#আপনাকেই_চাই
#Sumaiya_Moni
#পর্ব_০৫
________________________
মিটমিট করে চোখ মেলে তাকায় অহান।মাথাটা কেমন ভার ভার লাগছে। কাল রাতের কথা তেমন একটা মনে নেই। উঠে বসতে যাবে তখন খেয়াল করে গায়ে ভার কিছু একটা আছে।
আর সেটা কম্বল। চার-পাঁচটা কম্বল গায়ের উপর। ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে উঠে বসে। ঘাড় ঘুরিয়ে ডান দিকে তাকাতেই ইহিতাকে বিছানার পাশের টুলে বসে আপেল খেতে দেখতে পায়। ইহিতা অহানকে বিছানায় উঠে বসে ওর দিকে তাকাতে দেখে ভ্রু উঁচু করে,যার মানে ‘কী?’। অহান চোখে মুখে বিরক্তি ভাব ফুটিয়ে তুলে অন্য দিকে তাকাতে যাবে তখনি নিজেকে বিবস্ত্রহীন মনে করে।
নিজের দিকে তাকিয়ে কম্বল একটু ফাঁকা করে দেখেই জোরেশোরে চিৎকার দেয়। অহানের চিৎকার মাঝ পথেই থেমে যায়। কারণ ইহিতা ওর খাওয়া আপেলের অবশিষ্ট অংশ চট করেই অহানের মুখে পুরে দেয়। চিৎকার বন্ধ হয়ে যায় অহানের।
ড্রইং রুমে বসে রিফাত চা খাচ্ছিল। অহানের চিৎকার কানে আসতেই হকচকিয়ে উঠতেই চায়ের কিছু অংশ পায়ের উপর পড়ে। গরম চা থাকায় পা জ্বলছে।তবুও,সেটা তোয়াক্কা না করে রিফার দ্রুত অহানের রুমে আসে। উত্তেজিত কন্ঠে বলে,
-“কি হয়েছে,কি…..”
বাকিটা বলেই থেমে যায় রিফাত। অহানের মুখে আপেল দেখে ইহিতা ও অহানের দিকে প্রশ্নবোধক চাহনিতে তাকায়।
অহান আপেলটি মুখ থেকে বের করে রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ইহিতার দিকে। ইহিতা টুল ছেড়ে উঠে রিফাতের কাছে যেতে যেতে বলে,
-“হাহ! তোমার বন্ধু মনে করেছে কাল রাতে আমি তাঁর কাপড়চোপড় পাল্টিয়েছি। এটা ভেবে মেয়েদের মতো চিৎকার দিলো। আমি ওঁকে থামানোর জন্য মুখে আপেল গুঁজে দিলাম।”
রিফাত নিচের দিকে তাকিয়ে হাসে।ইহিতা অহানের দিকে তাকিয়ে বলে,
-“শোনো অহান গাধা! কাল রাতে আমি নয় বরং রিফাত তোমার গায়ের জামা খুলে তোমার সাথে ঘুমিয়েছিল। বৃষ্টিতে ভেজার ফলে তোমার জ্বর উঠেছিল কাল। নেক্সট টাইম যদি বৃষ্টিতে ভিজতে গিয়েছো তবে….কি হবে বুঝতেই পারছো। এবার যাও ফ্রেশ হয়ে নেও। আর হ্যাঁ,আজ অফিসে যাওয়া লাগবে না। ফোন করে বলে দিও অফিসে।” লাস্টের কথা বলেই ইহিতা চলে যায়।
রিফাত ঠোঁটে হাসি রেখে অহানের পাশের টুলে বসে বলে,
-“এখন কেমন লাগছে তোর শরীর?”
-“ভালো!” বলেই আপেলটা সেখানে থাকা জানালা দিয়ে বাহিরে ছুঁড়ে মারে। বিরক্তিকর ভাব নিয়ে বিছানা থেকে নেমে ওয়াশরুমে যায়। রিফাত সরু নিশ্বাস ফেলে মনে মনে বলে,
-“কবে যে বুঝবি। আল্লাহ তোকে বোঝার ক্ষমতা দিক।”
রিফাত বাসায় চলে যায়। অহান ফ্রেশ হয়ে রুম থেকে বের হয়ে ড্রইং রুমে আসে। ইহিতা আগেই নাস্তা টেবিলে রেখে দিয়েছিল। সোফায় বসে খেতে খেতে অফিসে ফোন দিয়ে বলে দেয় আজকে আসবে না। অসুস্থতার কথা শুনে বস আজকে ছুটি দেয়। অহান খাবার খেয়ে বাহিরে যেতে নিলে ইহিতা হাত বগলদাবা করে দাঁড়িয়ে পিছন থেকে ডাক দেয়।অহান থেমে গিয়ে পিছনে ফিরে তাকায়। জানে সে কি বলবে।
ইহিতা বলে,
-“অফিসে যেতে নিষেধ করেছি অসুস্থতার জন্য। বাহিরে ঘুরার জন্য নয়।”
-“তো?”
-“বাহিরে যেতে পারবে না।”
-“আমি এখন সুস্থ আছি।”
-“তাহলে তো কোনো সমস্যাই নেই।” বলেই ইহিতা অহানের হাত ধরে সোফায় বসিয়ে রান্না ঘরে যায়। অহান বুঝতে পারছে না ইহিতা কি করতে যাচ্ছে। উঁকি মেরে দেখতে নিলেই ইহিতা ফিরে আসে। অহান চোখ সরিয়ে ঠিক মতো বসে।
ইহিতা অহানের হাতে একটি ছুরি ও একটি সবজির বোল দিয়ে বলে,
-“এগুলা সব কাঁটো।”
অহান ইহিতার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে বলে,
-“আমি!”
-“তুমি ছাড়া এখানে উপস্থিত আর কেউ নেই। আর সকালের নাস্তা আমি বানিয়েছি। তাই এখন তুমি আমায় হেল্প করবে।”
অহান অকপটে কাঠ কাঠ কন্ঠে বলে,
-“পারবো না।”
-“ওহ! আম্মুর সাথে কাল কথা বলেছিলাম। সকালে কথা হয়নি।এখন একটু কথা বলার দরকার। ” থুতনিতে হাত রেখে উপরের দিকে তাকিয়ে বলে ইহিতা।
এটা শুনে অহান দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
-“কাঁটছি!”বলেই সবজি গুলো কাঁটতে শুরু করে।
ইহিতা এটা দেখে রান্না ঘরের দিকে পা বাড়ায়। মুচকি হেসে মনে মনে বলে,
-“জানি তো,এমনটাই হবে।”
মুখে বিরক্তির ‘ব’ ঝুলিয়ে রেখে সবজি গুলো কাঁটছে অহান।
কিভাবে যে এই জ্বালা যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাবে নিজেও জানে না। মন চাইছে ছুরি দিয়ে ইহিতাকে মেরে দিতে। কিন্তু এমনটা করার সহস ওর মধ্যে বিন্দু মাত্রও নেই। খুব দ্রুত সবজি কেটে রান্নাঘরে রেখে আসে। সোফায় এসে বসতেই ইহিতা কতগুলো সেদ্ধ করা মটরশুঁটি দিয়ে যায় খোশা ছড়ানোর জন্য। অসহায় চোখে ইহিতার দিকে অহান তাকায়৷ ইহিতা কঁড়া গলায় বলে,
-“কোনো কাজ হবে না এভাবে তাকিয়ে। তাড়াতাড়ি খোশা ছড়াও।”
চোখ সরিয়ে নেয় অহান। ইহিতা ফের রান্না ঘরে চলে যায় অহান হতাশ হয়ে মটরশুঁটির খোশা ছড়াতে থাকে।
প্রায় অনেকক্ষণ পর কলিং বেল বেজে উঠে। ইহিতা রান্না ঘর থেকে চিল্লিয়ে গেট খুলতে বলে। অহান মুখ থেকে ‘চ’ উচ্চারণ করে উঠে গিয়ে দরজা খুলে দেয়। দরজা খুলতেই অহানের মনের মধ্যে ঘন্টি বেজে যায়। কারণ ওর সামনে একটি সুন্দরী মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আর এই মেয়েটি নতুনে ওঁর পাশের ফ্ল্যাটে শিফট হয়েছে। মেয়েটিকে দেখে বাংলাদেশি বলে মনে হচ্ছে। মেয়েটি মুচকি হেসে অহানের উদ্দেশ্যে বলে,
-“আপনি বাংলাদেশি?”
অহান মাথা ঝাঁকিয়ে বলে,
-“হ্যাঁ!”
মেয়েটি খুশি হয়ে বলে,
-“ওয়াও!আসলে আমি নতুন ভাড়াটিয়া। আপনি কি আমাকে হেল্প করতে পারবেন?” লাস্টের কথাটি চোখ পিটপিট করে বাচ্চাদের মতো করে বলে।
কথাটা শুনেই অহান গলে হালুয়া হয়ে যায়। মেয়েটিকে কিছু বলতেই যাবে।তখনি ইহিতা অহানের শার্টের কলার পিছন থেকে টেনে ভিতরে নিয়ে এসে মেয়েটির সামনে দাঁড়িয়ে পা থেকে মাথা পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করে। মেয়েটির পরনে ছেঁড়া প্যান্ট। মানে হাঁটুর অংশ ছেঁড়া আর কি। আর হাতা কাঁটা গেঞ্জি। চেহারায় মনে হচ্ছে আটা ময়দা মেখে সব শেষ করে দিয়েছে। পুরাই সাদা বিড়ালের মতো লাগছে মেয়েটিকে। ইহিতা মেয়েটির কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে,
-“শোন ময়দা মাখা চুন্নিবিল্লি। আমার…. (এটা কি বলেছে সেটা ইহিতাই ভালো জানে) নজর দিলে,তোর চেহারায় পঁচা পানি দিয়ে ধুয়ে দিবো। আবার যদি আমার…. সাথে কথা বলার চেষ্টা করেছিস। তবে তোকে মেরে আমার শ্বাশুড়ির মতো খয়রাত দিবো। এখন এখানে থেকে ভাগ!”শেষের টা বলেই ইহিতা মেয়েটির মুখের উপর দরজা লাগিয়ে দেয়।
মেয়েটি হতবিহ্বল নজরে দরজার দিকে তাকিয়ে আছে। সামান্য হেল্প চাওয়ার জন্য এত কথা শুনতে হলো। মাথা চুলকাতে-চুলকাতে চলে যায় তাঁর ফ্ল্যাটে।
ইহিতা পিছনে ঘুরে অহানের দিকে তাকিয়ে চোখের ইশারায় হাত দিয়ে গলা কেঁটে ফেলার ভয় দেখিয়ে কিচেনে চলে আসে। অহান ইহিতার এমন ভয়াবহ ওয়ার্নিং দেখে বুকে হাত দিয়ে সোফায় বসে পড়ে । চোখের মনি এদিক সেদিক নাড়িয়ে জোরে নিশ্বাস নেয়।
সারাদিন ইহিতা অহানকে ছোট ছোট টর্চার করেছে। অহান জাস্ট বিরক্ত! না পারছে বলতে,না পারছে বাসা থেকে পালাতে। দুপুরের খাবার খেতে দেয় না ইহিতা। অহানকে আগে নামাজ পড়ে আসতে বলে। তারপরই খাবার খেতে দিবে। আর নয়তো না খাইয়ে রাখবে। অহান মন না চাওয়ার শর্তেও মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়ে আসে। এবং-কি ইহিতার কথা মতো মসজিদে পাঁচশো টাকাও দেয়। বাসায় এসে খাবার খাওয়ার পর অহানকে সুস্থ বসতে দেয় না। ইহিতার পায়ের নক কেঁটে দিতে বলে। আর নেলপলিশ দিয়ে দিতে বলে। অহান এসব কিছুই পারে না। তবুও,ইহিতার ধমক খেয়ে কাঁপা হাতে দিয়ে দিতে হয়। নেলপলিশ দেওয়া শেষ হলে। ইহিতা অহানকে রুমে পাঠিয়ে দেয়। ইহিরা রুমে এসে মেডিসিন নিয়ে নেলপলিশ উঠিয়ে ফেলে। কারণ অহানকে জ্বালাতন করার জন্য নেলপলিশ দিয়ে দিতে বলেছিল। কিন্তু ইহিতা নামাজ পড়তো। যার কারণে নেলপলিশ উঠিয়ে ফেলে।
______________________
-“জানি না আমার মনের আশা পূরণ হবে কি না।” দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন হামিদা বানু।
আজমল রহমান তাঁর মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। পাশে বসে বলে,
-“ইনশাআল্লাহ! তোমার আশা আল্লাহ ঠিক পূরণ করবে। একটু ধৈর্য্য ধরো হামিদা।”
-“হুম!আল্লাহ কি আমার কষ্ট বুঝবে।”
-“অবশ্যই! ভরসা রাখো তাঁর উপর।”
চোখ বন্ধ করে আরেক বার বড়ো নিঃশ্বাস ছাড়লেন।
.
.
.
ইহিতা রুমে এসে আয়নার সামনে দাঁড়ায়। গলার চেইনের দিকে নজর পড়তেই ইহিতার আরমানের কথা মনে পড়ে। খুলে হাতে নেয়। ডুব দেয় ভাবনার জগতে।
আজ ইহিতা ও আরমানের বাসর রাত। প্রচণ্ড ভয়ের মধ্যে আছে ইহিতা। ইহিতা এই রাতের জন্য মোটেও প্রস্তুত নয়।
এসেই যদি স্বামিত্ব ফলাতে চাই? এটা ভেবে অনেক বেশি আতংকের মধ্যে আছে। বিয়ের আগে আরমানের সাথে একবার কথা হয়েছিল ইহিতার। তাও টুকটাক। দুই পক্ষের সম্মতিতে খুব দ্রুত ওদের বিয়ে হয়। যার কারণে দু’জন দু’জনার সম্পর্কে কিছুই জানে না। কিন্তু এমনটা হয় না। আরমান যথেষ্ট শান্তশিষ্ট,নম্র-ভদ্র ছিল। প্রথমে ইহিতার পাশে বসে। তারপর হালকা কেশে সালাম দিয়ে কথা বলে,
-“আসসালামু আলাইকুম! আপনি কি ভালো আছেন?”
ইহিতা আরমানের কন্ঠে এত সুন্দর সালাম শুনে অনেকটা স্বস্তি পায়। মনে মনে বেশ খুশিও হয়। মৃদস্বরে ইহিতা সালামের উত্তর দেয়।
-“অলাইকুম সালাম! জি ভালো,আপনি কেমন আছেন?”
-“আলহামদুলিল্লাহ! ভালো।”
এইটুকু বলে আরমান ও ইহিতা দু’জনই চুপ করে থাকে। ইহিতা বিব্রতবোধ করছে। আরমান গলা ছেড়ে ফের বলে,
-“বলছি,নামাজ পড়েনিলে ভালো হয়। আপনি ওজু করে আসুন।”
ইহিতা মুখে কিছু না বলে মাথা দুলিয়ে হ্যাঁ সম্মতি দেয়। প্রথমে ইহিতা ওজু করে আসে। তারপর আরমান। একসাথে নামাজ আদায় করে। ইহিতা জায়নামাজ ভাঁজ করে রাখতে যাবে তখন আরমান ইহিতার হাত ধরে। ইহিতার মনে মধ্যে খচ করে উঠে। ভয়তে মাথা নত করে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে। আরমান নরম স্বরে ইহিতাকে বলে,
-“আমি জানি আপনি ভয় পাচ্ছেন আমাকে। ভয় পাবেন না। আমরা আগে একে অপরের বিষয় ভালোভাবে জানবো। বন্ধু হবো। তারপর আমাদের মাঝে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক হবে। তার আগে নয়। আপনি নিশ্চিতে থাকতে পারেন। বিনানুমতিতে আমি আপনাকে স্পর্শ করব না।”
ইহিতা আরমানের কথা গুলো শুনে যেমন অবাক হচ্ছে তেমনি ভালো লাগছে। মনের মধ্যে আরমানের জন্য একটা জাগা তৈরি হয়েছে। ভাবতেও পারেনি আল্লাহপাক ওর জন্য এত বড় সারপ্রাইজ রেখেছিল জীবনে। আরমান ইহিতার গলায় সেই লকেট সহ চেইন পড়িতে দেয়।
যেটা এখন ইহিতার হাতে আছে। চোখ থেকে পানি স্রোতের দ্বারা বইতে থাকে। আজ সেই মানুষটি নেই,কিন্তু তাঁর দেওয়া সেই প্রথম চিহ্নটা আছে। হাঁটু গেড়ে বসে পড়ে ফ্লোরে। চোখেরজল গুলো গাল বেয়ে ফ্লোরের উপর ফোঁটা ফোঁটা জমে একত্রিত হচ্ছে।
হারিয়ে ফেলেছে সেই মানুষটিকে। যেই মানুষটি ছায়ার মতো সব সময় ইহিতার পাশে থাকতো। ভালোবাসায় আগলে রাখতো বাহুডোরে। অনেকক্ষণ সেখানে বসে কান্না করে। যার কারণে মাথায় পেইন শুরু হয়। ইহিতা ফ্লোরেই শুয়ে পড়ে চেইনটা বুকের সাথে মিশিয়ে।
.
.
.
.
.
.
.
Continue To…………..