#আমার_বিষাদীনি
#উম্মে_হাফসা
#পর্ব_০৬
ঘুম থেকে যখন উঠলাম,,দেখি বাইরের একটুকরো মিষ্টি রোদ আমার রুমে আসছে। বুঝলাম সকাল হয়ে গেছে। কালকে কাঁদতে কাঁদতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম টেরই পেলাম নাহ। কেউ কি আমাকে আর ডাকতে আসে নি। কালকের কথা মনে হতেই রাদিফ ভাই এর বলা কথাগুলো যেন আমার কানে বাজছে।
ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে নিচে যাচ্ছিলাম। নিচে গিয়ে সবে ডাইনিং এ যাবো তখনি যেন আমার পুরো দুনিয়া ঘুরে উঠলো। নিবু নিবু চোখে দেখলাম আব্বু আমার দিকে দৌড়ে আসতেছে,, আর কানে বাজছে কালকে রাদিফ ভাইয়ের কথা গুলো।
তোফায়েল আহমেদ মানে তুবা বাবা মাত্রই মর্নিং ওয়াক করে বাসায় ফিরেছে। ডাইনিং কাছে আসতেই দেখলো তুবা অচেতন হয়ে পড়ে গেছে। উনি তাড়াতাড়ি গিয়ে মেয়ের মাথা তার কোলে উঠিয়ে নিলেন।
“এই তুবা। তুমা মা, চোখ খোল। এই বলে উনি তুবাক ঝাকাচ্ছে।”
ততক্ষণে কিচেন থেকে আর ডাইনিং থেকে সবাই চলে এসেছে। তুবার বাবা কোলে করে নিয়ে ওকে ওর রুমে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিলো। এই দিকে ওর মা তো কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছে। তুবার বড় মা আর ওর মেজো মা কোনোভাবেই তার মায়ের কান্না থামাতে পারছে না।
তুবার চাচ্চু তাদের পারিবারিক ডাক্তার কে খবর দিলো। উনি আসতেছে। ওর জেঠু মনি মুখের উপর পানি ছিটাচ্ছে। তখনি মিটমিট করে তুবা চোখ খুললো।
চারপাশে চোখ বুলিয়ে দেখলো সবাই ওর রুমে। তুবার ব্বা মেয়ের হাত ধরে পাশে বসে আছে। চোখের পলক ফেললেই যেন টুপ করে পানি বের হয়ে যাবে। নিজেদের একমাত্র মেয়ে বলে কথা।
ডাক্তার এসে চেক আপ করতেছে ওকে। ডাক্তার বলল,,
“ওর শরীর দুর্বল। প্রেশার একে বারে লো। আর এই মাসে কি এখনো রক্ত দেন নাই ওকে। আপনারা জানেন ওর র*ক্তশূণ্য তা। তাই সময় মতো ওর শরীরে র*ক্ত দেওয়া প্রয়োজন। ঠিকভাবে খাবার খেতে হবে আর হ্যাঁ আজকেই গিয়ে র*ক্ত দিয়ে আসেন ওকে।” এই বলে ডাক্তার চলে গেলো।
তুবার জেঠু মনি বললো কারো বুঝি মনে নেই তুবা মায়ের র*
ক্ত দেওয়ার ডেট চলে গেছে।
খাওয়ার টেবিলে সবাই মিলে ব্রেকফাস্ট করতেছে। আজ বাড়িতে অনেক কাজ। বাইরে বাবুর্চি রা এসে গেছে রান্নার জন্য। তখন তুবার জেঠু মনি বললো,,
“তমাল, আনাস বা ইরহাম যেকোনো একজন তুবাকে হসপিটাল নিয়ে যাস। ঐখানে গিয়ে আমাকে ফোন দিস।আমি ডাক্তার হাসান হাসেবের সাথে কথা বলবো। আমরা তো কেউ যেতে পারবো না। জানিস তো আজকে সবাই একটু ব্যস্ত”।
তমাল বললো,” বড় মামা আমাকে একটু আজকে অফিসে যেতে হবে। একটু বেশিই জরুরী। নাহলে আমি যেতাম। আনাস তুই নিয়ে পারবি ওকে??”
“আচ্ছা আমি নিয়ে যাবো তুবা কে” আনাস বললো।
_________________
কালকে রাতে তুবার সাথে কথা বলে ফোন বন্ধ করে দিয়েছে রাদিফ। যাতে কেউ ওর সাথে যোগাযোগ করতে না পারে। তুবার ওপর ওর অনেক বেশি অভিমান হচ্ছে। তুবা কি ওকে স্বামী হিসেবে মানতে চায় না নাকি।
আমি রেডি হয়ে গেটের কাছে আসলাম। সাবিহারা কেউ আমার সাথে যেতে পারছে না কারণ ওরা সবাই আজ এই দিনে কোরআন তেলাওয়াত করতেছে। আমি গেটের কাছে আসতেই আনাস ভাই বললো,,
“বাইকে করে যেতে পারবি?? ”
আমি বললাম,, ” হ্যাঁ পারবো।”
হসপিটালে আসতেই জেঠু মনি ডাক্তারের সাথে কথা বললো।র*ক্ত দিয়ে বের হয়ে হসপিটালের নিচে আসতে আনাস ভাই কে একজন পেছন থেকে বলে উঠলো,,
“আরে আনাস,,তুই হসপিটালে কেন আসছিস। আর তুবাকে সাথে নিয়ে। কোনো সমস্যা?? ”
“রাতুল যে,,আসলে তুবার র*রক্তশূণ্যতা। তাই ওর প্রতি মাসে র*ক্ত দিতে হয়। আজকে মামু রা সবাই ব্যস্ত। তাই আমি নিয়ে আসলাম।কিন্তু তুই এখানে??” আনাস জিজ্ঞেস করলো।
“গতমাস থেকে আমি এখানে এই হসপিটালে কার্ডিওলজিস্ট হিসেবে জয়েন করেছি”।
আমি এতক্ষণে বুঝলাম উনি আনাস ভাইয়ের সেই বন্ধুটা। উনি এইবার আমার দিকে তাকিয়ে বললো,,
” তুবা, কি খাবে বলো??”
আমি বললাম, “না কিছু খাবো নাহ। আনাস ভাইকে বললাম,,ভাইয়া তাড়াতাড়ি চল আমার কাছে ভালো লাগছে নাহ।
আনাস ভাই রাতুল ভাইয়া থেকে বিদায় জানিয়ে আমাকে সাথে নিয়ে বাইকে উঠলো। আমি আনাস ভাইকে জিজ্ঞেস করলাম” তুমি তোমার বন্ধু কে আমার নাম্বার দিয়েছ কেন??”
“আরে আমি তো এমনিতে মজা করেই দিছিলাম। ও যখন জানবে তুই বিবাহিত তখন একটা বড় ছ্যাঁকা খাবে সেইজন্য। কিন্তু আমি কি জানতাম তোর জামাই এইটাতে এত রিয়েক্ট করবে”। বলেই আনাস ভাই হেসে উঠলো।
__________
বাড়িতে এসে দেখলাম খাওয়া দাওয়া শুরু হয়ে গেছে। অনেকে খেয়ে পেলেছে অনেকে খায় নাই। রাহা আপু আসছে সাথে তার শশুরবাড়ির লোকজন। আমি গিয়ে ফ্রেস হয়ে নিচে আসলাম। মেজো আম্মুকে জিজ্ঞেস করলাম,, সাবিহা রা কোথায়?? মেজো আম্মু বললো ওরা নাকি ছাদে গিয়েছে। রাহা আপুর জা য়ের মেয়েরা আর আপুর ননদের মেয়েদের কে নিয়ে। আপুর জা য়ের মেয়ে দুইটা ইশা আর তিসা। আর আপুর ননদের মেয়ে একটা লামিসা। ওরা আমাদের বয়সেরই
আমি ছাদে যেতেই অনামিকা আর সাবিহা জিজ্ঞেস করলো ” কখন এলি??” আমি বললাম, কিছুক্ষণ আগেই আসছি। ইরার কথা জিজ্ঞেস করতে বললো ওর নাকি শরীর খারাপ হয়েছে তাই শুয়ে আছে।
আমি ইশা,তিশা আর লামিসা কে জিজ্ঞেস করলাম “কেমন আছো তোমরা?? ইশা আর তিসা উত্তর দিলেও লামিসা উত্তর দেয় না। ও অন্য এক সাইডে চলে যায়। যেন আমার কথা শুনতেই পায় নি।
আর এর কারণ টাও জানি। ও হয়তো এতক্ষণে জেনে গেছে আমার আর রাদিফ ভাই এর বিয়ের কথা সেইজন্য। কারণ ও রাদিফ ভাই বলতেই পাগল। যদিও সম্পর্কে ওর মামা হয়।
_________
এদিকে রাদিফ ওর ফোন বন্ধ থাকার কারণে তুবার অসুস্থতার কথা জানে নাই। যখন ফোন খুললো দেখলো তমালের অনেক গুলা ফোন পরে একটা মেসেজ দিয়ে তুবার অসুস্থতার কথা জানায়।
এখন তমাল কে ফোন দিচ্ছে কিন্তু ও ধরছে নাহ। নিজের বউ য়ের অসুস্থতার খবর পেয়ে ও যেন পাগল হয়ে গেছে। ও জানে এখানে ওর ও কিছু দোষ আছে।
এরপর রাদিফ তুবার ফোনে ফোন দেয়।
আমি যখন ওদের সাথে গল্প করতেছি দেখলাম ফোন বেজে উঠলো। রাদিফ ভাই ফোন দিয়েছে। আমি কেটে দিয়েছি এরপর অনেকবার ফোন দেয় কিন্তু আমি ধরিনি।কালকের রাদিফ ভাই এর একটা কথাও আমি ভুলি নি
এদিকে রাদিফ এবার না পেরে রাহার ফোনে ফোন দেয়। রাহার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে তুবার কথা জিজ্ঞেস করতে বলে তুবা ছাদে। তখন রাদিফ রাহা কে বলে ” একটু কষ্ট করে ফোন টা তুবা কে দিয়ে আয় না আপু”
রাহা ফোন নিয়ে ছাদে এসে তুবা কে বলে”এই তুবা নে, রাদিফ কথা বলবে”।আর লামিসা তো রাদিফ এর কথা শুনেই ছাদের ওপাশ থেকে তুবাদের এখানে চলে আসছে। লামিসা রাহা কে একটু ন্যাকা স্বরে বললো “মামি আমি রাদিফ এর সাথে বলবো। তুমি ওর থেকে আমাকে ফোন টা নিয়ে দাও”।
রাহা কোনো রকম নিজের রাগ ধমন করে বললো ” আচ্ছা ও কথা বলে নিক। ওর সাথে রাদিফের কি যেন কথা আছে”।
এদিকে ওদের সামনে আমি ফোন টা কাটতেও পারতেছি না। তাই সালাম দিয়ে চুপ করেই আছি। ওপাশ থেকে রাদিফ ভাই নরম স্বরে বললো,,
“এই অসুস্থ শরীর নিয়ে ছাদে কেন আসছিস। রূমে গিয়ে রেস্ট নিতি। আমি জানি তুই ইচ্ছা করে আমার ফোন কেটে দিচ্ছিস”
আমি শুধু এপাশ থেকে হু হু বলতেছি।
রাদিফ ভাই বললো
“কালকের জন্য আমি সরি….
আমি এর মধ্যে বললাম ” রাদিফ ভাই আপনার সাথে লামিসা কথা বলবে”এই বলে ফোনটা ওকে দিলাম।
লামিসা হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে……..
[নাইস, নেক্সট বাদ দিয়ে গঠনমূলক মন্তব্য করুন]।
চলবে……..