#আনন্দময়_ভালোবাসা
#নিয়াজ_মুকিত
#৬ষ্ট_পর্ব
রিমি বাসাটার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।নিশান আস্তে করে রিক্সা থেকে নেমে রিমিকে রিকশা থেকে নামতে সাহায্য করে। তারপর পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করে রিক্সাওয়ালার ভাড়া পরিশোধ করে।ভাড়া পরিশোধ হওয়া মাত্র রিকশাওয়ালা সেই স্থান ত্যাগ করে।রিমি নিশানকে নিয়ে একটা দরজার সামনে আসে।নিশান দরজার সামনে দাড়িয়ে কলিং বেল বাজাতে শুরু করে। ভেতর থেকে আওয়াজ আসে,কে?নিশান বাহির থেকে চিল্লিয়ে বলে,”মা!আমি”
সাথে দরজা খুলে যায়।এক বৃদ্ধ মহিলা দরজার ওপাশে দাঁড়িয়ে আছে।রিমি তাকে সালাম দেয়,তিনি সালামের জবাব দিয়ে নিশানের দিকে তাকান।তিনি নিশানকে উদ্দেশ্য করে বলেন,”কেরে”
নিশান তার মায়ের কানে কানে কি জানি বলে?তার মা রিমির দিকে তাকিয়ে বলে,”আসো ভেতরে আসো।”
নিশানের মায়ের সাথে ভিতরে প্রবেশ করে রিমি।তার পেছনে পেছনে নিশান ভিতরে প্রবেশ করে।নিশান প্রবেশ করার পর দরজাটা লাগিয়ে দেয় সে নিজেই।রিমি ভিতরে প্রবেশ করে দেখে সেখানে সোফায় বসে আছে একজন বৃদ্ধ পুরুষ।বয়স 60 কি 70 হবে।বৃদ্ধ লোকটা যে নিশানের বাবা সেটা বুঝতে কষ্ট হয়না রিমির।সে নিশানের বাবাকে সালাম দেয়।তিনি কিছুটা গম্ভীর হয়ে সালামের উত্তর দেন।
এবার নিশানের মা রিমিকে উদ্দেশ্য করে বলে,
“বসো সোফায়”
রিমি আস্তে করে সোফায় বসে পড়ে।নিশান গিয়ে তার বাবার সাথে বসে পড়ে।রিমির সামনের সোফাটাতে বসেন নিশানের মা।নিশানের মায়ের কড়া দৃষ্টি রিমির দিক থেকে নড়ছে না।এবার নিশানের মা রিমিকে উদ্দেশ্য করে বলে,
“তোমার নাম কি?”
রিমি মাথা নিচু করে বলে,”মাইয়া জামান রিমি।”
এবার নিশানের বাবা রিমির দিকে তার কড়া দৃষ্টি ফেলেন।তিনি তার চশমাটা ডেক্সের উপরে রাখতে রাখতে বলেন,
“আমরা তোমার ব্যাপারে সব জানি।নিশান আমাদের সব বলেছে।” রিমি খানিকটা অবাক চোখে তাকায় নিশানের দিকে।কখন নিশান এত কিছু বললো তার বাবা-মাকে।সব সময়ই তো নিশানের সাথে ছিল সে।তাহলে কখন বললো?নিশান তার চশমাটা খুলে তার বাবার চশমার পাশে রাখতে রাখতে বলে,
“বাবা কালকে ওনার অপারেশন হবে।আমি ডাক্তারকে দেখিয়েছি।”
নিশানের কথাটা শুনে তার বাবা সাথে সাথে বলে,”খুব ভালো করেছো।অপারেশনটা করেই ফেল রিমি।বেষ্ট অফ লাক।”এই কথা বলে তিনি সোফা থেকে উঠে দাড়ান।হাটতে শুরু করেন তার রুমের দিকে।কিছুদুর যাওয়ার পর আবার ফিরে আসেন।টেবিলের উপর থেকে চশমাটা নিয়ে ঝাম্মাকঝালো এক প্রকার হাসি দিয়ে চলে যান তিনি।
নীরব দর্শকের মতো সবকিছু দেখছিল নিশানের মা।শেষ মুহুর্তে তিনি উপলব্ধি করলেন যে তারও কিছু বলা উচিত।তাইতো বলার জন্য মুখ খুলতে ধরলেন।কিন্তু এই মুহুর্তে চিলের মতো তার মুখের কথা কেড়ে নেয় নিশান।সে তার মাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
“মা,ওনি কোথায় থাকবেন।সারাটা দিন ধকল গেছে,এখন বিশ্রাম প্রয়োজন।কালকে আবার অপারেশন।”
মুখটা বন্ধ করে উঠে দাঁড়ান নিশানের মা।মুখে কোনো কথা না বলে রিমিকে ইশারায় তার পিছন পিছন আসতে বলেন।রিমি নিশানের দিকে তাকালে নিশান ইশারায় তাকে বলে যেতে।রিমি উঠে দাঁড়িয়ে নিশানের মায়ের পিছন পিছন চলতে শুরু করে।নিশানের মা রিমিকে নিয়ে আসে একটা রুমে।রুমটা অনেক সুন্দর করে গোছানো।দেখে মনে হয় দীর্ঘ ২-৩ বছর ধরে কেউ এখানে থাকে না।অনেক জায়গায় ময়লা জমেছে।মাকড়সা জাল বুনেছে।
এবার রিমির মা টপ করে দরজাটা লাগিয়ে দেন।দরজা লাগিয়ে দিয়ে তিনি এমন এক হাসি দেন যেন সবেমাত্র বিট্রিশরা ইন্ডিয়া ত্যাগ করলো এবং এর পিছনে তার জোরালো অবদান রয়েছে।তিনি কিছুটা দৌড়েই রিমির সামনে এসে দাঁড়ান।ঝট করে রিমির হাত ধরে বিছানায় বসিয়ে দেন।প্রথম থেকে ঘটে যাওয়া সব কিছু আবাল দর্শকের মতো দেখছে রিমি।তার মনে অনেক প্রশ্ন আসলেও মুখ ফুটছে না।
নিশানের মা রিমিকে উদ্দেশ্য করে এক নিশ্বাসে বলে,
“তোমার বাসা কই?তোমার কি হয়েছে?তুমি কিভাবে নিশানের সাথে দেখা করলে?তোমার শশুর বাড়ি কই?তোমার শশুরের নাম কি?তোমার স্বামী কোথায় থাকে?কি চাকরি করে?কোন দেশে থাকে?তোমার শাশুড়ি কি তোমাকে জ্বালায়?তোমার ননদ আছে?কি নাম?বিয়ে হয়েছে নাকি হয়নি?কত বছর বয়স?নিশ্চয় তোমার সাথে মিল নেই?তোমার বাবা-মা কি করে?তোমার বাবার বয়স কত?তোমার মা কি চাকরি করে নাকি গৃহিনী?”
আর কিছু বলার আগেই দরজায় আওয়াজ পড়ে।তার কথার মাঝখানে দরজায় আওয়াজ পড়ায় বেশ বিরক্ত হন মহিলা।কিছুটা অনিশ্চাসত্বে উঠে দাঁড়িয়ে দরজাটা খুলে দেন।দরজার বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে নিশানের বাবা।নিশানের বাবা খানিকটা রেগে বলে,
“কালকে মেয়েটার অপারেশন,রেষ্ট দরকার এখন।আর তুমি দরজা বন্ধ করে দিয়ে তার সাথে প্যাকপ্যাক করছো?যাও”
গালি খেয়ে মুখ বেকিয়ে সেখান থেকে চলে যায় নিশানের মা।নিশানের বাবা রিমির দিকে তাকিয়ে একটা স্নান হাসি দিয়ে চলে যান।এতক্ষনে রিমি হাফ ছেড়ে বাঁচে।বৃদ্ধ মহিলা যে অতিরিক্ত বাচাল সেটা বুঝতে বেগ পেতে হয়না তাকে।কিন্তু এতটা পরিমাণে কথা বলতে পারে কোনো বাচাল সেটা রিমির জানা ছিল না।রিমি চেষ্টা করে তার মতো এক নিশ্বাসে বলতে কিন্তু পারেনা।মহিলা স্বামী ছেলেকে ভয় পায় সেটাও বুঝতে পারে রিমি।তাইতো তখন কোনো কথা না বলে চুপচাপ বসে ছিল।
রিমি অতশত না ভেবে বিছানায় হেলান দেয়।মুহুর্তেই তার চোখ ঘিরাও করে নেয় ঘুমরাজ।হারিয়ে যায় ঘুমের রাজ্যে।
————–__________
এয়ারপোর্টে দাঁড়িয়ে আছে রিমির স্বামী রিহান।চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে তার।টিকিট কাটা হয়ে গেছে।কালকে সন্ধ্যায় সে চলে যাবে এখান থেকে।কবে ফিরে আসবে জানা নেই তার?তার চোখের পানি বাধ সাধছে না।তার দিকে তাকিয়ে আছে অনেকে।সে গিয়ে বসে পড়ে একটা বেঞ্চে।চোখ বন্ধ করে ভাবতে শুরু করে আগের দিন গুলোর কথা।সে রিমিকে কতটা পরিমানে ভালোবাসতো।এখনো বাসে সমানতালে।কিন্তু রিমি তার সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করলো,সে ভাবতেই পারছে না।তার সহপাঠী প্রবাসিরা নানা অশ্লীল কাজ করে।কিন্তু সে এসব থেকে বহু কষ্টে নিজেকে বিরত রেখেছে শুধু রিমিকে ভালোবাসে বলে।কিন্তু রিমি তার সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করলো।রিহান আর কিছু ভাবতে পারছে না।মাথা বনবন করে ঘুরছে তার।মুহুর্তের মধ্যে অজ্ঞান হয়ে পড়ে রিহান।বেঞ্চ থেকে ধপকরে মাটিতে পড়ে যায় সে।
সকাল হয়েছে।নিশানদের বাড়িতে এক অন্যরকম আনন্দময় পরিবেশ বিরাজ করছে।দীর্ঘ ৪বছর পর বিদেশ থেকে ফিরে আসছে নিশানের ছোট বোন।সেই উপলক্ষে আনন্দের শেষ নেই।এদিকে আটটা বাজতেই নিশান এসে রিমিকে তাড়া দেয় রেডি হওয়ার জন্য।কিন্তু নিশানের বাচাল মা তাকে ছাড়ছেই না।তিনিকে রিমিকে বসিয়ে রেখে নিজের মেয়ের গুনগান গাইছেন।তার মেয়ে অমুকে ভালো,অমুকে খারাপ,ইত্যাদি ইত্যাদি।এসব শুনতে শুনতে প্রায় বিরক্ত রিমি।কিন্তু ভদ্রতার খাতিরে বলতে পারছে না যে,আপনি যান তো।না জানি কখন মুক্তি মেলে রিমির এই মহিলার হাত থেকে।
চলবে..
{নিশান নাকি রিহান?কে হবে হিরো,নায়ক?}
নামাজ কায়েম করুন।আল্লাহ হাফেজ।