#আমার ক্রাশ
#পর্বঃ১৭
#Tanisha Sultana (Writer)
তুলি চিৎকার করে কিন্তু মুখ থেকে আওয়াজ বের হয় না কারণ সামনে থাকা মানুষটা শক্ত করে তুলির মুখ চেপে ধরেছে।
“উম উমমমমম
“কি উম উম করছো। আমাকে ইগনোর করার সাহস হয় কি করে? 😡
লোকটার কন্ঠ শুনে তুলি বুঝে যায় এটা সায়ান তাই নরাচরা বন্ধ করে। তুলি সায়ানের পায়ে জোরে লাথি মারে। সায়ান আহহ করে উঠে তুলির মুখ ছেড়ে দেয়। তুলি জোরে জোরে শ্বাস নিতে থাকে। সায়ানের রাগ বেরে যায়। তুলির দুই বাহু চেপে ধরে বলে
” এমন করছো কেনো তুমি? কদিন আগেও তো কতো জ্বালিয়েছো আর এখন এমন কেনো করছো?
তুলি সায়ানের থেকে দুরে গিয়ে দাঁড়ায়।
“ডোন্ট টাচ মি। মেয়ে দেখলেই গায়ে হাত দিতে ইচ্ছে হয় তাই না😡
কিছুটা চিৎকার করে বলে তুলি।
সায়ান ঘারড়ে যায় কারণ সায়ান আগে কখনো তুলি রাগী চেহারাটা দেখে নি।
” তুলি আর ইউ ওকে
তুলি রুম থেকে বেরিয়ে যেতে নেয় সায়ান হাত ধরে। তুলি ঝাড়ি মেরে হাত ছাড়িয়ে নেয়।
” কতোবার বলতে হবে ছুঁবেন না আমায়। একটা থার্ড ক্লাস মেয়েকে ছুঁতে আপনার বাধছে না।
“আর কতোবার সরি বলতে হবে বলো আমায়? কতোবার আর কিভাবে সরি বললে মাফ করবে। বলবা প্লিজ? ভুল করেছি আমি লাস্ট চান্স চাইছি প্লিজ
” আমি ভালোই ভালোই বলছি আমাকে এখান থেকে যেতে দিন।
“দেবো না যেতে তোকে দেখি কি করিস তুই। ভুল করেছি সরি বলেছি ঝামেলা শেষ। এখন এরকম করার কি আছে?
” ড্রামাবাজ তো আমি তাই ড্রামা করছি। ড্রামা করে আপনাকে ইমপ্রেস করছি। আসলে কি বলেন তো আমি তো এসব করেই অভস্ত। খারাপ মেয়ে কি না। আপনার জীবন নষ্ট করে দিয়েছি। এবার আপনার ভাই অভিকে ধরেছি। এটা ভাবছেন আপনি আই এম শিওর।
তুলি আর কিছু বলার আগেই সায়ান ঠাস করে তুলির গালে একটা চর মেরে দেয়। থাপ্পড়টা বেশ জোরেই মারে। তুলি ছিটকে দুরে পরে যায়। গালে পাঁচটা আঙুল বসে যায়। নাক দিয়ে রক্ত পরছে।
তুলি উঠে দাঁড়ানোর শক্তি পাচ্ছে না। তুলির চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পরছে।
তুলিকে থাপ্পড় মেরে সায়ান দেয়ালে কয়েকটা ঘুসি মারে। তারপর তুলির কাছে হাঁটু গেরে বসে নরম গলায় বলে
“সরি বউ। কেনো তুমি ওই কথা গুলো বললে? আমার ওসব সয্য হয় নি। কাল থেকে ইগনোর করছো। ফোনটাও তুলছো না। আমার ওপর দিয়ে কি যাচ্ছে তুমি বুঝতে পারো না। প্রতিটা সেকেন্ডে আমি তুলি নামক শূন্যটা অনুভব করেছি।
তুলির দুগালে আলতো করে হাত দেয়। চোখের পানি মুছে দেয়। যেখানে থাপ্পড় মেরেছে সেখানে হাত বুলায়। তুলি কিছু বলছে না।
” আর একটা সুযোগ দাও তুলি। আই প্রমিজ তোমাকে কখনো রাগাবো না। কাঁদাবো না। বকবো না। মাথায় করে রাখবো তোময়। মনার থেকে অনেক দুরে থেকেছি কিন্তু কখনো মনার শূন্যতা অনুভব করি নি। মনার কথা আমার কখনো মনেই পরে না। কিন্তু তোমাকে প্রতি সেকেন্ডে মিস করি আমি। আই নিড ইউ। প্লিজ হ্মমা করে দাও। তোমাকে ছাড়া আমার দম বন্ধ হয়ে আসে। প্লিজ তুলি। তোমাকে আমি এতোগুলা বেবি দিবো। প্লিজ তুলি। আমি ভীষণ ভাবে তোমার বাচ্চামো গুলো মিস করি।
তুলি নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। কিছুই বলছে না।
“এই তুলি কিছু বলো
তুলি চোখের পানি মুছে বলে
” আমি ফেলে দেওয়া জিনিস কুরিয়ে নেই না
“আমি অনেক কষ্টে রাগ কন্ট্রোল করছি। প্লিজ রাগ বারিয়ো না
” আমাকে এখান থেকে যেতে দিন
“আমি তোমার হাজবেন্ড
” খুব তারাতাড়ি ডিভোর্স পেপার পাঠিয়ে দেবো তাও আমার সাইন সব। অলরেডি বাপি ব্যবস্থা করে ফেলেছে জাস্ট পেপারটা আসতে একটু ডময় লাগছে। এখন আপনার যতখুশি মনার সাথে প্রেম করে বা ফ্লাট করো আই ডোন্ট কেয়ার।
“আর তুমি?
” আমার যা ইচ্ছে আমি তাই করবো। বাংলাদেশে ছেলের অভাব না। নেহাৎ আপনার ওপর ক্রাশ খাইছিলাম তাই।
“তুলি তুমি
” আপনার মুখে আমি আমার নামটা শুনতে চায় না। আর আপনার সামনা সামনি থাকলে আমার গা গুলিয়ে আসে। দুটো থাপ্পড় মেরেছেন আমাকে।
“সরি
” এখন আমি যদি আপনার একটা হাত কেটে ফেলে সরি বলি। আপনার হাতটা কি আগের মতো হয়ে যাবে?
“নাহহ
” সরি বললে কি আমার মন থেকে আপনার করা অপমান অবহেলা গুলো মুছে যাবে সায়ান? যাবে না। পাগলা কুকুরের মতো আপনার পিছনে ঘুরেছি কতো শক বাহানা করে। কতোভাবে আপনার মনে জায়গা করার চেষ্টা করেছি। আপনি মনা মনা করে গেছেন। এখন একটু রিলাইজ করেন আমার কেমন লেগেছে। আমার কষ্টটা একটু ফিল করুন সায়ান মাহবুব।
তুলি বেরিয়ে যায়।
“আমার তুলিটা পাল্টে গেলো। ভীষণ ভাবে পাল্টে গেছে৷ এই তুলিকে আমি চিনি না।
এসব ভেবে সায়ানের চোখ থেকে দুফোটা পানি ঝড়ে।
তুলি চোখ মুছছে আর মনে মনে বলছে
” আপনি আবার আমাকে মারলেন সায়ান। এতো খারাপ আপনি। আই হেট ইউ।
“তুলি
জিসানের ডাকে তুলি জিসানের কাছে যায়। মুখে একটু হাসি টেনে বলে
” কি হয়েছে?
“তোকে এরকম লাগছে কেনো তুলি? তোর গালে তো থাপ্পড়ের দাগ। কে তোকে মেরেছে😡😡
” জেনে কি করবি? তাকে মারবি?
“হুমম মারবো
” তোর ভাই মেরেছে। যা মার
জিসান ঢোক গিলে
“তুই নিশ্চয় ভুল ভাল কিছু করেছিলি তাই মেরেছে
তুলি তাচ্ছিল্য হেসে বলে
” সেটাই তো। সব সময় তুলি কিছু না কিছু করে। তুলি বেশি কথা বলে। তুলি দুষ্টুমি করে৷ তুলি ড্রামা করে। তুলি নেকামি করে। বাচ্চামো করে সবার মন জয় করতে যায় তাই না।
“জিসান ওকে এতো বড় বড় কথা বলতে না কর।
সায়ান কন্ঠ শুনে জিসান চমকে ওঠে। তুলি যেভাবে ছিলো সেভাবেই আসে। তুলি হয়ত আগেই আন্দাজ করতে পেরেছিলো সায়ান আছে পেছনে।
” এই তুলি বেশি কথা বলিস না। (জিসান)
“জিসান ওকে বাড়ি দিয়ে আয়।
” চল তোকে দিয়ে আসি
“আমি একাই এসেছি যেতেও একাই পারবো। কারো হেল্পের প্রয়োজন নেই।
” তুলি তুমি
জিসান সায়ানকে থামিয়ে বলে
“ব্রো ওকে বকো না প্লিজ। আমি ওকে বুঝিয়ে দিয়ে আসবো। কি বলোতো সবাই তো ধমকে ভয় পায় না। তুলি তোমার কাছে কেমন জানি না। কিন্তু আমার কাছে তুলি ওয়ার্ডের বেস্ট পারসন। আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। তুলির কষ্ট হলে আমারও কষ্ট হয়। তুমি তুলিকে মেরে ঠিক করো নি। আমি ভেবেছিলাম তুলিকে বুঝিয়ে বলবো এখানে ফিরে আসতে। তোমার জন্য না আমাদের জন্য। আসলে তুলির বাচ্চামো গুলো আমার বাবা মায়ের খুব ভালো লাগে। কিন্তু এখন তুলি এখানে আসতে চাইলেও আমি আসতে না করবো। চল তুলি
জিসান তুলির হাত ধরে হাঁটা শুরু করে।
” আবার আর একটা ভুল করে ফেললাম।
তুলি নিশিকে হলুদ লাগাচ্ছে আর অভি তুলির ছবি তুলছে। অভি তুলির হাসি মাখা অনেক ছবি তুলে দেয়। সায়ান পুরো সময় টা দুর থেকে তুলিকে দেখে। আর তুলির সামনে যায় না। সায়ান প্রথমে ভেবেছিলো তুলিকে আজ যেতে দেবে না। জোর করে হলেও নিজের কাছে রেখে দেবে। কিন্তু পরে মত পাল্টায়। বিয়ে টা মিটে গেলে তুলিকে আর যেতে দেবে না। রুমে বন্ধ করে রাখবে। তবুও যেতে দেবে না।
সায়ান এসব ভেবে মুচকি হাসে।
হলুদ লাগানো শেষে তুলি বাড়ি যাবে। অন্ধকার হয়ে গেছে। তুলি সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়েছে। জিসান তুলিকে পৌঁছে দিতে যাবে। তুলি গাড়িতে বসে।
“জিসান চল
” একটু বস আমি আসছি
“তারাতাড়ি আসবি
জিসান গাড়ি থেকে নেমে চলে যায়। তুলি একা একা বসে আছে।
চলবে