#আমার_তুমি
#পর্ব_৭
#জান্নাত_সুলতানা
-“মা ও কে খুব মেরেছে।
আর বলেছে যদি আপনার সাথে যোগাযোগ করে তা হলে ভালো হবে না।”
-“কারণ টা কি তোমার বিয়ে ভেঙ্গে যাবে তাই?”
-“হুম।
মায়ের মতে।
প্লিজ একটা কিছু করুন। আমার বোন টা ভীষণ কষ্টে আছে।”
কথা গুলো বলতে বলতে আয়না কেঁদে ফেলে।
রাহাত পাশেই বসে আছে। সাদনান সামনে বসে আছে বলে ধরতে পারছে না। কিছু বলে সান্ত্বনাও দিতে পারছে না।
সাদনান বড় ভাইয়ের মনের কথা আন্দাজ করতে পেরে সর্ট কার্ট জবাব দেয়
-“চিন্তা করো না মাই ডিয়ার হবু ভাবি।
আমি আমার ছোট জান কে নরক থেকে নিয়ে এসে নিজের বাহুবন্ধনী করে নেবো।”
কথা গুলো বলেই সাদনান চেয়ার ছেড়ে টেবিলের উপর থেকে বাইক এর চাবি টা তুলে নিয়ে হনহনিয়ে ক্যাফে থেকে বেড়িয়ে গেলো।তার বুকে ভীষণ জ্বালা করছে। সাদনান আগেই কিছু টা আন্দাজ করে ছিল। আর এখন সে পুরো পুরি কনফার্ম। মিতা সওদাগর এসব করছে।
আয়না তখনো কাঁদছে।
রাহাত আয়না কে নিজের কাঁধে নিয়ে সান্ত্বনা দিয়ে বলে উঠে
-“আর কেঁদো না।
তুমি আমার ভাই কে চিনো না। ও ওর জিনিস খুব ভালো করেই আগলে রাখতে জানে।”
-“জানেন ছোট মনি প্রিয়তার জন্ম দিয়ে মা-রা যায় অপারেশন থিয়েটারে।
ছোট মনির জরায়ুতে টিউমার ছিল যেটে আগে ধরা পড়ে নি।তাই মনি বাঁচে নি।তখন মা ছোট প্রিয়তা কে আগলে নেয়।মা ওকে খুব ভালোবাসতো। এবং এখনো বাসে।ওর খাবার থেকে শুরু করে ঘুম যাবতীয় সব কাজ মা করতো।
সাথে আমাদের হোটেল। বাবা তো পাগল হয়ে ছয় বছর মেন্টাল হসপিটালে ভর্তি ছিল ছোট মনির মৃত্যুর পর পাগল হয়ে গিয়ে ছিল।
তখন মা ব্যবসা বাড়ি, আমাদের ছোট প্রিয়তা কে সামলাতো।সাথে ভাইয়া মায়ের সঙ্গে লেখা পড়ার সঙ্গে ব্যবসারও দেখা শোনা করতো।এভাবেই চলছিল দিন। এরমধ্যে প্রিয়তার যখন সাত বছর তখন দাদু হঠাৎ করেই আমাদের ছেড়ে চলে গেলো।এর মধ্যে বাবাও সুস্থ হয়ে গিয়ে ছিল।কিন্তু ঝামেলা হলো তখন যখন দাদু মারা গেলো বাবা সুস্থ হয়ে ফিরে এসে সবার থেকে বেশি প্রিয়তা কে বেশি ভালোবাসত আলাদা একটা যত্ন করতো। আর মা তখন থেকে আবার কেমন হয়ে গেলো।”
কথা গুলো এক নিঃশ্বাসে বলেই আয়না টেবিলে থাকা পানির গ্লাস হাতে নিয়ে সব টা পানি এক টানে খেয়ে ফেলে।
অতঃপর গভীর শ্বাস ফেলে আবারও বলে উঠে
-“এখানে এতো কিছুর মাঝে সব থেকে বড় অপরাধী কে জানেন?”
রাহাত প্রশ্নবোধক চাহনি দিয়ে জিজ্ঞেস করে উঠে
-“তোমার মা?”
-“না আমার বাবা।
তিনি যদি তখন এক কথা বিয়ে করবে না বলে চলে আসতো। তাহলেই হতো। না ছোট মনি কে এতো কষ্ট পেতে হতো না প্রিয়তা আর নাই আমার মা এমন পাষাণ হতো।”
আয়না আবারও কেঁদে ফেলে। রাহাত আয়না কে নিজের এক বাহুতে আগলে নিয়ে বলে উঠে
-“চিন্তা করো না সব ঠিক হয়ে যাবে।”
আয়না কিছু বলে না চুপ চাপ পড়ে থাকে সেভাবেই।
——-
জাফর মির্জা গম্ভীর মুখ করে বসে আছে সোফায়। বাড়ির প্রতি টা ব্যক্তি এখানে উপস্থিত আছে।
মূলত সাদনান একটু আগে এমন সব কথা বলেছে যে সবার কাছে মনে হচ্ছে বোমা ফাটার মতো অবস্থা ছিল আর এখন তা শীতল হলো।
আজ্জম মির্জা চুপ কোনো কথা বলছে না সে নির্বিকার। তার বাবা যা সিদ্ধান্ত নেবে তিনি তাই মেনে নেবে।
সবার ভাবনার মাঝেই জাফর মির্জা উঠে দাঁড়ালো সোফা ছেড়ে।
একটু এগিয়ে এসে সাদনানের সামনে দাঁড়িয়ে বলে উঠে
-“রাতে আমার রুমে আসবে।
তোমার সাথে আমার গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা আছে।”
কথা শেষ তিনি হনহনিয়ে চলে গেলো নিজের কক্ষে।
আম্বিয়া মির্জাও স্বামীর পিছু নিলেন।
সুফিয়া বেগম রান্না ঘরে চলে গেলো। মাইশা সারা নিজেদের রুমে।
যাওয়ার সময় ফুসুর ফুসুর করে কিছু বলাবলি করছিল।
রাহাত বাড়ি আসে নি এখনো।
মাইশার বাবা মফিজুর মির্জা ব্যবসায়িক কাজে দুই দিন যাবত বাড়ির বাহিরে।
আজ্জম মির্জা চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে ছেলে কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে
-“আরেক বার ভেবে দেখতে পারো বিষয় টা।
আমার মনে হয় না শফিক ওর ছোট মেয়ে কে এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে দেবে বলে।”
-“ভেবেই বলছি।
আর বিয়ে দিবে না তো আমার অন্য পদ্ধতি জানা আছে।”
শান্ত আর গম্ভীর কণ্ঠে কথা গুলো বলেই সাদনান সিঁড়ি দিয়ে উপর উঠে নিজের রুমে চলে গেলো।
সালেহা বেগম স্বামীর নিকট এগিয়ে এলেন।
চিন্তিত কণ্ঠে কপালে ভাজ ফেলে শুধালো
-“মেয়ে টা বেশ ভালো।
কিন্তু বাবা কি রাজি হবে?”
আজ্জম মির্জা স্ত্রী কথার কোনো উত্তর করে না।
তিনি ভাবছে।
খুব মনোযোগ দিয়ে কিছু ভেবে চলছে।
তার ছেলের মাথায় যা বৃদ্ধি ঠিক তার বাপ কে রাজি করিয়ে নেবে তিনি জানেন।
এ-সব ভেবেই আজ্জম মির্জা আপনমনে হাসলেন।
———
-“আমি কি বলেছি বুঝতে পেরেছো?”
-“সুযোগ নিচ্ছো?”
-“মোটেও না।
আমি শুধু তোমার ভালো চাই।”
জাফর মির্জা সাদনান কে এমপি পদে দাঁড় করাতে চায়।
আর তিনি সেটা সাদনান কে বলেছে সাথে এটাও বলেছে এমপি পদে তার জয় নিশ্চিত।
আর চাইলে সে পড়ে পদত্যাগ করতে পারবে।
-“তোমার পর তোমার বাবা আছে।”
-“তা হলে বাবা কেই দেও।”
সাদনানের কথায় জাফর মির্জা একটু চুপ থাকে অতঃপর মাথা নেড়ে সম্মতি দিয়ে বলে উঠে
-“এটা মন্দ বলো নি।
আচ্ছা আমি দলের সাথে কথা বলে দেখছি।”
সাদনান দাদার কথায় মুচকি হেসে রুম ছেড়ে বেড়িয়ে আসে।
আজ্জম মির্জার ভাবনা সত্যি হয়েছে তার ছেলে বৃদ্ধি মান।
কিভাবে জাফর মির্জা কে রাজি করিয়ে নিলো।
——–
রাত প্রায় এগারো টা।
আয়ান বোন কে খাবার খাইয়ে দিয়ে ঔষধ খাইয়ে দিলো।
আজ প্রিয়তার ভীষণ জ্বর কিন্তু একবারও মিতা সওদাগর আসে নি।শফিক সওদাগর সন্ধ্যা মেয়ের পাশে বসে ছিল।প্রিয়তা তখন ঘুমিয়ে ছিল।আয়না শুধু দেখেছে আর কেউ না।
আয়নাও বসে আছে বোনের পাশে।
আজ আয়না থাকবে এখানে।
আয়ান প্রিয়তার খেয়াল রাখতে বলে সে চলে গেলো।
আয়নাও প্রিয়তার এক পাশে শুয়ে বোন কে জড়িয়ে ধরে।
ঠিক তক্ষুনি বালিশের তলায় থাকা আয়নার ফোন টা সশব্দে বেজে উঠে আয়না ভাবে হয়তো রাহাত কল করেছে।
কিন্তু ফোন হাতে নিয়ে চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম।
সাদনান কল দিয়েছে।
কিন্তু কেন?
আয়না সব ভাবনা বাদ দিয়ে ফোন টা রিসিভ করতেই ওপাশ হতে রাশভারী কণ্ঠে সাদনান বলে উঠে
-“এ-তো রাতে ডিসটার্ব করার জন্য দুঃখীত ভাবি।”
-“না না ঠিক আছে।
প্রিয়তা তো জ্বর ঘুমিয়ে পরেছে।”
-“তুমি ফোন টা দেও ওর কাছে।”
আয়না কান হতে ফোন নামিয়ে প্রিয়তা কে ডেকে ওর হাতে ফোন টা দিয়ে ফিসফিস করে বলে উঠে
-“নে ধর।
সাদনান ভাই।”
প্রিয়তা পিটপিট করে চোখে তাকিয়ে ফোন টা হাতে নিয়ে বলে উঠে
-“আপনি আবার আমার স্বপ্নে এসছেন, সাদনান ভাই?”
প্রিয়তার কথা শুনে আয়নার চোখ ছানাবড়া।
এই মেয়ে কি সব বলছে?
কিন্তু ফোনের ওপাশে থাকা সাদনান ঠোঁট টিপে হেসে গম্ভীর কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে
-“আমি তোমার স্বপ্নে আসি?”
-“হ্যাঁ।
আসেনেই তো।এইযে এখন এসছেন।
কিন্তু সবসময় আপনি চুপ থাকেন আজ প্রথম কথা বললেন।”
প্রিয়তা ঘুম ঘুম কন্ঠে উত্তর দেয়।
সাদনানের ভ্রু কুঁচকে আসে।
আয়না বুঝতে পারে বোন তার জ্বরের মধ্যে আজেবাজে বলছে।
কিন্তু চুপ চাপ বসে থাকে সে।
সাদনান ওপাশ থেকে এবারও রাশভারী কণ্ঠে বলে উঠে
-“এখন থেকে আর স্বপ্নে নয় রোজ সামনে থেকে দেখতে পারবে।
সে দিন বেশি দূর না আমার ছোট জান।”
#চলবে…….