#আমার_বিষাদীনি
#উম্মে_হাফসা
#পর্ব_১২
রাদিফ ভাই টেনে আমাকে ছাদের একপাশে নিয়ে আসলো। রেগে গিয়ে বললো, “তুই ঐ মহিলার সাথে এত বকবক কেন করছিলি?? মহিলা যখন তোকে সবকিছু জিজ্ঞেস করছে তুই কিছু বুঝিস নি কেন জিজ্ঞেস করছে?? মাথামোটা কোথাকার।
আমি বললাম,, ” আমি কিভাবে জানবো। ওনার কথার উত্তর না দিলে তো বলবে মেয়েটা বেয়াদব। আর আমি ভাবছি এমনিতেই সব জিজ্ঞেস করছে”।
“তাই বলে তুই তোর পুরা জীবন বৃত্তান্ত দিয়ে দিবি।উপ! এই মহিলা গুলোর জন্যই আমার মতো ছেলেরা বিয়ে বাড়িতে নিজের বউয়ের বিয়ের সমন্ধ পায়” বলে রাদিফ ভাই বিরক্তিকর দৃষ্টিতে ভদ্রমহিলার দিকে চাইলেন।
আমি রাদিফ ভাইয়ের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চেয়ে বিড়বিড়িয়ে বললাম,,
“শুধু আমি একটু সাজুগুজু করলেই যত দোষ,, এখন নিজে এইরকম সুদর্শন হয়ে মেয়েদের সামনে ঘুরঘুর করছে”
রাদিফ ভাই বললেন,, “কি হলো?? নিজে নিজে কি বলছিস”??
আমিও বলে ফেললাম,, ” আমি একটু কিছু করলেই আপনার যত আদেশ। এখন যে আপনি একেবারে ফিটফাট হয়ে ঘুরছেন মেয়েরা যে আপনার দিকে তাকাচ্ছে। যত দোষ নন্দ ঘোষ।”
রাদিফ ভাই ভ্রু কুচকে বললেন,,
“কিন্তু যার জন্য এতকিছু তারই তো কোনো খবর নাই। সে তো দিব্যি অন্য ছেলের সঙ্গে বিয়ে বসার জন্য প্রস্তুত। ”
আমি মুচকি হেসে অন্য দিকে চাইলাম। দেখলাম এদিকে লামিসা আসতেছে। এসে রাদিফ ভাই এর পাশ ঘেঁষে বললো,,
“চলেন আমরা কিছু ছবি তুলি। আপনাকে আবার কবে সামনাসামনি পাবো। তাই কিছু মেমোরি ক্রিয়েট করতে চলেন আপনার সাথে কিছু ছবি তুলি” বলে রাদিফ ভাইয়ের একহাত টেনে ধরলো।
আমি রাগি দৃষ্টিতে হাতের দিকে তাকিয়ে আছি। আমার রাগ বুঝতে পেরে রাদিফ ভাই লামিসার হাত টা ঝাটা মেরে ফেলে দিয়ে বললো,,
“আমি এখন ছবি তুলেতে পারবো না লামিসা। একটু ব্যস্ত আছি”।
লামিসা তো আমার দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে চলে গেছে।
রাদিফ তুবাকে বললো,,
” দেখ, দেখে শিখ। ও কোথাকার কে হয়ে আমাকে রাদিফ বলে ডাকে আর আমি তোর হাসবেন্ড হই,,আর তুই আমাকে ডাকিস ভাই!!”
