#গল্পপোকা_ধারাবাহিক_গল্প_প্রতিযোগিতা_২০২০
আবেগিমন তৃতীয় পর্ব
লেখনী: তৃষা ঘোষ
বিথীকার ওই ভাবে স্টেজ থেকে নেমে আসার সেই দৃশ্য যেন আকাশের মনে সাড়া ফেলে দেয়। আকাশ সারাদিন বিথীকার কথাই ভাবতে থাকে।
ওদিকে শ্রাবণী বিথীকাকে বহুবার জিজ্ঞাসা করা সত্বেও জানতে পারেনি যে কি কারণে সে সেদিন স্টেজ থেকে সোজা বাড়ি ফিরে গিয়েছিলো। আজ শ্রাবণী কলেজে আসেনি কারণ সে অসুস্থ,তাই আজ বিথীকা একাই কলেজ যাবে। শ্রাবণী ছাড়া বিথীকা আর কারুর সাথেই বেশি মিশতো না। আজও এর অন্যথা হলনা। কলেজ শেষে বাড়ি ফেরার জন্য তাড়াতাড়ি করে শেষ বাসটা ধরার কারণ হেতু সে মরিয়া হয়ে ছুটছে, এমন সময় কে একটা যেন বিথীকাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো.. বিথীকা আছরে গিয়ে পড়লো ‘ মা…’ একটা হাত বিথীকার দিকে…তাকিয়ে দেখলো আকাশ..!! হু আমি। আমি যদি ঠিক সময় এসে তোমাকে সরিয়ে না দিতাম তাহলে তুমি এতক্ষনে গাড়ির তলায় চলে যেতে। এবার সমস্তটা বিথীকার কাছে জলের মতো পরিষ্কার হয়ে গেল, ও যে বাড়ি ফেরার আসায় এতটাই মত্ত ছিল যে সে খেয়াল ই করেনি পেছনের গাড়িটা বারে বারে হর্ন বাজাচ্ছিল। পড়ে যাওয়ায় তার পায়ের গোড়ালিতে কেটে গেছে। আকাশ সেটা আগেই লক্ষ্য করেছিল তাই সে তার নিজের গাড়িতে করে বিথীকাকে বাড়িতে পৌঁছে দেয়। বিথীকা অবশ্য প্রথমেই আকাশের গাড়িতে উঠতে রাজি হয় না কিন্তু আকাশের বকাবকির ভয়ে আর কিছু করে উঠতে পারেনি। পায়ের ওই আঘাতের কারণে বিথীকার রাত্রে খুব জ্বর হয়। শ্রাবণী চিন্তিত হয়ে আকাশকে ফোন করে, আকাশ একজন ডাক্তার কে সঙ্গে নিয়ে আসে। ডাক্তার ট্রিটমেন্ট করে চলে গেলেও আকাশ সারা রাত সেবা শুশ্রূষা করে বিথীকাকে সুস্থ্য করে ভোরবেলায় চলে যায়। বিথীকার জ্ঞান ফিরলে শ্রাবণী সব কথা খুলে বলে, প্রিয় বন্ধু শ্রাবণীর মুখে সব শুনে বিথীকা বুঝতে পারে যে সে তাকে ভুল ভেবেছিল..পরেরদিন কলেজে যাবার পথে আকাশের সাথে দেখা হয় বিথীকার। আকাশ ছুটে আসে..
বিথীকা..কেমন আছো? জ্বর নেই তো?
না আকাশ দা..আমি ভালো আছি..বলেই চলে যাবে এমন সময় পিছনে ফিরে তাকাতে ই কিছু বলবে বিথীকা!
না.. মানে..ধন্যবাদ। বিথীকার মুখে ধন্যবাদ শুনে আনন্দে আত্বহারা হয়ে উঠলো আকাশ। সেদিন সারারাত আকাশ দুচোখের পাতা এক করতে পারলো না,শুধু বিথীকার বলা কথাগুলো কানে বাজতে লাগলো। আকাশ মা বাবার একটি মাত্র ছেলে। তাই ছেলের কোনও কথা ই তারা ফেলতে পারেন না। এ ক্ষেত্রেও তার অন্নথা হল না। বিথীকার জীবনের সব কথা বলতেই তারা রাজি হয়ে গেল। এখন শুধু সকাল হবার অপেক্ষা।
ওদিকে বিথীকাও মনে মনে ভাবে যে আমার এত উপকার করলো তাকে কিনা আমি.. ছি ছি….। বিথীকার ফোনটা বেজে উঠে, চমকে উঠে বসে দেখে আকাশ কলিং….. হ্যালো….
হ্যালো..বীথিকা? আমি আকাশ বলছি..
হুম্…বলো..
বিথীকা আমি তোমাকে কিছু বলতে চাই!
বলো আকাশ দা আমি শুনছি।
না মানে.. মানে…আমি…তোমাকে….
কি হলো আকাশ দা এত আমতা আমতা করছো কেন??
বীথিকা ..বীথিকা..আমি তোমাকে ভালোবাসি..
আকাশের মুখে এমন কথা শুনে বীথিকা নিঃস্তব্ধ হয়ে রইলো।
বীথিকা কি হল! তুমি কিছু বলছো না কেন?
আকাশ দা তুমি আমার সম্মন্ধে কিছুই জানো না, জানলে হয়ত এমন প্রস্তাব দিতে না।
আমি কিছুই জানতে চাইনা …যেটুকু জানি সেটুকুই আমার কাছে যথেষ্ট।
আকাশের কথার কোনও প্রতি উত্তর খুঁজে না পেয়ে বীথিকা অসহায়ের মতো ফোনটা রেখে দিল।
আকাশ আর ফোনে পেলো না।
আড়ালে দাঁড়িয়ে সব কথা ই শুনেছে শ্রাবণী, প্রিয় বন্ধুর এমন কষ্ট সহ্য করতে না পেরে শ্রাবণী আকাশকে বিথী কার জীবনের সমস্ত করুন কাহিনী বলে, আকাশের দুচোখের কোণে জল জমে যায়। আকাশ তো কিছুই জানত না।ওর জীবনে এত কষ্ট!! পরের দিন সকালে দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ! কে?
বীথিকা দরজা খুলেই দেখে একজন ভদ্র লোক এবং একজন ভদ্র মহিলা দাড়িয়ে আছে।
কে আপনারা?
শ্রাবণী তাড়াতাড়ি করে এসে…’ আরে আপনারা! আসুন আসুন ভিতরে আসুন ‘। এই বীথিকা ওনারা আকাশ দার বাবা মা, ওনাদের বাড়ির ভিতরে নিয়ে আয়..বীথিকা হতবাক..।
শ্রাবণী এবং বীথিকা জল খাবারের আয়োজন করেছে। আকাশের মা বীথিকা কে তার কোলের কাছে বসিয়ে বিয়ের প্রস্তাব দিলো। অনেক্ষন চুপ করে রইলো এরপর সে কিছু বলতে যাবে এমন সময় আকাশের মা বিথীকাকে থামিয়ে দিয়ে ‘ আমি জানি তুমি কি বলবে , কিন্তু আমাদের অজানা কিছুই নয় আমরা সবই জানি, আকাশ আমাদের তোমার সম্পর্কে সবকিছুই বলেছে ‘।
দরজার দিকে তাকাতেই বিথিকার সব কিছু ওলট পালট হয়ে গেল, দেখলো আকাশ দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে আকাশ…!
আকাশ ধীরে ধীরে ঘরে প্রবেশ করলো। মুখে একটা মৃদু হাসি। অনেক গুলো প্রশ্ন বিথীকার মনে ভিড় করছে, আকাশ হয়ত কিছু আন্দাজ করতে পারছে। আকাশ বিথীকাকে নিয়ে ছাদে চলে যায়, একান্তে কিছু কথা বলার জন্য। বিথীকা..আমি সেদিনই হয়ত তোমাকে আমার উত্তরটা জানতে পারতাম। কিন্তু আমি বলিনি কারন, আমি চেয়েছিলাম তোমাকে চমক দিতে। একটা মা,বাবা, একটা সুখী পরিবার সবটুকু ভালোবাসা দিয়ে তোমায় ভরিয়ে দিতে চেয়েছিলাম। তোমার সব শূন্যতা পূরণ করার প্রচেষ্টা করেছি। তুমি যেমন ঠিক তেমনভাবেই আমি তোমাকে আমার জীবনে বরণ করে নিতে চাই। বিথীকা…
বিথীকা নিশ্চুপ হয়ে গেছে। ওর বলার কোনো ভাষা নেই।
কিছুক্ষণের জন্য দুজনেই চুপ করে রইলো এরপর…
বিথীকা..! বিথীকা.. হুম্
তুমি তো কিছুই বলছো না। তোমার কোনো আপত্তি নেই তো? তুমি নির্ভয়ে সব কথা বলতে পারো। তুমি আমাকে তোমার বন্ধু মনে করতে পারো। আবার নিঃস্তব্ধ।
এবার আকাশ বিথীকার সামনে মাথা নত করে বসে, ওর বন্ধুত্বের হাতটা বিথীকার দিকে বাড়িয়ে দিল বিথীকা..তুমি সারাজীবন আমার পাশে থাকবে তো.?
বিথীকা কিছুই বলতে পারলো না। শুধু ওর চোখ দুটো ছলছল করছে। অজ পাড়াগাঁয়ে র ওই অনাথ শ্যামলা মেয়ে কি কখনো ভেবেছিল যে ওর জীবনের শূন্যতা কেউ এইভাবে পূরণ করে দেবে। হয়ত ভগমানের মনে এটাই ছিল, তাই হয়ত ওকে নিঃস্ব করে দিয়েছিল..কিছু দেওয়ার জন্যই। ভাবতে ভাবতে কখন যে বিথীকার হাতটা আকাশের হাতে বিলীন হয়ে গেছে তা টেরও পেলনা।
চলবে…
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।
গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা
◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।
আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share