আমার ক্রাশ পর্ব-২২

0
1934

#আমার ক্রাশ
#পর্বঃ২২
#Tanisha Sultana (Writer)

তুলি বাড়ির ভেতরে পা রাখতে গিয়ে থেমে যায়

“কি হলো?

” আমি মিসেস তুলি চৌধুরী হেঁটে হেঁটে আমার বাসায় ঢুকবো? ইম্পসিবল

“তাহলে কি পালকি ডাকতে হবে?

” আপনি আছেন কি করতে

“আমি!!!!!

” হুম আপনি। এখন আমাকে কোলে করে বাসায় ঢুকান

“হ্মমা করা যায় না

” চলে যাচ্ছি

তুলি গাল ফুলিয়ে যেতে নেয় সায়ান হাত টান দিয়ে কোলে তুলে নেয়

“ছাড়েন তো ঢং দেখাতে হবে না

” তোমার গালের মধ্যে কি বেলুন আছে না কি

“কেনো বলেন তো

” কথায় কথায় ফুলাও কেমনে?

তুলি সায়ানের পিঠে কয়েকটা থাপ্পড় মারে। সায়ান হেসে তুলিকে নিয়ে ভেতরে ঢুকে।

“তোমার প্রিয় রং নীল দিয়ে পুরো বাড়িটা সাজিয়েছি।

” ধন্যবাদ

“হবে না

” তো

“গিভট চায়

” স্পেশাল গিফট দেবো আপনাকে

“কিহহহ

” বেবি দেবো🙈

সায়ান তুলিকে সোফায় বসিয়ে দেয়।
“কি হলো

” ৮০ কেজি ওজন আর কতোখন বহন করবো

“৪১ কেজি আমি।

” সেটা,জানি আমি

“কথা নাই

তুলি গাল ফুলিয়ে অন্য দিকে ঘুরে বসে। সায়ান পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে

” রাগলে তোমায় দারুণ লাগে।

“পাম

” সত্যি

“তাহলে এখন থেকে সব সময় আমি রেগে থাকবো

” কেনো?

“সুইট লাগবে

” লেজ ছাড়া বাঁদর

“আপনারই বউ

” সেটাই

এভাবেই খুনসুটিতে চলছে দিন। তুলির দুষ্টুমি আর সায়ানের রাগ দুটো মিলেই সুন্দর একটা সম্পর্ক।
সকাল বেলা। সায়ান অফিসে যাবে কিন্তু জুতো খুঁজে পাচ্ছে না। সায়ান জুতো খুঁজছে আর তুলিকে ডাকছে

“তুলি কোথায় তুমি?

তুলি দরজার আড়াল থেকে উঁকি মেরে দেখছে।

” লাস্ট বার বলছি তুমি এখানে না আসলে কান ধরে টানতে টানতে নিয়ে আসবো তোমায়

তুলি গুটিগুটি পায়ে সায়ানের সামনে আসে। সায়ান ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে তুলির দিকে।

“এভাবে তাকান কেন?

” গন্ডগোল আছে

“কোনো গন্ডগোল নেই।

” তাহলে তুমি এতো চুপচাপ

“বেশি কথা বললে বলবেন তুলি একটু চুপ থাকো বিরক্ত লাগছে আবার কথা না বললে বলবেন তুলি কথা বলছো না কেনো গন্ডগোল আছে। আসল বেপারটা কি বলবেন? কোন পথে হাঁটবো আমি

” জুতো কই আমার

“আমাকে কি চোর মনে হয়?

” হুমমম

“কিহহহ😡

” তুলি লেট হচ্ছে প্লিজ জুতো দাও

“আপনাকে আজ অফিস যেতে দেবো না

” ইমপটেন্ট কাজ আছে আমার

“আমিই সব থেকে আগে আপনার কাছে

” কে বললো?

“আমি

” টাইম নষ্ট করো না

“দেবো না ব্যাছ

” ওকে

সায়ান অন্য একটা জুতো বের করে

“প্লিজ যাইয়েন না

” যাবো আমি

সায়ান বেরিয়ে যায়।

“জানি তো ভালোবাসেন। ভালোবাসলে এভাবে চলে যেতেন না। একটা দিনই তো। তাও আবার আজ আমার বার্থডে। একটা ইউসও করলেন না। ধুর

তুলি মন খারাপ করে বসে আছে বেলকনিতে। কলিং বেল বাজে

” মনে হয় সায়ান এসেছে। আমি জানতাম উনি আসবে। #আমার ক্রাশ। দরজাটা খুলে ধপাস করে একটা কিস দেবো জানটারে।

তুলি দরজা পর্যন্ত যায়৷ দরজার সামনে একটা প্যাকেট।

“এখানে এই প্যাকেটটা এতো কোথা থেকে? সায়ান কি আমাকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য এটা রেখেছে। উফফফ আমার জামাইটা এতো রোমান্টিক হয়ে গেছে।

তুলি প্যাকেটটা তুলে হাতে নেয়। একটা চিরকুট পায়। রুমে চলে যায় তুলি। প্যাকেটটা খাটে রেখে চিরকুটটা খুলে

” আমার তুলি

জানি তুমি খুব ভালো আছো। সুখে আছো। কিন্তু আমি ভালো নেই। প্রচন্ড ভালোবাসি তোমাকে। হয়ত নিজের থেকেও বেশি। আমি চাইলেই তোমার আর সায়ানের পথে বাধা হতে পারতাম। কিন্তু ভিলেন হওয়ার ইচ্ছে আমার নেই। আমি হিরো হতে চায়। তুলির হিরো। জানি এজীবনে এটা সম্ভব নয়। কিন্তু আমি আশা হারায় নি। হয়ত কখনো কোনোভাবে তোমায় পাবো আমি। ভালোবাসলে বিয়ে করতে হবে সারাক্ষণ সাথে থাকতে হবে এমনটা আমি মানি না। আমার কাছে ভালোবাসাটা অন্য রকম। ভালোবাসলে সারাজীবন পাশে থাকতে হবে এটা আমি মানি। আমি তোমার পাশে আছি। যদিও আমাকে তোমার কোনো প্রয়োজন নেই। তুমি আমার ভাইয়ের বউ এটা জেনেও আমি তোমায় ভালোবেসেছি। তোমাকে ছুঁয়ে দেওয়া কোনো ইচ্ছে আমার নেই কিন্তু সারাক্ষণ তোমার মুখের হাসিটা দেখতে চায়।
যদিও এসবের কোনো মানে হয় না। তুমি ভাবতে পারো ছেলেটা যদি আমাকে নিঃস্বার্থ ভাবে ভালোবেসে থাকে তাহলে এসবের মানে কি? নিশ্চয় আমাকে ইমপ্রেস করার চেষ্টা করছে। এমনটা কিন্তু নয়। আমার মনে হলো তোমাকে জানানো উচিৎ এটা তাই জানালাম। হ্যাপি বার্থডে ভালোবাসা। দোয়া করি খুব সুখী হও। ব্রাজিলের ফুটবল টিম বানাও। আজ আমি সিঙ্গাপুর চলে যাচ্ছি। হয়ত আর কখনো দেশে ফেরা হবে না। এখানে থাকলে বেহায়া মনটা তোমার আশেপাশে থাকতে চাইবে তাই দুরে চলে যাচ্ছি। সায়ান আমার সাথে দেখা করতে আসবে। যদি তুমি আসতে। শেষ বার তোমায় একটু দেখতাম। যদি আসো তো শাড়িটা পড়ে এসো। আমার ভালো লাগবে। জোর করছি না তোমার ইচ্ছে। সব শেষে খুব ভালোবাসি তোমায়।

ইতি
অভি

চিঠিটা পড়ে তুলি বসে পরে। অভি তুলিকে ভালোবাসে এটা তুলি জানতো। কিন্তু এতোটা ভালোবাসে এটা জানতো না। তুলি এবার দোটানায় পড়ে গেছে। যাবে কি না ভাবছে।

“কি করবো? যাবো? যদি সায়ান ভুল বুঝে? সায়ানকে সবটা বলে দেবো?

তুলি প্যাকেটটা খুলে। ক্রিম আর লাল কালার মেশানো একটা জামদানী শাড়ি। অপূর্ব দেখতে শাড়িটা। তুলি সায়ানকে কল করে

” হ্যাঁ তুলি বলো

“কোথায় আপনি? নাইট ক্লাবে ডান্স করছি

” দিনের বেলায়

“ফোন কেনো দিছো

” এমন করেন কেন?

“তো কেমন করবো? তোমার জন্য অফিস আসতে লেট হলো। অভিকে ড্রপ করতে যেতে হবে আবার।

” আমিও যাবো

“কোথায়?

” এয়ারপোর্ট। অভিকে এগিয়ে দিতে

সায়ান একটু ভেবে বলে

“ওকে। তোমার নিয়ে আসবো

তুলি খুশি হয়ে বলে

” থ্যাংক্স

“হুমম। লাভ ইউ

” আটদিন পরে লাভ ইউ বললেন

“বলে কয়ে ভালোবাসা হয় না। সারাক্ষণ লাভ ইউ বললেই তোমাকে ভালোবাসি না বললে ভালোবাসি না এটা ভুল। আমি আমার তুলিকে সব সময়ই ভালেবাসি

” তাই তো দেখি

“কি দেখো

” কথাই বলোন না আবার ভালোবাসেন

“তুমি একটা মানুষই। এখন রাখো কাজ করছি

” হুমম৷ কিছু কি ভুলে যাচ্ছেন

“না তো কি ভুলবো

” ওহহহ

“বাই

” হুম

তুলি মন খারাপ করে ফোন রাখে। সায়ান মুচকি হাসে।
“তোমার জন্য ধামাকা অপেক্ষা করছে তুলি জান।

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে