আপন মানুষ পর্ব-০২

1
3606

#আপন_মানুষ
#২য়_পর্ব
#অনন্য_শফিক



কাগজের হাতের লিখাটা অবনীর।সে লিখেছে,’সবকিছু ভাগ করে দেয়া যায় দোস্ত কিন্তু ভালোবাসা না।আমি তাই আমার ভালোবাসা নিয়ে পালিয়ে গিয়েছি।আমায় ক্ষমা করিস দোস্ত। তোকে কিছুই জানাতে পারিনি আগে। এছাড়া আমার আর কিছুই করার ছিল না!’
লিখা গুলো পড়তে গিয়ে আমার দম বন্ধ হয়ে এলো। মনে হলো তখন আমার চারপাশটা নিঝঝুম আঁধার।
আমি কাঁদছি। চিৎকার করে কাঁদছি।
মা আমার কাছে এলেন।আমায় টেনে তার বুকের সাথে মিশিয়ে নিলেন। তারপর বললেন,’শান্ত হওগো মা। কান্নাকাটি করে কী লাভ হবে বলো!’
আমি কাঁদতে কাঁদতেই বললাম,’এখন আমার কী হবে গো মা? আমার কী উপায় হবে?’
মা চুপ করে রইলেন।যেন তার আর কিছুই বলার নেই!
ঠিক তখন খাটের উপর রাখা আমার ফোনটা বেজে উঠলো ‌। রবিন ফোন করেছে।সে বললো,’হ্যালো তিশা?’
আমি ওর ফোন রিসিভ করে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলাম।আর কাঁদতে কাঁদতে বললাম,’এটা কীভাবে করতে পারলে তুমি রবিন?এটা কীভাবে করতে পারলে তুমি আমার সাথে?’
রবিন বললো,’কোন চিন্তা করো না তুমি।আমি খুব দ্রুত তোমার কাছে ফিরে আসবো জান।’
‘ফিরে আসবে!’
‘তো কী করবো!একটু ঝামেলায় পড়ে গেছি এইজন্য কিছু বলতেও পারিনি। তাছাড়া অবনীর নিষেধ ছিল তোমায় কিছু বলতে। অবনী একটা গাধা মেয়ে। কনসিভ করে বসেছে।দু মাসের প্রাগনেন্ট।’
রবিনের মুখ থেকে কথাটা শোনার পর মনে হলো আমার চারপাশটা একটা বলের মতো ঘুরছে। প্রচন্ড রকম ঘুরছে।আর মাথা কেমন ভনভন করছে। হাত থেকে ফস করে মোবাইলটা পরে গেল ফ্লোরে। তারপর আমিও মাথা ঘুরে ঢলে পড়ে গেলাম মার গায়ের উপর।মা শক্ত করে ধরলেন আমায়।আমি এবার হড়হড় করে বমি করে ভাসিয়ে দিলাম মার শরীর।মা ঘেন্না করে দূরে সরলেন না।আমায় আরো কাছে টেনে নিলেন। শক্ত করে চেপে ধরলেন আমার নাভী।
আমি বললাম,’মা,আমি আর বাঁচবো না। বাঁচতে চাই না আমি।গলা টিপে মেরে ফেলুন আমায়!’
মা বললেন,’দূর বোকা মেয়ে। তুমি মরে যাবে। এটা তোমার নিজস্ব ব্যাপার। কিন্তু তোমার পেটে থাকা নিষ্পাপ একটা শিশুকে মেরে ফেলার অধিকার তো তোমার নাই!’
আমি হাউমাউ করে কেঁদে উঠলাম আবার। কাঁদতে কাঁদতে বললাম,’ওমা,মাগো,আমি বেঁচে থাকবো কীভাবে বলুন। আমার যে সর্বনাশ হয়ে গেছে। আপনি জানেন মা, অবনীর পেটে দু মাসের বাচ্চা। আপনার কথা সত্য।ওরা ঘর বন্ধ করে নোংরামো করতো!’
মা বললেন,’এই জন্য আগে ভাগেই বলেছিলাম। পুরুষ মানুষের চরিত্র আমি জানি। তোমার শশুরের চরিত্র ভালো ছিল না। আমার ঘরের যে কাজের মেয়ে ছিল, সেই মেয়ের পেট বাঁধিয়ে দিয়েছিল তোমার শশুর।পরে আমি হারামজাদিকে এক লাখ টাকা দিয়ে বাচ্চা নষ্ট করিয়েছি।আর ঘাড় ধাক্কা দিয়ে সেদিনই ঘর থেকে বের করে দিয়েছি!’
আমি বললাম,’মা আমার খুব খারাপ লাগছে। আমার জন্য পানি আনুন।মাথা কেমন আগুন হয়ে আসছে। মাথায় পানি ঢালুন।’
মা আমায় বিছানায় কোন রকম শুইয়ে দিয়ে বাথরুমে গেলেন। ওখান থেকে বালতি ভরে পানি এনে আমার মাথায় ঢেলে দিতে লাগলেন।আর বললেন,’অস্হির হইয়ো না মা।মনে মনে আল্লার নাম জপো।পড়ো,ইয়া সালামু,ইয়া সালামু।আল্লাহ শান্ত করে দিবে তোমায়।সব ঠিক হয়ে যাবে। এই মেয়েরে সড়ানো ব্যাপার না ‌।দু চার লাখ টাকা ধরিয়ে দিলেই শেষ। আমার ছেলে আমার ঘরে ফিরে আসবে। রবিন তোমার আছে, তোমার থাকবে।’
আমি কথা বলার কোন শক্তি পাচ্ছি না।শরীরে একটুও বল নেই।কথা বলার তীব্র চেষ্টা করছি। ঠোঁট নড়ছে। কিন্তু কথা ফুটছে না।কথা ফুটলে মাকে আমি বলতাম,’মা, আপনার এই কুলাঙ্গার ছেলের সাথে আমি আর সংসার করবো না। এরচেয়ে গলায় ফাঁস দিবো।মরে যাবো।’

রাতে আমার শরীরে খুব জ্বর উঠলো। রবিন তখন আবার ফোন করেছে।ওর ফোন দেখে জ্বরের ঘোরে রাগে এক আচাড় দিয়ে ফোন মেঝেতে ফেলে ভেঙে ফেললাম।ওর সাথে আমার আর কোন কথা নাই। কোন কথাই নাই!

অবনীর কথা খুব মনে পড়ছে। এটা সেই অবনী না?যাকে আমি আপন মানুষ ভেবে আমার কাছে আশ্রয় দিয়েছিলাম?আর রবিনও তো বলেছিলো অবনী তার বোন। কিন্তু বোনের সাথে ওসব কী করে করলো সে?
মাথা কাজ করছে না।আমি আবার কাঁদছি।আর ভাবছি,অবনীকে একদিন ঠিক খুঁজে বের করবো। তারপর এই নেমকহারাম মেয়েটাকে আমি নিজের হাতে খুন করবো!’

#চলবে

1 মন্তব্য

  1. Sotti valo basa onk koster onk kosto korte hoy tarpor vaggo thakle valo basa pawa jai valo basa sobar kopale thake na tai amr kopale o hoyto nei tobe se pase nei to ki hoye6e take mone jaiga diye6i se mone thakbe ajibon sob smy take valo basbo hoyto tar proti valo basa komber na tar proti valo basa bere jabe ajibon

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে