#আফিম_বড্ড_নেশালো
পর্বঃ০২
লেখিকাঃমাহযাবীন
-ঠিক আছে খেয়ো না।এখানেই থাকতে চাইছো?গত রাতে আমার ঠোঁটের মায়ায় পড়ে গিয়েছো বোধহয়!
ঠোঁটে বাঁকা হাসি ঝুলিয়ে কথাগুলো বলতে বলতেই নাফিয়ার দিকে এগিয়ে যায় আফিম।আফিমকে নিজের কাছে আসতে দেখে নাফিয়া বলে ওঠে,
-খেয়ে নিচ্ছি আমি।
বলেই সোফায় বসে যেই খাবারে হাত দিতে যাবে ওমনি আফিম বলে ওঠে,
-ইডিয়ট!এট ফার্স্ট ব্রাশ ইউর টিথ এন্ড ওয়াশ ইউর হ্যান্ডস।
আফিমের কথায় ঠোঁট উল্টে ওয়াশরুমের দিকে অগ্রসর হয় নাফিয়া।ওয়াশরুমে ঢুকেই সে মনে মনে বলে ওঠে,
“নিজের ফালতু কথায় আমার মাথা নষ্ট করে আবার নিজেই আমায় এভাবে অপমান করলো।কি ভাবে নিজেকে?কোনো মহাপুরুষ নাকি দুনিয়ার সবথেকে পরিষ্কার ব্যক্তি?হুহ্!”
হাত-মুখ ধুয়ে সোফায় বসে নিজের খাবার শেষ করে নিলো নাফিয়া।আড়চোখে নাফিয়ার কার্যকলাপ বেশ ভালোভাবেই পর্যবেক্ষণ করছে আফিম।খাওয়া শেষ হতেই নাফিয়া আর দেরি করতে চায় না।আড়চোখে একবার তাকায় আফিমের দিকে।আফিম বিছানায় বসে ল্যাপটপ নিয়ে কিছু একটা করছে।গত রাত হতে এই পর্যন্ত আফিমের আচরণে নাফিয়া ওকে ঘৃণাই করে।তাই আফিমের সাথে কোনো কথা বলার বিন্দু পরিমাণ ইচ্ছে নেই নাফিয়ার।তাই সে আফিমকে কিছু না বলেই নিজের বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশ্যে কক্ষ হতে বেরোতেই যাবে ওমনি আফিম বলে ওঠে,
-হেই মরন![Moron=বোকা/হাবা]
আফিমের এই ডাকে ভিষণ রেগে যায় নাফিয়া।সে রেগে আফিমের সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলে ওঠে,
-আমার একটি সুন্দর নাম আছে,”নাফিয়া”।
-আচ্ছা তাই!তাহলে “মরন” বলে ডাকাতে তুমি সারা দিলে কেনো?এতে এটাই প্রমাণ হয় যে তুমি স্বীকার করেছো তুমি “মরন”।(বাঁকা হেসে বলে আফিম)
আফিমের কথায় যেমন রাগ হচ্ছে নাফিয়ার ঠিক তেমন নিজের বোকামোর জন্যেও।তাকে এই ডাকে সাড়া দিতে বলেছিলো কে!
নাফিয়া আর কিছু না বলে আবারও দরজার দিকে অগ্রসর হতেই আফিম বলে ওঠে,
-কথা শেষ হয়নি আমার।এক পাও আগাবার দুঃসাহস করবে না।
দাঁড়িয়ে যায় নাফিয়া।নিজের ভেতর ভিষণ ভয় অনুভব করছে সে।আফিম কি আদৌও তাকে যেতে দিবে?
-এদিকে এসো।(আফিম)
একরাশ ভয় নিয়ে আফিয়া ধীরে ধীরে এক পা এক পা এগিয়ে আফিমের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।
আফিম বলে ওঠে,
-যেতে দিচ্ছি বলে ভেবো না ছেড়ে দিচ্ছি।আফিম ইবনানকে থাপ্পড় মারার মতো ভয়ানক দুঃসাহস করেছো তুমি এবং এর ভয়ংকর পরিনতির জন্যে প্রস্তুত থেকো।(স্বাভাবিক ও শান্ত স্বরে কথাগুলো বললেও এর পেছনে আফিমের ভয়ংকর রাগ ঠিকই আঁচ করতে পারছে নাফিয়া।)
কথা শেষ হবার পরও নাফিয়াকে হাবলার মতো দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আফিম বলে ওঠে,
-জাস্ট গেট লোস্ট ফ্রম মাই রুম,ইডিয়ট।
আফিমের উচ্চস্বর শুনে ভয়ে কেঁপে ওঠে নাফিয়া।সে আর এক মুহূর্তও দেরি না করে দ্রুত পদে আফিমের রুম ত্যাগ করে।
!!
বাড়িতে পৌঁছিয়ে দরজায় কড়া নাড়তে সময় লাগলে ও নাফিয়ার মা নয়না বেগমের দরজা খুলতে সময় লাগলো না।মেয়ের অপেক্ষায় যেনো সে দরজার ধারেই দাঁড়িয়ে ছিলেন।নাফিয়াকে দেখে তিনি কিছুটা সময় তাকিয়ে থেকে কিচ্ছুটি না বলেই মেয়ের গালে একটি চর বসিয়ে দেন।নাফিয়া এতে বিন্দু পরিমাণ অবাক নয়।সে গালে হাত দিয়ে মেঝেতে তাকিয়েই বলে ওঠে,
-স্যরি আম্মু।জানি সারা রাত অনেক টেনশন করেছ।কিন্তু কি করবো!রাতে ফোনে টাকা ছিলো না তাই তুবার বাসায় যাওয়ার আগে তোমাদের কেউকে জানাতে পারিনি আর ওখানে যেতেই আন্টির সে কি আপ্যায়ন!সব শেষে ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম।তোমাদের কারো কল রাতে ঘুমের জন্যে টের পাইনি তাই রিসিভ ও করতে পারিনি।সকালে ফোনে টাকা ঢুকিয়েই তোমাকে ম্যাসেজ করেছিলাম যে,আমি ঠিক আছি।
-তুবার ফোন ছিলো না?ওর বাসার অন্য কারো ফোনও কি ছিলো না?কোনোভাবেই আমাদের জানানো যেতো না?আমাদের এখানে এভাবে টেনশনে ডুবিয়ে রেখে তুই ওখানে শান্তিতে ঘুমোচ্ছিলি?(নয়না বেগমের চোখে জল এবং কন্ঠে একরাশ অভিমান)
-স্যরি মা!জানোই তো কত পরিশ্রম করতে হয় সারাটি দিন আমায়।ওদের বাসায় যেয়ে এতোটাই ক্লান্ত ছিলাম যে মাথায় কিচ্ছুটি আসেনি।ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম।কাজটি সত্যিই অন্যায় করেছি। মাফ করে দেও।
নয়না বেগম উত্তরে কিছু না বলে চোখের জল মুছতে মুছতে নিজের কক্ষের দিকে এগিয়ে যান।ভিষণ অভিমান জমেছে তার নিজের মেয়ের প্রতি।নাফিয়া বেশ বুঝতে পারছে তার মায়ের অভিমান অল্পতে কমবে না।সে বাসায় ঢুকে নিজের কক্ষে আসতেই দেখে তার ছোট বোন অবনী মুখ গোমড়া করে বসে আছে।বোরকা টা খুলে বিছানায় ফেলে আলমারি থেকে কাপড় বের করতে করতে অবনীকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে,
-কিরে দেখিস নাই আমি আসছি?
উত্তর না পেয়ে নাফিয়া আবারও বলে ওঠে,
-বাহ!বড় বোন যে গত রাতে বাড়ি ফেরেনি সে খবর আছে?
-এসেছ কেনো?যেখানে ছিলে সেখানেই থাকতে।
-আচ্ছা চলে যাবো।(মন খারাপের নাটক করে বলে ওঠে নাফিয়া)
অবনী নাফিয়ার কথা শুনে পেছন ফিরে তাকায় তার দিকে।অবনীর দিকে তাকাতেই নাফিয়া দেখে মেয়েটা কাঁদছে।নাফিয়া দ্রুত পদে বোনের কাছে যেয়ে বলে ওঠে,
-কাঁদছিস কেনো?
-তুমি জানো গত রাতে আমরা সবাই কতোটা চিন্তায় ভুগেছি!মা-বাবা,আমি সারা রাত ঘুমাইনি।বাবা তো চেয়েছিলেন সকালেই থানায় যাবেন আর আম্মু তো কেঁদে অস্থির। আমি তোমার সব ফ্রেন্ডদের কল দিয়েছি তাদের মধ্যে শুধু তুবা আপু এবং অরিন আপু কল ধরেনি।
-আচ্ছা স্যরি।
বলেই নিজের ছোট বোনকে বুকে জরিয়ে নেয় নাফিয়া এবং মনে মনে বলে ওঠে,
“ভাগ্যিস তুবা কল ধরেনি।”
!!
নাফিয়া নিজ বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হওয়ার পর পরই আফিমও রওয়ানা হয় নিজ বাড়ির উদ্দেশ্যে।বাড়িতে পৌঁছিয়ে নিজের রুমের দিকে যাওয়ার সময় আফিমের মা সানিয়া বেগম তাকে দেখে বলে ওঠে,
-আফিম,সারা রাত কোথায় ছিলে?
-বাংলোতে মম।
-কেনো?
-এমনিই।
-এমনিই মানে কি?এভাবে না জানিয়ে হটাৎ বাংলোতে কেনো গেলে?
-ওহহো বউমা!আমার পোতাকে এতো প্রশ্ন কেনো করছো যেনো সে কোনো ক্রিমিনাল?(আফিমের দাদী)
-আম্মা ছোটবেলা থেকে ওকে এভাবেই আদর দিয়ে বাঁদর বানাচ্ছেন।
-খবরদার আমার পোতাকে নিয়ে একটিও বাজে বকবে না।যাও ওর জন্য খাবার প্রস্তুত করো।
সানিয়া বেগম শাশুড়ির আদেশে রান্না ঘরের দিকে এগিয়ে গেলেন।মায়ের প্রশ্নের ভান্ডার থেকে রেহাই পেয়ে আফিম খুশিতে তার দাদীকে জড়িয়ে ধরে বলে ওঠে,
-লাভ ইউউউউ।
-লাভ ইউ ঠু।(আলতো হেসে)
-তোমার শরীর কেমন এখন?
-মোটামোটি।তোর বাবা বললো আমার পরিচর্যা, দেখা-শোনার জন্যে একজন লোক রাখবে।
-বাহ!কোনো লোক ঠিক করেছে?
-এখন অব্দি না।
কথাটি শোনা মাত্র বাঁকা হাসে আফিম।কিছু একটা ভেবে সে তার দাদীর গালে চুমু বসিয়ে তার থেকে বিদায় নিয়ে নিজ কক্ষে প্রবেশ করে।তার মুঠোফোন টি বের করে তাতে একটি নাম্বার ডায়াল করে কানে ধরে,
-আসসালামু আলাইকুম স্যার।(ফোনের ওপাশের ব্যক্তি)
-তোমায় গত রাতে একজনের ডিটেইলস জেনে আমায় জানাতে বলেছিলাম!
-জ্বি স্যার।মোটামুটি জেনেছি কিন্তু পুরোপুরি সবটা এখনো জানতে পারিনি।
-ইউ পিপল আর সাচ্ আ লুজার!ডু ইউর ওয়ার্ক অন টাইম আদারওয়াইজ ইউ অল উইল লস ইউর জব।
-স্যরি স্যার।
-আই হেইট স্যরি!
-আজ রাতের মধ্যেই সব ডিটেইলস রেডি করে ফেলবো স্যার।
-ফাইন।মেয়েটি কি মধ্যবিত্ত?
-জ্বি স্যার।সেই সাথে তাদের একটি বড় ঋণ নেওয়া আছে।
-কিসের ঋণ?
-তা এখনো জানতে পারিনি স্যার।
কথা শোনা মাত্রই রাগ উঠে যায় আফিমের কিন্তু কোনো মতে সে রাগ চেপে বলে ওঠে,
-বাবা দাদীর জন্যে একজন কেয়ার টেকার রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।আই হোপ ইউ নো,হোয়াট ইউ হেভ টু ডু নাও।
-জ্বি স্যার জানি।
ঠোঁটে বাঁকা হাসি ঝুলিয়ে ফোনটি কেটে দেয় আফিম।
চলবে।