আফিম বড্ড নেশালো পর্ব-১৪

0
3661

#আফিম_বড্ড_নেশালো
পর্বঃ১৪
লেখিকাঃমাহযাবীন

বিয়ের আগে মেয়েদের মনে নানান অনুভূতিরা বাসা বাঁধে।তাদের মনে ভয়,সংশয় এবং অস্থিরতার অনুভূতি যেমন জায়গা করে নেয় ঠিক তেমনই আরেকটি হচ্ছে লজ্জানুভূতি।
জীবনের একটি নতুন অধ্যায়ে পা রাখবার জন্যে যেমন অধীরতা কাজ করে ঠিক তেমনই এক নতুন পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নিয়ে চলতে পারবে কিনা এ নিয়ে থাকে ভয় এবং সংশয়।
অতি প্রিয় ও কাঙ্ক্ষিত মানুষটিকে নিজের করে পাওয়ার অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা যায় কি আদৌও?যত বারই নাফিয়া ভাবছে সে মিস.শেখ হতে মিসেস.আফিম ইবনানে পরিণত হবে ততবারই এক তীব্র সুখ অনুভব করছে সে।সেই সাথে আছে উত্তেজনা,প্রশান্তি,মুগ্ধতা ও লজ্জা।এতো এতো সুন্দর অনুভূতির মাঝে ভয়,সংশয় ও অস্থিরতাও রয়েছে।
সেন্টমার্টিনের বুকে নির্মিত ব্লু মেরিন রিসোর্টের একটি কক্ষের জানালার ধারে দাঁড়িয়ে অনুভূতির সাগরে সাঁতরাতে ব্যস্ত নাফিয়া।রাত পোহাতেই শুরু হবে তার বিয়ের প্রস্তুতি।সন্ধ্যের মধ্যেই সে শেখ পরিবারের মেয়ে হতে ইবনান পরিবারের পুত্রবধূতে পরিণত হবে।একটি জিনিস ভেবে ঠোঁটে হাসি ফুটে ওঠে নাফিয়ার।আর তা হলো,এতোদিন তাদের প্রেমের সাক্ষী ছিলো আকাশ,বাতাস,চাঁদ ও তারা।আর এখন এদের সাথে সমুদ্রও যোগ হয়েছে।তাদের ভালোবাসার পূর্ণতা পাবার গল্পটা সমুদ্রের বুকেও লিখে যাবে তারা।
হটাৎই নাফিয়ার ফোনটি বেজে ওঠে।ফোনটি হাতে নিতেই দেখতে পায় “অভিরতি” [Addiction] লিখে সেভ করা নাম্বার হতে কল আসছে।ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে নাফিয়া কলটি রিসিভ করে কানে ধরে।কিন্তু ফোনের ওপাশ হতে কোনো শব্দ আসে না।কিছুটা সময় এভাবেই নিরব থাকবার পর ফোনের ওপাশ হতে মৃদু কন্ঠস্বর ভেসে আসে,
-This is not fair,Miss. Sheikh![এটি ঠিক নয়,মিস.শেখ]
-কোনটি?
-১০ দিনে একটি বারও দেখা করোনি।
-বিয়ের আগ অব্দি দেখা করা নিষেধ।
-Do you think that i care about this?[তোমার মনে হয় আমি এর পরোয়া করি?]
-কালই তো বিয়ে।
উত্তরে কিছু বলে না আফিম।আবারও উভয়ের মাঝে নিরাবতা বিরাজ করছে।এরা একে-অপরের কন্ঠস্বরের থেকে নিঃশ্বাসের শব্দই যেনো বেশি উপভোগ করে।ঠিক যেমন ঠোঁটে উচ্চারিত হওয়া শব্দগুলোর থেকে চোখে ভেসে ওঠা অনুভূতিগুলোই উপলব্ধি করায় মত্ত হতে পছন্দ করে এরা।
নিরাবতা ভেঙে আফিম বলে ওঠে,
-রুম হতে বেরোতে পারবে?
-উহু।
-ইচ্ছে করেই করছো।
উত্তরে মুচকি হাসে নাফিয়া।আফিম মিথ্যে বলেনি।সে সত্যিই ইচ্ছে করেই এ দশ দিন আফিমের সাথে দেখা করেনি।আসলে দূরত্ব কাছে আসার আনন্দকে কয়েকশত গুণ বৃদ্ধি করে দেয়।আফিমকে এতোটা দিন ধরে না দেখে থাকতে নাফিয়ার কম খারাপ লাগছে না কিন্তু কাল যখন একেবারে আফিম তার হয়ে যাবে এবং ১০ দিনের তৃষ্ণার্ত চোখ আফিমের দর্শন করবে তখনের অনুভূতিটি হবে এক অন্য রকম প্রশান্তির।
অনেকটা সময় উভয়ই নিরাবতা পালন করবার পর নাফিয়া বলে ওঠে,
-কাল পূর্ণিমা রাত!
-হু।
-জানতেন?
-হু।
-ইচ্ছে করেই বিয়ে এ দিনে ঠিক করেছেন,নয় কি?
-কাল জানতে পারবে।শুভ রাত্রি!
বলেই ফোনটি কেটে দেয় আফিম।

!!
সেন্টমার্টিনের নামকরা একটি রিসোর্ট ব্লু মেরিন।যা ফেরিঘাটের কাছেই অবস্থিত।রিসোর্টটি যেমন বড় ঠিক তেমনই সুন্দর।এ রিসোর্টের ৩য় তলায় বুফেট রেস্টুরেন্টের মতো খাবার ব্যবস্থা আছে।সেই সাথে আছে থাকার জন্যে কক্ষের ব্যবস্থাও।পুরো তৃতীয় তলা বুক করে নিয়েছেন অভ্র সাহেব।মেয়ের বিয়ে বলে কথা!
ঘাড়ে ঋণের বোঝা থাকতেও তিনি তার দুই কন্যার বিয়ের জন্য জমিয়ে রাখা ৮ লাখ টাকার একটি টাকাও কখনো খরচ করেননি।৪ লাখ টাকা করে ৮ লাখ টাকা দুই কন্যার বিয়েতে ব্যয় করবেন বলে জমিয়ে রেখেছিলেন।নাফিয়ার জন্যে যখন আফিমের প্রস্তাব আসে তখন সম্মতি দেওয়ার সময় চিন্তায় কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছিলো তার।এতো বড় পরিবারের সাথে সম্বন্ধ করতে চলেছেন, বিয়ের খরচ উঠাতে পারবেন তো!বিষয়টি প্রথম দিকে যতটা কঠিন লাগছিলো তার কাছে পরে আরো কঠিন মনে হয়েছিলো যখন আফিম সেন্টমার্টিনে বিয়ে করবার আবদার করে।কিন্তু এখন যেনো চিন্তের ছিতে ফুটাও নেই অভ্র সাহেবের।বিয়েতে মেহমান বলতে শুধু আফিমের খালার পরিবার এবং চাচার পরিবার।মামা আর ফুপু নেই আফিমের।আর নাফিয়ার তরফ থেকে শুধুই তার মামার পরিবার।কারণ খালা,চাচা,ফুফু কোনোটিই নেই তার।
রিসোর্টে প্রতিটি মেহমানের কক্ষ ভাড়া এবং খাওয়ার খরচ ব্যতীত তেমন কোনো খরচ করতে হচ্ছে না অভ্র সাহেবের।আফিমের পরিবার কোনো শর্তও দেয়নি তাকে।এমন কি নাফিয়ার বিয়ের কাপড় নাফিয়াকে সাথে নিয়ে সানিয়া বেগমই কিনে দিয়েছিলেন।আফিমকে যে নাফিয়ার পরিবার কিছু দেয়নি এমনটি নয়।আফিমকে নিয়ে অভ্র সাহেব গিয়েছিলেন কেনাকাটা করতে।মোট ৪০ হাজার ওখানে খরচ করে এসেছিলেন তিনি

বিয়ের জন্য দুটি রুম সুন্দর করে সাজানো হয়েছে।একটি ছেলেদের জন্য এবং অপরটি মেয়েদের জন্য।আর একটি রুম বিশেষভাবে সাজানো হয়েছে।যাকে বলে বাসর ঘর।
সন্ধ্যে ঠিক সাড়ে ৭ টা।নাফিয়াকে সাজিয়ে বসানো হয়েছে মেয়েদের জন্যে সাজিয়ে রাখা কক্ষটিতে।অন্যদিকে আফিমও বিয়ের শেরওয়ানিতে বর সেজে অপেক্ষার প্রহর গুনছে।বধু বেশে তার প্রিয়াকে দেখতে কতোটা মনোমুগ্ধকর লাগতে পারে তা কল্পনায় আনতে বারংবার ব্যর্থ হচ্ছে সে।অপেক্ষা যেনো পুরোচ্ছেই না।

রাত ৮ টায় কাজী সাহেব উপস্থিত হন বিয়ে পড়াতে।প্রথমে আফিমকে কবুল বলতে বলা হলে সে তড়িৎ গতিতে বলে ওঠে,”কবুল”।যেনো কয়েক সেকেন্ড বিলম্বে উত্তর দিলে তার বউ ভেগে যাবে।উপস্থিত বড় বুজুর্গ ব্যক্তিসহ আফিমের কাজিনসরা শব্দ করে হেসে ওঠে।সেই সাথে অনেকে তো বলেই বসে,”তাড়া দেখছিস!এখন দিয়েই বৌ পাগলা”।এদের হাসি বা কথায় বিন্দু পরিমাণ ভ্রুক্ষেপ করে না আফিম।সে তো দ্রুত বিয়ে টা সেরে তার মিস.শেখকে দেখতে চায়।
এদিকে নাফিয়াকে কবুল বলতে বলা হলে মেয়েটি অনুভূতির সাগরে সাঁতরাতে সাঁতরাতে বেশ সময় নিয়েই বলে “কবুল”।
অবশেষে চারিদিকে “আলহামদুলিল্লাহ”, “আলহামদুলিল্লাহ” শব্দ প্রতিধ্বনিত হতে থাকে।সবার মাঝে সে কি আনন্দ,উল্লাস!

!!
বাসর ঘরে লাল গোলাপ দিয়ে সাজানো বিছানাটিতে চুপটি করে বসে আছে নাফিয়া আফিমের অপেক্ষায়।পুরো ১০ দিন পার হয়ে ১১ দিনের দিন লোকটিকে দেখবে সে।হৃদয় জোরে জোরে স্পন্দিত হয়ে জানান দিচ্ছে সে কতোটা ব্যকুল তার প্রিয়র দর্শন পেতে।অপেক্ষার প্রহর বেশি লম্বা হলো না।৫/৬ জন মেয়ে কাজিনস সহ কক্ষে প্রবেশ করলো আফিম।নাফিয়ার দিকে চোখ যেতেই থমকে দাঁড়ালো সে।সিঁদুর লাল রঙের বেনারসি শাড়িতে একটি রূপসী নিজেকে জড়িয়ে বসে আছে।যার চোখে গাঢ় কালো কাজল,ঠোঁটে টকটকে লাল লিপস্টিক,খোঁপায় গুজা ফুল।আফিমের হৃৎস্পন্দন ক্রমশ বেড়ে চলছে।পুরো পৃথিবীটা যেনো তার জন্যে থেমে গিয়েছে আর সে চোখ ভরে দেখে নিচ্ছে তার সদ্য বিয়ে করা এই মায়াবীনিকে।
কক্ষে উপস্থিত কাজিনসরা হেসে গড়াগড়ি খাচ্ছে আফিম ও নাফিয়া উভয়ের একে-অপরের দিকে হা হয়ে তাকিয়ে থাকা দেখে।হটাৎ একজন গিয়ে আফিমকে ধাক্কা দিয়ে বলে ওঠে,
“সারা রাত পরে আছে।তখন নাহয় ইচ্ছে মত দেখে নিস।তোর বউকে কেউ তুলে নিয়ে যাবে না।এখন যেয়ে তার পাশে বস এবং আমাদের ছবি তুলতে দে।” ধ্যান ভাঙতেই আফিম কন্ঠে বিরক্তি নিয়ে বলে ওঠে,
-বিয়ে করছি কি তোদের সাথে ছবি তোলার জন্য?যা বের হো আমার রুম থেকে।আমার বৌয়ের সাথে শান্তিতে থাকতে দে।
কাজিনদের মাঝে আবারও হাসির রোল পরে যায়।সবাই নানা কথা বলে মজা করতে আরম্ভ করে।আর এদিকে বেচারি নাফিয়া লজ্জায় লাল,নীল হচ্ছে।

চলবে।

#আফিম_বড্ড_নেশালো
পর্বঃস্পেশাল [সমুদ্র বিলাস]
লেখিকাঃমাহযাবীন

সমুদ্র বিলাসের শ্রেষ্ঠ সময়টি হয়তো রাত।আর যদি রাতটি হয় জোৎস্নাময় তবে এর মুগ্ধতা অবর্ণনীয়।রাতের নিস্তব্ধতা,ঠান্ডা বাতাসের আলতো করে ছুঁয়ে যাওয়া,সমুদ্রের ঢেউয়ের শব্দে মন দুলে উঠা, আকাশের বুকে মস্ত বড় চাঁদের উপস্থিতি যা তার জোৎস্না দিয়ে পৃথিবীর অর্ধেকাংশের কুটকুটে অন্ধকার দূরীভূত করে এবং পৃথিবীতে প্রেরণ করে তাপহীন মনোমুগ্ধকর আলো।সেই সাথে জোৎস্নার আলো যখন সমুদ্রের পানিতে প্রতিফলিত হয় তখন পানিগুলো দেখতে যেনো রাশি রাশি মুক্তোর দানা।

আফিম ও নাফিয়া উভয়ই সমুদ্রের কিনারা ধরে ধীরে ধীরে পথ চলছে।একটু পর পর সমুদ্রের পানি ঢেউ হয়ে এসে আলতো করে ভিজিয়ে দিয়ে যাচ্ছে তাদের পা দু’টো।একে-অপরের আঙুলে আঙুল ঢুকিয়ে নিরবে হাঁটছে তারা।এমন মনোমুগ্ধকর প্রকৃতি ও পরিবেশে প্রিয় মানুষটির হাত ধরে হাঁটার অনুভূতি প্রকাশের কোনো শব্দ আছে কি?
উহু!এ অনুভূতিটি শুধুই অনুভব করা যায়,ব্যাখা করা যায় না।কিছু বিশেষ অনুভূতি এমনই হয়,নামহীন ও বর্ণনাতিত। ধুকপুক করা হৃদয় ও লজ্জানুভূতি নিয়ে হাঁটার মাঝেই একটু পর পর তাকাচ্ছে নাফিয়া,আফিমের দিকে।আফিমের ঠোঁটে হাসি নেই তবে তার শান্ত চেহারা তার মনের প্রশান্তি ব্যক্ত করছে।আফিম হাঁটার মাঝেই হটাৎ থেমে যায়।নাফিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠে,
-চলো পানিতে খানিকটা ভিজে আসি!
আফিমের কথায় অবাক হয়ে নাফিয়া বলে ওঠে,
-এই রাতে পানিতে?
-তো?(ব্রু কুঁচকে বলে ওঠে আফিম)
-মোটেই না।আমার ভয় লাগে।
-তবে তো ভিজতেই হবে।(ঠোঁটে দুষ্টু হাসি নিয়ে বলে ওঠে আফিম)
নাফিয়া এর তীব্র অসম্মতি জানিয়ে কিছু বলে ওঠার আগেই আফিম তার হাত ধরে হাটু অব্দি পানিতে নিয়ে আসে।কাজটি এতোটাই দ্রুত করে আফিম যে নাফিয়া কোনো প্রতিক্রিয়াই দেখাতে সময় পায় না।হাটু সমান পানিতে এসে আফিম থামতেই নাফিয়া আফিমকে জড়িয়ে ধরে ভয়ে।আফিমও জড়িয়ে ধরে নাফিয়াকে নিজের মাঝে।ঠোঁটে হাসি নিয়ে আফিম বলে ওঠে,
-আমার বুকে লেপ্টে থাকার সুযোগ আরো পাবে কিন্তু এসময়ের এই মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য টা মিস করলে আর নাও পেতে পারো।
আফিমের কথার কোনো উত্তর দেয় না নাফিয়া।সে ভয়ে আফিমকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরেই আছে।আসলে নাফিয়ার পানির আতংক আছে(ওয়াটার ফোবিয়া)।তাই জন্যেই এতোটা ভয় পাচ্ছে সে।আফিম ধীরে ধীরে নাফিয়াকে নিজের বক্ষ হতে উঠিয়ে শান্ত কন্ঠে নাফিয়ার চোখে চোখ রেখে বলে ওঠে,
-আমি আছি তো!তোমার কিচ্ছু হবে না।শুধু ঐ দিক টায় তাকাও।
ভালোবাসা এক অদ্ভুত রকমের অনুভূতি।এই অনুভূতিতে যেমন আছে বিশ্বাস,ঠিক তেমনই আছে ভরসা ও নির্ভরতা।আফিমের কথায় এক বুক ভরসা নিয়ে নিজের ভয়কে দূরে ঠেলে আফিমের বিপরীত দিকে ফেরে নাফিয়া।আহা,কি সুন্দর সেই দৃশ্য!আকাশে মস্ত বড় চাঁদ আর চাঁদের আলো পানিতে পরায় পানি জ্বলজ্বল করছে।সেই সাথে হাটু অব্দি পানিতে নামায় সমুদ্রের ঢেউয়ের পানির স্পর্শ মিলছে।ঠান্ডা বাতাস তো আছেই।মুহূর্তেই ভয় ভুলে একরাশ মুগ্ধতায় পরিপূর্ণ হয়ে গেলো নাফিয়ার মন।হটাৎই পেটে কারো দু’হাতের স্পর্শে কেঁপে উঠলো সে।আফিম পেছন থেকে তাকে জড়িয়ে ধরেছে।নাফিয়ার কাঁধে মুখ রেখে চোখ জোড়া বুজে নেয় আফিম।নাফিয়াও এর বিপরীত নয়।সেও নিজের চোখজোড়া বুজে নিয়েছে।উভয়ই সমুদ্রের এই সৌন্দর্যে অনুভূতির সাগরে ডুব দিচ্ছে।

এভাবেই অনেকটা সময় পার হবার পর আফিম নাফিয়কে বলে ওঠে,
-চলো ওদিক টায় যাওয়া যাক।
আফিমের কথায় সম্মতি দেয় নাফিয়া।উভয়ই পানি হতে উঠে আরো কিছুটা পথ চলে।হাঁটার মাঝেই নাফিয়া বলে ওঠে,
-আমরা ফিরবো কখন?
নাফিয়ার প্রশ্নে তার দিকে তাকায় আফিম।অতঃপর বলে ওঠে,
-রাত টা এখানেই থাকছি।
আফিমের কথায় অবাক হয় নাফিয়া।এমন একটি বিশেষ রাত আফিম সমুদ্রের পাড়ে হাঁটতে হাঁটতে কাটিয়ে দিতে চাচ্ছে!মুহূর্তেই মন খারাপ হয়ে যায় তার।কিন্তু তা প্রকাশ করে না সে।আফিম নাফিয়ার দিকে তাকিয়ে তার মন খারাপ হওয়া টা উপলব্ধি করে।ঠোঁটে বাঁকা হাসি টেনে সে বলে ওঠে,
-ঐ দিক টায় তাকাও।
আফিমের ইশারা অনুযায়ী সেই দিক টিতে তাকাতেই সে দেখতে পায় একটি ক্যাম্পিং তাঁবু।তাঁবুটির চারপাশটা এলইডি নেট লাইটস দিয়ে সাজানো।খুশিতে নাফিয়ার ঠোঁটে এক লম্বা হাসি ফুটে ওঠে।সে আফিমকে উদ্দেশ্য করে বেশ উচ্ছ্বসিত কন্ঠে বলে ওঠে,
-আমি তাঁবুটির কাছে যাই?
ঠোঁটে হাসি নিয়ে আফিম বলে ওঠে,
-তোমার জন্যেই করা হয়েছে।
-উহু!আমাদের জন্য।
বলে আর দেরি করে না নাফিয়া।এক প্রকার দৌড়ে তাঁবুর দিকে এগিয়ে যায় সে।নাফিয়ার উচ্ছ্বাস দেখে বেশ ভালো লাগছে আফিমের।সে ঠোঁটে হাসি নিয়ে নাফিয়ার পেছন পেছন এগিয়ে যায়।

তাঁবুটির ভেতরে দু’জনের জন্যে যথেষ্ট জায়গা রয়েছে।একটি ছোটো ম্যাট্রেস বিছানো আছে এবং তার উপর ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বেশ কয়েকটি গোলাপের পাপড়ি।খুবই সুন্দর লাগছে নাফিয়ার কাছে তাঁবুটি।সে আফিমের কাছে এসে ঠোঁটে আনন্দের হাসি নিয়ে বলে ওঠে,
-এতোটা অনন্য না হলেও পারতেন,আফিম।বাসর রাতে জোৎস্না বিলাস তো অনেকেই করে কিন্তু সমুদ্র বিলাস ক’জনে করে?এতো অসাধারণ চিন্তা কোত্থেকে আসে আপনার মাথায়!
ঠোঁটে হাসি টেনে আফিম দু’হাতে নাফিয়ার কোমর আঁকড়ে ধরে নিজের একদম কাছে নিয়ে আসে।নাফিয়া চমকে আফিমের দিকে তাকায়।উভয়ই একে-অপরের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে।আফিম ঠোঁটে একটু হাসি নিয়ে বলে ওঠে,
-পছন্দ হয়েছে?
-অনেক বেশি।এই বিশেষ রাতটিকে সত্যিই আপনি ভীষণ বিশেষ করে দিয়েছেন যা আমি কখনোই আশা করেছিলাম না।
-তবে তো তোমারও কিছু করা উচিৎ আমায় বিশেষ অনুভব করানোর জন্য।(ঠোঁটে দুষ্টু হাসি নিয়ে বলে ওঠে আফিম)
এ কথায় নাফিয়ার মুখখানি লজ্জায় লাল হয়ে যায়।কিন্তু আফিম যেহেতু তার জন্যে এতোটা করেছে তবে তারও তো কিছু করা উচিৎ।নিজের মাঝে লজ্জাগুলোকে নিয়েই ধীরে ধীরে নিজের ঠোঁট আফিমের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায় সে।আলতো এক স্পর্শ কপালে এঁকে দিয়ে আফিমের দুচোখে এবং গালেও ঠোঁট ছুঁইয়ে দেয় নাফিয়া।আফিম চোখ বুজে ভালোবাসা নিচ্ছে তার প্রিয়ার।গালে ঠোঁট ছোঁয়ানোর পর নাফিয়া,আফিমের ঠোঁটের দিকেও অগ্রসর হয় কিন্তু একরাশ লজ্জা এসে বাঁধা দেয় তাকে।সে আর না এগিয়ে আফিমের বুকে নিজেকে লেপ্টে নেয়।নিজের বুকে নাফিয়ার অস্তিত্ব অনুভব করে চোখ বুজে রেখেই ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে তোলে আফিম।দু’হাতে শক্ত করে নাফিয়াকে জড়িয়ে ধরে বলে ওঠে,
-হাও আর ইউ ফিলিং,মিসেস.আফিম ইবনান?
আফিমের নেশালো কন্ঠস্বরে নাফিয়া ধীরে ধীরে এক তীব্র ঘোরে জড়িয়ে পরছে।হৃদয়ের স্পন্দন ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে তার।সে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে ওঠে,
-জানি না তবে এক অন্য রকম ভালোলাগার অনুভূতি।
আফিম ঠোঁটে বাঁকা হাসি ফুটিয়ে বলে ওঠে,
-পূর্বের দু’টি ধন্যবাদ তোলা ছিলো,মনে আছে?
-হু।
-কিভাবে ধন্যবাদ বলতে হয় শিখিয়ে দিয়েছিলাম!নাও গিভ মি থ্যাংকস ইন দ্যাট ওয়ে।[এখন আমাকে ওভাবে ধন্যবাদ দেও]
ধন্যবাদ বলার সেই পদ্ধতিটি মনে পরতেই লজ্জায় লাল হয়ে যায় নাফিয়া।চোখজোড়া বুজে থাকা অবস্থাতেই ঠোঁটে লজ্জা মাখা হাসি ফুটে ওঠে তার।ধীরে ধীরে আফিমের বক্ষ হতে মুখ উঠিয়ে তার চোখ পানে তাকায় সে।চেহারায় লজ্জা ও চোখে তার মাদকতা।জোৎস্নার আলোতে নাফিয়ার এমন মোহনীয় রূপ আফিমকে একটি ঘোরের মাঝে নিয়ে যাচ্ছে।সে ঘোর লাগা কন্ঠে নাফিয়াকে বলে ওঠে,
-ডু ইট ফাস্ট,মিসেস.আফিম ইবনান।
আজ আফিমের কোনো আবদারই ফিরিয়ে দিতে চায় না নাফিয়া।নিজের লজ্জাকে যথাসম্ভব সংযত করবার চেষ্টা চালিয়ে এই অসাধ্য কাজটি করবার জন্যে নিজেকে প্রস্তুত করছে সে।চোখ জোড়া বুজে তার ঘোড়ার গতিতে স্পন্দিত হওয়া হৃদয় নিয়ে কচ্ছপের গতিতে আফিমের ওষ্ঠদ্বয়ের দিকে নিজের ওষ্ঠদ্বয় এগিয়ে নিতে থাকে নাফিয়া।কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই তাদের ওষ্ঠদ্বয় একে-অপরকে স্পর্শ করে।আফিমের ওষ্ঠদ্বয়ের স্পর্শ পেতেই নাফিয়ার শরীরে যেনো বৈদ্যুতিক শক লাগে।সে ছিটকে সরে আসে আফিমের থেকে।
আফিম অবাক হয়ে তাকায় নাফিয়ার দিকে।নাফিয়ার এমনটি করার কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছে না সে।
আফিমের থেকে সরে এসে নিজের লজ্জারাঙ্গা মুখখানি মাটির দিকে নুইয়ে রাখে নাফিয়া।তার হৃৎস্পন্দন কতোটা বেড়ে গিয়েছে তা তার নিঃশ্বাসের গতিই বয়ান করছে।
আফিম নাফিয়ার এতোটা লজ্জা পাওয়া দেখে ঠোঁটে বাঁকা হাসি ফুটিয়ে এগিয়ে আসতে থাকে নাফিয়ার দিকে।আফিমকে নিজের দিকে এগোতে দেখে উল্টো দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে পরে নাফিয়া।ভীষণ লজ্জা লাগছে তার।বিশেষ করে,আফিমের ঘায়েল করা চাহনি তার হৃদয়ে গিয়ে লাগছে।হটাৎ ই সে নিজের কোমরে আফিমের হাত জোড়ার স্পর্শ অনুভব করে।সাথে সাথে কেঁপে ওঠে সে।সেই সাথে কাঁধে আফিমের গরম নিঃশ্বাসও অনুভব করতে পারছে।আফিম পেছন থেকেই নাফিয়ার গালে ঠোঁট ছুঁইয়ে এক হেঁচকা টানে নাফিয়াকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নেয়।অনতিবিলম্বে নাফিয়ার ঠোঁট জোড়া নিজের ঠোঁটের মাঝে নিয়ে নেয় আফিম।এভাবেই ধীরে ধীরে একে-অপরের সাথে আরো নিবিড়ভাবে জড়িয়ে পড়ে দুজনে।

প্রকাণ্ড খোলা আকাশের নিচে ও বিশাল সমুদ্রের কিনারায় জোৎস্নার আলোতে এক নব দম্পতি তাদের ভালোবাসার পূর্ণতার গল্প লিখছে।এ গল্পের পাঠক ঐ খোলা আকাশ,প্রবাহমান বাতাস,বহমান সমুদ্রের পানি এবং আকাশের বুকে বিরাজ করা সেই মস্ত বড় চাঁদটি।

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে