#আমার_তুমি
#পর্ব_১৭[অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষিদ্ধ]
#জান্নাত_সুলতানা
রাহানের এরূপ কথায় সারা কুঁচকানো ভ্রু জোড়া আরও কুঁচকে গেলো।
রাহানের থেকে সামন্য কিছু টা পিছিয়ে যায়।মুখের অবস্থা আগের ন্যায় রেখেই বলে উঠে
-“সেটার জন্য ফার্মেসীতে যান।
এখানে কেন দাঁড়িয়ে ছিলেন?”
-“কৈফিয়ত চাইছো?”
প্যান্ট এর পকেটে দুই হাত ঢুকিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে রাহান।
সারা অবাক হয়ে রাহানের প্রশ্নে।
তবে খুব স্বাভাবিক ভাবে জবাব দেয়
-“তা কেন হবে?
আমার কেন জানি অন্য কিছু মনে হলো তাই বললাম।”
-“কি মনে হলো?”
রাহান কৌতূহল নিয়ে আগের ন্যায় আবারও প্রশ্ন করে।
সারা সয়তানি হাসে মনে মনে।
এবার জব্দ করা যাবে এই চালাক রাহান ভাই কে।
-“আপনাকে কেন বলবো, হু?”
কথা টা বলেই সারা মুখ ভেংচি কেটে পেছন ফিরে নিজের রুমে উদ্দেশ্য হাঁটা ধরে।
আর রাহান পেছনে দাঁড়িয়ে খুব সাবধানের সহিত সারার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বিরবির করে বলে উঠে
-“খুব শীগগির তোমার প্রতি টা কথা আমাকে বলার মতো আমি আমার অধিকার করে নেবো।”
————-
দেখতে দেখতে প্রিয়তার আর সারা টেস্ট পরীক্ষা শেষ হয়ে ফাইনাল পরীক্ষার সময়ও ঘনিয়ে এলো।
টেস্ট পরীক্ষা চলাকালীন একদিন গিয়েছে প্রিয়তা সওদাগর বাড়ি।
শুধু প্রিয়তা নয় সাদনান, রাহাত,আয়না চার জনেই গিয়েছে।
থেকেছে মাত্র এক রাত দু’দিন।
যে দু’দিন থেকেছে সে দুই দিন প্রিয়তার পরীক্ষা ছিল না।
এই দুই দিন মিতা সওদাগর ততটা কথা বলে নি প্রিয়তার সাথে।
কিন্তু সাদনানের জামাই আদরে কোনো ত্রুটি রাখে নি।
রাহাত, সাদনান দু’জনকেই বেশ যত্ন আত্তি করেছে।
এতেই প্রিয়তা ভীষণ খুশি।
প্রিয়তা এসব ভাবতে ভাবতেই বই খাতা গুছিয়ে নিচে আসার জন্য অগ্রসর হয়।
রাত এখন নয় টা বাজে নি।
সাদনান এখনো বাড়িতে আসে নি।এসে পরবে হয়তো কিছুক্ষণের মধ্যেই।
লিভিং রুমে জাফর মির্জা সহ আম্বিয়া মির্জা, মফিজুর মির্জা,আজ্জম মির্জা আরও বাড়ির সব সদস্যরাই এখানে উপস্থিত।
প্রিয়তা সে দিকে একবার তাকাতেই দেখতে পায়
আম্বিয়া মির্জা কেমন অদ্ভুত নয়নে তাকিয়ে তার দিকে।
প্রিয়তা এটা লক্ষ করে তড়িঘড়ি করে রান্না ঘরে চলে গেলো।
রাতের খাবার রেডি করছে দু’জন কাজের লোক সহ সুফিয়া বেগম আর আয়না।প্রিয়তাও গিয়ে হাতে হাতে এটা সেটা এগিয়ে দেয়।
সুফিয়া বেগম অবশ্য বলেছে তার এ-সব করতে হবে না সে যেনো টেবিলে বসে পড়ে।
আর তাড়াতাড়ি খেয়ে রুমে চলে যায়।
সারাও খেয়ে পড়তে চলে গিয়েছে।
তবে প্রিয়তা শোনল না।
সে কাজ করতে লাগলো।
এর মধ্যে সালেহা বেগম হন্তদন্ত হয়ে রান্না ঘরে এসে কফি করে প্রিয়তার হাতে দিয়ে রুমে পাঠিয়ে দিলো।
সাদনান এসেছে আর সে ফ্রেশ হয়ে কফির জন্য বলেছে।
প্রিয়তা কফি নিয়ে উপর নিজের রুমে চলে আসে।
সাদনান মাত্র ব্যালকনি হতে রুমে এসে দেখলো প্রিয়তা কফি নিয়ে মাত্র রুমে এসছে।
সাদনান এগিয়ে এসে কফি টা হাতে নিয়ে সেটায় একবার চুমুক বসায়।
প্রিয়তা সাদনানের দিকে তাকিয়ে মাথা নুইয়ে নেয়।
কারণ সাদনান শুধু টাওয়াল পড়ে আছে।
-“পড়া কতদূর এগিয়েছে?”
সাদনান প্রিয়তার খাতা গুলো নড়াচড়া করতে করতে জিজ্ঞেস করে।
প্রিয়তা আগের স্থানে দাঁড়িয়ে থেকেই মিনমিন করে জানায়
-“রিভিশন দেওয়া বাকি এখনো।”
-“কয় টা?”
-“চার টা।”
-“কালকের দিন পর এক্সাম শুরু।”
প্রিয়তা আর কিছু বলে না মাথা নুইয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।
তার কি দোষ সব দোষ তো এই লোকের। সারা দিন তার মনের মধ্যে জেঁকে বসে থাকে।
পড়তে ইচ্ছে করে না।
অবশ্য এতো সুন্দর জামাই থাকলে কি আর পড়ায় মন বসে?
প্রিয়তার ভাবনার মাঝেই সাদনান কফি টা অর্ধেক খেয়ে বাকি টা ড্রেসিং টেবিলের উপর রেখে এগিয়ে আসে বউয়ের নিকট।
অতঃপর ধীরে কন্ঠে বলে উঠে
-“কালকে সকালে শহর থেকে দূরে যেতে হবে।
মিটিং আছে সেখানে দুই টা।
যদি পারি তো ফিরে আসবো নয়তো এর পর দিন সকালে।”
-“সে দিন তো পরীক্ষা শুরু।”
-“আগে আসার চেষ্টা করবো।
যদি না পারি এক্সাম এর পর নিতে যাব আমি।”
প্রিয়তা আর কিছু বলে না।
নীরব থাকে।
সাদনান আলমারি খোলে সেখান থেকে নিজের ট্রাউজার নিয়ে ওয়াশ রুম চলে যায়।
এ-র মধ্যে প্রিয়তা বিছানা আর সোফায় রাখা সাদনানের এলোমেলো করে রাখা জিনিস গুলো গুছাতে লাগলো অতঃপর সাদনান ওয়াশ রুম থেকে বেড়িয়ে এলে দুজনেই নিচে চলে আসে।
———
-“আমি এদিক দিয়ে যাচ্ছি।
তুমি আমার সাথে আসতে পারো।”
তিন্নি আজ কলেজ এসছে মাইশা আসে নি।
কলেজ বন্ধ এসএসসি পরীক্ষা শুরু হবে কাল থেকে সে জন্য।
অবশ্য ভার্সিটি খোলা আর সাথে অফিস কাজকর্ম চলে।
তাই তিন্নি এসছে নিজের কিছু জরুরি কাগজ জমা দিতে।
কিন্তু কলেজে আঙিনা হতে বেড়িয়ে ফুটপাত দিয়ে হেঁটে হোস্টেল ফিরছিল।
আর ঠিক তক্ষুনি কবিরের সিলভার কালার গাড়ি টা তিন্নির পাশে এসে থামে।
কবির কে স্পষ্ট বাহির থেকে দেখা যাচ্ছিল।
আর কবির গাড়ির কাচ টা নামিয়ে উপরোক্ত অফার টা করে।
তিন্নি কেমন নার্ভাস।
সে কবির খাঁন এর কথার পিঠে তড়িঘড়ি করে মাথা নেড়ে জবাবে বলে উঠে
-“না, না স্যার।
আমি যেতে পারবো।”
তিন্নির কথায় কবির একটু বিরক্ত হলো।
এই মেয়ে এতো ঢং কেন করছে।
নিজে তো ঠিক আড়ালে থেকে সব সময় তাকিয়ে থাকে।
হ্যাঁ, কবির এই কয়েক মাসে বেশ ভালো করেই লক্ষ করেছে তিন্নির সব চালচলন।
যদিও তার আগে অস্বস্তি হতে তবে এখন এ-সব নজরে এলে আপনি আপনি মুখে হাসি ফুটে উঠে।
এটা হবার কারণ কি কবির নিজেও জানে না। হয়তো ভালোলাগা সৃষ্টি হচ্ছে।
আর এটা হতে হতে ঠিক এক দিন ভালোবাসা টাও হয়ে যাবে বলে কবির এর বিশ্বাস।
আর যে দিন সে বুঝতে পারবে সে এই মেয়ে টাকে সত্যি ভালোবেসে ফেলেছে মেয়ে টাকে ছাড়া সে থাকতে পারবে না ঠিক সে দিন এই মেয়ে টাকে নিজের মনের কথা বলে নিজের রাজ্যের রানী বানাবে।
আর কবির নিশ্চিত সেই দিন টা খুব নিকটে।
কিন্তু তার মনের কোথাও একটা সুপ্ত অনুভূতি রয়ে গিয়েছে তার প্রথম ভালোবাসার জন্য।
কিন্তু কিছু করার নেই প্রথম ভালোবাসা বলে কথা।
তবে সে টার কারণে এই মেয়ে টাকে সে কখনো অবহেলা করবে না।
কবির এর ভাবনার মাঝেই তিন্নি সালাম দিয়ে চলে যেতে হাঁটা ধরতেই কবির এবার ধমকের স্বরে বলে উঠে
-“এই মেয়ে শুনতে পাচ্ছো না কি বলছি?
গাড়িতে উঠো।”
তিন্নি আর কিছু বলার সাহস পায় না।
গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে এসে দরজা টার সামনে দাঁড়াতেই কবির নিজের হাত এগিয়ে দরজা টা ভেতর হতে খোলে দেয়।
তিন্নি বসে দরজা টা লাগিয়ে দেয়।
কিন্তু কাচ টা আর তুলে না।
আর তাদের গাড়িতে পাশাপাশি বসার দৃশ্য টা দূর হতে কেউ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখলো যতক্ষণ পর্যন্ত কবির এর গাড়ি টা দৃষ্টির আড়াল না হয়।
———-
-“নমিনেশন দিয়ে দেবে এই মাসের শেষ এর দিকে।”
ওয়াসিফ দেওয়ান ফোনের ওপাশ হতে বলে উঠে।
সাদনান ফোন টা ডান কান হতে বা কানে চেপে ধরে শান্ত কণ্ঠে জানায়
-“খবর পেয়েছি।”
-“মিটিং গুলো শেষ করে যত দূত সম্ভব ফিরে এসো।
আর সাবধানে থাকবে।”
মুচকি হেসে সাবধানের সহিত কথা গুলো বলে।
সাদনান ওনার কথার পৃষ্ঠে আগের ন্যায় আর গম্ভীর রাখে না মুখ।
হাসে অল্প। যা শুধু পাশে বসা রাহানের নজরে আসে তবে শব্দ নেই।
সাদনান সে দিকে একবার আঁড়চোখে তাকিয়ে শান্ত কণ্ঠে বলে উঠে
-“চেষ্টা করবো।”
কথা শেষ ফোন কাটে সাদনান।
ফোন রাখে সিটে।
অতঃপর গা এলিয়ে দেয় সিটে।
পাশে বসা রাহান সে দিকে তাকিয়ে বলল
-“দ্বিতীয় নাম্বার মিটিং টা তিন টায় শুরু হবে।
আর সেখানে বর্তমান এমপি বোম রাখার প্ল্যান আছে।”
সাদনান মুচকি হাসে।
চোখ বন্ধরত অবস্থায় বলে উঠে
-“বাদা দেওয়ার প্রয়োজন নেই।
এটা কিন্তু একটা আমাদের জন্য অনেক বড় সুযোগ।”
#চলবে…..