__________________
সব কাজিন রা মিলে একসাথে গ্রুপ ছবি তুলবে। আমি নিচে চলে এসেছি,,ভালো লাগছে না। কিছুক্ষণ আগেই লামিসা এসে আমাকে একগাদা কথা শুনিয়ে গেছে। আমি রাদিফ ভাই এর যোগ্য না,,উনার পেছনে ছ্যাঁচড়ার মতো পড়ে থাকি,,হেনতেন কত কিছু।
ওর কথাগুলো শোনার পর থেকে সবকিছু বিষাক্ত লাগছে। মন চাচ্ছে এখনি বাসায় চলে যাই। নিজের বাড়িতেই শান্তি,,সেখানে অন্তত এই বিষাক্ত কথাগুলা হজম করতে হতো না। চাইলে আমিও লামিসা কে জবাব দিতে পারতাম,,কিন্তু জানি এগুলা নিয়ে পরে রাহা আপুর অশান্তি হবে।
আমাদের কে দেওয়া রুমে এসে আমি ফ্রেস হয়ে একটা জামা পড়ে নিলাম। বারান্দায় গিয়ে দাড়াতেই শীতল বাতাসে মনটা যেন ভরে গেল। রাদিফ ভাইয়ের নানু বাড়ির বাগান থেকে কি দারুণ বেলি ফুলের গন্ধ আসছে। দেখলাম ফোনে ম্যাসেজ পাঠিয়েছে আনাস ভাই ম্যাসেজ পাঠিয়েছে,,
“তুবা, রাতুল তো আমাকে পাগল করে ফেলতেছে তোর সাথে কথা বলার জন্য। তুই নাকি ব্লক করে দিয়েছিস। শা*লা কে আমি কতবার বললাম যে তুই বিবাহিত,, এরপরও আমাকে প্রতিনিয়ত কল করেই যাচ্ছে”।
এরপর আমরা দুজন রাতুল ভাই কে হাসাহাসি করতেছি। যেন আমি ভুলেই গেছি কিছুক্ষণ আগে আমার কি ভীষণ মন খারাপ ছিল।
এদিকে,,
রাদিফ তুবা কে খুজছে চারদিকে চোখ বুলিয়ে কিন্তু দেখতে পাচ্ছে না। সবাই যেরকম ঝেকে আছে কোথাও যেতেও পারছেনা। সিনথিয়া একটা উচিত শিক্ষা দেওয়া দরকার। তাই রাদিফ সেই তখন থেকে সিনথিয়া কে পাত্তাই দিচ্ছে না। ও ডাকলেও যেন রাদিফ শুনতে পারছে না। রাদিফ কয়েকটা ছবি ওদের কাজিন গ্রুপে শেয়ার দিলো যেগুলোতে স্পষ্ট ভাবে লেখা আছে কিভাবে সিনথিয়া বিভিন্ন ছেলেদের সাথে প্রেমের অভিনয় করে কিভাবে ওদের থেকে টাকা,ফ্ল্যাট আদায় করতো।
এখনের জন্য এতটুকুই যথেষ্ট। ওর শাস্তি আরো বাকি আছে। ও বোধহয় ভুলে গেছে আমি রাদিফ কি কি করতে পারি। আমার বউ এর কানে বিষ ঢালা,,তাই না।
__________________
পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি নয়’টা বেজে গেছে। আমার সাথে সাবিহা, সাবা আপু ওরা এখনো ঘুমাচ্ছে। আমার মনে হয় কি সাবা আপু আর ইরহাম ভাই এর মধ্যে কিছু চলছে।
ব্যাপারটা সাবিহা কে বলতে হবে। তারপর দুজন মিলে তদন্ত করবো।ফ্রেস হয়ে এসে সাবিহা আর সাবা আপু ডাকছি ঘুম থেকে উঠার জন্য।
তিনজন মিলে নিচে গিয়ে দেখলাম অলরেডি অনেকেই নাস্তা করে ফেলেছে। আমরা গিয়ে টেবিলে বসতেই নাস্তা করতে এলো রাদিফ ভাই আর মিরাজ ভাই। আমি একনজর রাদিফ ভাই এর দিকে তাকিয়ে আবার চোখ নামিয়ে ফেললাম। রাদিফ ভাইয়ের মেজো মামি সবাই কে নাস্তা দিলো। আমার এখান থেকে আমি একটা পরোটা আর ডিম পোজ নিলাম। বাকি গুলা রেখে দিলাম। রাদিফ ভাই এর মামি বললো,,
“আরে তুবা, তুমি তো দেখছি কিছুই খাচ্ছ না?? একটা পরোটা নিলে।”
আমি বললাম, “মামি আমার খিদে নেই। এইগুলাতেই হবে।”
মিরাজ ভাই বললো, “তুমি কি ডায়েট করছো নাকি?? তোমার এই শরীর নিয়ে যদি ডায়েট করো তাহলে আমাদের কি হবে। কোনো ডায়েট করো না,,ভালো মত খাও”।
আমি একটা শুকনো হাসি দিলাম। মেজো মামি বললো,,
” কি হয়েছে তুবা?? শরীর খারাপ? কালকে অনুষ্ঠানে শেষ পর্যন্ত থাকলেও না?”
