#আমার_পূর্ণতা
#রেদশী_ইসলাম
পর্বঃ ১৫
রাত প্রায় দেড়টা। হঠাৎ একটা অবয়ব প্রবেশ করলো প্রাচুর্যের ঘরে। ঘরের ড্রিম লাইট জালানো থাকলেও অবয়ব টা তা অফ করে দিতেই ঘরের মধ্যে ঘুটঘুটে অন্ধকার এসে হামলা করলো। যেহেতু বেলকনির দরজা বা জানালা বন্ধ তাই রোড লাইটের আলোর ও ভেতরে প্রবেশ করার চান্স নেই কোনো। তাই অবয়ব টা ধীর পায়ে গিয়ে প্রাচুর্যের মাথার সাইডে গিয়ে বিছানার পাশের মেঝেতে বসলো।
ঘুমের মধ্যে প্রাচুর্যের হঠাৎ অনুভব হলো তাকে গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে কেউ। সাথে একটু পরপর কপালে,গালে একের পর এক উষ্ণ ছোঁয়ায় ভরিয়ে দিচ্ছে। মুখে আছড়ে পরছে ঘনিষ্ঠ ব্যক্তির তপ্ত নিশ্বাস। প্রাচুর্য চোখ খুলে তাকাতে চাইলো কিন্তু একটু আগে ঘুমানোর দরুন এখন গভীর ঘুম তার। তাই চেষ্টা করার পরও অল্প একটু চোখ খুলেই তলিয়ে গেলো আবার অতল ঘুমে। যা দেখে সামনে থাকা ব্যক্তিটি হাসলো নিঃশব্দে ঠোঁট টিপে। সাথে আরও দু’একটা উষ্ণ পরশ দিয়ে বের হয়ে গেলো রুম থেকে।
.
.
.
.
সকালে প্রাচুর্য ঘুম থেকে উঠেই চিন্তায় অস্থির হয়ে গেলো। রাতে যা যা অনুভব করেছিলো তা এখনো তার কাছে কেমন জীবিত লাগছে। তবে বুঝতে পারছে না এটা স্বপ্ন ছিলো নাকি সত্যি? পরমুহূর্তেই দু’দিকে মাথা নারালো। মনে মনে বললো—
“না না এটা সত্যি কিভাবে হতে পারে। এটা সত্যি কখনো হবে না। এটা বরং সপ্ন ছিলো। হ্যাঁ হ্যাঁ সপ্নই ছিলো। কারন এটা সত্যি হবার কোনো চান্সই নেই। কিন্তু ড্রিম লাইট? ওটা কে অফ করলো? আমি তো রাতে জালিয়েই ঘুমায় ভয় লাগে বলে।”
আবার ভাবলেো—
” হয়তো মা সকালে এসে অফ করেছে। কারন মা তো প্রতিদিন সকালে এসে রুম থেকে ঘুরে যায়।”
এমন হাজার চিন্তা ভাবনার করতে করতে বিছানা ঠিক করতে লাগলো প্রাচুর্য। তার মধ্যে হাতে খাবারের প্লেট নিয়ে হাজির হলেন মিসেস শাহানা। প্রাচুর্যের দিকে তাকিয়ে বললেন—
” এখানে এক প্লেট ভাত মাখিয়ে চামচ সহ ঢাকনা দিয়ে রেখে গেলাম। ফ্রেশ হয়ে রেডি হবি আর এক এক চামচ ভাত মুখে পুরবি।”
” খাইয়ে দিলেই তো হয়ে যায় মা।”
” হ্যাঁ সেই। এখন আমার সব কাজ কাম ভুলে আপনাকে খাইয়ে দিতে বসি। তোর হাত নেই? এতো বড় হয়েছিস তাও হাতে তুলে খাওয়ায় দেওয়া লাগে। দু’দিন পর যাবি শশুড় বাড়ি তখন কে খাওয়ায় দেবে শুনি? শুনে রাখ এমন মায়ের মতো আর কেউ হবে না। তখন তুমি না খেয়ে থাকলেও কেউ এসে জিজ্ঞেস ও করবে না যে খেয়েছো কি-না। তাই এখন নিজের হাত দিয়ে খাওয়ারই অভ্যেস করো বুঝেছো?”
