#আমার তুমি
#পর্বঃ৪
#Tanisha Sultana (Writer)
আজ তুলির এইচএসসি পরীক্ষা। প্রায় সারা রাত বই নিয়ে বসে ছিলো। তারাহুরো করে রেডি হয়। তুলির বাবা ভাই তুলির সাথে যেতে চেয়েছিলো কিন্তু সাথে নেবে না তুলি কারণ জীম যাবে।
রাস্তার পাশে যেতেি তুলি দেখে জীম একটা মেয়ের সাথে কথা বলছে৷ তুলি জীমের দিকে এগিয়ে গিয়ে একটু কাশি দেয়। জীম তুলির দিকে তাকায়
“মারিয়া তুমি যাও আর তুলিকে পৌঁছে দিয়ে আসি
মেয়েটা হাসি মুখে বাই বলে চলে যায়। তুলির কেনো যানি খারাপ লাগছে। বারবার ভাবছে কে মেয়েটা? জীমের সাথে কি সম্পর্ক?
” তুলি নামো
জীমের কথায় ভাবনার জগৎ থেকে বের হয় তুলি।
“নামো কলেজ এসে গেছি
তুলি নামে জীমও নামে।
” একটা কথা বলবো জীম
“বলো
” আমি কিন্তু শুধুমাত্র আপনাকে পাবো বলে লেখাপড়া করেছি। আপনিও কিন্তু বলেছিলেন আমি A+পেলে আপনি আমাকে
জীম তুলিকে থামিয়ে বলে
“তুলি তুমি এখানে এক্সাম দিতে এসেছো এইসব বিষয়ে ডিসকাসড করতে নয়। তুমি পড়ালেখা তোমার ফিউচারের জন্য করেছো। জীবনে উন্নতি করার জন্য করেছো। আমার জন্য না
” জীম
“এক্সামের সময় হয়ে গেছে যাও
জীম
” যেতে বলেছি গো
তুলি চলে যায়।
“কী করবো আমি এখন৷ এই মেয়েটাতো পাগলামি শুরু করে দিয়েছে। উফফ
জীম হাফ ছেড়ে চলে যায়।
দেখতে দেখতে তুলির এক্সাম শেষ হয়। জীমও এখন আর তুলির সাথে তেমন কথা বলে না। দেখা হলে দুএকটা বলে না হলে নাই। জীমের নাম্বারও ওয়েটিং পায় তুলি। তুলির মনটা বড্ড খারাপ।
আজ জীম আর রাইয়ের গায়ে হলুদ। তুলির এক্সামের জন্য বিয়েটা পিছিয়ে দিয়েছিলো। সবাই কতো হাসিখুশি কত আনন্দ করছে। কিন্তু তুলির মুখটা ভার। গায়ে হলুদে যাওয়ার কোনো ইচ্ছে ছিলো না তুলির কিন্তু জীমের সাথে দেখা করা প্রয়োজন। জীমের কাছ থেকে জানতে হবে এমন কেনো করছে তাই যেতে রাজি হয়। পার্লারের বিউটিশিয়ানরা তুলিকে খুব সুন্দর করে সাজিয়ে দেয়।
তুলি রাইদের বাড়িতে এসে চারদিকে জীমকে খুঁজছে কিন্তু পাঁচ্ছে না। তুলি রাইয়ের কাছে যায়। হলুদ দেওয়ার জন্য যে স্টেজ সাজানো হয়েছিলো সেখানে রাই বসেছিলো। তুলি রাইয়ের পাশে বসে
” বাহহ আমার ননদীনিকে তো পুরাই হলুদ পরি লাগছে
“জীম কোথায়?
” কেনো বলোতো
“বলো না প্লিজ
” ভাইয়া তো এখানেই ছিলো
“আমি খুঁজলাম
” আশেপাশেই আছে খুঁজে দেখো
তুলি মুখ গোমড়া করে আশেপাশে খুঁজতে যায়। কোথাও খুঁজে পায় না। পাবে কি করে জীম তো তুলিকে দেখেই লুকিয়ে পরেছে। “যে হারিয়ে যায় তাকে খুঁজে পাওয়া সম্ভব। কিন্তু যে ইচ্ছে করে আড়াল হয়ে যায় তাকে খুঁজে পাওয়া অসম্ভব ”
তুলিরা বাড়ি ফিরে আসছে। তুলির চোখ দিয়ে পানি পরছে। কেনো জীম এমন করলো। “যদি দুরে চলেই যাবে তাহলে কেনো কাছে এলো””
আজ তাজ আর রাইয়ের বিয়ে। তাজ বিয়ে করতে রাইদের বাড়িতে চলে এসেছে। তুলি বরযাত্রীর সাথে আসে না। তাই জীম ভাবে তুলি হয়ত আসবে না।
জীম ফ্রেন্ডদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলো
“জীম
পেছন থেকে তুলি ডাকে। তুলিকে দেখে জীম চমকে ওঠে।
” আপনার একটু যাবেন প্লিজ আমি ওর সাথে কথা বলবো
জীমের ফ্রেন্ডরা চলে যায়।
“তুলি আই এম সরি। আমি তোমাকে ফ্রেন্ড ভাবি। আর তোমার মা আমার কাছে দুঃখ করেছিলো তিনি তোমার ফিউচার নিয়ে চিন্তিত ছিলো। আর তুমি আমি ছাড়া আর কারো কথা শুনো না তাই আমি তোমাকে পরতে বলেছি। তোমার এক্সাম শেষ আর তুমি যে ভালো রেজাল্ট করবে এটা আমি শিওর। তাই এখন আমার মনে হয় তোমার সাথে আমার যোগাযোটটা বন্ধ করে দেওয়াই ভালো। তুমি অনেক দুরে যাবে
” কি ভাবেন আপনি আমাকে? পুতুল আমি যখন ইচ্ছে হবে নাচাবেন তাই তো। কে ভাবতে বলেছিলে আপনাকে আমার ফিউচার নিয়ে। কাল থেকে পাগলের মতো খুঁজছি আমি আপনাকে আর আপনি লুকিয়ে আছেন।
“তুলি আমার গার্লফ্রেন্ড আছে। আর আমি আমার রিলেশনশিপ এ খুব সিরিয়াস।
” তাহলে আমার সাথে নাটক কেনো করলেন। আমার অনুভূতি নিয়ে কেনো খেলা করলেন? আপনাকে প্রথম দেখেছিলাম শপিং মলে। নামটাও জানতাম না আপনার। পাগলের মতো খুঁজেছি। যখন পেলাম না তখন ভেবে নিলাম আপনি আমার না দেখা ক্রাশই থেকে যাবেন। হঠাৎ এডফ্রেন্ডে আপনার আইডি দেখে রিকোয়েস্ট দেই। মেসেজ রিকোয়েস্ট দেই কিন্তু আপনি রেসপন্স করেন নি। সেটাও মেনে নিয়ে ছিলাম। আপনাে প্রপোজ করার দিন যদি আপনি আমাকে একটা থাপ্পড় মারতেন তবুও ভালো হতো।
কান্না করতে করতে বলে তুলি
“লিসেন তুলি
” আমি কিচ্ছু শুনবো না
চিৎকার করে বলে তুলি। তুলির চিৎকারে সবাই তুলির কাছে চলে আসে
“আমার অনুভূতি নিয়ে খেলার সাহস আপনাকে কে দিলো?
” তুলি কি হয়েছে?
তাজ তুলির কাছে এসে বলে। তুলি তাজকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদে
“বোন শান্ত হয়ে বল কি হয়েছে?
” আমাকে ঠকিয়েছে
“কে ঠকিয়েছে বল আমায়
তুলি তাজকে ছেড়ে
” থাকবো না আমি থাকবো না এখানে
তুলি পাগলের মতো দৌড়ে বেরিয়ে যায়। তাজও তুলির পেছনে দৌড়ায়। বিয়ে পরানো শেষ হয়ে গেছে।
অনেকখন দৌড়ে তুলি সেন্সলেস হয়ে যায়।
তুলি চোখ খুলে দেখে বাবার কোলে শুয়ে আছে। মা সায়ান তাজ রাই সবাই তুলির পাশে বসে আছে। রাই এখনো বিয়ের শাড়ি পরে আছে। তুলি উঠে বসে
“সোনা কি হয়েছে তোর? (বাবা)
” বোন বল না (তাজ)
“আমি আর কখনো তোকে বকবো না প্লিজ বল
(তুলির মা কান্না করতে করতে বলে)
” আমার খুব খিদে পেয়েছে
তুলি মাথা নিচু করে বলে। রাই খাবার এনে দেয়। তুলির বাবা খাইয়ে দিচ্ছে। তুলি শুধু ওদের দিকে তাকিয়ে আছে।
তখন হুরমুর করে জীম জীমের বাবা আর মা ঢোকে। তুলি জীমকে দেখে খাবারের থালা ছুরে ফেলে দেয়।
“আমাকে রুমে দিয়ে আসো
তুলি চিল্লিয়ে বলে
” তুলি
“আমাকে দিয়ে আসবে না কি আমি একাই যাবো।
তাজ তুলিকে কোলে করে রুমে নিয়ে যায়। বেডে বসিয়ে দিয়ে তুলির সামনে হাটু মুরে বসে বলে
“কি হয়েছে বোন? আমাকে বলা যায় না
তুলি হুহু করে কেঁদে ওঠে।
চলবে