আমি বললাম, “না মামি আসলে আমি বেশি রাত জাগতে পারি না। না ঘুমালে আমার শরীর খারাপ করে,,তাই চলে এসেছিলাম”।
মিরাজ ভাই বললো, ” তুবা আরেকটু কিছু খেয়ে নাও। এত কম খেলে কিভাবে থাকবে। কিছু ফ্রুটস খেয়ে নাও তাহলে” বলে আমার দিকে ফ্রুটস গুলো এগিয়ে দিলেন।
আমি বললাম, “না ভাইয়া আর কিছু খাবো নাহ। খিদে নেই।” দেখলাম সিনথিয়া আপু এসে রাদিফ ভাই এর পাশের চেয়ারে বসলো। আর রাদিফ ভাই নির্বিকার ভাবে খাচ্ছে। যেই আমি উঠে পড়বো তখনি রাদিফ ভাই গম্ভীর স্বরে বললো,,
“তাহিয়া আরেকটা পরোটা খেয়ে নে। আর যদি না খাস তাহলে প্রেসার লো হবে”।
যেই আমি কিছু বলতে যাবো অমনি রাদিফ ভাই এর সাথে চোখাচোখি হতে বসে পড়লাম আবার। রাদিফ ভাই দেখলাম তার আগের রুপে ফিরে আসছে। যদি খেতে না বসি তাহলে দেখা গেলো সবার সামনে একটা থাপ্পড় দিয়ে বসবে। মান সম্মানের কথা ভেবে বসে পড়লাম।আর রাদিফ ভাই যেন সিনথিয়া আপু কে দেখেই নি এরকম ভঙ্গিতে খাচ্ছে।
সকালের নাস্তা করে আমরা কয়েকজন মিলে বের হলাম গ্রাম ঘুরতে। আমি, সাবিহা, সাবা আপু, রিজবী, আদিবা, লামিসা আর সিহাব। আদিবা আর সিহাব আমাদের কে সবকিছু দেখাচ্ছে। আমি, সাবিহা আর আদিবা পেছনে হাটছি। এরপর ওরা দুজন আমাদের কে নিয়ে গেলো নদীর ধারে। উপ! কি সুন্দর মনোরম পরিবেশ। লামিসার ন্যাকামি যেন বেড়েই চলেছে। পানি দেখে যেভাবে রিয়েক্ট করছে যেন ও কখনোই পানি দেখেনি।
সাবিহা আমাকে কিছু ছবি তুলে দিচ্ছে। আদিবা আর সিহাব নৌকায় চড়ার কথস বললে ওরা বলে এখন ঘাটে কোথাও নৌকা নেই। কালকে সবাই মিলে আসলে চড়াবে।
সাবার আপু ফোনে রাহা আপু শুধু কল দিচ্ছে। আমরা কোঠায় সেইজন্য। সাবা আপু কল কেটে ভিড়িও কল দিলো রাহা আপু কে। বললো দেখো আমরা নদীর পাড়ে আসছি। উপ রাহা আপু এত সুন্দর তোমার নানুদের গ্রাম। এদিকে দেখো তুবা আর সাবিহা দুজনে সেই কখন থেকে ছবি তুলেই যাচ্ছে,, বলে সাবা পেছনের ক্যামেরা দিলো। রাদিফ তখন রাহার কাছে আসছে তার মেয়েকে তার কাছে দিয়ে যাওয়ার জন্য। এসে দেখলো রাহার ফোনে ভিড়িও কল চলছে। ফোনের স্ক্রিনে ভাসছে তার প্রিয়তমার হাস্যজ্জল মুখ। কানের পাশের চুল গুলো কে গুজে দিয়ে সাবিহা কে ছবি তুলে দিচ্ছে আর হাসছে। একমুহূর্তে রাদিফ এর মনে হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর মেয়েটিকে সে তার বউ হিসেবে পেয়েছে।
___________________
সবাই মিলে এসে গোসল করে নিলাম। কিছুক্ষণ পর আবার কমিউনিটি সেন্টার এ যেতে হবে। আজকে যে বিয়ের দিন। আমরা এসে দেখলাম বাসার প্রায় অর্ধেক সেন্টারে চলে গিয়েছে। আমি একটা মেরুন কালারের গাউন পড়ে নিলাম। তারপর হিজাব পড়ে নিলাম আর উড়না টা সেট করে নিলাম।একটু লিপস্টিক আর কাজল দিলাম।
নিচে এসে দেখলাম আর দুইটা গাড়ি আছে। এগুলা করে ছোট রা যাবে। বড় রা সবাই চলে গেছে। দুইটা গাড়ি ফুল হয়ে গেছে। এখন বাকি আছি আমি, সাবিহা, মিরাজ ভাই আর রাদিফ ভাই। তখন রাদিফ ভাই উনার গাড়ি নিয়ে আসলো। লামিসা যখন দেখলো রাদিফ তার গাড়ি নিয়ে এসেছে তখন ও অন্য গাড়ি থেকে নেমে পড়লো। ও বললো ও নাকি রাদিফ ভাই এর গাড়িতে যাবে। আমাকে বললো,,
“তুবা তুমি ঐ গাড়িতে চলে যাও”।
রাদিফ ভাই বললো,, ” কেন ও কেন ঐ গাড়িতে যাবে। তুবা আমার গাড়িতে যাবে। তুমি কেন ঐ গাড়ি থেকে নেমে পড়লে??”
লামিসা বললো, “আসলে ঐ গাড়িতে বেশি চাপাচাপি হয়ে যাচ্ছে। আমার কাছে ভালো লাগছে না।”
রাদিফ বললো, “তাহলে তুবা কে যেতে বলছো কেন”।
লামিসা প্রথমে রাদিফ ভাই এর সাথে সামনে বসার জন্য একটু ন্যাকামি করলেও পরে মিরাজ ভাই বসেছে।
সেন্টারে গিয়ে নেমে আমরা ভেতরে যেতেই কে যেনো পেছন থেকে আমার নাম ধরে বললো,,
” আরে তুবা তুমি এইখানে!!”
পেছন ঘুরে দেখলাম রাতুল ভাই! আল্লাহ রাতুল ভাই এইখানে কি করে! যেখানে বাঘের ভয়, সেখানে সন্ধ্যা হয়।
[গঠনমূলক মন্তব্য করুন ]।
চলবে……
#আমার_বিষাদীনি
#উম্মে_হাফসা
#পর্ব_১৩
রাতুল ভাই কে দেখে আমি একটু শুকনো হাসি দিলাম।রাতুল ভাই আমার কাছে এসে বললেন, “কোন পক্ষ তুমি তুবা?” আমি বললাম,, মাহাদ ভাই আমার কাজিন হয়। আর এরাও আমার কাজিন। এটা হচ্ছে আমি কাজিন সাবিহা৷ এটা মিরাজ ভাই আর উনি হচ্ছে রাদিফ ভাই। আমি বললাম,,
“রাদিফ ভাই কে নিশ্চয়ই আপনি চেনেন। আনাস ভাই বলেছে না আপনাকে। উনি সেইই রাদিফ।” এরপর রাদিফ ভাই কে বললাম,
“ওনি হচ্ছে রাতুল ভাই। আনাস ভাইয়ের বন্ধু। আনাস ভাই এর সাথে র*ক্ত দিতে হসপিটালে গিয়েছিলাম যে ঐ খানেই পরিচয় হয়েছে”।
রাদিফ ভাই ওনার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো,,
” হাই আমি ইফতিখার আহমেদ রাদিফ। মাহাদের আই মিন বরের ফুফাতো ভাই আর তুবার হাসবেন্ড ”
“আমি রাতুল।কনে আমার মামাতো বোন হয়। পরিচয় হয়ে ভালো লাগলো” বলে রাতুল একটা শুকনো হাসি দিলো।
এরপর রাদিফ ভাই বললো,, “আচ্ছা পরে কথা হবে ওদিকে মনে হয় অপেক্ষা করছে” বলে উনি আমাকে হাত ধরে ভেতরে নিয়ে গেলেন।
একটা সাইডে গিয়ে আমি দিলাম আনাস ভাই কে ফোন। দিয়ে বললাম,,
“হ্যাঁ আনাস ভাই,, আরে তোমার বন্ধু রাতুল দেখি বিয়েতে উপস্থিত। কনে নাকি ওনার মামাতো বোন হয়”।
আনাস ভাই অবাক হয়ে বলে,, ” কি!! ঐখানেও পৌঁছে গেছে। তুই এক কাজ কর ও যতক্ষণ তোর দৃষ্টিসীমার ভিতরে থাকবে তুই রাদিফ এর সাথে থাকবে। ওকে আমি কত বুঝাবো বল। এখন যদি এইসব রাদিফ শুনে ও আমাকে আস্তই রাখবে না। বলবে সব তোর জন্য হইছে”।
আমি হতাশ হয়ে বললাম,,
“নারে ভাই, আমি তোমার এই ছ্যাঁচড়া বন্ধুর জন্য এত কিছু করতে পারবো না। আমি যতদ্রুত পারি বাসায় চলে যাবো। ভাল্লাগেনা এইসব উটকো ঝামেলা” বলে আমি ফোন কেটে দিলাম।
________________
লামিসা যেইভাবে রাদিফ ভাই এর সাথে চিপকে আছে ঐ রাতুল ব্যাটা কিছুতেই ভাববে না যে, রাদিফ ভাই আমার হাসবেন্ড। আমি আর সাবিহা খেয়ে আর দেরি করি নাই,, বড় মাকে বলে দুজনে মেজো চাচ্চুর সাথে বাসায় চলে আসছি। এসে সাবিহা কে রাতুল ভাইয়ের ব্যাপারে সবকিছু বললাম। সব শুনে সাবিহা বললো, “আরে তুই এইসব কথা সেন্টারে থাকতে বলতি ঐ ব্যাটাকে একটা শিক্ষা দিতাম।”
আমি সাবিহা কে বললাম,, “ধুর বোন এইসব আর ভাল্লাগে না। নিজের বাসায়ই সবথেকে শান্তি। কালকে যেইভাবে হোক আমি বাসায় চলে যাবো। যে থাকবে থাকুক। এইখানে থাকলে এক লামিসা দুই সিনথিয়া আপি দুজনের ন্যাকামি সহ্য করতে হবে। ”
সাবিহা বললো,, “হ্যাঁ বাসায় শান্তি। চলে যাবো কালকে যেভাবে হোক।”
এরপর দুজন ফ্রেস হয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। কালকে রাতে দেরি করে ঘুমানোর কারণে অনেক ঘুম পাচ্ছে তাই দুজনে গল্প করতে করতে ঘুমিয়ে পড়লাম।
এদিকে,,,
রাদিফ চারদিকে তুবাকে খুজছে কিন্তু পাচ্ছে না।গেলো কোথায় এই মেয়ে?? রাদিফ ওর মার কাছে গেলো। বললো,,
“মা তুবা কোথায়?? ওকে দেখছি না যে” চারদিকে চোখ বুলালো।
“আরে তুবা তো বাড়িতে চলে গেছে। ও আর সাবিহা দুজন খেয়ে নিয়ে বললো ওরা বাড়িতে যাবে। তাই আমি তোর মেজো চাচ্চু কে বললাম দিয়ে আসতে।”
আমাকে না বলে চলে গেলো।শরীর খারাপ করছে কিনা কে জানে। এরপর মিরাজ এসে ডেকে নিয়ে গেলো ও কে। এখন মাহাদ কে ওর শালিরা মালা পড়াবে কিন্তু এরা নাকি টাকা ডিমান্ড করছে। মিরাজ তো ওদের সাথে পায়ে পা লাগিয়ে ঝগড়া করছে। রাদিফ এক সাইডে দাঁড়িয়ে চুপচাপ ফোন চাপছে। ওর কাছে এগুলা ভালো লাগে না। শুধু শুধু মিরাজ ওকে ডেকে এনেছে।
রাদিফ ফোনে তুবার তুলা ছবি গুলা দেখছে। দেখতে দেখতে ভাবছে,,ইশ এই মেয়েটা এত সুন্দর কেন!! পৃথিবীর সমস্ত সৌন্দর্যে যেন ও ভরপুর। এইবার অস্ট্রেলিয়ার গিয়ে তো আমি আর শান্তি পাবো না। কে কখন আমার এই নিষ্পাপ বউটার দিকে চোখ তুলে তাকায়। উপ! সুন্দর বউ হলে স্বামীদের সবসময় চিন্তায় থাকতে হয়।
হঠাৎ ঐখানে একটা মেয়ে রাদিফ কে ইশারা করে বললো এইসব সুন্দর বেয়াইদের ভাব যত বেশি তাই আমাদের মতো বেয়াইন দের ডিমান্ড ও তত বেশি। রাদিফ শুনেও না শুনার ভান করে ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে। ওর বউ যদি শুনে ও মেয়েদের সাথে কথা বলেছে নির্ঘাত ওর মাথা ফাটিয়ে দিবে।
______________________
বউ নিয়ে বাসায় আসতে আসতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেছে। এদিকে তুবা আর সাবিহা তো নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে। তুবার আম্মু এসে একবার দেখে গেছে। ঘুমাচ্ছে দেখে আর জাগায় নাই। রাদিফ কে নিয়ে ওর মামারা গেছে বাজারে। নতুন বউ কে সবাই দেখতে আসছে। কিছুক্ষণ পর সিনথিয়া বউ কে রুমে নিয়ে যায়। সবাই এখন সন্ধ্যা বেলায় হালকা নাস্তা করছে। তুবা আর সাবিহার খোজ করতে ওর আম্মু জানায় ওরা ঘুমাচ্ছে। আদিবা গিয়ে ওদের ঘুম থেকে তুলে আনে। সন্ধ্যা হয়ে গেছে দেখে তো দুজনেই অবাক।
ফ্রেস হয়ে নিচে এসে দুজনে নাস্তা করতে বসে। রাদিফ তখন মাত্র বাজার থেকে আসছে। নতুন বউয়ের সাথে তার বোন আর একটা খালাতো বোন আসছে। ইতোমধ্যে তাদের সাথে সাবিহা আর তুবার ভাব হয়ে গেছে। রাদিফ এসে একনজর তুবার দিকে তাকিয়ে ড্রয়িংরুমে গিয়ে বসলো। ওখানে গিয়ে ওর নানু আর দাদির সাথে খোশগল্প করতে লাগলো।
নতুন বউয়ের বোন সাইমা আর খালাতো বোন সোহা তুবা আর সাবিহার সাথে গল্প করছে। গল্প করতে করতে ওদের কাজিন দের কথা বলছে। কে কেমন স্বভাবের। রিজবীর কথা বললে সোহা আর সাইমা তো হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে।
এরপর আসলো দ্যা গ্রেট রাদিফ এর কথা। রাদিফ কথা বলতে বলতে রাদিফ সিড়ি দিয়ে উঠার সময় তুবা কে বললো,,
“এই তুবা একটু এইদিকে আয় তো। ফ্রেস হয়ে এসে যেন তোকে রুমে পাই” বলে রাদিফ উপরে চলে গেল।
এদিকে সাবিহা আমার দিকে তাকিয়ে শয়তানি হাসি দিল। কিন্তু আমি জানি রাদিফ ভাই আমাকে ডেকেছেন আজকে আসার সময় ওনাকে বলে আসি নাই যে সেজন্য। আমি উঠতে উঠতে সোহা আর সাইমা কে বললাম,,
“যদি বাঘে খাঁচা থেকে বের হয়ে আসতে পারি তাহলে আবার দেখা হবে” বলে উপরে আসলাম।
সোহা আর সাইমা সাবিহাকে জিজ্ঞেস করলো,,
“তোমাদের রাদিফ ভাই মনে হয় একটু বেশিই স্ট্রিট তাই না??”
সাবিহা ভেসে বললো,, “হ্যাঁ। তবে বউয়ের বেলায় এটা একটু বেশিই ”
সোহা আর সাইমা অবাক হয়ে বললো,, কি বউ!!তারমানে তুবা আর রাদিফ ভাই হাসবেন্ড ওয়াইফ!!
আমি এসে রাদিফ ভাই এর রুমে বসে আছি। ওনার ফোন ওপেন করতেই দেখলাম স্ক্রিনে আমার ছবি। আজকে সকালে নদীর পাড়ে তুললাম যে সেখান থেকে একটা। তারমানে ছবিগুলা সাবা আপু বা সাবিহার থেকে নিয়েছেন উনি।
ওনার ফোনের লক তো আমি জানি না। নাহলে দেখে নিতান কোনো মেয়ের সাথে কথা বলে কিনা। উহু,, নিজের কিছুই আমাকে জানতে দেয় না আর আমার সবকিছুতেই ওনার সমস্যা।
ফ্রেস হয়ে এসে হাত মুখ মুছতে মুছতে আমাকে জিজ্ঞেস করলো,,
“আজকে এত তাড়াতাড়ি চলে এলি যে। আমি তো তোকে আরো কত জায়গায় খুজছি। পরে আম্মু বললো তোরা নাকি চলে এসেছিস” বলে আমার পাশে বসলেন।
আমি বললাম,, “না আসলে শরীর ভালো লাগছিলো না। কালকে রাতে দেরি করে ঘুমানোর ফলে একটু অস্বস্তি লাগছিলো, তাই চলে এলাম” বলে রাতুল ভাইয়ের ব্যাপারটা এড়িয়ে গেলাম।
রাদিফ ভাই তোয়ালটা বিছানায় ফেলে আমাকে বুকে টেনে নিয়ে বললেন,,
“উফ শান্তি!!আজকে পুরা দিনেও আমি আমার বউকে কাছে পেলাম না। এখানে গেলেও রাদিফ ওখানে গেলেও রাদিফ। সবাই শুধু আমাকে ডাকে। কেউ বুঝে না যে ছেলেটা কয়েকদিনের জন্য আসছে,, বউয়ের সাথে একটু সময় কাটাক। বউয়ের চিন্তায় চিন্তায় ছেলে যে শেষ হয়ে যাচ্ছে কেউ বুঝলোই না” বলে রাদিফ ভাই আমাকে আরো দৃঢ়ভাবে জড়িয়ে ধরলেন।
আমি হেসে বললাম,, “আহ আপনার জন্য আমার কে যে মায়া হয়!! আপনার উপর সবাই চরমভাবে অন্যায় করছে” বলেই আমি হেসে দিলাম
রাদিফ ভাই বললো,,
“খুব হাসি পাচ্ছে আমার জন্য। তুই যে কতটা নির্দয়!! এখন ঝটপট একটা চুমু খেয়ে ফেল” বলে রাদিফ ভাই ওনার ঠোঁট এগিয়ে দিলেন
আমি অবাক হয়ে বললাম,,
“এখানে হাসাহাসির সাথে চুমুর কি সম্পর্ক!! আমি হাসাহাসি করছি বলে কি এখন চুমু খেতে হবে নাকি”
“না চুমু খাবি আমার এনার্জির জন্য। আমার প্রতি অন্যায় গুলো করার সহ্য ক্ষমতার জন্য তো এনার্জি প্রয়োজন তাই চুমু খাবি” বলতে বলতে উনি নিজেই আমার ঠোঁটের সাথে ঠোঁট মিলিয়ে দিলেন।
________________
উপ দেখেন কত খানি ঠোঁট কেটে গেছে আমার। আপনাকে নিয়ে আর পারি না। যতদিন ভাই ছিলেন ততদিন সভ্য ছিলেন। আর যখন থেকে ভাইয়া থেকে সাইয়্যা হয়েছেন তখন থেকেই শুরু হলো আপনার অসভ্যতামি। আর আমি কিন্তু বলছি কালকে যেভাবেই হোক আমি বাসায় চলে যাবো। আমার আর ভালো লাগছে না।”
“আমি আপনার কাছে আমৃত্যু এমন অসভ্য থাকতে চাই বউজান”
[ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। গঠনমূলক মন্তব্য করুন ]।
চলবে……