয়ে গাড়িতে উঠে বসলো পিটার। এনা বারবার পিটারের দিকে তাকাচ্ছে। আজকে তার সাথে এসব কি হচ্ছে। ভাগ্য কি তাহলে তার ভালোবাসাকে তার কাছে ফিরিয়ে দিচ্ছে? কথাগুলো ভাবতেই গাড়িটা এসে আল রাশিদ নামের মসজিদ টার সামনে এসে থামলো।

১৯৩৮ সালে আলবার্টার রাজধানী এডমন্টনে প্রথম মসজিদ ‘আল রাশিদ’ স্থাপিত হয়

১৯৫২ সালে মনট্রিয়েলের ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয় তাদের পাঠ্যক্রমে ইসলামিক স্টাডিজ অন্তর্ভুক্ত করলে অনেক মুসলমান শিক্ষার্থী কানাডায় আসে। ১০ বছর পর টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ও একই বিষয় পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করলে সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পায়। ফলে ক্রমান্বয়ে মুসলিম শিক্ষার্থী, দক্ষ শ্রমিক ও ব্যবসায়ীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। ১৯৬০ সালের পর থেকে মুসলমান অভিবাসীদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। ১৯৮১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, কানাডায় মুসলমানের সংখ্যা দাঁড়ায় ৯৮ হাজার ৮৭০ জন। ১৯৯১ সালে সে সংখ্যা বেড়ে হয় ২ লাখ ৫৩ হাজার। এর এক দশক পর ২০০১ সালে তা বেড়ে হয় দ্বিগুণের বেশি।

কানাডায় মুসলমানদের আগমন শতাধিক বছর আগে। ১৮৭১ সালের কানাডিয়ান আদমশুমারিতে প্রথম মুসলমানদের নাম অন্তর্ভুক্ত হয়। ওই শুমারিতে মাত্র ১৩ জন মুসলমানের উল্লেখ পাওয়া যায়। জানা যায়, কানাডিয়ান প্যাসিফিক রেলওয়ে স্থাপনের সময় অনেক মুসলমান দেশটিতে আগমন করে।

পিটার গাড়ি থেকে বের হয়ে অঞ্জেলেকা কে কোলে তুলে নেয়। হাতের ইশারায় এনাকেও গাড়ি থেকে বের হতে বলে। এনা গাড়ি থেকে বের হলে পিটার এনার হাত ধরে মসজিদে প্রবেশ করে। মসজিদে থাকা ইমাম সাহেবের কাছে গিয়ে সালাম জানিয়ে কুশল বিনিময় করে।

ইমাম সাহেব সালামের জাবাব নিয়ে বলে,,

” আরে শান যে কেমন আছো?

” আলহামদুলিল্লাহ ভালো আপনি?

” আমিও ভালো। সাথে থাকা এনাকে উদ্দেশ্য করে বলে,, এই মেয়ে কে?

” এই হচ্ছে সেই মেয়ে যার জন্য মুসলিম হয়েছি।

” বাহ! মা তুমি খুব সৌভাগ্যবতী। তোমার জন্য শান খ্রিস্টান থেকে মুসলিম হয়েছে। তোমাদের প্রমের বিষয়ে সব খুলে বলেছিলো শান আমায়। সব শুনে বলেছিলাম তাকে মুসমান হতে। কারন কেউ ভিন্ন ধর্ম থেকে মুসলিম হতে পারে বাট মুসলিম থেকে অন্য কোনো ধর্মে যেতে পারে না কেউ। অন্য ধর্মের মানুষ শুধু মুসলিম হলেই চলবে না তাকে ইসলামের দিনের পথেও চলতে হবে। আলহামদুলিল্লাহ শান দু বছর ধরে সব মেনে চলছে।

” হুজুর আমি এনাকে এই মূহুর্তে বিয়ে করতে চাই। আমি হালাল একটা সম্পর্ক স্থাপন করতে চাই।

কথাটা শুনে এনা কেঁপে উঠে।

” বেশ তো করে ফেলো বিয়ে সমস্যা কোথায়।

” আপনার দোয়া নিতে এসেছি।

” আমার দোয়া সবসময় তোমার সাথে আছে সুখী হও তোমরা।

আরো কিছু টুকটাক কথা বলে পিটার এনা আর অঞ্জেলেকা কে নিয়ে চলে আসে কোর্ট ম্যারেজ করতে। কোর্ট ম্যারেজের অফিসের সামনে বসে আছে এনা আর পিটার। পিটারেরর দিকে চেয়ে বলে,,

” এটা কি ঠিক হচ্ছে পিটার?

” নট পিটার কল মি শান। আর বেঠিকই বা কি করছি?

” এই যে বিয়ে করার জন্য আসলেন।

পিটার এনার গালে দু হাত দিয়ে উঁচু করে বলে,,

” ভালেবাসো আমায় এনা?

” হঠাৎ এ কথা?

” আহা বলোই না ভালোবাসো আমায়?

” ভালো যদি নাই বাসতাম তাহলে এই অব্দি চলে আসতাম?

” তাহলে লক্ষীটি আর কোনো কথা নয়। যা হচ্ছে হতে দাও। সেবার দেওয়া প্রতিশ্রুতি রাখতে পারি নি কিন্তু এবার যতোদিন বেঁচে আছি ততোদিন তোমার পাশে থাকবো। কোনো পরিস্থিতিতে তোমার হাত এই ফয়সাল আহমেদ শান ছাড়বে না। ভরসা করে দেখো এবার ঠকবে না বিলিভ মি।

#চলবে?

( ভুলত্রুটি ধরিয়ে দিবেন। গল্প কেমন লাগছে কমেন্ট করে জানাবেন। হ্যাপি রিডিং)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে