#আনন্দময়_ভালোবাসা
#নিয়াজ_মুকিত
#৭ম_পর্ব
অবশেষে সেই বাচাল মহিলার হাত থেকে মুক্তি মেলে রিমির।তাকে এই অবস্তান থেকে মুক্ত করে নিশান।সে এসে রিমিকে সেখান থেকে নিয়ে যায়।সব শেষে তারা সবার কাছ থেকে দোয়া নিয়ে বের হয়ে যায় মেডিকেলের উদ্দেশ্যে।লক্ষ্য অপারেশন।
রাস্তায় প্রায় ১০মিনিট ধরে দাঁড়িয়ে থাকার পরেও কোনো রিকসার দেখা মিলছে না।রিমি নীল রংয়ের একটা জামা পড়েছে।জামাটা নিশানের বোনের।অবশেষে একটা রিকসা আসে তাদের সামনে।নিশান সব ঠিক করে প্রথমে রিমিকে রিকসায় উঠিয়ে দেয়।তারপর নিজে উঠে রিকসাওয়ালাকে অনুমতি দেয় রিকসা চালানোর।রিকসা ওয়ালা অনুমতি পেয়ে চলতে শুরু করে।নিশান তাকিয়ে আছে তার ডানদিকে।সে চলন্ত রিকসায় বসে রাস্তা দেখছে।একপর্যায়ে রিমি হুট করে জিজ্ঞাসা করে,
“আপনার বোনের নাম কি?”
নিশান খানিকটা সময় পড়ে উত্তর দেয়,
“মিলি”
রিমি আর কোনো কথা না বলে চুপ হয়ে যায়।তার মনে একরকম বাজে চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে।তার মনের চিন্তাটা হলো নিশানের বোন রিমিকে নিয়ে।রিমি যে তার ঘরে থাকছে এটা তার পছন্দ নাও হতে পারে,আবার হতেও পারে।আরো ইত্যাদি ইত্যাদি ভাবনা ভাবছে।একপর্যায়ে তারা এসে পৌছায় মেডিকেলের সামনে।নিশান রিকসাওয়ালার ভাড়া পরিশোধ করে রিমিকে নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে।নিশান ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে ৮:৫৮ বাজে।তারমানে ঠিক সময়ে এসেছে।নিশান রিমিকে একটা জায়গায় বসতে বলে নিজে যায় ডাক্তারের খোঁজে।কিছুক্ষন পরে সে ফিরে আসে।ধপ করে বসে পড়ে রিমির পাশের চেয়ার টায়।রিমি তাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
“কি হলো?ডাক্তার নেই?”
নিশান দীর্ঘ একটা শ্বাস নিয়ে রিমি কথার প্রতিউত্তরে বলে,
“আছে,রেডি হন আপনি।কিছুক্ষন পরই আপনাকে অপারেশন থিয়েটারে ঢোকানো হবে।”
কথাটা শুনে রিমির মনে একপ্রকার ভয় সৃষ্টি হয়।পেটটা আগের মতোই আছে।যদি একটু কমতো থাহলে রিমি অপারেশন করতো না।কিন্তু পেটের ফুলো তো কমছেই না বরং বাড়ছে।তাই বাধ্য হয়ে সে অপারেশন করছে।দুজনেই বসে আছে কখন তাদের ডাক পড়বে।নিশান রিমিকে নানা ভাবে নানা কথা বলছে।যেন রিমি ভয় না পায়।নিশান রিমিকে আরো একটা কথা বলে যে,
“অপারেশনের পর রিমি বাড়িতে যেতে পারবে।”
এই কথাটা শুনে রিমির মুখটা আরো কালো হয়ে যায়।সে কোনো কথা না বলে চুপ করে বসে থাকে।রিমির এ অবস্তা দেখে নিশানও চুপ হয়ে যায়।
কিছুক্ষন পর রিমির ডাক পড়ে ডাক্তারের চেম্বারে।নিশান রিমির সঙ্গে চলে তাকে এগিয়ে দিতে। দুজনে ডাক্তারের চেম্বারে প্রবেশ করে। ডাক্তার এবার তাদের উদ্দেশ্যে করে বলে,
“নিশান সাহেব আপনি এখানে থাকুন। আমি উনাকে নিয়ে অপারেশন থিয়েটারে যাচ্ছি আল্লাহ হাফেজ”
এবার তিনি রিমিকে উদ্দেশ্য করে বলেন,”চলুন আমার সঙ্গে তুমি।”
রিমি চুপ করে থেকে একবার নিশানের দিকে তাকায়। তারপর ডাক্তারের পিছন পিছন চলতে শুরু করে।নিশান ডাক্তারের চেম্বার থেকে বের হয়ে বাহিরে এসে মোবাইলটা নিয়ে বসে আগের জায়গাটাতে।এদিকে রিমিকে অপারেশন থিয়েটারে ঢোকানো হয়েছে।কিছুক্ষণ পরেই তার অপারেশন শুরু হবে।নিসান বাহিরে বসে আছে এই মুহূর্তে তার ফোনে একটা কল আসে।সে স্কিনে তাকিয়ে দেখে তার বোনের নাম্বার।নিশান ফোন রিসিভ করার সাথে সাথে ওপাশ থেকে বলা হয়,”ভাইয়া তাড়াতাড়ি এয়ারপোর্ট একটা গাড়ি নিয়ে আসো। বাই পরে কথা হবে।”
নিজের বোনের ভাবগতি কিছুই বুঝতে পারেনা নিশান।সে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে এখনো রিমির অপারেশনের শেষ হতে 2 ঘন্টার মত লাগবে।এর মধ্যে সে গাড়ি নিয়ে তার বোনকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে আবার এখানে আসতে পারবে।নিসান উঠে দাঁড়িয়ে বাহিরে বের হয় খুঁজতে শুরু করে একটা গাড়ি।
এদিকে অজ্ঞান অবস্থায় এখনো পড়ে আছে রিহান। হঠাৎ তার মুখে পানির ছিটা পড়ে।সে চোখ খুলে চারদিকে তাকায়।মনে করতে পারতেছেনা কিছুই। হঠাৎ করেই মনে হয় সে তো এয়ারপোর্টে অজ্ঞান হয়ে পড়ে গিয়েছিল।সে ধপ করে উঠে বসে। তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে তার মুখে পানির ছিটা দেয়া মেয়েটি। রিহান কোন বলার আগেই মেয়েটা রিহান কে উদ্দেশ্য করে বলে,”আপনি এখানে অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলেন কেন?”
রিহান তার মাথায় হাত দিয়ে মেয়েটার দিকে তাকায়। তারপর আস্তে করে উঠে দাঁড়িয়ে বেঞ্চটাতে বসে। মেয়েটাও তার পাশে বসে।মেয়েটা রিহানকেকে উদ্দেশ্য করে বলে,”আপনার নাম কি জানতে পারি!”
রিহান মাথা নাড়িয়ে বলে অবশ্যই।”আমার নাম রিহান”
আবার মেয়েটা রিহানকেকে উদ্দেশ্য করে বলে,
“আপনি এখানে অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলেন কেন?” রিহান একবার মেয়েটার দিকে তাকায় তারপর মাথা টা নিচু করে নেয়।এই মুহূর্তে তার রিমির কথা মনে হচ্ছে। সে কত বড় ভুল করেছে।রিমিকে সে ভালোবেসেছে আর রিমি তাকে ধোঁকা দিয়ে চলে গেছে।
রিহান মেয়েটার সাথে কোন কথা না বলে উঠে দাঁড়ায়।মেয়েটাও সাথে সাথে রিয়ানের সাথে উঠে দাঁড়ায়।রিয়ান চলতে শুরু করলে মেয়েটাও তার পেছনে পেছনে চলতে শুরু করে।একপর্যায়ে রিহান বিরক্ত হয়ে আবার বেঞ্চটাতে বসে।মেয়েটা তার পাশে বসে। মেয়েটা রিহানের দিকে কড়া চোখে তাকিয়ে বলে,
“আমি আপনাকে পানি দিয়ে জ্ঞান ফেরালাম অথচ আপনি আমার উত্তর না দিয়ে চলে যাচ্ছেন। এটা কেমন ধরনের অভদ্রতা?”
রিহান এবার মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বলে,”থ্যাংকু! আপনি আমার অনেক উপকার করেছেন আর করতে হবে না।এ মুহুর্তে আমার কথা বলতে ইচ্ছে করতেছে না।মাথাটা খুব ঘুরতেছে। বাড়ি যেতে হবে। ও বাড়ি কোথায় যাব আমার তো বাড়ি নেই। এখানে থাকতে হবে সন্ধ্যা পর্যন্ত।তারপর চলে যাব।”
মেয়েটা রিহানের কোন কথা বুঝতে পারতেছেনা।তাই মেয়েটা রিয়ান কে উদ্দেশ্য করে বলে,”কি আবোল তাবোল বলছেন,একটু খুলে বলুন না।”
রিহান মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বলে এতক্ষণ সময় হবে।মেয়েটা ঘরির দিকে তাকিয়ে বলে,”বলতে পারেন!”
মুহুর্তের মধ্যে দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়ে রিহান। তার সব কথা বলা উচিত হবে কিনা এ ব্যাপারে নিয়ে ভাবতে শুরু করে।অবশেষে সিদ্ধান্ত নেয় বলে দেবে। আজকেই শেষ দিন তারপর আর কারো সঙ্গে দেখা হবে না।তো সে আমার জীবনের কথা জানলে সমস্যা কি?বলেই দেই!
“এই ভেবে রিয়ান বলতে শুরু করে আমি বিদেশে থাকি। কয়েক বছর আগে মানে দুই বছর আগে আমার বাবা-মা একজনের সঙ্গে আমার বিয়ে দিয়েছিলেন।আমি তাকে আমার মন প্রান উজার করে ভালোবাসি কিন্তু সে আমাকে ভালোবাসে নি। আমি বিদেশে থাকলে সে পরকীয়া মেতে উঠেছিল। তাই তো পেটে বাচ্চা হয়েছিল কিন্তু সেই বিষয়টিকে অস্বীকার করে।আমার সৎ বাবা মা তাকে বাসা থেকে বের করে দিয়েছে।এমনিতেই আমার বাবা-মা আমাকে দেখতে পেত না,আমার টাকায় চলত দেখে আমার বউকে এতদিন রেখেছিল।কিন্তু এখন সে এত বড় অপরাধ করায় তাকে আর রাখেনি।বাসা থেকে বের করে দিয়েছে।সাথে আমাকেও বের করে দিয়েছে বাসা থেকে। রিহান আর কিছু বলার আগেই তার সামনে একটা গাড়ী এসে থামে।গাড়ি থেকে উঁকি দেয় নিশান। তার মানে কি মেয়েটা নিশানের বোন?তাহলে রিহান আর রিমির দেখা হচ্ছেই?নাকি কেউ একজন চলে যাবে উপরে?
চলবে..
বুঝতে পারতেছিনা নিশান নাকি রিহান হিরো হবে।
আল্লাহ হাফেজ।