#আমার_তুমি
#লেখিকাঃনওশিন_আদ্রিতা
#পার্টঃ১৪
,
,
,
,
আরিয়ান এর রুমে বসে আছে আকাশ আর ঈশান। আরিয়ান আর ঈশান দুইজন ই একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করছে।আরিয়ান নিরবতা ভেংগে বলে উঠে
আরিয়ানঃএখানে এভাবে চুপচাপ বসার জন্য তো তুই নিশ্চয় আসিস নি তাহলে এখানে আসার আসল কারন টা বলে ফেল
আকাশঃ৬ বছর আগে কার সকল কথা আমি জানতে চায় এভরি লিটিল থিংক
আরিয়ান/ঈশানঃহঠাৎ।
আরিয়ানঃতুই নিজেই বলেছিলি অতিত নিয়ে তুই মাথা ঘামাবি না তাহলে হঠাৎ করে কি হলো।
আকাশঃহুম যানতে চাইনি কিন্তু আজকে যা ঘটলো আমার কেন জানি মনে হচ্ছে এই সব নওশিনের অতীতের সাথে জড়িতে নাহলে সে কেন বার বার আহান এর নাম নিবে।
ঈশান কিছু বলতে যাবে তার আগেয় মেয়েলি কন্ঠ শুনে সবাই চমকে যায়।তাদের পিছনে দাঁড়িয়ে আছে নওশিন।চোখ মুখ ফুলে আছে। আকাশ এই মহূর্তে নওশিনকে দেখে অবাক হয় কারন ডাক্তার নওশিন কে ঘুমের ঔষধ দিয়ে রেখেছিলো।
নওশিনঃতখন আমার সবে ১২ বছর ছিলো। এদিকে ভাইয়ু আহান ভাইয়া ঈশান সবার পরিক্ষা শেষ সবাই এখন ঘুরতে যেয়ে চায় বাড়ির কেউ আর ফেলেনি তাদের কথা রাজি হয়ে যায়।কিন্তু বাড়ির কেউ আমাকে নিয়ে যেতে ইচ্ছুক না বাড়ির বড়রা ভেবেছিলো আমাকে বাসায় একা রেখেই চলে যাবে কিন্তু ভায়ু আর আহান এর জনক্স সেটা সম্ভব হয়নি তাদের এক জেদ আমি না গেলে তারা যাবেনা। এক প্রকার জোড় করেই আমাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো আমি খুব খুশি ছিলাম ফ্যামিলির সাথে ঘুরতে যাবো বলে।
অতিত,
সবাই মিলে পৌঁছে যায় সিলেটে। সেখানে তাদের একটা ফার্মহাউজ থাকায় সবাই সেখানেই উঠে।২ দিন ভালো ভাবেই ঘুরা ফিরা করে।যেদিন ফিরবে তার আগের দিন নওশিন আর আরু বল খেলছিলো হঠাৎ করে বল টা জংগলের ভিতরে যাওয়াই নওশিনকে যেতে হয় বল টা নিতে। কারন বল টা সেই জোড়ে মেরেছিলো।সেদিকে যেতেই সে শুনতে পায় দুইজন ব্যাক্তির কথোপকথন
১ম ব্যাক্তিঃএই ফ্যামিলিকে শেষ করে দিতে হবে কোন মতেই এই পরিবারের কোন ছেলেকেই বাচতে দেওয়া যাবেনা বিশেষ করে ওই নওশিন কে
২য় ব্যাক্তিঃওই নওশিন ওতোটা সমস্যা না কারন বাড়ির তাকে কেউ ঠিক তেমন ভাবে পছন্দ করেনা তাকে বাড়ি থেকে দূর করা ওতো টা কঠিন হবেনা। কিন্তু আরিয়ান কে আর আহান কে আগে দূর করতে হবে।
১ম ব্যাক্তিঃআহান কেন(অবাক হয়ে)
২য় ব্যাক্তিঃআহান কেও ওর নানু খুব বেশি ভালো বাসে সম্পত্তির যে ৭ ভাগ হয়েছে তার মধ্যে এক অংশ তার ও আছে আর নওশিন আহান আর আরিয়ানের ভাগ টা বেশি।
নওশিন এতোক্ষনের কথোপকথন শুনে বুঝে যায় সেখানে একজন নারী ও পুরুষ রয়েছে।নারীর গলা টা চিনা চিনা লাগলেও নওশিন চিনতে পারেনা।
এর ই মধ্যে ১ম ব্যাক্তিটি আবার বলে উঠে।
১ম ব্যক্তিঃমেরে ফেলবো সব কইটাকে। আমার,,,,
১ম ব্যাক্তি অর্থ্যাৎ মহিলা টি কথা সম্পূর্ণ করতে পারেনা তার আগেই আবিদ (ছোট কালে আরিয়ানের বাবা মা আবিদ কে দত্তক নেয়। বিয়ের অনেক বছর হয়ে যাওয়ার স্বর্তেও যখন বেবি হচ্ছিলো না তখন আবিদ কে মসজিদের বাহির থেকে কুরিয়ে পায় তারা সবাই ২ বছরে বাচ্চা শিশুকে তার ৩ মাস পরেই আরিয়ান এর আসার খবর জানতে পারে কিন্তু এই জন্য আবিদের ভালোবাসা কমেনি)ভাইয়াকে চোখে পড়ে তাদের
নওশিন স্তব্দ হয়ে যায় কারন আবিদ একা ছিলোনা আবিদ এর পায়ের কাছেই অজ্ঞান অবস্থায় পরে ছিলো আহান ভাইয়া।তার এক পা ছিলো আবিদের হাতে এতোদূর যে তাকে টেনে হিচরে আনা হয়েছে সেটা বুঝতে বাকি রইলোনা তার। কিন্তু তার চেয়ে বড় শক খেলো আবিদ এর কথায়
ব্যাক্তি১ঃএই মা তুই ওকে কেন মারলি
ব্যাক্তি ২ঃতোর মাথা ঠিক আছে বাড়িতে জানা জানি হলে কি হবে ভাবতে পারছিস এতো বছরে বানানো সকল জল্পনা মাটি হয়ে যাবে।
আবিদঃআর বলোনা আমি কি একে মারতাম নাকি। আমি ডিলার দের সাথে মেয়ে পাচার আর ড্রাগস ডিল গুলো নিয়ে আলোচনা করছিলাম এই পিছন থেকে শুনে নিয়েছিলো বলছিলো সবাইকে বলে দিবে অনেক বুঝালাম বুঝলোই না তাই আর কি (ব্যাট করার মতো হাত ঘুরিয়ে দেখালো)
(বলা বাহুল্য ব্যাক্তি দুইটা নিজেদের কালো পোশাকে আবৃত করে রেখেছিলো আর মুখে মাস্ক এই জন্য নওশিন তাদের মুখ দেখেনি)
ছোট নওশিন আহানের এই অবস্থা দেখে আর নিজেকে আটকাতে পারলোনা কেদে দৌড় দিলো আহান এর কাছে।নওশিন কে দেখে প্রথমে ৩ জন চমকালেও মহিলাটির কথা শুনে ৩ জনার মুখে হাসি ফুটে।
নওশিনঃ ভাইয়া ভাইয়া উঠো।প্লিজ ভাইয়া। আবিদ ভাইয়া তুমি কেনো মারলা ভাইয়াকে ভাইয়া ব্যাথা পেয়েছে না। (কেদে কেদে আহান কে জড়িয়ে ঝাকাতে লাগলো)
আবিদ হাটি গেড়ে নওশিনের সামনে বসলো। আবিদঃও তাই তোমার আহান ভাইয়া কষ্ট পেয়েছে। (শয়তানী হাসি দিয়ে)
আবিদ উঠে আহান কে আর একটা লাত্থি দিয়ে নওশিনকে তুলে নিলো। ওক হাত দিয়ে নওশিনের মুখ বন্ধ করে আরেক হাত দিয়ে পাশে থাকা স্টোর রুমে নিয়ে যায়।
নওশিন ছোট হাত পা গুলো নড়াচ্ছে ছাড়া পাওয়ার জন্য কিন্তু সেটা সম্ভব হচ্ছেনা।
২০ বছরের যুবকের সামনে ১২ বছরের বাচ্চা মেয়ে কিছুই না। সেদিন সে ২০ বছরের যুবক সে ছোট বাচ্চার উপর হামলে পড়েছিলো তার কামুকতা মিটিয়েছিলো। ১২ বছরের বাচ্চা হলেও নওশিন ছোট বেলা থেকেই ছিলো অতান্ত মায়াবী আর সুন্দরী তার সৎ মা নওশি কে ঠিক এই কারনেই দেখতে পারতোনা কারন তার মেয়ের থেকে নওশিন সব দিকে দিয়ে এগিয়ে ছিলো।
ছোট নওশিনের উপর নিজের পুরুষত্ব ফলানোর সময় নওশিন ব্যাথায় চিৎকার দিতে দিতে বলছিলো আর মেরো না ভাইয়া ব্যাথা করছে কিন্তু সেদিন নওশিনের করুনতা তার চিৎকার আবিদের বিরক্ত লাগছিলো যার কারণে ছোট শরীর টা ছুড়ে সেখান থেকে চলে যায়।ব্যাথায় কাতরাচ্ছিলো নওশিন। কিছুক্ষন পরেই নওশিন কে খুজতে খুজতে ঈশান আর আরিয়ান সেখানে আসে।আরুশি তাদের বলেছিলো অনেকক্ষন হলো নওশিন কে কোথাও পাচ্ছেনা।
আরিয়ান আর ঈশান স্তব্ধ হয়ে যায় ছোট পরিটার বিদ্ধস্ত অবস্থা দেখে। চোখ দুইটা বেয়ে পানি গরাতে লাগলো ঈশানের।আরিয়ান দ্রুত নিজের জ্যাকেট নওশিন কে পরিয়ে দেয়।নওশিন আরিয়ান কে জরায় ধরে হাউমাউ করে কেদে উঠে।
আরিয়ানঃবনু বনু কিছু হয়নি কিছু হয়নি দেখ তোর ভাইয়ু দেখ এই যে তোর ঈশান।
নওশিনঃআ আহান ভাইয়া(কেদে দিয়ে)
নওশিনের আংগুলের ঈশারায় আহান এর নিথর দেহ টা পরে থাকতে দেখে স্তব্ধ হয়ে যায়। ঈশান হাটু মুরে বসে পরে। এদিকে আরিয়ান ও নওশিন কে ছেড়ে দিয়ে আহান এর কাছে যায়।
হঠাৎ করে নওশিনের চিৎকারে ঈশান আর আরিয়ান দুইজনেই ওর দিকে তাকায়। নাহিদ খান ছোট মেয়েটাকে একের পর এক আঘাত করেই যাচ্ছে।এক পর্যায়ে নিজের রাগ দমন করতে না পেরে লাত্থি দিয়ে ফেলে দেয়।লাত্থিটা এতোটাই জোড়ে ছিলো যে নওশিন যেয়ে ছিটকে বাড়ি খায় স্টোর রুমে থাকা বড় শক্ত লোহার তৈরি আলমাড়ির হেন্ডেলের সাথে।
নিথর দেহ টা পরে যায় মেঝেতে কিন্তু সেদিকে কারো খেয়াল হয়না৷ সেদিন নিলিমা বেগম ও দেখতে পান নি নিজের কলিজার ভাগ্নির রক্তাক্ত শরীর সেদিন তার খেয়াল ছিলো শুধু নিজের ছেলের নিথর দেহের দিকে।
এদিকে সবার পিছনে দাঁড়িয়ে ছিলো আবিদ। সেই সবাইকে জানায়েছিলো যে আহান কে নওশিন স্টোর রুমে নিয়ে গেছে জোড় করে। আর ওর মাথায় রোড দিয়ে বার বার বাড়ি দিচ্ছিলো সে নাকি ভয় পেয়ে বাড়ির সবাইকে জানাতে এসেছে।সেদিন এটা কেউ ভাবেনি ১৮ বছরের একটা ছেলেকে কি করে ১২ বছরের মেয়ে মারতে পারে।আর সে ১২ বছরের মেয়ে থেকে ভয় পেয়ে নাকি ২০ বছরের ছেলেটি পালিয়েছে।
,
সবাই আহান এর শরীর টা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যায়।সেদিন ঈশান নিজের ভায়ের শক ভুলে আরিয়ান আর সে মিলে নওশিনকে নিয়ে যায় হস্পিটালে কিন্তু বড় কেউ না হলে ডাক্তার ট্রিটমেন্ট করবেন বা বলে সাফ সাফ জানায় দেয়। আরিয়ান আর ঈশান দিশেহারা হয়ে যায়। আরিয়ান কি করবে কিছু বুঝতে পারছিলোনা হঠাৎ মরে তার মাথায় আসে নওশিনের নানার কথা সে দ্রুত উনাকে কল দিয়ে সব সংক্ষেপে বলে। সব শুনে নওশিনের নানা দ্রুত ফোনটা ডাক্তারের কাছে দিতে বলে
এদিকে ডাক্তার তো শামসুর রহমানের কথা শুনেই ভয় পেয়ে যায়। এক সময় অনেক বড় মাফিয়া ছিলেন তিনি যার কারনে কম বেশি সবাই তাকে চিনে।
শামসুরঃআমার নাত্রনীর যদি কিছু হয় তাহলে আমি কাউকে ছাড়বোনা মাইন্ড ইট।
সেদিন অপরেশানের পরে ৫ মিনিটের জন্য নওশিনের হুস ফিরেছিলো আর সে তখন বলেছিলো
নওশিনঃআজকে যা হয়েছে আমাকে যে অবস্থায় পেয়েছো সেটা কাউকে যানাবা না ভাইয়া ঈশান তুই ও তোদের আমার কসম লাগে
সেদিন পিচ্চিটাকে বড় বড় লাগছিলো সে পিচ্চিটাও হয়তো বুঝে গেছিলো যে আরিয়ান আর ঈশান যদি মুখ খুলে তাহলে তাদের জীবনটাও হয়তো শেষ হয়ে যাবে।
সেদিন ছোট নওশিন জ্ঞান হারানোর পরে সব কিছু ভুলে যায়।সেদিন সে ১২ বছরের বাচ্চাকে অসুস্থ অবস্থায় যে কি না দাড়াতে পাচ্ছিলোনা তাকে অব্দি তার পরিবার জেলে ঢুকিয়েছিলো।
সে বিষয়ে অবশ্য আকাশ বা তার মা জানতোনা কারন দাফন ক্রিয়া শেষ করেই আকাশ তার মা কে নিয়ে পারি দিয়েছিলো লন্ডনে৷ কিন্তু ঈশান কে নিতে পারেনি।
শামসুর রহমান অনেক কষ্টে প্রমান জোগার করে আবিদ কে জেলে ঢুকাতে সক্ষম হয়েছিলো কিন্তু খান বাড়ির সবাই মনে করে এই সব শামসুর রহমানের সাজানো কাজ। আর এই জন্যই আরিয়ান এর মা যে একটু নওশিন কে দেখতে পারতো সেটাও শেষ হয়ে গেছিলো।কিন্তু নাহিদ খান টাকা দিয়ে ১ বছরের মাঝে আবিদ কে বের করে বিদেশে পাঠিয়ে দিয়েছিলো সেটা অবশ্য সবার অজানা।
শামসুর রহমান অনেক চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু নওশিন কে নিজের সাথে বেশিদিন রাখতে পারেননি।হঠাৎ করে একদিন নাহিদ খান এসে জানায় তিনি নওশিনের এর বিয়ে ঠিক করেছেন। বাবার ইচ্ছা মনে করে বিনা বাক্যতে রাজি হয়ে গেছিলো সেদিন নওশিন ছেলেকে না দেখেয়,,,,,,
বর্তমানে,,,,
রুমে পিনপতন নিরবতা বিরাজ করছে।সবাই স্তব্ধ শুধু ঈশান ছাড়া কারন সে ২ বছর আগেই সব সত্যি জেনে গেছিলো।আরিয়ান বোন কে বুকে জরায়ে ধরে শক্ত করে।আকাশ এর চেহারা শক্ত হয়ে আছে।
নওশিন অশ্রুসিক্ত নয়নে আকাশের দিকে তাকায় ছিলো ভেবেছিলো আকাশ তাকে বুকে আকড়ে ধরবে কিন্তু আকাশ সেটা করেনা নওশিন আকাশের দিকে হাত বারাতে নিলেই আকাশ সেখান থেকে চলে যায়
নওশিনের মনে ভয়ের দানা ফুটে
তাহলে কি আকাশ নওশিনের অতিত শুনে এখন আর তাকে ভালোবাসেনা তাকে ঘৃণা করে। তাকে আপন মনে করেনা সে কি হারায় ফেললো তার ভালোবাসা কে।আচ্ছা নওশিনের ভাগ্যতে কি ভালোবাসা নাই সে যার দিকেই হাত বারায় সেই কেন পালায় যায় বহু দূরে কেন
উত্তরটা যানা নাই নওশিনের৷ আর কিছু ভাবতে পারেনা নওশিন মাথা ভারি হয়ে আসে তার। হুট করে জ্ঞান হারিয়ে যায় আরিয়ানের বুকে ঢলে পরে সে
চলবে!