আমার বিষাদীনি পর্ব-১৪+১৫

0
394

#আমার_বিষাদীনি
#উম্মে_হাফসা
#পর্ব_১৪

আজকে সবাই বাসায় চলে যাবো। রাদিফ ভাই এর মামারা জোরাজোরি করছে আজকে থাকার জন্য। আব্বু আর মেজো চাচ্চু কালকে চলে গেছে। সকালে উঠে ব্রেকফাস্ট করে নিলাম। সোহা আর সাইমা মন খারাপ করে আছে। আমরা চলে যাচ্ছি যে তারাও চলে যাবে। সিনথিয়া আপু বললো উনিও নাকি আমাদের সাথে আমাদের বাসায় যাবে। সিনথিয়া আপুর আমাদের বাসায় যাওয়ার কথা শুনে রাদিফ ভাই ভ্রু কুচকে বললো,,

“কিরে হঠাৎ আমাদের বাসায় যাওয়ার মতলব তোর?? ঐখানেও কি কোনো পার্টি জোগাড় করেছিস নাকি?? ” বলে রাদিফ ভাই কুটিল হাসি হাসলো।

আর সিনথিয়া আপুও নির্লজ্জের মতো বললো,,

“তোদের সবাই কে মিস করবো বিশেষ করে তোকে। তাই তোদের সাথে যাচ্ছি কয়েকদিনের জন্য”।

সবার থেকে বিদায় নিয়ে গাড়িতে উঠে পড়লাম। আসার সময় যেভাবে বড় রা এক গাড়িতে ছোট রা আরেক গাড়িতে আসছে সেইভাবেই যাচ্ছি আমরা। আমাদের গাড়ি রাদিফ ভাই ড্রাইভ করবে আর রাদিফ ভাইয়ের পাশের সিটে সিনথিয়া আপু বোসছে ওনার নাকি পেছনে দমবন্ধ লাগে। আমি কিছু বলছিনা নির্বিকার ভাবে ওনার এই নাটক দেখে যাচ্ছি।

এদিকে ড্রাইভিং করার পাশাপাশি রাদিফ শুধু লুকিং গ্লাস এ তুবার দিকে তাকাচ্ছে। দেখতে পাচ্ছে তুবা জানালার বাইরে তাকিয়ে আছে। কেমন যেন উদাস দৃষ্টিতে সব দেখছে। ছোট ছোট চুলগুলো কপালে এসে পড়েছে। এরপরও তুবার যেন হেলদোল নেই। তুবা কি রাগ করেছে?? নিশ্চয়ই রাগ করেছে আমার সাথে।যেই আমি তুবার মনে নিজের জন্য পজেটিব চিন্তা তৈরি করতে যায় ওমনি একটা না একটা গড়মিল হয়েই যায়।
এগুলোর জন্য তুবা নিশ্চয়ই ভাববে আমাকে নিজে অন্য ছেলের সাথে সহ্য করতে পারে না ঠিকই নিজে অন্য মেয়ে কে নিজের পাশের সিটে বসার অনুমতি দেয়। উপ!! এই সিনথিয়া মেয়েটা আমার বউ কে সবসময় ভুল বুঝাতে যায়। তোকে তো আমি দেখে নেবো।

____________________

বাড়িতে এসে যে যার রুমে চলে গেছে ফ্রেস হতে। আমিও আমার রুমে ফ্রেস হয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লাম। জার্নি করে শরীর পুরা ক্লান্ত লাগছে। মানুষের জীবন টা বড়ই অদ্ভুত! যে রাদিফ ভাই কে কখনো নিজের ভাই ব্যতীত অন্য কিছু ভাবার কথা কল্পনায় ও আনি নাই,, সে রাদিফ ভাই এখন আমার স্বামী। যার সাথে কথা বলার সময় হাটু কাপাকাপি হতো,, তার সাথে এখন আমি নির্দ্বিধায় আমার সব অনুভূতি প্রকাশ করতে পারি। এই ছোট্ট জীবনে কার সাথে কখন কি হয় সৃষ্টিকর্তা ছাড়া কেউ জানেনা। রাদিফ ভাই নিজের মুখে না বললেও আমি জানি উনি আমাকে অসম্ভব ভালোবাসে। এই বোঝার ক্ষমতা অন্তত আমার আছে।
এসব কিছু ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম নিজেও জানিনা।

সিনথিয়া কে থাকতে দেওয়া হলো রাদিফের বাম পাশের রুমটায়। ওর ডান পাশের রুম হচ্ছে তুবার। রাদিফ ফ্রেস হয়ে এসে অফিসে চলে গেলো। ওর চাচ্চু মানে তুবার বাবা রাদিফ কে ফোন করে বলেছে ও যাতে তাড়াতাড়ি অফিসে আসে। কিছু ক্লাইন্ট আসবে তাই। রাদিফ যখন দেশে ভার্সিটি তে পড়তো তখনো মাঝে মাঝে অফিস যেত। ও এগুলো তে যেমন পরিশ্রমী তেমনি দক্ষ। বিদেশে পড়াশোনা শেষ করে দেশে এসে সেই অফিস সামলাতে হবে।তাই ওর বাবা, চাচ্চুরা চায় ও যাতে এখন থেকে অফিসে একটু চোখ কান বুলোয়। তাই ফোন পাওয়া মাত্র ফর্মাল কাপড় পড়েই চলে এসেছে অফিসে।
আসার সময় অবশ্য তুবার রুমে চোখ বুলিয়ে এসেছে।
দেখলো তুবা ঘুমোচ্ছে, তাই আর ডাকলো না।

এই মেয়ে আর ঠিক হোয়ার নয়! এত বড় মেয়ে বুঝি দরজা খোলা রেখে ঘুমোয়! আসার সময় রাদিফ দরজাটা চাপিয়ে দিয়ে আসলো।
বিকাল চারটার দিকে রাদিফ অফিস থেকে ফিরে এলো। ওর বাবা আর চাচ্চুরা একেবারে রাতে আসবে। রাদিফ ফ্রেস হয়ে এসে নিচে আসলো। দেখলো সিনথিয়া সহ বাড়ির ছোটরা সবাই ড্রয়িংরুমে গল্প করছে। তখনি মেজো আম্মু ডাকলো রাদিফ কে খাওয়ার জন্য। রাদিফ টেবিলে আসতে ওর মেজো মা কে জিজ্ঞেস করলো,,

“মেজো আম্মু সবাই খেয়েছে??”

“হ্যাঁ খেয়েছে,,তুবা বাদে। ও যে এসে ঘুমিয়ে পড়লো এখনো ওঠেনি। কতবার করে ডাকলাম মেয়েটা উঠলো না। সেই সকালে কি খেয়েছে না খেয়েছে”

“আচ্ছা মেজো মা, তুমি তাহলে খাবার বাড় আমি তুবা কে ডেকে নিয়ে আসছি” বলে রাদিফ সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে তুবার রুমে গেলো।

তুবার রুমে যেতে রাদিফ দেখে ও এখনো ঘুমাচ্ছে। রাদিফ আস্তে করে যেয়ে তুবার পাশে বসে। আস্তে আস্তে ওর মাথায় হাত বুলাচ্ছে রাদিফ। আর মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে ওর অর্ধাঙ্গিনীর দিকে। ওর চোখের ঘন পাপড়ি, কপালে আচড়ে পড়া ছোট ছোট চুলগুলো, গোলাপি ঠোঁট সবমিলিয়ে যেন ওর প্রেয়সী সবার থেকে আলাদা।
রাদিফ আস্তে করে ডাকলো,,

“তাহিয়া, উঠো না। খাবার খেতে চলো”

তুবা ঘুম চোখে বললো,,

“তোমরা সবাই খেয়ে নাও। আমি পরে খাবো” বলে আবারো ঘুমিয়ে পড়লো।

রাদিফ আস্তে করে বললো,,

“এই বউ, উঠো না। তোমার সাথে খাবো তো। ক্ষিদে পেয়েছে আমার” বলে ওর কপালে চুমু দিলো।

“আহ রাদিফ ভাই আপনি বাস্তবে ও আমাকে জালাচ্ছেন,, এখন স্বপ্নেও জালাচ্ছেন” ঘুমকাতর স্বরে তুবা বললো।

রাদিফ এইবার তুবার কানের কাছে গিয়ে ফিসফিসিয়ে বললো,,

“তুমি যদি এখন না উঠো জান তাহলে কিন্তু আমি এখন তোমাকে অনবরত চুমু খাবো যতক্ষণ না তুমি উঠবা”

এ কথা শুনে তুবার ঘুম যে কোথায় হারিয়ে গেলো। ও এক লাফ দিয়ে উঠে বলে,,

“আপনি এখানে!! এখানে কি করছেন আপনি!?”

“তো, আমার বউয়ের রুমে আমি থাকবো না তো কে থাকবে। এতে এত অবাক হওয়ার কি আছে?? খেতে ডাকতে এসেছি। আজকে নাকি দুপুরে লাঞ্চও করিস নি??”

“আমি লাঞ্চ করি বা না করি তাতে আপনার কি?? আপনি আপনার সিনথিয়া বেবির কাছে যান। ওকে আপনার পাশে বসে খাওয়ান” অভিমানের স্বরে আমি বললাম।
বলে আমি মাথা উঠাতে দেখলাম রাদিফ ভাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে। রাদিফ ভাইয়ের তাকানো চোখ দেখে আমি তাড়াতাড়ি ওড়না পড়ে নিলাম।

রাদিফ ভাই বাকা হেসে বললো,,

” ইউ আর লুকিং সো হ*ট জান। আর সিনথিয়া কে কেন পাশে বসে খাওয়াবো,,ওতো আমার বোন আর আপনি তো মিসেস রাদিফ “।

” ছিহ! কি নির্লজ্জের মতো তাকিয়ে আছেন। বিদেশেও নিশ্চয়ই মেয়েদের দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকেন!!?” বলে সন্দিহান দৃষ্টিতে রাদিফ ভাই এর দিকে চাইলাম।

দেখলাম রাদিফ ভাই চোখ ছোট ছোট করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। তারপর বাকা হেসে বললেন,,

“আমি যদি কারো দিকে এইরকম নির্লজ্জের মতো তাকিয়ে থাকি সেটা হলেন একমাত্র আপনি,,মিসেস রাদিফ”।

” হ্যাঁ জানিতো এখন এইসব ভুলভাল আমাকে বোঝাচ্ছেন আপনার সিনথিয়া জানুর ব্যাপার টা এড়াতে”

রাদিফ ভাই বিস্ময়কর চাহনি তে আমার দিকে চেয়ে বললেন,,

“সিনথিয়া আবার আমার জানু হলো কখন!!??”

আমি বললাম, “যখন থেকে সিনথিয়া আপনার পাশের সিটে বসা শুরু করলো তখন থেকে”।

” তোরা মেয়েরা পারিস ও বটে!! আচ্ছা দশ মিনিট সময় দিলাম তাড়াতাড়ি ফ্রেস হয়ে নিচে আয়। আমিও এখনো খাই নি। আমি টেবিলে অপেক্ষা করছি” বলে রাদিফ ভাই চলে যেতে লাগলেন

আমি যেই বলতে যাবো,, আমি খাবো না ওমনি রাদিফ ভাই টুপ করে গালে একটা চুমু দিয়ে বললেন,,

“বল আর কি বলবি। যত ওয়ার্ড বলবি ততটা চুমু খাবি”।

___________________

নিচে এসে দেখলাম সাবিহা রা সবাই ড্রয়িংরুমে গল্প করছে আর রাদিফ ভাই ডাইনিং এ বসে মোবাইল চাপছে। আমি যেতেই মেজো আম্মু আমাকে ডাকলো খাবার খাওয়ার জন্য। টেবিলে গিয়ে বসতে মেজো আম্মু বললো,,

” নে আমি এবার গেলাম। রাদিফ তোকে তোর বউয়ে বেড়ে এবার খাইয়ে দেবে। বউ থাকতে নিজের কাজে বউকে ডাকবি মা দের কেন ডাকবি। বউদের কে ডাকলে দুজনের ভিতর ভালোবাসা বাড়ে। আমি গেলাম।”

“মেজো মা তুমি আর ভালো মানুষ পেলে না। ওকে খাইয়ে দিতে লাগে দশজন ও আবার আমাকে বেড়ে খাইয়ে দেবে। এরকম কপাল তোমাদের এই নিষ্পাপ ছেলেটার হয় নি” বলে রাদিফ ভাই হতাশার নিশ্বাস ফেললেন।

মেজো মা ও মুচকি হেসে চলে গেলেন। এদিকে আমি চোখ গরম করে তাকিয়ে আছি ওনার দিকে। আগুনে ঘি ডালার মতো রাদিফ ভাই বললেন,,

“আসো বউ তোমাকে খাইয়ে দি” বলে একটা শয়তানি হাসি দিলেন।

এদিকে সিনথিয়া তো এইসব দেখে জ্বলছে শুধু। ও মনে মনে বললো,,

“আজ এইখানে আমার থাকার কথা ছিলো। ছোট থেকে যাকে ভালোবেসে আসছি অন্য কারো সাথে তাকে সহ্য করতে পারছিনা। এই তুবা মেয়েটা আমার সব শেষ করে দিলো। ওর জন্য আমি আমার রাদিফ কে হারিয়ে ফেলেছি। ও না থাকলে রাদিফ এইরকম ভাবে আমাকে ভালোবাস তো”।

আড্ডার মাঝখানে সাবা আপু বললো,,

” আহ তুবা মনিটার জন্য আমার খুব মায়া হয়। যাকে সে যমের মতো ভয় পায় তার সাথে পুরা জীবন কাটাতে হবে। মেয়েটা তো দুইদিনেই পাগল হয়ে যাবে” বলে আফসোস করে।

ওর কথা শুনে সাবিহা তো হাসতে হাসতে শেষ। ও মনে মনে বললো,,

“সাবা আপু তোমার জন্যই আমার মায়া হয়। তুমি এত নিষ্পাপ কেন!! তুমি তো জানো না ওরা কিভাবে আমাদের নাকে ডগা দিয়ে কিভাবে চুটিয়ে প্রেম করছে”।

সন্ধ্যা বেলায় সবাই বসে ড্রয়িংরুমে বসে গল্প করছে। ওদিকে কিচেনে সন্ধ্যার স্ন্যাকস তৈরি হচ্ছে। বাড়ির পুরুষরাও সবাই অফিস থেকে ফিরেছে। হঠাৎ জেঠু মনি বললো,,

” আজকে একটা মজার কান্ড ঘটেছে। তুবার কলেজের ইংরেজি টিচার কি যেন নাম,, সায়ান স্যার উনি আমার কাছে ফোন দিয়েছেন ওনার বড় ভাইয়ের জন্য আমাদের তুবা কে বউ হিসেবে ওনারা চায়”

নিজের বাবার মুখে নিজের বউয়ের জন্য বিয়ের সমন্ধের কথা শুনে রাদিফ ফোন স্ক্রল করা বাদ দিয়ে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। এই মুহূর্তে ওকে দেখে মনে হচ্ছে “পৃথিবীর সবচেয়ে বিবাহিত অসহায় পুরুষ হচ্ছে ও নিজেই”।

[নাইস, নেক্সট বাদ দিয়ে গঠনমূলক মন্তব্য করুন ]

চলবে……..

#আমার_বিষাদীনি
#উম্মে_হাফসা
#পর্ব_১৫

ড্রয়িংরুমে সবাই তো অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। আর আমি কাচুমাচু হয়ে চারদিকে তাকাচ্ছি। যেন আমি কথাটা শুনতে পাই নি। রাদিফ ভাই এর দিকে তাকিয়ে দেখলাম উনি এখনো শূন্যদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। নীরবতা ভেঙে জেঠুমনি রাদিফ ভাইকে পিঞ্চ মেরে বললেন,,

“কি আব্বা, আপনার স্ত্রীর বিয়ে দেবেন তো?!”

জেঠুমনির কথা শুনে ড্রয়িংরুমে হাসির রোল পড়ে গেলো। মেজো চাচ্চু জেঠুমনি কে জিজ্ঞেস করলো,,

“আচ্ছা ভাইজান আপনি এরপর তুবার স্যার কে কি বলেছেন!!?”

জেঠুমনি বললো, “আমি আর কি বলবো। বললাম আসলে স্যার দুঃখিত আমার পুত্রবধূকে এখনো বিয়ে দেবো নাহ। আর তুবা মনির স্যার ও আশা করি শকড হয়েছে”।

জেঠুমনির কথা শুনে আরেকদফা হাসির রোল পড়ে গেলো। একমাত্র আমিই হাসতে পারতেছি না। উলটো চোরের মতো বসে আছি। যেন কোনো কিছু চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়েছি। কিন্তু ব্যাপারটা যদি অন্য কারো ক্ষেত্রে ঘটতো তাহলে নিশ্চিত এতক্ষণে আমি গড়াগড়ি দিয়ে হাসতাম। কিন্তু এখন বিষয় টা ভিন্ন।

আমি কোনো রকমে ঐখান থেকে উঠে চা এককাপ নিয়ে উপরে চলে আসলাম। এসে টেবিলে বসে পড়লাম। এই কয়েকদিন বিয়ের চক্করে পড়ালেখা সব চান্দে উঠছে।
কলেজ খুললে সামনের মাস থেকে ফাইনাল এক্সাম। কেমিস্ট্রি বইটা নিয়ে আগের পড়াগুলো রিভিশন দিচ্ছি। কিছুক্ষণ পড়ার পর দেখলাম রিজবী আসলো রুমে।
বললাম,,

” কিরে কি খবর নিয়ে আসলি??”

“আমরা সবাই বাইরে হাটতে যাচ্ছি। তুমি যাবে??”

আমি বললাম, “আমরা বলতে কে? কে?” বলে একটু অনুসন্ধান চোখে রিজবীর দিকে তাকালাম।

রিজবী বললো, “আমি, রাদিফ ভাই, সিনথিয়া আপু, সাবা আপু আর তোমার জান্স মানে সাবিহা ও যাচ্ছে। সিনথিয়া আপু বললো ওনার নাকি আসছে থেকে বন্দী বন্দী লাগছে,, তাই রাদিফ ভাই কে বললো ওনাকে নিয়ে একটু বাইরে থেকে ঘুরিয়ে নিয়ে আসতে। কিন্তু পরে সাবা আপু বললো যে আমরাও যাবো,, রাদিফ ভাই প্রথমে রাজি হয় নি কিন্তু পরে বড় আম্মুরা রাজি করালো। বললো সবাই কে নিয়ে ঘুরে আসতে।”

সিনথিয়া আপুর জন্য সবাই কে নিয়ে রাদিফ ভাই বের হচ্ছে শুনে রাগে মাথা ফেটে পড়লো। যদিও সবকিছু ডিটেইলস এ জানতে চাইছিলাম তবুও রাগে রিজবী কে বললাম,,

“তোকে এত কিছু বলতে বলছি। আমি যাবো নাহ,,আমার পড়া আছে। যা তোর রাদিফ ভাইরে গিয়ে বল সবাই কে নিয়ে ঘুরে আসতে। তোদের তো আবার বন্দী বন্দী লাগছে”।

যদিও আমি এমনিতেই যেতাম না কিন্তু সিনথিয়া আপুর কথা শুনে রাগ টা মাথায় চাপলো। আমি আবার একবার পড়ার মধ্যে ডুবে গেলে পুরাটা শেষ করা অব্দি উঠতে মন চায় নাহ।
যাক উনি,, ওনার সিনথিয়া জান কে নিয়ে ঘুরে আসুক।
আমার কাছে আসবে না,, তখন বুঝিয়ে দেবো এই তুবা কি জিনিস!!

_______________________

এদিকে রাদিফ রা সবাই নিচে অপেক্ষা করছে তুবার জন্য। কিন্তু রিজবী এসে জানালো তুবা নাকি যাবে না। ওর নাকি পড়া আছে। রাদিফ কিন্তু ঠিকই জানে তুবা না গেলেও মনে মনে কিন্তু রাগ ফুসে আছে।
তাই রাদিফ ওদের কে বললো,,

” তোরা বাইরে গিয়ে অপেক্ষা কর আমি আসছি”

সিনথিয়া ঠিকই বুঝেছে রাদিফ তুবার কাছে যাচ্ছে,, তাই ও সবে বলতে যাচ্ছিলো,,

তুবা যখন যাবে না তখন,,,

কিন্তু রাদিফ লাল চোখ দেখে আর কিছু বলার সাহস পায় নি। রাদিফ উপরে গিয়ে তুবার রুমে গেলো। দেখলো তুবা পড়ছে। রাদিফ গিয়ে ওর সামনের চেয়ারে বসলো। তুবা এক পলক ওর দিকে তাকিয়ে আবার পড়তে রাগলো।
রাদিফ ওর হাতের উপর হাত রেখে বললো,,

“রাগ করেছো বউ?? কি করতাম বলো সিনথিয়া সবার সামনে ঘুরতে যাওয়ার কথা বললো। আম্মুরা সবাই তাই বললো ঘুরিয়ে নিয়ে আসতে সবাই কে। ও তো এখন আমাদের বাড়ির গেস্ট। ওকে কিছু বলতে পারছিনা তাই।”

আমার হাত টা ছাড়িয়ে নিয়ে বললাম,,

“এখানে কেন এসেছেন?? আপনি আপনার সিনথিয়া জানুকে নিয়ে ঘুরতে যান। আমি বুঝিনা যেন, সিনথিয়া কে একা নিয়ে তো যেতে পারছে না তাই সবাই কে সাথে করে নিয়ে যাচ্ছে”।

” আহ জানু। উল্টো টা কেন বুঝছো। আমার বউ থাকতে সিনথিয়া কেন আমার জান হতে যাবে। ও হচ্ছে আমার বোন,, কতবার বলবো। আচ্ছা রাগ করে থেকো না বউ। আমার মতো এইরকম অবলা স্বামীর সাথে রাগ করলে জাতি মেনে নেবে না কিন্তু।
আচ্ছা বলো তোমার জন্য কি আসতাম??”

“আপনি আর অবলা!! কিছু নিয়ে আসতে হবে না।সবকিছু আপনার সিনথিয়া জানু আই মিন বোননন কে নিয়ে দিয়েন”।

” উপ তুইও না। নিচে সবাই ওয়েট করছে। আর রাগ করে থাকিয়েন না। এসে নাহয় আদর দিয়ে রাগ ভাঙাবো। এখন হাতে সময় নাই তাই শুধু একটাই চুমু দিয়ে গেলাম” বলে কপালে একটা চুমু দিয়ে চলে গেলো।

সবাই মিলে হাটতেছে। সিনথিয়া তো শুধু রাদিফ এর পাশ ঘেঁষে হাটছে। ওর গায়ে গা লাগিয়ে হাটার চেষ্টা করছে। রাদিফ একটু দাঁড়িয়ে বললো,,

“এই সিনথিয়া এই রকম গায়ের উপর উঠে যাচ্ছিস কেন?? মেয়ে মানুষ হয়ে মিনিমাম লজ্জা টুকুও নেই তোর কাছে”
আশেপাশের সবাই তাকিয়ে আছে ওদের দিকে। সিনথিয়া দারুণ লজ্জা পেয়েছে। এরপর সবাই মিলে বললো আইসক্রিম খাবে। সবাই গেলো আইসক্রিমের স্টলের দিকে। যে যার ফ্লেভার এর আইসক্রিম নিয়ে নিলো।

রাদিফ আইসক্রিম কগায় না কিন্তু তুবার জন্য চকলেট ফ্লেভার আইসক্রিম নিয়ে নিলো। এরপর রাদিফ এর চোখ রাস্তার ওপাশে একটা ফুল বিক্রেতার দিকে আটকে গেলো। রাদিফ ওদের সবাই কে বললো,,

“তোরা এখানে থাক,, আমি একটু ওদিকে যাচ্ছি” বলে রাস্তার ওপাশে চলে গেলো। ওপাশে গিয়ে রাদিফ তুবার জন্য একটা বেলি ফুলের মালা নিয়ে নিলো।

________________

বাড়িতে এসে রাদিফ ফ্রেস হতে নিজের রুমে গেলো। তুবার রুমে চোখ বুলিয়ে দেখলো ও এখনো পড়ার টেবিলে বসে আছে। ছোট বেলা থেকেই তুবা ভালো স্টুডেন্ট। তাই পড়াশোনার জন্য রাদিফ কে কখনোই তুবাকে শাসন করতে হয় নি।
এদিকে আসার পর থেকে সাবিহার আম্মু ওকে বকাঝকা করছে। তুবা বসে বসে পড়ছে আর এই মেয়ের কোনো চিন্তাই নেই। ঘুরে বেড়াচ্ছে। এসব বলে মেজো আম্মু ওকে বকাঝকা করছে। এমন না সাবিহা একেবারে খারাপ স্টুডেন্ট। ও একটু মোটামুটি ধরনের।

রাদিফ ফ্রেস হয়ে এসে ওর ল্যাপটপ নিয়ে বসে পড়লো। ও ওর ভার্সিটির প্রজেক্ট গুলো কমপ্লিট করছে।
ডিনার টেবিলে জেঠুমনি বললো কালকে ছোট ফুফির বাসায় সবার দাওয়াত। এইমাত্র আদরে ভাইপো আসার কারণে সবাইকে নিয়ে যেতে বলেছে।
আমি আর সাবিহা তো খুব খুশি। কতদিন পর ছোট ফুফির বাসায় যাবো। আবার সব কাজিন রা একসাথ হবো। শুনলাম বড় ফুফিরা ও আসবে। তারমানে একটা ছোটখাটো গেট টুগেদার হয়ে যাবে।

রাদিফ ভাইয়ের সাথে এখনো কথা বলিনি। আমি রাগ করেছি,, কই আমার রাগ ভাঙাবে তা না করে উল্টো নিজে ভাব ধরে আছে। শুয়ে শুয়ে এগুলো ভাবছিলাম। হঠাৎ ফোন মেসেজ আসলো রাদিফ ভাইয়ের নাম্বার থেকে,,

“তাহিয়া, একটা শাড়ি পড়ে রেডি হয়ে নিচে আয়,,কুইক। আমি নিচে অপেক্ষা করছি। আর যদি না আসিস তাহলে তুই যেই অবস্থায় আছিস সেই অবস্থায় কিন্তু আমি কোলে করে উঠিয়ে নিয়ে আসবো। আর আমি যা বলি তা কিন্তু করি”।

আমি আর কি করবো।কতক্ষণ ভাবনা চিন্তা করে রেডি হচ্ছি। কিন্তু আমি শাড়ি পাবো কই। আলমারি খুজে একটাই পার্পল কালার এর শাড়ি পাইছি।ওটাই পড়ে নিলাম।চুলগুলো কে কোনোরকম হাত খোপা করে নিলাম। নিচে এসে দেখি রাদিফ ভাই সত্যি সত্যি বাইক নিয়ে অপেক্ষা করছে

বাইরে কি স্নিগ্ধ বাতাস। আহ!আকাশে চাঁদের আলো। আর তার সাথে রাদিফ ভাইয়ের কাছ থেকে কি দারুণ একটা পারফিউম এর স্মেল আসছে। বাইক থামিয়ে উনি বললেন নাম। নেমে দেখলাম নদীর পাড়ে নিয়ে আসছে। আর ওখানে একটা ছোট্ট টেবিলে ক্যান্ডেল সাজিয়েছে। তার সাথে একটা কেক। উপরে লেখা ” সরি বউ”।

আমি তো এসব দেখে অবাক। সবচেয়ে বেশি মুগ্ধ হলাম জোনাকি দেখে। রাদিফ ভাই পেছেন থেকে জড়িয়ে ধরে খোপার মধ্যে একটা বেলি ফুলের মালা লাগিয়ে দিলেন। কানের কাছে ফিসফিস করে বললেন,,

“এই সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ মায়াবতী টা কে আমি অসীম ভালোবাসি”।

[গঠনমূলক মন্তব্য করুন ]।

চলবে……

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে