আপন মানুষ ৬ষ্ঠ পার্ট 

0
2664

আপন মানুষ ৬ষ্ঠ পার্ট
*
দুপুরে খাওয়ার পর একটু বিছানায় শুয়ে পড়ি। ঘুম আসেনা চোখে।
শুধু টেনশন হচ্ছে আমার।
আমি বুঝতে পারছি জীবনের বড় একটা ভুল পথে অগ্রসর হচ্ছি আমি।
একটুপর মৌ আমার কাছে এসে বসলো। মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে বউ আমার।
হঠাৎ মোবাইলটা বেজে উঠলো!
রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে বললো…
-তাড়াতাড়ি মাঠে আসো।
এই বলেই ফোন কেটে দিলো জুুঁই।
আমি ফোন রেখে চেয়ে আছি মৌ এর মুখের দিকে।
শত ব্যথা বুকে চেপে আমার মুখের পানে চেয়ে আছে মেয়েটা।
আমি উঠে আলমাররির ড্রয়ার থেকে টাকা বের করলাম।
প্যান্ট, শার্ট পড়ে বের হওয়ার জন্য মৌ এর সামনে আসলাম।
অসহায়ের দৃষ্টিতে মৌ চেয়ে আছে আমার দিকে।
-আমি যাচ্ছি। তুমি এদিকটা সামলে নিও মৌ।
-হুম যাও। তবে নিজেকে দেখে রেখো। যেখানেই যাও চিন্তা, ভাবনা করে যেও।
আর যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব ফিরে এসো। ওনাকে নিয়েই এসো।
আমি না হয় তোমার মা, বাবাকে ম্যানেজ করার চেষ্টা করবো।
আর সব সময় ফোনে যোগাযোগ রেখো প্লীজ।
কোন কিছু হলেই ফোন করবে আমায়… আমি ঠিকাছে?
কথাগুলো একটানে বলে মেয়েটা চেয়ে আছে আমার দিকে।
জানি কথাগুলো অনেক কষ্টে বলেছে।
আমি ওর কাছে গিয়ে ওর থুতনিটা ধরে বললাম আচ্ছা।
-আমি জানি সবচেয়ে বড় ভুলটা করতে যাচ্ছি আজ(আর সবচেয়ে বড় ক্ষতিটা তোমারি করলাম)।
আমি দিশেহারা হয়ে গেছি মৌ…
আমি তোমায় খুব বেশি ঠকিয়ে দিলাম। ক্ষমা চাওয়ার মতো যোগ্যতাও যে নেই আমার।
এই বলে ঘর থেকে বের হলাম আমি।
মাঠে গিয়ে জুঁই কে দেখতে পেলাম।
জুঁই আমায় দেখেই বলল কোথাও যেতে পারবো না আমি।
আমাকে তোমার বাড়িতে নিয়ে যাও।
-কি বলছো এসব পাগলের মতো?!
এই মুহুর্তে তোমায় বাড়িতে নিয়ে গেলে কেউ মেনে নেবে না। এটা অসম্ভব।
-আমি কিছুই শুনতে চাই না।
আমায় বিয়ে করেছো, এখন বউ হিসেবে বাড়িতে নিয়ে যাবে এটাই শেষ কথা।
-দয়া করে কয়েকটা দিন সময় দাও আমায়। এর মধ্যে একটা ব্যবস্থা করে তারপর নিয়ে যাবো।
-আচ্ছা ঠিক আছে।
তবে তিনদিন সময় দিলাম। এরমধ্যে আমায় বউ হিসেবে তোমার বাড়িতে নিয়ে যাবে।
জুঁই কথা শুনে কিছুক্ষন ভেবে বললাম…
-আচ্ছা বাড়িতে যাও। আমি এদিকটা দেখছি।
এই বলে আবার বাড়িতে চলে এলাম।
এসে দেখি মৌ মায়ের পাশে বসে মা”র মাথায় তেল দিয়ে দিচ্ছে।
আমি সোজা ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়লাম। আমার মাথায় কিছু কাজ করছে না।
তবে কিছু একটা আমি খুব ভালো ভাবেই বুঝতে পারছি।
একটুপর মৌ ঘরে এলো। আমার পাশে বসে মাথায় হাত দিলো।
-কিছু হয়েছে তোমার, উনি দেখা করেনি?
আমি উঠে বসলাম বিছানায়।
মৌ এর মুখোমুখি বসে ওর চোখের দিকে তাকালাম।
আমার চাওয়া দেখে ও মাথা নিচু করে আছে।
-আচ্ছা মৌ’ আমায় খুব ভালোবাসো তাইনা?
-এসব বলছো কেনো, কি হয়েছে?
-বলো আগে ভালোবাসো কিনা?
-তুমি আমার স্বামী।
স্বামী হলো বিয়ের পর যে কোন মেয়ের কাছে সবচেয়ে
# আপন_মানুষ
# আপন_মানুষকে কে না ভালোবাসে বলো?
-আমার বুকে আসবে একটু?
-হুম, তুমি যে আমার স্বামী। তুমি চাইলে সবই করবো। (লজ্জালজ্জা কন্ঠে)
-তবে এই যে আমি শুয়ে পড়লাম।
তুমি এসে আমার এই বুকে মাথা রেখে একটু শোও।
এর বেশি কিছুই চাইবো না। শুধু তোমায় বুকে নিয়ে একটু শান্তিতে ঘুমাবো।
-ঠিক আছে।
মৌ আমার বুকে মাথা রেখে একটা হাত দিয়ে আমার মাথার চুলে বিলি কাটছে।
আমি চোখ বুঝে ঘুমানোর চেষ্টা করছি।
একটুপর কখন ঘুমিয়ে গেছি জানিনা।
সন্ধ্যার আগে ডাকছে আমায় মৌ…
-মা ভাত নিয়ে বসে আছে। চলো ভাত খাই।
উঠে হাতমুখ ধুয়ে পরিবারের সবাই একসাথে বসে খাচ্ছি।
কি সুন্দর সুখ, শান্তির দৃশ্য! ভালোবাসায় ভরা সংসার।
.
খাওয়া, দাওয়ার পর আমি ঘরে ঢুকতে গিয়ে হঠাৎ মাথা ঘুরে পড়ে গেলাম!
মৌ দৌড়ে এসে আমায় জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে মাকে ডাক দিলো।
মা, বোন আর বাবা দৌড়ে আসলো।
আমি তখন অচেতন।
আমাকে তাড়াতাড়ি গাড়িতে তুলে হাসপাতালে নেয়া হলো।
ডাক্তারের সাথে বাবা কথা বলল।
ডাক্তার আমায় পরীক্ষা করার জন্য নিয়ে গেলো।
আমায় পরীক্ষা, নিরীক্ষা করে ডাক্তার বাইরে গেল।
এবং তিনি বললেন আমার ভিতরে বড় ধরনের কিছু হয়েছে।
ভালো হাসপাতালে পাঠাতে হবে।
আমার বাবা তখন ডাক্তারকে বললেন কোন হাসপাতালে নিতে হবে? কি করতে হবে করুন।
যতো টাকা লাগে লাগোক আমার ছেলের জন্য।
তখন ঐ ডাক্তার আমাকে নিয়ে বগুড়া চলে আসলেন।
সেখানে পরীক্ষা করার পর জানিয়ে দেয়া হলো আমার দুটো কিডনিই নষ্ট হয়ে গেছে!!
আমার বাঁচার সম্ভাবনা কম!!
এই খবর শুনে আমার পরিবারের সবাই পাগল হয়ে যায়।
হঠাৎ এমন কেনো হলো আমার?!
আমার মা, বোন সবাই আসে আমার কাছে।
ওরা আমায় জড়িয়ে ধরে কাঁদে।
আর ঐ মৌ নামের মেয়েটা কাঁদেনা সহজে।
ও আমার কাছে থাকে। আমার হাত পা টিপে দেয় সবসময়।
কখনো কখনো আমার মুখের কাছে মুখ নিয়ে কপালে একটা চুমু দিয়ে বলে… তোমার কিচ্ছু হবেনা দেখো।
আমি আছি তো পাগল…
এই বলে মেয়েটা আমায় জড়িয়ে ধরে। পাগলের মতো বলে আমার দুটো কিডনি আমি তোমায় দিয়ে দেবো দেখো…
তুমি বাঁচবে…
আমি তোমার কিচ্ছু হতে দেবো না।
এসব বলে আর নিজেকে ধরে রাখতে পারেনা মৌ।
হাউমাউ করে কেঁদে ফেলে।
ওর কান্না আর আহাজারি দেখে মনে হয় আমিই সেই অভাগা…
যে কিনা এমন একটা বউ পেয়েও তাকে ভালোবাসতে পারিনি।
তার ভালোবাসার মূল্য দিতে পারিনি।
মনের অজান্তে দু চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে আমার।
.
আজ তিনদিন হয়ে গেল হাসপাতালে আছি। আশেপাশের গ্রামের সবাই জানে “” আমি আর বেশিদিন বাঁচবো না।
তাই সবসময় গ্রামের এবং আশে পাশের চেনা’জানা সবাই আমায় শেষবারের মতো দেখতে আসে।
অথচ বারবার খবর পাঠানোর পরও আমার ভালোবাসার মানুষ জুঁইের মুখটা দেখলাম না।
খুব বেশি কষ্ট হচ্ছে আমার। ওকে একটা নজর দেখবো।
শেষমেশ আমি নিজেই জুঁই কল দিলাম…
-হ্যালো জুঁই, আমি মনে হয় আর বাঁচবো না। তুমি একবার দেখে যাও আমায়।
… তুমি দয়া করে আমাদের বিয়ের কথাটা কাউকে বলো না।
আমার জীবনটা মূল্যহীন হয়ে যাবে।
-তুমি তো আমার বউ। এ কথা বলছো কেনো?
-কিসের বউ? দেখো এসব কাউকে বলবে না কিন্তু।
-আচ্ছা বলবো না। তবে আমায় একটা কিডনি দান করবে?
হয়তো কিডনি পাল্টালে আমি বাঁচবো।
-দেখো তুৃমি এখন মৃত্যুর দুয়ারে।
সেখান থেকে কেনো আরেকজনের বিপদ আনতে চাও?
-মানে? তুমি আমায় বাঁচাতে চাও না।
-ডাক্তার বলেছে যে তুমি বাঁচবে না। আমি বাঁচাবো কি করে?
তোমার হায়াত না থাকলে তুমি মারা যাবে এটাই নিয়ম।
এই বলে ফোন রেখে দেয়! জুঁই।
এইবার আমার চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে।
মানুষ এতোটা নিষ্ঠুর হতে পারে!! ভালোবাসার মানুষের মৃত্যুর কথা জেনেও মানুষ এমন আচরন করতে পারে?!
কাকে ভালোবেসেছিলাম আমি!
এই কি ওকে পাগলের মতো ভালোবাসার প্রতিদান?
আজ বুঝতে পারছি বারবার বলার পরেও কেন বাবা মা জুঁইয়ের কথা শুনতে পারেনি। তাকে বউ করে আনতে চায়নি আমার সাথে।
কারন তারা ওর পরিবার ও ওর সম্পর্কে জানতো হয়তো।
আর আমি কিনা সেই মেয়েকেই বিয়ে করলাম সবার অজান্তে।
ঘরে একটা লক্ষি বউ রেখেও আমি অন্ধ ভালোবাসার মোহে পড়ে আরেকটা বিয়ে করলাম।
নকল মানুষকে আপন ভেবে আসল মানুষটাকে দুরে ঠেলে দিতে চেয়েছিলাম।
.
আগামিকাল আমার অপারেশন হবে।
আমার বউ মৌ আর মা একটা করে কিডনি আমায় দান করতে চেয়েছে।
অপারেশনে লাভ যদিও খুব একটা নাই। কারন ৮০% মৃত্যুর সম্ভবনা আমার।
আমি বেডে শুয়ে আছি। আমার মাথার পাশে বসে আছে আমার বউ মৌ।
হঠাৎ মা, বাবা আর ছোটবোন রুমে ঢুকলো।
ঢুকে বাবা সবার উদ্দেশ্যে বলল… তোমরা একটু বাইরে যাও।
আমি আমার ছেলের সাথে আমার ব্যক্তিগত গোপন কিছু কথা আছে।
মা, বোন আর মৌ বাইরে চলে গেলো।
আমি বাবার দিকে চেয়ে আছি অবাক দৃষ্টিতে!
কি এমন কথা! যা আমায় একান্তে বলবে বাবা?
*
কথাটা হচ্ছে ….☞

প্রিয় পাঠক আপনারা যদি আমাদের (গল্প পোকা ডট কম ) ওয়েব সাইটের অ্যাপ্লিকেশনটি এখনো ডাউনলোড না করে থাকেন তাহলে নিচে দেওয়া লিংকে ক্লিক করে এখনি গল্প পোকা মোবাইল অ্যাপসটি ডাউনলোড করুন => ??????

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.golpopoka.android

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে