আনন্দময় ভালোবাসা পর্ব-০৮

0
1697

#আনন্দময়_ভালোবাসা
#নিয়াজ_মুকিত
#৮ম_পর্ব

রিহান একবার নিশানের দিকে আরেকবার মিলির দিকে তাকায়।তারপর কোনো প্রকার মন্তব্য না করে মাথা নিচু করে বসে থাকে।নিশান গিয়ে রিহানের পাশে বসে।নিশান রিহানকে উদ্দেশ্য করে বলে,”মেয়েটার নাম কি?”
রিহান কোনোপ্রকার উত্তর দেয় না।কিন্তু নিশানও নাছোড়বান্দা।সে পুনরায় আবার জিজ্ঞাসা করে।এবার জিজ্ঞাসা করার সাথে সাথে রিহান খানিকটা রাগি গলায় বলে,
“আপনাকে কেন বলবো?”

নিশান এবার উঠে গিয়ে মিলির পার্শে দাঁড়ায়।মিলিকে উদ্দেশ্য করে বলে,
“তুই গাড়িতে ওঠ।আমি ওনাকে গাড়িতে তোলার ব্যবস্তা করছি।” এইকথা বলার সাথে সাথে মিলি গাড়িতে উঠে বসে।নিশান ড্রাইভারের সাথে কিছু কথা বলে।ড্রাইবার গাড়ি থেকে নেমে নিশানের সাথে আস্তে আস্তে করে এগোতে থাকে।নিশান আস্তে আস্তে রিহানের পিছন দিক দিয়ে আগাতে থাকে।তার পিছন পিছন চলতে থাকে ড্রাইবার।মিলি তাদের আগানো দেখে মুখ লুকিয়ে হাসতেছে।রিহান মাথা নিচু করে বসে আছে।

হঠাৎ রিহানের মনে হয় তাকে পিছন থেকে তুলে ধরে দৌড়ানো‌ হচ্ছে।সে কিছুই বুঝতে পারছে না।এদিকে ড্রাইভার আর নিশান রিহানকে পিছন থেকে তুলে ধরে গাড়িকে লক্ষ্য করে দৌড়াচ্ছে।একপর্যায়ে তারা গাড়ির সামনে আসতেই ঝট করে দরজা খুলে দেয় মিলি।নিশান রিহানকে গাড়িতে বসিয়ে দিয়ে টপাটপ গাড়িতে উঠে ড্রাইভারকে গাড়ি চালানোর নির্দেশ দেয়।ড্রাইভার আদেশ পাওয়ার সাথে সাথে বিন্দুমাত্র সময় দেরি না করে গাড়ি চালাতে শুরু করে।রিহান গাড়িতে উপস্তিত সবার দিকে থ মেরে তাকিয়ে আছে।নিশান এবার সামনের সিট থেকে পিছনে ঘুরে বসে।রিহান আর তার মধ্যে চোখাচোখি হয়ে যায়।মিলি এবার নিশানকে উদ্দেশ্য করে বলে,
“ভাইয়া তোর ইমপর্টেন্ট কাজটা কখন?”

নিশান কিছু না বলে রিহানকে উদ্দেশ্য করে বলে,
“ভাই এবার আপনি বলুন আপনার জীবন কাহিনীটা।আমরাও শুনি।প্লিজ বলুন না।প্লিজ,প্লিজ,প্লিজ,প্লিজ,প্লিজ,প্লিজ।”
নিশানের এরকম অনুরোধ করা দেখে মিলিও রিহানকে অনুরোধ করে।শেষ পর্যন্তু রাজি হয়ে যায় রিহান।তবে শর্ত দেয় সে মেয়েটার নাম বলতে পারবে না।তার এই শর্ত চিরধার্য বলে মেনে নেয় উপস্তিত সবাই।রিহান এবার বলতে শুরু করে,

“২০১৫ সালের শেষের দিকে বিদেশ থেকে ১৫দিনের ছুটিতে বাসায় আসি।বাসায় এসে এমন এক কথা শুনতে পাই যা জীবনেও কল্পনা করতে পারিনি।আমার সৎ বাবা-মা একজন বাবার কাছ থেকে ১০লক্ষ টাকা নিয়েছে।তারা বলেছে আমি দেশে ফিরলেই আমার সাথে তার মেয়ের বিয়ে দিবে।এই শর্ত দেয়ায় রাজি হয়ে যান তিনি।অপেক্ষা করতে থাকেন আমি আসার।যেদিন আমি আসি সেদিনই তিনি বিয়ের আয়োজন শুরু করেন।বিয়েতে আমার একবিন্দুও মত ছিল না।কিন্তু মা-বাবা মারা যাওয়ার পর যারা আমাকে এতদিন লালন-পালন করেছেন তাদের কথায় না করতে পারিনি।সেদিন মেয়ে দেখে আসি।মেয়েটাকে পছন্দ হয় আমার।তারপর বিয়েতে আর কোনো অমত থাকে না।”

এতদুর বলে একটু থামে রিহান।সবাই তার দিকে তাকিয়ে আছে।ড্রাইভার চোখটা সামনে রাখলেও কানটা রেখেছে রিহানের কথায়।রিহান আবার বলতে শুরু করে,

“পরেরদিন কিছুটা ঘরোয়া ভাবেই বিয়েটা সম্পুর্ন হয়ে যায়।সেদিনই বুঝেছিলাম আমার সৎ বাবা-মা শুধু মাত্র টাকার জন্য মেয়েটাকে এ বাড়ির বউ করে নিয়ে এসেছে।তবুও কিছু না বলে চুপচাপ ছিলাম।বিয়ের পরের কয়েকদিন এপাশ-ওপাশ দাওয়াত খেতে খেতে কেটে যায়।ঘনিয়ে আসে আমার ছুটির অন্তিম মুহুর্ত।আজ বাদে কালকে বিদেশে চলে যাব।যাওয়ার সময় তাকে বলেছিলাম,খুব শিঘ্রই আমি ফিরে আসবো।”

এই বলে কিছুক্ষন থেমে থাকে আবার বলতে শুরু করে রিহান,

“সেখানে পৌছে প্রথমে তাকে ফোন দিলে ফোনটা ওয়েটিং দেখাচ্ছিল।মনে করলাম বাসার কারো সাথে কথা বলছিল মনে হয়।তারপর ফোন ধরে সে।তাকে জানাই আমি চলে এসেছি।সেদিন থেকে আবার আগের মতো কাজ শুরু করি।দিনে একবার করে বাসায় কথা বলতাম।তবে তখন অবশ্য খুব ভালোভাবে আমার সাথে কথা বলতো।কিন্তু তার মনে মনে যে এত খারাপ মতলব ছিল তা ভাবতেও পারিনি।আমার রুমের পাশের রুমের ছেলে গুলো খুব বাজে কাজ করতো।কিন্তু আমি তাকে ভালোবাসতাম বলে এসব থেকে নিজেকে বিরত রেখেছি।কিন্তু সে আমাকে ভালোবাসে‌নি।সে পরকিয়ায় মেতে উঠেছিল।অবশেষে প্রেগন্যান্টও হয়েছিল।আমার সৎ বাবা-মা তাকে বাসা থেকে বের করে দিয়েছে।আমি দেশে ফিরলে আমাকেও বাসা থেকে বের করে দিল।”

নিশান এবার রিহানকে বলে,”আপনার তার সাথে দেখা করার ইচ্ছে আছে!”

রিহান নিশানের দিকে তাকিয়ে বলে,”তার সাথে দেখা করে শুধু একটা কথাই‌ জিজ্ঞাসা করবো,কেন সে আমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করলো?”
মিলি এতক্ষন সব শুনছিল।গাড়ি এসে তাদের বাসার সামনে থামে।মিলি সর্বপ্রথম গাড়ি থেকে নামে।তারপর নিশান,পরিশেষে গাড়ি থেকে নামে রিহান।নিশান পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করে গাড়ি ওয়ালার ভাড়া পরিশোধ করে দেয়।গাড়ি ওয়ালা সেখান থেকে চলে গেলে নিশান আর মিলি সেখান থেকে রিহানকে নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে।মিলি অবাক হয়ে বাড়িটাকে দেখছে।দীর্ঘ ৪বছর ধরে এ বাড়ি ছেড়ে বাহিরে রয়েছে সে।

ভিতরে প্রবেশ করে নিশান ঘড়ির দিকে তাকিয়ে প্রায় চমকে ওঠে।ও মাই গড ২ঘন্টা পার হয়েছে।নিশান আর একমুহুর্ত দেরি না করে মিলিকে বলে রিহানকে দেখে রাখতে।এই বলে সে রাস্তায় বের হয়ে পড়ে।বারবার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে সে।অনেক দেরি হয়ে গেছে।কোনদিক দিয়ে এত সময় চলে গেল বুঝতে পারছে না নিশান।শেষ পর্যন্ত একটা রিকসা আসে।নিশান রিকসা ওয়ালাকে থামিয়ে চট করে উঠে পড়ে।রিকসা চলতে শুরু করে।

প্রায় ২০মিনিট সময় লাগে মেডিকেলে পৌছাতে।নিশান তারাতারি ভিতরে প্রবেশ করে।কিছুটা দৌড়ে ডাক্তারের চেম্বারে প্রবেশ করে।প্রবেশ করে থমকে যায় নিশান।ডাক্তার বসে আছে আর রিমি বেডটাতে শুয়ে আছে।নিশান তারাতারি করে ডাক্তারের অনুমতি না নিয়ে চেয়ারে বসে পড়ে।তারপর ডাক্তারকে উদ্দেশ্য করে বলে,

“ডাক্তার আজকেই কি নিয়ে যাওয়া যাবে?”

ডাক্তার না বললে নিশান জোর করে।শেষ পর্যন্ত ডাক্তার রাজি হয়।চালাক প্রকৃতির ছেলে নিশান বুঝতে পেরেছে রিহানের বউ এই রিমিই।তাই সে চাচ্ছে দুজনের দেখা করাতে।সব রেডি করে সে রিমিকে নিয়ে আস্তে আস্তে বাহিরে বের হয়।রিমি কোনো কথা বলছে না।নিশান বাহিরে বের হয়ে একটা রিকসা থামায়।তারপর রিমিকে বসিয়ে নিজে বসে।রিকসা চলতে শুরু করে।আজকে রিহান আর রিমির দেখা হবে সেটা শুধু নিশান জানে।

হঠাৎ একটা ট্রাক পাগলের মতো ছুটে আসতে শুরু করে তাদের দিকে।মনে হয় ট্রাকের চালকটার কিছু হয়েছে।রিকসাওয়ালার পা চলছেই না।রিমি চোখ বন্ধ করে নিশানকে জড়িয়ে ধরেছে।আর নিশান….

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে