#আপন_মানুষ
#৩য়_পর্ব
#অনন্য_শফিক
‘
‘
‘অন্ধকার রাত। ইলেকট্রিসিটি নাই।ঝড় টড় হবে বলে মনে হচ্ছে! এই জন্যই ইলেকট্রিসিটি নাই।মেঘ ডাকছে খুব ভয়ংকর রকম আওয়াজ করে।এর মধ্যে এক দু ফোটা বৃষ্টি পড়াও শুরু করেছে।
ঠিক এই সময় কলিং বেল চাপলো কেউ।
আমি আলসেমি করে উঠলাম না।ঘুম পাচ্ছে খুব। আবার ভয় ভয়ও করছে।মা ঘরে নাই।আমায় বাড়িতে একা রেখেই বোনের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছেন তিনি।
আবার কলিং বেল বাজলো।
আমি তবুও উঠলাম না বিছানা থেকে।
এই সময় একটা লাথি ছুঁড়ে মারলো কেউ দরজায়। তারপর গলাটা শোনা গেল। রবিন। রবিনের গলা। রবিন রাগী রাগী গলায় বললো,’মরে টরে গেছো নাকি? বৃষ্টির ছাঁট এসে গায়ে লাগছে আর তুমি দরজাটা খুলে দিচ্ছো না! তাছাড়া অবনীর এমনিতেই প্রাগনেন্সি চলছে।ও আজ ক্লান্ত। ওকে দাঁড়িয়ে রাখছো কেন এভাবে?’
আমি রাগে কাঁপতে কাঁপতে বিছানা থেকে উঠলাম। ঘরে টর্চ নাই। মোবাইল ফোন নষ্ট। হাতড়ে হাতড়ে কোনমতে দেয়াশলাই খুঁজে বের করে একটা মোমবাতি জ্বালিয়ে নিলাম।
তারপর দরজার কাছে গিয়ে দরজাটা খুলে দিলাম। দরজা খুলে দিতেই মোমবাতির কাঁপা কাঁপা আলোয় আবছা রকম দেখলাম ,অবনী আর রবিন দাঁড়িয়ে আছে। অবনীর গায়ে দামি শাড়ি।গলায় মুক্তোর মালা।কানে কী সুন্দর দোল!হাতের বালা দুটোও মন কাড়া! রবিন আমার জন্য কোনদিন অত সুন্দর গয়না কিংবা শাড়ি কিনে আনেনি!ওর জন্য কিনেছে।কী অদ্ভুত ব্যাপার!
‘
আমি ওদের দিকে তাকিয়ে রইলাম খানিক সময়। তারপর অবনীর হাতটা শক্ত করে ধরে বললাম,’এই অবনী,তুই এমন নেমকহারাম কেন রে?তোর জন্য আমি কী না করেছিলাম?বল? তোকে আশ্রয় দিয়ে এই প্রাপ্য পেলাম আমি?অত সুন্দর প্রতিদান দিলি তুই আমায়?আসলে তুই হলি একটা নষ্টা! তোকে দেখলেই আমার বমি পাচ্ছে!’
এই সময় অবনী কাঁদো কাঁদো গলায় বললো,’রবিন দেখেছো ও আমায় কী বললো? তুমি কী এরজন্য ওকে কিছু বলবে না?’
রবিন সঙ্গে রাগে দাঁত মুখ কামড়ে আমার কাছে এসে আমার গালে ঠাস করে দু দুটো চড় বসিয়ে দিলো। তারপর বললো,’যা।এই বাড়ি থেকে বের হয়ে যা।’
আমি অবাক হয়ে বললাম,’এ কী বলছো রবিন?আমি না তোমার স্ত্রী?আর তুমি তো জানো না আমার পেটে যে তোমার সন্তান!’
রবিন বললো,’চুপ।একদম চুপ। আমার সন্তান শুধুমাত্র অবনীর পেটে।তোর পেটে কার সন্তান আমি জানি না।’
কথাগুলো বলে হা হা হা করে হেসে উঠলো রবিন।
অবনী তখন বললো,’রবিন,থাক ওকে তাড়িয়ে দিও না এখান থেকে।অতরাতে সে কোথায় যাবে?তারচে এখানে থাকুক। আমাদের তো একজন বুয়া লাগবেই। ওকে দিয়ে না হয় বুয়ার কাজটা করাবো আমরা। অবশ্য তোমাকে নিয়ে আমার ভয় আছে।তুমি তো তোমার বাবার মতই হয়েছো। তোমার বাবা নাকি বুয়ার সাথে শুতো।তুমিও কী আর না শুবে!’
রবিন বললো,’তোমার যখন অতই সন্দেহ তবে থাকার জন্য বলছো কেন ওকে।দাও বের করে দাও।’
অবনী বললো,’শুধু এভাবে বার করে দিলে হবে না। তুমি ওকে তিনবার একটি কথা বলবে। তারপর আর ওকে জোর করে আমাদের তাড়াতে হবে না।এমনি এমনিই চলে যাবে বেচারি!’
রবিন বললো,’কোন কথাটি বলতে হবে অবনী?’
অবনী বললো,’তুমি বলবে,তালাক,তালাক,তালাক।’
রবিন সঙ্গে সঙ্গে বললো,’তিশা,তোমায় আমি তালাক দিচ্ছি।
তালাক
তালাক
তালাক।’
রবিনের দিকে বোকার মতো তাকিয়ে আছি।এই মানুষটাই তো গত দুদিন আগেও খুব সহজ সরল ছিল। সকাল বিকাল একটানা আমার কাছে এসে বলতো,তিশা,তোমায় আমি আমার চেয়ে বেশি ভালোবাসি!
এই মানুষটাই আজ আমায় তালাক বলে দিলো?
ছিঃ!
নিজের উপর ঘেন্না হচ্ছে। ঘেন্না হচ্ছে অতদিন ওর সাথে করে আসা সংসারটার প্রতি!
আমার কান্না পাচ্ছে। হাউমাউ করে কেঁদে উঠেছি আমি।গলা ছেড়ে কাঁদছি।আর এই সময় পৃথিবীতে ঝড়ের তান্ডব শুরু হলো। শুরু হলো বৃষ্টি।এই ঝড় বৃষ্টি এবং অন্ধকারের ভেতর আমায় ঠেলে বাইরে বের করে দিলো রবিন। তারপর বললো,’আজ থেকে তোমার জন্য এই ঘর নিষিদ্ধ।যাও, নিজের রাস্তা মাপো। তুমি এখানে থাকলে অবনীর ঘুম হবে না!’
এই কথা বলে আমায় ঘাড় ধাক্কা দিয়েই ঘর থেকে বের করে দিলো রবিন। তারপর ভেতর থেকে ঠাস করে দরজাটা আটকে দিলো।
আমি বাইরে অন্ধকারে দাঁড়িয়ে থেকে ভয়ে কাঁপছি। বৃষ্টি এসে পড়ছে আমার উপর।পরনের শাড়িখানা অনেকটাই ভিজে গেছে। এখন কী করবো আমি?
ওরা ভেতরে হাসি তামাশা করছে।
অবনী বলছে,’যাক বাবা,আপদ বিদেয় হয়েছে।’
রবিন বললো,’এই জন্য আগামীকাল আমরা দুজন শুকরানার নামাজ আদায় করবো।’
অবনী খিলখিল করে হেসে উঠলো।
‘
#চলবে