আমার তুমি পর্ব-১৯

0
729

#আমার_তুমি
#পর্ব_১৯[অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষিদ্ধ]
#জান্নাত_সুলতানা

তিন্নি একটা হাল্কা মিষ্টি কালার শাড়ী পড়ে রেডি হচ্ছে।
শাড়ী টা পড়িয়ে দিয়েছে ওর সাথে যে মেয়ে টা থাকে সে।
ওর কোনো শাড়ী নেই।কিন্তু কাল রাত দশ টা বাজে কবির খাঁন ফোন করে বলেছে কাল তিন টার দিকে একটা রেস্টুরেন্টে -এ দেখা করতে।
এটা শোনার পর তিন্নি থম মেরে ছিল।
ও ভাব ছিল হয়তো কবির ভুল করে ফোন দিয়ে ফেলেছে।
কিন্তু তিন্নি কে আরেক দফা অবাক করে কবির দ্বিতীয় বার তিন্নি কে গম্ভীর কণ্ঠে আদেশের স্বরে বলে ছিল।
দেখা করতে আসার সময় যেনো সুন্দর করে শাড়ী পড়ে আসে।
তিন্নি কিছু না বুঝতে পার ছিল না কিছু মুখ দিয়ে প্রশ্ন করার মতো কিছু খুঁজে পাচ্ছিল।
তবে কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে অনেক কষ্ট বলে ছিল স্যার আপনি হয়তো নাম্বার ভুল করে আমাকে কল দিয়ে ফেলেছেন।
কিন্তু কবির তিন্নির কথা পাত্তা না দিয়ে বরং আদেশের স্বরে আবারও বলে ছিল যা বলেছে তাই যেনো করে।
আর ঠিক টাইমে যেনে যথা স্থানে পৌঁছে যায়।
তিন্নি কে আর কিছু বলতে না দিয়ে ফোন কেটে দিয়ে ছিল।
আর এদিকে তিন্নি আর সারা রাত ঘুমুতে পারে নি।
শুধু ভেবেছে এই বুঝি স্যার ফোন দিবে আর বলবে সরি তিন্নি ভুল করে তোমার নাম্বারে কল দিয়ে ফেলেছি।
কিন্তু না তিন্নি সারা রাত জেগে থেকেও তেমন কিছু ঘটে নি।
তিন্নি শেষ রাতের দিকে একটু ঘুমিয়ে ছিল।
আর সকালে উঠে দুই টা টিউশনি যে গুলো বিকেলে করায় সে গুলো সকালে করিয়ে বাসায় এসে শাওয়ার নিয়ে রেডি হয়ে বেড়িয়ে এলো হোস্টেল হতে।
বেশি সাজে নি হাল্কা গোলাপি রঙের লিপস্টিক আর কানে এক জোড়া ইয়ার রিং।
আর বাম হাতে একটা ঘড়ি যে টা সব সময় পড়ে থাকে।
টিউশন করায় বিধায় এটার খুব করে প্রয়োজন পরে।

তিন্নি একটা রিকশা নিয়ে কবিরের বলা লোকেশন পৌঁছে যায়।
কিন্তু সময় তখন তিন টার বেশি সময় বাজে।তিন্নি রিকশার ভাড়া মিটিয়ে রেস্টুরেন্টে এর ভেতরে যেতে লাগলো।
রেস্টুরেন্টে টা বেশ নামি দামী সেটা ডেকোরেশন দেখে বোঝা যাচ্ছে।
আর এটার ভেতরেও সব মানুষ বড় বড় লোক।
সবার ড্রেসআপ দেখে এটা নিঃসন্দেহে বলা যায়।
তিন্নি আঁড়চোখে সব তাকিয়ে তাকিয়ে দেখে নিলো।
আর পুরোপুরি সামনে দৃষ্টি যেতেই দেখলো কবির স্যার একটা সাইডে একটা মাঝের টেবিলে বসে আছে।
সাথে আরও একজন আছে কিন্তু পেছন থেকে সেটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না।
কবির ওর বাবার সাথে কথা বলছিল।
কিন্তু হঠাৎ দেখেলো তিন্নি ওদের থেকে কিছু টা দূরে দাঁড়িয়ে আছে।
কবির সে দিকে একবার তাকিয়ে ওর বাবা কে কিছু বলে উঠে এগিয়ে আসে তিন্নির নিকট তিন্নি সালাম দেয়।
ও ভীষণ নার্ভাস এসি আছে নয়তো ওর ঘাম হয়তো এতোক্ষণে টুপ করে গড়িয়ে পড়তো নিচে।
কবির তিন্নি কে পরক করে নিলো অতঃপর গম্ভীর কণ্ঠে সালামের জবাব দিয়ে ওর সাথে আসতে বলে।
ওরা এগিয়ে গিয়ে ওই টেবিল টায় বসে পড়ে।
তিন্নি কালাম খাঁন কে চিনে না তবে স্যার এর সাথে ছিল বিধায় কালাম খাঁন কেও সালাম দেয়।
কালাম খাঁন লম্বা চওড়া হেসে সালামের উত্তর দেয়।
আর মনে মনে এটাও ভেবে নিলো ছেলের পছন্দ আছে বটে।
যদিও তিন্নির গায়ের রঙ ততটা ফর্শা নয়।
কিন্তু তবে সুন্দর বলাই চলে।
আর চেহারা টায় ভীষণ মায়াবী।
লম্বা টাও ঠিক ঠাক মোদ্দা কথা ছেলের সাথে তার সুন্দর মানাবে যাকে এক কথা বলে পারফেক্ট।
কালাম খাঁন এর ভাবনার মাঝেই কবির ওয়াটার ডেকে খাবার অর্ডার দেয়।
তার পর তিন্নি কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে

-“আমার বাবা।
বাবা ওর কথায় কাল বলেছিলাম।

শেষে এর টা কালাম খাঁন এর দিকে তাকিয়ে ওনাকে উদ্দেশ্য করে বলে।
তিনি তিন্নির নাম জিজ্ঞেস করে এটা সেটা জিজ্ঞেস করতে থাকে।
তিনি জানে তিন্নি এতিম তাই বাবা মার কথা আর জিজ্ঞেস করে না।
আর তিন্নি ভাবছে। সাথে মনে অনেক প্রশ্ন তাকে কেন এভাবে এখানে ডাকা হয়েছে?
আর স্যার কেন তার বাবা-র সাথে এভাবে পরিচয় করাচ্ছে?
সবার কথা আর আড্ডার মাঝেই খাবার দাবার শেষ করে।
কালাম খাঁন খাওয়া শেষ টিসু তে হাত মুছে উঠে দাঁড়িয়ে কবির কে উদ্দেশ্য করে বলল

-“আমার পছন্দ হয়েছে।
আমাদের বাড়ি চলে এসো তাড়াতাড়ি করে।
এই বাবা টা তোমার জন্য অপেক্ষা করবে।”

শেষ এর কথা গুলো তিন্নি কে উদ্দেশ্য করে বলে।
অতঃপর কাউ কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে তিনি চলে গেলো রেস্টুরেন্টে হতে।

তিন্নি তখনো সে দিকে অবুঝ চোখে তাকিয়ে।
যা দেখে কবির হাসে।
মেয়ে টা হয়তো কিছুই বুঝতে পারছে না।
অবশ্য বোঝার মতো কিছু করেও নি।
কবির গলা ঝেড়ে তিন্নির মনোরঞ্জন করার চেষ্টা করে।
সফলও হয়।
তিন্নি তাকালো একবার কবিরের দিকে।
পর পর-ই মাথা নুইয়ে কিছু জিজ্ঞেস করতে যাবে তার আগেই কবির বলে উঠে

-“তুমি আমার ছাত্রী আমি তোমার শিক্ষক।
কিন্তু এটা নিয়ে আমার কোনো সমস্যা নেই।
তোমার আছে?”

তিন্নির সেকেন্ড এর মতো সময় লাগে কথা গুলোর মানে বুঝতে।
তবে শেষ এর কথা গুলো তিন্নি স্পষ্ট হলো কবির তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিচ্ছে।
ওর কি বলা উচিত ও বুঝতে পারে না।
রাজি হবে?নাকি সময় চাইবে?
তিন্নির ভাবনার মাঝেই কবির গম্ভীর কণ্ঠে আবারও শোনা গেলো

-“আজেবাজে চিন্তার প্রয়োজন নেই।
পজিটিভ ভাবো নেগেটিভ না।
আর বাবা খুব শীগগির হোস্টেল যাবে।
পরীক্ষার আগে আমাদের বাসায় চলে আসবে।”

তিন্নি এবারও কি বলা উচিত বুঝতে পারছে না।
তবে ওর মন খুব করে বলতে ইচ্ছে করছে সাদনান ভাই কে একবার এসব বলা প্রয়োজন।

-“মাইশা,,,,

-“আমি সব সামলে নেবো।”

তিন্নির কথা সব টা না শুনেই কবির বলে উঠে।
তিন্নি আর কিছু বলে না।

————-

প্রিয়তা সাদনানের পাশে বসে খাচ্ছে।
একটু আগেই সাদনান অনেক গুলো চিপস চকলেট আরও অনেক কিছু কিনে দিয়েছে।
ওরা কোথায় যাচ্ছে প্রিয়তা জানে না।
জানবে কি করে সে তো জিজ্ঞেস করে নি।
সে নিশ্চিত মনে মনে বসে খেয়ে যাচ্ছে।
ভাব টা এমন সাদনান যদি তাকে জাহান্নামেও নিয়ে যায় সে চোখ বন্ধ করে সাদনানের সাথে যাবে।

সাদনান একটু পর পর দেখছে তার ছোট জান কে।
তারা আজ বাড়ি যাবে না।
নিজেদের একটা ফ্ল্যাট কিনেছে বছর দুই এক আগে আজ রাত সেখানেই থাকবে তারা সকালে বাড়ি ফিরবে।
এটা সে সালেহা বেগম কে কল করে জানিয়ে দিয়েছে।

মিনিট বিশ এক পর সাদনানের গাড়ি টা এসে একটা বাড়ির সামনে থামে।
সাদনান পার্কিং এড়িয়া গাড়ি টা পার্ক করে প্রিয়তা কে নিয়ে লিফটে করে সোজা চার তলায় পৌঁছে যায়।

সাদনান রুমে গিয়ে প্রিয়তা কে ফ্রেশ হতে বলে নিজে ফোন হাতে দারোয়ান কে ফোন করে খাবার নিয়ে আসার কথা বলে দেয়।
সাদনান ফোনে কথা শেষ করে ব্যালকনি হতে রুমে এসে দেখলো প্রিয়তা এখনো স্কুল ড্রেস পড়েই দাঁড়িয়ে আছে।
সাদনান এর বিষয় টা বুঝতে বেগ পেতে হয় না।
সে তো ভুলে গিয়ে ছিল ওর নিজের কাপড় এ বাসায় থাকলেও প্রিয়তার নেই।
কিন্তু এখন কিছু করারও নেই।
আশে পাশে দোকান আছে তবে কাপড়ের দোকান নেই।
এটা একটু নিরিবিলি প্রাকৃতির জায়গা।
সাদনান এসব ভেবে ওয়ারড্রব এর ড্রয়ার খোলে সেখান থেকে ওর একটা থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট আর সাদা গেঞ্জির প্রিয়তার হাতে দেয়।
প্রিয়তা এতোক্ষণ সাদনান কে পর্যবেক্ষণ করছিল।
কিন্তু সাদনান কে ওর হাতে এসব কাপড় দিতে দেখে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে

-“এটা পড়তে হবে?”

-“কিছু করার নেই।
তাছাড়া আমি তো অন্য কেউ তো আর নেই।”

#চলবে…….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে