আমার তুমি পর্ব-২৩

0
1699

#আমার_তুমি
#লেখিকাঃনওশিন_আদ্রিতা
#পার্টঃ২৩
,
,
,
,
,
নওশিনঃখালাতো জামাই ছেড়ে দিন পিচ্চু দেখছে তো(কাদো কাদো গলায়)
আকাশঃহোয়াট খালাতো জামাই কি (ভ্রু কুচকে রাগী গলায়)
নওশিনঃআপনি আমার খালামনি মানে আমার মামনির ছেলে সে দিক থেকে আপনি আমার খালাতো ভাই কিন্তু ওপরদিকে আপনি আমার বিয়ে কর তাই দুইটা মিলিয়ে খালাতো জামাই।
(মেকি হাসির চেষ্টা করে)
আকাশঃথাপ্পড়ায়ে সব দাত ফেলে দিবো এইসব উদ্ভট চিন্তা বাদ না দিলে।
নওশিনঃবকেন কেনো আমি তো ভালো কথাই বললাম একটুও কদর নাই(ভেংচি দিয়ে)
আকাশঃএহ উদ্ভট কথার কদর দি বলছি পাবনাতে কি যাবেন নাকি মুখের উপর হাত দিবেন
নওশিনঃএএএ পচা আমাকে একটুও ভালোবাসেনা। থাকা বাবু কাদিস না বাবাই আমাদের ভালোবাসেনা তো কি হয়েছে মাম্মাম ভালোবাসে হু লাগবে না আর কাউকে(অভিমানী কন্ঠে)

আকাশ স্পষ্ট বুঝতে পারছে নওশিন ফুপাচ্ছে চোখে তার পানি টলমল করছে।কিন্তু আকাশ আকাশ বুঝতে পারেনা নওশিন এতো ছোট বিষয় নিয়ে কান্না করছে কেনো।। আকাশ নিজেকে শান্ত করে।

আকাশঃসুইটহার্ট চলো ঘুরে আসি
নওশিনঃনাহ যাবোনা আমি
আকাশঃএই অভিমানী যাবি নাকি কোলে তুলে নিতে হবে
নওশিনঃনাহ আমি যাবোনা কারো সাথে
আকাশঃবুঝলাম ম্যাডাম এখন কোলে উঠতে ইচ্ছুক(বলেই নওশিনকে কোলে তুলে নিলো)

আকাশ এর এমন কান্ডে নওশিন রিয়েক্ট করেনা চুপচাপ আকাশের কোলে বসে থাকে এমন কি আকাশকে ধরেও না। আকাশ সেটা দেখে হেসে হাতের বাধন টা হালকা করে। যার কারনে নওশিন পরে যেতে নেয় কিন্তু তবুও সে আকাশ কে ধরেনা।আকাশ অবাক হয়। কিন্তু ভালোলাগার এক অদ্ভুত বাতাস এসে ছেয়ে যায় আকাশ কে।

আকাশঃকবে তোমার এতোটা বিশ্বাস অর্জন করে নিলাম মায়াবতী কবে তোমার মন জুড়ে এতোটা নিজের আধিপত্য বিস্তার করে ফেললাম।
(মনে মনে নওশিনের দিকে তাকায়ে মুচকি একটা হাসি দেয়)

আকাশের ঠোঁটের কোণায় লেগে থাকা চমৎকার হাসির কারন বুঝতে বাকি রইলোনা নওশিনের

নওশিনঃজানি আমার সাইকোটা এখন কি ভাবছেন।কেনো আপনাকে ধরি নি এটাই তো। আমি জানি আমাকে নিজের চাইতেও বেশি আমাকে ভালোবাসেন আপনি আর তারচেয়ে বেশি ভালোবাসেন আমাদের পিচ্চু টাকে। আর আমরা দুইজন একদম সেফ আছি আপনার বাহু বন্ধনে। (আকাশের গলা জরায় ধরে তার বুকে নিজের মাথা এলিয়ে দেয়)

আকাশ এর বুক টা যেনো শিতল হয়ে গেলো এতো কেনো শান্তি পাওয়া যায় প্রিয়সির মাথা বুকে থাকলে হাতের ভাজে প্রিয়সীর হাত থাকলে।আকাশ এর উওর পেতে ব্যার্থ।

দুইজনে এসে থামে হস্পিটালের সামনের মাঠে।আকাশ নওশিনকে একটা ব্রেঞ্চিতে বসায়ে কাকে যেনো কল করে। আকাশ ফোনে কথা শেষ করে ব্রেঞ্চিতে বসতেই নওশিন নিজের মাথা আকাশের কাধে এলিয়ে দেয়

আকাশঃসুইটহার্ট
নওশিনঃহুম(আসতে করে)
আকাশঃজানতে চাও না সেদিন রাতে কেন চলে গেছিলাম আর ওতো গুলো মাস কই ছিলাম (নওশিনের হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে)
নওশিনঃউহু নাহ। আমাকে ছেড়ে গেছেন তার মানে কারণ টা হয়তো অনেক বড়ই ছিলো
আকাশঃযাওয়ার কারণ বেশি ছিলোনা কিন্তু না আসার কারণ টা ছিলো হয়তো বড় ছিলো।
নওশিনঃআমি জানি তো আমার সাইকোটা বিনা কারণে আমার থেকে দূরে থাকবেই না সে তো পারবেই না নাহলে ৪ তালা ব্লিডিং এর মতো উচু আমার ব্যাল্কনিতে লোক ভেংগে আমার মামার টাইট সিকিউরিটি ভেংগে বউ এর সাথে দেখা করতে কে আসতে পারে(হেসে দিয়ে)
আকাশঃসেদিন তোমার চোখের পানি আমার সহ্য হচ্ছিলোনা। কোথাও না কোথাও তোমার চোখের পানির কারন টা আমি ছিলাম তাই নিজের মুখ লুকাতে তোমার কাছ থেকে চলে গেছিলাম। কিন্তু হঠাৎ একটা গাড়ির ব্রেক ফেল হয়ে যায় সাথে সাথে কোথায় থেকে একটা ট্রাক এসে বারি মারে গাড়িকে। ৩ মাস পরে জ্ঞান ফিরে তখনি আসতে চেয়েছিলাম কিন্তু আমার অবস্থা এতোটা খারাপ ছিলো যে আমার দ্বারা উঠা অব্দি সম্ভব ছিলোনা।

নওশিনঃসব আমার জন্য হচ্ছে তাইনা । আমার জন্যেই সব সমস্যা।
আকাশঃউহু কিছু তোমার জন্য হচ্ছেনা। এইসব যা হচ্ছে সম্পত্তির জন্য।তোমার দাদু সম্পত্তির ভাগ করেছে সে ভাগ অনুসারে সম্পত্তির ৩০ পার্সেন্ট তুমি পাবা আর বাকি সম্পত্তি ১৫ % করে বাকি নাতি নাতনিদের দেওয়া হয়েছে। যেটা পরিবারে কোন দুই সদ্যসের পছন্দ হয়নি যার জন্য এতোসব কিছু।

নওশিনঃযদি এটা কারন হয় আমার কিছু চায়না সত্যি বলছি আমার একটা টাকাও চায়না একটা শান্তি পূর্ণ জীবন চায় যেখানে আমাদের ছোট একটা বাড়ি হবে সে বাড়িতে আমার পিচ্চুটা খিলখিল করে হেসে বেরাবে খেলে বেরাবে দৌড়াবে আর আমরা সেটা দেখে প্রশান্তি অনুভব করবো ব্যাস আর কিছু চায়না আমার প্লিজ। আপনি না বলেছিলেন আমি যা চাইবো তাই আমাকে দিবেন আমি এইসব থেকে দূর যেতে চায়।আপনার সাথে শান্তিতে থাকতে চায় (আকাশের শার্টের কলার চেপে ধরে কেদে দেয়)

আকাশ দুই হাত দিয়ে আগলে নেয় নওশিনের কপালে ছোট একটা কিস করে। মনে মনে বলে উঠে

-চিন্তা করোনা মায়াবতী তোমাকে নিয়ে খুব দূরে চলে যাবো আমি এমনিতেও এই সম্পত্তির কিছুই তোমাকে নিত্র দিতাম না কারন তোমার জামাইয়ের কম নাই যে তোমাকে অন্য কারো নিতে হবে।কিন্তু আমি সে দুইটা মানুষ কে খুজে বের করবোই যে আমার পরিবারের ক্ষতি চায় কারন বিষয়টা তোমার না ক্ষতি শুধু তোমার চায়না এই লিস্টে আরও নাম আছে আরিয়ান ঈশান আহান আরু আমি তুমি আহান কে তো দূর করেই দিয়েছে। আমাকেও মেরেই ফেলেছিলো কিন্তু তোমার দোয়া আর আল্লাহ র ইচ্ছায় এখনো মায়াবতীকে নিজের বাহু বন্ধণে আবদ্ধ করে রেখেছি।।।

_________

ঈশান এক মনে সিগারেট এ টান দিচ্ছিলো হঠাৎ ঠোঁটের ভাজ থেকে সিগারেট টা টান মেরে সরায় দেওয়াই ঈশানের ভ্রু কুচকে যায়।পাশে তাকায় দেখে রামিসা মাথা নিচু করে সিগারেট টাকে পা দিয়ে পিষে ফেলছে।কেন জেনো রাগ হয়না বরং হাওয়াতে উড়ন্ত রামিসার চুল গুলোর উপর আলাদা নেশা কাজ করা শুরু করে দেয়।ঈশান নিজেকে দমিয়ে ফেলে মুখ টা অন্যদিকে ফিরিয়ে নেয়।

রামিসাঃভাবি এখন ঠিক আছে পরশুর মধ্যে ডিসচার্জ দিয়ে দিবে তাকে।ভাই আছে আরিয়ান ভাইয়া আর আরুশিও বাসায় ফিরে এসে খেয়ে নিয়েছে।চিন্তা করতে মানা করে দিয়েছে।এবার নেন খেয়ে নেন।

ঈশানঃখিদা নেয় আমার
রামিসাঃজিজ্ঞেস করি নাই আমি খেয়ে নিতে বলেছি
ঈশানঃএই পিচ্চি আমার হাটু অব্দি বয়স নিয়ে এসেছিস আমাকে হুকুম দিতে।
রামিসাঃবুড়ারা যদি নিজের খেয়াল না রেখে বেপরোয়া ভাবে চলা ফেরা করে তাহলে তো হাটুর বয়সি মেয়ে হুকুম দিবেই (আকাশের দিকে তাকায়ে)
ঈশানঃবড্ড কথা বলিস
রামিসাঃআর শুনতে হবেনা আমার কথা আজকেই শেষ শুনে নেন
ঈশানঃমানে
রামিসাঃমাম্মাম ফোন দিয়েছিলো লন্ডনে ফিরে যেতে হবে।
ঈশানঃওহ তো এটা এমন কি যেয়ে দেখা করে চলে আসবি
রামিসাঃএকে বারের জন্য যেতে হবে আর হয়তো কোন দিন বাংলাদেশে আসা হবেনা। (কথা গুলো বলতে যেয়ে গলা টা ধরে আসছিলো। যেনো কেউ গলা টিপে ধরেছে।চোখ বেয়ে এক ফোটা পানি বেরুতেই সেটা মুছে ফেলে)

ঈশান কি বলবে ভেবে পায়না। রামিসা সেটা দেখে তাচ্ছিল্যের হাসি দেয়। প্লেট টা রেখে আসতে নিলে তার মনে পিরে যায় ঈশানের হাতে ব্যান্ডেজ আর চামচ দিয়ে খেতে পারেনা সে

ঈশান এর বুক্লটা ভারি হয়ে আসছিলো। কেন যেনো বুকের বা পাশ টা খালি খালি মনে হচ্ছিলো তার।ঈশান উঠে যেতে নিলে তার সামনে ভাতের লোকমা দেখে মাথা ঘুরায়।ঈশান তাকায় দেখে রামিসা ভাত মাখায়ে তার মুখের সামনে ধরেছে চোখ দুইটা নিচে করে রেখেছে।ঈশান লোকমা টা মুখ পুরে নেয়। যার কারণে ঈশানের ঠোঁট যেয়ে ঠেকে রামিসার আঙুলে।

রামিসা কেপে উঠে।সারা শরীরে শিহরণ বয়ে যাচ্ছে৷ঈশান রামিসার থুতনি উপরে তুলতেই রামিসার চোখ জোড়া থেকে পানি বেরিয়ে আসে।ঈশানের সহ্য হয়না। রামিসা দ্রুত মাথা নামিয়ে ঈশান কে পুনরায় খাওয়াতে নিলে ঈশান হাত টা রামিসার মুখের সামনে ধরে।রামিসা ভ্রু কুচকে তাকায়

ঈশানঃআমাকে খাওয়ালে হবে নিজেও খা। খালি অন্যের যত্ন নিলে হবেনা আগে নিজের যত্ন নে নাহলে আমার যত্ন নিবি কিভাবে শুনি

ঈশানের এমন ভাবে কথা বলায় রামিসার চেয়ে অবাক বেশি ঈশান হয়। সে এই ভাবে কথা বললো ভাবা যায়।৷

চলবে!

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে