আপন মানুষ ৫ম পার্ট
*
গাড়ি ছেড়ে দিয়েছে। কিন্তু মৌ এখনও ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে।
ওর মাথাটা আমার ঘাড়ে রাখা।
নানান চিন্তা আমার মাথায় ভর করছে!
কি করবো আমি?
একদিকে ভালোবাসার মানুষ, অপরদিকে এক সহজ সরল মেয়ে।
আমি কি পারবো ভালোবাসার মানুষটাকে না করে দিতে?
অথবা আমি কি পারবো এই নিরীহ মেয়েটাকে স্বামীহারা করতে?
আমি পথহারা পথিকের মতো পথের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছি।
এখান থেকে কোন এক রাস্তা বেছে নিতে হবে আমায় নিজেকেই।
এক ঘন্টার ভিতর বাড়িতে পৌছে গেলাম।
গাড়ি থেকে সবাই নামছে।
মৌ এখনও আমার ঘাড়ে মাথা রেখে শুয়ে আছে।
মনে হচ্ছে ওর কথা বলার বা নেমে হেটে যাওয়ার শক্তি নাই দেহে।
আস্তে করে ওকে ধরে নামিয়ে ঘরে নিয়ে এলাম।
মেয়েটা ভেঙ্গে পড়েছে।
হয়তো তার পরিবারকে ছেড়ে আসায় খারাপ লাগছে।
আবার স্বামীকে আপন করে পাবেনা এটা ভেবে আরো মানষিক চিন্তায় আছে হয়তো।
ওকে কোনভাবে বিছানায় শুইয়ে দিলাম।
দরজাটা আটকে খাটে বসে পড়লাম।
একটা সিগারেট বের করে ধরালাম।
মৌ যেভাবে শুইয়ে দিয়েছি ওভাবেই শুয়ে আছে।
সিগারেট টানছি আর চেয়ে আছি ওর মায়াবী মুখটার দিকে।
কি করে পারবো এই মেয়েটাকে স্বামীহারা করে জনম দুঃখী করে দিতে?
সিগারেটটা শেষ করে ফেলে দিলাম।
প্যান্ট খুলে লুঙ্গি পড়লাম। দারুন গরম পড়েছে আজ।
ফ্যানটা ছেড়ে দিয়ে মৌ ভালোভাবে শুইয়ে দিচ্ছি।
হঠাৎ মনে পড়লো শাড়ী পড়ে ও তো ঘুমাতে পারে না।
আস্তে করে ওকে টেনে তুলে বসালাম।
আমার বুকে মাথা ঝুকে আছে মৌ।
আমি নিজ হাতে ওর পরনের শাড়ি খুলে দিচ্ছি।
এরপর গলা, কানের গয়না ও কোমরের বিছাটাও খুলে দিলাম।
বুক থেকে আস্তে করে শুইয়ে দিলাম ওকে। মৌ আমার দিকে চেয়ে আছে।
চোখ গড়িয়ে পানি পড়ছে ওর।
আমি হাত দিয়ে ওর চোখের পানি মুছে দিলাম।
এরপর অনেক্ষন চুপচাপ শুয়ে আছি।
হঠাৎ আমার শরীরের উপর ওর হাত পড়লো!
জড়িয়ে ধরেছে আমায়।
আমি ওর দিকে তাকালাম। ঘুমিয়ে গেছে ও।
মুখটা কাছে নিয়ে আস্তে করে কপালে একটা চুমো দিলাম।
বুকের মাঝে জড়িয়ে নিলাম ওকে। এভাবে ঘুমিয়ে গেলাম।
পরদিন ভোরে উঠেই বেরিয়ে পরলাম মাঠের দিকে।
জুঁই কে কল দিলাম…
-কোথায় তুমি? (আমি)
-বাড়িতে। (জুঁই)
-একটু মাঠের দিকে আসো।
-কেনো?
-কথা আছে।
-ওকে আসতেছি দাড়াও মাঠে।
এই বলে ফোন কেটে দিলো জুঁই।
জুঁইদের বাড়ি আমাদের গ্রামের পাশের গ্রামেই।
আর যে মাঠে দেখা করবো এটা দুই গ্রামের মাঝখানে।
মাঠে গিয়ে বসে ভাবছি আগের দিনের কথা।
কেন জানি আমার মা, বাবা জুঁইয়ের কথা শুনতে পারেনি।
ওর কথা বারবার বলেছিলাম বাড়িতে কিন্তু বাবা বলেছে ঐ মেয়েরা ভালো না।
কিন্তু আজ পর্যন্ত খারাপের কিছু দেখিনি জুঁইয়ের মাঝে আমি।
আর এটাও জানি আমার মতো জুঁইও আমাকে খুব বেশি ভালোবাসে।
কিন্তু বাবা, মার চোখে কেন খারাপ ও তা আজো বুঝিনি।
জুঁই দেখা যাচ্ছে কাদে একটা ব্যাগ নিয়ে আসছে।
মনে হচ্ছে কতোদিন পর ওকে দেখছি।
ও এসেই আমার হাত ধরে টেনে বলছে চলো।
-কোথায় যাবে? এখানেই বসো কথা বলি। (আমি)
-মানে? কথা বলার সময় নাই। চলো বিয়ে করবো কোর্টে গিয়ে।
-কি বলছো এসব! আমি তো তোমায় ডেকেছি একটু কথা বলার জন্য।
এখন তো বিয়ে করার সময় না।
-চুপ, আমায় যদি সত্যি ভালোবেসে থাকো তবে এখনি বিয়ে করতে হবে।
নইলে চিরতরে হারাবে আমায়।
আমি জুঁইয়ের কথায় কোনকিছু না ভেবেই ওর সাথে চলে গেলাম।
কোর্টের কাছে যেতেই ২/৩ টা ছেলে আর মেয়ে আসলো ওর কাছে।
বুঝলাম সাক্ষির জন্য ওদের আগেই ফোন করে আসতে বলেছে এখানে।
কোর্টে আমাদের বিয়ে হয়ে গেল।
বাইরে এসে জুঁই আমায় বলল… বিকেলে তুমি বাড়ি থেকে বের হবে।
আমিও বের হয়ে মাঠে এসে থাকবো।
ওখান থেকে আমায় নিয়ে দুরে কোথাও চলে যাবে।
মনে থাকে যেনো… নইলে কিন্তু আমি তোমার বাড়িতে গিয়ে উঠবো।
এই বলে বিদায় নিয়ে চলে গেল জুঁই।
আমি অবাক চোখে চেয়ে আছি ওর দিকে!
এসব কি হয়ে গেল এক মুহুর্তে! আমি খুব টেনশনে পড়ে গেলাম।
হাটতে হাটতে বাড়িতে আসলাম।
বিছানায় হাত পা মেলে শুয়ে পড়লাম।
কি করবো এখন আমি? একদিকে নতুন বউ মৌ বাড়িতে।
অন্য দিকে জুঁই কে কোর্টে গিয়ে বিয়ে করলাম। কেমন যেন এলোমেলো হয়ে গেল সব।
একটুপর মৌ বিছানায় এসে বসলো।
আমার কপালে চিন্তার ভাজ দেখে মাথায় হাত রাখলো মৌ।
-কি হয়েছে তোমার? মাথা ব্যথা করছে?
এই বলে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে মৌ।
আমি ওর দিকে চেয়ে আছি। ওকে যতো দেখি ততো বেশি মায়া”য় পড়ে যাই।
-আচ্ছা মৌ’ আমি যদি তোমায় তাড়িয়ে দিতে চাই বা খুব কষ্ট দেই তুমি চলে যাবে আমার কাছ থেকে।
আমার এই কথা শুনে মৌ একটু চমকে যাওয়ার মতো দৃষ্টিতে তাকালো আমার দিকে!
-কোন মেয়ে স্বামীর বাড়ি আসলে সে যাওয়ার জন্য আসেনা।
হাজার কষ্ট সয়েও সে স্বামীর ঘরে থাকতে চায়।
তবে তুমি যদি আমাকে না রাখো তোমার সংসারে বাধ্য হয়ে আমায় চলে যেতে হবে।
আর এতে আমার চেয়ে আমার পরিবারের লোক হয়তো বেশি কষ্ট পাবে।
তবুও তোমার যদি এটাতে ভালো হয় আমি চলে যাবো।
আর যদি কোনভাবে আমায় তোমার এই সংসারে ঠায় দেয়া যায় তবে আমি খুবই খুশি হবো।
কিচ্ছু লাগবে না আমার। শুধু দু বেলা দু মুঠো ভাত আর একটু কাপড় দিলেই চলবে।
আমি চাকরানীর মতো সব কাজ করবো। কোন অধিকার চাইবো না।
এতে হয়তো আমার পরিবারের লোক কষ্ট পাবেনা।
তারা জানবে তাদের মেয়ে সুখে আছে। আর এতেই আমার সুখ হবে।
বাকিটা তোমার ইচ্ছা। যদি সম্ভব হয় আমায় কাজের মেয়ে হিসেবে একটু ঠাই দিও।
তুমি তোমার ভালোবাসার মানুষকে বিয়ে করে নিয়ে আসো কিচ্ছু বলবো না।
এই বলে মৌ আমার পা ধরে কাঁদছে।
আমি ওকে টেনে বুকে জড়িয়ে নিলাম।
-আমি তোমায় না জানিয়ে একটা ভুল করে ফেলেছি মৌ।
আমি খুব টেনশেনে আছি। কি করবো বুঝতে পারছি না।
-কি করেছো তুমি আমায় বলো।
আমি তো আগেই বলেছি আমি বন্ধুর মতো তোমার উপকার করবো।
তোমার কোন কাজে আমি বাঁধা দেবো না।
শুধু আমায় একটু ঠাই দিও এটাই আমার চাওয়া।
-আমি আজ জুঁইয়ের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু গিয়ে আমায় ওকে কোর্টে গিয়ে বিয়ে করতে হয়।
এবং বিকেলে ওকে নিয়ে কোথাও চলে যেতে হবে এটাও বলে দিয়েছে।
নইলে ওকে চিরতরে হারাতে হবে।
আমি এখন কি করবো মৌ?
এসব বলে মৌ এর দিকে তাকালাম। ওর মুখটা ছোট হয়ে গেছে।
আমার দিকে তাকিয়ে কষ্ট চেপে বলতেছে…
-ঠিক আছে তুমি যাবে। আমি এইদিকটা সামলে নেবো।
মৌ মুখে এই কথা শুনে আমি অবাক হয়ে তাকালাম মেয়েটার দিকে!
আল্লাহ্ কি দিয়ে বানাইছে ওরে?!
এই মেয়েটাকে কোন কিছু না দিয়ে একবুক যন্ত্রনা উপহার দিচ্ছি আর ও তা হাসিমুখে মেনে নিচ্ছে।
আমি পাগলের মতো ওকে বুকে জড়িয়ে নিলাম।
আমার মনে হচ্ছে আমি খুব বড় ভুল করছি।
খুব বেশি অন্যায় করতেছি এই অসহায় মেয়েটির উপর।
ও আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলছে…
গোসল করে আসো। আমি খাবার বাড়ছি।
বিকেলে তুমি যাবে ওনার কাছে। এখন খেয়ে একটু নিশ্চিন্তে ঘুমাও…
প্রিয় পাঠক আপনারা যদি আমাদের (গল্প পোকা ডট কম ) ওয়েব সাইটের অ্যাপ্লিকেশনটি এখনো ডাউনলোড না করে থাকেন তাহলে নিচে দেওয়া লিংকে ক্লিক করে এখনি গল্প পোকা মোবাইল অ্যাপসটি ডাউনলোড করুন => ??????
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.golpopoka.android