#আমার_তুমি
#লেখিকাঃনওশিন_আদ্রিতা
#পার্টঃ১৩
,
,
,
,
,
পুরো খান বাড়িকে সাজানো হয়েছে আজকে নতুন বউ এর মতো। হৈচৈ মেতে উঠেছে খান বাড়ির মানুষ গুলো।আর এতো খুশি আনন্দ করবেই বা না কেন বাড়ির বড় ছেলে আর আদরের মেয়ের বিয়ে বলে কথা।
নওশিন রা মাত্র বাসায় প্রবেশ করলো। এতোদিন পরে বাসায় ফিরলে বাকি মেয়েদের আনন্দ হয় খুশি লাগে কিন্তু এই নওশিনের ক্ষেত্রে কাজ টা ভিন্ন হলো নওশিনের মনে পরে গেলো বিষাক্ত সব কথা আর মহূর্তে। ছোট বেলা থেকে অনাদর এই মানুষ হয়েছে নওশিন,,,। নওশিন ৬ বছরের আগের ঘন্টনাকে দায়ী করেনা তার এই অনাদারের জন্য কারন তার সাথে এমন ব্যাবহার ছোট বেলা থেকেই করা হচ্ছে।সৃতিশক্তি হারানোর পরে মনে করতো তাকে খুনি মনে করার জন্য।কিন্তু আসলে তা না তার সাথে এই অনাদার ছোট থেকেই
তখন নওশিনের ৮ বছর বয়স ছিলো।মা মারা যাওয়ার পরে প্রতিবছরে ঈদে নওশিন তার নানু বাড়িতেই করতো কিন্তু সে বার আরিয়ান জেদ ধরে বসে যে তার বনু তার সাথেই ঈদ করবে। আরিয়ান এর জেদের সাথে না পেরে সেবার নওশিনের নানা নানু তাকে নিয়ে যায় না।
ঈদের ২ দিন আগে নওশিন এর বাবা আর আরিয়ান এর বাবা মিলে সবার সাথে যেয়ে শপিং করে আনে। কিন্তু আনে না ছোট নওশিনের জন্য।ছোট নওশিন বাবার হাত ঝাকিয়ে মিষ্টি করে বলেছিলো
নওশিনঃআমার জামা কই বাবাই
নাহিদ খান হাত ঝারা দিয়ে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়েছিলো নওশিনের থেকে সেদিন।তার বাবাই তার জন্য জামা আনেনি সেটাতে তার মন খারাপ হয়েছিলো বটে। কিন্তু বাবাই এর ওমন ব্যাবহার দেখে ছোট নওশিনের মন ভেংগে গেছিলো।
আরিয়ান সব কথা নওশিনের নানা নানুকে বলেছিলো নওশিনের নানা সেদিন ই এক গাদা জামা এনে নওশিনের পায়ের কাছে রেখেছিলো। ছোট নওশিন জামা দেখে কোন উৎসাহ দেখিয়েছিলোনা। ছোট মনে যে তার বাবার করা আচরণ দাগ কেটেছিলো গভির ভাবে।প্রতোক মেয়ের জন্য তার বাবার একটা জায়গা আলাদায় থাকে। নওশিনের বেলাতেও আলাদা না।কিন্তু সে বাবাই যখন তার মেয়ের প্রতি অবহেলা করে তখন ঠিক কেমন টা মনে নওশিন প্রতি মহূর্তে টের পেয়েছে।
পেটে ঠান্ডা স্পর্শ পেয়ে চমকে উঠে নওশিন।তার পেটে বিচরণ করা হাতটার উপরে হাত রাখতেই আকাশ এক টানে তাকে নিজের দিকে ঘুরায়।নওশিন আকাশের দিকে তাকাতেই আকাশ নওশিন কে ছেড়ে দিয়ে নওশিনের হাত ধরে চেয়ারের উপর বসে পরে। নওশিন ভ্রু কুচকে তাকায়
নওশিনঃকি হলো এটা আমাকে এখানে নিয়ে এসে নিজে বসে পরলেন ব্যাপার কি(বুকের উপরে দুই হাত আড়াআড়ি ভাবে ভাজ করে।)
আকাশ নওশিনের কোমর ধরে নিজের দিকে টান দিয়ে কাছে নিয়ে আছে আর অপর হাতে একটা শুকনা টাওয়াল ওর হাতে দিয়ে দেয়।
আকাশঃমাথাটা মুছে দেও।(নওশিন কে নিজের কোলে বসায়ে)
নওশিন আকাশের কথা মতো তার চুল মুছতে থাকে।এদিকে আকাশ নওশিনের ঘাড়ে নিজের ঠোঁট ছোয়াতে শুরু করে।নওশিনের হাত দুইটা অবশ হয়ে আসে।আকাশ নওশিনের হাত থেকে টাওয়াল টা নিয়ে ছুড়ে মারে আর নওশিন কে নিয়ে বেডে যায়।
_________
বিকালের দিকে নওশিন রুম থেকে বের হয়।সে জানে সে এই বাড়ির মেহমান তবুও ভাই তো নিজের মনে করে।যে ভাই তাকে এতোটা ভালোবাসে কি করে তার বিয়েতে অংশগ্রহণ না করে থাকতে পারে। কিন্তু রুম থেকে বের হতেই তার মন টা খারাপ হয়ে যায়।
নওরিন বেগম (নওশিনের সৎ মা)পরম আদরে তার মেয়েকে খাওয়াই দিচ্ছে।তার বাবা মানে মিস্টার নাহিদ খান ও ওইখানেই বসে আছেন। মেয়ের সাথে কি নিয়ে যেনো হাসাহাসি করছেন।চোখ দুইটা ভরে উঠে তার খুব ইচ্ছা করে একটা বার তার বাবার বুকে মাথা রাখতে কিন্তু সে জানে এটা সম্ভব না।
ঈশানঃআর ইউ ওকে বুচি(নওশিনের কাছে এসে)
নওশিনঃহুম আমি ঠিক আছি(মিথ্যা হাসির চেষ্টা করে)
ঈশানঃএক থাপ্পড়ে দাত সব ফেলে দিবো আমার সামনে মিথ্যা হাসি দেখালে (হাত তুলে)
নওশিনঃআমার গাল টা তো সরকারী তাই না তুই আসবি আর থাপ্পড় মারবি আর আমি ছাড়ে দিবো
(কোমড়ে দুই হাত দিয়ে)
ঈশানঃপায়ে পা লাগিয়ে ঝগড়া করার অভ্যাস তোর গেলোনা তাইনা (নওশিনের চুল এলোমেলো করে)
নওশিনঃতোর বুঝি খুব গেছে উল্লুকের ঘরে ধলা ভাল্লুক(ঈশানের চুল ধরার জন্য লাফ মেরে)
ঈশানঃএখনো ছোটই থাকে গেলি রে আগেও আমার চুলে হাত পেতি না এখনো পাস না হরলিক্স খা নাকি তোর জামাইয়ের হরলিক্স কেনার সামর্থ নাই
নওশিনঃতোর আছেনা তুই খাওয়া
ঈশানঃআমার বয়েই গেছে যা সর
নওশিনঃভাগ তুই
নওশিন চলে যেতে নিলেই ঈশান নওশিনের হাত ধরে নেয় দরজা দিয়ে ঢোকার সময় আকাশ সেটা দেখে নেয় রাগে চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে। সে যেতে নিলেই আরিয়ান তার হাত ধরে ফেলে
আরিয়ানঃদেখ তাদের। হ্যা আমি মানছি ঈশান মিষ্টিবাচ্চাকে ভালোবাসেনা কিন্তু তার কাছে তার ফ্রেন্ডশিপ আগে যার জন্য সে কোন দিন ও নিজের ভালোবাসা ওর সামনে আনেনি। আর নওশিন তো ওকে ওর বেস্টফ্রেন্ড ই মানে।তাদের এই সুন্দর বন্ধুত্ব টার মাঝে নিজের পাগলামী আনিস না। মিষ্টি বাচ্চা তোর প্রকৃতি নিজে তোদের মিল করছে নাহলে একটা বার ভাব তো ৬ বছর আগে ওর প্রতি চরম ঘৃণা নিয়ে বিদেশে পারি দিলেও ঠিক তার বিয়ের আগে কি করে দেশে আসিস আর বড় চাচ্চুর ইনভিটেশন পেয়ে চলেও আসিস এখানে।
বরংচ দেখ ঈশান কিন্তু ছোট বেলা থেকে নওশিনের সাথে কিন্তু তবুও নওশিনের বন্ধুত্ব ছাড়া কোন অনূভুতি জন্মাতে পারেনি। আমার বোনটা তোকে ভালোবেসে ফেলেছে তোর পাগলামী টা এবার কমা।নাহলে ভবিষ্যৎ কি হবে কেউ জানেনা
(আরিয়ান সেখান থেকে চলে যায়)
আকাশঃআমি চাইলেও ওই পাগলামী বন্ধ করতে পারবোনা।কারন এই পাগলামী তো শুরু আমার মায়াবতীর জন্য হয়েছে।যেটার শুরু আমার মায়াবতী সেটার শেষ হয় কি করে। আমার মন কুঠিরিতে বন্দি করে রাখবো একেবারের জন্য ফোর এভার(নওশিনের হাসি ভরা মুখটা নিয়ে জোড়ে এক নিশ্বাস নিয়ে সেখান থেকে চলে যায়)
______
স্টেজে বসানো হয়েছে আরিয়ান আর আরুশিকে।সবাই তাদের ঘিরে ব্যস্ত। নওশিন এক সাইডে দাঁড়িয়ে আছে।আকাশ আর ঈশান ব্যস্ত হাজার হোক বেস্ট ফ্রেন্ড এর এনগেজমেন্ট।
নওশিন এক সাইডে দাঁড়িয়ে ছিলো হঠাৎ করে কানের কাছে কেউ একজন বলে উঠে
ঃহেই বেবিগার্ল। আগের থেকে তো দেখছি অনেক হট হয়ে গেছো(ঘোড় লাগা কন্ঠে)
ভয়েস টা শুনে নওশিন জমে যায়। নড়ার শক্তি অব্দি সে হারিয়ে ফেলেছে।চোখের সামনে ভেসে উঠে ১২ বছরের মেয়ের আত্নচিৎকার। ঘাড় ঘুরে পিছনে তাকানোর মতো শক্তি যেনো সে হারিয়ে ফেলেছে। ভয়ে তার হাত পা কাপছে। তাহলে কি অতিত ফিরতে চলেছে।
আকাশঃসুইটহার্ট(নওশিনের সামনে তুরি বাজিয়ে)
নওশিন তখনো থরথর করে কাপছে।আকাশ সেটা দেখে ভয় পেয়ে নওশিন কে বুকে টেনে নেয়
আকাশঃকি হয়েছে সুইটহার্ট বলো আমাকে। তোমার সাইকো কে বলবানা (নওশিনের চুলে হাত বুলিয়ে)
নওশিনঃসে সে ফিরে এসেছে সে আমাকে নিয়ে যাবে আমাকে নষ্ট করে দিবে আমি আমি যাবোনা যাবোনা আমাকে আমাকে,,,,,
বলতে বলতে নওশিন জ্ঞান হারায়।আকাশ নওশিনকে পাজা কোলে করে রুমে নিয়ে এসে বেডে শুয়ায় দিয়ে ডাক্তার কে ফোন দেয়
নওশিনঃবাচাও প্লিজ ছেড়ে দাও আমাকে। আমাকে ছেড়ে দেও আমি আমাকে মেরো না আহ আহান ভাইয়া ঈশান, ভায়ু আমাকে আমাকে বাচাও বা বাচাও(ঘুমের মাঝেই চিৎকার করে কান্না করছিলো আর বিলাপ বকছিলো)
আকাশের চোখ বেয়ে পানি বেরিয়ে আসে।সে কিছু করতে পারছেনা তার মায়াবতীর কষ্ট হচ্ছে আর সে কিছু করতে পারছেনা সে। কিন্তু হঠাৎ ক্ল্রে এরকুম করার কারণ সে বুঝতে পারছেনা।।।
চলবে!