ওই শুরু হলো প্রতিদিনের সেম ডায়লগ। যা শুনতে শুনতে রীতিমতো মুখস্থ হয়ে গেছে প্রাচুর্যের তাই কোন লাইনের পর কোন লাইন বলে তার মা তা অনায়াসেই বলে দিতে পারে প্রাচুর্য। এই সেম ডায়লগ শুধু তার নয় বাড়ির প্রত্যেকটা সদস্যের ই মুখস্থ। এ নিয়ে তাকে কম ক্ষেপায় না রাদিয়া ও রিয়া। তখন প্রাচুর্যের মুখ ফুলিয়ে বসে থাকা ছাড়া আর কোনো উপায় হয় না। তাই এখন বাকি কথা গুলো থেকে বাঁচতে প্রাচুর্য দৌড়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো। ভেতর থেকে শুনতে পেলো তার মা চিল্লিয়ে বলছে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে আসার কথা। তিনি তাফসিরকে ডেকে দিচ্ছেন। এর পর আর কোনো কথা কানে আসলো না। তাতে প্রাচুর্য হাফ ছেড়ে বাচলো।
প্রাচুর্য রেডি হয়ে নিচে আসতেই দেখলো তাফসির সোফায় বসে বসে আপেল খাচ্ছে। প্রাচুর্য যেয়ে ডাক দিতেই উঠে দাড়ালো তারপর বিনা বাক্যে বাইরে যেয়ে গাড়ি বের করলেন। আমিও আর কোনো কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ গাড়িতে গিয়ে বসলাম। আজকে আর কোনো বাহানা করলাম না। কারন জানি করলেও লাভ হবে না। তাই যা বলছে তা মেনে নেওয়ায় শ্রেয় কারন এমনিও উনি আর বেশিদিন দেশে থাকবে না।
হঠাৎ আমার একদম নিকটে ওনাকে দেখতেই চমকে উঠলাম আমি। চোখ বড় বড় করে ওনার দিকে তাকাতেই উনিও আমার দিকে তাকালেন। পরমুহুর্তে চোখ সরিয়ে পাশ থেকে সিট বেল্ট নিয়ে লাগিয়ে দিলেন। উনি আমার এতো কাছাকাছি আসায় নিশ্বাস যেনো আটকে গেলো আমার। উনি সিট বেল্ট লাগিয়ে সরে বসতেই এতোক্ষণ ধরে আটকে রাখা নিশ্বাস ফোঁস করে ছাড়লাম। নাহলে আরেকটু হলে মরেই যেতাম।
দীর্ঘ রাস্তা পেরিয়ে কলেজ প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতেই দেখা হলো প্রিয়তির সঙ্গে। শুরু হলো তাদের সারাদিনের খোশ গল্প। প্রাচুর্য চট্টগ্রাম থেকে প্রিয়তির জন্য আনা কসমেটিকস, ঝিনুস এবং আচার ও চকলেট দিতেও ভুললো না। যা দেখে খুশিতে প্রিয়তি প্রাচুর্যকে জড়িয়ে ধরলো। প্রাচুর্য ও মুচকি হেসে জড়িয়ে ধরলো প্রিয়তিকে। সাথে সাথেই মুখের ভাবভঙ্গি পাল্টিয়ে ফেললো প্রিয়তি। প্রাচুর্যের দিকে তাকিয়ে গলায় দুঃখী দুঃখী ভাব এনে বললো—
” ইয়ার তোর ভাইটা কি সুন্দর রে। আজকেই প্রথম দেখলাম। এত্তো ড্যাশিং আর কিউট। দেখ না একটু ব্যবস্থা করে দিতে পারিস নাকি।”
” আরে আমার ভাই আবার আসলো কোথা থেকে? আমার জানা মতে আমি মা-বাবার একমাত্র সন্তান। তাহলে ভাই পেলি কোথায়?”
” ধুর তুই যে তোর বাপ-মার একমাত্র সন্তান তা আমিও জানি। আজকে তোকে কলেজে দিয়ে গেলো যে। মানে তোর চাচাতো ভাই আর কি। ”
” ওওও তাফসির ভাইয়ের কথা বলছিস? বেটা তো বহুত শয়তান। তুই ওর সাথে রিলেশন করলে পেইন ছাড়া কিছুই পাবি না।”
” এতো সুন্দর ছেলে পেইন দিলেও সেটা মিষ্টির মতো লাগবে রে। আর মেইন কথা সুন্দর ছেলেদের সাথে প্রেম করলে এমন একটু আধটু পেইন দেয়। এটা ব্যাপার না।”
” এমন ছ্যাচড়ামো করছিস কেনো? পৃথিবীতে আর কোনো ছেলে নেই নাকি?যে তোর ওনার সাথেই প্রেম করা লাগবে? দরকার পরলে আমি তোকে বেস্ট ছেলে খুজে এনে দেবো।”
” আরে আগে ওনাকে পটানোর চেষ্টা করি। যদি না পটে তাহলে এনে দিস সমস্যা নেই।”
” ভালো হবি না তুই?”
” তোর ভাইয়ের সাথে রিলেশন করিয়ে দে। ভালো হয়ে যাবো প্রমিস করছি।”
.
.
.
.
নদীর পাড়ে পাশাপাশি বসে আছে রিয়া ও আরফান। দুজনেই চুপচাপ। পেছনে বিস্তর এলাকা জুড়ে কাশফুলের সমাহার। আসার সময় ইতিমধ্যে আরফান কিছু কাশফুল ছিড়ে দিয়েছে রিয়াকে। এখন সেগুলোই হাতে নিয়ে দোলাচ্ছে রিয়া। আর মনে মনে গান গাচ্ছে —
যদি দেখার ইচ্ছে হয়
তোমার নিঠুর মনে রয়
কালিন্দীর ও ঘাটে আইসো দুপুরের সময়
এতোক্ষণ পাশে বসে ছোট ছোট ইট নিয়ে নদীতে ছুড়ছিলো আরফান। কিন্তু অনেক্ক্ষণ হয়ে যাওয়ার পরেও রিয়াকে কোনো কথা বলতে না দেখে মনে মনে একটু বিরক্ত হলো সে। নিরবতা ভঙ্গ করে বললো—
” আপনি বোধ হয় একটু কম কথা বলেন তাই না?”
” কম কথা বলি না তবে অচেনা ব্যক্তির সাথে কম কথা বলি”
আরফান হালকা হেঁসে বললো-
” আমাকে এখনো অচেনা মনে হয়?”
” না হওয়ার কি আছে? আমি আপনার সম্পর্কে কিছুই জানি না। হোয়াটসঅ্যাপে যতটুকু কথা হয় তাতে তো সব জানান ও নি।”
” বেশ। আমার নাম আরফান খন্দকার। আমার বাবা মোশাররফ খন্দকার। যিনি মৃত। বাড়িতে মা আর ছোট বোন আছে। বোন এবার দশম শ্রেণীতে পড়ে। মা গৃহিণী। আর আমি একটা ছোট খাটো চাকরি করি। তবে এপ্লাই করেছি কয়েকটা বড় কোম্পানী তে। আশা করি হয়ে যাবে। তবে এখন যা মাসে স্যালারী পাই তাতে আমাদের তিন জনের হয়ে যায়। আর কিছু জানতে চান মিস রিয়া?”
” উমমম না থাক। আপাতত এটুকুই যথেষ্ট। বাই দ্যা ওয়ে আপনার বাসা কোথায়? ”
” মোহাম্মদপুরে একটা ছোট্ট ফ্ল্যাটে থাকি।”
” ওহ আচ্ছা। ”
” এটা বোধহয় আমাদের দ্বিতীয় বার দেখা তাই না?”
” হ্যাঁ। আচ্ছা আমাদের ভার্সিটির সামনে কি করছিলেন আপনি? গার্লফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলেন নাকি?”
রিয়ার কথায় থতমত খেয়ে গেলো আরফান। সে কি করে বলবে যে গার্লফ্রেন্ড নয় তাকে দেখার জন্যই অফিস বাঙ্ক দিয়ে তার ভার্সিটির সামনে গিয়েছিলো। সে উত্তর খোঁজার চেষ্টা করলো। কিছু না পেয়ে আমতা আমতা করে বললো—
” আরে এমন কিছুই না। ওদিকে আমার ইম্পর্ট্যান্ট কাজ ছিলো একটা। আর তাছাড়া ও আমি পিওর সিংগেল ভাই।”
” আমাকে দেখে কি আপনার ভাই মনে হয়?”
” আরে সেটা তো কথার কথা পাগল।”
” আবার পাগল?”
” ধুর। আচ্ছা সরি। ভুল হয়েছে আমার। আর কিছুই বলবো না।”
আরফানের মুখের ভাবভঙ্গি দেখে রিয়া শব্দ করে হেসে উঠলো। যা দেখে আরফান ও মুচকি হাসলো।
.
.
.
.
রাত দশটা বেজে চল্লিশ মিনিট। প্রাচুর্য এখনো পড়ার টেবিলে। এই আইসিটি সাবজেক্ট টা তার শত্রু। নাইন,টেনে এই সাবজেক্ট টা কে এক কোনায় ফেলে রেখেছিলো সে তাই মনে হয় সাবজেক্ট টা তার উপর প্রতিশোধ নিতে ইন্টারে উঠে তার জীবন দুর্বিষহ করে দিচ্ছে। এর মধ্যে ফোনে মেসেজের টোন বেজে উঠতেই প্রাচুর্য পড়ার টেবিল থেকে উঠে ফোন হাতে নিতেই দেখলো প্রিয়তির ম্যাসেজ। প্রিয়তি বলছে—
” কিরে বলেছিস তাফসির ভাইকে?”
প্রাচুর্য ঝটপট হাতে মেসেজ টাইপ করে বললো—
” না বলি নি।”
” একটু বল না ভাই প্লিজ। একবার লটারি লেগে গেলে তুই যা চাবি তাই দেবো।”
” আমি বলতে পারবো না। প্রেম করার এতো ইচ্ছে থাকলে নিজে এসে বল। আমি এসবের মধ্যে নেই।”
” দোস্ত তুই না আমার বেস্টু? এমন বেইমানি করিস না রে। তোকে আমি অনেক অনেক চকলেট কিনে দেবো।”
” ফাউ পেচাইস না। বাই।”
” এই দাড়া দাড়া। তুই যাবি তো যাবিই। নাহলে কালকে কিন্তু তোর বাড়ি চলে আসবো। তখন দেখিস। তুই এক্ষুনি যেয়ে বলবি আমি কিছু জানি না।”
প্রিয়তির লাস্ট মেসেজ সিন করে প্রাচুর্য কিছু বললো না। ওদিকে প্রিয়তি একের পর এক মেসেজ দিয়েই যাচ্ছে। কিন্তু তবুও প্রাচুর্য কিছু না বলে গায়ে ওড়না জড়িয়ে রুম থেকে বের হলো। তারপর হেটে তাফসিরের রুমের দরজার সামনে এসে থামলো। বুক ভরে শ্বাস নিয়ে সাহস সঞ্চয় করলো। তার মনে হচ্ছে আজ সে বেঁচে ফিরতে পারবে না। তবুও যদি ফেরে তবে সেটা নিঃসন্দেহে আল্লাহর রহমত।
প্রাচুর্য তাফসিরের রুমের দরজায় নক করলো। চার পাঁচবার নক করার পরও দরজা খুললো না তাফসির। প্রাচুর্য ভাবলো তাফসির হয়তো ঘরে নেই। কিন্তু সে তো কিছুক্ষণ আগে শুনেছে তাফসিরের রুমে প্রবেশের শব্দ।
প্রাচুর্য বরাবরের মতো দরজার হাতল ঘুড়িয়ে ভেতরে মাথা ঢুকিয়ে তাফসিরের ঘর পর্যবেক্ষণ করলো। তখন ওয়াশরুম থেকে পানির আওয়াজ পেতেই বুঝলো তাফসির শাওয়ার নিচ্ছে। প্রাচুর্য একবার ভাবলো চলে আসবে কিন্তু পরমুহূর্তেই সিদ্ধান্ত পাল্টে রুমের ভেতরে ঢুকলো। সোফায় বসে পুরো রুমে চোখ বুলালো সে। এই রুমটা তার বেশ ভালোই লাগে। কি সুন্দর ছিমছাম গোছানো। হোয়াইট এবং হালকা কফি কালারের সংমিশ্রণে তৈরি সব কিছু। সব সময় একটা হালকা হলদেটে আলোর বাতি জ্বলে যাতে রুমটা কে আরও সুন্দর লাগে। আর সেদিক দিয়ে বলতে গেলে তার রুমটা পুরোটাই উল্টো। তার রুমের আসবাবপত্র থেকে শুরু করে দেয়ালের রং সবকিছুই পিংক এবং বেগুনির সংমিশ্রণে তৈরি। তবে তার রুম টাও খারাপ লাগে না।
এর মধ্যেই খট করে ওয়াশরুমের দরজা খোলার শব্দ হলো। প্রাচুর্য সেদিকে তাকিয়ে দেখলো তাফসির বের হচ্ছে ওয়াশরুম থেকে। পরনে শুধুমাত্র একটা ট্রাউজার গায়ে গেঞ্জি বা শার্ট কিছুই নেই। তাফসির তোয়ালে দিয়ে মাথা মুচছে। অন্যদিকে নিজের রুমে হঠাৎ প্রাচুর্যকে দেখে চমকে উঠলো তাফসির। পরমুহূর্তে নিজেকে সামলে ভ্রু কুঁচকে প্রাচুর্যকে জিজ্ঞেস করলো—
” হঠাৎ আমার ঘরে কি মনে করে ম্যাডাম?”
তাফসিরকে এ অবস্থায় দেখে লজ্জায় পরে গেলো প্রাচুর্য। সে কি বলতে এসেছিলো বেমালুম ভুলে গেলো তা। এদিক ওদিক তাকিয়ে আমতাআমতা করতে করতে বললো—
” কিক.কিছু না তাফসির ভাই। ”
” কিছু না যখন তখন আমার রুমে কি?”
” ইয়ে না মানে একটা কথা বলতে এসেছিলাম। ”
প্রাচুর্য গায়ে টিশার্ট পরতে পরতে জিজ্ঞেস করলো—
” কি কথা? ”
” কিছু না তাফসির ভাই। ভুলে গিয়েছি। পরে মনে পরলে বলবো কেমন? এখন আমি আসি।”__বলে কেটে পরতে চাইলো প্রাচুর্য। সেই মুহুর্তে তাফসির বলে উঠলো—
” এই দাড়া দাড়া। একদম মিথ্যা বলবি না। কি বলতে এসেছিস বলে তারপরেই যাবি।”
” ভুলে গেছি বিশ্বাস করুন।”
” এক থাপ্পড় দিলে সব মনে পরবে।”
তাফসিরের কথা শুনে প্রাচুর্য করুন গলায় বললো—
” যা বলতে এসেছি তা শুনলে আপনি আমাকে আস্ত রাখবেন না তাফসির ভাই।”
” তা নাহয় বুঝলাম কিন্তু তোর প্রতি লাইনে লাইনে এমন তাফসির ভাই তাফসির ভাই করা লাগবে কেনো?”
#চলবে
#আমার_পূর্ণতা
#রেদশী_ইসলাম
পর্বঃ ১৬
বাইরে তুমুল বৃষ্টি হচ্ছে। যাকে বলে রাস্তা-ঘাট ডুবিয়ে দেওয়া বৃষ্টি। এ বৃষ্টির মধ্যে সাধারণত কেউই ঘুম থেকে উঠতে চাই না। আর প্রাচুর্যের কথা আসলে তো আরও না। কারন সে অলস। এইযে সকাল বেলা তার মা তাকে নাহলেও সাত থেকে আট বার ডেকে গিয়েছে কলেজে যাওয়ার জন্য কিন্তু না তার এক কথা সে এই বৃষ্টির মধ্যে কিছুতেই কলেজে যাবে না। তার কথা শুনে মিসেস শাহানা বললো বাড়ির গাড়িতে যাবে আসবে তাতে বৃষ্টি হলেও কি বা নাহলেও কি। কিন্তু প্রাচুর্য তা শুনলে তো। সে আজকে যাবে না তো যাবেই না। শেষে মিসেস শাহানা হাল ছেড়ে বকবক করতে করতে চলে গেলেন। এখন প্রাচুর্য শান্তিতে ঘুমাচ্ছে।
কিন্তু তার সাধের এতো শান্তির ঘুম বোধহয় সহ্য হলো না প্রিয়তির। প্রাচুর্য কলেজে না গেলে কি হবে প্রিয়তি সেই সকাল সকাল বৃষ্টি মাথায় ভিজে পুরে হাজির হলো চৌধুরী বাড়ির দোরগোড়ায়। তার এ বাড়িতে আসা এই প্রথম নয়। আগেও এসেছে বহুবার। তাই এ বাড়ির কাউকে চিনতে ভুল হলো না তার। বা তাকেও চিনতে কারো ভুল হয়নি এ বাড়ির। এমন কাক ভেজা অবস্থায় প্রিয়তিকে দেখতেই আঁতকে উঠলেন মিসেস ফারাহ। একটা তোয়ালে নিয়ে তাড়াতাড়ি এসে 🫢প্রিয়তির মাথা মুছে দিতে দিতে বললেন—
” একি এমন অবস্থা কিভাবে হলো তোমার মা?”
” আর বলবেন না আন্টি। প্রাচুর্য আজকে কলেজে আসে নি বলে আমার ও আর ক্লাস করতে মন চাইলো না। ইচ্ছা হলো আপনাদের বাড়ি থেকে ঘুরে আসি একটু। অনেকদিন তো আসা হয় না। তাই একটা রিকশা ডেকে উঠে পরলাম। কিন্তু বাইরে এতো পরিমান বৃষ্টির তান্ডব চলছে যে রিকশায় উঠেও লাভ কিছু হলো না সেই ভিজে চুপচুপে হয়ে গেলাম।”
এক নিশ্বাসে কথা গুলো বলে দম নিলো প্রিয়তি। মিসেস ফারাহ প্রিয়তির কথা শুনে হেঁসে বললেন—
” তা বেশ করেছো। এমন তো একটু মাঝে মাঝে আসতে পারো তাহলে তোমার ও ভালো লাগে আর আমাদের ও।”
প্রিয়তি মনে মনে ভাবলো—আসতে তো আমার ও ইচ্ছা করে আন্টি। কিন্তু আপনাদের বাড়ির মেয়েই তো আনতে চাই না। নাহলে মন ভরে একটু আপনার ছেলেটা কে দেখতাম। কি সুন্দর আপনার ছেলেটা।
কিন্তু মুখে বললো— “আসলে আন্টি সময় হয় না তো। জানেই তো সকাল থেকে কলেজ তারপর আবার ব্যাচ। সব মিলিয়ে প্রেসার যায় একটু। তবে আমি চেষ্টা করবো আসার।”
” থাক অনেক কথা হয়েছে এবার প্রাচুর্যের ঘরে যেয়ে ঝটপট কাপড় পাল্টিয়ে আসো তো। নাহলে একটু পরেই ঠান্ডা লেগে যাবে। তারপর এসে যতো খুশি ততো কথা হবে। এখন তাড়াতাড়ি যাও। আমি সবার জন্য নাস্তার ব্যবস্থা করছি।”
” ঠিক আছে আন্টি”
.
.
প্রিয়তি প্রাচুর্যের ঘরে এসে দেখলো প্রাচুর্য কাঁথা মুড়ি দিয়ে ঘুমাচ্ছে। তা দেখে প্রিয়তি প্রাচুর্যের গায়ের থেকে কাঁথা টান দিয়ে ফেলে দিলো। তাতে প্রাচুর্যের চোখের উপর আলো এসে পরতেই চোখেমুখে বিরক্তি নিয়ে পিটপিট করে চোখ খুলে তাকালো। প্রিয়তিকে কোমরে হাত দিয়ে দাড়িয়ে থাকতে দেখে কপাল কুচকে বললো—
“তুই?”
“জ্বী আমি। আমার ঘুম হারাম করে এখন আপনি আরামসে ঘুমাচ্ছেন? ”
” শাঁকচুন্নি তা বলে তুই আমার ঘুম ভাঙাবি?”
” ওরে আসছে আমার মহারানী। এখন ওঠ তাড়াতাড়ি। আমাকে জামা দে একটা। ফ্রেশ হবো।”
” তা এমন ভেজা পুরা হয়ে কোথা থেকে উদয় হলি?”
” আসতে আসতে ভিজে গেছি। এখন জামা দে তো।”
প্রাচুর্য উঠে তার ওয়ারড্রব থেকে একটা নতুন থ্রি-পিস বের করে দিয়ে বললো—
” যা ওয়াশরুম থেকে থেকে চেঞ্জ করে আয়। আমি ততোক্ষণে বিছানা ঠিক করছি।”
প্রাচুর্য বিছানা ঠিক করতে করতে রুমে আসলেন মিসেস ফারাহ। প্রাচুর্যকে বিছানা ঠিক করতে দেখে মিষ্টি হেসে বললেন —
” আমার ছোট মেয়েটা বিছানা ঠিক করছে বুঝি? দেখি সর বাকিটুক আমি করছি।”
প্রাচুর্য মিসেস ফারাহ কে জড়িয়ে ধরে বললো—
” আর লাগবে না বড় মা। আমি পারবো তো। তোমার এই ছোট মেয়ে এখন বড় হয়ে গেছে।”
” হ্যাঁ তাই তো। এখন বিয়ে টা দিয়ে দি তাহলে?”
” আরে না বিয়ে করার মতো অত বড় হয়নি।”
মিসেস ফারাহ ও প্রাচুর্যের কথার মধ্যে ওয়াশরুম থেকে বের প্রিয়তি। প্রিয়তিকে দেখতেই মিসেস ফারাহর মনে পরলো এই রুমে আসার কারন। তিনি তৎক্ষণাৎ বললেন—
” দেখেছিস তোর সাথে কথা বলতে বলতে ভুলেই গেলাম যে এই রুমে কেনো এসেছি। প্রাচুর্য যা তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নিচে আয়। একসাথে খেতে বসবি সবাই।”
” বড় মা তুমি প্রিয়তি কে নিয়ে যাও। আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি। ততোক্ষণ ও তোমার সাথে গল্প করুক।”
প্রাচুর্যের কথায় মিসেস ফারাহ প্রিয়তিকে নিয়ে চলে গেলেন।
এ বাড়িতে এমনি তিন বেলায় সকলে একসাথে খায় শুধু প্রাচুর্য ছাড়া। কারন প্রাচুর্যের সক্কাল সক্কাল কলেজ থাকে। তাই সবাই এক সাথে খেলেও সে পারে না। তবে বন্ধের দিন সে সকলের সাথে খাওয়া মিস করে না। আজ যেহেতু বন্ধ তাই সে সকলের সাথে একসাথেই খাবে।
প্রাচুর্য ওয়াশরুম থেকে মুখ মুছতে মুছতে বের হলো। ভেজা তোয়ালে চেয়ারের উপর মেলে দিয়ে ওড়না জড়িয়ে বের হলো রুম থেকে। সে মুহুর্তে বের হলো তাফসির ও। প্রাচুর্য ঘাড় ঘুরিয়ে তাফসিরের দিকে তাকিয়েই থমকে গেলো। হার্টবিট মিস হলো বোধহয় তার। কি সুন্দর লাগছে আজ তাকে। বোধহয় কিছুক্ষণ আগেই ঘুম থেকে উঠেছে কারন চোখ দুটো এখনো হালকা ফোলা। মাথার চুল গুলো এলোমেলো। কিছুটা কপালে এসেও পরেছে। পরনে তার গোল গলার ব্লাক টিশার্ট।
প্রাচুর্যকে তার দিকে এমন তাকিয়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুঁচকালো তাফসির। এগিয়ে এসে প্রাচুর্যের মুখের উপর ফু দিতেই ধ্যান ভাঙলো প্রাচুর্যের। তা দেখে তাফসির মিটমিট করে হেঁসে প্রাচুর্যকে বললো—
” ম্যাডাম দেখা কি শেষ হয়েছে নাকি আরও দেখবেন?”
তাফসিরের কথায় লজ্জায় পরে গেলো প্রাচুর্য। বুঝতে পারলো নিজের ভুল। মনে মনে নিজেকে গালি ও দিলো এভাবে হাবলার মতো তাকিয়ে থাকার জন্য। আমতাআমতা করে বললো—
” ন.না মানে কিছু দেখছিলাম না তাফসির ভাই।”
” সত্যি? কিন্তু আমি তো দেখলাম আমাকে দেখছিস।”
” আপনার চোখে সমস্যা। ডাক্তার দেখান। সবসময় উল্টা পাল্টা দেখেন। আমি যায় আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে।”
” এই শোন ”
” জ্বি বলুন”
” বাসায় এসেছে? গলা শুনলাম। ”
” আমার বান্ধুবী প্রিয়তি এসেছে।”
তাফসির চিন্তিত ভঙ্গিতে বললেন—
” সানজিদা প্রিয়তি?”
তাফসিরের কথায় প্রাচুর্য অবাক হয়ে বললো—
” আপনি কি করে জানলেন ওর পুরো নাম।”
তাফসির মুহুর্তেই মুখটাকে গম্ভীর করে বললো—
” ডিস্টার্ব করছে কালকে রাত থেকে ননস্টপ। আমার ইন্সটাগ্রাম, ফেসবুক কোথাও বাদ রাখেনি মেসেজ দিতে।”
প্রিয়তি এমন ছ্যাচড়ামো করেছে শুনে রাগ হলো প্রাচুর্যের। সে কিছু বলতে যাবে তার আগে তাফসির থমথমে গম্ভীর কন্ঠে বললো—
” ওকে বলে দিস যেনো আমাকে আর বিরক্ত না করে। নাহলে ব্যাপারটা ভালো হবে না। সাবধান করে দিস।”
” আর করবে না তাফসির ভাই। নিশ্চিন্ত থাকুন।”
” বেশ। নিচে চল।”
খাবার টেবিলে সবাই প্রিয়তির সঙ্গে নানা রকম কথা বললেও বললো না প্রাচুর্য ও তাফসির। পাশ থেকে প্রিয়তি তাফসিরকে নিয়ে হাজারটা কথা বললেও কোনো প্রতি উত্তর করলো না সে। চুপচাপ খাওয়া শেষ করে রুমে আসলো।
প্রিয়তি প্রাচুর্যের রুমে আসতেই প্রাচুর্যের দিকে তাকিয়ে বললো—
” কিরে কালকে যে কাজটা দিয়েছিলাম করেছিস?”
” না ”
” কেনো? ”
” বড় মা চলে এসেছিলো ”
” পরে বলতি ”
” আমাকে কি তোর চাকর মনে হয়? আর কি বলেছিস তুই তাফসির ভাইকে?”
” আমি আবার কি বললাম?”
” তুই মেসেজ দিস নি ওনাকে?”
” ও হ্যাঁ দিয়েছিলাম। সিন করে রেখে দিয়েছে কোনো রিপ্লাই দেয় নি। কি এটিটিউড ভাবা যায়!! আই লাইক ইট। আচ্ছা এক মিনিট এক মিনিট তুই কি করে জানলি?”
” জানা টা কি খুব কঠিন মনে হয়? তার আগে বল তুই এমন কেনো করলি? জানিস ওনার সামনে কতোটা ছোট হয়েছি আমি?”
” সব তোর জন্য। ”
” আমার জন্য?? ”
” হ্যাঁ। তুই যদি কালকে রাতে মেসেজ সিন করতি বা আমাকে সব জানাতি তাহলে তো আর আমি কিছু করতাম না। আর মেইন কথা কি জানিস? আমি জানতাম তোর দ্বারা এসব সম্ভব না তাই যা বলার আমিই বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু অগত্যা এটিটিউড বয় তো মেসেজ ই সিন করেন না। দেখলি না আজকে খওয়ার টেবিলেও তাকালো পর্যন্ত না। মনে হচ্ছিলো সে ছাড়া আর কেউ উপস্থিত নেই।”
” শোন তোকে ভালো কথা বলছি। এসব বাদ দে। উনি রিলেশন করবে না তোর সাথে। তার থেকে ভালো এমন কোনো কাজ করিস না যাতে আমি বা তুই ছোট হই।”
” তুই এমন কথা বলতে পারলি? বেশ চলে যাচ্ছি তোর বাড়ি থেকে। বেস্ট ফ্রেন্ড হয়ে বেইমানি করলি।”
” আরে শোন না। এখানে বেইমানির কি করলাম? ভুল বুঝিস না আমাকে”
#চলবে