আনন্দময় ভালোবাসা পর্ব-০৯ এবং শেষ পর্ব

0
1960

#আনন্দময়_ভালোবাসা
#নিয়াজ_মুকিত
#অন্তিম_পর্ব

ট্রাকটা এগিয়ে আসতেছে নিশান আর রিমিদের রিকসা বরাবর।রিকসাওয়ালার পা ভয়ে থেমে গেছে।তিনি হা করে তাকিয়ে দেখছেন ট্রাকটাকে।রিমি ভয়ে নিজের চোখটা বন্ধ করে নিয়েছে সাথে নিশানকে জড়িয়ে ধরেছে।নিশানও থ ‌মেরে তাকিয়ে দেখছে সব।তাদের থেকে ২০ফুট দুরত্বে রয়েছে ট্রেনের লাইন।তার প্রায় ৩০ ফুট দুরে রয়েছে ট্রাকটা।বলতে গেলে তাদের থেকে মাত্র ৫০ফুট দুরত্বে অবস্থান করছে ট্রাকটা।নিশান, রিকসাওয়ালা,রিমি সবাই চোখ বন্ধ করে আছে।অপেক্ষা করছে কখন এসে গুড়িয়ে দেয় তাদের।

হঠাৎ খুব জোড়ে একটা শব্দ হয়।রিকসা থেকে ছিটকে পড়ে যায় রিমি আর নিশান।প্রচন্ডভাবে মাথায় আঘাত পায় নিশান।সাথে সাথে অজ্ঞান হয়ে পড়ে সে।এদিকে ছিটকে পড়ে রক্ত বের হতে শুরু করে রিমির পেটের কাটা অংশ থেকে।কিন্তু সে অজ্ঞান হয় না।কিন্তু প্রচন্ড পরিমাণে ব্যাথা করতে শুরু করে তার পেট।রক্তে হাত ভিজে যায়।চোখের পানি নাকের পানি মিশে গেছে।রিমি খুব কষ্টে মাথাটা উপরে তুলে।কিন্তু অতিরিক্ত ব্যাথার কারনে সে আর ঠিক থাকতে পারে না।সাথে সাথে অজ্ঞান হয়ে পড়ে।এদিকে ট্রাক ড্রাইভারের লাশ পড়ে আছে।

___________________

চোখখুলে নিজেকে একটা সাদা বিছানার উপর আবিষ্কার করে নিশান।মাথায় ব্যান্ডেজ করা হয়েছে।নিশান মাথা তুলতে চাইলে পারেনা।বেশ কয়েকবার চেষ্টা করার পরও যখন ব্যার্থ হয় তখন সে চেষ্টা করা ছেড়ে দেয়।চোখ খুলে তাকিয়ে থাকে উপরে থাকা ফ্যানটার দিকে।মাথায় অনেক চিন্তা ঘুরঘুর করছে।রিমি কি বেঁচে আছে?নাকি নেই?রিহান কি চলে গেছে?নাকি এখনো যায়নি?আরো অনেক চিন্তা যোগ দিয়েছে এগুলোর সাথে।নিশান আরো একবার মাথা তোলার চেষ্টা করলেও পারেনা।চুপ করে সেখানেই শুয়ে থাকে।

কিছুক্ষন শুয়ে থাকার পর হঠাৎ একজন ডাক্তার আশে তার বিছানার পাশে।নিশান আলতো করে মাথাটা কাত করে ডাক্তারটার দিকে তাকায়।ডাক্তারটা হাসি মুখে বলে,
“এখন কেমন লাগছে নিশান সাহেব?”
নিশান একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলে,
“কিছুটা ভালো?আচ্ছা এখানে আমার কেউ আসেনি?”
ডাক্তার আবারো তার হাসিটা মুখে রেখে বলে,”আপনার বোন-মা আর একটা ছেলে রয়েছে।আর আপনার পাশের এই মেয়েটা।নিন ওষুধটা খেয়ে নিন।”

নিশান আর কিছু না বলে ওষুধটা খেয়ে নেয়।ওষুধ খাওয়া হলে ডাক্তার সেখান থেকে চলে যায়।নিশান শুয়ে শুয়ে মিলাতে থাকে তার পাশে মেয়ে।রিমি মনে হয়,আমার বোন মানে মিলি সাথে মা।কিন্তু ছেলেটা কে?রিহান নাকি?যদি রিহান হয় তাহলে ভালোই আর যদি অন্যকেউ হয় তাহলে শেষ আমি।

তার এসব ভাবনার মাঝে কেউ তাকে এসে জড়িয়ে ধরে।নিশান মাথা তুলতে না পারলেও চোখ তুলে তাকায়।মিলি এটা পাশে মা।মিলি মুচকি হাসি দিয়ে নিশানকে জিজ্ঞাসা করে,
“ভাইয়ু,এখন কেমন লাগছে?”
নিশান তার বাম হাতটা তুলে মিলির মাথার উপর রেখে চুলগুলো নাড়তে নাড়তে বলে,
“ভালো লাগছে বোনু।”

তাদের দুজনের মধ্যে ভাইয়ু আর বোনু শব্দটা আদিকাল থেকেই প্রচলিত।একজন অন্যজন খুব কম সময়ই এগুলো ছাড়া অন্যকিছু বলে সম্মোধন করে।নিশান এবার মুচকি হেসে মিলিকে উদ্দেশ্য করে বলে,
“আমার পাশের মেয়েটা কেমন আছে রে?”
মিলি অবাক হয়ে নিশানকে উদ্দেশ্য করে বলে,
“এই মেয়েটাকে তুমি চেন নাকি?”

নিশান সাথে সাথে উত্তর দেয়,”চিনবো না কেন?অবশ্যই চিনি।”
এই কথার উত্তর মিলি দিতে পারেনা।সে চুপ করে গিয়ে মেয়েটার পাশে বসে।মেয়েটার জ্ঞান নিশানের আগেই ফিরেছে।১দিন আগে।মেয়েটা পেটে হাত দিয়ে আস্তে করে সরে গিয়ে মিলিকে হাসি মুখে বসতে বলে।‌মিলি মেয়েটাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
“আপনার নাম কি?”

মেয়েটা মুচকি হাসি দিয়ে বলে,
“রি‌মি।”
মেয়েটা হাসি দিলেও সেই হাসিটা তার মুখে মানায় না।মিলি জানে এই মেয়েটা আর তার ভাইয়া একসাথে এক্সিডেন্ট হয়েছে।কিন্তু তার ভাইয়া মেয়েটাকে চেনে এটা সে জানে না।মিলি ডাক্তারের কাছে শুনেছে এক্সিডেন্টের সময় ট্রাকের তেলের টেংকি হতে গরম তেল এসে পড়ে মেয়েটার মুখে।তাতে মেয়েটার সমস্ত মুখটা ঝলছে গেছে।

নিশান তার মাকে অনুরোধ করে তাকে তুলে বসিয়ে দিয়ে।তার মা তাকে তুলে বসিয়ে দেয়।নিশান তার মাকে উদ্দেশ্য করে বলে,”প্রতিদিন কথা বলতে বলতে পাগল করে দেয়া মানুষটা আজ একটা কথাও বলছে না।কারন কি?”
কিন্তু নিশানের মা কোনো কথা না বলে চুপ হয়ে নিশানকে ধরে তার পাশে বসে থাকে।এই মুহুর্তে ভিতরে প্রবেশ করে ‌একটা ছেলে।রিহান..

রিমি পেটে হাত দিয়ে উঠে বসে রিহানকে দেখে চমকে ওঠে।তার চোখ দিয়ে পানি পড়া শুরু হয়।নিশান বসা অবস্তায় রিমিকে খুঁজতে থাকে।সে মনে করেছিল তার পাশে রিমি আছে কিন্তু তার পাশে তো মুখে এসিড পড়া ‌একটা মেয়ে।নিশান ভালো করে মেয়েটার দিকে তাকায়।অবশেষে নিশান বুঝতে পারে এই মেয়েটাই রিমি।নিশান রি‌মির হাতের তিলটা দেখে চিনতে পারে।নিশান রিমির দিকে রিমি নিশানের দিকে তাকিয়ে আছে।নিশান এবার রিহানের দিকে তাকায়।রিহান এক দৃষ্টিতে রিমির দিকে তাকিয়ে আছে।

নিশান এবার রিহানকে তার পাশে ডাকে।রিহান তার পাশে যেতেই সে মিলিকে রিমির কাছ থেকে উঠতে বলে।মিলি উঠলে নিশান রিহানকে বসতে বলে রিমির বিছানায়।রিহান নাক কুঁচকায় রিমির দিকে তাকিয়ে।এতে রিমি আরো বেশি কষ্ট পায়।নিশান এবার রিহানকে উদ্দেশ্য করে বলে,

“এনি আপনার ওয়াইফ।”
নিশানের এই কথাটাতে উপস্তিত সবাই চমকে ওঠে শুধুমাত্র নিশান আর রিমি বাদে।রিহান অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করে,”কি আবোল-তাবোল বলছেন?ওনাকে আমি চিনিও না।”
নিশান এবার কিছুটা জোরেই বলে,”ইনি আপনার ওয়াইফ রিমি।”

রিহান এবার রিমির পাশে গিয়ে দাড়ায়।রিমি মাথা নিচু করে বসে আছে।রিহান এবার রিমিকে উদ্দেশ্য করে বলে,”আমার স্ত্রীর পিঠে একটা বড় কালো দাগ রয়েছে।আপনি যদি আমার স্ত্রী হন তাহলে কালো দাগটা দেখান দেখি।”
রিমি সাথে সাথে তার পিঠটা এগিয়ে দেয় রিহানের দিকে।রিহান রিমির পিঠটা দেখে চমকে ওঠে।সে সাথে সাথে রিমিকে উদ্দেশ্য করে বলে,
“কেন আমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলে?”
রিমি কিছু না বলে একটা ছেড়া কাগজ বের করে দেয়।রিহান গভীর মনোযোগ দিয়ে কাগজটা দেখে সাথে সাথে রিমিকে জড়িয়ে ধরে।দুজনেই কাদছে।

নিশান বুজতে পারে না কাগজটাতে কি?সে মিলিকে কাগজটা তুলে দিতে বলে।মিলি কাগজটা তুলে দিলে নিশান গভীর মনোযোগ দিয়ে কাগজটা পড়ে।এটা টিউমারের রিপোর্টটা।ছিড়ে গেছে,কিন্তু রিমি এই রিপোর্টটা কই পাইলো?এদিকে এখনো রিহান আর রিমি কেদেই চলেছে।নিশান এবার তাদের থামতে বলে।রিহান রিমির পাশে বসে।নিশান রিমিকে উদ্দেশ্য করে বলে,
“আচ্ছা আপনি এই কাগজটা কই পাইলেন?”

রিমি এবার একটু মুচকি হেসে বলে,
“যখন দুম করে শব্দ হলো সবাই চোখ বন্ধ করে আছে। আমি চোখ খুলে দেখি একটা ট্রেন এসে বাসটাকে উড়িয়ে দিয়েছে।সেই বাসের একটা অংশ এসে আমাদের রিকসায় লাগলে আমরা সবাই উল্টে পড়ে যাই।তখন আপনার হাত থেকে এই কাগজটা পড়ে যায়।আমি সাথে সাথে কাগজটা নিজের শাড়ির আচলে রাখি।তাই ছিড়ে গেছে।তারপরই আমি অজ্ঞান হয়ে যায়।অজ্ঞান অবস্তায় কখন যে গরম তেল এসে আ‌মার মুখে পড়েছে জানিনা।

নিশান আর ওদিকে কোনো কথা না বাড়িয়ে রিহানকে উদ্দেশ্য করে বলে,”আগে নিজের স্ত্রীর মুখে সব কথা শুনবে তারপর সিদ্ধান্ত নেবে।মনে রাখবে নিজের স্ত্রী কখনো তোমার খারাপ চায় না।”
রিহান প্রতিজ্ঞা করে আজ থেকে সে রিমি সব কথা বিশ্বাস করবে।রিমি নিশানকে বার বার ধন্যবাদ দিতে থাকে।একপর্যায়ে নিশান আর মিলি ব্যচলার গানটা গাওয়া শুরু করে।গান গাওয়া শেষ হতেই মিলি তার মাকে বলে,
“মা তোমার ব্যচলার ছেলে কে এবার বিয়ে দিতে হবে তো?”

নিশানের না এবার নিশানের দিকে তাকায়।মুখ খুলে বলতে শুরু করে,
“বিয়ে দিব তোকে।মেয়ে কেমন দেখতে হবে?উচ্চতা কত,গায়ের রং কেমন,কি করে?ঝগড়া করতে পারে কি পারেনা….”

নিশান সাহায্যের আশায় মিলির দিকে তাকায়।মিলি হাসি দিয়ে উড়িয়ে দেয়।কখন যে মুক্তি মেলে এই ঝামেলা থেকে বোঝা দায়…

সমাপ্ত…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে