#আমার তুমি
#পর্বঃ৩
#Tanisha Sultana (Writer)
আজ তাজ আর রাইয়ের বিয়ের পাকা কথা বলতে জীমদের বাড়ির সবাই তুলিদের বাড়িতে আসে। সবাই বসার ঘরে বসে কথা বলছে। তাজ আর রাইকে ছাঁদে পাঠানো হয়েছে আলাদা করে কথা বলার জন্য। জীম একপাশে বসে ফোন দেখছে। তুলি দরজায় উঁকি দিয়ে জীমকে দেকছে। পেছন থেকে সায়ান তুলির কাঁধে হাত রাখে। তুলি চমকে ওঠে
“কে
” তোর ভাই
“ওহহ তুই
” উঁকি মারছিলি কেনো?
“কি করবো জীমের সামনে যাওয়ার সাহস নেই। তাই লুকিয়ে দেখছিলাম।
” তুই প্রপোজ করে দে ও কে
“মাথা খারাপ তোর। গিলে খাবে আমাকে
” আমি আছি তো। কিচ্ছু হবে না
মনের কথা বলে দেওয়ায় ভালো
“বলছিস
” হুম। দাঁড়া আমি ব্যবস্থা করছি।
তুলি ছাঁদে চলে যায়। সায়ান জীমের কাছে যায়।
“ভাই একটু কথা ছিলো
” বলো
“এখানে না
জীম সায়ানের সাথে ছাঁদে যায়। জীম ছাঁদে পা রাখতেই সায়ান বেরিয়ে দরজা আটকে দেয়
” এই দরজা খুলো
জীম দরজা টানে আর বলে। সায়ান দরজা আটকে চলে যায়।
“শুনুন
জীম পেছনে ফিরে দেখে তুলি।
” তুমি এখানে?
“কিছু বলতে চায়
” বলো
“আমি গত তিন বছর যাবৎ আপনার ফলোয়ার হয়ে আছি। প্রতিদিন আপনার প্রোফাইল ঘুরি। অনেক অনেক মেসেজ দিয়েছি কিন্তু আপনি আমাকে এক্সেপ্ট করেন না।
” কেনো করেছো এগুলো?
“জানি না তবে আপনাকে দেখতে আমার ভালো লাগে। আপনার বকা গুলোও ভালো লাগে। সব সময় আপনার সাথে থাকতে ইচ্ছে হয়।
” ডু ইউ লাভ মি
“ইয়েস
তুলি ভয়ে ভয়ে বলে এই বুঝি গালে থাপ্পড় পরলো। মাথা নিচু করে আছে তুলি।
“মন দিয়ে লেখাপড়া করো। আর দরজা খোলানোর ব্যবস্থা করো
” লেখাপড়া করলে আপনি আমাকে ভালোবাসবেন?
“আগে করো তো
তুলি মন খারাপ করে সায়ানকে ফোন দিয়ে দরজা খুলতে বলে। সায়ান দরজা খুলে দেয়। জীম দরজার কাছে গিয়ে পেছনে ফিরে বলে
” A+ পেলে হ্যাঁ বলবো
সায়ান চলে যায়। তুলির মন খারাপ কারণ তুলি খুব ভালো করেই জানে তুলি কখনোই A+ পাবে না। তবুও চেষ্টা করতে হবে। তুলি নিজের রুমে গিয়ে পড়তে বসে। তুলির মা তুলিকে ডাকতে আসে।
“আজ কি সুর্য উঠে নাই না কি?
” তুমি চোখে দেখো না।
“হয়ত ভুল দেখছি
” ঠিকই দেখছো। আমি এইবার ভালো রেজাল্ট করে পাশ করবো
“আলহামদুলিল্লাহ। এখন চল রাইরা চলে যাচ্ছে তোকে ডাকছে।
তুলি বই বন্ধ করে মায়ের পিছুপিছু যায়।
ওরা বিদায় নিচ্ছে তুলি একপাশে দাঁড়িয়ে আছে।
” তোমার ফেসবুকে কি মানে আইডি চালাও
হঠাৎ এরকম কথা শুনে তুলি চমকে পাশে তাকায় দেখে জীম দাঁড়িয়ে আছে।
“তাইবা তাজনিম তুলি
” ওকে
“এক্সেপ্ট করবেন তো? ঝুলে থাকতে থাকতে কোমর ব্যাথা হয়ে গেছে।
জীম মুখে কিছু বলে না। তুলির আড়ালে একটু হাসে।
তুলি অনেক রাত ওবদি পড়ালেখা করে। রাত একটা বেজে আট মিনিট
” প্রেমে পরার কি শাস্তি। না জানি সামনে আরও কি কি করতে হয়।
তখন তুলির ফোনে একটা নোটিফিকেশন আসে। চেক করে দেখে জীম এক্সেপ্ট করেছে। তুলির তো খুশিতে লুঙ্গি ডান্স করতে ইচ্ছে করছে।
তখন টুংটাং মেসেজের শব্দ হয়। জীম একটা ভয়েস পাঠিয়েছে। একটা গান
“বলো আমায় কখনো ছেড়ে যাবে না
এই হাত দুটো আলাদা করে দেবে না
” না না আমি কোনো কিছু চায় না
তুমি হলে আমার আর কিছু লাগে না
এই গানটা। তুলির তো এবার ঘুম উরে গেছে। শুধু বারবার গানটা শুনছে।
“প্রেমে পরার মতো সুখ বোধহয় আর নেই”
সারা রাত গান শুনে শুনে সকালে একটু চোখ লেগে যায়। আবার ফোনের এলার্ম এ ঘুম থেকে লাভ দিয়ে ওঠে তুলি। তারপর ফ্রেশ হয়ে কোচিং এ বেরিয়ে যায়। যে করেই হোক ভালো রেজাল্ট করতেই হবে।
কোচিং শেষে তুলি আর জিসান ক্লান্ত হয়ে পরে
“জিসান চল কিছু খেয়ে আসি
” হুম চল
তুলি আর জিসান হাসাহাসি করছে আর ফুসকা খাচ্ছে। জীম এদিক দিয়ে যাচ্ছিলো তো তুলিকে দেখে তুলির দিকে এগিয়ে আসে
“হেই তুলি
জীমকে দেখে তুলি গুড গার্ল হয়ে যায়।
” আপনি
“তোমাকে দেখতে পেয়ে আসলাম। ও কে?
” বেষ্ট ফ্রেন্ড
“ওহহ তো বাসায় যাবে তো
” হুম
“চলো আমি পৌঁছে দিচ্ছি
তুলি জীমের পিছু পিছু যায়। জিসান হা করে তাকিয়ে আছে। তুলি ইশারায় বাই বলে চলে যায়।
জীম ডাইভ করছে তুলি পাশে বসে জীমের দিকে তাকিয়ে আছে
” এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো?
“ওই যে বললাম আপনাকে দেখতে ভালো লাগে
” এতো দেখো না প্রেমে পরে যাবে
“প্রেমে পরলে হ্মতি কি
” অনেক হ্মতি। প্রেম একটা অসুখের মতো তোমার ঘুম কেরে নেবে। তোমার চিন্তাশক্তি কমিয়ে দেবে। আবার তুমি প্রেমকে ড্রাগস ও ভাবতে পারো কেনোনা একবার এডাকশান হয়ে গেলে শত চেষ্টা করেও আর এটা থেকে বের হতে পারবে না
“আমি এই প্রেম নামক ড্রাগস এ এডাকশান অলরেডি হয়ে গেছি
বিরবির করে বলে তুলি।
” আমি একটা জিনিস খেয়াল করেছি তুমি আমার সামনে আসলে কেমন চুপসে যাও। কেনো??
“আমিও জানি না। কি জানি হয় আপনার সামনে আসলে আমি আমাকেই ভুলে যায়
জীম একটু হাসে। তুলি খুব করে ইচ্ছে হচ্ছে জীমের হাতটা ধরতে। কিন্তু সাহস করে ধরতে পারছে। তুলি এবার চোখটা বন্ধ করে জোরে শ্বাস নিয়ে জীমের হাতের ওপর হাতটা রাখে।
জীম চমকে তুলির দিকে তাকিয়ে হাত সরিয়ে নিতে নেয়
” প্লিজ
জীম আর হাতটা সরায় না। তুলি নিঃশব্দে হাসে।
তুলিদের বাড়ির সামনে জীম গাড়ি থামায়। তুলি হাতটা সরিয়ে নেয়
“আমি আপনার হাতটা ধরতে চায় জোর করে না ভালোবেসে। আপনার সাথে চলতে চায়। আপনার ওই মায়াবী চোখে আমাকে হারাতে চায়। আমি আপনার #আমার তুমি হতে চায়।
কথাগুলো বলে তুলি চলে যায়।
” মেয়েটা তো খুব সুন্দর করে কথা বলে।
জীম গাড়ি নিয়ে চলে যায়।
রাতে তুলির মা তুলিকে খেতে ডাকছে কিন্তু তুলির কানে কথাই ঢুকছে না। তুলিতো জীমের ভাবনায় ব্যস্ত। সায়ান তুলির মাথায় চাটি মারে। তুলির ধ্যান ভাঙে
“কি এতো ভাবিস বল তো
তুলি কুশল জড়িয়ে বলে
” প্রেমে পরেছি
“তা তো দেখতেই পাচ্ছি। খেতে চল। প্রেম তো আর পেটে ভাত দেবে না
” হুম চল
তুলি কোনোরকম খেয়ে রুমে এসে পারতে বসে। আবার জীমের ভয়েস রেকর্ড আসে। আজ
“প্রেমে পরা বারণ কারণে অকারণ
এই গানটা। তুলির আজকেও লেখাপড়া মাথায় উঠেছে। কিন্তু গান শুনে তুলির মনটা খারাপ হয়ে যায়। এরকম গান কেনো পাঠালো। ধুর গান তো গানই।
এভাবেই দিন কাটছে। যতদিন যাচ্ছে তুলি জীমের প্রতি তত দুর্বল হয়ে পরছে৷ কিন্তু জীমকে দেখে কিছু বুঝার উপায় নেই। আজ জীম তুলিকে নিয়ে ফুসকা খেতে এসেছে।
জীম তুলি পাশাপাশি চেয়ারে বসে আছে। ফুসকা মামা ফুসকা বানাচ্ছে। তুলি ফোন বের করে বলে
” একটা সেলফি প্লিজ
“শিওর
তুলি আর জীম কয়েকটা পিক তুলে।
” জানেন জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে ক্যামেরায় বন্দী করা উচিৎ
“কোন দুঃখে
“যখন আমরা আলাদা হয়ে যায় বা বুরো হয়ে যাবো তখন এগুলো দেখতে পারবো। আমাদের ফেলে যাওয়া মুহূর্ত গুলো মনে পরলে পিক দেখে অনুভব করতে পারবো।
” এক্সিলেন্ট এরকম করে তো আমি কখনো ভাবি নি। তবে এখন থেকে তাই করবো।
“আমি আপনাকে খুব ভালোবাসি জীম
” হয়েছে খাও
“আমি আপনাকে সত্যিই খুব ভালোবাসি। প্রচুর দুর্বল আপনার প্রতি। আমি আপনাকে না পেলে আমি কি করবো নিজেও জানি না
” ঠিক আছে খাও। পরে দেখা যাবে
তুলি ফুসকা মুখে দেয়। জীম একবার তুলির মুখের দিকে তাকায়।
চলবে