#আমার_অভিমান_তোমাকে_নিয়ে(9)
দুইহাতে কোমড় জড়িয়ে ধরে শক্ত করে বুকের মাঝে চেপে ধরে অরুনিকাকে। অরুনিকাও বিড়ালছানার মতো গুটিশুটি মেরে লেপ্টে থাকে আদাভানের সাথে। নিজের রাগ, জেদ সব ভুলে উপভোগ করে সময়টাকে। আবেশে দুই চোখ বন্ধ করে ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি ফুটে ওঠে অরুনিকার।
হটাত কিছু একটা মনে পড়তেই অরুনিকা ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দেয় আদাভানকে। হটাত এমন আক্রমনে ভেবাচেকা খেতে যায়। কোনো রকমে নিজেকে সামলে নিয়ে আয়নার কাছে গিয়ে স্বচ্ছ কাঁচের মাঝে একপলক অরুনিকাকে দেখে চোখ সরিয়ে নেয়।
ওয়াশরুমের দরজার আওয়াজে সেদিকে চোখ তুলে তাকায় অরুনিকা। সদ্য গোসল করে ভেজা চুলে টাওয়েল চালাতে চালাতে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আয়নার সামনে দাড়ায় আদাভান। ভীষন স্নিগ্ধ, নিষ্পাপ লাগছে আদাভানকে। অরুনিকা সেদিক থেকে চোখ ফেরাতেই ভুলে গেছে যেনো। তবে আদাভান একপলকও তাকালোনা সেদিকে। নিজের মতোই বেরিয়ে গেলো রুম থেকে।
পুরো রুমটাকে এবার যেনো বেশ ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে অরুনিকা। ভীষন পরিপাটি একটা রুম। রুমের মাঝে সবকিছুই আছে তবুও মনে হচ্ছে অল্প জিনিস আছে। সবকিছু ভীষণ সুন্দর ভাবে সেট করা। পুরো রুমের দিকে চোখ বুলিয়ে দেখতে দেখতে ড্রেসিং টেবিলে কিছু একটা দেখে চোঁখ আঁটকে যায় তার। আসতে করে বেড থেকে সেদিকে এগিয়ে যায় অরুনিকা। প্রথমেই চোখে পড়ে একটা বক্সের নিচে রাখা ছোট্টো একটা চিরকুট।
“সরি প্রাণপাখিটা! একটু দেরি হয়ে গেলো ফিরতে। বিয়েটা যেহুতু হুট করেই হয়েছে তাই বিয়ের প্রথম রাতে তোমাকে কিছু দেবোনা তা তো হয়না তাইনা? আমার লাল টুকটুকে বউ টার জন্য এই ছোট্টো উপহার তার স্যার কামস হাসবেন্ডের তরফ থেকে।”
চিঠিটা পড়ে মুচকি হেসে বক্সটা হাতে নেয় অরুনিকা। গিফ্ট জিনিসটা বরাবরই তার কাছে প্রিয়। আর সেটা যদি হয় এমন সারপ্রাইজ গিফ্ট, তাহলে তো কথাই নেই। ঝটপট বক্সটা খুলে প্রথমে চোখে পড়ে একজোড়া পায়েল। বেশ সুন্দর স্টোন ডিয়ে বানানো ইউনিক ডিজাইনের। ভেতরে রাখা আরও একটা বক্স খুলতেই দেখতে পায় একটা স্বর্ণের আংটি, একজোড়া স্বর্ণের দুল সাথে একটা স্টোনের নোজপিন। ভেতরে রাখা আরও একটা এনভেলাপ আর চিরকুট দেখে ভ্রু কুচকে ফেলে অরুনিকা। প্রথমে চিরকুটটা নিয়ে পড়তে শুরু করে সে।
“আমি জানি কাল সকালেই আম্মু তোমাকে ডেকে স্বর্ণের জিনিস দেবে পড়ার জন্য। তবে আমি চেয়েছিলাম আমার বউকে আমার উপার্জনে কিছু দিতে। তাই এই ছোট্টো উপহারগুলো আমার একমাত্র দুষ্টু মিষ্টি বউয়ের জন্য। সাথে এনভেলাপ পঞ্চাশ হাজার টাকা আছে, বিয়ের দেনমোহর হিসেবে। এটা তোমার কাছে রেখে দিও যত্ন করে।”
ইতি, তোমার হাজবেন্ড।
অনেক রাত হয়ে গেছে অথচ আদাভান এখনো রুমে ফেরেনি। আদাভানের জন্য অপেক্ষা করতে করতে মাথায় হাত দিয়ে আধসোয়া হতেই ঘুমিয়ে পড়ে অরুনিকা। আদাভান ছাদের এক কোণে দেওয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে চাঁদটা দেখতে থাকে এক দৃষ্টিতে। যেনো কেউ তাকে চাঁদ দেখার চাকরি দিয়েছে। তখন অরুনিকার এভাবে ধাক্কা দেওয়াটা মনে আঁচড় কেটে যায় তার। অরুনিকার অবহেলার কারণে খুঁজতে গিয়ে বারবার খালি হাতেই ফিরতেই হয় তাকে। হটাত টুপ করে একফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ে ভিজিয়ে দেয় পরনের ছাই রঙের টিশার্টের একটুখানি অংশ। ভোরের আলো ফুটে উঠতেই মনে মনে এক কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়ে এগিয়ে যায় রুমের দিকে।
খাটের মাঝে অগোছালো ভাবে শুয়ে আছে অরুনিকা। শাড়ীটার এক অংশ সরে গিয়ে বেশ কিছুটা পেট দৃশ্যমান। নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি আকর্ষণ মানুষের বরাবরই বেশি। তাই নিজেকে দুর্বল না করে চোখ সরিয়ে নেয় সেদিক থেকে। আসতে করে এগিয়ে যায় বেডের কাছে। ঘুমন্ত অবস্থায় কি নিষ্পাপ টাই না লাগছে তার প্রাণপাখিকে। কে বলবে এই মেয়েটা এমন জল্লাদ ধরনের। ঘুমন্ত মুখের দিকে কয়েক পলক তাকিয়ে আলতো করে চুমু এঁকে দেয় প্রিয়তমার কপালে। তরপর চাদর গায়ে টেনে দিয়ে উঠে যায় ওয়াহরুমের দিকে। একেবারে ফ্রেশ হয়ে ওযু করে বেরোয় ওয়াশরুম থেকে।
ওয়াশরুমের দরজায় আওয়াজে ঘুম ভেঙে যায় অরুনিকার। ঘুমঘুম চোখে নিজের অবস্থান বোঝার চেষ্টা করে সামনে তাকাতেই পাঞ্জাবি পরিহিতা আদাভানের দিকে তাকাতেই চোখ আটকে যায় তার। এই মানুষটা এত সুন্দর কেনো ভেবে পায়না। সব পোশাকে, সব সাজেই যেনো পারফেক্ট লাগে তাকে। ফজরের আজান কানে আসতেই অরুনিকা উঠে পড়ে নামাজ পড়ার জন্য। কাবার্ড খুলতেই চোখে পড়ে এক সাইডে রাখা থ্রিপিস আর শরীর দিকে। সবগুলোই ঠিক তার পছন্দমত। সবগুলোতে ছোটো বড়ো নানা রঙের পমপম লাগানো। খুশিতে একটা ডডান্সদিতে ইচ্ছে করে তার। কিন্তু এখানে ডান্স করলে আদাভান নিশ্চই তাকে পাগল ভাববে। চুপচাপ একটা থ্রিপিস নিয়ে চলে যায় ওয়াশরুমে। গোসল শেষে একেবারে ওযু করে বেরিয়ে জায়নামাজে দাড়ায় অরুনিকা।
সামনে আদাভান দুই হাত উঁচু করে মোনাজাতে বসেছে আর তার ঠিক একটু পিছনে বাম পাশে অরুনিকাও মোনাজাতে দুই হাট তুলে কিছু কিছু চাইছে আল্লাহর কাছে। দৃশ্যটা আসলেই ভীষণ সুন্দর। হতে পারে দুজনের চাওয়া দুই রকম। হতে পারে একজন প্রতিশোধের আগুনে জ্বলছে তো আর একজন প্রেমের অনলে পুড়ছে। তবুও এই বিয়ে নামক পভিত্র বন্ধনে তারা আবদ্ধ। এবার শুধু সময়ের পালা, সময় দুজনের মাঝে জমে থাকা রাগ, অভিমান, প্রতিশোধের নেশা কিভাবে শেষ করে সেটাই দেখার পালা।
সকাল থেকেই অরুনিকাকে অ্যাভয়েড করে চলছে আদাভান। সকালের নাস্তার জন্যও একা একাই চলে গেছিলো। আর এখনও নিজের মতোই রেডি হচ্ছে কলেজে যাওয়ার জন্য। দেখে মনে হচ্ছে এই রুমে আদাভান ছাড়া আর কারোর অস্তিত্বই নেই। ভুল করেও একবার তার দিকে তাকাচ্ছেনা। অরুনিকারও কলেজে যেতে ইচ্ছে করছে তো। বেডের উপর বসে বসে এসব ভাবতে ভাবতেই কিছু একটা ভেবে ডেভিল হাসি দেয় অরুনিকা। তারপর লেগে পড়ে নিজের কাজে।
সম্পূর্ণ রেডি হয়ে আদাভান বেড সাইড টেবিলের কাছে রাখা ঘড়িটা নিতে আসতেই কিছু একটাতে স্লিপ খেয়ে সোজা গিয়ে পড়ে অরুনিকার উপর। দুজনের ঠোঁটের মাঝে দূরত্ব একদম সামান্য। একজন কথা বললেই আর একজনের ঠোঁট স্পর্শ করবে। রাগ করতে গিয়েও রাগ না করে আদাভান এক হাত বেডে ভর দিয়ে লো ভয়েসে বলে,
“সকাল সকাল আমার আদর খেতে ইচ্ছে করছে এটা তুমি আগে বলবেনা? এভাবে প্ল্যান করে কাছে আমার কি দরকার জান। আমি তো আলওয়েজ রেডি তোমাকে আদর দেওয়ার জন্য।”
অসভানের প্রত্যেকটা কথার সাথে সাথে স্পর্শ হচ্ছে একে অপরের ঠোঁটের। এতে জমে পাথরে পরিনত হয়েছে অরুনিকা। কিছু বলার শক্তি তার মাঝে নেই, শুধু জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে। যার সবটাই আছড়ে পড়ছে আদাভানের মুখে। গালে একটা চুমু দিয়ে ফট করে উঠে দাঁড়ায় আদাভান। ভাবটা এমন যেনো এতক্ষন কিছুই হয়নি। অরুনিকার এবার নিজের উপর রাগ লাগছে।
কিছুক্ষন আগে আদাভানের কলেজ যাওয়া ভেস্তে দেবে বলে বেশ কিছুটা বডি লোশন ফেলে রাখে টেবিলের পাশে। কিন্তু আদাভান যে স্লিপ করে একদম তার উপরেই পড়বে এটা মাথায় আসেনি তার। কিছুক্ষনের আগের ঘটনা মনে পড়তেই লজ্জায় মিয়য়ে যায় অরুনিকা।
“জলদি রেডি হয়ে নীচে এসো। আমি ওয়েট করছি।”
আদাভানের কথা শুনে খুশিতে নেচে ওঠে মন। গুনগুন করে গান করতে করতে চোখে হালকা কাজল আর লিপস্টিক লাগিয়ে কলেজ ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে পড়ে অরুনিকা।
অরুনিকার সামনে বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আদাভান দশ মিনিট যাবত। এদিকে অরুনিকা জেদ ধরে বসে আছে তার সাথে বাইকে করে যাবেনা, রিক্সায় করে যাবে। আদাভানের চোখ রাঙানিকে উপেক্ষা করে একটা রিক্সা ডেকে উঠে পড়ে তাতে। আদাভানের দিকে তাকিয়ে একটা জ্বালাময়ী হাসি উপহার দিয়ে বেরিয়ে পড়ে কলেজের উদ্দেশ্যে।
“ইউ উইল পে ফর দিস মিস পমপম, উপস্ সরি! মিসেস পমপম।” বলেই বাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়ে কলেজের উদ্দেশে। দুজনের গন্তব্য একই হলেও রাস্তা আলাদা।
চলবে?
#Fiza Siddique