#আপনিময় বিরহ (০৫)
#বোরহানা_আক্তার_রেশমী
________________
সময় বহমান। দেখতে দেখতেই ১ মাসের বেশি কেটে গেছে। প্রিয়তাকে সুস্থ রাখার যথেষ্ট চেষ্টা করতেছে পরিবারের লোকজন। প্রিয়তাকে রাগানোর জন্য প্রিয়ম সারাদিন প্রিয়তাকে টুনটুনি ডাকে। প্রিয়তা কোনো হেলদুল দেখায় না৷ ওর এসবে কিছু যায় আসে না। সারাদিন নিজের মতো চুপচাপ থাকে। তবে প্রথম প্রথম যতটা উত্তেজিত হতো ততটা আর উত্তেজিত হয় না। তবে আগের মতোই তার এখনো ঘুমহীন রাত কাটে। সারাদিন বই নিয়ে পড়ে থাকে। কেউ কিছু জিজ্ঞেস করলে উত্তর দেয় নয়তো হু হা করে৷ তনিমার সাথে একটুও দুষ্টুমি করে না। তবে সবার চেষ্টার কোনো ত্রুটি নেই। আজ প্রিয়ম, উদয়, তনিমা আর প্রিয়তা ঘুরতে যাবে। প্রিয়তার মন ভালো করার জন্যই সবার এমন প্ল্যান। যদিও প্রিয়তা যাবে না বলেছিলো কিন্তু কানের কাছে তনিমার প্যান প্যান শুনে রাজি হয়ে গেছে। তনিমা, প্রিয়তা শাড়ি পড়বে আর প্রিয়ম আর উদয় পাঞ্জাবি। এটার ক্রেটিডও তনিমার। প্রিয়তা শাড়ি পড়বে না বলে অনেকক্ষণ চুপ করে বসে ছিলো কিন্তু ঘ্যান ঘ্যান করে প্রিয়তাকে রাজি করিয়েছে। সবার ড্রেসের কালার এক। কালো শাড়ি আর কালো পাঞ্জাবি। তনিমা আর প্রিয়তা রেডি হয়ে লিভিং রুমে বসে আছে। তাঁরা বেগম মেয়েকে বার বার সাবধানে থাকতে বলতেছে। প্রিয়তা বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে সিড়ির দিকে আর দরজার দিকে তাকাচ্ছে। তারা মেয়ে হয়ে রেডি হয়ে বসে আছে আর এই দুইজন এখনো আসলোই না৷ কি এমন সাজ দিচ্ছে এরা! আরো প্রায় ২০ মিনিট বসার পর প্রিয়ম আর উদয় এক সাথে রেডি হয়ে নিচে নামে। প্রিয়তা ভ্রু কুঁচকে তাকতেই পাশ থেকে তনিমা কনুই দিয়ে গুতো দিয়ে ফিসফিস করে বলে,
‘বইন তোর ভাইরে কি ড্যাশিং লাগতেছে রে। হায় মে মারজাওয়া। আল্লাহ কালো পাঞ্জাবি, সাদা পাজামা, কালো ঘড়ি, চুল গুলো কি সিল্কি হায় আল্লাহ। আমি শেষ।’
প্রিয়তা বিরক্তি নিয়ে তনিমার দিকে তাকিয়ে বলে, ‘কোন ভাইয়ের কথা বলছিস ক্লিয়ার বল! দুজনে একই রকম সাজছে।’
তনিমা গলা পরিষ্কার করে বলে, ‘অবশ্যই প্রিয়ম ভাইয়ের কথা বলছি। তোর ওই সুচোর মতো ভাইকে কে ড্যাশিং বলবে রে! হুহ।’
প্রিয়তা উত্তর দেয় না। তার আর কথা বলতে ভালো লাগে না। প্রিয়ম আর উদয় নিচে নামতেই প্রিয়তা মুখ বাকিয়ে আস্তে করে বলে, ‘মহা ভারত অশুদ্ধ করে এলেন দুই মে’তর। যত্তসব। দেখতে তো পুরাই বিলায়ের মতো আর ঢং দেখো বিরক্তিকর।’
প্রিয়ম প্রিয়তার ফিসফিসানি শুনে গলা ঝেড়ে বলে, ‘বকা দিচ্ছিস জোড়ে দে। এমন মিনমিন করে দেওয়ার কি আছে!’
প্রিয়তা কিছু না বলে গটগট করে বেড়িয়ে যায় বাড়ি থেকে। তার এখন এদের সাথে ঝগড়া করার মুড নাই। পেছন পেছন বাকি ৩ জনও বের হয়ে আসে। প্রিয়তা আর তনিমা পেছনে আর প্রিয়ম আর উদয় সামনে বসে। প্রিয়ম প্রথমেই একটা নদীর কাছে নিয়ে আসে। শীতল বাতাস, নদীর কলকল আওয়াজ, অনেক দুরে একটা করে বাড়ি। যেনো রুপকথার কোনো রাজ্য। প্রিয়তা চোখ বুজে নদীর আওয়াজ শুনতে থাকে। মনটা নিমিষেই ভালো হয়ে যায়। উদয় বর্তমানে তনিমার ফটোগ্রাফার হয়ে আছে। প্রিয়ম এগিয়ে আসে প্রিয়তার কাছে। কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে,
‘কি টুনটুনি মন ভালো হয়ছে?’
সাথে সাথে কেঁপে ওঠে প্রিয়তা। চটপট চোখ খুলতেই দেখে প্রিয়ম তার খুব কাছে। এত কাছে প্রিয়মকে দেখে ভড়কে যায় প্রিয়তা। দ্রুত সরে গিয়ে ভ্রু কুঁচকে বলে,
‘কি সমস্যা? এতো কাছে কি আপনার?’
প্রিয়ম ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে চুল ঠিক করতে করতে বলে, ‘তো? তুইতো বোবা। তা এখন কিভাবে কথা বলতেছিস?’
‘আপনাকে কে বলছে আমি বোবা? খেয়ে কাজ নাই আপনার আমার পেছনে লাগা ছাড়া।’
‘এ্যাহ আমার ঠ্যাকা পড়ছে তোর পেছনে লাগার! সর এন্তে। যত্তসব পেত্নী টেত্নী।’
কটমট করে তাকায় প্রিয়তা। রেগে ফোসফোস করতে করতে পা বাড়ায় অন্যদিকে। কিছুটা দুর যেতেই প্রিয়ম শব্দ করে হাসে। নদীর দিকে তাকিয়ে আপনমনে বলে, ‘ধীরে ধীরে তুই ঠিক হয়ে যাবি। কারো বিরহ তোকে পুড়াবে না। বরং ভালোবাসায় এতো জড়িয়ে যাবি যে তোর ওই বিরহের কথা মনেই পড়বে না।’
প্রিয়তা হেঁটে সামান্য দুর আসতেই একটা পিচ্চি ছেলে দৌড়ে আসে তার কাছে। প্রিয়তা পিচ্চি ছেলের দিকে তাকিয়ে মৃদু হেঁসে বলে, ‘কিছু বলবা পিচ্চু?’
ছেলেটা মাথা নাড়ায়। প্রিয়তা হাটু গেড়ে সামনে বসে বলে, ‘তোমার নাম কি?’
ছেলেটা কিছু বলে না। শুধু হাত বাড়িয়ে নাক আর গাল টিপে দিয়ে একটা ফুল আর কাগজ দিয়েই দৌড়। প্রিয়তা প্রথমে কিছুটা চমকে গেলেও বার বার পেছন থেকে ডাকতে থাকে। কিন্তু কয়েক মিনিটের ব্যবধানেই হারিয়ে যায় ছেলেটা। প্রিয়তা হাতের ফুল দেখে অবাক হয়। এক গুচ্ছ কাঠগোলাপ। কে দিলো ফুল? তাও প্রিয়তার প্রিয় ফুল! প্রিয়তা কাগজ মেলতেই দেখে গোটা গোটা অক্ষরে লিখা,
প্রিয়..
উমম তোমাকে সবাই প্রিয়ু বলে তাই না। কিন্তু আমি তোমাকে প্রিয় বলবো। প্রিয়তা কেটে শর্টকাট করে প্রিয়। কেন ডাকবো তা অন্যদিন বলবো। আচ্ছা তুমি সবসময় মনমরা হয়ে বসে থাকো কেন? তোমার ওই মিষ্টি মুখে হাসি টাই মানায় মন খারাপ না। বুঝছো কিছু? আজ তোমাকে অনেক সুন্দর লাগতেছে। একদম কিউটিপাই। এই শোনো তুমি লুকিয়ে থাকবা সবসময় নয়তো কে কখন কোথা থেকে নজর দেয় বলা যায় না। অনেক গুলা ভালোবাসি। তুমি শুধুই আমার। সব সময় তুমি আমিময় থাকবে। বাইরের কেউ নট এলাও ওকে!
……
প্রিয়তা উল্টে পাল্টে ভালো করে দেখে কোথাও ছেলেটার নাম লিখা নাই। একটা পিচ্চি ছেলে তারে লাভ লেটার দিলো! পরক্ষণেই নিজের মাথায় গাট্টা মেরে বলে, ‘ব’লদ। এই টুকু পিচ্চি আমারে লাভ লেটার দিবে কেন? নিশ্চয় কেউ ওকে দিয়ে মজা করানোর জন পাঠিয়েছে।’
প্রিয়তা ফুলগুলো একবার ফেলে দিতে চেয়েও নিজের কাছেই রাখলো। কিন্তু কাগজ টা অপ্রয়োজনীয় ভেবে গোল পাকিয়ে দুরে ছুড়ে মারে। প্রিয়ম ভ্রু কুঁচকে এগিয়ে যায় সেদিকে। কাগজ টা তুলে পুরোটা পড়ে শিষ বাজাতে বাজাতে উদয়ের দিকে যায়।
নদীর জায়গাা থেকে ফেরার সময় উদয় প্রিয়তার হাতের ফুল খেয়াল করে বলে, ‘ফুল কই পেলি ডা’ইনি?’
প্রিয়তা জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে বলে, ‘একটা পিচ্চি ছেলে দিছে।’
উদয় ‘ওহ’ বলতেই প্রিয়ম ব্যঙ্গ করে বললো, ‘তা এটা কোন পিচ্চি রে? উদয় ভাই আজকাল তো তোর বোন ফুলের সাথে লাভ লেটারও পায়। তা একটা পিচ্চি ছেলে বুঝি তোর বোন কে ভালোবাসে!’
বলেই হা হা করে হাসতে থাকে। তনিমা এতক্ষণ ফোন স্ক্রল করতেছিলো কিন্তু প্রিয়তা লাভ লেটার পেয়েছে শুনে ফোন টোন বাদ দিয়ে প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে থাকে। প্রিয়তা ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থাকে প্রিয়মের দিকে। লাভ লেটারের কথা সে জানলো কেমন করে? প্রশ্ন মনে না চেপে রেখে সরাসরি জিজ্ঞেস করে, ‘আপনি জানলেন কেমন করে যে আমি লাভ লেটার পেয়েছি?’
উদয় অবাক কন্ঠে বলে, ‘তুই সত্যি সত্যি লাভ লেটার পেয়েছিস?’
প্রিয়তা উত্তর দেওয়ার আগেই তনিমা হায় হুতাস করে বলে, ‘আল্লাহ! তুই এতো প্রেম প্রস্তাব কেমনে পাইস বইন? আজ পর্যন্ত আমি লেটারের ‘ল’ টা পাইলাম না আর লাভ লেটার তো বহুত দুর। আহারে জীবন বেদনা।’
উদয় ভ্রু কুঁচকে তাকায় তনিমার দিকে। প্রিয়ম বলে, ‘আরে আফসোস করো না। আমি তোমাকে শুধু ‘ল’ না পুরো লেটারই দিবো কেমন!’
তনিমা লাফিয়ে উঠে বলে, ‘সত্যি ভাইয়া! আহা আমার ক্রা……
কথা শেষ করার আগেই উদয়ের দিকে নজর যায় তনিমার। সাথে সাথেই কথা আটকে যায় তার। ওমন রক্তচক্ষু নিয়ে কেউ তাকালে কি বাকিটুকু বলা যায়! শুকনো ঢোক গিলে বিড়বিড় করে বলে,
‘একবার বাড়ি যা তনু আজ তোর কপালে শনি, রবি, সোম সব আছে।’
প্রিয়তা ওদের কথায় বিরক্তি নিয়ে বলে, ‘কি জিজ্ঞেস করলাম আর কি শুরু করছে এরা! আর আপনি জানলেন কেমন আমি লাভ লেটার পাইছি? বাই এনি চান্স ওটা কি আপনি দিছেন?’
প্রিয়তার কথায় উদয় আর তনিমা চোখ বড় বড় করে তাকায়। প্রিয়ম নিজের মতো স্বাভাবিক। প্রিয়তা কি বলে ফেলেছে তা বুঝে আসতে নিজেই অবাক হয়। প্রিয়ম তাকে লাভ লেটার কেন দিতে যাবে! উফফ মাথা খারাপ হয়ে গেছে নিশ্চয়। প্রিয়ম গাড়ি ড্রাইভ করতে করতে একটা কাগজের টুকরা এগিয়ে দেয় উদয়ের দিকে। উদয় সেটা নিতেই প্রিয়ম বলে,
‘তোর মতো পার্বতীকে লাভ লেটার দিবে এই তাহসিন প্রিয়ম! নো ওয়ে। দুরে ম’র। ওটা তুই যখন ফেলেছিস তখন আমি সন্দেহ বশত উঠিয়ে নিয়েছিলাম। দ্যাটস ইট।’
প্রিয়তা কটমট করে তাকায়। ইনডিরেক্ট অপমান করে দিলো তাকে! উদয় চিঠিটা পড়ে অবাক দৃষ্টিতে প্রিয়তার দিকে তাকায়। গালে হাত দিয়ে বলে, ‘বইন কে তোর এই প্রেমিক পুরুষ? আহা প্রেম।’
প্রিয়তা রাগী চোখে উদয়ের দিকে তাকায়। উদয় সেদিকে পাত্তা না দিয়ে নিজের মতো বকবক করতে থাকে। তনিমা আড়চোখে একবার প্রিয়মের দিকে তাকায় আরেকবার প্রিয়তার দিকে তাকায়। কিছু ভেবে মুচকি হাসে।
°__________________
আজকাল শিশিরের ব্যবহার আগের চেয়েও খারাপ হয়ে গেছে। অনিমা শিলা বেগমের সাথে এখনো আগের মতোই ব্যবহার করে। নিজে কোনো কাজ করে না শুধু অর্ডার করে। আর দিনশেষে শিলা বেগম শিশিরের কাছে সব নালিশ জারি করে। অফিসে কাজ করে আবার বাড়িতে মায়ের বিচার শুনে প্রায়ই সে অনিমাকে থা’প্পড় মা’রে। নয়তো বকাবকি করে। এসবেও পাত্তা দেয় না অনিমা। আজও অফিস থেকে এসে অনিমাকে থা’প্পড় মে’রেছে শিশির। অনিমা কিছু না বলে রুম থেকে বের হয়ে গেছে। শিপন সাহেব এতো অশান্তির ধারে কাছেও থাকেন না৷ অনিমা ছাঁদে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়েই চোখের জল ফেলছে। সে সময় হাজির হয় শিশির। পেছন থেকে ডাকে। অনিমা তড়িঘড়ি করে চোখের পানি মুছে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করে। শিশির এগিয়ে এসে নরম গলায় বলে,
‘সরি।’
অনিমা কিছুক্ষণ চুপ থেকে শব্দ করে হেঁসে ওঠে। ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থাকে শিশির। সে কি হাসার মতো কিছু বলছে? অনিমা হাসি থামিয়ে বলে, ‘কিসের জন্য সরি বলতেছেন? আমার সাথে বাজে ব্যবহারের জন্য নাকি এতদিনের থা’প্পড়ের জন্য?’
শিশির মাথা নিচু করে নেয়। অনিমা গভীর দৃষ্টিতে সেদিকে তাকিয়ে বলে,
‘আপনি যে আশায় আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করেন, যে আশায় দিনের পর দিন থা’প্পড় মা’রেন সে আশা এ জন্মে পূরণ হবে না। আমি আগেই বলেছি আপনার মা’কে আমি শান্তির সংসার পেতে দেবো না৷ যে ক’দিন এই সংসারে থাকবো ততদিন আমি আপনার মায়ের লক্ষীমন্ত বউয়ের শখ মিটাবো। হ্যাঁ আমিও দোষী তার শাস্তি তো পাচ্ছি। ভবিষ্যতেও পাবো৷’
অনিমা আর দাঁড়ায় না। শিশির অনিমার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে। যে শান্তির আশায় তার মা অনিমাকে পছন্দ করেছিলো তা তো পাচ্ছে না। উল্টো জীবনের সমীকরণ গুলো পাল্টে গেছে। আজকাল তার মায়ের ওপর বড্ড বিরক্তি আসে। অনিমা জ্বালাচ্ছে বলে এখনই ডিভোর্স দিয়ে দিতে বলে। বড় করে শ্বাস নিয়ে আফসোস করে বলে,
‘আমার কি দোষ? মায়ের কসম ভাঙতে পারিনি বলেই অনিমাকে বিয়ে করেছি। প্রিয়তা কেন আমাকে একবারও বুঝলো না? একবার তো জিজ্ঞেস করতে পারতো। আমিও তো ওকে ভালোবেসেছি। এখনও বাসি।’
সিড়ির কাছ থেকে অনিমা তাচ্ছিল্যের সুরে হাসে। মানুষ দোষ করলেও স্বীকার করতে পারে না। শিশির একবারও নিজের ভুল গুলো দেখতেছে না। বারবার অনিমা আর প্রিয়তারই দোষ দিয়ে যাচ্ছে। কেমন ভালোবাসে সে প্রিয়তাকে? আজ প্রিয়তা কোনো কারণে তাকে ছেড়ে অন্য কাউকে বিয়ে করলে সে কি করতো?
______
সন্ধ্যার পর প্রিয়তা নিজের রুমে বসে ছিলো। তখন আগমন ঘটে তনিমার। এসেই হায় হুতাশ করে বলতে থাকে আবার চিঠির কথা। তারপর উৎসাহ নিয়ে বলে,
‘ইসস সত্যি সত্যি যদি তোর ভাইটাও আমাকে লাভ লেটার দিতো। আহারে!’
প্রিয়তা ভ্রু কুঁচকে বলে, ‘কোন ভাই?’
‘প্রিয়ম ভাই ছাড়া আবার কে!’
‘উদয় ভাই জানে এ কথা?’
তনিমা ঢোক গিলে বলে, ‘তো? তোর ভাই জানলেই কি আর না জানলেই কি?’
‘তুই না আমার ভাইকে ভালোবাসিস!’
তনিমার মুখটা সাথে সাথে মলিন হয়ে যায়। মলিন হেঁসেই বলে, ‘সে ভালোবাসার কি দাম আছে তোর ভাইয়ের কাছে? সে তো আমাকে দেখিয়ে দেখিয়ে গার্লফ্রেন্ডের সাথে কথা বলে।’
প্রিয়তা অবাক হয়ে তাকায় তনিমার দিকে। উদয় ভাইয়ের গার্লফ্রেন্ড মানে? কিছু বলতে যাবে তার আগেই কেউ বলে, ‘দ্রুত আমারে ট্রিট দাও নয়তো আমি সব কথা উদয়কে বলে দিবো। আমার কাছে সব রেকর্ড আছে।’
চলবে…
#আপনিময়_বিরহ (০৬)
#বোরহানা_আক্তার_রেশমী
______________
প্রিয়মের দিকে বিরক্তিকর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে প্রিয়তা। দেখতে দেখতে প্রিয়তার ফাইনাল এক্সাম চলে এসেছে। আজ ফিরবে তারা আবারও চেনা শহরে। প্রিয়তাদের সাথে প্রিয়মও যাচ্ছে ওদের বাড়ি৷ ৩ মাস অনেক জ্বালিয়েছে প্রিয়ম প্রিয়তাকে। এখন আবার ওদের সাথে যাচ্ছে বলেই এই বিরক্তিকর দৃষ্টি। সেদিনের পর অনেকগুলো চিঠি পাইছে প্রিয়তা। সেগুলো অবশ্য সে পাত্তা দেয় না। তনিমা যে উদয়কে ভালোবাসে এটা জানার পর থেকেই প্রিয়ম আরো বেশি জ্বালিয়ে মারতেছে দুজনকে। প্রিয়তা এখন অনেকটাই স্বাভাবিক। শিশিরের জন্য মনে কষ্ট থাকলেও আর আগের মতো ততটা চুপচাপ থাকে না। শুধু শুধু অন্যের জন্য নিজের পরিবারকে কষ্ট দিয়ে কি লাভ? তার থেকে কিছু অভিনয়ে যদি মানুষ ভালো থাকে তাতে দোষ কি? প্রিয়ম প্রিয়তা দৃষ্টি খেয়াল করেও পাত্তা দিলো না। হাই তুলতে তুলতে বললো, ‘কি সমস্যা? ওমন রা’ক্ষুসি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছিস কেনো? আমি একটা নিষ্পাপ ভদ্র বাচ্চা ছেলে। তোর ওই ভয়ংকর চাহনি দেখলে হার্ট অ্যাটাক চলে আসে আমার। আজব!’
প্রিয়তা কটমট দৃষ্টি নিয়ে প্রিয়মের দিকে তাকায়। দাঁতে দাঁত চেপে বলে, ‘নিজেকে ভদ্র বাচ্চা ছেলে বলে বাচ্চা ছেলেদের অপমান করবেন না। আর রা’ক্ষসী দৃষ্টি কি হ্যাঁ?’
‘রাক্ষসীদের মতো তাকিয়ে আছিস আবার বলিস রা’ক্ষসী দৃষ্টি কি! হাউ ফানি।’
ব্যস দুজনের ঝগড়া লেগে গেলো। উদয় আর তনিমা নিজেদের কানে হেডফোন লাগিয়ে চুপচাপ বসে আছে। এই দুইটা ভাই বোন তো দুর একে অপরের শত্রু। সাপে বেজিতে সম্পর্ক এদের। এর মধ্যেই ট্রেন পৌছে গেলো গন্তব্যে। ট্রেন থামতেই প্রিয়তা চুপ হয়ে যায়। জানালা দিয়ে বাহিরে তাকাতেই দেখে বড় বড় অক্ষরে লিখা, ‘কমলাপুর স্টেশন’। ৩ মাস পর নিজের শহরকে দেখে বুকের ভেতর চিনচিনে ব্যাথা অনুভব করে। আশেপাশে তাকাতেই চোখ যায় দুরে দাঁড়ানো শিশিরের দিকে। সাথে সাথেইই চমকে উঠে সে। আক্ষিযুগল ভিজে আসে। ঝাপসা চোখেই সেদিকে তাকিয়ে থাকে। প্রিয়ম প্রিয়তার দৃষ্টি অনুসরণ করে নিজেও তাকায় সেদিকে৷ সাথে সাথে হাাত মুষ্টিবদ্ধ হয়ে আসে৷ রাগে চোয়াল শক্ত হয়। এতদিনে শিশিরের সব খোঁজ তার নেওয়া শেষ তাই স্বাভাবিক ভাবেই শিশিরকে চিনতে তার বেগ পেতে হয়নি। রাগে হুট করেই করে বসে এক অনাকাঙ্ক্ষিত কাজ। খপ করে প্রিয়তার হাত শক্ত করে ধরে। প্রিয়তা অবাকের চরম পর্যায়ে দাঁড়িয়ে প্রিয়মের দিকে তাকাতেই তার কলিজা কেঁপে ওঠে। চোখ মুখের অবস্থা ভীষণ ভয়ংকর। হঠাৎ করেই প্রিয়ম কেন রেগে গেলো তা আশ পাশ হাতড়েও কিছু খুঁজে পেলো না। কিছু বলতে যাবে তার আগেই কানে ভেসে আসে প্রিয়মের গম্ভীর স্বর..
‘যাওয়ার ইচ্ছে আছে নাকি এখানেই বসে কিছু কু’কুরকে দেখার ইচ্ছা আছে!’
কেঁপে ওঠে প্রিয়তা। এতো গম্ভীর স্বরে প্রিয়ম কখনোই কথা বলেনি তার সাথে। বরং সবসময়ই নরম ছিলো। প্রিয়মের কথা নিজে কয়েকবার আওড়াতেই বুঝতে পারলো কথাটার মানে। সাথে সাথেই কিছু বলতে যাবে তার আগেই প্রিয়ম তার হাত টেনে নেমে যেতে লাগলো। প্রিয়তা বুঝতে পারে অনেক বেশি রেগে আছে প্রিয়ম তাই চুপ হয়ে তার পিছন পিছন যেতে থাকে। হাতটা ছাড়তে বলতেও সে ভয় পাচ্ছে। যতটা শান্ত, মজার প্রিয়ম রেগে গেলে ঠিক ততটাই ভয়ংকর। তাহেরা বেগম বলেছিলেন একবার। প্রিয়তা মন দিয়ে দিয়ে না শুনলেও এটা মনে আছে প্রিয়ম রেগে গেলে সবথেকে বেশি ভয়ংকর হয়ে যায়। প্রিয়মের চোখ মুখের অবস্থা দেখে উদয়ও কিছুটা চিন্তায় পড়ে যায়। সামনে এগিয়ে বসে,
‘কি রে তোর চোখ মুখের এ অবস্থা কেন? কি হয়ছে?’
প্রিয়ম শুধু রাগী চোখে তাকালো। কোনো উত্তরই দিলো না। সেসময় হাজির হয় শিশির। উদয়ও সাথে সাথে রেগে যায়। কিন্তু পাবলিক প্লেস হওয়ায় কোনো প্রকার সিনক্রিয়েট করে না। শিশির সরাসরি পলক সাহেব আর তাঁরা বেগমকে সালাম দিয়েই এগিয়ে আসে প্রিয়তার কাছে। উৎসাহ নিয়ে জিজ্ঞেস করে,
‘কেমন আছো প্রিয়তা? সেদিন আমাকে না বলে চলে গেলে কেন? তোমার একটুও কষ্ট হয়নি আমাকে ছেড়ে যেতে!’
প্রিয়তা অবাক হয়ে তাকাায় শিশিরের দিকে। মানে সে ছেড়ে গেছে! সিরিয়াসলি? কিছু বলতে যাবে তার আগেই মাত্রাতিরিক্ত ঠান্ডা এবং গম্ভীর গলায় প্রিয়ম বললেন,
‘মানুষ কতটা নির্লজ্জ হয় তা আপনাকে না দেখলে বুঝতে পারতাম না মিষ্টার শিশির আহমেদ। ছোট বোনের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে বড় বোনকে বিয়ে করলেন। আবার এখন আসছেন ছোট বোনকে বলতে যে সে কেমন আছে! আপনাকে ছেড়ে যেতে তার কষ্ট হয়ছে কি না! মানে সব মজা লাগে আপনার কাছে? কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা দিতে আসছেন!’
শিশির যেনো জ্বলে উঠলো। এতক্ষণে খেয়াল করলো প্রিয়ম প্রিয়তার হাত ধরে রেখেছে। রেগে গিয়ে বললো, ‘আপনি কে এসব বলার? আর কোন সাহসে প্রিয়তার হাত ধরে আছেন? ছাড়ুন ওকে।’
প্রিয়মের শান্ত গলার শান্ত উত্তর, ‘সি ইজ মাই ওয়াইফ। এনি কোয়েশ্শেন?’
উপস্থিত সকলে অবাক হয়ে তাকায় প্রিয়মের দিকে। শুধু উদয় আর তনিমা স্বাভাবিক। প্রিয়তা বাকরুদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। প্রিয়ম এমন কিছু বলবে তার ধারণার বাইরে ছিলো। বার বার যেনো কথাটা তার মাথায় বাজতেছে। কিছু বলবে সে কথাটাও গলায় আটকে আছে। শুধু অবাক চোখে তাকিয়ে থাকলো প্রিয়মের দিকে। শিশির অসহায় দৃষ্টিতে তাকায় প্রিয়তার দিকে। প্রিয়ম কাউকে পাত্তা না দিয়ে চুপচাপ প্রিয়তার হাত ধরে হেঁটে যায়।
প্রিয়তারা বাড়ি ফিরতেই অনিমাও বাড়ি চলে আসে৷ তনিমার বাবা মা এখানে থাকেন না আর। অনিমা এগিয়ে এসে খুশিমনে প্রিয়তা, উদয় আর তনিমাকে জিজ্ঞেস করে কেমন আছে? উত্তর দেয় না উদয় আর তনিমা। প্রিয়তা স্বাভাবিক ভাবে বলে, ‘আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। সব স্বার্থপরদের থেকে দুরে গিয়ে আলহামদুলিল্লাহ বাঁচতে শিখেছি।’
অনিমা হাসে। প্রিয়তা অপমান গায়ে লাগায় না। সে তো অপরাধী তাই তাকে অপমান করায় যায়। শুধু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সিড়ির দিকে তাকায়। নিজের রুমে যায় না অনেকদিন। ধুলো পড়ে গেছে নিশ্চয়ই তার রুমে। যেমনটা তার জীবনে পড়ে গেছে। নিঃশব্দে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। উদয় হেঁসে বলে, ‘ভালো একটা কথা বলেছিস।’
প্রিয়তা ছোট করে উত্তর দেয়, ‘হু।’
পলক সাহেব আর তাঁরা বেগম নিজেদের রুমে আসতেই পেছন পেছন প্রিয়মও আসে। রাগের মাথায় সবার সামনে উল্টা পাল্টা বলে ফেলেছে। তাই কথা বলতে এসেছে। প্রিয়ম রুমের বাইরে এসে নক করে। ভেতর থেকে তাঁরা বেগম উত্তর দেয়, ‘আসো।’
প্রিয়ম সব কথা ছেড়ে মাথা নিচু করে বলে, ‘মামনি আ’ম এক্সট্রেমলি সরি। আমি শিশিরকে দেখে রাগের মাথায় বলে ফেলেছি ওসব। তোমরা প্লিজ….
‘ইটস ওকে বাবা। আমরা কিছু মনে করিনি। বুঝতে পেরেছিলাম। আর তাছাড়া তুমি না ভেবে কিছু করো না বা বলো না৷ রাগের মাথায় হলেও একটা ঠিক কাজ করেছো। তার জন্য ধন্যবাদ তোমাকে।’
প্রিয়মের কথা শেষ হওয়ার আগেই তাঁরা বেগম তাকে উপরিউক্ত কথাগুলো বলে। প্রিয়ম তবুও চোখ নামিয়ে রাখে। না জানি সবাই কি ভাবছে! পলক সাহেব মুচকি হেঁসে বলে, ‘জেন্টলম্যান এতে মাথা নিচু করে রাখার কি আছে! তুমি মানে তোমরা এতগুলো দিন যেভাবে আমাাদের পাশে ছিলে তাতে এটুকু ব্যাপার কিছু না। ছাড়ো এসব আর যাও ফ্রেশ হও।’
প্রিয়ম মুচকি হেঁসে চলে যায়। একটা রুমে এসে শরীর এলিয়ে দেয়। তাড়াহুড়োতে কার রুমে ঢুকেছে খেয়াল করেনি। মাথাটা ব্যাথা করছে ভীষণ। শাওয়ার নিলে হয়তো ভালো লাগবে কিন্তু তার আগে লাগেজ আনতে হবে। তার ভাবনার মাঝেই কারো কন্ঠ ভেসে আসে,
‘আপনি এখানে?’
প্রিয়ম চোখ মেলে দেখে প্রিয়তা। প্রিয়ম শোয়া থেকে উঠে বসে বলে, ‘কেন? এখানে আসা কি মানা?’
প্রিয়তা অন্যদিকে তাকিয়ে বলে, ‘এটা আমার রুম।’
প্রিয়ম কিছু না বলে চলে যেতে নেয়। তারপর কিছুটা পিছিয়ে এসে প্রিয়তার কানের কাছে চুলে ফু দিয়ে উড়িয়ে দেয়। কেঁপে উঠে প্রিয়তা। তাকানোর আগেই প্রিয়ম যেতে যেতে বিড়বিড় করে বলে,
‘এখন না হয় তোর রুম বলে চলে যেতে হচ্ছে। ক’দিন পর এটা আমারও রুম হবে।’
প্রিয়তার কান অবদি সে কথা গেলো না। প্রিয়মের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে দরজা লাগিয়ে দেয় প্রিয়তা। লাগেজ থেকে কাপড় বের করে শাওয়ার নিতে যায়। এখন তার কোনোকিছুতে মন দেওয়া যাবে না। কাল থেকে এক্সাম আজ শুধু পড়তে হবে।
_____________
সন্ধ্যার পর রুমে ভালো লাগছিলো না বলে ছাঁদে চলে এসেছে প্রিয়তা। তনিমা নিজের রুমে ঘুম দিচ্ছে। কে বলবে ওর কাল এক্সাম! দীর্ঘশ্বাস ফেলে পুরো ছাঁদে চোখ বুলায় প্রিয়তা। কত শত স্মৃতি এ ছাঁদে। শিশির আর তাদের ছাঁদটা অনেকটাই কাছাকাছি। একবার রাত ২টার দিকে প্রিয়তার ভীষণ আইসক্রিম খেতে ইচ্ছা করছিলো। রাত জেগে কথা বলার দরুণ তখনো শিশির আর প্রিয়তার ফোনালাপ হচ্ছিলো। শিশিরকে আবদারের স্বরে বলে, ‘আমার না অনেক আইসক্রিম খেতে ইচ্ছা করছে।’
‘না। এতো রাতে আইসক্রিম খেলে ঠান্ডা লেগে যাবে৷ কাল খেয়ো।’
প্রিয়তা জিদ ধরার বদলে চুপচাপ মেনে নিলো। কিন্তু সে আইসক্রিম খেতে পারবে না ভেবে মন খারাপ হয়ে গেছিলো। ঠিক আধাঘন্টা পর শিশির কল দিয়ে বললো, ‘ছাঁদে আসো তো।’
প্রিয়তা অবাক হয়ে শুধালো, ‘এতো রাতে ছাঁদে যেতে যাবো কেন? ভুত ধরবে আমাকে। যাবো না।’
‘আরে আসো তো। কিছু হবে না।’
প্রিয়তা আর তর্ক না বাড়িয়ে সাবধানে ভয়ে ভয়ে ছাঁদে চলে আসে। সামনে তাকিয়ে দেখে পাশের ছাদে কেউ দাঁড়িয়ে আছে। প্রথমে ভয় পেয়ে গেলেও পরে বুঝতে পারে ওটা শিশির। এগিয়ে এসে বলে, ‘এতো রাতে ছাঁদে ডাকলেন কেন শিশির ভাই? কেউ দেখলে খবর আছে।’
প্রিয়তার কন্ঠে আতঙ্ক। মুচকি হাসে শিশির। প্রতিউত্তরে একটা ব্যাগ এগিয়ে দেয়। প্রিয়তা ভ্রু কুঁচকে ব্যাগ নিয়ে ওটা খুলেই হা হয়ে যায়। অনেকগুলো আইসক্রিমের বক্স। খুশিতে ভয় টয় ভুলে গিয়ে বাচ্চাদের মতো ওখানেই বসে পড়ে। শিশির প্রিয়তার কান্ড দেখে হাসতে থাকে।
অতীত মনে পড়তেই অজান্তে হেঁসে উঠে প্রিয়তা। চোখের কোণে জল চিকচিক করছে। চোখের কোণের জল মুছতেই উপস্থিত হয় প্রিয়ম। হালকা কাশি দিয়ে বলে, ‘এক্সের জন্য কাঁদছিস টুনটুনি?’
প্রিয়তা ভ্রু কুঁচকে তাকায় প্রিয়মের দিকে। প্রিয়ম ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে, ‘ওভাবে তাকানোর কিছু হয়নি। সত্যিটাই তো বললাম।’
‘হ্যাঁ সত্যি বলে আমাকে একদম উদ্ধার করে দিয়েছেন। তা সত্যের উড়োজাহাজ এখানে আপনার কি কাজ?’
প্রিয়ম প্রিয়তার অলক্ষ্যে হাসে। মেয়েটার হয়তো মনেই নেই স্টেশনের ব্যাপারটা। কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে, ‘হাঁটতে যাবি? তোরও মন ভালো নেই আমারও কিছু ভালো লাগতেছে না। যাবি?’
প্রিয়মের কন্ঠে কিছু একটা ছিলো যার ডাকে না চাইতেও সাড়া দিয়ে ফেলে প্রিয়তা। মাথা নাড়িয়ে বলে, ‘কোথায় যাবেন?’
‘চল একদিকে চলে যায়। রাতের শহর পুরোটাই সুন্দর।’
প্রিয়তা মাথা নাড়ায়। এই মানুষটাকে নিঃসন্দেহে ভরসা করা যায়। এই মানুষটার মনে কোনো রকম খাারাপ উদ্দেশ্য, চিন্তা নেই তা এতদিনে বোঝা শেষ। প্রিয়ম আর প্রিয়তা বাড়ি থেকে বেড়িয়ে একটা সরু রাস্তায় হাঁটতে থাকে। দুজনেই নিশ্চুপ। দুজন শুধু ঝিঁঝি পোকার ডাক শুনছে। নিরবতা ভেঙে প্রিয়মই প্রথমে বলে, ‘স্টেশনের ঘটনার জন্য সরি।’
সাথে সাথেই প্রিয়তার হাঁটা থেমে যায়। তাকায় প্রিয়মের দিকে। প্রিয়ম স্বাভাবিক। প্রিয়তা কি উত্তর দিবে ভেবে পায় না। আশ পাশ হাতড়েও যখন কোনো উত্তর পেলো না তখন নিশ্চুপ হয়েই আবার হাঁটতে লাগলো। প্রিয়মও চুপই থাকলো। কিছুদুর আসতেই একটা আইসক্রিম পার্লার দেখে প্রিয়ম বললো, ‘আইসক্রিম খাবি?’
প্রিয়তা মাথা নাড়িয়ে না বোঝায়। প্রিয়ম সেগুলো পাত্তা না দিয়ে আইসক্রিম পার্লারের দিকে যেতে যেতে বলে, ‘না খেলে চুপচাপ বসে থাকিস। আমি খাবো। আয়।’
প্রিয়ম জানে আইসক্রিম প্রিয়তার ফেভারিট। তাই মুচকি হেঁসে নিজের মতো যেতে থাকে। প্রিয়তাও পিছু পিছু যায়। প্রিয়ম আইসক্রিম অর্ডার করে ফোন স্ক্রল করতে থাকে আর প্রিয়তা ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থাকে প্রিয়মের দিকে। আইসক্রিম আসলে প্রিয়ম নিজের মতো খেতে থাকে। প্রিয়তাকে কিছু বলছে না দেখে মনে মনে প্রিয়মের চৌদ্দ গোষ্ঠী উদ্ধার করে ফেলে।
‘একবার খাবে না বলেছি বলে আর একবারও বলবে না নাকি আজব। উগান্ডার দাদা।’
প্রিয়ম নিঃশব্দে হেঁসে প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে বলে, ‘মনে মনে চৌদ্দ গোষ্ঠী উদ্ধার না করে চাইলে আইসক্রিম খেতে পারিস।’
আরেকটা আইসক্রিম প্রিয়তার দিকে এগিয়ে দিতেই সে ছিনিয়ে নিলো। ভেংচি কেটে খেতে শুরু করলো। আশে পাশে সিডর হয়ে গেলেও তার যায় আসবে না এই মুহুর্তে। প্রিয়ম ঠোঁট কামড়ে দেখতে থাকে প্রিয়তার বাচ্চামো। কতদিন পর মেয়েটা এমন বাচ্চামো করতেছে।
খাওয়া শেষে আরো প্যাক করে নেয় প্রিয়ম। এবার আর দুজনে নিশ্চুপ না। প্রিয়তা নিজে থেকেই অনেকটা কথা বললো। প্রিয়ম শুধু মনোযোগ দিয়ে শোনার কাজ করলো। বাড়ির কিছুটা কাছে আসতেই শিশির সামনে আসে প্রিয়তার। সাথে সাথেই মুখটা মলিন হয়ে যায় প্রিয়তার। শিশির শান্ত কন্ঠে বলে,
‘তোমার সাথে আমার কথা আছে প্রিয়তা।’
চলবে….