#আমার_বিষাদীনি
#উম্মে_হাফসা
#পর্ব_০৭
এপাশ থেকে লামিসা হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে রাদিফ ফোন টা কেটে দেয়। এমনিতেই আছি আমি আমার বউরে নিয়া টেনশনে,, আসছে আরেক উটকো ঝামেলা। রাদিফ আবার তুবার ফোনে ফোন দেয়। কিন্তু আবারো তুবা কেটে দেয়।
এদিকে রাদিফ ফোন টা কেটে দেওয়া তে লামিসা অনেক অপমানবোধ করছে। কিন্তু আবারো ও রাহা কে বলে,,
“মনি, আমি এইখান থেকে রাদিফের কাছে কল দিচ্ছি। নেটওয়ার্ক সমস্যার কারণে বোধহয় কেটে গেছে”।
এই বলে লামিসা আবারো ফোন দেয় রাদিফ এর কাছে।
রাহা মনে মনে বললো,,
” উফ এই মেয়েটা কে জাস্ট অসহ্য লাগতেছে। দেখেছে ওরা স্বামী স্ত্রী কথা বলতেছে। বেহায়ার মতো ওর থেকে ফোন টা নিয়ে নিয়েছে। রাদিফ সম্পর্কে ওর মামা হয় তারপরও লজ্জা হয় না। আর লুবনা আপুকেও (লামিসার মা) বলি কিভাবে এইগুলাতে মেয়ে কিভাবে যে প্রশ্রয় দেয়।”
রাহা বললো,,
“আচ্ছা কথা বলো তাহলে। আমার নিচে কাজ আছে ঐখানে যাই” এই বলে রাহা নিচে চলে গেল।
রাহা যাওয়ার পর লামিসা আবারো ছাদের অন্য সাইডে চলে যায় ফোন টা নিয়ে। আর আমরা সবাই বসে ওর কান্ড দেখতেছি। দেখলাম লামিসার ফোন ধরেছে রাদিফ ভাই কিন্তু কি কথা হচ্ছে শুনতে পারছি না। আমি সবার সামনে নিজ্রকে স্বাভাবিক দেখালেও মনে মনে রাদিফ ভাই এর উপরে অনেক অভিমান হলো।
এখন যে উনি কথা বলতেছে লামিসার সাথে এটা কিছু না কিন্তু আমাকে আনাস ভাইয়ের বন্ধু সামান্য একটা কমেন্ট করাতে কত গুলো কথা শুনালো।
লামিসা রাদিফ কে বললো,,
“আচ্ছা রাদিফ, আপনি আমাকে ফেসবুকে ঝুলাই রাখছেন কেন। আমি সেই কবে আপনাকে রিকুয়েষ্ট দিছিলাম”।
ওপাশ থেকে রাদিফ মনে মনে বললো,,
” আমার নিজের বউ আমারে এখনো ভাই ডাকে আর এই মেয়ে আমারে রাদিফ ডাকে। কি সাংঘাতিক ব্যাপার। মেয়েটা আমার অবুঝ বউটারে কিছু শেখাইতে পারে না।” তারপর রাদিফ বললো,,
“আচ্ছা আমি দেখবো চেক করে। আর এখন আমি ক্যাম্পাস এ আছি। বায়। ”
__________________
আমাকে সাবিহা কানের কাছে আস্তে করে বললো,,
” বইন, এই মেয়েটা তোর জামাইর সাথে এত কিসের কথা বলতেছে। তাও এত হেসে হেসে।এই মেয়েটা তো তোর থেকে তোর জামাই রে কেড়ে নিবো। একটু নজর রাখিস” এই বলে সাবিহা চোখ টিপলো।
আমি মনে মনে বললাম, ” কই আমার সাথে তো কথা বলার সময় ধমক ছাড়া কথাই বলে নাহ। আর লামিসার সাথে নিশ্চয়ই মিষ্টি মিষ্টি কথা বলতেছে তাই ও হেসে হেসে কথা বলছে। এই ফিকে ন্যা*কামি করে আবার আমাকে কল দিচ্ছে।” আমি সাবিহা কে বললাম,
“সাবু আমাকে এইখান থেকে নিয়ে চল এই মেয়েটার ন্যা*কামি গুলা আমার জাস্ট অসহ্য লাগতেছে “।
সাবিহা বললো ” জানু কোথা থেকে যেন পোড়া পোড়া গন্ধ পাচ্ছি” বলেই দুষ্ট হাসি হাসলো
আমি ওর মাথায় দিলাম এক থাপ্পড়।
ছোট ফুফি আমাদের ডাকার জন্য রিজবী কে পাঠিয়েছে।নিচে গিয়ে দেখলাম সবাই প্যান্ডেলেই খাচ্ছে। আমাকে জেঠু মনি ডাইনিং এ এক প্লেট দিয়ে গেলো খাবার। বললো,,
“তুবা মনি, তুই এখানেই খেয়ে নে। খেয়ে রেস্ট কর গিয়ে। আজকে র*ক্ত দিয়ে আসছো, আজকে একটু রেস্ট কর। ওদের সবাই কে আমি প্যান্ডেলে নিয়ে যাচ্ছি খাওয়ার জন্য” বলেই জেঠু মনি সাবা আপুদের ডেকে নিয়ে গেলো খাওয়ার জন্য।
এদিকে আমি ডাইনিং রুমে বসে খাচ্ছি। জেঠু মনি এখানে আমাকে যে পরিমাণ খাবার দিয়েছে সেগুলো দুইজনে খেতে পারবে। তাই আমি অর্ধেক পরিমাণ খাবার অন্য প্লেটে উঠিয়ে রাখলাম। বড় আম্মু আর মেজো আম্মু বাইরে মেহমানদের দেখভাল করছে। খেতে খেতে দেখলাম আনাস ভাই আমার দিকে এগিয়ে আসতেছে হাতে ফোন নিয়ে। আমার কাছে এসেই ফোনে কাকে যেন বলছে,,
“দেখ তোর বউ কত্তগুলা খাবার নিয়ে বসছে। এরপরও তুই ঐখান থেকে বল আমরা তোর বউয়ের কোনো যত্ন নিচ্ছি না”।
বুঝলাম রাদিফ ভাই ফোনের ওপাশে ভিড়িও কলে আছে। রাদিফ বললো,,
” আমার বউ যদি এতগুলো খাবার খেতো তাহলে তো প্রেশার লো হয়ে অজ্ঞান হতো না” বলেই মুচকি হাসলো।
ওদের বকবকানির জন্য আমি খেতে পারছি নাহ। আরে ভাই ক্যামেরা একটা সামনে এভাবে ধরে রাখলে কে খাবার খেতে পারে। বিরক্ত হয়ে আনাস ভাই কে বললাম,,
“আনাস ভাই তোমার কি আমাকে দেখে ফুড ব্লগার মনে হয়??আনাস ভাই বললো,, না কেন??
” তো তাহলে তুমি ক্যামেরা টা আমার দিকে ঘুরাই রাখছো কেন,, আমি খাবার রিভিউ দেবো নাকি” বলেই আমি প্লেট নিয়ে ওখান থেকে উঠে গেলাম।
এইদিকে রাদিফ আনাস কে বললো,,
“তুই শুধু শুধু আমার আমার বউয়ের খাওয়ায় ডিস্টার্ব করেছিস” বলে ও ফোন কেটে দিলো।
আর আনাস তো বেক্কেল বলে গেলো।যাহ বাবা আমি কি করলাম আবার!!
________________
আজকের ঝামেলা মোটামুটি শেষ। মেহমান রা সবাই চলে গেছে। সন্ধ্যা পর ড্রয়িংরুমে সবাই বসে আছে। কিচেনে আম্মুরা গরম গরম পকোড়া বাজতেছে। কারো চা কারো কফি। কালকে ফুফিরা দুইজনই চলে যাবে।
তখনই জেঠুর ফোন বেজে উঠে। জেঠু ফোন ধরে বলে,,
“ওয়াইলাইকুমুস সালাম। হ্যাঁ কেমন আছো সাগর?? ও বাড়ির সবাই কেমন আছে?? বলতে জেঠু মনি ড্রয়িংরুম থেকে উঠে বারান্দার দিকে চলে গেলো। এখানে আমরা যে পরিমাণ কথা বলতেছি একটুও কথা বুঝা যাবে নাহ।
সাগর মামা ফোন দিয়েছে মানে রাদিফ ভাই এর মেজো মামা। কিন্তু কেন???
মেজো মা আমাদের কে এখানে পকোড়া দিয়ে গেলো সাথে রয়েছে চা, কফি। আর আমি অলওয়েজ টি লাভার। আর এই দিক দিয়ে আমি আর রাদিফ ভাই আলাদা। ওনার কফি ছাড়া চলে না আর আমার চা ছাড়া।আমরা খাচ্ছি কম কথা বলতেছি বেশি।
কিছুক্ষণ পর জেঠু মনি এসে বললো,, সাগর মামার ছেলে মানে মাহাদ ভাইয়ার বিয়ে। আর সবচেয়ে বেশি অবাক হয়েছি বিয়েতে রাদিফ ভাই নাকি আসবে।
ওনার ছুটি আছে তখন। ওনার মামা ওনার সাথে কথা বলেই বিয়ের ডেট ফিক্সড করেছে।
আর এইদিকে আমি তো শেষ।
[গঠনমূলক মন্তব্য করুন ]।
চলবে………..