#আপনাকেই_চাই
#Sumaiya_Moni
#পর্ব_০৭
________________________
আজ হামিদা বানু ও আজমল রহমানের বিবাহ বার্ষিকী। এই উপলক্ষে কম বেশি আত্মীয় স্বজনদের দাওয়াত দিয়েছে আজমল রহমান। কিছুক্ষণ আগেই অহানের সাথে কথা বলেছে তারা।অহান বেশি কথা বলতে পারেনি। অফিসে কাজ ছিল তাই। ইহিতা আজকে আরমানে দেওয়া খয়েরী রঙের শাড়ি পড়েছে। আরমানের কথা মতো হালকা সেজেছে।
নিজেকে আয়নায় দেখে ড্রইংরুমে বের হয়ে মেহমান দের সাথে কথা বলতে থাকে। সময় কাঁটতে থাকে। আরমান আজ অফিস থেকে তাড়াতাড়ি ছুটি নিয়েছে। কিছুক্ষণ আগেই ইহিতা আরমানের সাথে কথা বলেছে। দশ মিনিট আগেই অফিস থেকে গাড়ি নিয়ে বের হয়েছে আরমান। এখন নয়টা বাজতে চলল। আরমানের এখনো কোনো খবর নেই।ইহিতা আবার আরমানকে ফোন দেয়। আরমান ফোন রিসিভ করে বলে সে মার্কেটে আছে। আব্বু-আম্মুর জন্য গিফট কিনছে। ইহিতা আরমানকে তাড়াতাড়ি আসতে বলে বাসায়।এটাও বলে সবাই তার জন্য অপেক্ষা করছে। আরমান গিফট নিয়ে গাড়ির পিছনে রেখে ড্রাইভিং সিটে বসে। হঠাৎ কোথা থেকে একটি চলন্ত ট্রাক তার ব্যালেন্স হারিয়ে আরমানের গাড়ির দিকে ধেয়ে আসছে সামনে থেকে। শেষ মুহূর্তে আরমান মুখ থেকে “ও শীট” বলেই গাড়ি স্টার্ট দিয়ে স্টিয়ারিং ধরে ডান দিয়ে গুরিয়ে দেওয়ার আগেই ট্রাকটি এসে সজোরে ধাক্কা দেয় আরমানের গাড়িকে। গাড়ি ছিটকে বহু দূরে গিয়ে পড়ে উল্টিয়ে যায়। সিট বেল্ট পড়া ছিল না বিধায় গাড়ির সামনের কাঁচ ভেঙে গাড়ি থেকে বাহিরে বেরিয়ে আসে আরমান। গলায় গেঁথে যায় লম্বা কাঁচের টুকরো। রক্তাক্ত ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় রাস্তায় পড়ে থাকে। শেষ নিঃশ্বাস টুকু টেনেই মৃত্যু বরন করে আরমান। লাস্ট মুহূর্তে দেখতে পারল না তার মা-বাবাকে,তার প্রিয় প্রেয়সীকে!
এদিকে অপর পাশে ইহিতা হ্যালো,হ্যালো বলেই যাচ্ছে। লাইন কেটে যাওয়ায় ইহিতা অস্থির হয়ে গেছে। বার বার আরমানের ফোন ট্রাই করছে। কিন্তু ফোন সুইচ অফ আসছে। উত্তেজিত হয়ে কথাটা যখন আজমল রহমানকে জানায় তখনি সে ইহিতার বলা আরমানের লোকেশনে যায়। এবং জানতে পারে আরমানের গাড়ি এক্সিডেন্ট করেছে।সেখানেই মারা গেছে আরমান। রাস্তায় তার বড় ছেলের মৃত দেহখানা পড়ে থাকতে দেখে। ছেলের রক্তমাখা মুখ দেখে তিনি কিছুক্ষণের জন্য স্তব্ধ হয়ে যায়। পড়ে যেতে নিলে কিছু লোক তাকে ধরে একটি চেয়ারে বসায়৷ আজমল রহমান চোখের চশমা খুলে পাশে রাখে। কাঁপা কাঁপা হাতে পাঞ্জাবির পকেট থেকে বাটন ফোন বের করে ইহিতার নাম্বারে ফোন দেয়। ইহিতা ফোন পেয়েই চট করে রিসিভ করে। উত্তেজিত হয়ে বার বার আজমল রহমানকে জিজ্ঞেস করে আরমানের কথা। আজমল রহমান কিভাবে বলবে বুঝতে পারছে না। কিন্তু সত্য টা তো বলতেই হবে। মেনে যে নিতে হবে। এটাই যে নিয়ম!
তিনি দ্বিধাদ্বন্দ্ব ফেলে বলে ফেলে আরমানের মৃত্যুর খবর। শুনেই ইহিতা কান থেকে ফোন ফেলে মাটিতে বসে পড়ে।মনে হচ্ছে ওঁর দুনিয়া উল্টে গেছে। পায়ের নিচটা বেশ শূন্য মনে হচ্ছে। হামিদা বানু ফোন উঠিয়ে কানে নেয়। আজমল রহমানের কান্না শুনে বুঝে যায় সে। জ্ঞান হারিয়ে ফেলে সেখানেই।
এত সুন্দর করে সেজেছে। আরমানের দেওয়া শাড়ি পড়েছে।
অথচ যাকে দেখানোর জন্য এসব করেছে। সে তো চিরতরে ঘুমিয়ে গেছে। চলে গেছে না ফেরার দেশে। বাবা,মায়ের বিবাহ বার্ষিকী হলো ছেলের মৃত্যু দিন। এখন এই দিনে দু’টি বার্ষিকী উৎযাপন হবে! কী চড়ম পরিহাস। ইহিতা সেদিন ভেতর থেকে প্রচুর ভেঙে পড়েছে। স্বামীকে হারিয়ে নিঃস্ব! কূলকিনারা হীন। সেদিন প্রচুর কেঁদেছিল ইহিতা। আর আজ সেদিনের মতো কাঁদছে। প্রচুর কাঁদছে!
কাঁদবেই না কেন! অহানকে নিজের ছেলের মতো মনে করত। স্বামীর স্থানে কখনো ভাবতেও পারেনি। আর ভাবতেও চায় না। সবার কাছে নিজের ছেলে হিসাবে পরিচয় করাতো। সেটা অহানের আড়ালে। আজ তাঁর কাছ থেকে এমন ব্যবহার আশা করেনি ইহিতা। ভেতরটা ভেঙে চূড়মার হয়ে গেছে। চোখে পানি স্রোতের মতো গলগল করে বয়ে যাচ্ছে। সেদিনের মতো আজ নিজেকে বড় একা মনে হচ্ছে। বড্ড একা!
.
.
অন্যপ্রান্তে…..
-“কেন? আমি তোর ভালোবাসা এক্সেপ্ট করিনি তাই। রিজেক্ট করেছি বলে প্রতিশোধ নিয়েছিস।” রেগে বলে অহান।
আনিকা তাচ্ছিল্য হেসে বলে,
-“তোর ভালোবাসা! হুহ! আমার জীবনে যদি কোনো ভুল করে থাকি। সেই ভুলটা তোকে ভালোবেসে করেছি। তোর মতো ছেলেকে ভালোবাসা তো দূর বন্ধু ভাবাও উচিত নয়।”
-“আনিকা। তুই কিন্তু বেশি কথা বলছিস।” রেগে আঙ্গুল তুলে বলে অহান।
এবার রিফাত মুখ খুলে অহানের সামনে দাঁড়িয়ে বলে,
-“বেশি! আনিকা ঠিকিই বলেছে। ভুল কিছু বলেনি।”
-“তুইও ওর সাথে হাত মিলিয়েছিস।”
-“তুই সব সময় নিজের মতো কেন মনে করিস মানুষকে বলতে পারিস। মাইন্ড চেঞ্জ কর। আর কি বললি,কেন বলেছি তোর আম্মুকে তোর বিষয় সব কিছু। তুই কি জানিস,কতটা চেঞ্জ হয়ে গেছিস তুই! কতটা অমানুষে পরিনত হয়েছিস তুই!একবার আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দেখ নিজেকে। এই অহান আর আগের অহানের মধ্যে তফাৎ খুঁজে পাবি।আরমান ভাইয়া মারা যাওয়ার পর তোর উচিত ছিল এখানের চাকরি ছেড়ে আন্টি,আঙ্কেলের কাছে ফিরে যাওয়া। কিন্তু তুই? ফিরে যাওয়া তো দূর,তাদের কাছে একটা ফোন পর্যন্ত করতি না। এখানে তুই তোর মতো ভালো আছিস। আর ঐ দিকে,আঙ্কেল আন্টি,ভাবি আরমান ভাইয়ার মৃত্যুর শোক এখনো কাঁটিয়ে উঠতে পারেনি। আরমান ভাইয়া মারা যাওয়ার পাঁচদিন পর তুই চলে আসিস চায়না। যাক ভালো, এখানে এসে এট লিস্ট তাদের সাথে যোগাযোগ তো করবি। তারা তোকে কল দিয়ে পায় না। তুই তাদের ফোন ধরিস না। ইগনোর করিস। আমার কাছে,রিফাতের কাছে ফোন দেয় তারা। আমরা তো আর তোর মতো স্বার্থপর না। আমরা তাদের সাথে ঠিকি কথা বলি। কিন্তু যখন তোর কথা জিজ্ঞেস করে তখন মিথ্যে বলি। কারণ সত্যি বললে…।” এটুকু বলে আনিকা দম নেয়।
