আমার তুমি পর্ব-০৮

0
1995

#আমার_তুমি
#লেখিকাঃনওশিন_আদ্রিতা
#পার্টঃ৮
,
,
,
,

অন্ধকার রুমে জ্ঞান শূন্য হয়ে পরে আছে নওশিন।কপাল এর পাশ দিয়ে কেটে গেছে সেখান দিয়ে রক্ত পরতে পরতে শুকিয়ে গেছে।হাত এর অনেক টা জায়গা ছুলে নিল বর্ণ ধারণ করেছে।

হঠাৎ রুমে দরজা খুলে একটা ছেলে রুমের ভিতরে প্রবেশ করলো হাতে তার একটা বালতি।এদিকে রুমের দরজা খুলাই অন্ধকার রুমটা খানিকটা আলোকিত হলেও আলোর তীক্ষ্ণ চোটা যেয়ে পড়েছে নওশিনের মুখে।

ছেলেটা মহূর্তের জন্য যেনো থমকে গেলো।আলোর ঝলকানী পড়াতে অসম্ভব মায়াবী লাগছে নওশিন কে।যুবকটি হাত থেকে বালতি টা নিচে থুয়ে নওশিনের দিকে এগুলো।নওশিনের সামনে হাটু মুরে বসে এক হাত দিয়ে নওশিনের গালের উপর দিয়ে নিজের হাত বুলালো হাত টা উপরেই ছিলো যাতে নওশিনের গাল টাচ না করে।

ছেলেটাঃইশ আগে জানলে তো হাত টা পরিষ্কার করে আসতাম। এই নোংরা হাত দিয়ে এই ফুলটাকে ছুতে ইচ্ছা করছেনা
(আফসোস এর সুরে)

রায়নাঃহলো তোর ফ্লাটিং করা আদিল
(কটমট চোখে)
আদিলঃউফফ আপু ডিস্টার্ব করো কেন(নওশিনের মুখের দিকে তাকিয়ে)
রায়নাঃতুই কি বদলাবি না
আদিলঃহুম একে আমার করে দেও আমি বদলে যাবো
রায়নাঃমানে(অবাক হয়ে)
আদিলঃআই এম ইন লাভ আপু।
রায়নাঃলাভ সাব মাথা থেকে ঝাড় আর সামনে থেকে সর তো
আদিলঃহুম(ভেংচি কেটে)

আদিল সরতেই রায়না এক বালতি পানি নওশিনের মুখে ছুড়ে মারে।নওশিন আদো আদো করে নিজের চোখ মেলে তাকায়। চোখ খুলতেই তার মাথা ব্যাথায় টন টন করে উঠে।আশেপাশে তাকায়ে জায়গাটা চিনতে পারেনা।

রেয়ানাঃকি কই আছিস বুঝতে পারছিস না বুঝি(তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে)
নওশিনঃ আ আপনি কে।
রেয়ানাঃআমি সেই যার কাছ থেকে তুই ওর ভালোবাসা কেরেছিস
(রাগী সুরে)
নওশিনঃভা ভালোবাসা
রেয়ানাঃহ্যা ভালোবাসা। সে দুই বছর থেকে তাকে ভালোবাসি কিন্তু কোন দিন বলি নি সেদিন তাকে অনেক সাহস জোগায়ে বলেছিলাম যে আমি তাকে ভালোবাসি কিন্তু সে কি করলো সবার সামনে আমাকে থাপ্পড় মারে আর আমাকে বলে সে নাকি বিবাহিত আর সে নাকি তার ওয়াইফ কে ভালোবাসে আমার মতো মেয়ের জায়গা নাকি নাই তার লাইফে হা(তাচ্ছিল্য হেসে)
নওশিনঃ———
রেয়ানাঃখুব ভালোবাসেনা তোকে এবার সে দেখবে ভালোবাসা দূরে গেলে ঠিক কেমন টা লাগে তোকে আর কিছুক্ষনের মাঝেই বিদেশী এক গ্রুপ এসে তোকে নিয়ে যাবে এমন এক দুনিয়ায় যেখানে রোজ রোজ তোর দেহ নিয়ে খেলা করা হবে হাহা সেখানে তুই ছোট ফোট করবি আর এখানে তোর স্বামি উফফ কি মজা (খুশিতে আতহারা হয়ে)

নওশিনঃ সে আমাকে ঘৃণা করে কতোটা সেটার অনুমান ও হয়তো আমি কোন দিন ও করতে পারবোনা ভাবিনি কেউ আমাকে এতোটাও ঘৃণা করতে পারবো।আর সে নাকি আমার এই পরিনতি দেখে কষ্টে পাগল হবে(মনে মনে নিজের উপরেই তাচ্ছিল্যে করে)

নওশিনের রেয়ানার জন্য আফসোস হয় বেচারী কতোটাই না আসা নিয়ে বুক বেধেছে যে তাকে কষ্ট দিয়ে সে আকাশ কে কষ্ট দিবে হাস্যকর।।।

রেয়ানা আদিল কে নিয়ে চলে যায়।।আর নওশিন ডুব দেয় অতীতে,,,

নওশিনের মনে আকাশ এর জন্য এখন অনেক টাই সফট কর্নার তৈরি হয়েছে।নওশিন ভাবে আজকে সবার জন্য সে নিজ হাতে ব্রেকফার্স্ট বানাবে যা ভাবা তাই কিন্তু কি বানাবে সেটা ভেবে পায়না। তাই চলে যায় আকাশের কাছে সে কি খাবে সেটা শুনে রান্না বসাবে।

নওশিন আকাশ বলে ডাকতে যাবে তার আগেই আকাশ এর রাশ ভারী কন্ঠ শুনতে পায়।
আকাশঃকিসের বউ বউ শুরু করেছিস হ্যা আমি ঘৃণা করি তাকে। প্রচন্ড। তার জন্য আমি আমার ভাইকে হারায়েছি আমার মায়ের চোখের পানির শুধু তার কাছ থেকে,,,,,,,,,

আর কিছু শুনতে পারেনা তার চোখ বেয়ে পানি গরাতে শুরু করে।হতদম্ভ হয়ে বেরিয়ে আসে সে বাসা থেকে।কানে শুধু কথা গুলোই বাজতে থাকে।মাঝ রাস্তায় বসে দুই কানে হাত দিয়ে চিৎকার করে উঠে।

নওশিনঃকেনো কেনো সব সময় প্রিয় মানুষ গুলো আমাকেই কেনো ঘৃণা করে।আমাকেই কেনো। প্রথমে পরিবার তার পর বেস্টফ্রেন্ড যে বেস্টফ্রেন্ড (সেদিন ভুল করে ভালোবাসার মানুষ লিখে ফেলেছিলাম)সব সময় আমার পাশে থেকেছে সেও হুট করে একদিন এসে আমার মাথায় খুনির ট্যাগ লাগায়ে চলে যায় আজ পর্যন্ত তাকে পায়নি
আর এখন যার জন্য ফিলিং জন্মালো যে আমার সম্পর্কে স্বামি হয় সেও সেই আমাকে খুনিই মনে করে(হো হো করে হেসে দেয়)

চোখের পানিও আজকাল আমার সাথ ছেড়ে দিয়েছে নিজের ইচ্ছায় আসে নিজের ইচ্ছায় বন্ধ হয়ে যায় বাহ।

নওশিন উঠে বাসস্টপ এর দিকে রওনা দেয়। সকাল সকাল হওয়াই ঢাকার কেউ এখনো যাগে নি কিন্তু তাই দুই একটা গাড়ি ঠিক যাচ্ছে।হঠাৎ করে একটা গাড়ি নওশিনের সামনে থামে।

রেয়ানা অনেক দিন যাবত নওশিনের পিছনে নিজের লোক লাগায়েছিলো যে একা পাবে ওমনি তুলে নিয়ে আসবে আর আজকে সে সুযোগ পায়েও যায়।আর উঠায় নেয়। ঢাকা থেকে কিছুটা দূরে তাদের এক ফার্ম হাউজে নিয়ে আসে তারা নওশিনকে।

,
,
,
বর্তমানে”’
নওশিনঃহয়তো কোন দিন ও যানা হবেনা কেন আমার পুরো পরিবার আমাকে ঘৃণা করে কেন আমাকে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড ছেড়ে থুয়ে গেলো ভাইয়ুকে হাজার বার ও একই প্রশ্ন করেছি কিন্তু কোন দিন ও এর উত্তর পায়নি।হয়তো পাবোও না আর।আচ্ছা আকাশ কি এতোক্ষনে বুঝে গেছে আমি নাই। সে কি আমাকে খুজছে।আচ্ছা মামনি কি সত্যি আমার জন্য কান্না করেছে আমি কি সত্যি উনার চোখের পানির জন্য দায়ী(কান্না করতে করতে)

,
,
,
,
—————
আকাশঃআমি আমার নওশিন কে চাই কই থেকে আনবেন কি ভাবে আনবেন দেস্ট নোট মাই ম্যাটার।
(পুলিশের কলার চেপে ধরে)
ইন্সপেক্টরঃস্যার আমি আমাদের পুরো টিম ম্যাম কে খুজার জন্য লেগে পড়েছি আপনি আপনি হাইপার হবেন না প্লিজ(তোতলায়ে)
আকাশেরঃটাইম টাইম টাইম ই তো নাই আমি আমার নওশিন কে চায় যে কোন মূল্যতে হোক আমার তাকে চায়
(চিল্লিয়ে)
ইন্সপেক্টরঃস্যার হয়তো ম্যাম কারো সাথে পা,,,,

পুলিশ আর কিছু বলতে পারলোনা তার আগেই একটা ঘুষীতে ইন্সপেক্টর ফ্লোরে গরিয়ে পরলো

আকাশ হাত মুঠ করেছিলো কিন্তু তার আগেই কেউ একজন ইন্সপেক্টর কে ঘুষী মারায় তার দিকে তাকায় সে দেখে আরিয়ান রেগে তার সামনেই দাঁড়ায় আছে।

আরিয়ানঃডোন্ট ইউ ডেয়ার। আমার বোনের নামে একটাও বাজে কথা বললে মুখ ভেংগে গুরিয়ে দিবো চিনিস আমাকে তুই আমি কে আমার বোন কে (হুংকার ছেড়ে)

আকাশঃআরিয়ান তুই নওশিনে নওশ(আকাশ পারেনা পুরো কথাটা বলতে গলা কাপছে অজানা এক ভয়ে ঘিরে ধরেছে তাকে)

আরিয়ানঃবনুর খোজ পেয়েছি চল তাড়াতাড়ি
আকাশ আর কিছু না বলে ছুটে।ওরা যেতেই ইন্সপেক্টর কে দুইজন কনস্টেবল এসে তুললো

ইন্সপেক্টরঃপাগল দুইজনেই(ঠোঁটের কোনার রক্ত মুছে)
কনস্টেবলঃকিন্তু যায় বলেন মেয়েটা অনেক লাকি।যার এমন ভাই আর স্বামি আছে যার জন্য তারা দুনিয়া উল্টাতেও পিছপা হবেনা
ইন্সপেক্টরঃহা এই সে স্বামি যে কি না ৬ বছর আগে একটা নিজের বউ যখন মেয়েটার ১২ ছিলো তাকে খুনের আসামি হিসেবে গ্রেফতার করাতে এসেছিলো।
কনস্টেবলঃকিহ।
(অবাক হয়ে)
ইন্সপেক্টরঃহুম। আমার এখনো মনে আছে ওই টুকু ১২ বছরের মেয়ের বিরুদ্ধে পুরো পরিবার সিকারুক্তি দিয়েছিলো।আমি অবাক হয়ে গেছিলাম।মেয়েটা তখন হস্পিটালে ভর্তি ছিলো।সে মেয়ের উপরে আমাদের দেখেই দোয়া হয়েছিলো কিন্তু তাদের নিজেদের পরিবারের দোয়া হয়নি
কনস্টেবলঃতাহলে মেয়েটা ছাড়া পেলো কি করে
ইন্সপেক্টরঃআমি ঠিক জানিনা কোথায় থেকে পরেরদিন একটা ছেলেকে ধরে নিয়ে আসে তার নানা জান আর বলে এই নাকি খুন করেছিলো আমরা মেনে নিলেও মানতে পারেনি তার পরিবার। তারা কথামতে মেয়েটার নানা তার পাওয়ার দিয়ে নিজের নাতনীকে বাচায়েছিলো
কনস্টেবলঃওই ছেলেটাকে ছেড়ে দিয়েছিলেন
(অবাক হয়ে)
ইন্সপেক্টরঃ২ বছর আগে যে ছেলেটাকে রেহায় দেওয়া হলো ওই ছেলেটাই ছিলো খুনি সব প্রমান আমরা পেয়েছিলাম বছর ৩ এক আগে ওর ফ্যামলিকে জানায়েও ছিলাম কিন্তু ওর ফ্যামিলি বিশ্বাস করেনি

——–_–

আকাশ আর আরিয়ান এসে পৌছায় বন্ধ বাড়িটার সামনে।ভিতরে যেতেই লোকদের কথা শুনে থমকে যায় দুইজনে,,,,,,

চলবে!

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে