আপনিময় বিরহ পর্ব-০১+০২

0
2613

#আপনিময় বিরহ
#সূচনা_পর্ব
#বোরহানা_আক্তার_রেশমী

বিয়ের সাজে প্রিয়তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে তারই দুইজন প্রিয় মানুষ। স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে তাদের দিকে। মস্তিষ্ক কিছুতেই ঘটনা টা মানতে চাইলো না। মাথা ঘুরিয়ে উঠলো মুহূর্তেই। নিজেকে সামলে ভালো ভাবে তাকায় শিশির আর অনিমার দিকে। তারা তাদের মতো স্বাভাবিক। শুধু প্রিয়তাই অস্বাভাবিক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তারা বেগম এসে এক হাতে প্রিয়তাকে জড়িয়ে নিয়ে ছলছল দৃষ্টিতে তাকায়। প্রিয়তা অবাক হয়ে নিজের আম্মুর দিকে তাকিয়ে থাকে। তবে কি তার আম্মুও বুঝেছে তার মনের বিষয়টা! ভাবনার মাঝেই নতুন বর বউকে নিয়ে বাড়িতে চেঁচামিচি শুরু হয়ে গেলো। শিশির আর অনিমা নির্বাক দৃষ্টিতে সব দেখে। শিশির বলে,
‘আব্বু আম্মু প্লিজ সিনক্রিয়েট করো না। আমি আর অনি একে অপরকে ভালেবাসি। তাই বিয়ে করে নিয়েছি।’

শিশিরের কথা শুনে প্রিয়তার মাথার মধ্যে সব জট পাকিয়ে যায়। একটা কথা যেনো বার বার বাজতে থাকে। ‘আমরা একে অপরকে ভালোবাসি’। শিশির ভাই অনি আপুকে ভালোবাসে? তবে আমি কে? এতোদিনের সম্পর্ক কি তবে অভিনয় ছিলো? এক যুগ ভাবনার মাঝেই সব হৈ হুল্লোড় থেমে যায়। শিশিরের বাবা শিপন সাহেব বললেন,
‘থামো সবাই। শিলা(শিশিরের মা) নতুন বউকে বরণ করে ঘরে তোলো। বিয়ে যখন করেছে তখন তো আর বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখা যাবে না।’

কথাটা বলেই গটগট করে চলে গেলেন শিপন সাহেব। শিলা বেগম গম্ভীর মুখে অনিমাকে বরণ করে চলে গেলেন। প্রিয়তা তখনও নির্বাক দর্শকের মতো সব দেখে। তারা বেগম মেয়ের বাহুতে ধাক্কা দিয়ে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললেন,
‘চল মা। বাড়ি যায়।’

প্রিয়তা মায়ের দিকে তাকিয়ে বিষাদ নিয়ে হাসে। মুখে হাসি রেখে আম্মুকে কিছু না বলে শিশির আর অনিমার দিকে এগোয়। অনিমা এতক্ষণ স্বাভাবিক থাকলেও প্রিয়তাকে এগোতে দেখে চোরের মতো মুখ এদিক ওদিক করতে থাকে। প্রিয়তা গিয়ে শিশির ভাইয়ের সামনে দাঁড়িয়ে সরাসরি জিজ্ঞেস করে,
‘আপনি অনি আপুকে ভালোবাসেন শিশির ভাই?’

‘হুম।’

তার নির্লিপ্ত উত্তরে থমকে যায় প্রিয়তা। কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে, ‘তবে আমি কে শিশির ভাই? ‘

‘তুমি কেউ না।’

তার কথায় আরো এক দফা মনটা ভেঙে গুড়িয়ে যায় অষ্টাদশী কন্যার। এবার তাকায় পাশে থাকা অনি আপুর দিকে। অনিমা তাকানো দেখে মাথা নামিয়ে নেয়। প্রিয়তা স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বলে,

‘এবার কি তুমিও বলবে যে আমি তোমার কেউ না!’

অনিমা চুপ থাকে। বলে না কিছু। চোখ ঝাপসা হয়ে আসে। এই অনি আপুকে সে কতো ভালোবেসেছে আর সে এভাবে ঠকালো? চোখের পানি গড়িয়ে পড়ার আগেই তা সন্তর্পণে মুছে নেয় প্রিয়তা। অনিমার দিকে তাকিয়ে কাঠকাঠ গলায় বলে,

‘আমাকে এভাবে ঠকাতে পারলে আপু? তোমাকে তো আমি নিজের বোনের মতো ভালোবেসেছি। সব কিছু আব্বু আম্মুকে বলার আগে তোমাকে বলেছি। তুমি তো জানতে আমি এই মানুষটাকে ঠিক কতো আগে থেকে ভালেবাসি! তুমি তো বলেছিলে একদিন সে আমার হবে। তবে তাকে আপন করে দেওয়ার আগেই কেড়ে কেনো নিলে?’

অনিমা তবুও কিছু বললো না। এবার রাগে চোয়াল শক্ত হয়ে আসে প্রিয়তার। কিছু বলার আগেই শিশির অনিমার হাত চেপে ধরে নিয়ে যাওয়ার জন্য উদ্যত হয়ে বললেন,

‘তোমার সব প্রশ্নের উত্তর দিতে আমরা কেউ বাধ্য নয়। তাছাড়াও আমরা ক্লান্ত। রুমে যাবো…..

কথা শেষ করার আগেই ঠাস করে থা’প্প’ড় পড়লো শিশিরের ফর্সা গালে। হিংস্র হয়ে উঠে চাহনী। শিশির অবাক চোখ আর রাগ নিয়ে তাকায় প্রিয়তার দিকে। প্রিয়তা তার কলার চেপে জোড়ে চিল্লিয়ে বলতে লাগে,

‘খেলনা পেয়েছিস আমাকে? আমি তোর খেলনা যে যখন যেভাবে ইচ্ছা খেলবি! এই তোর লজ্জা করে না এতোদিন আমাকে ভালোবাসি ভালোবাসি করে এখন আমারই চাচাতো বোনকে বিয়ে করে আমাকে মুখ দেখাতে! তোর মতো একটা জা’নো’য়া’র কে ভালোবাসা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল। কতো ভালোবেসেছি তোকে আর তুই আমাকে ঠকিয়ে আমার আপুকে…ছিঃ।’

‘প্রিয়তা…

অনিমা আর কিছু বলার আগেই তার গালেও ঠাস করে থা’প্প’ড় বসিয়ে দেয়। রাগে হিতাহিত জ্ঞান শূণ্য হয়ে গেছে তার। তারা বেগম দ্রুত প্রিয়তার কাছে এসে তাকে আগলে নিলেন। প্রিয়তা তাকে সরিয়ে বলে,

‘তোমার ওই জঘন্য মুখে খবরদার আমার নাম নিবে না। স্বার্থপর, বেইমান। আরে ‘ও’ না হয় পরের ছেলে তুমি তো আমার বোন। ওহ সরি তুমিও তো পরেরই মেয়ে। তোমাকে আর এই বেইমানটাকে কতোটা প্রিয় ভেবেছি আমি আর তোমরা এক ঝটকায় সব শেষ করে দিলে। তোমার জন্য আমি কি করিনি বলতে পারো! তোমার মতো প্রিয় বোন থাকলে কেউ আর তার কোনো কাজিনকে বিশ্বাস করতে পারবে না। ভরসা করতে পারবে না। ভালোবাসতে পারবে না।’

প্রচন্ড কান্নায় ভেঙে পড়ে প্রিয়তা। তারা বেগম তাকে ধরে নিরবে কেঁদে গেলেন। এতক্ষণে বাসার সবাই হাজির হয়ে গেছে। প্রিয়তার কথায় শিপন সাহেব-শিলা বেগম সবাই অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। এতক্ষণে প্রিয়তার কাকা-কাকিও চলে এসেছে। তারা অবাক চোখে অনিমার দিকে তাকালেন। কেউ কিছু বলার আগেই আবারও ঠাস করে শব্দ হলো। শব্দ শুনে প্রিয়তা সামনে তাকিয়ে দেখে তার কাকি অনি আপুকে থা’প্প’ড় মেরেছে। অনিমা ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে কাকির দিকে। কাকি হিংস্র কন্ঠে বলে উঠলেন,

‘তোর মতো মেয়ে কিভাবে পেটে ধরলাম আমি! ছিঃ ছিঃ ছিঃ তুই শেষে নিজের ছোট বোনের ভালোবাসা এভাবে কেড়ে নিলি? তোর কি লাজ লজ্জা বলতে কিছু আছে? বিয়ে করে আবার সঙ সেজে কি সুন্দর করে দাঁড়িয়ে আছিস। প্রিয়তা তোকে নিজের বড় বোনের থেকেও বেশি ভালোবেসেছে আর তুই তার এতো বড় সর্বনাশ করলি! আমি আজ থেকে মনে করবো আমার একটাই মেয়ে তনি। তুই কেউ না।’

অনিমার মা আলেয়া বেগম আঁচলে চোখ মুছে প্রিয়তার দিকে এগিয়ে আসে। অনিমা মাথা নিচু করে নিঃশব্দে কেঁদে চলেছে। শিশিরও নিশ্চুপ। শিপন সাহেব-শিলা বেগম এখনো শকের মধ্যে আছে। আলেয়া বেগম প্রিয়তার মাথায় হাত রেখে বললেন,

‘মা রে আমাকে ক্ষমা করে দিস। আমার এই কালনাগিনী মেয়েটা তোর সব স্বপ্ন নষ্ট করে দিলো।’

আর কোনো কথা কানে এলো না। অতিরিক্ত শক পাওয়ায় মাথা ঝিমঝিম করতে শুরু করে প্রিয়তার। শরীরের ভর ছেড়ে দেয় তার মায়ের ওপর।

_______
রুমের দরজা বন্ধ করে চিৎকার করে কাঁদছে প্রিয়তা আর বাকি সবাই বাইরে থেকে ক্রমাগত ডেকে চলেছে। রুমে যা ছিলো পাগলের মতো সব ভেঙে চুর’মাড় করে দিয়েছে। ওরা দুজন আমাকে কিভাবে ঠকালো? কিভাবে? কাঁদতে কাঁদতে এক সময় ক্লান্ত হয়ে ফ্লোরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে শুয়ে পড়ে। ভাবতে থাকে সেই ৪ বছর আগের কথা।

প্রিয়তা রহমান৷ এবার এইচএসসি পরীক্ষার্থী। এই তো আর ৩ মাস পরেই পরীক্ষা। যখন ক্লাস ৯ এ পড়তো তখন হঠাৎ করেই ছোট মনের ভালো লাগার মানুষ হয়ে এসেছিলেন শিশির ভাই। তাদের বাসার পাশের ফ্ল্যাট টা তখন শিশিররা নতুন কিনেছে। প্রথম দিন দেখেই তার ওপর ক্রাশ খেয়ে পেট ভরিয়েছিলো প্রিয়তা। প্রথম প্রথম শিশির তেমন কথা বলতেন না। দেখা হলে শুধু মিষ্টি করে হেঁসে বলতেন, ‘কেমন আছো প্রিয়তা?’ ব্যাস এটুকুই। তার মিষ্টি হাসি দেখে হা করে তাকিয়ে থাকতো ওই ছোট মেয়ে। অনিমা প্রিয়তার ২ বছরের বড়। প্রিয়তা তাকে ছোট বেলা থেকেই প্রচন্ড রকম ভালোবাসে। প্রিয়তার বড় ভাই উদয়। অনিমা সে সময় থেকেই জানতো প্রিয়তা শিশিরকে কতোটা পছন্দ করে। ভালো লাগা টা এক সময় ভালোবাসায় পরিণত হলো। যখন প্রিয়তা কেবল ইন্টার ১ম বর্ষে ভর্তি হয় তখনই শিশির নিজেই প্রপোজ করে। কি যে খুশি হয়েছিলো সেদিন সে। তার পর থেকেই তাদের সম্পর্ক চলতে থাকে। সব ঠিক ছিলো কিন্তু মাস ২ আগে থেকে হঠাৎ করেই শুরু হলো শিশিরের অবহেলা। বুঝতো না প্রথমে। সে প্রিয়তাকে ইগ্নোর করলেও ঠিকই অনিমার সাথে জমিয়ে গল্প করতো। প্রিয়তাও স্বাভাবিক ভাবেই নিতো। মাঝে কি হলো কে জানে? আজ এতো বড় ঘটনার সম্মুখীন হতে হলো।

নিষ্প্রাণ চোখে ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে সেখান থেকে একটা কাঁচের টুকরো তুলে নেয় প্রিয়তা। হাতের শিরার ওপর নিয়ে ক্যাচ করে কয়েকটা আচড় কাটে। রক্তে ভেসে যায় পুরো ফ্লোর। নিভু নিভু কন্ঠে আওড়ায়,

‘আর কতোটা ভালোবাসলে আপনি আমার হতেন শিশির ভাই? আমার এক আকাশ ভালোবাসাও কি কম পড়ে গেছিলো আপনার কাছে? আমার থেকেও কি আপু খুব বেশি ভালোবাসে আপনাকে? আপনিময় বিরহ কি যে যন্ত্রণা! যদি জানতাম আপনিহীন কাটিয়ে আপনিময় বিরহ নিয়ে বাঁচতে হবে তবে এ পথে পা বাড়াতাম না শিশির ভাই। আপনি যে বড্ড পাষাণ তাই তো আমাকে ভাসিয়ে দিলেন আপনিময় বিরহে।’

_____

রুমে এসে উপুড় হয়ে শুয়ে কাঁদতে থাকে অনিমা। পাশেই সোফায় বসে আছে শিশির। নির্বাক সে। চোখ দুটো লাল রঙ ধারণ করেছে। অনেক সময় কান্নার পর অনিমা মাথা তুলে তাকায় শিশিরের দিকে। শিশির তখনও এক ধ্যানে ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে আছে। অনিমা কাঁদতে কাঁদতে বলে,

‘এমনটা কেন করলেন শিশির ভাই? কেন আমার ছোট বোনটা কে এতো ছোট বয়সে আপনিময় বিরহ দিলেন? কেন?’

