আমার ক্রাশ পর্ব-১৯

0
1969

#আমার ক্রাশ
#পর্বঃ১৯
#Tanisha Sultana (Writer)

নিশি আর আদরের বিয়ে মিটে গেছে আজ পাঁচ দিন হলো। বিয়েতে তুলি আর সায়ানের একবার দেখা হয়ে ছিলো দুজন দুজনকে ইগনোর করেছে। তারপর থেকে আর দেখা হয় নি।
নিজের বিয়ে ভাইয়ের বিয়ে শশুড় বাড়ি সায়ানকে ইমপ্রেস এসবের চক্করে তুলি পড়ালেখার কথা ভুলেই গেছিলো। অনেক দিন কলেজে যাওয়া হয় না। আজ তুলি ঠিক করেছে কলেজে যাবে।

সকাল সকাল উঠে কলেজের জন্য তৈরি হয়।

“মা খেতে দাও কলেজে যাবো

তুলির মা রান্না করছিলো তুলির ডাকে খুন্তি হাতে করেই বেরিয়ে আসে সাথে নিশিও আসে। নিশি শাশুড়ী মানে তুলির মাকে রান্নায় সাহায্য করছিলো

” আজ হঠাৎ কলেগে যাবো?

“মা অনেক দিন যাওয়া হয় না তাই ভাবলাম আজ যাই। খেতে দাও তো না হলে না খেয়েই বেরিয়ে যাবো

ইদানীং তুলি একটু রাগী টাইপের হয়ে গেছে। হুটহাট রেগে যায়। যে তুলি আগে রাগ জিনিসটাকেই ঘৃণা করতো সেই এখন রাগী হয়ে গেছে। কথায় কথায় রেগে যায়।

” নিশি ওকে খাবার দাও

নিশি তারাহুরো করে তুলিকে খেতে দেয়। নিশি তুলিকে অনেক কিছু বলতে চায় কিন্তু বলার সাহস পায় না। যদি রাগে যায় তাহলে আবার আদর নিশিকে ঝাড়বে। তাই আর বলা হয় না।

তুলি এক মনে খেয়ে যাচ্ছে নিশি হাত কচলাচ্ছে

“বলছিলাম

তুলি খেতে খেতেই বলে

” তোমার ভাইকে নিয়ে কিছু বলার থাকলে আমি শুনবো না

নিশি চুপচাপ চলে যায়। তুলি একটু হাসে

“যে পাখি বুকের পাঁজরে থাকতে চায় না তাকে যেতে দেওয়াই ভালো”

সারারাত মদ আর সিগারেট খাওয়ার ফলে সায়ানের ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে যায়। জিসান দরজা ধাক্কাচ্ছে

“ব্রো উঠো বাবা ডাকছে

সায়ান চোখ কচলে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে ১০ঃ৪৫ বাজে।

” আসছি

সায়ান তারাহুরো করে ফ্রেশ হয়।

সায়ানের বাবা মা জিসান বসে আছে গম্ভীর মুখে। সায়ান চুপচাপ ওদের পাশে দাঁড়ায়

“বাবা বলো

সায়ানের বাবা একবার সায়ানের দিকে তাকায়

” তুলি ডিভোর্স পেপার পাঠিয়ে দিয়েছে। এবার তুলি দয়া করে সাইন করে আমাদের উদ্ধার করুন

সায়ানের বাবা সায়ানের হাতে ডিভোর্স পেপার দেয়। সেখানে স্পষ্ট করে তুলির সাইন দেওয়া

“আমি আজকে মনার বাড়িতে কথা বলেছি সামনে শুক্রবার তোমাদের বিয়ে ঠিক করেছি। এবার নিশ্চয় তুমি হ্যাপি হবে? আসলে কি জানো তুলির মতো এতো ভালো মেয়েকে তুমি ডিজার্ভ করো না। তুমি যেমন ফালতু তুমি তেমনই ফালতু মেয়েদের ডিজার্ভ করো।

সায়ানের বাবা রাগে গজগজ করতে করতে চলে যায়।

” আজ তুলিকে দেখতে ছেলের বাড়ি থেকে লোক আসবে। আর তুলি বিয়েতে রাজি

জিসান সায়ানের পিঠ চাপকে বলে

“এবার নিশ্চয় তুই ভালো থাকবি

সায়ান ডিভোর্স পেপারটা ছিঁড়ে কুটিকুটি করে ফেলে। তারপর চিৎকার করে বলে

” খুব ভালো থাকবো আমি প্রচুর ভালো থাকবো। দেবো না আমি ডিভোর্স দেখি তুলি কি করে?

সায়ানের চিৎকারে জিসান আর মা ঘাবড়ে যায়।
সায়ান বেরিয়ে যায়।

কলেজের পাশে পুকুর পারে বসে আছে তুলি। ভেবেছিলো কলেজে আসলে ভালো লাগবে কিন্তু ভালো লাগছে না। মনে শান্তি না থাকলে কোনো কিছুই ভালো লাগে না।

“#আমার ক্রাশ আর আমার নেই। এতোখনে সায়ানও পেপারে সাইন করে দিয়েছে। আলাদা হয়ে গেছি আমরা। এখন সায়ান মনাকে বিয়ে করবে ওরা ভালো থাকবে। আর আমি? আমি কি পারবো অন্য কারো সাথে ভালো থাকতে? কখনো কি সায়ানকে ভুলতে পারবো? পারবে না। আবার সায়ানকে হ্মমাও করতে পারবো না। আমার জীবনটা একটা গোলক ধাঁধায় আটকে গেছে। যেখান থেকে বেরোনোর উপায় নেই।

এসব ভেবে তুলির চোখ দিয়ে দুফোঁটা পানি গড়িয়ে পরে। তুলি মুছে না।

কেউ তুলির পাশে এসে বসে। তুলির খেয়াল নেই

” কংগ্রাচুলেশনস

সায়ানের কন্ঠ পেয়ে তুলি চমকে পাশে তাকায়। সায়ান বসে আছে এক গাল হাসি নিয়ে। সায়ানের দিকে তাকিয়ে তুলির বুকের ভেতরে মোচড় দিয়ে ওঠে।
এ কি হাল হয়েছে সায়ানের। পাঁচদিনে একদম শুকিয়ে গেছে। চুল গুলো উসকোখুসকো চোখ দুটো ক্লান্ত। মুখটা শুকিয়ে গেছে। সুন্দর ছেলেটা এখন একটা পাগলের মতো হয়ে গেছে। তুলি চোখ ফিরিয়ে নেয়। সায়ানের এই রুপ দেখার সাদ্ধ নেই তুলির।

“কি গো কিছু বলছো না

” আপনি এখানে

“এক্স ওয়াইফের নতুন জীবনের জন্য কনগ্রাচুলেট করতে এলাম। তা ছেলে কি করে

” যাই করুক তার জীবনে কোনো পিছুটান বা গার্লফ্রেন্ড নেই। আর আমাকে খুব রেসপেক্ট করে কুকুর মনে করে না

তুলির মুখে অন্য ছেলের গল্প শুনে সায়ানের বুকের বা পাশে ব্যাথা করে

“আপনি কবে মনাকে বিয়ে করছেন?

” আমার আবার এতো তারা নেই। আস্তে আস্তে করলেই হলো।

“ওহহহহ

” সাইন করেছেন

“তুমি করেছো আমি না করলে কেমন হয়

” ওহহহ

“হুমমম

দুইজনই চুপ

” তুলি

“হুম

“তুমি তো অন্য কারো হয়ে যাবো তো আমি কি তোমাকে ছুঁতে পারি? যদিও তুমি পারমিশন না দিলেও আমি তোমায় ছুঁবো তাও জানিয়ে রাখলাম

সায়ান আলতো করে তুলিকে জড়িয়ে ধরে। তুলি ছাড়িয়ে নেয়

” গাঁয়ে হাত দেওয়া আমি পছন্দ করি না

“ওহহহ আচ্ছা
এর শোধ তো আমি নেবোই। আমাকে এতো ঘুমাচ্ছ তো তোমাকে মজা দেখাবো। জাস্ট ওয়েট এন্ড সী
সায়ান বিরবির করে বলে।
তুলির ফোন বেজে ওঠে। ফোনের স্কিনে অচেনা নাম্বার। সায়ান ছেড়ে দেয়।

” দেখো তোমার উডবি মেবি ফোন দিয়েছে

“হতেও পারে

সায়ান তুলির হাত থেকে ফোন নিয়ে ফোন কেটে দেয়

” এটা কেনো করলেন?

“তাই তো কেনো করলাম? আমি নিজেও জানি না

” আমি বাসায় যাবো

“জানি তো

” বিয়েতে আসবেন কিন্তু

“অবশ্যই আমি না আসলে বিয়েটা হবে কি করে?

” মানে

“এক্স বউয়ের বিয়ে আর আমি আসবো না এটা হয় না কি? অবশ্যই আসবো

তুলি এক নজর সায়ানের দিকে তাকিয়ে হাঁটা শুরু করে

” তুলি

তুলি দাঁড়িয়ে পেছনে তাকায়

“বাসর ঘরে ঢোকার আগে একদম লিপস্টিক লাগাবে না।

” কেনো?

“তোমার উডবি চায় না তোমার লিপস্টিক নেওয়া ঠোঁট অন্য কেউ দেখুক

” আপনাকে বলছে

“হুমমম

” মিথ্যুক

তুলি চলে যায়। সায়ান মুচকি হাসে।

তুলি যেতে যেতে ভাবো

“আমি যে বিয়ে করবো বলেছি এটা সায়ান জানলো কি করে? নিশ্চয় নিশি বলেছে। বলুক আমার কি?

তুলি বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়। তখন তুলির বাপি আসে

” তুলি

“হুম বাপি

বাপি তুলির পাশে বসে।

” আর একবার ভেবে দেখো মামনি

“ভাবার কিছু নেই। আমি বিয়ে করবো তাও শুক্রবারেই। এবার তুমি কোথা থেকে ছেলে আনবে জানি না

” জেদ করে একবার কি হলো দেখলে তো

“হলে আবার এমন হবে তবুও আমি বিয়ে করবো। ভুলতে চায় আমি সায়ানকে। সায়ান ফাইডে বিয়ে করছে তো আমি ওর আগে বিয়ে করতে চায় ব্যাস

” ওকে
একটা ছেলেকে দেখেছি তোমার জন্য। কাল তার সাথে মিট করো

“আমার মিট করার প্রয়োজন নেই

” না চিনে না জেনে একটা ছেলের সাথে থাকবে কি করে

“তোমাকে ভাবতে হবে না

” যা করবে ভেবেচিন্তে করবে

বাপি তুলির মাথায় হাত বুলিয়ে চলে যায়। তুলি সায়ানের ছবি দেখে।

“এই মানুষ টা আমাকে ঠকিয়েছে ভাবা যায়

তুলি ছবিটা ছিঁড়ে ফেলে। তার জোরে একটা শ্বাস নেয়।

সায়ান সেলুনে যায় সুন্দর করে চুল দাঁড়ি কাটে। ভেবে রেখেছে কাল থেকে জিমে যাবে। সব আগের মতো হবে। তুলির শোকে আর দেবদাস হয়ে বসে থাকবে না।
” যে আমার তাকে আমার কাছ থেকে কেঁড়ে নেবে এমন সাদ্ধ পৃথিবীর কারো নেই”
সায়ান এটা ভেবে এখন চিল মুডে আছে। এই কয়দিন সিগারেট মদ খেয়ে মন খারাপ করে রুমে বসে থেকে চোখের পানি ফেলে সায়ান ভুল করেছে এটাই এখন সায়ানের মনে হচ্ছে।

হাসিখুশি মুড নিয়ে সায়ান বাসায় ঢুকে
সায়ানের মা তো অবাক

“সায়ান একা একা হাসছিস কেনো?

” তোমাকে নাতি নাতনি গিফট করবো তাই

“ভাই কে প্রেগন্যান্ট তুলি না মনা

জিসানের কথায় সায়ান প্রচুর রাগ হয়। জিসানের পিঠে কয়েকটা চড় থাপ্পড় মেরে বলে

” কিছুদিনের মধ্যে তুলি হবে

“হুম জানি তুলির বরটা না কি তুলির মতোই হট হট গ্রীষ্মকাল

” হুমমম😎

“ব্রো তুই দেখছোস না কি?

” আমাকে আমি দেখমু না

“বুঝলাম না

সায়ান জিসানের গাল টেনে বলে

” বাচ্চারা একটু কম বুঝে

সায়ান নাচতে নাচতে রুমে চলে যায়

“ঘটনা তো বুঝলাম না। হইলো কি হঠাৎ করে? তুলির কাছে তো জিজ্ঞেস করতে হয়।

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে