আমার অভিমান তোমাকে নিয়ে পর্ব-০৪

0
874

#আমার_অভিমান_তোমাকে_নিয়ে(4)

কলেজ প্রাঙ্গণে এসে নূর আর আদিত্যকে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে চোখ খুলে পড়ে যাওয়ায় অবস্থা অরুনিকার। দুই হাতে নিজের চোখ কচলে পরিস্কার করে আবারো একই জিনিষ দেখে বেশ দৌড়ে তাদের সামনে যায়। তারপর আদিত্যর চুলধরে টেনে ছাড়িয়ে এনে একবার নূরের দিকে তাকায় তো একবার আদিত্যর দিকে। নূরতো লজ্জায় মরি মরি অবস্থা। এভাবে আপত্তিকর অবস্থায় যে অরুনিকার সামনে পড়তে হবে তা কল্পনায়ও ভাবেনি সে। তবে আদিত্য হালকা লজ্জা পেলেও একহাতে মাথা চুলকে একটা ভাব নেওয়া লুক দিয়ে অরুনিকার দিকে তাকায়।

“কি চাই তোর? এভাবে তাকাচ্ছিস কেনো?”

আবারো ঘাড় ঘুরিয়ে একবার তাকায় অরুনিকা নূরের দিকে। তারপর দুই হাত বুকে বেঁধে জিজ্ঞাসা করে,
“কবে থেকে চলছে এসব? আর কতদিন লুকানোর প্ল্যান করেছিলি সত্যি সত্যি বল। নাহলে তোর একদিন কি আমার দশদিন।”

“তোর মতো বাঘিনী যে কি করে আমাদের মতো ভালো ফ্রেন্ড পেলো সেটাই ভাবছি। তোর চোখ ফাঁকি দেওয়ার ক্ষমতা আমাদের আছে নাকি? আজই প্রথম একটু জড়িয়ে ধরেছিলো। ব্যাস এসে গেলি কূটকাচালি করতে।” আদিত্যর কথা শুনে রেগে বোম হয়ে অরুনিকা দিলো এক কিল। আদিত্য পিঠে হাত দিয়ে বাবাগো বলে চিৎকার করে দিলো এক দৌড়। অরুনিকাও কম যায়না, কাঁধের ব্যাগটা নূরের হাতে দিয়ে সেও দৌড় লাগালো আদিত্যর পিছনে। নূর এতক্ষন হতভম্বের মতো হা করে দুজনের দিকে তাকিয়ে থাকলেও এখন নিজের মুখটা বন্ধ করে হতাশার নিশ্বাস ছাড়লো। কোথায় সে এসেছিলো আদিত্যকে নিজের সমস্যার কথা জানতে। আবেগের বশে একটু জড়িয়ে ধরায় এদের মাঝে তো লঙ্কাকাণ্ড বেঁধে গেলো। হতাশ হয়ে নূর এগিয়ে গেলো ক্যান্টিনের দিকে। কারন ঐ দুটো বাঁদর হাঁপাতে হাঁপাতে ওখানেই উপস্থিত হবে।

আদিত্যর পিছনে দৌড়াতে দৌড়াতে কখন যে আদভানের কেবিনের দিকের অংশে চলে এসেছে তারা সেটা কারোরই খেয়াল নেই। কলেজের সবাই আদাভানকে ভীষণ ভয় পেয়ে চলে বলে এদিকটা খুব একটা কারোর আনাগোনা নেই। আদিত্যকে বেশ হাতের নাগালে পেয়ে যাবে এমন সময় হুট করেই ডান দিকের করিডোরে ঘুরে যাওয়ায় নূর ব্যালেন্স সামলাতে না পারায় ধপ করে পড়ে গেলো। তবে সে একা পড়েনি কাউকে সাথে নিয়েই পড়েছে। চোখ খুলে সামনে আদাভানকে দেখে শুকনো ঢোক গেলে অরুনিকা। আজ নিশ্চই তার তেরোটা বাজিয়ে ছাড়বে আদাভান।

সবেই কেবিন ঠেকে বেরিয়ে সামনের দিকে এগোতে যাচ্ছিলো আদাভান। হটাত সামনে থেকে কেউ বেশ জোরে দৌড়ে তার উপর পড়ে। আচমকা এমন আক্রমনে টাল সামলাতে না পেরে তাকে নিয়েই নীচে পড়ে যায় আদাভান। বেশ কয়েকটা কড়া কথা শুনিয়ে দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে সামনে তাকাতেই আদাভানের গম্ভির্যভরা মুখে হাসি ফুটে ওঠে। একবার আশেপাশে তাকিয়ে কাউকেই দেখতে না পেয়ে হাসিটা আরও চওড়া হয় তার। দুই হাতে কোমর পেঁচিয়ে আরও খানিকটা কাছে টেনে নেয় অরুনিকাকে। তারপর বেশ ব্যঙ্গ করার সুরে বলে,

“একদিনের দূরত্বই সহ্য হচ্ছেনা আপনার মিস পমপম! এত্ত ভালোবাসেন বুঝি আমাকে! চব্বিশ ঘণ্টা হাওয়ার আগেই আমার বুকে আছড়ে পড়লেন। উফ্ আমার বুকে ব্যাথা করছে তো!”

আদাভানের এমন মসকরাতে বেশ মজা পায় অরুনিকা। তবে কলেজে তাকে যতটা সম্ভব শালীনতা বজায় রাখতেই হবে আদাভানের সাথে। তাই হালকা ঝুঁকে আদাভানের কানের কাছে ফিসফিস করে বলে,

“একদমই ঠিক ধরেছেন স্যার। আপনার ঠেকে দূরত্ব একদমই সহ্য হয়না আমার। এখানে প্রবেশ না করলে ক্ষতগুলো ফিরিয়ে দেবো কিভাবে? তবে একটা সিক্রেট কি জানেন? আপনি নিজেই নিজের ফাঁসির দড়ি খুব যত্ন সহকারে বাঁধছেন। অ্যান্ড আই লাইক ইট।” আদাভানের বুকে আঙ্গুল দিয়ে কথাগুলো বলে বেশ জোরেই হাতের নোখ গেঁথে দেয় বুকের খোলা অংশে।

“ব্যাথাটা নাহয় আর একটু বাড়িয়ে দিলাম।”

আদাভানের উপর থেকে উঠে নিজের ডান হাতটা এগিয়ে দেয় আরুনিকা, আদাভানের দিকে। আদাভান একটা মুচকি হাসি দিয়ে অরুণিকার হাতে হাত রেখে উঠে পড়ে। তারপর ফট করে তাকে টেনে নিজের কেবিনের মধ্যের দেওয়ালে চেপে ধরে এক সাইডে পড়ে থাকা চুলগুলো সরিয়ে দেয়। মুচকি হেসে গলার নিচের অংশে মুখ ডুবিয়ে দেয়। অরুনিকার চোখের পানি গাল গড়িয়ে আদাভানের মুখে না পড়া পর্যন্ত দুই দাঁতের মাঝে পিষতে থাকে গলার নিচের অংশের মাংসল অংশ। তারপর বেশ আদুরে ভাবে ঠোঁট ছুঁয়ে দেয় কাটা অংশে। অরুণিকা কষ্টটা দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করলেও এবার বেশ জোরে ধাক্কা দিয়ে চোখ লাল করে তাকায় আদাভানের দিকে। সারা শরীর রি রি করে উঠছে তার। চোখ দিয়েই একপ্রকার শাসিয়ে বেরিয়ে যায় আদাভানের কেবিন থেকে।

অরুণিকা বেরিয়ে যেতেই আদাভান নিজের চেয়ারে পায়ের উপর পা তুলে বসে। তারপর ডান হাতের আঙ্গুল দিয়ে নিজের ঠোঁট স্পর্শ করে বলে ওঠে,
“আমাকে যতবার আঘাত করবে তার থেকে বেশী আঘাত তুমি নিজে পাবে। আদাভান আহসান ভালোবাসতে যানে, তাই বলে ভেজা বিড়াল হয়ে থাকবে এটা ভেবে থাকলে বিশাল বড়ো ভুল করবে মিস পমপম। একবার ভালোবাসার মানুষের সুখ দেখতে গিয়ে তাকে ছেড়ে দিয়েছি বলে যে বারবার তাই করবো এমনটা নাও হতে পারে। নিজের পছন্দের জিনিষ ছিনিয়ে নেওয়ার হোক না নিজের করে নেওয়া হোক, দুটোই এই আদাভান আহসান খুব ভালো করে পারে। আপাতত একটু ডানা ঝাপটে ওড়ার সময় দিলাম আপনাকে। সময় হলে এমনভাবে বেঁধে নেবো নিজের সাথে যে হাসফাস করবেন আপনি মিস পমপম।”

ক্যান্টিনের চেয়ারে বসে আছে নূর, আদিত্য, অরুনিকা। সবার মুখেই চিন্তার ছাপ। সবার বেশ চিন্তিত ভঙ্গিতে বসে থাকার মাঝে সেখানে এসে উপস্থিত হয় আলেয়া।

“তোদের কেউ কি মারা গেছে নাকি? সব এইভাবে শোক পালনে বসে আছিস কেন? আমাকেও একটু বল এক সেকেন্ড শোক পালন করি তবে আমিও।” বলেই হয় তুলতে তুলতে নূরের পাশের চেয়ারে ধপ করে বসে পড়লো আলেয়া।

“শোননা, আমার না খুব খিদে পেয়েছে। বাড়ি থেকে মাত্র তিনটে পরোটা আর দুটো চিকেন খেয়ে এসেছি। আমি সমোসা অর্ডার করছি, তোরা কেউ খাবি?” এবার আলেয়ার কথায় তেতে উঠল আদিত্য।

“তুই কি আজ ম*র*ণ খাওয়া খাবি নাকি? একটা মানুষ এত কিভাবে খায় তোকে না দেখলে বুঝতাম না। তাও যদি একটু গোলগাল হতিস! এত খেয়ে আছিস তো সেই শুটকি মাছের মতোই। জোরে হাওয়া দিলে আমার বুক কেঁপে ওঠে তোর জন্য।”

“ওই শা*লা, হারামী, কুত্তা! তুই আমার খাবারে নজর দিস? তোর চোখ দুটো খুলে নিয়ে মার্বেল খেলবো আমি। তুই নিজে তো পাঙ্গাশ মাছের মতো। ইয়াক কেমন গন্ধ বেরোয়। দুর হট আমার কাছ থেকে।”

“রাক্ষসরানী কটকটিও তোকে দেখে ভয়ে লুকিয়ে যাবে। একটু কম কম খা এখন থেকে, নাহলে দেখা গেলো সরকার তোকে মিউজিয়ামে রাখার জন্য তুলে নিয়ে গেলো।”

“কেনো তোর কি হিংসা হয় আমার খাওয়া দেখে? আমি খাবো, আরও বেশি বেশি করে খাবো। দুনিয়ার সব খাবার খেয়ে নেবো। তাতে তোর কি রে হারামী?”

“তোর জন্যই আজ আমাদের দেশের এই অবস্থা। খাদ্যের সংকট দেখা দিচ্ছে, বাজার মূল্য বেড়ে যাচ্ছে, কতো মানুষ না খেতে পেয়ে মারা যাচ্ছে। দেশের নাগরিক হিসেবে এসব খেয়াল রাখা আমার নৈতিক দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।”

ওদের দুজনকে ঝগড়া দেখে নূর টেবিলের উপরে মাথা এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। এসব একদমই ভালো লাগছেনা তার। অরুনিকাও ব্যাস্ত নিজের ফোন নিয়ে। আপাততো ফেইসবুকে তার প্রিয় রাইটারের গল্প পড়তে ব্যাস্ত সে। আইডির নাম “নীল চিরকুট”। নামটার সাথে সাথে মানুষটাকেও তার ভীষণ ভালো লাগে। তার লেখা প্রতিটা গল্প বারবার পড়ে আরুনিকা। বেশ ভালো লাগে সেগুলো পড়তে। তবে কোনোদিনও অরুণিকার কথা হয়নি রাইটারের সাথে। অনেকদিন আগে রিকোয়েষ্ট দিয়েছিলো এখনও ঝোলা অবস্হায় পড়ে আছে। আহা প্রেমিক পুরুষ, তুমি এই কেমন বেদনা দিলে গো। এসব ভেবে এক দুঃখী দুঃখী ভান করে অরুনিকা। তখনই টুং করে একটা মেসেজে মুখে খুশীর ঝিলিক ফুটে ওঠে তার।

চলবে?
#Fiza Siddique

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে