#আমার ক্রাশ
#পর্বঃ২৩
#Tanisha Sultana (Writer)
তুলি শাড়ি চুড়ি পড়ে কখন থেকে সায়ানের জন্য ওয়েট করছে কিন্তু সায়ান আসছে না। বিকেল হয়ে আসছে সায়ানের পাত্তা নেই
“ধুর ভাল্লাগে না কখন থেকে সং সেজে বসে আছি। আসার নামই নেই। কি এমন মহৎ কাজ করছে কে জানে? সারাক্ষণ শুধু কাজ আর কাজ। ঘড়ে যে সুন্দরী একটা বউ আছে সেদিকে খেয়াল নেই।
তুলির ফোন বেজে ওঠে।
” হেলো কখন থেকে সাজুগুজু করে বসে আছি। কোথায় আপনি?
“বাড়ির বাইরে। আসো
” আমার না মাথাটা কেমন ঘুরছে
“ঠিক হয়ে যাবে আসো
” হুম আসছি
তুলি একবার আয়নায় নিজেকে দেখে বের হয়।
“তুলি এখন কোথায় যাচ্ছ?
তুলি পেছন ঘুরে দেখে শাশুড়ী
” মা সায়ানের সাথে বের হচ্ছি
“সন্ধার আগে বাড়ি ফিরে আসবে
” চেষ্টা করবো
“গায়ে যেনো বেশি বাতাস না লাগে। সাবধানে যাবে
” ওকে মাই কিউটি শাশুড়ী। আসছি
শাশুড়ীর থেকে বিদায় নিয়ে তুলি বেরিয়ে যায়। সায়ান গাড়ির সাথে পিঠ ঠেকিয়ে পকেটে হাত গুজে দাঁড়িয়ে আছে। দুর থেকে তুলি আসছে। সায়ান দেখছে
“হেলো মিস্টার
তুলি হাসিমুখে বলে
” হাই মিসেস
“এতো লেট কেনো?
” তুমি এতো সাজুগুজু করছো কেন?
“ছেলেদের ইমপ্রেস করার জন্য
” ইডিয়েট
“আপনারই বউ
” যাবো না আমি
“কি মুশকিলআসান আমি আপনার জন্য সেজেছি
” ঢপ
“তিন সত্যি
” কিন্তু এই শাড়ি তো আমি তোমাকে কখনো কিনে দেই নি
সায়ান ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে তুলি দিকে উওরের আশায়। তুলি হাত কচলাচ্ছে নিচের দিকে তাকিয়ে। তুলি সায়ানের দিকে তাকাতেই সায়ান ভ্রু নাচায়। মানে বলতে বলে
“আসলে
” তুলি তুমি যেটা পারো না সেটা কেনো করতে যাও
তুলি এবার সায়ানের দিকে ভ্রু কুচকে তাকায়। সায়ান তুলিকে দুইহাতে আলতো করে জড়িয়ে ধরে বলে
“তুমি মিথ্যে বলতে পারো না। তবুও কেনো ট্রাই করো মিথ্যা বলার? তোমাকে শাড়িটা কে দিয়েছে? তুমি এটা কেনো পড়েছো। এসবে আমার কোনো ইন্টারেস্ট নেই। কেউ গিফট করতেই পারো ইটস নরমাল। কিন্তু তুমি সেটা আমার থেকে কেনো লুকাবে? হাজবেন্ড আমি তোমার। অধিকার আছে জানার। যদিও আমি অধিকার ফলিয়ে জানতে চায় না। তুমি ভালোবেসে বিশ্বাস করে জানাবে আমায়। আমি এটা চায়। আর আমার ফিউচার বেবির মামনির কাছ থেকে তো এটুকু এক্সেপ্ট করতেই পারি
তুলি সায়ানকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।
” আই এম সরি। আমি লুকোতে চায় নি আপনার কাছ থেকে। বাট এই মূহুর্তে বলতে চাই ছিলাম না। শাড়িটা অভিদা গিফট করেছে। আপনি যদি রেগে যান তাই বলছিলাম না। আর আমি অভিদার সাথে মিট করতে চায়।
সায়ান মুচকি হেসে তুলির মাথায় হাত বুলায়।
সায়ান ডাইভ করছে তুলি পাশে বসে আমতাআমতা করছে
“কিছু বলবে?
” আসলে কি হয়েছে বলেন তো। খালি মাথা ব্যথা করে কিছু ভাল্লাগে না
সায়ান মুচকি হাসে
“আমি অসুস্থ আর আপনি হাসছেন?
আমি ডাক্তারের কাছে যাবো
” এই রোগের ঔষুধ ডাক্তারের কাছে নেই
“তাহলে কার কাছে আছে
” মিস্টার সায়ান চৌধুরীর কাছে
“সিরিয়াসলি বলতেছি
” আমি আছি তো
“সেটাই
” এর হয়েছে কি? আমি অসুস্থ বললাম তাও এতো শান্ত। কাহিনি কি? আবার ডাক্তারের কাছেও নিয়ে যেতে চাইছে না। পাগল হলো না কি? না কি অন্য বেপার
তুলি এসব আকাশ পাতাল ভাবছে।
“আমি খুব খুশি তুলি। জীবনের শ্রেষ্ঠ গিফটটা তুমি আজ আমায় দিলে। তোমাকে এখনি বলবো না। একটু ওয়েট করো।
সায়ান মুচকি হাসছে আর কথাগুলো বলছে মনে মনে।
এয়ারপোর্টে পৌঁছে যায় সায়ান তুলি। গাড়ি পার্ক করিয়েই অভিকে দেখতে পায়। ব্যাক পএ নিয়ে বসে আসে। তুলি সায়ান অভির কাছে যায়।
” অভি
সায়ানের ডাকে অভি তাকায় কিন্তু সায়ানের দিকে না তুলির দিকে চোখ যায়।অসম্ভব সুন্দর লাগছে তুলিকে।
“থ্যাংক্স ব্রো
” কেনো?
“ভাবিকে নিয়ে এখানে আসার জন্য।
সায়ান অভির কাঁধে হাত রাখে
” থ্যাংক্স ফর ইউ। তোকে নিয়ে আমি প্রাউড ফিল করছি। আমি জানি না তোকে কি বলবো। আমি তুলিকে সব সময় অবহেলা করেছি কিন্তু তুই আর জিসান ওকে আগলে রেখেছিস। ছোট ছোট ইচ্ছে গুলো পূরন করেছিস। এতোটা ভালোবেসেও কোনো চাওয়া নেই তোর।
“কে বললো কোনো চাওয়া পাওয়া নেই। এখন কিছু চাইবো আমি
সায়ান তুলি দুজনই চমকে অভির দিকে তাকায়
” আমি একটা বার তুলিকে জড়িয়ে ধরবো প্লিজ। তুলি তো আমাকে বেস্ট ফ্রেন্ড ভাবে তো বেস্ট ফ্রেন্ড হিসেবে। নাহয় বড় ভাবি বা বোন। তুলি তো আমার বড় ভাবি বোন ফ্রেন্ড সব কিছুই। তো একবার প্লিজ।
সায়ান কি বলবে বুঝতে পারছে না। তুলি অভির দিকে তাকিয়ে আছে। ভালোবাসা শব্দটা অনেকের কাছে শুনেছে তুলি। অনেক প্রপোজ পেয়েছে। কিন্তু অভির মতো করে কেউ ভালোবাসা প্রকাশ করে নি। বা এতোটা ভালোও কেউ বাসে নি।
সায়ন তুলির দিকে তাকিয়ে আছে। অভি সায়ানের দিকে।
অভি গলা ঝেড়ে বলে
“আসছি। তুলির খেয়াল রাখিস। রত্ন পেয়েছিস তুই। এমন ভাগ্য সবার হয় না। আগলে রাখিস আমার ভালোবাসাকে। আর অবহেলা করিস না। একটা ফুলবল টিম বানা। যদি ভাগ্যে থাকে তাহলে কখনো তোদের হ্যাপি লাইফটা দেখতে আসবো। আমি কিন্তু মাঝেমধ্যেই ফোন করবো।
তুলির সামনে গিয়ে তুলির হাত ধরে
” আসছি
অভি চলে যায়। আর পেছনে তাকায় না। পেছনে তাকালে শুধু মায়া বাড়বে আর কিছু না। সায়ান তুলি অভির যাওয়া দেখছে।
“কতোটা পবিত্র অভির ভালোবাসা। কোনো খাদ নেই। তবুও অভির ভালোবাসা পূর্ণতা পেলো না। ভালোবাসার মানুষটাকে পাওয়ার মধ্যে যে তৃপ্তি পাওয়া যায় তা কিছু দিনের। আর না পাওয়ার মধ্যে যে আফসোস টা থাকে সেটা সারাজীবনের।
গাড়িতে তুলি মুখ গোমড়া করে বসে আছে। সায়ান ডাইভ করছে।
” তুলি কি হয়েছে?
তুলি গাল ফুলিয়ে বলে
“কথা নাই
” আমি আবার কি করলাম
“তাও বলবো না
” না বললে জানবো কি করে?
“তাও তো। ঠিক আছে বলছি
” হুম প্লিজ
“আমি অসুস্থ তাও আপনার কোনো চিন্তা নেই। ডাক্তারও দেখাতে দিতে চাচ্ছেন না। টাকা ফুরাবে বলে? দেখুন আমার বাপির টাকা আছে। আমি আমার বাপির টাকায় চিকিৎসা করাবো
” আচ্ছা
“কি আচ্ছা
” করাও
“কিহহহহ😡
” রাগো কেন?
“আপনার হইছে কি?
” তুলি তোমার কিচ্ছু হয় নি
“তাহলে আমার মাথা ব্যথা করে কেন? শরীর দুর্বল লাগে কেন? কেমন কেমন লাগে কেন?
” কারণ আছে
“কি কারণ
” বলবো
“হুম বলেন
” ফুটবল টিম বানাবো
“আমি মরলে বানাইয়েন
সায়ান ঠাস করে গাড়ি থামায়। তুলির দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকায়
” আবার কি করলাম?
“এখুনি কি বললা
” আর কমু না সরি
“বলললা কেন
” সরি তো
“কান ধরো
তুলি কান ধরে ইনোসেন্ট ফেস নিয়ে বলে
” সরি আর হবে না
সায়ান মুচকি হেসে তুলিকে জড়িয়ে ধরে।
“আমার তুলি প্রেগন্যান্ট
তুলি ছিটকে দুরে সরে গিয়ে বলে
” কিহহহহহহ
“হুমমম
” ধপ মারছেন? প্রেগন্যান্ট হলে তো বমি হতো
“সব সময় প্রেগন্যান্সির সময় বমি হয় না।
” আপনি জানলেন কি করে
“ডাক্তার বললো
” কিন্তু
“কয়েকদিন ধরেই তোমাকে লহ্ম করছি তুমি কেমন হয়ে গেছো। তো সন্দেহ হলো। ডাক্তারকে কল করলাম। তোমাকে সেদিন চেকআপ করাতে নিয়ে গেলাম। কিন্তু তোমাকে বলি নি। তুমি ছাড়া বাড়ির সবাই জানে।
” সত্যি আমি প্রেগন্যান্ট
তুলি গাড়ির মধ্যেই লাফাতে থাকে। সায়ান ধরে বসায়
“একদম লাফালাফি করবা তো পা ভেঙে দেবো।
” আমি রেগে আছি
তুলি গাড়ি থেকে নেমে যায়।
“কথা বলবো না আপনার সাথে
চলবে