রিফাত বলতে শুরু করে।
-“ছোট থেকে আমরা তিনজন এক সাথে বড় হয়েছি। তুই আমাদের কেমন বন্ধু মনে করিস সেটা জানি না। তবে আমরা তোকে আমাদের কলিজার বন্ধু মনে করি। আমি তোর দ্বারা অনেক কষ্ট পেয়েছি। কিন্তু মুখ ফুটে কখনোই সেটা প্রকাশ করিনি। মনে করেছি। বন্ধু তো! কিন্তু সেদিন যখন তোর জ্বর হয়েছিল। ভাবি যখন আমাকে ডেকেছিল তখন সেই রাতের কথা মনে পড়ে যায়।সেই রাতে অনেক অসুস্থ ছিলাম আমি। জ্বর ছিল প্রচুর। সারা রুম জুড়ে কেবল আমি একাই ছিলাম। এক গ্লাস পানি ঠেলে দেওয়ার মানুষ পর্যন্ত ছিল না আমার পাশে। অতি কষ্টে তোকে আমি ফোন দেই। কিন্তু কপাল এতোই খারাপ ছিল তুই আমাকে একটি বারের জন্য দেখতে আসিস নি।উল্টো বলিস মেডিসিন নিয়ে ঘুমিয়ে পড়। তারপর ফোন রেখে অন্য কারো সাথে ব্যস্ত হয়ে পড়িস বেডে। সেদিন আমি রিয়েলাইজ করি আজ যদি আমার বাবা-মা পাশে থাকতো তাহলে এমনটা হতো না। তুই তো নিচ তলায় থাকতি। একবারও কি পারলি না আমার কাছে আসতে। দুঃখে,কষ্টে সেদিন এক মুহূর্তের জন্য মন চাইছিল মরেই যাই। নিজের কলিজার বন্ধু জাকে মানি, সে আমার কোনো মুল্যই করল না।অথচ সেদিন ভাবি তোর অসুস্থের কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে আমি তোর কাছে ছুটে যাই। ভাবি আমি সারা রাত তোর সেবা যত্ন করি। অনেক অসুস্থ ছিলি সেদিন। তোর সেবা যত্ন করতে গিয়ে আমার সেদিনের কথা মনে পড়ে গিয়েছিল। কিন্তু আমি তোয়াক্কা করিনি। সব কিছু ভুলে তোর পাশেই বসে থাকি। আমি পারতাম ভাবির বলার বল তোর কাছে না যেতে। সেদিন তোর মতো স্বার্থপরতা দেখাতে। কিন্তু আফসোসের বিষয় আমি পারলাম না। কারণ তোর মতো যে আমি না।”
এতক্ষণ অহানের নজর ওদের উপর থাকলেও এখন অহান ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে আছে। চুপ করে দাঁড়িয়ে রিফাত ও আনিকার কথা গুলো শুনছে। আনিকা ফের বলতে আরম্ভ করে,
-“আমি তোর বাবা-মায়ের কাছে এসব বলতে চাইনি। কিন্তু কত দিন মিথ্যে কথা বলা যায় বলতে পারিস। তুই তো তাদের সাথে কথাই বলিস না। তারা আমাদের কাছে ফোন দিয়ে বার বার তোর কথা জিজ্ঞেস করতো। রিফাত,আমি মিথ্যে কথা বলে বলে হাপিয়ে উঠেছি। তাই সেদিন সব সত্যি কথা বলে দেই আন্টিকে। তাঁর গুনধর ছেলে এখানে কত মহৎ কাজে ব্যস্ত থাকে। যার কারণে বুড়ো বাবা-মায়ের খোঁজ পর্যন্ত একবার নিতে পারে না। তুই এতটা পাষাণ কেন বলতে পারিস অহান। বলবিই বা কি করে? আন্টি একদিন আমাকে ফোন দিয়ে বলে ভাবির সাথে নাকি তোর বিয়ে দিবে। আর সেটা ফেইক বিয়ে হবে। বিয়ে সত্যি হোক বা মিথ্যে,ভাবি রাজি ছিল না। তবুও,আন্টির কথা রাখতে তোর বিষয়ে সব কিছু শুনে সে রাজি হয়। তোকে চায়না থেকে ডেকে নিয়ে মিথ্যে একটা বিয়ের নাটক করে। ভাবি যথেষ্ট সেনসেটিভ ছিল। এমন ভাবে তোর সাথে আচরণ করে,মনে হয়েছে তোর সাথে তাঁর বিয়ে হয়েছে। এখানে এসে ইহিতা ভাবি লেগে পড়ে তোকে ভালো বানানোর মিশনে। কিন্তু ভাবি,আন্টি,আঙ্কেল এটা জানে না একজন পশুকে কখনো মানুষ বানানো যায় না। তার মধ্যে পশুজাত টা থেকেই যায়।”
ইহিতার সাথে ওঁর বিয়েটা মিথ্যে ছিল কথাটা শুনে অহান হাঁটু গেড়ে ফ্লোরে বসে পড়ে। নিজের ভুলটা বুঝতে পারে অহান। আনিকা আরো বলে,
-“ভাবির সাথে এখানে এসেছিস পাঁচ মাস হয়েছে। কিন্তু তবুও একবার ফোন দিসনি আন্টি আঙ্কেলকে। ভাবি বলেছিল। কিন্তু বলে কয়ে যে মানুষকে কাজ করানো যায় না। আসলে তোর তাদের প্রতি কোনো মায়া,মহব্বত ছিলই না। যদি থাকতো তাহলে তুই আন্টিকে এতো ভয় পেতি না। তুই তো একটা পাষাণ মনের মানুষ। আচ্ছা অহান,তোর মাথায় কি কখনো কাজ করেছি। ভাবির সাথে বিয়ে পর মনে হয়নি বিয়েটা সত্যি ছিল নাকি মিথ্যে? আরমান ভাইয়া মারা গেছে এক বছর হয়েছে। তাকে ভুলে ভাবি তোকে বিয়ে করেছে। তোর সাথে সংসার করতে শুরু করেছে। এটাই ভেবেছিলি তাই তো। তোর কাছে অজানা অনেক কিছু। আরমান ভাইয়া মারা যাওয়ার পর ভাবি পাগল ছিল প্রায় চার মাস। সারাদিন নতুন শাড়ি পড়ে সেজে বসে থাকতো। খালি বলতো আরমান এখনি আসবে। তাকে সামলাতে পরাতো না কেউ। ঐ সেই সিচুয়েশনে তোর পরিবারের তোকে খুব প্রয়োজন ছিল। তোকে তাঁদের পাশে চেয়েছিল তারা। বলতে চেয়েছিল কিভাবে তারা বেঁচে আছে। কিসের মধ্যে দিয়ে তারা দিন কাঁটাচ্ছে।কিন্তু তুই তো তাদের ইগনোর করে গিয়েছিস।” লাস্টের কথা বলে আনিকা কান্না করে দেয়।
রিফাতের চোখেও পানি টলমল করছে। অহান পাথরের মতো বসে আছে মাথা নত করে। আনিকা ঢোক গিলে শান্ত হয়ে বলে,
-“ভাবির স্বাভাবিক হতে অনেকটা সময় লাগে। যখন সে সুস্থ হয়। তখন আন্টি সত্যিই চেয়েছিল ভাবির সাথে তোর বিয়ে দিতে। কিন্তু ভাবি না করে দেয়। কারণ সে এখনো আরমান ভাইয়াকেই ভালোবাসে।স্বামী হিসাবে তাকে ছাড়া অন্য কাউকে ভাবতেই পারে না। তাঁর প্রথম ও শেষ ভালোবাসা আরমান ভাইয়া।ভাবি হিসাবে থাকলে তুই তার কথা শুনতি না। আগের দিন গুলোর মতোই তাকে ইগনোর করতি । তাই মিথ্যে বিয়ে হয় তোদের। তোর সাথে মিথ্যে বিয়ে হবার পর,ভাবি এখানে এসে সবার কাছে কি বলতো জানিস। তুই তাঁর ছেলে। সবাইকে তোর ভালো গুনগান গেয়ে বেড়াতো। সেদিন সেই মেয়েটির কানে কানে তোকে ছেলে হিসাবে সম্মোধন করেছে। এটাও ভাবি আমাকে বলেছে। বড় ভাবি তো মায়ের মতোই হয় তাই না। কিন্তু তুই তো তার অনেক ভাবে ক্ষতি করার চেষ্টা করেছিস। আল্লাহ তাঁর সাথে ছিল বিধায় সে বেঁচে গেছে। কিন্তু ভাবি ব্যর্থ। যাকে ভালো বানাতে চেয়েছে। সে তো কখনোই ভালো হবে না। আজ নিজের চোখে দেখে বুঝলাম।নিজে থেকে নিজেকে কখনোই চেঞ্জ করবে না।এমনি রয়ে যাবে আজীবন। জোর করে আর যাই হোক,ভালোবাসা আর মানুষকে ভালো পথে ফিরিয়ে আনা যায় না।”বড়ো নিঃশ্বাস নিয়ে বলে আনিকা।
ড্রইংরুম জুড়ে নিরবতা বিরাজ করে। আনিকা চুপ হয়ে যাওয়ার পর ড্রইংরুম নিরব হয়ে যায়। আনিকা নিরবচ্ছিন্ন করে ফের বলে,
-“তোকে ভালোবেসে আমি শুধু অবহেলা পেয়েছি। আমি সেদিন ভুল করেছিলাম তোকে আমার মনের অনুভূতি গুলো বলে। তাইতো আমাদের মাঝে বন্ধুত্ব টা নষ্ট হয়েছে। আমি আমার লাইফে ভুল একটি মানুষকে ভালোবেসে ছিলাম। আশা করি ভুলটা খুব তাড়াতাড়ি শুধরে নিবো।”বলেই রুমে চলে যেতে নিলে থেমে গিয়ে বলে,
-“সবার জন্য না হলেও অন্তত নিজের জন্য একজন ভালো মানুষ হয়ে উঠ। সামনে গোটা লাইফ পড়ে আছে তোর। এভাবে শেষ করে দিস না জীবনটা। উপরে আল্লাহ সব দেখছে। আখেরাতে তোর প্রতিটি কাজের হিসাব চাইবে আল্লাহ। ভেবে দেখ দিতে পারবি তো হিসাব! না দিতে পারলে তখন আল্লাহ তোকে ছেড়ে দিবে না।”অসহায়ত্ব স্পষ্ট কন্ঠে বলেই চলে যায় আনিকা।
আগের ন্যায় মাথা নত করে বসে আছে অহান। ড্রইংরুমে আবার আগের মতো পিনপতন নীরবতা বিরাজ করছে। রিফাত ভারী নিশ্বাস ফেলে অহানকে ধরে উঠাতে নিলেই অহান রিফাতের হাত সরিয়ে উঠে বাহিরে চলে যায়। সিঁড়ি বেয়ে মাথা নত করে নামতে থাকে। রিফাত গেটের সামনে দাঁড়িয়ে অহানের যাওয়া দেখছে। অহানের চোখের কার্ণিশে জল জমেছে। ছন্ন-ছাড়া হয়ে রাস্তার মাঝখান দিয়ে হাঁটছে।রাস্তা গাঢ় অন্ধকারে ঢাকা নয়। দূরে ল্যাম্পপোস্টের আলো নিভু নিভু হয়ে জ্বলছে।ইষৎ আলো ছড়িয়ে আছে চারদিক।ঘড়িতে তখন বারোটা ছুঁই ছুঁই। ধূলো উড়িয়ে বাতাস ছুটছে রাস্তায়। দেখে মনে হচ্ছে ঝড় হতে পারে! অহানের বুকেও ঝড় বইছে। নিজেকে পৃথিবীর উচ্ছিষ্ট মনে হচ্ছে! বুকে রক্তক্ষরণ বয়ে যাচ্ছে। প্রানপয় ভেবে যাচ্ছে এ কি করল সে! মায়ের মতো ভাবিকে না জেনে বুঝে স্ত্রীর অধিকার চেয়ে কাছে টেনেছিল! মারাত্মক ভুল করেছে সে। এতদিন মারাত্মক ভুল করে এসেছে তার বাবা-মায়ের সাথে।
কিন্তু সে তো সত্যিটা জানত না। আসলেই কি সে মারাত্মক ভুল করেছে স্ত্রীর অধিকার চেয়ে! তার তো জানা ছিল ইহিতার তার বউ নয় ভাবি! তবুও,মন মানছে না। নিজেকে আজ অপরাধী বলে মনে হচ্ছে। এত গুলো মানুষকে সে এতদিন কষ্ট দিয়ে এসেছে। আর আজ মাত্রাধিক কষ্ট দিয়ে ফেলেছে। মাফ চাইবে তাদের কাছে। কিন্তু পারবে কি তারা ওঁকে মাফ করতে? পারবে কি অহান আগের মতো সব ঠিক করে দিতে? চায় না এমন লাইফ! হতে চায় সে আগের অহান। সেই ছোট্ট নিষ্পাপ অহান। যার মনে ছিল না কোনো অহংকার,হিংসা,লালসা!
.
.
.
.
.
.
.
Continue To……