আফিম বড্ড নেশালো পর্ব-০৪

0
3819

#আফিম_বড্ড_নেশালো
পর্বঃ০৪
লেখিকাঃমাহযাবীন

বাইরে খুব বৃষ্টি হচ্ছে।বৃষ্টির শব্দ,তার মনোমুগ্ধকর ঘ্রাণ ও ঠান্ডা বাতাসের পরশ মানুষের মন,মস্তিষ্কে শান্তি এনে দেয় এবং উপহার দেয় চরম আরামদায়ক নিদ্রা।নাফিয়াও আরামের ঘুমে বিভোর হয়ে আছে।হটাৎ সে তার মুখে তরল জাতীয় কিছু অনুভব করে।ঘুম ভেঙে যায় তার।পিট পিট করে চোখ মেলতেই তার মুখের উপর বেশ খানিকটা পানি এসে পরে।তাৎক্ষণিক উঠে বসে সে।কিছুটা পানি তার নাক অব্দি উঠে গিয়েছে।কিছুটা সময় নিয়ে স্বাভাবিক হয়ে নাফিয়া তার সামনে দাঁড়ানো ব্যক্তিটির দিকে তাকায়।আফিম ভাবলেশহীন দাঁড়িয়ে আছে।একে তো এতো আরামের ঘুমটা পানি হলো দ্বিতীয়ত পানিতে শরীরের বেশ কিছুটা অংশ ভিজে গিয়েছে ফলে ঠান্ডা বাতাসের জন্য ঠান্ডা লাগছে আর তৃতীয়ত যে এই মহান কাজটি করেছে সে ভাবলেশহীন দাঁড়িয়ে বেহায়ার মতো তাকিয়ে আছে।রেগে নাফিয়া বলে ওঠে,
-কি চাই আপনার?এতো অসভ্য কেনো আপনি?এভাবে মধ্য রাতে একটি মেয়ের রুমে ঢুকে অত্যাচার করছেন!আর রুমে ঢুকলেন কি করে আমি তো দরজা বন্ধ করে ঘুমিয়েছিলাম?
নাফিয়ার কথা শেষ হতেই আফিম নাফিয়ার হাত ধরে এক হেঁচকা টানে দাঁড় করিয়ে বলে ওঠে,
-আমি অসভ্য?তোমার সাহস দেখে অবাক না হয়ে পারছি না।প্রথমত ইচ্ছে করে আমার পায় পারা দিয়েছ!
কথাটি বলেই আফিম নাফিয়ার হাত মুচড়ে ধরে।ব্যথায় “আহহ” শব্দ করে ওঠে নাফিয়া।আফিম আবার ও বলতে আরম্ভ করে,
-দ্বিতীয়ত এখন আমায় অসভ্য বলছো!আফিম ইবনানের অসভ্যতা কাকে বলে তা এখন টের পাবে তুমি।
হাত জোরে মুচড়ে ধরায় বেশ ব্যথা পাচ্ছে নাফিয়া।সেই সাথে আফিমের রাগান্বিত চেহারা ও উক্তি শুনে ভয়ে গলা শুকিয়ে যাচ্ছে তার।সে কাঁপা কাঁপা গলায় বলে ওঠে,
-আমি কিন্তু এখন চিল্লাবো!
তাচ্ছিল্যের একটি হাসি ঠোঁটে ঝুলিয়ে আফিম বলে ওঠে,
-এ বাড়ির সব ক’টি রুম সাউন্ডপ্রুফ।
-ছেড়ে দিন প্লিজ ভুল হয়ে গেছে।আপনি অসভ্য নন।(ভয়ে ভয়ে)
ঠোঁটে বাঁকা হাসি ঝুলিয়ে আফিম নাফিয়ার মুচড়ে ধরে রাখা হাত টি ছেড়ে দিয়ে নাফিয়ার কোমর জড়িয়ে ধরে বলে ওঠে,
-ভুল যখন করেছ শাস্তি তো তোমায় পেতেই হবে।
নাফিয়া যেই কিছু বলতে যাবে ওমনি আফিম তাকে থামিয়ে দিয়ে বলে ওঠে,
-শাট আপ।
ব্যাস মুখ বন্ধ হয়ে যায় নাফিয়ার।আফিম ধীরে ধীরে নাফিয়ার ঠোঁটের দিকে অগ্রসর হতে থাকে।এটি দেখে নাফিয়া ভাবে হয়তো প্রথম দিনের মতো আজও আফিম একই কাজ করবে তাই সে চটজলদি নিজের ঠোঁট হাত দিয়ে চেপে ধরে।কিন্তু লাভ হয় না আফিম ধীরে ধীরে তার দিকে অগ্রসর হচ্ছেই।ভয়ে চোখজোড়া বুজে নেয় নাফিয়া।চোখ বুজা অবস্থায়ই সে অনুভব করে কেউ কামড়ে তার ঘাড়ের মাংস তুলে নিচ্ছে।যন্ত্রণায় চেচিয়ে উঠে আফিমকে নিজের থেকে দূরে সরাবার চেষ্টা করে নাফিয়া কিন্তু সে সফল হয় না।ব্যথায় কেঁদেই দেয় নাফিয়া।কয়েক সেকেন্ড অতিবাহিত হতেই নাফিয়াকে ছেড়ে দেয় আফিম।ঘাড়ের যে জায়গা টায় কামড় বসিয়েছে সে জায়গাটিতে দাঁতের দাগ বসে খানিকটা রক্ত বেড়িয়ে এসেছে।নাফিয়ার চোখে পানি দেখে আফিম বলে ওঠে,
-এতোটুকু ব্যথা সহ্য করতে পারো না আর আফিম ইবনানের সাথে টেক্কা দিতে আসো!(ঠোঁটে তাচ্ছিল্যের হাসি)
ভিষণ রাগ উঠা সত্ত্বেও চুপ করে থাকে নাফিয়া কারণ সে জানে এখন কিছু বলাটা তার জন্যে হিতকর হবে না।নাফিয়ার কোনো উত্তর না পেয়ে আফিমও তার সময় অপচয় করে না।ঠোঁটে জয়ের হাসি ঝুলিয়ে নাফিয়ার কক্ষ ত্যাগ করে সে।আফিম যেতেই নাফিয়া আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের ক্ষত টা দেখে নেয়।জায়গা টাতে ব্যথাও করছে।মনে মনে নাফিয়া বলে ওঠে,
“এর উত্তর তুমি পাবে আফিম ইবনান।”

!!
সকালে ঠিক ৫ টায় ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিজের ইবাদত শেষ করে দাদীর কক্ষে যাওয়ার জন্য রওয়ানা হয় নাফিয়া।দাদীর পাশের রুমটিই দেওয়া হয়েছে তাকে থাকার জন্যে।দাদীর কক্ষে প্রবেশ করতেই নাফিয়া দেখে দাদী পত্রিকা পড়ছেন।দাদীকে উদ্দেশ্য করে সে বলে ওঠে,
-আসসালামু আলাইকুম দাদী।শুভ সকাল!
-ওয়ালাইকুম আসসালাম।উঠে পরেছ!
-জ্বি।এখন বলুন হাঁটতে যাওয়ার আগে কি খাবেন?
-এক কাপ দুধ চা হলে মন্দ হয় না!
-এক কাপ দুধ চা নয়।হয় এক কাপ দুধ নাহয় এক কাপ চা।
-এখন কি আমায় রং চা খেতে হবে?
-জ্বি অবশ্যই।যা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী ঠিক তাই খেতে হবে।
-আচ্ছা তবে এক কাপ রং চা।(মুচকি হেসে বলেন দাদী)
-আচ্ছা আনছি।
বলেই নাফিয়া দাদীর কক্ষ ত্যাগ করে রান্না ঘরে প্রবেশ করে।রান্নাঘরে দু’জন রাঁধুনি সকালের নাস্তা তৈরির প্রস্তুতি নিচ্ছে।নাফিয়া তাদের একজনকে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠে,
-আপু দাদী রং চা চেয়েছেন।এখনই বানিয়ে দিতে পারবেন তো?
-জ্বি অবশ্যই ম্যাম।
-ম্যাম বলার প্রয়োজন নেই আপনি আমার বড় তাই নাফিয়াই বলুন।
-জ্বি আচ্ছা।
-আর আরেকটি কথা!আজ থেকে দাদীর তিন বেলার খাদ্য তালিকায় কি কি খাবার থাকবে তা আমার থেকে অবশ্যই জেনে নিবেন।
-ঠিক আছে।
-আজ তার সকালের নাস্তার জন্যে দুটি রুটি,এইযে এই বাটির এক বাটি গরুর কলিজা এবং ডিম তৈরি করবেন।আছে তো সব?
-জ্বি আছে।তৈরি হয়ে যাবে।
-ধন্যবাদ।
বলেই রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে দাদীর কক্ষের দিকে অগ্রসর হয় নাফিয়া।
ঠিক ৫ টা ৩০ মিনিটে দাদী ও নাফিয়া দু’জনই বেরিয়ে পরলো হাঁটার জন্যে।বাড়ির কাছেই একটি পার্ক আছে।সেই পার্কটিতেই দু’জন হাঁটার সাথে সাথে বিভিন্ন গল্পও করলো।প্রায় ১ ঘন্টা হাঁটার পর দুজন বেশ ক্লান্ত হয়ে বাড়ি ফিরে এলো।বাড়িতে প্রবেশ করতেই সানিয়া বেগম ঠোঁটে হাসি টেনে তাদের উদ্দেশ্য করে বলে ওঠে,
-হাঁটা হলো আপনাদের?
নাফিয়া ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে সম্মতি জানালো আর দাদী বলে ওঠলো,
-তোমারও হাঁটা উচিৎ বৌমা।বয়স তোমার ও হয়েছে সেই সাথে ওজন টাও তো তোমার কম নয়!
শাশুড়ির এমন উক্তি শুনে মূহুর্তেই মুখটি কালো হয়ে গেলো সানিয়া বেগমের।তিনি শাশুড়িকে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠেন,
-মন্দ বলেননি মা।
সানিয়া বেগমের মন খারাপ হতে দেখে নাফিয়া বলে ওঠে,
-কি যে বলেন না দাদী!আন্টি এখনো ইয়াং আছে।তাকে দেখে কেউ বলবে নাকি তার এতো বড় ছেলে আছে!আমিই তো প্রথম দেখে অবাক হয়েছিলাম।যার শাশুড়িকেই এখনো বার্ধক্য কাবু করতে পারলো না সেখানে তার বয়স তো অনেক কম!
নাফিয়ার কথায় সানিয়া বেগমের চেহারা খুশিতে জ্বলজ্বল করে উঠে এবং তার ঠোঁটের হাসিটি আবারও ফিরে আসে।দাদী নাফিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠে,
-শাশুড়ি-বৌমা দু’জনকেই পটানো হচ্ছে দেখছি!
নাফিয়া হেসে বলে ওঠে,
-মোটেই না যা সত্যি তাই বলছি।
নাফিয়ার কথায় দাদী একটু হেসে সানিয়া বেগমকে বলে ওঠে,
-বৌমা আমার খাবার প্রস্তুত করো ফ্রেশ হয়ে আসছি।
-আচ্ছা মা।
অতঃপর নাফিয়া ও দাদী উভয়ই চলে গেলো নিজ নিজ কক্ষে ফ্রেশ হতে এবং সানিয়া বেগম রান্না ঘরে।

!!
আফিমের সকাল হয় ৬ টায়।উঠেই বেরিয়ে পরে জগিং এর উদ্দেশ্যে।টানা ১ ঘন্টা ওয়ার্ক আউট করে বাড়ি ফেরেন তিনি।বাড়ি ফিরে গোসল সেরে একদম অফিসে যাওয়ার জন্যে প্রস্তুত হয়ে নিজের কক্ষ হতে খাবার ঘরে এসে নিজের সকালের নাস্তা শেষ করেন।তারপর কিছুটা সময়ের জন্য পত্রিকায় মুখ ডুবান।অফিস ৯ টায় হওয়ায় ৮ টা ৪০ মিনিটেই অফিসের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন।
এই ছিলো আফিমের প্রত্যেক দিনের সকালের নিয়মিত কার্যকর্মের সূচি।আজও এর ব্যতিক্রম হলো না।অফিসে যাওয়ার জন্যে পুরোপুরি প্রস্তুত হয়ে খাবার ঘরে এসে চারপাশটায় চোখ বুলিয়ে নেয় সে কিন্তু নাফিয়ার দেখা মেলে না।তাই খাওয়া টা শেষ করে আফিম তার দাদীর কক্ষে যায় হয়তো নাফিয়া সেখানেই আছে এই ভেবে।কিন্তু দাদীর কক্ষেও নাফিয়ার খোঁজ মেলে না।আফিমকে সকাল সকাল নিজের কক্ষে আবিষ্কার করে বেশ বিস্মিত হন দাদী।তিনি কৌতুহল দমিয়ে না রেখে জিজ্ঞেস করে বসেন,
-আজ এতো সকাল সকাল আমার রুমে?
-এমনিই দেখতে এলাম কেমন আছ!
-এতো বছরে তো কখনো সকাল সকাল তোমার আমার কথা মনে পরেনি তবে আজ হটাৎ?
-উফ দাদী!ডোন্ট বিহেভ লাইক মম!
-আচ্ছা আচ্ছা।(হেসে বলে ওঠেন দাদী)
-মিস.শেখ ঠিকমত নিজের কাজ করছে তো?
-খুবই দ্বায়িত্ববান মেয়েটি।এখন অব্দি তার একটি কাজেও ত্রুটি হয়নি।মাত্র কালই এলো কিন্তু কাজ এমনভাবে করছে যেনো খুব অভিজ্ঞ।
-একটু বেশিই সুনাম করলে।(কন্ঠে বিরক্তি নিয়ে বলে ওঠে আফিম)
-কমই করেছি।
-তা যাই হোক,এখন কই মহারানী?তোমাকে একা ফেলে নিজেতে মত্ত হয়ে আছে আর তুমি বসে তার সুনাম করছো!
-ওর স্কুলে ক্লাস শুরু হয় ৭ঃ৩০ এ।তাই স্কুলের উদ্দেশ্যে বেরিয়েছে।
কথাটি শুনে আফিম মনে মনে বলে উঠলো,
“ইশ!ভুলেই গিয়েছিলাম।সকাল সকাল এক ডোজ দিয়ে যাবো তা আর হচ্ছে না।”
নাফিয়ার খবর মিলতেই আফিম উঠে দাঁড়িয়ে তার দাদীকে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠে,
-আচ্ছা দাদী আমি যাই।তুমি নিজের খেয়াল রেখো।
কথাটি শেষ করে দাদীর দিকে একটি ফ্লাইং কিস ছুঁড়ে কক্ষ ত্যাগ করে সে।

!!
৭ টা ৩০ হতে ৯ টা অব্দি ৩ টে ক্লাস নেয় নাফিয়া১ম,৩য় এবং ৪র্থ এই তিনটি শ্রেণির ৩ টি বিষয়ের ক্লাস নেয় সে।৯ টা বাজে ক্লাস নেওয়া শেষে বাসায় এসে পৌঁছায় নাফিয়া।ফ্রেশ হয়ে দাদীর কক্ষে যেতেই দেখে দাদী ঘুমিয়ে আছেন।তাই আবার নিজের কক্ষে ফিরে আসে সে।বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই তার চোখের সামনে ভেসে উঠে গত রাতে আফিমের করা কাজটি।আফিমের এ কাজটির একটি পাল্টা জবাব তার দিতেই হবে।কিন্তু কিভাবে দিবে তাই ভাবনার বিষয়।শুয়ে শুয়ে এটি ভাবতেই ব্যস্ত হয়ে পড়লো নাফিয়া।

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে