#আমার তুমি
#লেখিকাঃনওশিন আদ্রিতা
#পার্টঃ২
নওশিন অবাক হয়ে দেখছে এটা কোন বাড়ি বা এপার্টমেন্ট না এটা একটা হোস্টেল। হোস্টেল এর বাহিরে বড় বড় করে লেখা ****গার্লস হোস্টেল।নওশিন ঘাড় ঘুরিয়ে আকাশ এর দিকে চাইলো।সে মনে করেছিলো আকাশ হয়তো তাকে তার বাসায় নিয়ে যাবে। পরক্ষনে আবার নিজের ভাবনাকেই ধিক্কার জানালো
নওশিনঃযে ছেলে বিয়েটা মানতেই রাজিনা সে তোকে তার বাসায় ঠায় দিবে কি করে ভাবলি তুই। সে যে তোকে ওই নরক থেকে নিয়ে এসেছে এটাই কি কম আরও আশা করাটা নেহাৎ বোকামি ছাড়া আর কিছুই না(নিজেকে মনে মনে কথা গুলো বলে তাচ্ছিল্যে হাসলো)
নওশিন নিজেকে যতই বুঝাক তবুও বাকী ৫ টা মেয়েদের মতো স্বপ্ন ছিলো যে তার ও বিয়ে হবে সে তার শশুড় বাড়িতে যাবে আলাদা একটা রাজ্যে গরবে তার নিজের রাজ্যে।।
আকাশঃএই যে ভাবনা রানী আপনার ভাবনা শেষ হলে আমরা ভিতরে যেতে পারি(সামনে হাটা ধরে)
নওশিন কিছুনা বলে আকাশ এর পিছন পিছন হাটতে শুরু করে।আকাশ নওশিন কে নিয়ে যায় হোস্টেলের এর ম্যানেজার এর কাছে।সেখান সব ফর্মালিটিস মেন্টেন করে নওশিন কে রুমে নিয়ে যায়।
আকাশঃএটা তোমার রুম। যা যা প্রয়োজন সব এখানে রয়েছে আর তোমার ড্রেস আমি বিকালে যেয়ে নিয়ে আসবো এখন রেস্ট নেও কিছু ক্ষন পরে এসে হোস্টেলের কর্মী তোমাকে ড্রেস আর খাবার দিয়ে যাবে।
নওশিনঃঠিক আছে(মাথা নিচু করে আসতে করে উওর দেয়)
আকাশঃসমস্যা হবে না তো একা পারবে তো সব সামলাতে(নওশিনের দিকে তাকিয়ে)
নওশিনঃআমাকে তো পারতেই হবে।আপনি আমার জন্য এতো কিছু করছেন তার জন্য আমি কৃতজ্ঞ (মাথা নিচু রেখেই)
আকাশ এর কেন যেনো কথাটা সহ্য হলোনা। মনে হলো এক আকাশ সমান অভিমান নিয়ে কথা গুলো বলছে নওশিন।কিন্তু তাদের মাঝে আদৌও রাগ অভিমান করার সম্পর্ক তৈরি হয়েছে।
আকাশ একবার নিচু হওয়া মুখটার দিকে তাকায়।কিছুক্ষনের ব্যবধানে কেমন যেনো নিস্তেজ হয়ে গেছে মুখ খানি কিন্তু মুখের মায়া কমেনি এক বিন্দু। আকাশ এর মনে বাধন ছাড়া কিছু ইচ্ছা এসে হানা দিলো। আকাশ এর অনিচ্ছা স্বর্তেও খুব করে ইচ্ছা করছে নওশিন এর কপালে নিজের ঠোঁট ছোয়াতে কেন এমন হচ্ছে সে যানে না।
আকাশঃমনে হচ্ছে তোমাকে আগেও আমি দেখেছি খুব কাছ থেকে তোমাতে মিশেছি কিন্তু কেনো। কিসের একটা টান অনুভব হচ্ছে।এটা কি শুধুই ৩ কবুলের জোড় নাকি অন্য কিছু (মনে মনে)
আকাশ কিছু না বলে বেরিয়ে যায়।নওশিন বিছানার উপরে বসে আসেপাশ টা একটা বার পরক্ষ করে নেয়।
সাদা আর মিষ্টি রঙ এর সংমিশ্রণ এর ঘড়টি।একটা সিংগেল বেড একটা ছোট সাইজের আলমাড়ি একটা টেবিল। ব্যাস এই টুকুই।
কিছু ক্ষনের মাঝেই মাঝ বয়সী একটা মেয়ে দরজাই টোকা দেয়। নওশিন দরজা টা খুলে দিতেই মেয়েটা খাবার আর কাপড় নিয়ে এসে বিছানায় থুয়ে যায়।।
নওশিনের মনে হয়েছিলো হয়তো আকাশ আসবে। কিন্তু তার ধারণা ভুল ছিলো।হয়তো আকাশ আর কোন দিন ও আসবেনা আবার ভাবে নাহ সে তো বললো বিকালে আসবে।।
নওশিন নিজের মনের সাথে যুদ্ধ করতে করতে ঘুমিয়ে যায়।দুপুরের পরে ঘুম ভাংগে ক্ষিদার তারনায়। ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে এসে খেয়ে নেয় সকালে মেয়েটির দিয়ে যাওয়া খাবার।
———
আকাশ প্রচুর ব্যস্ত। এতোদিন একা থাকায় নিজেস্ব কোন বাসা প্রয়োজন হয়নি তার কারন সে কোন দিন এক শহরে বা দেশে টিকতোনা। তার বাসা আছে সেটা হলো অফিস তার বাবা মার থেকে দূরে সে ওই অফিসেই থাকে।তারা বাবা মা লন্ডনেই সেটেল্ড সেও চেয়েছিলো এই বছর ই সব দ্বায়িত্ব আসিফ(ম্যানেজার) কে দিয়ে সেও চলে যাবে লন্ডন কিন্তু এর মাঝেই নওশিন। সে যাবে লন্ডন নওশিন কে নিয়েই কিন্তু এখন না কারন সে জানে না তার বাবা মা ঠিক কেমন রিয়েক্ট করবে আরও একটা কারন আছে সেটা ধীরে ধীরে জানবেন।
আকাশ ওইখান থেকে এসেই একটা বাসা নিয়েছে। আর সে সকাল থেকেই ব্যাস্ত ছিলো সে বাসাটাকে ঠিক করার জন্য।স্টাফ রা ধূলো বালী পরিষ্কার করে দিলেও আকাশ নিজ হাতে রুম এর ফার্নিচার ডেকোরেশন করছে।বিকাল হতে হতে সব কিছু করে গোসল সেরে পুনরায় বেরিয়ে পরে।
নওশিন বিছানায় হেলান দিয়ে শুয়ে থেকে জানালার বাহিরে তাকিয়ে ছিলো। দীদা আর ভাইয়ের কথা মনে পরছে ভীষণ করে।ওই বাসায় এই দুইটা মানুষ ই তো ছিলো যাদের কারনে সে বেচে আছে।নাহলে পাগল হয়ে যেতো সে।
———
আকাশ শপিং মল থেকে নওশিনের জন্য ড্রেস কসমেটিক্স আরও প্রয়োজনীয় কিছু কিনে নিয়ে। নওশিনের হোস্টেলের দিকে যায়।
যেয়ে পেমেন্ট করে নওশিনের রুমে যায়।
আকাশ দুইবার নক করতেই ওইপাশ থেকে নওশিন দরজা খুলে দেয়।।
নওশিনঃআপনি(অবাক হয়ে)
আকাশঃঅন্য কাউকে আশা করছিলেন বুঝি(দুষ্টু হেসে)
আকাশ এর কথা শুনে ব্রিবতকর অবস্থায় পরে যায় নওশিন। সে মনে করেছিলো হয়তো আকাশ অনেক গম্ভির বিহেভ করবে রুডলি কথা বলবে কিন্তু তার ধারণা ভুল প্রমান করে আকাশ তার সাথে মজা করছে।
আকাশ নওশিনের সামনে তুরি বাজায়।
আকাশঃএই যে ম্যাম কই হারিয়ে যান বলুন তো আপনি।
চলেন ভাবনা রানী বাসায়
নওশিনঃবাসায় মানে
আকাশঃবাসায় মানে আপনার শশুড়বাড়ী। ঠিক শশুড়বাড়ি ধরা চলেনা কারন সেখানে না আছে আপনার শশুড় শাশুড়ী আর না আছে ননদ দেবর। স্বামির বাড়ি বলা চলে(চোখ টিপ মেরে)
নওশিন ভরকে যায়।পরের মহূর্তে হেসে দেয়।নওশিনের হাসি দেখে আকাশ ও আসতে করে হাসে।তার হাসিতে ছিলোনা কোন আওয়াজ আর না তার লাল ঠোঁট জোড়া হয়েছিলো বিচ্ছেদ শুধু ঠোঁট দুইটা প্রশারিত হয়েছিলো।
আকাশ নওশিনকে গাড়িতে বসিয়ে নিজেও ড্রাইভিং সিটে যেয়ে বসে।।নওশিন স্বভাব সুলভ নিজের মাথা টা গাড়ির জানালা থেকে খানিকটা বের করে বাহিরে পরিবেশ উপভোগ করতে ব্যস্ত হয়ে পরে
———–
খান বাড়িটা যেনো নিস্তব্ধ পুরী হয়ে গেছে।সবাই নিশ্চুপ হয়ে বসে আছে।এই নিশ্চুপতা নওশিনের যাওয়ার জন্য নয় বরং এই বাসার রাজপুত্রের ধ্বংস লিলা শেষ হওয়ার পরের নিশ্চুপতা।
আরিয়ান খান। নওশিনের বড় চাচার ছেলে।আপন বোনের থেকেও বেশি ভালোবাসে সে নওশিনকে। তার পুতুল তার জান। আর আরিয়ান এর জন্যই এই পরিবারের কেউ তার কোন দিন ক্ষতি করতে পারেনি।
সে জানতোনা নওশিনের বিয়ে।গুরুত্বপূর্ণ হার্ট সার্জারীর জন্য তাকে যেতে হয়েছিলো এবোর্ড ৪ দিনের জন্য। আর এই ৪ দিনের সুযোগ নিয়ে তারা এই সব কিছু করে। আর আরিয়ান বাসায় এসে দাদীর কাছ থেকে সব শুনে ভাংচুর শুরু করে দেয়।
আরিয়ানঃআমাকে মাফ করে দিস পুতুল।আমি জানতাম না আমার যাওয়ার বাহানা তে এরা তোর সাথে এমন কিছু করবে না জানি তুই কেমন আছিস কার সাথে আছিস।
(কান্না করতে করতে)
আরিয়ান এর হাত দিয়ে যে রক্ত ঝরছে সে দিকে তার কোন খেয়াল ই নাই। হঠাৎ করে হাতে কারো স্পর্শ পেয়ে রাগী চোখে তাকায় মানুষ টার দিকে।
আরিয়ানঃচলে যা এখান থেকে আরু(রাগি গলায়)
আরুশিঃএতো সহজ। রাগ করবেন ঠিক আছে।ভাংচুর করবেন সেটাও ঠিক আছে কিন্তু রক্ত বের হবে সেটা আমি সহ্য করবোনা।
আরিয়ানঃআরু তুই এখন যদি এখান থেকে না যাস তাহলে তোর সাথে ঠিক কি করবো আমি নিজেও জানিনা।(হাত ছাড়িয়ে নিয়ে রাগী স্বরে)
আরুশিঃআর তোমার মনে হয় আমি তোমার এই সব হুমকি তে ভয় পায়(ভ্রু কুচকে)
আরিয়ান আরুশির চুলের মুঠি ধরে নিজের কাছে আনে। ব্যাথায় চোখ মুখ খিচে নেয়।
আরিয়ানঃশুনিস না কেন আমার কথা। আমি ছিলাম না তুই তো ছিলি।পারতি না বিয়েটা আটকাতে বা জানাতে।খুব তো বলিস নওশিন তোর সব।
আরুশিঃনিজের ফোনটা একটু চেক করেন দেখেন কতোগুলো কল দিয়েছি।আর অবশ্য যার সাথে নওশিনের বিয়ে ঠিক করেছিলো তার সাথে হয়নি বরং অন্য কারো সাথে হয়েছে
আরিয়ানঃঅন্য কারো সাথে হয়েছে মানে
আরুশিঃআপনার বেস্ট ফ্রেন্ড আকাশ এর সাথে হয়েছে
আরুশি কথা টা বলার সাথে সাথে আরিয়ান চিল্লায় উঠে।
আরুশিঃকি হলো আপনি খুশি হন নি আপনার আদরের বোন আপনার বেস্টফ্রেন্ড এর সাথে বিয়ে হয়েছে।
আরিয়ানঃঅনেক বড় ভুল হয়ে গেছে।
আরুশিঃমানে
আরিয়ানঃযার কাছ থেকে এতোটা বছর নিজের বোন কে লুকিয়ে রাখলাম আজকে তার সাথেই আমার বোন,,,,,,,
চলবে!!!!