শিশির তখনো নির্বাক। মেয়েটা বড্ড বেশি ভালোবাসে প্রিয়তাকে। সে কি ভালোবাসে না? শিশিরকে নির্বাক দেখে রেগে যায় অনিমা। দ্রুত পায়ে শিশিরের সামনে এসে তার কলার চেপে ধরে বলে,

‘কেন জোড় করে বিয়ে করলেন আমায়? কেন? আপনার জন্য আজ আমার প্রিয়ু আমাকে ভুল বুঝলো৷ আমার মা আমাকে তার কাছে মৃত হিসেবে মেনে নিলো। আপনার জন্য আজ আমার সুখের জীবন ছাড়খাড় হয়ে গেলো। এতো পাষাণ কেন আপনি? আমার প্রিয়ু তো আপনাকে এক আকাশ ভালোবাসা দিয়েছে আপনি তাকে তার বিনিময়ে এক আকাশ বিরহ কেন দিলেন?’

কাঁদতে কাঁদতেই কলার ছেড়ে শিশিরের বুকে মাথা ঠেকায় অনিমা। হিঁচকি তুলে কাঁদছে। কয়েক মিনিট অতিবাহিত হতেই শিশির শক্ত হাতে সরিয়ে দেয় অনিমাকে। অনিমা শিশিরের মুখের দিকে তাকায়। শিশির কাঠকাঠ গলায় বলে,

‘আমি ভালো করেই জানি কোনটা কার জন্য ভালো! তোমায় আমাকে শেখাতে হবে না৷ আমার প্রিয়ুর কিসে ভালো আর কিসে খারাপ হবে তাও আমি জানি৷ যা করেছি তাতে ওর ভালোই হবে।’

গটগট শব্দে চলে যায় সে। সেদিকে নিষ্প্রাণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে অনিমা। ‘আমার প্রিয়ু’ কথাটা কানে বেজে চলেছে বারংবার। এই একটা কথা তার হৃদয়ে ঝড় তুলেছে সহস্রবার। তবুও তো সে এই মানুষকে চায়নি। সে তো নিজের ছোট বোনকে সুখে দেখতে চেয়েছে এই মানুষটার সাথে। ফ্লোরে বসে ঠায় তাকিয়ে থাকে শিশিরের যাওয়ার পানে। আস্তে করে আওড়ায়,

‘আমার মনেরও বিশাল জায়গা জুড়ে ছিলেন আপনি। কিন্তু আমার ওই বাচ্চা বোনটার জন্য নিজের ভালোবাসা বিসর্জন দিয়ে তো সুখেই ছিলাম। কতো রাত আপনিময় বিরহ নিয়ে কাটিয়েছি আমি তা তো ওই উপরওয়ালা ছাড়া কারো জানা নেই। আমি তো তবুও কখনো আপনাকে চায়নি শিশির ভাই। আমি সবসময় চেয়েছি আপনি আমার বোনটার সুখের নীড় হন। তবে আজ কেন আমার বোনটাকে বিরহে ভাসিয়ে দিলেন? আমি তো আপনাকে পেয়েও পাবো না। চায়ওনি। তবে কেন আমার হলেন?’

আস্তে করে উঠে যায় অনিমা। গায়ের বিয়ের শাড়ি খুলে আলমারি থেকে একটা নতুন শাড়ি হাতে নেয়৷ এই শাড়িগুলোর ওপর ছিলো তার ছোট্ট বোনের অধিকার আর আজ সে তার অধিকার গুলো নিয়ে আছে। অদ্ভুত দুনিয়া আর তার নিয়ম।

শাওয়ার নিয়ে বেড়িয়ে এসে চুল থেকে পানি ঝড়াচ্ছে। এমন সময় হাওয়ার গতিতে ছুটে আসে অনিমার ছোট বোন তনিমা। তাকে এভাবে হন্তদন্ত হয়ে ঢুকতে দেখে ঘাবড়ে যায় অনিমা। তনিমা কোনোরকমে দাঁড়িয়ে দম নিয়ে দ্রুত কন্ঠে বলে,

‘আপুরে প্রিয়তা হাতের শিরা কেটে ফেলেছে। ওকে এক্ষুণি হসপিটালে নেওয়া হয়েছে। প্রচুর রক্ত বেড়িয়ে গেছে। শরীরও কেমন ঠান্ডা হয়ে গেছে। বাঁচবে কি না বুঝতেছি না।’

এটুকু বলেই আবার হাওয়ার গতিতে বেড়িয়ে যায় তনিমা। অনিমার মস্তিষ্ক পর্যন্ত কথা গুলো যেতেই হাত থেকে টাওয়েল পড়ে যায়। ধপ করে বসে পড়ে মাটিতে৷ এমন সময় রুমে আসে শিশির। অনিমাকে ওভাবে বসে থাকতে দেখে বলে,

‘কি হয়ছে অনি? তনিকা ওইরকম হাওয়ার বেগে কোথায় গেলো? তুমি এভাবে বসে আছো কেন?’

নিভু নিভু চোখে শিশিরের দিকে তাকিয়ে অনিমা বলে উঠে, ‘প্রিয়তা হাতের শিরা কেটে ফেলেছে শিশির ভাই। মেয়েটার নাকি শরীর ঠান্ডা হয়ে গেছে। বাঁচবে কি না বুঝা যাচ্ছে না…..

চলবে…

#আপনিময়_বিরহ (০২)
#বোরহানা_আক্তার_রেশমী
__________

এলোমেলো পায়ে হসপিটালের কড়িডোর দিয়ে ছুটে আসে অনিমা। শাড়ির আঁচল মাটিতে গড়াগড়ি করছে। চোখ থেকে অঝোর ধারায় পানি ঝরছে। হসপিটালে থাকা সবাই অবাক চোখে তাকিয়ে আছে তার দিকে। পেছনেই শিশিরও ধীর পায়ে হেঁটে আসছে। শরীরের ভার আজ তার বড্ড বেশি মনে হচ্ছে। অনিমা ছুটে এসে তনিমাকে ধরে ভাঙা ভাঙা ভাবে বলে,

‘প্রিয়ু কোথায় তনু? ‘ও’ কেমন আছে এখন?’

তনিমা কিছু বলতে যাবে তার আগেই উদয় এসে অনিমার হাত ছাড়িয়ে নিয়ে ঠা’স করে থা’প্প’ড় বসিয়ে দেয় গালে। অনিমা কান্না বন্ধ করে বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে তার দিকে। শিশির ছুটে এসে অনিমাকে ধরে। উদয় মুহূর্তেই হিংস্র রূপ ধারণ করে৷ তাঁরা বেগম ছুটে এসে ছেলেকে সরায়। সে তো মা, সে যে সবাইকে সমান ভালোবাসে। অনি আর তনি তার মেয়ে না হলেও সে কখনো নিজের মেয়ে নয় এমন ভাবেনি। অনিমাকে কোনো কিছু না বললেও সে চায় না তার ছেলে মেয়ের কোনো রকম উগ্র আচরণ। তাঁরা বেগম নিজেকে সামলিয়ে কঠোর গলায় বললেন,

‘এট কেমন ব্যবহার উদয়? তুমি ওকে থা’প্প’ড় মা’রলে কেন?’

‘ ‘ও’ কোন সাহসে এখানে এসেছে? আমার বোন ম’রে গেছে কি না তা দেখতে! আজ একমাত্র ওর স্বার্থপরতার জন্য আমার ছোট্ট বোনটা মৃ’ত্যুর সাথে লড়াই করছে।’

‘ভাইয়া!’

অনিমার কাতর কন্ঠও যেন উদয়ের মন ছুঁতে পারে না। রাগে অন্য দিকে চেয়ে থাকে। শিশির নরম গলায় বলে, ‘উদয় অনি শুধু প্রিয়তাকে একটু দেখতে এসেছে, প্লিজ তুমি…

আর কিছু বলার আগেই তেড়ে আসে উদয়। সাথে সাথে তাঁরা বেগম উদয় কে ঠা’স করে থা’প্প’ড় বসায়। রেগে বলে,

‘ছোট বোনের হাজবেন্ড কে মা’রতে যাচ্ছো? এই শিক্ষা দিয়েছি তোমাকে? তোমাার এক বোন ওদিকে মৃ’ত্যুর সাথে লড়ছে আর তুমি আরেক বোনকেও মে’রে ফেলতে চাচ্ছো! হিতাহিত জ্ঞান কি হারিয়ে গেছে তোমার?’

তাঁরা বেগমের কথায় সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। এই মহিলা এতো ভালো কেন? নিজের মেয়ের এই অবস্থা যাদের জন্য তাদের এখনো সেইভ করছে! উদয় রেগে দেয়ালে আঘাত করে চলে যায় অন্যদিকে। তাঁরা বেগম চোখ মুছে শক্ত হয়ে দাঁড়ায়। অনিমা নিজেও এতক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলো তার বড় আম্মুর দিকে। এতো কিছুর পরও তাকে একটাও কড়া কথা শোনায়নি শুধু এই একটাই মানুষ। অনিমা কাঁদতে কাঁদতে তাঁরা বেগমের কাছে এসে বলে,

‘বড় আম্মু প্লিজ একবার প্রিয়ুকে দেখতে দাও, তাহলেই আমি চলে যাবো।’

তাঁরা বেগম কঠোর গলায় বললেন, ‘ঠিক আছে, তুমি দেখা করতে পারো শুধু তোমার কাছে একটাই অনুরোধ আমার মেয়েটা কে উত্তেজিত করো না কোনো ভাবে।’

অনিমা মাথা নাড়ায়। শিশির ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে এক কোণে। মনের মধ্যে হাজারো প্রশ্ন, রাগ, ক্ষোভ তবুও সব মুখ বুঝে সহ্য করে নিচ্ছে। সবার এখন একটাই অপেক্ষা কখন প্রিয়তার সেন্স ফিরবে। প্রিয়তা তখনো অপারেশন থিয়েটারে। অতিরিক্ত মাত্রায় রক্তক্ষরণ হওয়ায় শরীর হিম শীতল হয়ে গেছিলো। ভাগ্যিস সময়মতো দরজা ভেঙে রুমে ঢুকেছিলো সবাই।

দীর্ঘ ১০ ঘন্টা পর জ্ঞান ফিরে প্রিয়তার। জ্ঞান ফিরার পরও কারো সাথে একটা টু শব্দ অবদি করে নি। অনিমা কেবিনে আসার সাহস জোগাড় করতে না পেরে এতক্ষণ বাহিরেই ছিলো, অনেক কষ্টে সাহস নিয়ে সে প্রিয়তার কেবিনে যায়। প্রিয়তা তখনো নির্বাক, নিষ্প্রাণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে উপরে চলতে থাকা সিলিং ফ্যানের দিকে। অনিমা ঢোক গিলে ডাকে,

‘প্রিয়ু!’

প্রিয়তা চোখ নামিয়ে ঘাড় কাত করে তাকায়। অনিমাকে বসে থাকতে দেখে ঠোঁট এলিয়ে হাসে। আলগোছে উঠে বসার চেষ্টা করলে অনিমা তাকে ধরে বসায়। প্রিয়তার ঠোঁটে হাসি দেখে হুট করেই ভয় পায়। তাঁরা বেগমও আসে কেবিনে। প্রিয়তা লাজুক হেঁসে অনির দিকে তাকিয়ে বলে,

‘শিশির ভাই আসেনি অনু আপু?’

কথাটা যেন হৃদয় গহ্বরে গিয়ে আঘাত করে অনিমার। তাঁরা বেগমও অজানা আশাঙ্কায় এগিয়ে আসে। শুকনো ঢোক গিলে মেয়েকে উদ্দেশ্য করে বলে,

‘তুমি এসব কি জিজ্ঞেস করছো প্রিয়তা? শিশির কেন আসবে? তুমি কি সব ভুলে গেছো?’

মুহুর্তেই চোখ মুখ হিংস্র হয়ে উঠে প্রিয়তার। হাত থেকে একটানে সুচ খুলে ফেলে। টপটপ করে রক্ত পড়তে থাকে তা থেকে। ভয়ে মেয়ের হাত চেপে ধরে তাঁরা বেগম। অনিমা দুকদম এগিয়ে আসতে নিলেই হিংস্র কন্ঠে চেচিয়ে বলে,

‘ও এখানে কি করছে? ওই বেইমান টা আসেনি? মরে গেছি কি না দেখতে এসেছো? কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা কি আরো দেবে? আর কতো টা কষ্ট দেবে তোমরা? মরার আগে অন্তত একটু শান্তিমতো মরতে দাও। বেড়িয়ে যাও, বেড়িয়ে যাও।’

পাগলের মতো চেঁচাতে থাকে প্রিয়তা। নার্স অবস্থা বেগতিক দেখে ছুটে এসে শান্ত করার চেষ্টা করে। প্রিয়তার শরীর দুর্বল হওয়ায় অল্পতেই ফের জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। অনিমা কাঁদতে কাঁদতে বেড়িয়ে যায়। তাঁরা বেগম আঁচলে মুখ গুজে কেঁদে ফেলে। তার দুই মেয়ের মাঝে এ কোন দেয়াল উঠে গেলো? এই দুইজন তো ছিলো একে অন্যের প্রাণ অথচ আজ একজন অন্যজনের প্রাণপুরুষ কেড়ে নিয়েছে আর অন্যজন তাকে দেখলেই দুর দুর করে তাড়িয়ে দিচ্ছে।

বাইরে থেকে এক পলক প্রিয়তাকে দেখে শিশিরও হসপিটাল ত্যাগ করে। অনিমাকে সাথে নিয়ে বাড়ি চলে আসে। অনিমা এসেই ওয়াশরুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে শাওয়ার ছেড়ে কাঁদছে। শিশির শুধু সেদিকে তাকিয়ে আছে। আজ আর তার কিছু করার নেই। সব তো সে নিজে হাতে শেষ করে দিয়েছে। কয়েকজনের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছে তিনটে জিবন। এখানে আসার পর থেকেই সে দেখছে অনিমা, তনিমা আর প্রিয়তাকে। প্রিয়তা বড্ড চঞ্চল প্রকৃতির, উড়নচন্ডি যাকে বলে। তবে লজ্জার আভা সবসময়ই বেশি। অনিমা শান্ত প্রকৃতির, ভীষণ বই প্রেমী। অথচ এই দুই মেরুর দুই রকমের মানুষের সে কি দারুণ মিল। একে অন্যকে প্রাণ দিয়ে ভালোবাসে। তনিমা দুষ্টু, ঠোঁট কাটা স্বভাবের। যখন তখন যা তা বলে দেয়। ৩ বোনের গলায় গলায় মিল। কতোবার যে সবার সামনেই তার আর প্রিয়তার ব্যান্ড বাজিয়েছে তার ঠিক ঠিকানা নেই। দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে শিশির। উঠে গিয়ে অনিমাকে ডাকে। অনিমার সাড়া না পেয়ে ভয় পায়। জোড়ে জোড়ে ডাকতে থাাকে অনিমাকে। এক সময় ক্লান্ত গলায় ছোট্ট করে অনিমা জবাব দিয়ে দরজা খুলে দেয়। শিশির এগিয়ে আসে অনিমার দিকে। অনিমা পলকহীন চেয়ে রয় তার দিকে। হুট করেই শিশিরের পায়ের কাছে বসে পড়ে কান্না মিশ্রিত কন্ঠে বলে,

‘আপনার পায়ে পড়ি শিশির ভাই আমার বোনটা কে বাঁচান। সে যে আপনি ছাড়া মরে যাবে। দয়া করেন আমাদের ওপর, আমাার ছোট্ট বোনটার সর্বস্ব জুড়ে শুধু যে আপনার বাস সে তো পারছে না এই ধাক্কা সামলাতে। তাকে রেহাই দিন আপনিময় বিরহ থেকে। আমি চলে যাবো আপনার জিবন থেকে শুধু আপনি প্রিয়তাকে ফের নিজের করে নিন।’

_______

গভীর রাত, তাঁরা বেগম প্রিয়তার কেবিনে মাথা ঠেকিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। তনিমাও ঘুমিয়ে আছে। শুধু ঘুম নেই সদ্য এক হৃদয় ভাঙা কিশোরীর। এক প্রেমিক পুরুষ কিছুটা সময়ের ব্যবধানেই তার সব চাঞ্চল্য, সব অনুভূতি, সব আনন্দ কেড়ে নিয়ে গেছে। দিয়ে গেছে এক আকাশ সম বিশাল বিরহ, বিষাদ আর তিক্ততা। অনুভূতিহীন জড় বস্তুর ন্যায় শুধু বেঁচেই আছে সে। অথচ ভেতর থেকে যেন আস্ত এক জীবিত লাশ। আমাদের শহরে তো কতো শতো এমন জীবন্ত, অনুভূতিহীন নারীরা বেঁচে আছে। আচ্ছা বেঁচে থাকাটা কি খুব জরুরী? মরে গেলে কি খুব ক্ষতি হয়? যেখানে তারা অনুভূতিহীন সেখানে বাঁচবে কার জন্য? এর চেয়ে তো মৃত্যুই শ্রেয়। মুহুর্তেই মস্তিষ্ক কড়া প্রতিবাদ জানায় প্রিয়তার। ক্ষেপে উঠে যেন বলে,

‘কে বলেছে মৃত্যুই শ্রেয়? মৃত্যুই সব কিছুর সমাধান নয়। বাঁচতে হলে এমন শতো বার মরতে হবে। শতো বার বেরঙ অনুভূতি গিলতে হবে তাই বলে মরে গেলে জীবনের আনন্দ কই! জীবন তো কেবল আমাদের নিয়ে প্রচন্ড মজা করে খেলতে ভালোবাসে তাই বলে আমরা মৃত্যুর পথ কেন বেছে নিবো? আর কার জন্য বাঁচবে মানে কি? যারা জন্ম দিলো, ছোট থেকে বড় করলো, স্নেহ-ভালোবাসা দিলো, বুকে আগলে বড় করলো তাদের ভালোবাসা কি জিবনে কিছুই নয়? তাদের ১৮ বছরের ভালোবাসা কি এই ২ বছরের ভালোবাসার চেয়ে অনেক ছোট? কেন তাদের জন্য বাঁচলে কি খুব ক্ষতি হবে? তোমার কি অধিকার আছে তাদের থেকে তাদের আদরের মেয়েকে কেড়ে নেওয়ার! যারা তোমাকে ভেঙে গুড়িয়ে দিলো তাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দাও তুমি ভেঙ্গে যাওনি, দ্বিগুণ শক্ত হয়েছো। জীবন মানেই তো যুদ্ধ কথাটা কি তোমার অজানা?’

প্রিয়তা মস্তিষ্কের কথা গুলো নিজে নিজে কয়েক বার আওড়ালো। মায়ের মুখের দিকে তাকালো। ইসস কি মায়ায় ভরা মায়ের মুখ! এই মায়ের জন্য, ভাইয়ার জন্য আর তার প্রাণপ্রিয় বাবার জন্য বাঁচবে। একটা বেইমানের জন্য সে কেনো মরবে? সে বাঁচবে। ভালো থাকবে। চোখের কার্নিশ বেয়ে জল গড়াতেই কারো হাতের উষ্ণ ছোয়া পায় প্রিয়তা। চোখ মেলে সেদিকে তাকাতেই দেখে তার মা তাকিয়ে আছে তার দিকে। প্রিয়তার চোখ ছলছল করে উঠে। ভাঙা গলায় বলে,

‘সরি আম্মু৷ আমার অনেক বড় ভুল হয়ে গেছে।’

তাঁরা বেগম মুচকি হেঁসে প্রিয়তার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলে, ‘আমার বুঝদার মেয়েটা এমন অবুঝের মতো করবে আমি কিন্তু ভাবতে পারিনি। অবশ্য তার আর কি দোষ? প্রণয়ের বিরহে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলো৷ তবে মা এতো সহজে ভেঙে পড়লে হবে? আচ্ছা বলো আমাদের থেকেও কি তোমার কাছে শিশির বেশি? আমাদের জন্য বাঁচা কি তোমার দায়? তবে কি আমাদের দেওয়া ১৮ বছরের ভালোবাসা তোমার কাছে তু্চ্ছ?’

প্রিয়তা মাথা নাড়িয়ে বলে, ‘না। তোমরাই আমার সব। আমি তোমাদের জন্য বাঁচবো আম্মু। শিশির ভাই আর অনু আপু ভালো থাকুক। ওরা সুখী হোক অনেক।’

প্রিয়তা শব্দ করে কেঁদে দেয়। তাঁরা বেগম মেয়েকে বুকে আগলে নেন। তার কলিজার টুকরা ছেলে মেয়ে। এভাবে কষ্ট পাচ্ছে আর সে কিছু করতে পারছে না। তবে প্রিয়তা যে বুঝেছে এটাই অনেক। হয়তো নিজেকে সামলাতে সময় লাগবে তবুও ভুল পদক্ষেপ আর নিবে না। এমন ভাবে যদি সবাই বুঝতো তবে হয়তো এ সমাজে আত্মহত্যার চিহ্ন থাকতো না। তাঁরা বেগম দীর্ঘশ্বাস ফেলে মেয়ের মাথায় হাত বুলাতে থাকে।

___________

রাতের গভীরতা বেড়ে চললেও ঘুম নেই অনিমা আর শিশিরের চোখে। অনিমা জানালার সাথে হেলান দিয়ে বসে বাহিরে তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে। আর শিশির ছাঁদে গেছে। প্রিয়তার মতো এই দুজনেরও হয়তো আজ বিরহের রাত। অথচ বিয়ের রাতকে সবাই বাসর রাত বলে। অনিমা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। শাড়ি ঠিক করে হাঁটা লাগায় ছাঁদের উদ্দেশ্যে। ছাঁদের এক কোণে একজন পুরুষ অবয়ব দেখে সেদিকে এগিয়ে যায়। পাশে দাড়াতেই শিশির ঘুরে তাকায়। অনিমাকে দেখে চোখ ঘুরিয়ে আবার সামনে তাকায়। অনিমা ছোট একটা শ্বাস ফেলে বলে,

‘আপনি কিন্তু তখন উত্তর না দিয়েই বেড়িয়ে এসেছেন।’

‘কিসের উত্তর?’

‘প্রিয়ুকে নিজের কাছে ফেরাবেন না?’

‘সম্ভব না। তাছাড়া এখন আমি বিবাহিত।’

‘বিয়েটা মন থেকে আপনিও মানেন না আমিও মানি না। তবে কিসের বিয়ে? জোড় করে বিয়ে করেছেন। যার কোনো ভ্যালু নাই। প্রিয়ু আপনাকে ভীষণ ভালোবাসে ওকে ফিরিয়ে নিন নিজের জীবনে।’

মুহুর্তেই যেন রেগে যায় শিশির। হাত মুষ্টিবদ্ধ করে চোয়াল শক্ত করে বলে, ‘সেইটা সম্ভব হলে তোমাকে বিয়ে করতে হতো না আমার।’

গটগট শব্দ তুলে চলে যায়। নিষ্পলক সেদিকে তাকিয়ে অনিমা আস্তে করে বলে, ‘একদিন আপনি প্রিয়ুকেও হারাবেন আমাকেও হারাবেন শিশির ভাই। অবহেলা খুব খারাপ। আমি চাই না আপনি আমাকে ভালোবাসুন আপনি আমার বোনটাকে আজীবন ভালোবেসে যান। আমি মুক্তি দিয়ে যাবো আপনাকে।’

চলবে..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে