আমার তুমি পর্ব-২২

0
1671

#আমার_তুমি
#লেখিকা_নওশিন_আদ্রিতা
#পার্টঃ২২
,
,
,
,
,
নওশিন ভয়ে নিজের আশেপাশে কাউকে আসতে দিচ্ছেনা আকাশ আকাশ করছে। হুট করে একটা ট্রে ছুড়ে মারে আর সেটা যেয়ে লাগে আকাশের মাথায়।নওশিন বিচলিত হয়ে যায় ছুটে আসে আকাশের কাছে।।।আকাশের বুকে মাথা রেখে কেদে উঠে চিৎকার করে। আকাশের বুকটা ভারি হয়ে আসে। নওশিন কে ধরার মতো সাহস হয়না তার।

নওশিনঃকোথায় ছিলেন আপনি হ্যা। ওই ওই বাজে লোকটা আমার আমার হাত ধরেছিলো আমার কাছে এসেছিলো আমাকে অপবিত্র করতে চেয়েছিলো। (হাউমাউ করে কান্না করতে শুরু করে)

আকাশঃহুস হুস আমি থাকতে আমার মায়াবতীর দিকে হাত বারানো সহজ না সে তোমার কিছুটি করতে পারবেনা লক্ষি আমি আছিনা (মাথায় ধীরে ধীরে হাত বুলাতে শুরু করে)

নওশিনঃনাহ নাহ সে আবার আসবে আনার আসবে সে ৬ বছর আগের মতো সে আবার

আকাশঃচুপ একদম চুপ। সে এখন পাগল কুকুরের খাবার হচ্ছে।

আকাশের কথায় নওশিন কেপে উঠে।নওশিন প্রশ্নবোধক দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আকাশের দিকে।আকাশ সে দৃষ্টি সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে নওশিন কে নিয়ে অন্য কেবিনে যায় আর ওয়ার্ড বয় দের বলে দেয় রুম টা ক্লিন করতে।
আকাশ নওশিন কে নিয়ে অন্য রুমে নিয়ে যেয়ে তাকে শান্ত করে বেডে বসায়ে দেয়। তারপরে অনেক কষ্টে সুপ খাওয়ায়ে ঘুম পারায় দেয়। এর মাঝেই একজন নার্স এসে জানায় ডাক্তার তাকে ডাকছেন।আকাশ নওশিনের কপালে কিস করে উঠতে নিলে তার হাত বাধা পরে পিছনে তাকায়ে দেখে নওশিন আকাশের হাত নিজের হাতে মুঠো করে রেখেছে।আকাশ ধীরে নিজের হাত টা ছুটায় আনে।নওশিনের হাতের উলটো পিঠে নিজের ঠোঁট জোড়া স্পর্শ করে বেরিয়ে আসে।।।

আকাশঃআসবো
ডাক্তারঃইয়েস মিস্টার চৌধুরী প্লিজ কাম
আকাশঃআপনি আমাকে ডাকলেন এনি প্রবলেম আসলে নওশিন একা ভয় পাচ্ছে আপনি তো ওর কান্ডিশান বুঝতেই পারছেন(বিচলিত কন্ঠে)
ডাক্তারঃরিলেক্স মিস্টার চৌধুরী। মিসেস চৌধুরী মেন্টালি একটু ডিস্টার্ব এজন্য এরকুম করছে কিন্তু (এই টুকু বলে দম নেন ডাক্তার)
আকাশঃকি হলো কোন সমস্যা আপনি হঠাৎ থেমে গেলেন কেনো(অস্থির হয়ে)
ডাক্তারঃমিস্টার চৌধুরী আপনি নওশিনের ম্যাডিকেল হিস্ট্রি সম্পর্কে অবগত ছোট বেলা ১২ বছর বয়সে মেন্টালি একটা ট্রোমা প্লাস মাথায় গুরুত্ব আঘাত পেয়েছিলেন যার কারনে উনার মস্তিষ্কের অনেক গুলো নিউরোন কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছিলো যার মধ্যে কিছু কিছু কাজ করা শুরু করে দিয়েছে যার কারণে ওর সৃতিশক্তি ফিরে এসেছে কিন্তু সেটা হয়তো খানিক সময় এর জন্য। আর একটা আঘাত শুধু নওশিনের ব্রেড ডেমেজ করবে না বরং নওশিনের প্রানের ঝুকি অব্দি থাকতে পারে। আই হোপ ইউ কেন আআন্ডারস্ট্যান্ড।

আকাশঃআমি নিজের সর্বচ্চ দিয়ে নওশিন কে আগলে রাখবো আর কোন আচর আমার ওয়াইফ বা আমার বেবির উপর আসতে দিবোনা

ডাক্তারঃআই ওলসো হোপ দেট মিস্টার চৌধুরী

আকাশ চলে যেতে নিলে ডাক্তার পুনরায় ডেকে উঠে।আকাশ পিছনে ফিরে তাকায় এবার তার চোখ জোড়া লাল হয়ে আছে দেখে মনে হচ্ছে এই বুঝি শক্ত গাল বেয়ে অশ্রু গরিয়ে পরবে। ডাক্তার চোখের ভাষা টা বুঝতে পারে। আকাশ এই মহূর্তে কতোটা অসহায় বোধ করছে সেটা হয়তো আন্দাজ করতে পারলেও অনুভব করার ক্ষমতা কারো নেই কোন মানুষ টাই বা নিজের ভালোবাসার মানুষের মরার কথা শুনে ঠিক থাকতে পারে।

ডাক্তারঃমিস্টার আকাশ আপনার ওয়াইফ আই মিন নওশিনের তলপেটে কোন ভাবে কি কোন সময় আঘাত পেয়েছিলো প্রচন্ড ভাবে জানতে বা অজানতে।

আকাশ এর ভ্রু জোড়া কুচকে যায় বুকের বাম পাশ টাই চিনচিন করে ব্যাথা উঠে।আকাশ অনেক কষ্টে মাথা নাড়ায় মানে হ্যা।

ডাক্তারঃকতো বছর আগের কথা
আকাশঃ৬ বছর আগের
ডাক্তারঃএটার জন্য কি নওশিনের কোন ট্রিটমেন্ট করা হয়েছিলো
আরিয়ানঃইয়েস জুই
(ভিতরে প্রবেশ করে আকাশ কে উত্তর দিতে না দিয়ে নিজেই উওর টা দেয় কারন সে জানে এই বিষয়ে আকাশ জানে না।)
ডাক্তারঃপরে কি কোন ব্যাথা উঠেছিলো।
আরিয়ানঃহুম মাঝে মধ্যে পেট ব্যাথা করতো আমি চেকআপ করায়ছিলাম ডাক্তার বলেছিলো ঔষধ নিলে ঠিক হয়ে যাবে তাই টাইমলি ঔষধ দিতাম ১ বছর হলো কোন ব্যাথা উঠেনি তার
ডাক্তারঃমিস্টার চৌধুরী আরিয়ান আমি যা বলছি একটু শান্ত মাথায় বুঝার চেষ্টা করেন

আরিয়ান আর আকাশ ঘাবড়ে যায় দুইজনে আগ্রহ নিয়ে ডাক্তারের দিকে তাকিয়ে আছে

ডাক্তারঃআমি নওশিনের চেকআপ করেছিলাম নওশিনের যে কান্ডিশান আমি অবাক হয়েছিলাম কি করে নওশিন প্রেগন্যান্ট হতে পারে কারন তার মা হওয়ার চান্স মাত্র ৩০%।তার উপরে আজকে যা হলো টাইমলি হস্পিটালে নিয়ে আসার জন্য মিসক্যারেজ থেকে নওশিন বেচে গেছে।কিন্তু ফারদার ওর টেক কেয়ার করতে হবে একদম বেবি দের মতো। একটু হের ফের মা বেবি দুইজন এর জান ঝুকিতে।আর নওশিনের ডেলিভারির সময় রক্ত সল্পতা দেখা দিতে পারে সেজন্য আমি বলবো সব কিছু এখন থেকে রেডি করে ফেলুন।

আকাশ কিছু না বলে রুম থেকে বেরিয়ে আসে।আরিয়ান ডাক্তারের সাথে কিছুক্ষন কথা বলে বেরিয়ে আসে

আকাশ ছাদের উপর হাটু মুড়ে বসে পরে।চোখ দিয়ে তার পানি পরছে।বুকে এক অসহ্যকর ব্যাথা করছে।মনে হচ্ছে কেউ বার বার চেষ্টা করছে বুকের মাঝে থাকা ছোট হৃদয় টাকে বের করে আনতে। কিন্তু পারছেনা যার জন্য কষ্ট টা আরও দ্বিগুন হচ্ছে।

আকাশঃকেনো আল্লাহ কিসের শাস্তি দিচ্ছো ওকে। কি করেছে ওই কেন এতো কষ্ট ওর ভাগ্যেতে এমন টা কেনো।ছোট বেলায় মায়ের ছায়া কেড়ে নিলা বাবা নামক এক পশু দিলা যে কি না নিজের মেয়ের উপর এতোটা অত্যাচার করে।পরিবারের কেউ এমন নাই যে একটু স্নেহ দিয়ে মাথায় হাত রাখবে।১২ বছর বয়সে যেই টুকু ছিলো তুমি সেটাও কেরে নিলা।অপমান ঘৃণা এমনকি খুনির ট্যাগ ও লাগায় দিলা। ওর একটামাত্র বেস্টফ্রেন্ড টাকেও কেড়ে নিয়েছিলা।এখন একটু আনন্দের ছায়া পেয়েছে তো জানটাও নিয়ে নিতে চায়েছো কেনো আল্লাহ (চিৎকার করে)

কিন্তু আর না এবার যায় হয়ে যাক আমি আমার সুখকে কাড়তে দিবোনা । সে আমার একমাত্র সুখের ছোয়া আমার ভালোবাসা আমার পৃথিবী।তাকে কিছু হতে দিবোনা। কখনো না শুনলে তুমি এবার আমি আমার মায়াবতীর কিছু হতে দিবোনা(চিৎকার করে)

ঔষধের ইফেক্টে নওশিনের ঘুম ভাংগে রাতের দিকে।মাথায় হালকা ব্যাথা অনুভব করতেই চোখ মুখ কুচকে ফেলে।পাশ ফিরতেই তার মাথা যেয়ে বারি খাই আকাশের মাথার সাথে।নওশিন ব্যাথায় চোখ টা বন্ধ করে আবার খুলে। আকাশের চেহারায় ক্লান্তি স্পষ্ট। ঘুমন্ত আকাশ কে নওশিনের একদম বাচ্চার মতো লাগছে।নওশিনের কেন যেনো সহ্য হলোনা আকাশের ঘুমন্ত অবস্থা। সে আকাশের গলায় নিজের মুখ ডুবায় দিলো। নাক দিয়ে হালকা স্লাইড করতেই আকাশের ঘুম ভেংঙ্গে যায়। আকাশ রাগী চোখে নওশিনের দিকে তাকায়।নওশিন আকাশের গলা থেকে মুখ তুলে বাচ্চাদের মতো ঠোঁট উলটে নেয় আকাশের প্রচন্ড হাসি পায় নওশিনের এমন এক্সপ্রেশান এ। সে নিজের হাসি কন্ট্রোল করে গম্ভির গলায় বলে উঠে

আকাশঃএই সব কি সুইটহার্ট দেখছো তো ঘুমাচ্ছি এমন করছো কেন
নওশিনঃআমি জেগে আছি আপনি কেন ঘুমাবেন আমার ভালো লাগেনি সেটা তাই এমন করেছি
আকাশঃওহ আচ্ছা তাই নাকি তাহলে ম্যাডামের মতো আমার ও ইচ্ছা করছে ম্যাডাম কে খেয়ে ফেলার।
নওশিনঃওই খবরদার না। একদম কাছে আসবেন না
আকাশঃসেটা সম্ভব না শুরু না তুমি করেছো শেষটা আমি করবো(বলে নওশিনের গলায় মুখ ডুবায় দেয়)

নওশিন ছুটাছুটি করেও যখন পার পায়না তখন যেটা বলে উঠে সেটা শুনে আকাশ হাসবে না কান্না করবে বুঝতে পারেনা।

চলবে!

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে