#আমার_পূর্ণতা
#রেদশী_ইসলাম
পর্বঃ ২১
কানাডার দক্ষিণ-পূর্ব অংশে অবস্থিত অন্টারিও প্রদেশের রাজধানী শহর টরোন্টো। এটি কানাডার সবচেয়ে জনবহুল অঞ্চল ও আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ বানিজ্যিক কেন্দ্র। দীর্ঘ ২১ ঘন্টা জার্নি শেষে যখন তাফসির ও শাহিন টরেন্টো এয়ারপোর্টে নামলো তখন সময় বিকাল ৪ টা বেজে ৫ মিনিট। সব প্রসেসিং শেষে তারা এয়ারপোর্ট থেকে বাইরে এসে দেখলো তাদের আরেক কানাডিয়ান বন্ধু উইলসন তাদের রিসিভ করতে এসেছে। উইলসন এসে তাফসির ও শাহিনকে জড়িয়ে ধরে হাসি মুখে বলে উঠলো—
” হেই ব্রো হোয়াটস আপ? উই মেট আফটার এ লং টাইম।”
তাফসির মুখে হালকা হাসি ফুটিয়ে ইংলিশে জবাব দিলো—
” আমরা ভালোই আছি। তুমি কেমন আছো? আর এটা মোটেও লং টাইম না। সবে মাত্র এক মাস ”
উইলসন আগের মতোই মুখে লম্বা হাসি টেনে বললো—
” সেটাও বা কম কিসে বলো। ”
” উইলসন আসলে অনেক দুর থেকে জার্নি করে এসেছি তো আমরা। তাই অনেক ক্লান্ত লাগছে। আমরা বাড়িতে যেয়ে কথা বলি প্লিজ? __পাশ থেকে বলে উঠলো শাহিন।
শাহিনের কথায় উইলসন ব্যস্ত হয়ে বললো—
” হ্যাঁ অবশ্যই। দেখেছো অনেকদিন পর তোমাদের দেখে একদমই ভুলে গিয়েছি যে তোমরা কতদূর থেকে জার্নি করে এসেছো। এসো আমার গাড়ি সামনেই রাখা আছে। বাকি কথা পরে হবে। ”
প্রায় ঘন্টাখানিকের পথ অতিক্রম করে অবশেষে তারা তাদের বাড়িতে পৌছালো। তাফসির ও শাহিনকে নিজেদের বাড়িতে পৌছে দিয়ে উইলসন তার নিজের বাড়ি চলে গেলো। এবং জানিয়ে গেলো যে সে রাতে আবার আসবে। ততোক্ষণে যেনো তাফসির ও শাহিন রেস্ট নিয়ে নেয়।
তাফসির এবং শাহিন দুজনের বেডরুমই আলাদা আলাদা। বাড়িটি দু’বছর আগে শাহিন এবং তাফসির মিলে কিনেছিলো। বাড়িটিতে তিনটি বেডরুম ও একটি লিভিংরুম। লিভিংরুমের সাথে কিচেন এডজাস্ট করা। অর্থাৎ লিভিং রুম থেকে কিচেন রুম ভালো ভাবেই দেখা যায়।
তাফসির জ্যাকেটের চেইন খুলতে খুলতে তার ঘরের সাথে লাগানো বারান্দায় যেয়ে দাঁড়ালো। এখানে বাড়িঘর গুলো বেশিরভাগই সব কাঠ বা বোর্ডের তৈরি হয়। ফলস্বরূপ তার বারান্দা ও কাঠের। বেশিরভাগ সময়ই তাফসির এখানে বসে কাজ সম্পন্ন করে। এখান থেকে সামনের লন ও বাড়ির সামনের রাস্তা সব স্পষ্টই দেখা যায়।
তাফসির উপরের মোটা জ্যাকেটটি খুলে বারান্দায় রাখা তার প্রিয় ডিভানে ছুড়ে মারলো। সাথে সাথে ঠান্ডা শীতল বাতাসে শরীরে কাঁপুনি ধরে গেলো। কিন্তু সেদিকে বিশেষ পাত্তা দিলো না সে। ফোনে এখানকার স্থানীয় সিমকার্ড লাগিয়ে ওয়াইফাই কানেক্ট করতে করতে কনটাক্ট লিস্টে থাকা প্রাচুর্যের নাম্বারে গেলো। এখন বাংলাদেশে নিঃসন্দেহে রাত। সে দেনা মনায় পরে গেলো কল দেবে কি না ভেবে। রাত তো কম হলো না। এতো রাতে কারোরই জেগে থাকার কথা না। মিসেস ফারাহ বারোটা বাজলে ঔষধ খেয়ে ঘুমিয়ে পরেন। এখন ফোন দিলে বিরক্ত করা হবে তাকে। তবে প্রাচুর্য কি এখনো জেগে আছে তার অপেক্ষায়? তাফসির ফোন দেবে না দেবে না করেও রিং বসালো প্রাচুর্যের নাম্বারে। তাফসির ভেবেছিলো প্রাচুর্য হয়তো ধরবে না ফোন কিন্তু প্রথমবার রিং হওয়ার সাথে সাথেই রিসিভ হলো ওপাশ থেকে। তাফসির খানিক অবাক হলেও স্বাভাবিক ভঙ্গিতে ফোন কানে ঠেকালো। ওপাশ থেকে কোনো সারা শব্দ পাওয়া যাচ্ছে না। তাফসির হালকা কাতর স্বরে ডেকে বললো—
” প্রাচুর্য? ”
প্রাচুর্য ছোট্ট কন্ঠে জবাব দিলো—
” হুম ”
” ঘুমাস নি এখনো? ”
” না ”
” কেনো? ”
” এমনি ”
” শরীর খারাপ করবে তো ”
” ঘুম আসছে না ”
প্রাচুর্যের কথায় তাফসির চিন্তিত স্বরে বললো—
” কেনো? কি হয়েছে? ”
” কিছু হয় নি। আপনি ভালো ভাবে পৌঁছিয়েছেন? ”
” হুম। খেয়েছিস রাতে? ”
” হুম। আপনি? ”
তাফসির মৃদু হেসে বললো—
” এখানে এখনো রাত হয় নি ”
” ও হ্যাঁ তাই তো। দুপুরে খেয়েছেন? ”
” খেয়েছি ফ্লাইটে থাকতে। আচ্ছা সবাই কেমন আছে? মা কেমন আছে? ”
” বড় মা খুব কাঁদছিলো তাফসির ভাই। বড় বাবা অনেক কষ্টে সামলিয়েছে। আপনি তাড়াতাড়ি চলে আসুন। ”
” মিস করছিস আমাকে? ”
তাফসিরের এমন প্রশ্নে চুপ হয়ে গেলো প্রাচুর্য। সে কি বলবে এখন। এপাশে প্রাচুর্যের নিরবতা দেখে ঠোঁট কামড়ে হাসঁলো তাফসির। প্রাচুর্যকে আরেকটু জালাতে সে হাসি চেপে আবার টেনে টেনে ডাক দিলো—
” বউউউউ? বল না ”
তাফসিরের দুষ্টুমি এবার বুঝতে পারলো প্রাচুর্য। সে ঝটপট করে উত্তর দিলো—
” তাফসির ভাই আমার ঘুম আসছে অনেক। সকালে কলেজ ও আছে। আমি ঘুমাচ্ছি। আল্লাহ হাফেজ। ”
প্রাচুর্যের এমন করাতে তাফসির এবার একটু শব্দ করেই হাসঁলো। সে বেশ বুঝতে পারলো যে প্রাচুর্য লজ্জা পেয়েছে। তাই আর কিছু বললো না। ফোন নিয়ে এবার সে ঘরে চলে গেলো। অলরেডি ঠান্ডায় তার শরীর মনে হচ্ছে জমে গেছে।
অন্যদিকে প্রাচুর্য ফোন কেটেই উপুড় হয়ে শুয়ে বালিশে মুখ গুঁজে দিলো। এতোক্ষণ তাফসিরের সাথে কথা বলা কালীন তার লজ্জা লাগলেও এখন পুনরায় আবার কষ্ট হচ্ছে তার। একসময় এপাশ ওপাশ করতে করতে ঘুমিয়ে পরলো প্রাচুর্য।
.
.
.
তখন বোধহয় সকাল ৭ টা। চোখের উপর রোদের আলো এসে পরতেই প্রাচুর্য ধীরে ধীরে চোখ খুলতেই দেখলো মিসেস শাহানা জানালার পর্দা সরাচ্ছেন। তিনি জানালার পর্দা সরাতে সারাতেই উচ্চ আওয়াজে প্রাচুর্যকে ডাকতে শুরু করলেন। প্রাচুর্য কন্ঠে একরাশ বিরক্তি এনে বললো—
” আহ মা চেঁচাচ্ছ কেনো? ”
মিসেস শাহানা ঘুরে প্রাচুর্যকে কিছু জিজ্ঞেস করবেন তার আগেই প্রাচুর্যের মুখ দেখে থেমে গেলেন। ফোলা ফোলা চোখমুখ দেখে আন্দাজ করলেন কিছু একটা। কিন্তু তবুও কিছু জিজ্ঞেস করলেন না। এখন কিছু জিজ্ঞেস করলে মেয়েটা উল্টো লজ্জা পাবে। তাই মুখে হাসি ফুটিয়ে বললেন—
” কলেজে যাবি না? ”
মায়ের মুখের হাসি দেখে প্রাচুর্যের বিরক্তি ভাবটা সাথে সাথেই চলে গেলো। সে আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসে বললো—
” যাবো মা। ভালো হয়েছে ডেকে দিয়েছো। নাহলে উঠতে পারতাম না আমি। ”
” আচ্ছা ফ্রেশ হয়ে আয় তাহলে। আমি ততোক্ষণে খবার নিয়ে আসছি। ”
প্রাচুর্য রেডি হয়ে খেয়ে বাইরে আসতেই দেখলো ড্রাইভার গাড়ি নিয়ে নিচে অপেক্ষা করছে। ড্রাইভারকে দেখে প্রাচুর্যের মন আবার খারাপ হয়ে গেলো। কেননা এতোদিন তো তাফসিরই তাকে কলেজে আসা-নেওয়া করতো কিন্তু এখন তো আর সে নেই। খুব মনে পরছে তাকে। প্রাচুর্যকে এতো ভাবনা চিন্তা করতে দেখে ড্রাইভার বলে উঠলো —
” আম্মা কি এতো ভাবতাছেন? তাড়াতাড়ি উইঠা আসেন নাইলে কলেজে আবার দেরি হইয়া যাইবো। ”
ড্রাইভারের কথায় হুশ ফিরলো প্রাচুর্যের। তাই সে আর দেরি না করে উঠে পরলো গাড়িতে। আজ আবার সাপ্তাহিক টেস্ট আছে তার। দেরি করলে ক্লাস মিস যাবে।
.
.
.
.
রাত ন’টায় তাফসিরদের বাড়ি হাজির হলো উইলসন। এসেই তাড়া লাগালো দু’জনকে রেডি হওয়ার জন্য। তাফসির ও শাহিন রেডি হয়ে বাইরে আসতেই দেখলো উইলসন আপেল খেতে খেতে টিভি দেখছে। তাফসির পকেটে ফোন ঢুকাতে ঢুকাতে বললো—
” এতো তাড়াহুড়া করে রেডি হতে বললে যে। কোথায় নিয়ে যাচ্ছো আমাদের? ”
উইলসন আপেলে আরেক কামড় বসিয়ে তা চিবোতে চিবোতে বললো—
” আজকে নাথান ফিলিপস স্কয়ারে যাবো। অনেকদিন যাওয়া হয় না। এক বন্ধুর কাছে শুনলাম কনসার্ট হচ্ছে ওখানে। আমরা ওখানের একটা রেস্টুরেন্টে থেকে একবারে খেয়েই কনসার্টে যাবো। ”
শাহিন চাবি নিতে নিতে বললো—
” কিন্তু কালকে সকালে অফিস আছে উইলসন। এখন কনসার্টে গেলে তো সকালে উঠতেই পারবো না। ”
উইলসন উঠে দাড়িয়ে বাইরে যেতে যেতে বললো—
” সমস্যা নেই। তাড়াতাড়িই চলে আসবো। আর অতো সতো জানি না তোমাদের যেতেই হবে। ”
শাহিন অসহায় দৃষ্টিতে তাফসিরের দিকে তাকালো। তাফসির চোখ দিয়ে ইশারায় আশ্বাস দিয়ে বললো—
” থাক চিন্তা করিস না। ম্যানেজ করে নেবো। আর জানিসই তো ও একটু পাগলাটে ধরনের। এসবে এনজয় করে খুব। আর ও আছে বলেই কিন্তু কানাডার দিন গুলো এতো সুন্দর লাগে। ”
শাহিন উপরনিচ মাথা ঝাঁকিয়ে সম্মতি জানালো। তাফসির মৃদু হেসে বললো—
” তাহলে আর কি? যাওয়া যাক!
তারা বাইরে এসে দেখলো উইলসন অলরেডি গাড়ি স্টার্ট দিয়ে ফেলেছে। তাফসির ফ্রন্ট সিটে উইলসনের পাশে বসলো এবং ব্যাক সিটে শাহিন বসলো। টরেন্টো শহরের স্ট্রিট লাইট ও সুউচ্চ বিল্ডিং ছাড়িয়ে তারা পৌঁছালো নাথান ফিলিপস স্কয়ারে।
তারা নাথান ফিলিপসের একটি লোকাল রেস্টুরেন্টে গিয়ে বসলো। রেস্টুরেন্টটি লোকাল হলে কি হবে এটি এখানকার বেশ জনপ্রিয়। তারা কানাডার জনপ্রিয় ডিস পাউটিন অর্ডার দিলো যেটি ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, চিজ এবং এক রকমের সস দিয়ে হিট করে দেওয়া হয় আর সাথে বিফ বার্গার।
শাহিন খবার চিবোতে চিবোতে বাংলাতে বললো—
” ভাই এরা এসব খায় কেনো ডিনারে? আমার তো রাতে ভাত না খেতে পারলে পেটই ভরে না। বাড়িতে যায়ে আমি রান্না করবো দেখিস। এইসব খেয়ে হবে না আমার। ”
” সম্ভব না ভাই। তুই বোধহয় ভুলে যাচ্ছিস যে আমরা এরপর কনসার্টে যাবো। বাড়িতে যেতে যেতে রান্না করে খাওয়ার মতো ইচ্ছা থাকবে না। তার থেকে ভালো তুই কিছু খাবার কিনে নিয়ে যাইস যাতে রাতে খিদে লাগলে খেতে পারিস। ”
উইলসন ওদের বাংলা ভাষা বুঝতে পারলো না তাই ওদের দু’জনে দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো—
” হেই কি বলছো তোমরা। আমি বুঝতে পারছি না তোমাদের ভাষা। ”
” তেমন কিছু না উইলসন। আমাদের খাওয়া শেষ। তোমার শেষ হলো?”
” হ্যাঁ শেষ। চলো উঠি। নাহলে কনসার্ট শেষ হয়ে যাবে আবার। ”
তারা তিনজন বিল পরিশোধ করে রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে গেলো। এর মধ্যে তাফসিরের ফোন বেজে উঠলো। তাফসির পকেট থেকে ফোন বের করতেই দেখলো প্রাচুর্যের ফোন। সে একবার সময়ের দিকে তাকাতেই ভ্রু কুঁচকে গেলো। একটু দুরে গিয়ে ঝটপট ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে নম্র কন্ঠে সালাম দিলো প্রাচুর্য। তাফসির সালামের উত্তর দিয়ে চিন্তিত ভঙ্গিতে ভঙ্গিতে বললো—
” কি ব্যাপার? এই সময়ে তো তোর কলেজে থাকার কথা। কলেজে যাস নি? ”
” গিয়েছিলাম। চলে এসেছি। ”
” কেনো কি হয়েছে? ঠিক আছিস তুই? বাড়ির সবাই ঠিক আছে তো? ”
” এতো অস্থির হবেন না তাফসির ভাই। সবাই ঠিক আছে। আমার এমনি ভালো লাগছিলো না তাই চলে এসেছি। ”
প্রাচুর্যের কথায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো তাফসির। সে তো রীতিমতো ভয় পেয়ে গিয়েছিলো এ সময় প্রাচুর্যের ফোন পেয়ে। এর মধ্যেই ওপাশ থেকে আবার কথা শোনা গেলো প্রাচুর্যের।
” আপনি কি ব্যস্ত আছেন? বিরক্ত করলাম? ”
প্রাচুর্যের কথায় তাফসির হাসলো। মেয়েটা যে তাকে নিয়ে চিন্তা করে তা তার কথাতেই স্পষ্ট। তাফসির ঠোঁটের কোণে হাসি রেখেই বললো—
” ব্যস্ত থাকলে কি রিসিভ করতে পারতাম বল? তোর যখন ইচ্ছা তখন ফোন দিবি। এতো সংকোচ করতে হবে না। ”
তাফসিরকে এমন হাসতে দেখে উইলসন কনুই দিয়ে গুঁতা দিলো শাহিনের বাহুতে। শাহিন ফিরে তাকাতেই উইলসন দুরে দাঁড়িয়ে থাকা তাফসিরের দিকে ইশারা করে বললো—
” ও এতো হেঁসে হেঁসে কার সাথে কথা বলছে শাইন? ”
শাহিন তাফসিরের দিকে তাকালো একবার। পুনরায় উইলসনের দিকে তাকিয়ে বললো—
” ওহ তাফসিরের কথা বলছো? ও তো ওর ওয়াইফের সাথে কথা বলছে। ”
শাহিনের কথায় উইলসন আকাশ থেকে পরলো। মুখে একরাশ বিস্ময় নিয়ে জিজ্ঞেস করলো—
” কি বলছো? ওয়াইফ? কিন্তু ও তো আনমেরিড। ওয়াইফ কোথা থেকে আসলো? ”
#চলবে
#আমার_পূর্ণতা
#রেদশী_ইসলাম
পর্বঃ ২২
” এমন ভাব করছো যেনো আজ নতুন জানছো? ”
” আমি সত্যিই আজকে জানছি, এই মাত্র জানছি। ”
” কেনো তাফসির তোমাকে কিছু বলে নি? ”
” না তো। ও বিয়ে করলোই বা কবে? ”
” এবার বাংলাদেশে গিয়ে ”
ওদের কথার মধ্যেই তাফসির কথা বলা শেষ করে সেখানে উপস্থিত হলো। প্রাচুর্যের সাথে কথা বলে মনটা হালকা লাগছে বেশ তার। তাফসির শাহিন এবং উইলসনের দিকে তাকিয়ে বললো—
” কি নিয়ে কথা বলছো তোমরা? ”
উইলসন অভিমানী স্বরে বললো—
” তুমি বিয়ে করেছো তাফসির অথচ আমাদের একবারও জানালে না? ”
তাফসির হেসে উইলসনের কাঁধে হাত দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বললো—
” আরে বলবো কখন তোমাদের সাথে তো ঠিক মতো কথায় হয় নি। আর বিয়ে টা হুট করেই হলো। আসার দু’দিন আগেই। জানানোর মতো সময় ও হয় নি। ”
” তো নাম কি তোমার ওয়াইফের? কি করে সে? ”
” ওর নাম প্রাচুর্য। পড়ালেখা করছে সে। আই মিন স্টুডেন্ট। ”
প্রাচুর্য নামটাকে কয়বার মনে মনে আওড়ালো উইলসন। কিন্তু কিছুতেই উচ্চারণ করতে পারলো না সে। অসহায় কন্ঠে তাফসিরের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো—
” তোমার ওয়াইফের নাম কি বললে? প্রিটুরজা? ”
উইলসনের উচ্চারণে শব্দ করে হেঁসে উঠলো শাহিন। হাসতে হাসতে রীতিমতো গড়িয়ে পরবে এমন অবস্থা তার। কোনো মতে হাসিটা চেপে রেখে বললো—
” ভাই কি বলে এই সাদা চামড়া? প্রাচুর্যের নামের এমন উদ্ভট উচ্চারণ যদি প্রাচুর্য শুনতে পাই তাইলে আমি সিওর অকালে অক্কা পাবে সে। আহারে ভাগ্যিস শোনে নি মেয়েটা। ”
উইলসনের উচ্চারণে তাফসির ও হাসলো তবে শাহিনের মতো এতো নয়। স্বাভাবিক যেমন হাসে তেমন। এর মধ্যে উইলসন বলে উঠলো—
” তোমরা হাসছো কেনো? আর কি বলছো? ইংলিশে বলো শাইন। ”
উইলসন নামটা বুঝতে পারে নি বলে বোঝার সুবিধার্থে তাফসির প্রাচুর্যের নামটা কে ভেঙ্গে ভেঙ্গে আবার বললো—
” ওর নাম প্রিটুরজা নয় উইলসন। ওর নাম প্রা চুর যো। বুঝেছো? ”
উইলসন মাথা চুলকে কেমন বোকা বোকা হাসি দিয়ে বললো—
” তোমাদের নাম গুলো এতো কঠিন হয় কেনো বলো তো? আমার তো সামান্য নামটা উচ্চারণ করতেই দাঁত ভেঙে যাওয়ার জোগাড়। না জানি তোমাদের ভাষা কতোটা কঠিন। ”
পাশ থেকে শাহিন বললো—
” ছেড়ে দে ভাই। প্রাচুর্যের নাম উচ্চারণ করতে হলে ওকে আগে অ, আ ভালো করে শেখাতে হবে। ”
.
.
.
উত্তরার একটি ছোটো খাটো রেস্টুরেন্টে বসে আছে রিয়া ও আরফান। না আগের দিনের মতো হঠাৎ দেখা হয় নি তাদের। আজ দু’জনের প্ল্যান করেই আসা। অফার টা আরফানই দিয়েছিলো। রিয়া প্রথমে একটু নাকচ করলেও পরে আরফানের জোরাজুরিতে রাজি হয়ে যায়। কিন্তু তবুও মন সায় দিচ্ছিলো না তার। কারন আরফান না জানালেও সে তো বোঝে আরফানের আর্থিক অবস্থা। তবে এদিক দিয়ে বলতে গেলে রিয়া এখনো নিজের পরিপূর্ণ পরিচয় দেয় নি। কে জানে দিলে হয়তো আরফান তার সাথে সম্পর্ক তো দুরেরই কথা বন্ধুত্বের কথাও মাথায় আনতো না। এতোদিনে রিয়া অন্তত এটুকু বুঝেছে যে আরফান একজন ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন মানুষ। তবে আরফান যে তার পরিবার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে নি ব্যাপার টা এমন ও না। বহুবার জিজ্ঞেস করেছে কিন্তু প্রতিবারই রিয়া কোনো না কোনো ভাবে এড়িয়ে গিয়েছে। সে চাই না তাদের মধ্যে ভেদাভেদ আসুক। আর সো অফ টা কোনো কালেই পছন্দ ছিলো না তার। সে সাধারণ ভাবেই চলাচল করে। খুব একটা বিলাসিতার ব্যাপার স্যাপার নেই। আর এটা শুধু তার একার না, তার সব ভাই-বোনদের মধ্যেই এটা ভালো দিক। কারন তারাও অতোটা সো অফ করে না। সবাই সাধারণ ভাবেই জীবন যাপন করে। কিন্তু রিয়া কিছু না বললেও আরফান আন্দাজ করেছে যে তার থেকে রিয়ার আর্থিক অবস্থা বেশ সচ্ছল।
দোকানে কর্মরত একজন মোটাসোটা লোক এসে খাবার দিয়ে চলে যেতেই আরফান পূর্ণ দৃষ্টিতে রিয়ার দিকে তাকালো। রিয়ার চোখ, নাক, ঠোঁট খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখলো। এটা তার প্রিয় কাজ। মেয়েটাকে দেখতে ভালো লাগে তার। কেনো লাগবে না? গোটা আঠাশটি বছর কেটে যাওয়ার পর অবশেষে কাউকে পছন্দ হলো তার। পছন্দ? না শুধু পছন্দ তে সীমাবদ্ধ থাকলেও কথা ছিলো কিন্তু সে তো শুধু পছন্দ করে না। বরং ভালো ও বাসে। এখন শুধু অপরদিক থেকে একটি সিগন্যাল পাওয়ার অপেক্ষা।
নিজেকে এমন খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখাতে একটু আধটু অস্বস্তি হলো রিয়ার। জীবনে কারও সাথেই তেমন ভালো বন্ধুত্বের সম্পর্ক নেই তার। আর এখন যখন হলো একবারে পুরুষের সাথেই। কিন্তু তার ও বা কি করার! সামনে বসা পুরুষটিকে তো তার ভালোই লেগেছে তাই বন্ধুত্ব করেছে। নাহলে তো জীবনেও এসবের কথা মাথা তেই আনতো না। আর সাহস ও পেতো না।
” কি দেখছেন? “__প্রথমে রিয়ায় প্রশ্নটি করলো। উত্তরে আরফান চোখ না সরিয়েই হালকা হেঁসে বললো—
” কি আর দেখবো বলুন। সামনে যদি এমন সুন্দর রমনী বসে থাকে তখন কি আর অন্য কিছুর দিকে চোখ যায়? ”
রিয়া চোখ ছোট ছোট করে বললো—
” এই এই আপনি কি আমার সাথে ফ্লার্ট করছেন? ”
” মোটেও না। ফ্লার্ট কেনো করবো? জাস্ট একটু কমপ্লিমেন্ট দিলাম। এখন এটাকে যদি আপনার ফ্লার্ট মনে হয় তবে আমার তো কিছু করার নেই তাই না? ”
” তো আজকে ট্রিট দেওয়ার কারন? ”
” স্পেসিফিক কোনো কারন নেই। তবে বেতন পেয়েছি কাল। বলতে পারেন তার জন্যই ভাবলাম রিয়া ম্যাডামকে একটা ট্রিট দেওয়া দরকার। কখনো তো কিছু দিলাম না?”
” কেনো দেবেন? আমি কি আপনার গার্লফ্রেন্ড? ”
রিয়ার কথায় আরফান দুষ্টু হেঁসে দু ভ্রু নাচিয়ে বললো—
” হবেন নাকি? ”
আরফানের এমন কথায় থতমত খেয়ে গেলো রিয়া। এদিক ওদিক তাকানোর ভান করে বললো—
” ক.কি বলছেন? কি হবো? ”
আরফান চেয়ারে হেলান দিয়ে হাসতে হাসতে বললো—
” ওইযে গার্লফ্রেন্ড? ”
” আপনি কি মজা করছেন আমার সাথে? ”
” মজা করবো কেনো? আমি সিরিয়াস। ওভার হান্ড্রেড পার্সেন্ট। ”
.
.
.
.
ছাঁদের একপাশে নতুন দোলনা লাগানো হয়েছে। কালো রং করা এই লোহার দোলনাটি প্রাচুর্যের আবদারেই লাগানো হয়েছে। এইতো তাফসির যাওয়ার পাঁচদিন পরের কথা যখন বাতাসে বাতাসে বিরহের গন্ধ ভাসছিলো তখন প্রাচুর্যের সময় কাটতো না। সারাক্ষণ মনে হতো কি নেই বা কিছু একটা অসম্ভব রকম মিস করছে এমন। তাফসির আসার আগের জীবন সম্পূর্ণ আলাদা ছিলো তার কিন্তু মাঝের একমাসে জীবনে যা যা হয়ে গেলো এখন তাফসির যাওয়ার পরের জীবন টা আলাদা লাগছে। তার কিশোরী মন সঙ্গ চাই ভালোবাসার মানুষটির যে কিনা সদ্য স্বামী রুপে পদার্পণ করেছে। আর এ বয়সে এসব চাওয়া অস্বাভাবিক কিছু না।
বর্তমানে সেই নতুন কেনা দোলনা টায় শুয়ে আছে প্রাচুর্য। দোলনাটা ইশতিয়াক চৌধুরী কিনে দিয়েছে তাকে। যদিও চেয়েছিলো ইনসাফ চৌধুরীর কাছে কিন্তু কোনোভাবে সেটা ইশতিয়াক চৌধুরীর কানে যেতেই রাতে তিনি দোলনাটা নিয়ে এসে দিয়েছিলেন প্রাচুর্যকে।
প্রাচুর্য আকাশ পাতাল ভাবতে ভাবতে দোলনায় দুলছিলো। বুকের ওপর বই উল্টে রাখা। তার মতো ছোটো খাটো মানুষের অনায়াসেই পুরো শরীর এঁটে যাচ্ছে এই দোলনায়। সময়টা বিকেল বলে আকাশে চড়া রোদ নেই। তবে এখন যেই রোদটা আছে সেটা খুব ভালো লাগে প্রাচুর্যের। এ রোদে তাপ নেই কোনো। মিষ্টি আলো। এর মধ্যে সেখানে হাজির হলো মিসেস ফারাহ। মিসেস ফারাহকে আসতে দেখে উঠে বসে পাশে বসার জায়গা করে দিতে দিতে প্রাচুর্য বললো—
” বড়’মা তুমি এসময়? ”
” ছাঁদের কাপড় নিতে এসেছিলাম তা দেখলাম তুই এখানে শুয়ে আছিস। আচ্ছা তোর কি মন খারাপ? নাহলে এভাবে শুয়ে আছিস কেনো? ”
” মন খারাপ না বড় মা। এমনিই ভালো লাগছিলো না বলে এখানে আসলাম। ”
” তা কি করছিলি? ”
” উপন্যাসের বই পড়ছিলাম একটা। আচ্ছা সেসব ছাড়ো। তাফসির ভাই কবে আসবে? তোমাকে কিছু বলেছে? ”
” ও কি আর আমার সামনে সেসব বলা মানুষ? তুই তো জিজ্ঞেস করতে পারিস। ”
” সকালে ফোন দিয়েছিলাম তখন বলেছিলো তাড়াতাড়িই আসবে। তবে সেটা কবে তা বলেনি। ”
” ওকে আসার জন্য জোর করবি। প্রয়োজনে ইমোশনাল ব্লাক মেইল করবি। ”
” কি বলছো বড় মা? এসব কেনো করবো? ”
” মা হলে বুঝতিস সন্তান দুরে থাকার কষ্ট। দু দু’টো ছেলে মেয়ে অথচ দেখ একটা ও কাছে নেই। মেয়েটা তো শ্বশুর বাড়ি আছে। রোজ রোজ তো আর আমার কাছে আসা সম্ভব নয়। তার ও তো সংসার আছে। কিন্তু ছেলেটাকে দেখ। পরে আছে সেই ভিন দেশে। তাহলে কি লাভ হলো দুটো সন্তান জন্ম দিয়ে? ”
প্রাচুর্য পাশ দিয়ে মিসেস ফারাহ কে জড়িয়ে ধরে বললো—
” থাক বড় মা কষ্ট পেয়ো না তুমি। আমি চেষ্টা করবো ওনাকে ফিরিয়ে আনার। আচ্ছা বড় মা একটা প্রশ্ন করবো?”
” অনুমতি নেওয়া লাগে? কর। ”
” তাফসির ভাই কানাডায় কেনো চলে গিয়েছিলো? ”
প্রাচুর্যের কথায় মলিন হেসে মিসেস ফারাহ বললেন—
” সেটা নাহয় তোমার স্বামীর কাছে জিজ্ঞেস করো কেমন? সেই ভালো জানে। ”
” উনি যদি রাগ করে? আচ্ছা তেমন সিরিয়াস কিছু হলে বলা লাগবে না। বাদ দেও। ”
” না তেমন সিরিয়াস কিছু না। আচ্ছা শোন তাহলে। তখন তোর মনে হয় বয়স এগারো বা বারো হবে। তাফসিরের তখন ইন্টারমিডিয়েট শেষ। এক্সাক্ট কোন ক্লাসে পরে মনে নেই আমার। তবে ভার্সিটিতে ছিলো এতটুকু মনে আছে। তো ওর ভার্সিটিতে একটা মেয়ে ছিলো নাম শিমলা। মেয়েটা দেখতে অসম্ভব রূপবতী ছিলো। দুধে আলতা গায়ের রং। শিমলা আর তাফসির আবার ক্লাসমেট ছিলো। তাই মাঝে মাঝেই ওরা পড়ালেখার বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করতো। কিন্তু বান্ধবী ছিলো না। কারন তাফসিরের বাবা আগেই বলে রেখেছিলো যেনো কোনো মেয়ে বান্ধবী না হয়। তাই তাফসিরও আর সে সাহস করে নি। শুধু ক্লাসমেট হিসাবেই সীমাবদ্ধ ছিলো। কিন্তু মেয়েটার মনে অন্য কিছু ঘুরছিলো। সে শুরু থেকেই তাফসিরকে পছন্দ করতো। তবে তাফসির করতো কিনা জানি না। যদি তোর বড় বাবার নিষেধাজ্ঞা না থাকতো তাহলে হয়তো সম্পর্কে জড়াতেও পারতো। তো ওই শিমলা বিভিন্ন ভাবে তাফসিরকে ইমপ্রেস করার চেষ্টা করতো। তাফসির সেটা বুঝতে পেরে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছিলো। কিন্তু তারপরও মেয়েটা গায়ে পড়ে কথা বলতো। একদিন তো সব সীমা অতিক্রম করে ভরা প্লেসে তাফসিরকে প্রপোজ করে বসে। তখন তাফসির রিজেক্ট করেছিলো। বলেছিলো ” আমি তো তোমাকে আগেই বলেছি এসব রিলেশন টিলেশন আমি করবো না। এসবে ইন্টারেস্ট নেই আমার। তাছাড়াও এখন সম্পর্কে জড়ালে আমার পড়ালেখায় ক্ষতি হবে যেটা আমি চাই না। ” কিন্তু তোর বড় বাবার কথা বলেনি। বললে হয়তো তখন অনেকেই আজেবাজে কথা বলতো। তো সেদিন সেই মেয়ে আর কোনো কথা বলেনি। তার দু’দিন পরে তোর বড় বাবার কানে এসেছিলো তাফসিরের জন্য একটা মেয়ে নাকি আ ত্ম হ ত্যা করতে চেয়েছে গলায় ফাঁ সি দিয়ে। তখন স্বাভাবিকভাবেই তোর বড় বাবা ভেবেছিলো ওই মেয়ের সাথে তাফসিরের সম্পর্ক আছে। সেদিন বিকালে আবার তাফসিরের ভার্সিটিতে বাস্কেটবল ম্যাচ ছিলো। তাফসির সেখানে খেলছিলো। আর তখনও পর্যন্ত তাফসিরের কানে এতোসব কথা যায় নি। কেউ বা কারা শয়তানি করে তাফসিরের নামে আরও অনেক বাজে কথা লাগিয়েছিলো তোর বড় বাবার কাছে। তোর বড় বাবা রাগে এতোটাই হিতাহিতজ্ঞানশূন্য হয়ে পরেছিলো যে কোনো কিছু যাচাই না করে ওই প্লে জোনে লোকভর্তি মানুষের মধ্যে আমার ওই বড় ছেলেটা কে বেধরম মেরেছিলো। পিঠে কেটে কেটে দাগ হয়েছিলো। সেদিনই রাতে আমার ছেলে বাড়িতে এসে কারও সাথে কোনো কথা না বলে সেই মুহুর্তে তার নানা বাড়ি চলে যায়। যতোদিন না পাসপোর্ট ভিসা হয়েছে ততোদিন সেখানেই থেকেছে। আর আমার ভাই মানে তিশার আব্বুকে তো চিনিসই। সে তো কানাডায় থাকতো তখন তাই তাফসির তার কাছেই চলে গিয়েছিলো। আমি কম চেষ্টা করি নি তাকে ফিরিয়ে আনার। তবে সে কোনোমতেই আসবে না। তার এক কথা বাবা কেনো কিছু না জেনে বুঝে তার গায়ে হাত তুললো? লোকভর্তি মানুষের মধ্যে এমন অপদস্ত করলো কেনো তাকে? সে কি এখনো বাচ্চা যে এমন মারলো তাকে। তার মান সন্মান সব ধুলোয় মিশিয়ে দিলো। ”
” তাহলে এখন কার কাছে থাকছে?
” বাড়ি কিনেছে ও আর শাহিন। আমার ভাইজান তো বছর তিনেক আগেই চলে এসেছে বাংলাদেশে। ভাইজান অনেক করে বলেছিলো তার বাড়িতে থাকতে। কিন্তু তাফসির থাকে নি। ”
” উনি যখন কানাডায় ছিলো তখন পড়ালেখার খরচ দিতো কে? ”
” তাফসির নিজেই চালিয়েছে। পার্ট টাইম জব করতো পড়ালেখার পাশাপাশি। ভাইজান চেয়েছিলো ওর খরচ চালাতে কিন্তু ওর এক কথা ‘ না আমি নিজের খরচ নিজেই চালাবো। ‘ কিন্তু আমি জানতাম তোর বড় বাবা প্রতি মাসে আমার ভাইজানকে এমাউন্ট পাঠাতো। বিদেশে এতো বড় একটা ছেলের থাকা খাওয়া তো মুখের কথা না। তোর বাবা ও চাইতো না যে ছেলে অন্যের টাকায় চলুক। পরে ভাইজান বাংলাদেশে চলে আসতেই ও আর শাহিন মিলে বাড়িটা কিনলো। সে বছরের মাথায়ই ওর চাকরিটা হলো। বেশ উঁচু পদেই। টাকা ও মোটা অংকের। এখন তো আর কারো কাছ থেকেই টাকা নেয় না। ”
#চলবে